অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-২৩

0
912

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট____________২৩




কুহু হাসছিল বিভোর মুগ্ধ হয়ে কুহুর হাসি দেখছিল হঠাৎ ক্যাবিনের দরজা খুলে কেউ ভিতরে ঢুকলো, বিভোর আর কুহু দরজার দিকে তাকালো,কুহু তো ভাবতে লাগল এই মেয়েটা কে, কিন্তু বিভোরের বুঝতে বাকি রইলো না, মেয়েটা আর কেউ না মিমি।দুই বছর পর মিমিকে দেখলো, এত দিন ফোনে কথা হলও সামনাসামনি দেখেনি বিভোর।

মিমি কুহুকে বলল,বের হও ক্যাবিন থেকে আমাকে আর বিভোরকে একা ছেড়ে দাও।কুহু এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। বিভোর চায় না কুহুর সামনে কোনো সিনক্রিয়েট হক বিভোর কুহুকে বলল,তুমি এখন বাহিরে যাও।কুহু কিছু না বলে একবার মিমির দিকে তাকিয়ে চলে যেতে নিল, কুহু ডর এর খুলে বাহিরে বের হতে গিয়ে আরেক বার ভিতরে তাকালো, তখন দেখলো মিমি দৌড়ে গিয়ে বিভোরকে জরিয়ে ধরলো।এটা দেখে কুহু মনের ভিতরে ধক করে উঠলো।কুহু আর না তাকিয়ে চলে আসলো,কাউকে কিছু না বলে অফিসে থেকে বেড়িয়ে গেল।

গাড়িতে উঠে বসলো না পিছন থেকে ড্রাইভার চাচা, আম্মা আম্মা বলে ডেকেই চলেছে, কুহুর কানে হয় তো কিছুই পৌঁছাচ্ছে না, সে নিজের মতো হেটে চলেছে আজ সারা টা দিন ভালোই গরম ছিল তাই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু, খুব জোরে জোরে বজ্রপাত হচ্ছে কিন্তু কুহুর কানে এইসব আওয়াজ পৌঁছাচ্ছে না।বৃষ্টির পানি আর চোখের পানি মিলে এক হয়ে গেছে, কুহু মনে শুধু একটাই প্রশ্ন মেয়েটা কে ছিল, আর বিভোর আমাকে কিছু না বলে চলে যেতে বলল,মেয়েটা কি উনার খুব কাছের, কাছের না হলে তো আর উনাকে জরিয়ে ধরতো না, কি হচ্ছে এসব কে এই মেয়ে,আচ্ছা বিভোর কি ভালোবাসে আর আমাকে ভালোবাসবে না।হঠাৎ কারও গাড়ির সামনে পড়লো কুহু।

অন্য দিকে,বিভোর সাথে সাথে মিমিকে নিজের থেকে সরিয়ে বলল,কি সমস্যা তোমার এখানে কি করছো।মিমি বিভোরের গাল হাত দিয়ে বলল,আগে আমাকে দেখতে দাও তোমাকে আমি নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটাই কত গুলো প্রহর দেখি নিই তোমাকে।বিভোর মিমির হাত সরিয়ে বলল,এভাবে হুটহাট আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না এখন আমি একজন বিবাহিত পুরুষ ভুলে যাবে না।

মিমি বলল,কিসের বিয়ে ওই বাচ্চা মেয়েটা ভালোবাসতে পারে তোমাকে আমি তোমাকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি। বিভোর রেগে বলল,চলে যাও এখান থেকে আমি চাই তোমার জন্য কুহু বিন্দু পরিমাণ কষ্ট পাক।মিমি বলল,কুহু কুহু করছো কেন তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে তাহলে।বিভোর বলল,হ্যা এক সময় বাসতাম কিন্তু এখন আর বাসি না লজ্জা নেই তোমার দুই বছর আগে আমার সাথে চিট করলে,মাহমুদের কাছে ভালো থাকবে বলে, আর এখন যখন পারলে না ভালো থাকতে আবার আমার কাছে এসেছো।মিমি বলল,সরি বিভোর আই এম রিয়েলি সরি প্লিজ বিভোর সব ভুলে যাও আবার নতুন করে সব শুরু করব।

