#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৬০ +৬১ ( Great reunion)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা মুগ্ধ হয়ে সবকিছু দেখতে থাকলো।আর ফারহাজ দেখতে থাকেফিহার সেই হাঁসিজ্জ্বল মায়াভরা মুখখানা।
আকাশে এখনো ফানুশ উড়ছে। সবকিছুই এখন অন্ধকার। বাগানের বয়ে যাওয়া বাতাস গুলো ফিহা ও ফারহাজের শরীরে মৃদ্যু কম্পন সৃষ্টি করছে। ফারহাজ এখনো ফিহাকে জড়িয়ে ধরে আছে। ফিহা কিছুটা সময় নিয়ে বলে উঠে- ”আজকের দিনটি আপনার মনে ছিলো লাটসাহেব, কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম এই সম্পর্কের কোনো মুল্যই আপনার কাছে ছিলো নাহ। ফারহাজ নিশ্চুপ। ফিহা আবারো বলে উঠে- ”এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে, আপনি আমার হাতে ডিভোর্স পেপারটাও ধরিয়ে দিয়েছিলেন মনে আছে কী আপনার”?
ফিহা এই অভিমান মিশ্রতি অভিযোগ আর ফারহাজ শুনতে পারলো নাহ।
——-”আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আজকেই দিবো, এখুনি দিবো”। কিন্তু তার আগেই আরো একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্যে।
এখন ফারহাজ আবার কিসের সারপ্রাইজ দিবে, ঠিক বুঝে উঠতে পারছে নাহ ফিহা। ভাবতে ভাবতে ফিহা ভ্রু কুচকে তাঁকালো।
ফারহাজ ফিহার হাত জোড়া চুমু খেয়ে বলে উঠলো,
” ফিহু আজকে তোমাকে আমাদের বিয়ের বিবাহবার্ষিকীর উপহার হিসেবে এমন কিছু দিবো, যা তুমি কখনো ভুলবে নাহ”।
সজ্ঞে সজ্ঞে ফারহাজ কিছুটা সরে দূরে এসে, নিজের হাত দিয়ে চুটকি বাজায়।
সজ্ঞে সজ্ঞে সব বাগানের সব লাইট অন হয়ে যায়।
প্রথমে পামকিন বেড়িয়ে আসে, পামকিনকে দেখে ফিহার মুখে অজান্তেই হাঁসি ফুটে উঠে।
পামকিন ছুটে এসে ফিহার কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। ফিহাও পরম যত্নে পামকিনকে কে কোলে নিয়ে নেয়।
আলতো হাতে পামকিনকে আদর করতে থাকে, তার প্রিয় পামকিনকে। কত বছর পর, সে তার পামকিনকে পেয়েছে। পামকিনও তার মালিককে এতো বছরে পেয়ে, একেবারেই ফিহাকে ঝাপটে ধরে।
ফিহা খানিকটা আদুরে গলায় বলে উঠে,
”আমার বাচ্ছাটা কেমন আছিস তুই? তোকে যা দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলাম তা ভালো করে করেছিস তো?”
ফিহার কথার মাঝেই বিঘ্ন ঘটিয়ে ফারহাজ বলে উঠে,
“একদম ম্যাম,আপনার পামকিন শুধু আপনার মির্জা বাড়ির খেয়াল ই নয় বরং আমার খেয়ালও রেখেছে খুব ভালো করে”।
কথাটা বলেই ফারহাজও পামকিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ফারহাজ।
তখনি কেউ বলে উঠে-
আমাদের ভুলে গেলে দিদিভাই?
