অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-২০

0
1019

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট____________২০




কুহু এবার কাদু কাদু ফেস করে বলল, কেন চলে যাবেন আমি কি কিছু করেছি, আমার তো মনে পড়ছে না যদি কিছু করে থাকি সরি কিন্তু আপনি তাই বলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন।
কুহুর কথা শুনে বিভোর ভ্র কুচকে তাকালো কুহুর দিকে তারপর মনে মনে হাসতে লাগল আর বলতে লাগল,এই মেয়েটা এমন বোকা বোকা কথা কোথ থেকে আবিষ্কার করে কিন্তু ওর এই কাদু কাদু ফেস টা খুব কিউট লাগছে।

কুহু আবার বলল,কি হলো কিছু বলছেন না কেন?বিভোর কুহুর কোমড় টেনে কাছে নিয়ে এসে বলল,আরে ইডিয়েট আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি কে বলেছে।কুহু বলল,আপনি তো বললেন এখানে আর থাকবেন না।বিভোর বলল,আমার কথার মানে ছিল এখানে থাকবো না মানে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি, শুধু আমি না তুমিও।

কুহু অবাক হয়ে বলল,কি??? বিভোর মুচকি হেসে বলল,দেখো আমি ভিশন রোমান্টিক আমার খুব ইচ্ছে বউয়ের সাথে কিছু দিন একান্তে সময় কাটাবো যেখানে কোনো অন্য কাজ থাকবে না, বেশী দিন না অল্প কিছু দিনের জন্য হলেও আমরা যাব তোমার জিনিস পএ গুছিয়ে নেও।

কুহু বলে উঠল, হানিমুনে যাচ্ছি। বলেই চুপ হয়ে গেল,কুহু মনে মনে বলল,ইশশ কি যে বলি মুখে কিছু আটকায় না।কুহু বিভোরের দিকে তাকিয়ে দেখলো বিভোর মিটিমিটি হাসছে,কুহু মুখে একটা নকল হাসি টেনে বলল,না মানে আসলে আমার কথার মানে ছিল যে ইয়ে আসলে।
বিভোর মুখে বাকা হাসি টেনে বলল,থাক আর ইয়ে ইয়ে করতে হবে না যা যা লাগে গুছিয়ে নেও।কুহু আর কিছু না বলে গুছিয়ে নিতে লাগল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

পরের দিন সকালে ওরা কক্সবাজারের উদ্দেশ্য রওনা দিল,দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ওরা কক্সবাজারের পৌছালো তারপর একটা হোটেল এতে উঠলো,রুমে গিয়েই কুহু বিছানায় গা এলিয়ে দিল।বিভোর বলল,আহা কুহু কি হচ্ছে এসব যাও আগে ফ্রেশ হয়ে নেও।কুহু বলল,প্লিজ আমার ইচ্ছে করছে না আমি শুয়ে থাকবো।বিভোর বলল,যাও। কুহু গাল ফুলিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল, আর বিভোর কুহুর এমন গাল ফুলানো দেখে হেসে ফেলল,তারপর কাপর-চোপর বের করে আলমারিতে রাখতে লাগল।

অনেক খন হলো কিন্তু কুহুর বের হবার খবর নেই,বিভোর ওয়াসরুমের কাছে গিয়ে বলল,কুহু কি করছো এখনো বের হচ্ছো না কেন, কি হলো কথার উওর দিচ্ছো না কেন আমি কিন্তু ভিতরে চলে যাব। বিভোর দরজায় হাত দিয়ে দেখলো দরজা লক করা না।বিভোর আবার বলল,আমি ভিতরে আসছি।বিভোর ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল।পরক্ষনেই বিভোর ঠোটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো,কুহু বার্থটাবে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে,বিভর কুহুর কাছে গিয়ে মুচকি হেসে কুহুর দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর কুহু ডাক দিল।কিন্তু কুহু উঠলো না তাই হ্যান্ড শাওয়ার হাতে নিয়ে অন করে কুহুর মুখে ধরলো আর কুহু হুর মুড়িয়ে উঠে পড়লো।

কুহু বলল,আপনি কি পাগল। বিভোর বলল,পাগল হয়ে থাকলে তার জন্য তুমি দাই তোমাকে ফ্রেশ হবার জন্য পাঠিয়ে ছিলাম আর তুমি ঘুমিয়ে আছো।কুহু বলল,আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল।
বিভোর বলল,আগে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও তারপর খাবে দ্যান ঘুমাবে আর ঘুম থেকে উঠলে আমরা ঘুরতে বের হব কেমন।কুহু বলল,ঠিক আছে।বিভোর বলল,এখন ফ্রেশ হয়ে নেও।বিভোর বের হয়ে গেল,কুহু ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে আসলো।কুহু আসার পর বিভোর ওয়াসরুমে চলে গেল,কিছুখন পর বিভোর ওয়াসরুমের দরজা অল্প খুলে বলল,কুহু টাওয়াল দেও তো নিতে ভুলে গেছিস।কুহু বলল,আচ্ছা। বলেই থেমে গেল মাথা দুষ্টুমি বুদ্ধি ঘুরতেই কুহু বলল,নিজে নিয়ে যান।