বিভোর রেগে বলল,সাটআপ মিমি আর একটা কথাও বলবে না চলে যাও এখান থেকে যাও।ধমক দিয়ে রেগে বলল,এর মাঝে বিভোরের ক্যাবিনে ড্রাইভার চাচা এসে বলল,বিভোর আব্বা শোনো।বিভোর বলল,কি হয়েছে চাচা।ড্রাইভার চাচা বলল,কুহু আম্মা অফিস থিকা পাইরাইয়া কোনে জানি গেসে গা আমি এত ডাকলাম কিন্তু শুনলো না। বিভোর ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো কুহুকে হারানোর ভয়ে, বিভোর ক্যাবিন থেকে বের হতে হতে একবার মিমির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, আর কখনো আমাদের সামনে আসবে না।

বলেই বিভোর ক্যাবিন থেকে বেড়িয়ে পড়লো, কুহু ভাবলো হয় তো এখানেই জীবনের সমাপ্তি ঘটবে, কিন্তু না কিছু হলো না চোখের সামনের থেকে হাত সরিয়ে দেখলো গাড়িটা থেমে আছে।গাড়ি থেকে একটা ছেলে ছাতা নিয়ে বের হয়ে কুহুর সামনে এসে বলল,মিসেস বিভোর আপনি। কুহু ছেলেটাকে দেখে চিনতে পারলো।ছেলেটা বলল,এমন বৃষ্টির মাঝে রোডে কি করছেন।কুহু বলল,এমনি বৃষ্টিতে ভিজতে মন চাইলো।ছেলেটা বলল,অসুস্থ হয়ে পড়বেন তো আসুন গাড়িতে বসুন কোথায় যাবেন।কুহু বলল,বাড়ীতে যাব।ছেলেটা বলল,আসুন আমি নামিয়ে দেবো।কুহু কি ভেবে যেন গাড়িতে বসে পড়লো।কুহু এক মনে বাহিরেের দিকে তাকিয়ে আছে, কুহুর সম্পূর্ণ শরীর ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।ছেলেটা ড্রাইভ করছে হঠাৎ কুহুর দিকে তাকালো আবার সামনে তাকালো, মনে মনে বলতে লাগল,ইয়েস আই এম উইন যা চাইছি তাই হচ্ছে। ভেবেই বাকা হাসলো।

বিভোর গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো চারপাশ খুজতে লাগল,হঠাৎ মনে হলো বাড়ীতে দারোয়ান চাচাকে ফোন করি।বিভোর কল করলো, দারোয়ান ফোন কল রিসিভ করে বলল,
– হ্যালো
– চাচা কুহু কি বাড়ী ফিরেছে
– হো মাএ আইলো বাসায় ঢুকছে
– ওকে

বিভোর মনে শান্তি ফিরলো, বাড়ীর উদ্দেশে রওনা দিল।কুহু বাড়ীতে ঢুকে নিজের রুমে চলে গেল, গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো আর ভাবতে লাগল কি হচ্ছে এইসব আমার সাথে মেয়েটা কে ছিল বিভোর কি আর ভালোবাসবে না আমাকে।বিভোরকে হারিয়ে ফেলবে ভাবতেই কুহুর মনো আকাশ জুড়ে বৃষ্টি শুরু।

বিভোর বাড়িতে পৌছে গাড়ি পার্ক করে দ্রুত গতিতে রুমের দিকে গেল,দেখলো দরজা খোলা, ভিতরে আসতেই দেখলো কুহু ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথা দিয়ে রেখেছে।বিভোর ধিরে ধিরে কুহুর সামনে গিয়ে হাটু ভেঙ্গে বসলো তারপর বলল,কুহু।কুহু ধিরে ধিরে বিভোরের দিকে তাকালো,কুহুর চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছে। কুহু বিভোরকে দেখে বিভোরকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিল আর ভাঙ্গা গলায় বলতে লাগল,প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না, আপনাকে ছাড়া আমি বাচতে পারব না, আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ।বিভোর অবাক হয়ে গেলো,কুহুকে জরিয়ে ধরে বলল,এই পাগলি কে বলেছে আমি তোমাকে ছেড়ে যাব তোমাকে ছাড়া কি আমি ভালো থাকতে পারব, আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাব না আর তোমাকেও কোথাও যেতে দেব না।