কন্ঠস্বর শুনে ফিহা ও ফারহাজ পিছনে তাঁকিয়ে দেখে মিঃ রাইজাদা ও মির্জা বাড়ির সকলে দাঁড়িয়ে আছে, শুধুমাত্র আহান ও ইরিনা বাদে।
ফিহা কি বলবো কিচ্ছু বুঝতে পারছে নাহ। এতোদিন পরে নিজের আপনজনদের দেখে ঠিক কি রিয়েক্ট করা উচিৎ ফিহা জানে নাহ। ফিহা গলা শুকিয়ে আসছে। ফারহাজ ফিহার হাত-জোড়া শক্ত করে ধরে নরম গলায় বলে উঠে,
“রিলাক্স ফিহু সবার সাথে কথা বলো, দেখবে সব কিছু হাল্কা লাগবে।”
ফিহার গলা আটকিয়ে আসছিলো। তাই ফিহাকে স্বাভাবিক করতে রেনু বেগম এগিয়ে ফিহার থুতনি উঁচু করে বলে উঠে-
“মা- শাল্লাহ আমার বড় নাত-বউ দেখি কত্ত সুন্দরী হয়ে গেছে, কি মাখিস রে দিদিভাই? এতো সুন্দর হয়ে গিয়েছিস। শাড়িতেও কিন্তু বেশ সুন্দর লাগছে রে, একেবারেই টুকটুকে বউ “।
ফারহাজ এইবার উচু গলায় বলে উঠলো-
” শুনো দিদা, আমার বউ আগেও সুন্দর ছিলো, আর এখনো আছে”।
ফিহা লজ্জা পেয়ে যায়। সবাই ও হেঁসে ফেলে।
মিঃ রাইজাদা ফিহার দিকে এগিয়ে বলল-
“দিদিভাই আমি জানি ফারহাজ যা করেছে তা হয়তো ঠিক করেনি, কিন্তু সময়সাপেক্ষে ফারহাজদাদুভাই হয়তো ঠিক ছিলো। কিন্তু তোমার উচিৎ ছিলো দিদিভাই, একটিবার আমাদের ব্যাপারটা জানানোর কি উচিৎ ছিলো নাহ”?
ফিহা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে নাহ…
——“ফারহাজ না হয় ভুল করেছিলো কিন্তু বাবা ফিহা কাদের বলবে? আমাদেরও ভুল ছিলো বিশেষ করে আমার”।
কথাটি বলে মিসেস প্রিয়া ফিহার হাত-জোড়া শক্ত করে ধরে বলে উঠে-
“আমাদের উপর এখনো বুঝি রাগ করে আছো, বউমা”?
—–“রাগ করাটাই কি স্বাভাবিক নয়? আমরা তো কম কথা শুনায়নি নাতবউটাকে, এমনকি বংশপরিচয় নিয়েও কম কথা শুনাওনি। আমাদের কী এতো সহজে ক্ষমা করা সম্ভব?”
মিসেস ইরা ( ফারহাজের দাদি) কথাটি বলে থামলো।
ফিহা এইবার বলে উঠে-
“এইসব কি বলছেন কি আপনারা?
প্লিয এইভাবে বলবেন না, আপ্নারা আমার গুরুজন হয়ে যদি এইভাবে ক্ষমা চান তাহলে কীভাবে হবে বলুন?আমি সত্যি রেগে নেই”।
এইবার নিলয় বলে উঠলো-
“লিটেল প্রিন্সেস থুরি আমার লিটেল ভাবি দূর মাথা ভাবি তো এখন ছোট নেই, তা ভাবিজ্বী তোমার এই দেবরজ্বীকে মনে আছে তো”?
—–“তা মনে আছে, একটু আকটু”
ফিহার কথা শুনে নিলয় আশাহত হয়ে বলল-
“তুমি আমাকে ভুলে গেলে”?
ফিহা হেঁসে দেয়। ফারহাজ মুগ্ধ হয়ে, দেখে সে হাঁসি।
নিলয়ের মাথায় গাট্টা মেরে ইশিনা এসে বলে উঠে-
” কিন্তু আমি জানি আমার ভাবি তার ননদজ্বীকে ভুলেনি”।
নেহালঃ “আমার মনে হয় ননদবরকেও বোধহয় ভুলোনি।”
ফিহা অবাক চাহনীতে তাঁকিয়ে বলে উঠে-
“নেহাল ভাইয়া তার মানে ইশিকা আপুই আমার সেই ইশি আপু মানে তোমার ভালোবাসার মানুষ”।
নেহালঃ “শুধুই ভালোবাসার মানুষ নয়, এখন সে আমার স্ত্রী”।
ফিহা শুধু অবাক হয়ে যায়, এতো বছর কত কিছু পালটে গেলো। কিন্তু খুশি হলোও বটে.. এতোবছরে সবকিছু ঠিক আছে।
তানহাও এইবার বলে উঠে-
“তুমি সত্যি আমাদের ক্ষমা করেছো তো মা?”
