অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-১৬

0
1177

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_____________১৬




সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে কুহু সবাইকে সার্ভ করলো,বিভোর কুহুকে বলল,বসো।কুহু বলল,আমি পরে খাব।বিভোর রেগে বলল,বসতে বলেছি তোমাকে।ওর দাদু বলল,হুম কুহু দিদিভাই বসো। কুহু ধিরে ধিরে বসলো, সবাই খেতে লাগল,বিভোর খাবার মুখে দিয়েই বুঝতে পারলো কুহুর রান্না। বিভোর বলল,কুহু তুমি না অফিসে বলছিলে তোমার শরীর খারাপ লাগছে।কুহু বলল,হুম কিন্তু কেন।বিভোর বলল,না তোমার শরীর খারাপ লাগ ছিল তাই চলে এসেছিলে তাহলে আবার রান্না করতে গেলে কেন।লিজা অবাক হয়ে বিভোরের দিকে তাকালো তারপর বলল,তুমি একবার মুখে দিয়েই বুঝে গেলে ও রান্না করেছে।

বিভোর বলল,হুম।বিভোরের দাদু বলল,বাহ খুব ভালো রান্না হয়েছে কিন্তু শরীর খারাপ লাগলে রান্না করতে গেলে কেন।কুহু সামান্য হেসে বলল,এমনি ইচ্ছে করলো তাই। সবাই আবার খেতে লাগল। খাওয়া শেষ করে বিভোর যেই উঠতে গেল তখন লিজা বলল,বিভোর ভাইয়া দাড়াও।
বিভোর বলল,কি হয়েছে। লিজা বলল, চল না বাহিরে যাই রাতে একটু ঘুরে আসি কাল তো শুক্রবার ছুটি আছে অনেক খন ঘুমাতে পারবে।বিভোর বলল,না যাওয়ার কি দরকার। লিজা বায়না করে বলল,প্লিজ চল না খুব ইচ্ছে করছে।বিভোর বলল,ঠিক আছে কুহু।লিজা আর কুহু অবাক হয়ে বিভোরের দিকে তাকালো,কুহু বলল,আমাকে ডাকলেন কেন।বিভোর বলল,রেডি হয়ে নেও বাহিরে যাব।

লিজা বেশ বিরক্ত হলো তারপর বলল,ও কেন যাবে যাওয়ার প্লেন তো আমাদের ছিল। বিভোর বলল,ও বাড়ীতে একা কি করবে এর থেকে ভালো আমাদের সাথে চলুক।কুহু বলল,না আমি যাব না শরীর ভালো লাগছে না।বিভোর বলল,চুপচাপ এক কোণারে পড়ে থাকলে তো শরীর আরও খারাপ লাগবে চল আমাদের সাথে ভালো লাগবে।কুহু যেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই বিভোর বলল,কোনো কথা না যাও রেডি হও।লিজা রেগে বলল,আমি যাব না।বিভোর সাভাবিক ভাবে বলল,ঠিক আছে তোর যেতে হবে না কুহু যাও রেডি হও লোং ড্রাইভে যাব।

কুহু আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল।আর লিজা রেগে একাকার।বিভোর রেডি হয়ে নিচে নামতে গিয়ে আবার লিজার রুমে গিয়ে লিজাকে বলল,যাবি গেলে বল নইলে কিন্তু এখনিই চলে যাব।লিজা বলল,তোমাকে বলেছিলাম আমরা দুজন যাব তুমি ওকে নিচ্ছো কেন।বিভোর বলল,আশ্চর্য ও গেলে কি হবে এখন আমার মুড হয়েছে ঘুরার তুই যাবি নাকি বল।লিজা বলল,ওকে নিয়ে গেলে যাব না।বিভোর বলল,ফাইন বায়।