বিভোর বলল,কি আমি কিভাবে নেব।কুহু বলল,কেন পায়ে হেটে।বিভোর বলল,আর ইউ সিরিয়াস আমি বের হবো।কুহু বলল,,হুম।বিভোর বলল,ওকে বের হচ্ছি পরে আমাকে কিছু বলতে পারবে না।কুহু বলল,হুম না না না না আমি দিচ্ছি।কুহু টাওয়েল নিয়ে এসে দরজার কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,নিন।বিভোর টাওয়েল সহকারে কুহুকে ভিতরে ঢুকিয়ে নিল,কুহু আতকে গিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল,বিভোর কুহুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল,কি হলো বউ চোখ বন্ধ কেন।

কুহু ধিরে ধিরে চোখ খুলে বিভোরের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার চোক বন্ধ করে ফেলল,বিভোর মুচকি হেসে বলল,কি হয়েছে চোখ খুলে তাকাও দেখো ।কুহু চোখ বন্ধ করে রাখলো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে কুহুর ফেস।কুহু চোখ বন্ধ রেখে বলল,আপনি তো ভারি নির্লজ্জ।বিভোর বলল,কি আমি নির্লজ্জ। কুহু বলল,হুম ছাড়ুন আমাকে।বিভোর বলল,আগে দেখো আমাকে। কুহু বিভোরের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে রইলো,বিভোর দুষ্টু হেসে বলল,তো আমাকে এই ব্লাক কালারের টি শার্ট এতে কেমন দেখাচ্ছে।
কুহু বিভোরের দিকে তাকিয়ে বলল,আপনিও না।বিভোর ভ্রু কুচকে বলল, কি।

কুহু বলল,শরুন তো। কুহু বিভোরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বাহিরে চলে গেল।বিভোর ও বের হলো,কিছুখন পর দুজন খাওয়া শেষ করে ঘুরতে বের হলো,ঘুরতে ঘুরতে রাত হলো,বিভোর আর কুহু একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার সেরে ফেলল,হোটেলে ফিরে এসে, কুহু বিভোরকে বলল,শুনুন।বিভোর বলল,কি হয়েছে। কুহু বলল,একটু কোক এর ব্যবস্থা করবেন খুব খেতে ইচ্ছে করছে।বিভোর বলল,ঠিক আছে আমি ফোন করে বলে দিচ্ছে পাঠানোর জন্য,আর শোনো আমি একটু বাহির থেকে আসছি আকাশের সাথে কথা বলে অফিসের খবর নিতে হবে।কুহু বলল, ঠিক আছে কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবেন।বিভোর বলল,হুম।

বিভোর বাহির থেকে কথা শেষ করে এসে দেখে কুহু মনের আনন্দে কোক খাচ্ছে, বিভোরকে দেখে বিরাট এক হাসি দিয়ে বলল,হায় হ্যালো মাই ডিয়ার হ্যান্ডসাম হাসব্যান্ড হিহি।বিভোর ভ্রু কুচকে বলল,তোমার কি হয়েছে আবার। কুহু বলল,আমার আবার কি হবে আসুন কোক খান আর আসমানে উড়ে যান হিহিহি। বিভোর কিছু না বলে গিয়ে কুহুর পাশে বসলো,আর কুহুর কান্ড দেখতে লাগল,এর মাঝেই দরজায় কেউ টক্কা দিল,বিভোর গিয়ে দরজা খুললো,ওপাশেই হোটেলের একজন স্টাফ, বিভোর বলল,জ্বি বলুন।উনি বললেন,সরি স্যার ভুল বসতো আরেকজনের অর্ডার আপনাদের দিয়ে ফেলেছি এই নিন কোক।বিভোর এর বুঝতে আর বাকি রইলো না, ভিতর থেকে কুহু এসে লোকটাকে বলল,হে কে আপনি আমাদের ডিস্টার্ব করছেন কেন আচ্ছা আপনি কি জানেন আমরা হানিমুনে এসেছি হিহিহি আমরা হ…..আর কিছু বলার আগে বিভোর কুহুর মুখ চেপে ধরলো আর বলল,আপনি যান এখন।স্টাফ টা বলল,স্যার প্লিজ মেনেজার এর কাছে বিচার দেবেন না আমার চাকরি চলে যাবে।