ফিহাঃ” এইভাবে আমাকে আর লজ্জিত করবেন না কাকি আমার সত্যি কারো প্রতি রাগ নেই”
——–”কিন্তু আমরা তোর উপর রেগে আছি”।
ফিহা পিছনে তাঁকিয়ে দেখে সিমি, পটকা আর টিউপ।
এতোদিন পর সেই কাছের স্কুল বন্ধু…। পটকাও আগের মতো মোটা আছে কিন্তু ভালোই লাগছে দেখতে, টিউপের চোখে চলে এসেছে চশমা আর সিমি আগের থেকে আরো বেশি দেখতে মিষ্টি হয়ে গেছে।
সিমি ঃ “কিরে ফিহুরানি আসবি নাহ? জড়িয়ে ধরবি নাহ আমাদের “?
কথাটা বলতে গিয়ে সিমির চোখে জল চলে আসে।
ফিহা গিয়ে সিমিকে জড়িয়ে ধরে। টিউপ আর পটকার চোখেও জল…কতদিন পরে বন্ধুগুলোকে কাছে পেয়েছে সে।
ফিহা এইবার পটকা আর টিউপের পেটে খোঁচা দিয়ে বলে-
“কিরে বলদরা তোরাও আজকে কাঁদবি?হাঁসবি নাহ একটু”।
ফিহার কথা শুনে টিউপ আর পটকারাও হেঁসে দেয়।
নিলয় সিমিকে চোখ টিপি দেয়। যার মানে সিমিকে
আজ দেখতে সুন্দর লাগছে। ফিহা তা বুঝতে পেরে সিমিকে কি যেনো ইশারা করে। সিমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ফিহার আর বুঝতে বাকি রইলো নাহ এদের মধ্যেও কেমিস্ট্রি খুব ভালো ভাবেই হয়ে গিয়েছে।
তখনি কেউ ফিহার মাথায় হাত রাখে। ফিহা পিছনে তাঁকিয়ে দেখে মিসেস ফাতেমা।
মিসেস ফাতেমাকে দেখে মিসেস ফাতেমার হাত দুটো নিজের হাতে পুড়ে বলে উঠে-
” মাগো” তুমি এসেছো? আমার নাহ তোমায় অনেক কিছু বলার আছে।
ফিহাকে থামিয়ে মিসেস ফাতেমা বলে উঠে-
“আমি জানি ফিহা তোর কী বলার আছে। আমার সাথে কেনো এতোদিন যোগাযোগ করিসনি তাইতো?
কিন্তু বিশ্বাস কর ফিহা আমি একটুও তোর উপর রাগ করেনি কেননা আমি একটুও তোর উপর রেগে নেই আমার সোনা, কেননা আমি জানি সবকিছুই পরিষ্হিতির স্বীকার…।
ফিহা বোধহয় তার মায়ের কথায় শান্তি পেলো তাই সে মিসেস ফাতেমাকে জড়িয়ে প্রায় কেঁদে দিলো। কতদিন পরে এই বুকে সে স্হান পেয়েছে,মা মা গন্ধ আসছে
রাহাত এইবার ফারহাজের কাছে গিয়ে বলে উঠলো-
“কিরে ফিহাকে সারপ্রাইজ টা কি দিবি নাহ”?
ফারহাজ ঠোট টা ভিজিয়ে বলে উঠলো-
” কিন্তু কাকাই আমি শুধু ভাবছি, ফিহা সব টা জেনে কিরকম রিয়েক্ট করবে? বাবার জন্যে কি আমার উপর ঘৃনা করবে”?
—–“এতো ভাবিস নাহ ফারহাজ, যা করার তা তাড়াতাড়ি করে ফেল”।
ফারহাজ এইবার ফিহার দিকে এগিয়ে বলে উঠে,
“ফিহু আমাদের বিবাহবার্ষিকীর গিফ্ট টা নিবে নাহ”?
ফিহা ফারহাজের তাঁকিয়ে বলে উঠে-
গিফ্ট!
ফারহাজ ছোট করে হুম বলে গেটের দিকে ফিহাকে তাঁকাতে বলে। ফিহাও তাঁকিয়ে দেখে আহান, ইরিনা ই নাহ আরেকজন ও আছেন হুইলচেয়ারে একজন মহিলা বসে আছে,মাঝে মাঝে কেমন করে যেনো তাঁকাচ্ছে।
এতো ইরিপু আর তার হাজবেন্ড ফিহা শুধু তাদের দেখেই যাচ্ছে, ফিহা বুঝতে পারছে নাহ ফারহাজ এদের দিকে ইশারা করে ঠিক কী বুঝালো। অপরদিকে আহানের ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে নিজের বোনটাকে জড়িয়ে ধরতে। কত্ত বড় হয়ে গেছে তার বোন, কিন্তু ফারহাজ যখন বলেছে তখন আগে ফিহা সবটা জানুক।
ফিহাঃ ” আমি কিন্তু সত্যি বুঝতে পারছি নাহ ”
ফারহাজ ফিহার মাকে ইশারা করে। ফিহার মা মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে,
“আজকে তোকে একটা গল্প শুনাবো, শুনবি ফিহা?