বলেই লিজার রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো, আর লিজা রেগে বেডের বালিশটা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।বিভোর ওর দাদুর কাছে গিয়ে বলল,দাদু তুমি যাবে। ওর দাদু বলল,না আমার কি আর এইসবের বয়স আছে নাকি।বিভোর বলল,অবশ্যই আছে আমি আছি তো তোমার সাথে কোনো প্রবলেম হবে না চল ঘুরে আসি রাতে ঘুরতে মন্দ লাগবে না।ওর দাদু বলল,তো লিজা মহারানী কি যাবে না তোদের সাথে। বিভোর বলল,যাবে না বলছে আল্লাহ যানে ওর চিন্তাধারা কবে ঠিক হবে।ওর দাদু বলল,কি জানি তোরা যা সাবধানে থাকিস।বিভোর বলল,ঠিক আছে।ওর দাদু বলল,বিভোর শোন।বিভোর ওর দাদুর কাছে গিয়ে বলল,বল দাদু।ওর দাদু বলল,কুহু মেয়েটা খুব লক্ষী আমার ওকে ভিশন ভালো লেগেছে তোর কাছে কি মনে হয় মেয়েটা ভালো।বিভোর মুচকি হেসে বলল,ভালো না খুব ভালো মেয়ে ওর বিষয়ে বললে তো কম পড়বে। নিজের নাতির এমন উৎফুল্লতা দেখে ওর দাদু হেসে বলল,তাহলে এত গুলো দিন পর আমার দাদুভাইয়ের কোনো মেয়েকে ভালো লেগেছে।বিভোর ভ্রু কুচকে হেসে বলল,দাদু তুমি কি বলতে চাইছো।ওর দাদু বলল,পরে বলল যা তোরা।বিভোর বলল,ঠিক আছে আসি।

বিভোর কুহুর রুমের সামনে গিয়ে বলল,কুুহু তুমি রেডি হও নিই আমি রুমে আসছি।বলে ভিতরে ঢুকলো, বিভোর কুহুর দিকে তাকাতেই বিভোরের চোখ স্থির হয়ে গেল,চারপাশ মনে হয় থমকে গেছে, কালো ড্রেসে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে কুহুকে, চোখে কালো কাজল, কপালে কালো ছোট একটা টিপ খোলা চুল এইটুকুই যথেষ্ট কুহুকে মোহনীয় লাগার জন্য।কুহু হঠাৎ বিভোরের কাছে এসে বলল,চলুন।

দুজন গিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো হঠাৎ কুহু বলল,লিজা আপু আসবে না।বিভোর গাড়ি স্টার্ট করে বলল,না। বলেই চালাতে লাগল,লিজা উপর থেকে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো লিজার চোখ থেকে এক ফোটা পানি পড়লো, লিজা রেগে বলল, এই মেয়েটা আমার কাছ থেকে বিভোর ভাইয়াকে কেড়ে নিচ্ছে আমি তোমাকে দেখে নিবো কুহু।

প্রায় অনেক খন ধরে বিভোর গাড়ি চালাচ্ছে রাস্তায় কোনো জেম ও নেই মাঝে মাঝে এক দুটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে।কুহু আনমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে, বাহিরের হিম শীতল হাওয়া এসে কুহুর চুল গুলো উড়িয়ে দিচ্ছে ,বিভোর ড্রাইভ করতে করতে এক দুবার কুহুর দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে আবার সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে, হঠাৎ গাড়ি থামালো কুহু বলল,কি হলো।বিভোর বলল,তুমি জানো আমরা ঢাকা থেকে দূরে চলে এসেছি আশপাশ ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে ক্ষেত দেখতে পারবে।কুহু ভালো মতো তাকিয়ে দেখে বলল,আসলেই তো।

বিভোর বলল,সামনে দেখো চায়ের দোকান চল ওখানে মানুষ নেই বেশী দুজন বয়স্কো লোক আছে।কুহু আর বিভোর আস্তে আস্তে হেটে গেল,চায়ের দোকানে গিয়ে বিভোর বলল,চাচা দুই কাপ চা দেন তো।লোকটা বলল,দিতাসি বাবা। কুহু আশপাশটা দেখতে লাগল,রাতের এই নিশ্চুপ পরিবেশ যতটা লোমহর্ষক ঠিক ততো টা মনোরম। বিভোর এসে কুহুকে এককাপ চা এগিয়ে দিল।কুহু সামান্য হেসে খেতে লাগল,বিভোর কুহুকে বলল,কেমন লাগছে তোমার।কুহু মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,খুব ভালো।হঠাৎ বৃষ্টি শুরু, সবাই ভিশন অবাক এমন হঠাৎ বৃষ্টিতে।কুহু বলল,বৃষ্টিতে ভালো লাগছে।বিভোর বলল,বৃষ্টি থাকলে প্রবলেম নেই কিন্তু ঝড় শুরু হলে মহাবিপদে পড়বো।