বিভোর বলল,ঠিক আছে নেক্সট টাইমে খেয়াল রাখবেন।স্টাপ এক শান্তির হাসি দিয়ে বলল,থ্যাংকস স্যার। বিভোর কুহুকে বলল,কি বলছিলে তুমি।কুহু বলল,ছাড়ুন আমাকে।বিভোর বলল, না ঘুমাবে এখন।কুহু বিরক্ত হয়ে বলল,না না না ঘুৃমাবো না গল্প করব।বিভোর বলল,আচ্ছা তো গল্প কর।কুহু বিভোরকে বলল,আপনাকে আমি ওই দোলনার কথা বলেছিলাম।বিভোর বলল, না তো।কুহু বলল,আচ্ছা তাহলে শুনুন আমার যখন ছয় বছর বয়স তখন বাবা আমি পার্কে গিয়ে ছিলাম আর সাথে আমার মামা তো বোন ছিল,আমি দোলায় বসে ছিলাম আর ও ধাক্কা দিচ্ছিল। বিভোর বলল,আচ্ছা তারপর,
– আমার খুব মজা লাগ ছিল আমি ওকে বলছিলাম আপু আরো জোরে আরো জোরে
– ওহো
– তারপর আপু আরো জোরে ধাক্কা দিতে লাগল আর আমি আকাশে উড়ে গেলাম
– তাই
– হুম কিন্তু আমি দোলনা থেকে নিচে পড়ে যাই আর আমার মাথা ফেটে যায়
– ওহো এখন বুঝলাম তুৃমি যে উল্টাপাল্টা কাজ কর তা মাথায় আঘাত পাবার জন্য
– কি
– হুম
– বিভোর আপনি আমাকে দোলায় নিয়ে যাবেন
– আচ্ছা বাড়ি ফিরে নেই ওখানে সুন্দর একটা দোলনা লাগিয়ে দেবো আর অনেক গুলো জীব জন্তুও ছেড়ে দেবো
– সত্যি
– সত্যি
– আই লাভ ইউ
– আই লাভ ইউ টু
সকালে কুহুর চোখ খোলার পর দেখলো, কুহু বিভোরের বুকের উপর, কুহুকে উঠতে দেখে বিভোর বলল,কি ম্যাডাম উঠে গেছেন। কুহু বলল,হুম আপনি কখন উঠেছেন।বিভোর বলল,আরও অনেক আগে।কুহু বলল,তো আমাকে ডাকেন নিই কেন।বিভোর বলল,কারণ তুমি ঘুমা ছিলে বাদ দাও যাও ফ্রেশ হয়ে আসো ব্রেকফাস্ট করব।কুহু বলল,ঠিক আছে।

সন্ধ্যার দিকে বিভোর কুহুকে আবার ঘুম থেকে উঠিয়ে দিল, কুহু ঘুম ঘুম চোখে বলল, কি হয়েছে।বিভোর বলল,ওঠো তো।কুহুকে টেনে উঠালো বিভোর, বিভোর একটা মেহেদী নিয়ে কুহুর হাতে দিয়ে দিতে লাগল,কুহু অবাক হয়ে বলল,কি করছেন।বিভোর বলল,মেহেদী দিয়ে দিচ্ছি এর হলুদ লাগিয়ে দেব ফ্রেশ হয়ে এসে বউয়ের মতো সাজবে। কুহু অবাক হয়ে বলল,কি।বিভোর বলল,হুম চুপচাপ হাত দাও।

বিভোর কুহুর হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিতে লাগল, খুব ভালো না হলেও মন্দ হয় নিই,বিভোরের পাগলামি কুহু দুচোখ ভরে দেখছে, এত ভালোবাসা পাবে কখনো ভাবে নিই কুহু।বিভোর কুহুর হাতে মেহেদী দেবার পর, বিভোর হলুদ এনে নিজের গালে লাগিয়ে, নিজের গালের হলুদ,গাল দিয়ে কুহুর গালে লাগিয়ে দিল,বিভোরের ভালোবাসার ছোয়া পেয়ে কুহু চোখ বন্ধ করে ফেলল,বিভোর কুহুর কানের কাছে এসে ধির কন্ঠে বলল,যাও শাওয়ার নিয়ে আসো আর এই শাড়িটা পড়বে।

কুহু সামান্য হেসে শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল,প্রায় অনেক খন পর ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখলো পুরোটা রুম গোলাপের পাপড়ি আর রেড কেন্ডেল দিয়ে সাজানো।
বিভোর পিছন ঘুরে কুহুকে দেখে ভিশন মাএায় মুগ্ধ হলো,তারপর কুহুর কাছে গিয়ে বলল,আজ থেকে সব সময় শাড়ি পড়বে শাড়িতে আমার ভালবাসাটাকে আর সুন্দর লাগে।
কুহু লাজুক হাসলো।বিভোর বলল,আমি কথা বলে আসি আকাশের সাথে তুমি বউ সাজো।

বিভোর বাহিরে চলে গেল,কুহু হালকা সাজলো, বিভোর কথা শেষ করে রুমে এসে কুহুকে দেখে এক জায়গায় দাড়িয়ে রইলো বুকে হাত দিয়ে, বিভোর কুহুকে দেখে মনে মনে বলল, এই মেয়েটা পাগল করে ফেলবে আমাকে। বিভোরের এমন চাহনিতে কুহু বেশ লজ্জা পেল,বিভোর ধির পায়ে কুহুর কাছে যেতে লাগল,,,,

চলবে………
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