ফিহা চারপাশের পরিবেশে একপলক তাঁকায় সবাই তার দিকে কেমন শান্ত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
ফিহার উত্তরের অপেক্ষা না করেই মিসেস ফাতেমা শুরু থেকে সব টা বলা শুরু করলো। ফিহা মির্জা বাড়ির মেয়ে, নীলা মির্জা। কীভাবে তার বাবাকে মারা হয়েছে। আর তার পিছনে জড়িত ছিলো রাইহান। তার বড় একটা ভাইও আছে। তার মাকে পাগল বানানো হয়েছিলো। একপ্রকার। কিং স্যার কীভাবে আহানকে তার বশে এনে ফেলেছিলো। তারপর কীভাবে ফারহাজ ও আহান মিলে কিং স্যারকে শাস্তি দেয়। শুধুমাত্র ফারহাজের এক্সিডেন্ট এর কথা বাদ দিয়ে…।
সবটাই বলে দেয় মিসেস ফাতেমা।
ফিহা শুধু স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখে পানি টলমল করছে,
সে এই বাড়ির মেয়ে? সে একপলক আহান ও হুইলচেয়ারে বসে থাকা আরিশার দিকে তাঁকায়। তার ভাই ও আসলে মা।
তার বাবাকে খুন করা হয়েছিলো বলেই তার মা আজ পাগল। তারা ভাগ্যের পরিক্রমে এইভাবে আলাদা হয়ে গেলো। কীভাবে পারলো রাইহান মির্জা নিজের আপন চাচাতো ভাইকে মেরে ফেলতে। হয়তো নিজে মারেনি কিন্তু সাহায্য তো করেছে। ফিহা এক পলক মির্জা বাড়ি ও ফারহাজের দিকে তাঁকালো।
সকলের দৃষ্টিই নিচু, আসলে সবাই রাইহানের জন্যে হলেও অপরাধী।
এতো কিছু হয়ে গেলো আর সে কিছুই জানে নাহ। কি অদ্ভুদ তার ভাগ্য। ফিহা আর না পেরে জোড়ে কেঁদেই দিলো। আহানও দৌড়ে গিয়ে এইবার তার বোনুকে জড়িয়ে ধরলো। ফারহাজের বড্ড কষ্ট হচ্ছে ফিহার চোখের জল তার ভিতরের টা পুড়ে ছাই করে দিচ্ছে…। ফারহাজ ভাবলো একবার ফিহার কাছে যাবে,কিন্তু পরক্ষনে সে থেমে গেলো। থাকুক নাহ ভাইয়ের কাছে একটু। ভাই বোনের বিষয়ে এখন না ঢুকাই ভালো..।
আহান তার বোনুকে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
“বোনু কাঁদে নাহ রে তুই এইভাবে কাঁদলে তোর ভাইয়ের বুঝি কষ্ট হয়না?”
ফিহা গলাটা কিছুটা পরিষ্কার করে বলল-
“তুমি সেদিন তাহলে আমার জন্মদিনে এসে গান গেয়েছিলে, আমার জন্যে এত্তো এত্তো গিফ্ট পাঠিয়েছিলে”।
মিসেস ফাতেমা মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে-
” হু রে ফিহা, তোর ভাই তো সদুর বিদেশ থেকেও তোর জন্যে ছুটে এসেছিলো রে।”
ফিহা এইবার বলে উঠলো-
“তাহলে কেনো? এতোদিন নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিলে?”