দুজন বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছে কিন্তু এই বৃষ্টি উল্টো বেড়েই চলেছে,আবহাওয়া হঠাৎ আর খারাপ করলো বলা যায় ঝড় শুরু, বাতাসে আরও সমস্যা হচ্ছে। বিভোর বলল,এই ঝড়ে গাড়ি চালানো যাবে না আমি একা থাকলে চলে যেতাম বাট তোমাকে নিয়ে রিক্স নেওয়া যাবে না।
বিভোর পিছনে ঘুরে বয়স্কো লোকদের জিজ্ঞেস করলো, চাচা এখানে কাছে কোনো হোটেল আছে বা আজ রাত কাটানো যাবে এমন কোনো জায়গা। বয়স্ক লোকটা বলে উঠল, না এমন কোনো জায়গা বা হোটেল নাই।লোকটা বলল,তোমাগো কি বিয়া হইসে মানে তোমরা যদি জামাই বউ হও তাইলে আজ রাএরে আমার বাসায় থাকতে পারো আমার বউ আর আমি ছাড়া আর কেউ থাকে না।

বিভোর কি ভেবে যেন বলল,হ্যা আমরা স্বামী – স্রী, রাতে ঘুরতে বের হয়ে ছিলাম এমন একটা বিপদে পড়বো ভাবতে পারি নিই।ওই লোক বলল,আহো আমার লোগে এন থেকে কতখানি দূরেই আমার বাসা।বিভোর আর কুহু কিছু না বলে লোকটার সাথে গেল,যেতে যেতে ওরা ভিজে কাদা কাদা।বাসায় পৌছে কুহুকে আর বিভোরকে এক রুম দিল, ওরা রুমে চলে গেল,কুহু ঠান্ডায় কাঁপছে। বিভোর বলল,কুহু খুব ঠান্ডা লাগছে তোমার।কুহু কাপা কাপা কন্ঠে বলল,হুম।

এর মাঝেই ওই লোকটার বউ এসে বলল,তোমাগো ঠান্ডা লাগতাসে তাই না এই নেও এই গুলা পইরা নেও।বলে মহিলাটা চলে গেল।বিভোর দেখলো একটা শাড়ি, বিভোর শাড়িটা কুহুকে দিয়ে বলল,এই নেও এটা পড়ে নেও, বিভোর দেখলো একটা লঙ্গি, বিভোর লঙ্গির দিকে তাকিয়ে বলল,এটা কিভাবে পড়বো।কুহু বলল,কেন।বিভোর বলল,আরে এটা পড়ে একটা পা হাটলেই তো খুলে যাবে। বিভোরের কথা শুনে কুহু হিহি করে হেসে উঠলো, বিভোর বলল,হাসছো কেন এর থেকে ভালো আমি ভেজা জিন্সেই থাকি।কুহু বলল,আপনি একটু ওই চাচিকে ডেকে দেবেন।

বিভোর বলল,কেন। কুহু বলল,প্লিজ ডেকে দেন আমার খুব ঠান্ডা লাগছে।বিভোর বলল,ঠিক আছে।বিভোর মহিলাকে ডাক দিল,মহিলাটা এসে কুহুর সাথে রুমের এক কোণারে গিয়ে দাড়ালো, মহিলাটা বলল,কি হইসে। কুহু বলল,,,
– আসলে চাচী একটা কথা ছিল
– কও
– না মানে শাড়ি তো দিলেন কিন্তু ব্লাউজ কোথায়
– তোমার সাইজের ব্লাউজ তো আমার কাসে নাই, আমার গুলা তোমার হইবো না আমি কত মোটা তোমার থিকা, ব্লাউজ না পড়লে কি হইসে তুমি তো আর ঘর ধিকা বাইরাই তাসো না আর হেয় তো তোমার জামাই লাগে তাইলে সমস্যা কোনে।
– সমস্যা তো আছে
– তোমরা জামাই বউ না
– না না আমরা স্বামী স্রী, আসলে
– ওহহ বুঝসি নতুন বিয়া হইসে
– হুম
– এই লিগা লজ্জা পাইতাসো আরে তোমার জামাই তো লাগে লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমি গেলাম