কুহু বলল,ওই মেয়েটা কে ছিল যে আপনাকে জরিয়ে ধরে ছিল।বিভোর বুঝতে পারলো কুহু দেখেছে তাই এমন করছে, বিভোর কুহুর মাথা একটা চুমু খেয়ে বলল,ওটা মিমি ছিল আমি তোমাকে বলে ছিলাম মিমি কেমন পাগলামো শুরু করেছে, আমি তোমাকে ক্যাবিন থেকে চলে যেতে বলে ছিলাম এই কারনে যে তুমি এইসব না জানো, জানলে তোমার এমনই অবস্থা হবে তাই তোমাকে জানাতে চাই নিই যেন তুমি কষ্ট না পাও কিন্তু তুমি তো জেনেই গেলে।কুহু বলল,উনি কি বলছিল আপনাকে।বিভোর বলল,ভালোবাসে ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে ইত্যাদি। কুহু বলল,আপনি উনাকে মাফ করে দেবেন। বিভোর বলল,কুহু শোনো আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি আর শুধু তোমাকে ভালোবাসবো। কুহু বুকের থেকে মাথা তুলে হেসে বলল,সত্যি।বিভোর হেসে বলল,হুম সত্যি তুমি কি ভেবেছো।কুহু আবার বুকে মাথা রেখে বলল,আমি ভেবে ছিলাম আপনি আর আমাকে ভালোবাসবেন না।বিভোর বলল,দেত এইসব কেউ ভাবে এইসব ভেবে নিজের এই হাল করেছো একা একা যে আসলে কোনো বিপদ হলে কি করতে।কুহু কিছু বলতে গেল তার আগেই বিভোর বলল,পরে হবে কথা আগে ড্রেস চেঞ্জ কর অসুস্থ হয়ে পড়বে তুমি করবে নাকি আমি করিয়ে দেবো।বিভোরের কথা শুনে কুহুর মুখ লাল হয়ে গেল, কুহু লজ্জায় চোখ বন্ধ করে লাজুক হেসে বলল, যান অসভ্য।বিভোর হেসে বলল,বউয়ের সাথে অসভ্যতামি করব না তো কার সাথে করব।কুহু বলল,হয়েছে আপনার এবার ছাড়ুন আমাকে আমি চেঞ্জ করে আসি।

বিভোর কুহুকে ছেড়ে দিল, কুহু উঠে ওয়াসরুমে চলে গেল। বিভোর বিছানার উপর শুয়ে পড়লো আর সব কিছু ভাবতে লাগল,কিছুখন পর কুহু ফ্রেশ হয়ে বের হলো,কুহুকে দেখে বিভোর শোয়া তেকে উঠে কুহুকে হঠাৎ কোলে তুলে নিলো তারপর নিচে যেতে লাগল,কুহু অবাক হয়ে বলল,কোথায় যাচ্ছেন।বিভোর বলল, ডাইনিং টেবিলে খুব খিদে পেয়েছে।
কুহুকে চেয়ারে বসিয়ে নিজে বসে পড়লো, তারপর দুজন খাবার খেয়ে নিলো।

মাঝ রাত ৩ টা বাজে, কুহু বিভোরের বুকে মাথা রেখে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু বিভোরের চোখে ঘুম নেই। সে দুনিয়ার সকল চিন্তা ভাবনায় ডুবে আছে।হঠাৎ কুহুর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল,মিমি কি শুরু করেছে ওর জন্য কুহু আজ কতটা কষ্ট পেলো, মেয়েটা কতটা ভালোবাসে আমাকে আর কি চাই আমার এই ভালোবাসা দিয়েই যে আমি সারা টা জীবন অনায়াসে পার করে দিতে পারব, বিভোর মুচকি হেসে কুহুর কপালে একটা ভালোবাসার ছোয়া দিয়ে আরও শক্ত জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলো।

চলবে……….
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