আহানঃ “তুই তো জানিস, সব ই পরিস্হির স্বীকার,কিন্তু বোনুরে একটিবার ভাইয়ু বলে ডাক বনু”।
ফিহা আহানকে শক্ত করে জড়িয়ে বলে উঠে,
ভাইয়ু।
আহানের কান যেনো এই ডাকটি শুনার জন্যে কত বছর ধরে অপেক্ষা করছিলো।
সবাই মুগ্ধ হয়ে দুই ভাই বোনের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ইরিনা হুইল চেয়ারে আরিশাকে নিয়ে আহান ও ফিহার কাছে যায়।
ফিহা এইবার আরিশার কাছে গিয়ে আরিশার কোলে মাথা রেখে ঢুকরে কেঁদে উঠে।
এইতো তার আসল মা।
আরিশা কি জানি সে শুধু ফিহার দিকে তাঁকিয়েই আছে।
ফিহাঃ “মা দেখো আমি তোমার মেয়ে, তুমি কথা বলবে নাহ মা? এই ভাইয়ু দেখো নাহ মা কথা বলছে নাহ।”
আহান কি বলবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে নাহ। আহানের অবস্হা বুঝতে পেরে ইরিনা বলে উঠে,
“ফিহুরানী,তুই তো জানিস আরিশা আন্টির চিকিৎসা চলছে এখনো ভালো করে কথা না বলতে পারলেও আগের মতো উত্তেজিত হয়ে যায়না। এখনো চিকিৎসা করাতে হবে।”
ফিহা চোখে জল চলে আসে। মিসেস ফাতেমা গিয়ে ফিহার কাঁধে হাত রাখে। এতে ফিহা বোধহয় কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো। কিন্তু ফিহা খুশি তার ভাই ভাবি ও মাকে পেয়ে। ফারহাজ তাহলে এই উপহারের কথা বলেছিলো। সত্যি এইটা ফিহার জন্যে বেস্ট উপহার।
তখনি নিলয় এগিয়ে এসে বলে উঠে,
“আচ্ছা আজকে কি আর কেক কাটা হবে নাহ?
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তো, আজকে যে বিবাহবার্ষিকী।
ইশিকাঃ” হুম আজকে তো আহান ভাইয়া ইরিপুরও বিবাহবার্ষিকী”।
আহান ও ইরিনার দিকে মুচকি হাঁসি দেয়। আজকের দিনটি তাদের জন্যও স্পেশাল। এই দিনে তারা ও তো একে অপরের সাথে বিয়ে নামক #পবিত্র_বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ছিলো।
ফিহার ভালোই লাগলো তার ভাইয়ু আর ইরিপুও সুখে আছে। সবাই সুখে আছে শুধুমাত্র সে আর ফারহাজই আজ আলাদা।
ফিহা পরেক্ষনে আবারোও ফারহাজের করা সেই আগের ব্যাবহারের কথা মনে পড়তেই বলে উঠে,
——-“আমার থেকে কেনো উনি মুক্তি চেয়েছিলেন? উনি কি জানতেন নাহ ভালোবাসতাম আমি উনাকে”.
নিলয়ঃ “লিটেল ভাবি ভাইয়ের তখন জীবনের রিষ্ক ছিলো ভাই চাইছিলো নাহ, ভাইয়ের জীবনের সাথে তোমার জীবন জড়াতে। কেননা তখন তোমার জীবনের মাত্র শুরু।
——–” এইসব না হয় পরিস্হির হয়েছিলো, কিন্তু তিন বছর
আগেই কেনো উনি আমাকে নিতে আসেন নি?
সেই উত্তর কী কেউ দিতে পারবে।”
ফিহার পালটা প্রশ্নে নিলয় কিছু বলবে তার আগেই আদিয়া ও তার বাবা-মা ও রাফিদ এসে সেখানে উপস্হিত হয়।
আদিয়াঃ “সেই উত্তর টা না হয় আমিই দিলাম, ফিহা।”
ফিহাঃ “তোরা এখানে”?
রাফিদঃ ” ভাই তো আমাদের চট্টগ্রাম থেকে দাওয়াত দিয়েছে”।
আদিয়াঃ “তুই জানতে চেয়েছিলে নাহ? জিজু কেনো সেদিন তোকে আনতে যাইনি। জানিস সেদিন এক্সিডেন্ট হয়েছিলো জিজুর”।
এক্সিডেন্টের কথা শুনে ফিহার বুকটা ধক করে উঠে।
ফিহাঃ এক্সিডেন্ট!
