অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-২৪

0
914

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট____________২৪




কুহু ঘুম থেকে উঠে দেখলো, সে বিভোরের বুকে শোয়া। বিভোর কুহুকে উঠতে দেখে বলল গুডমর্নিং। কুহু ও বলল,গুডমর্নিং। বলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠে পড়লো আর বলল,আল্লাহ ১০ টা বাজে আর আপনি আমাকে ডাকলেন না ওয়েট আপনি অফিসে যাব নিই।
বিভোর বলল,গাধী কোথাকার আজ ছুটির দিন। কুহু বলল,ওহ ভুলেই গিয়ে ছিলাম।

বিভোর বলল,যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।কুহু বলল,হুম কিন্তু আপনি কখন ঘুম থেকে উঠলেন।বিভোর বলল,আরও কিছু খন আগে এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।কুহু বলল,ঠিক আছে।কুহু ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে আয়নার সামনে মুখ মুছ ছিল তখনি দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো বিভোর হাতে দুই কাপ চা।বিভোর কুহুর কাছে এসে কুহুর দিকে একটা কাপ বাড়িয়ে বলল,মহারানী এই সামান্য চেষ্টা গ্রহণ করুন।

বিভোরের এমন কথা শুনে কুহু খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো তারপর বলল,কেন না অবশ্যই। বিভোর কুহুর হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে বসালো দুজন চুপচাপ বসে চা খাচ্ছে। কুহু হঠাৎ বলল,
– আজ আপনি কাজ করবেন না
– কেন??
– না মানে আপনি তো ছুটির দিনও বাড়ীতে অফিস খুলে বসে থাকেন
– হাহাহা না আজ আর এমন করব না আজ সারাটা দিন শুধু দুজনের
– হুট করে কি হলো আপনার
– আমি চাই আজ সারা টা দিন তোমার সাথে কাটাতে এর মাঝে অন্য কিছু যেন না আসে
– ঠিক আছে আমি নিচে গিয়ে দেখি খালা কি করছে
– খালাকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি
– কি? কেন? উনি সুস্থ তো
– আরে বাবা হ্যা উনি সুস্থ, ব্রেকফাস্ট আমি বানিয়েছি
– সত্যি
– হুম চল ব্রেকফাস্ট করবে
– ওকে,আই এম সো এক্সাইটেড
– কেন
– আপনার বানানো খাবার তো এবার প্রথম খাব তাই
– হুম চল
– হুম চলুন চলুন

বলেই কুহু এক দৌড় দিল, কুহুকে এমন প্রাণ উজ্জ্বল দেখে বিভোর হেসে দিল তারপর কুহুর পিছন পিছন গেল।দুজন বসে খেতে লাগল,কুহু খাবার মুখে নিয়ে খেয়ে বলল,ওয়াও খুব ভালো হয়েছে।বিভোর আনন্দিত হয়ে বলল,সত্যি।কুহু বলল,হুম আমার খুব ভালো লাগছে।
খাবার শেষ করে কুহু বলল,এখন।বিভোর বলল,এখন তুমি গিয়ে শাড়ি পড়ো তারপর আমরা বের হবো।কুহু বলল,বাহিরে গিয়ে কি করব।বিভোর বলল,আজ সারা দিন বাহিরে ঘুরবো আজকের দিনটা মেঘলা আর মেঘলা দিন আমার বরাবর প্রচন্ড পছন্দের। কুহু লাফিয়ে উঠে বলল,সেম আমারও খুব পছন্দ। বিভোর বলল,তাহলে অপেক্ষা কিসের চল রেডি হয়ে নেও।

কুহু আর দেরি না করে দ্রুত গিয়ে রেডি হয়ে নিলো তারপর দুজন বের হলো, দিনটাকে সুন্দর আর সরণীয় করার জন্য।বিভোর ড্রাইভ করছে আর কুহু বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে, গাড়ির জানালা খোলা বাহিরের সতেজ হাওয়া এসে কুহুর চুল উড়িয়ে দিচ্ছে, বিভোর ড্রাইভের ফাকে ফাকে এক দুবার কুহুর দিকে তাকাচ্ছে। কুহু হঠাৎ বলল,আচ্ছা এই জায়গাটা কোথায় । বিভোর বলল,আমরা এখন শহর থেকে দূরে আছি এটা একটা গ্রাম আর একটু সামনে গিয়ে থামাবো।বিভোর আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে, একটা খোলামেলা জায়গায় গাড়ি থামালো।