মহিলাটা চলে গেল,বিভোর কুহুর কাছে এসে বলল,এত খন কি নিয়ে মিটিং করলে। কুহু বলল,তেমন কিছু না আপনি বাহিরে যান।বিভোর অবাক হয়ে বলল,কি এমন ঝড়ের মাঝে আমাকে রুম থেকে বের করে দিচ্ছো।কুহু বলল,কিছুখনের জন্য আমি ড্রেস চেঞ্জ করব।বিভোর বলল,ওহ সরি ওকে।বিভোর বাহিরে বের হলো।কুহু রুমে শাড়িটা পড়ে শরীরটা ভালো মতো ঢেকে নিল, তারপর বিভোরকে আসতে বলল,বিভোর রুমে ঢুকে দেখল কুহু দাড়িয়ে আছে ওর ভেজা গুলোর জন্য কুহুকে আর সুন্দর দেখাচ্ছে, বিভোর বলে উঠল, কুহু এখন আর বেশী ঠান্ডা লাগছে। কুহু বলল,না।

বিভোর বলল,শোয়া দরকার।কুহু বলল,কে কোথায় শোবে।বিভোর বলল,তুমি বেডে শুয়ে পড়ো আমি নিচে শুচ্ছি। কুহু বলল,না আমি নিচে শুচ্ছি। বিভোর বলল,বেশী কথা বল না চুপচাপ শুয়ে পড়ো।

হঠাৎ আকাশে জোর বজ্রপাত হলো,কুহু বিভোর দুজনই লাফিয়ে উঠলো, কুহু ভয়ের চোটে হঠাৎ বিভোরকে জরিয়ে ধরলো,হঠাৎ বিভোরের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি জন্ম নিলো,সে যেন নিজের হুশ হারিয়ে ফেলছে কুহুকে এত কাছে পেয়ে। দুজনের হার্টই অনেক জোরে জোরে বিট করতে লাগলো,বিভোর কুহুর মাথা ওর বুক থেকে আস্তে আস্তে উঠিয়ে নিলো,তারপর কুহুর দু গাল আলতো করে ধরে ওর ঠোটেট দিকে অগ্রসর হতে লাগল,এ পর্যায় বিভোর কুহুর ঠোট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো,কুহু ভিশন অবাক হলো, বিভোর কুহুর কোমড় টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো, কুহুর ভিশন অদ্ভুত লাগছে, কিন্তু কুহুর মনের কোণে ভালো লাগা রাও ঘিরে ধরেছে,কুহু উপলব্ধি করতে পারছে সে বিভোরকে ভালোবাসে তাই বিভোরের এমন কাছে আসায় ওর খারাপ লাগছে না। হঠাৎ আকাশে আবার বজ্রপাত হওয়ার শব্দ বিভোর কুহুকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিল,দূরে সরে দুজনই হাপাতে লাগল,কুহু লজ্জায় চোখ তুলে বিভোরের দিকে তাকাতে পারছে না। বিভোর এটা কি করলো সে নিজেই অবাক নিজের এমন কান্ডে।না জানি মেয়েটা কি ভাবছে, আমার হয়ে ছিল টা কি ওফফফ।

দুজন বেশ কিছু খন চুপ হয়ে দাড়িয়ে রইলো, বিভোর কি বলবে কুহুকে, এমন কিছু সে করে বসবে বিভোর ভাবতেও পারে নিই। বিভোর ভাবতে লাগল,ওকে আমি এখন কি বলব ও কি ভাবছে আমার সম্পর্কে শেট ম্যান শেট।কি করলাম এটা, কিন্তু কি করব ও আমার কাছে থাকলে এক অদ্ভুত নেশা কাজ করে আমার মাঝে। কুহু এখনো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে, সে কি করবে বা কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না।বিভোর সব নিরবতার সমাপ্তি ঘটিয়ে বলে উঠল, কুহু আ,আই এম রিয়েলি সরি। বিভোর আর কিছু বলতে পারলো না,বিভোর গিয়ে নিচে শুয়ে পড়লো।

কুহু কিছু না বলে ধিরে ধিরে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো,এক অদ্ভুত অনুভূতি, এক অদ্ভুত ভালো লাগা কুহুর মনে বিরাজ করছে।

চলবে………….
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