ইশিকা এগিয়ে এসে বলে উঠে-
” শুধু তা ই নয় ভাবি, এমনকি ভাইয়ের পা প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলো। তিনটে বছর ধরে ভাইয়া হসপিটালে এডমিট ছিলো”।
——– “জিজু যখন জানতে পারে রাফিদের থেকে তুই চট্টগ্রামে আছিস তখন কোনোভাবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। হসপিটাল থেকেই তোর যাবতীয় খরচ চালাতো জিজু যদিও আমরা মানা করেছিলাম কিন্তু সে আমাদের কথা শুনেনি। এমনকি জিজু অসু্সহ এই কথাটাও তোর থেকে আমাদের লুকাতে বলেছিলো, কেননা তুই নাকি এইসব শুনলে ছুটে চলে আসবি জিজুর কাছে। প্রাপ্তবয়স্কের আগেই সংসারের হাল ধরবি যা তোর জন্যে খারাপ ইফেক্ট করতে পারে তাই ভাইয়ু ঠিক করেছিলো তুই প্রাপ্তবয়স্ক হলে তোকে তোর সংসারে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে”।
কথাটি বলে থামলো আদিয়া। ইশিকা আবারোও বলে উঠে,
“আমি দেখেছি ভাবি, ভাইয়া হসপিটালে তোমার জন্যে কতটা ছটফট করেছি। আমি জানি ভাবি ভাইয়া তোমাকে কতটা ভালোবাসে।”
আহান ও ফিহাকে আশ্বাস দিয়ে বলে উঠে,
“সত্যিরে বনু ফারহাজের থেকে তোকে বেশি কেউ ভালোবাসতে পারবে নাহ”।
ইরিনা ও তাল মিলিয়ে বলে উঠলো,
” ফারহাজ সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোকেই ভালোবেসে এসেছে আর এখনো তোকেই ভালোবাসে ফিহুরানি”।
ফিহার চোখে এইবার আরেকদফা জল গড়িয়ে পড়লো। নাহ নাহ কষ্টের নাহ এতো পরম সুখের কান্না, তার স্বামী তার লাটসাহেব তাকে ভালোবাসে এর থেকে আর কি বা চায় ফিহা।
ফিহা এইবার চোখের জলটা মুছে চারপাশে চোখ বুলালো ফারহাজকে দেখতে পারছে নাহ। কোথাও গেলো ফারহাজ?
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসী রিমি)
ফিহা খানিকটা স্লান গলায় বলে উঠে,
“লাটসাহেব, কোথায় গেলো?”
সত্যি ফারহাজ আশেপাশে কোথাও নেই। তখনি সাথে সাথে সব লাইট অফ হয়ে যায়। অবাক হয়ে যায় সবাই।
আহান কিছু একটা বুঝে মুচকি হাঁসে। ফিহা বিচলিত হয়ে যায় কিছুটা, কোথায় তার লাটসাহেব?
তখনি কারো কন্ঠে ভেঁসে উঠে,কেউ গান গাইছে। ফিহা ছাড়া সকলে বুঝতে পারে এই কন্ঠে ফারহাজের। ভেসে উঠে গান—-
Chale aao pass mere
Thoda aur thoda aur thoda aur
Chale aao pass mere
Thoda aur thoda aur thoda aur
Zara si baat hai
Samajhte kyun nahi
Tere bin main nahi
Mere bin tu nahi
Mere ho jao na suno thoda aur
Chale aao pass mere
Thoda aur thoda aur thoda aur
Chale aao pass mere
Thoda aur thoda aur thoda aur
Kahan ye yaari thi
Tere milne se pehle
Main yun pagal kahan thi
Tere mil ne se pehle
তখনি ফিহা পাশে কারো গভীর নিঃশ্বাস অনুভব করে কিন্তু কেউ নেই।
Chalun main ruku main
Tere ishaaron pe
Zameen pe kahan hoon
Main hoon sitaron pe…
cale aww pass mere thora aur…
 সাথে সাথে আরো আতশবাজি ফুটতে থাকে। ফিহা অবাকপানে শুধু তাঁকিয়ে থাকে.। সবাই মুগ্ধ হয়ে ফারহাজের কন্ঠ শুনে। ফিহা অনুভব করছে গানটা।
গানটা থেমে গেলো।শুধু মেইন স্টেজের লাইট অন হয়ে যায়। চারিদিকে অন্ধকার। মেইন স্টেজে ফারহাজ দাঁড়িয়ে আছে। মুখে সেই উজ্জ্বল হাঁসি। ফারহাজ ফিহার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। ফিহা দৌড়ে গিয়ে তার লাটসাহেব বরকে জড়িয়ে ধরে।
ফারহাজ পাগলি বলে তার ফিহুকে জড়িয়ে ধরে।
ফিহা কি বলবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে নাহ।
ফিহা শুধু ফারহাজ কানে আস্তে করে বলে উঠলো-
ভালোবাসি!