দুজনই নামলো,কুহু চারপাশটা দেখে আনন্দে ওর মন ভরে গেল,এমন প্রকৃতি ঢাকা শহরের দালান কোটার মাঝে দেখা যায় না।কুহু চারপাশ দেখে মুগ্ধ সামনেই একটা ছোট নদী আছে আছে,আর অনেক গুলো ছোট নৌকাও আছে।কুহু বিভোরকে বলল,এই জায়গাটা খুব সুন্দর বিভোর আমার ভিশন ভালো লেগেছে।বিভোর মুচকি হেসে বলল,তাহলে তো খুব ভালো কথা।কুহু বলল,চলুন না ওই উচু জায়গা টায় বসি।বলেই কুহু বিভোরের হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগল,বিভোর আর কুহু বসলো,আশ পাশে মানুষ নেই মানুষ আছে কিন্তু অনেক দূরে দূরে।

কুহু হঠাৎ বিভোরের কাধে মাথা রাখলো আর সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো।বিভোর ও চুপ হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে মাঝে মাঝে কুহুর দিকে ও তাকাচ্ছে। কুহু হঠাৎ বলল,জানেন কাল ওই সব দেখার সময় খুব কষ্ট হচ্ছিল ভেবে ছিলাম আপনি আর আমাকে ভালোবাসবেন না।বিভোর বলল,সরি কুহু তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নিই আমি। কুহু বলল কিন্তু এখন আমার খুব ভালো লাগছে।বলে বিভোরের কাধে আবার মাথা রাখলো আর বিভোরের এক হাত জরিয়ে ধরে রাখলো।

বিভোর হঠাৎ বলল,দুপুর কিন্তু হতে চলেছে লাঞ্চ করতে হবে।কুহু বলল,এখানে কিভাবে।বিভোর হেসে বলল,নৌকায় বসে আজ নাঞ্চ করব।কুহুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো কুহু খুশিতে চিল্লিয়ে বলল,সত্যি।বিভোর বলল,হুম।কুহু বলল,তাহলে চলুন চলুন।বিভোর আর কুহু তারপর নৌকার কাছে গেল, নৌকা উঠে বসলো দুজন, তারপর খাবার খেলো,খাবার খেয়ে নৌকার সাইডে বসে দুজন পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলো,আর মাঝি তার গতিতে নৌকা চালিয়ে চলেছে।কুহু বিভোরের কাধে মাথা রেখে চুপ হয়ে নদীর সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত।বিভোর কুহুকে বলল,কুহু ভালো লাগছে তোমার।কুহু বলল,ভিশন ভিশন ভিশন ভালো লাগছে আপনাকে এত এত এত গুলো থ্যাংকস।

কুহুর ঠোটের কোণে হাসি দেখে বিভোরের ঠোটে হাসি ফুটলো।সারা টা দিন দুজন এক সাথে কাটালো আর খুব আনন্দ করলো।পরের দিন থেকে আবার শুরু হলো ব্যস্ত জীবনের ব্যস্ততা।
কুহু ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস করে। বাড়ীতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করলো,তারপর আবার রেডি হলো অফিসে যাওয়ার জন্য,রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লো অফিসের জন্য।অফিসে পৌছে প্রতি দিনের মতো বিভোরের ক্যাবিনে গিয়ে বলল,আমি চলে এসেছি।বিভোর মনোযোগ ল্যাপ্টবে দিয়ে বলল,হুম।