নিজের ফিহুর মুখে ভালোবাসি শব্দটি শুনে ফারহাজ আরো জোড়ে আকড়ে ধরলো তার নীলাঞ্জনাকে।
ফারহাজঃ “আমিও অনেক ভালোবাসি আমার পুচকি ফিহু”।
ফিহা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে,
” আপনি এতো ভালো কেন”?
ফারহাজ ফিহার কানে আস্তে করে কামড় বসিয়ে বলে উঠে,
—“আমি যে কতটা ভালো তা আজকে রাতেই বুঝতে পারবে.”
ফিহা লজ্জায় ফারহাজের বুকে মুখ লুকায়।
তখনি নিলয় কাশি দিয়ে বলে উঠে,
“ভাই আমরা কিন্তু এখানে সবাই আছি”।
সাথে সাথে ফিহা ও ফারহাজ একে অপরকে ছেড়ে দেয়। সবাই হু হা করে হেঁসে উঠে।
ইরিনা, আহান ও ফারহাজ ও ফিহা এক সাথে কেক কাটে।
—————————–
বাসরঘরে বসে আছে ফিহা। মনে অজানা এক ভয় সাথে এক প্রকার ভালো লাগা ও কাজ করছে তার।
চারদিকে বেলিফুল দিয়ে সজ্জিত। ফিহা একটিবার তাদের বেডে পাশে ছোট্ট টেবিলটির দিকে তাঁকায়। তার ও ফারহাজের ছবি যেখানে পরম যত্ন করে
খায়িয়ে দিচ্ছে, মিলা ও নয়না মিলে লুকিয়ে ছবিটি তুলেছিলো। ফিহা হেঁসে দেয়। ফিহা আরেকবার ঘরটির দিকে তাঁকায় চারদিকে শুধু ফিহা ও ফারহাজের বিভিন্ন মোমেন্ট এর ছবি বাঁধায় করে ফ্রেমে তুলে ধরা হয়েছে।
নিলয় ইশিকা সবাই মিলেই সাজিয়েছে বাসর ঘরটি। তখনি ফারহাজ প্রবেশ করে ফিহার কাছে এসে বলে উঠে,
” ফিহা তোমার সাথে কিছু কথা আছে”।
ফারহাজের মুখটা কেমন গম্ভীর লাগছিলো। কন্ঠস্বরটা শুনেও বেশ গম্ভীর লাগছিলো তাই ফিহা বলে উঠে,
“কি কথা বলুন”?
ফারহাজঃ ফিহু আমি আবারোও থানায় অফিসার হিসেবে জয়েন করেছি কালকে থেকে আমার জয়েনিং
ফিহাঃ “এতো ভালো কথা “।
ফারহাজ বিছনায় বসে ফিহার হাত দুটো আকড়ে ধরে বলে উঠে,
“ফিহু আজকে আমাদের বাসর রাত, বলতে গেলে আজকে থেকে আমাদের জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। তাই স্ত্রী হিসেবে তোমাকে কিছু বলাটা আমি জরুরী প্রয়োজন মনে করছি”।
ফিহাঃ ” কি কথা?”
ফারহাজ কিছুক্ষন থেমে আবারোও বলে উঠে,
“দেখো ফিহু, আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে নানাদিকে নানা কথা। মুলত বয়স নিয়েই। অইযে সমাজ। এই সমাজে একটি সুন্দর সম্পর্কের থেকে
বয়সকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সবাই শুধু পার্ফেক্ট কাপেল খুজে। যেই কাপলের সব দিক দিয়ে পার্ফেক্ট হতে হবে, কিন্তু ফিহু তুমি কোনোদিন ও এইসব বিষয় নিয়ে কখনো আপসেট হবে নাহ। তোমার স্বামী সবসময় তোমার পাশে আছে।আমিও আশা করবো তুমিও সবসময় আমার পাশে থাকবে।
বিয়ে আল্লাহর দেওয়া এক নেয়ামত। আল্লাহ তায়ালা ই বুঝেন কে কার জন্যে পারফেক্ট। আরেকটি কথা আমাদের সংসারে যাতে কোনোদিন ঝগড়া বিবেধ না হয় সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে সুখময় সংসারকে জান্নাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। অশান্ত ও কলহ-বিবাদে জড়ানো পরিবারের তুলনা শুধু জাহান্নামের সঙ্গে চলে।
পারিবারিক জীবনে সুখ, শান্তি ও কল্যাণ পেতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আন্তরিকতা ও ভালোবাসার পাশাপাশি প্রিয় নবী (সা.)-এর নির্দেশিত পথ ও পদ্ধতি অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। সংসারের সুখের জন্য স্বামী-স্ত্রী দু’জনের সমানভাবে দায়িত্ব রয়েছে”।
ফারহাজের কথা শুনে ফিহার মুখে ফুটে উঠে এক চিলতি হাঁসি। কত সুন্দর করে তার বর তাকে সব টা বুঝিয়ে দিলো। ফিহাও এইবার তার লাটসাহেব বরের হাত জোড়া শক্ত করে ধরে বলে উঠে,
-কথা দিচ্ছি আপনার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মনে রাখবে ফিহা হুহ…
ফারহাজ ফিহার দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাঁকায়। সত্যি তার ফিহু আজ সব কিছু বুঝার সক্ষমতা আছে। ফারহাজের সামনে যেনো এখন হুরপরী দাঁড়িয়ে আছে। যাকে খুব নিপুনভাবে খুটিয়ে দেখছে ফারহাজ।
হাদিস শরিফে আছে, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো স্বামী স্ত্রীর দিকে দয়া ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার দিকে দয়া ও রহমতের দৃষ্টি নিয়ে তাকান। ‘ এই হাদিসে বোঝা যায়, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা তাদের প্রতি রহম করা ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ফারহাজ ফিহার দিকে আরেকটু এগিয়ে বলে ঘোর কন্ঠে উঠে,
–“ফিহু ইউ নো! আজকে তোমাকে মোহমীয় লাগছে?
তোমার অই চোখে যেনো আমি গভীরভাবে ঢুবে যাচ্ছি। তোমার অই নীল মনি বিশিষ্ট চোখে যেনো আমি বার বার ঘায়েল”। তোমার এই নীল মনির জন্যেই তোমার নাম রেখেছিলাম নীলাঞ্জনা।
ফিহা ফারহাজের ব্রাউন মনিযুক্ত চোখে তাঁকায়। সজ্ঞে সজ্ঞে ফিহা চোখ নামিয়ে ফেলে, কেননা অই চোখে শুধু রয়েছে নেশা, ফিহাকে আজ রাতে আজকে কাছে পাওয়ার আকুলতা।
ফারহাজ ফিহার কাছে আরেকটু এগিয়ে ফিহার কপালে আস্তে করে চুমু খেয়ে বলে উঠে,
“ফিহু আমাদের বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনটাকে এইবার পুর্নতা দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে”। কথা দিচ্ছি একটুও কস্ট পেতে দিবো নাহ তোমায় নীলাঞ্জনা! ”
ফিহা ছলছলে চোখে ফারহাজের দিকে তাঁকিয়ে, ফারহাজকে জড়িয়ে ধরে। ফারহাজও মুঁচকি হেঁসে
ফিহার গলায় চুমু খেতে থাকে। ফিহা খামছে ধরে বিছানার চাঁদর। ফারহাজ ফিহার ঘাঁড়েও মুখে ডুবিয়ে দেয়। ফিহা আর না পেরে স্টান হয়ে শুয়ে পড়ে, ফারহাজ ফিহার হাত জোড়া বিছানার সাথে চেপে ধরে। চারদিকে অন্ধকারে। রুমে শুধু দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দই আসছে। ফিহা যেনো ফারহাজকে আরেক রুপে আবিষ্কার করে। ফারহাজ ও ফিহার গভীর ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকে স্বয়ং চাঁদ।
ফারহাজ ও ফিহাকে একটা গান ডেডিকেট করাই যায়,
জানি দেখা হবে ঠোঁটের ভেতরে
ঘুমের আদরে
চকমকে মনে মোম জ্বালাতে চাই
দিনে balcony বৃষ্টি রাতে চাই
পিছুডাকে ঘুম সাজাতে চাই বিছানা ঘিরে
ছোট lampshade, অল্প আলো তার
চুল খুলে কে যে রূপ বাড়ালো তার
তুমি বোঝো নাকি মন্দ ভালো তার?
যেও না ফিরে
জানি দেখা হবে রাতের সোহাগে
তোমার পরাগে… 💕💕
ফারহাজ ও ফিহা এইভাবে বিয়ে নামক #পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে হয়ে থাকুক…। ভালো থাকুক ফিহা ও তার লাটসাহেব বর।
সমাপ্ত 💚✨
——–The end——💚