কুহুর ভ্রু কুচকে গেল, শুধু হুম বলল,কুহু কাছে গিয়ে সামনের চেয়ারে বসে বলল,হ্যালো আমি চলে এসেছি।বিভোর বলল,হুম বুঝেছি।কুহু কিছু টা বিরক্ত হয়ে বলল,কি করছেন আপনি।বিভোর চোখ ল্যাপ্টবে রেখে বলল,খুব দরকারী কাজ করছি। কুহু বলল,ওহ তাই এমন করছেন আমার দিকে একবার তাকাবার ও সময় পাচ্ছেন না ঠিক আছে।বলে কুহু চলে আসল।কুহু বেড়িয়ে যেতে লাগল তখনি বিভোর বলল,কুহু শোনো।কুহু মনে এক রাজ্য আনন্দ নিয়ে পিছনে তাকালো।বিভোর আগের ন্যায় ল্যাপ্টবে চোখে রেখে বলল,দুলালকে দিয়ে এক কাপ কফি পাঠিয়ে দিও তো।কুহু মুখের হাসি সেকেন্ডে উধাও হয়ে গেল।কুহু বলল,কেন না অবশ্যই। বলে কুহু বেড়িয়ে পড়লো।

বিভোর টানা কয়েক ঘন্টা ধরে কাজ করে চলছে অবশেষে শেষ হলো,একটু সস্থির শ্বাস ফেলে চেয়ারে গা এলিয়ে দিল।কিছুখন চোখ বন্ধ করে রেখে ডাক দিল,দুলাল এই দুলাল।দুলাল দৌড়ে এসে বলল,জ্বি স্যার। বিভোর বলল,যা ম্যাডামকে ডেকে বল আমি ডেকেছি।দুলাল বলল,স্যার ম্যাম আসবো কোন দিকা উনি তো গেসে গা।বিভোর চোখ খুলে বলল,কি কোথায় গিয়েছে। দুলাল বলল,
– স্যার ঘড়িতে তাকাইয়া দেখেন ১০ টা বাজে অফিস আরো আগে ছুটি হইসে
– কি ওহো আমার একটুও খেয়াল নেই
– স্যার আমি যাই আপনি কাজ করতাসিলেন তাই ডিস্টাব করি নাই
– হ্যা হ্যা তুমি যাও

দুলাল চলে গেল,বিভোর ভাবতে লাগল, কুহু না জানিয়েই চলে গেল হয় তো রাগ করেছে, কোনো ব্যাপার না ওর রাগ সেকেন্ডে উড়িয়ে দেব।বিভোর বাড়ী ফিরার উদ্দেশে বের হলো,বাড়ীতে ফিরার সময় বেলী ফুলের মালা , দুমুঠো কাচের চুড়ি, কিছু চকলেট আর বিরাট এক টেডি বিয়ার নিয়ে গেল, এইসবই কুহুর বড্ড প্রিয়।

বিভোর বাড়ীতে ফিরে নিচ থেকে ডাকতে ডাকতে উপরে উঠতে লাগল,কুহু কুহু কোথায় তুমি দেখো তোমার সব পছন্দের জিনিস এনেছি,কিন্তু কুহুর কোনো সাড়া নেই, বিভোর রুমে গিয়ে দেখলো রুম ফাকা, জিনিস গুলো বিছানায় রেখে চারপাশ খুজতে লাগল,কিন্তু কোথাও পেল না।সারা বাড়ী তন্ন তন্ন করে খুজলো কিন্তু কুহুকে কোথাও পেল না, কোথায় গেল কুহু বিভোরের মনে চিন্তার পাহার গড়ে উঠলো,মনের ভিতরে অজানা ভয় আকড়ে ধরলো,সব জায়গা খুজলো কিন্তু কোথাও পেল না, কুহুর ফোনও বন্ধ বলছে।বিভোর খুব ঘাবড়ে গেছে।

বিভোর বাহিরে গিয়ে দারোয়ান চাচার কাছে গিয়ে বলল,চাচা কুহু কি বের হয়েছে। দারোয়ান চাচা বলল,কুহু আম্মা তো আসেই নাই।বিভোরের ভয় আরও বেড়ে গেল,বিভোর প্রায় পাগল কুহুকে খুজতে খুজতে, বিভোরের মনে শুধু ঘুরছে,কুহু কোথায় ও ভালো আছে তো কোনো বিপদ হলো না তো,কোথায় তুমি কুহু, একটাবার সামনে আসো আর কখনো কষ্ট দেব না, শুধু একটা বার।

চলবে……….
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