#কাব্যের_আঁধার_২
#লেখনীতে: আঁধার চৌধুরী বর্ষা
#পর্ব-৫
অন্যদিকে কাব্য বসে আছে সোফায়। মাত্র ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বসলো।নাদিরা এখনো ঝাড়ু হাতে দাড়িয়ে আছে আর সেটা দেখে কাব্য রাগ করে বিরক্ত হয়ে বলে,
কাব্য, মা আমি বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসছি। আশপাশটা ঘুরে নি একটু।
শমসের, যাও তাহলে ঘুরে এসো।
কাব্য, সেটা না হয়ে যাচ্ছি কিন্তু আধার কোথায়?? ওর তো থাকার কথা।
শমসের, ওকে দিয়ে তোমার কি?? তুমি তো ওর কথা এক ফোটাও চিন্তা করো না তাহলে ওকে খুজছো কেন??
কাব্য, আছে দরকার। ও আমার ওয়াইফ তাই আমি আমার ওয়াইফ কে খুঁজব এটাই স্বাভাবিক তাই না??
কাব্যর কথা শুনে নাদিরা আর শমসের ৪৪০ ভোল্টের টাস্কি খায় কারণ যেই ছেলেকে আগে ধরে বেধেও আঁধার কে বৌ হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য করতে পারেনি সেই ছেলে এখন যেচে পরে আঁধার কে বৌ বলছে।
শমসের, তোর শরীর ঠিক আছে তো??
কাব্য, কেন আমার কি হবে??
নাদিরা, তাহলে আঁধার কে বৌ হিসেবে মেনে নিলি যে??
কাব্য, আজব তো। ও আমার বউ ওকে আমি মানবো না।
শমসের, কিন্তু তুই তো ওকে স্ত্রী হিসেবে মানতী না। ওকে তো কতো কথা শুনিয়েছিস যে ও আমাদের বশ করেছে এই সেই।
তাহলে হটাৎ বউ বলছিস জে??
কাব্য, আমি না মানলে কি আসে যায়?? ওর সাথে বিয়ে তো আমার হয়েছে তোমাদের সাক্ষী রেখে।তাহলে ওকে অস্বীকার তো করতে পারবো না।
শমসের, ও তাহলে সুবুদ্ধি এসেছে তোমার। যাই হোক তুমি যে আঁধার কে নিজের পত্নী হিসেবে মেনে নিয়েছে তাতে আমরা খুশি হয়েছি তবে আঁধার এত তাড়াতাড়ি তোমাকে ক্ষমা করবে বলে আমার মনে হয়না। ও যা জেদী মেয়ে, আমার তো মনে হয় তোমায় অনেক কাঠখড় পুড়াতে হবে ওকে মানাতে ।
কাব্য,সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।আমি ওটা সামলে নিবো। ও আমার বউ আর ওকে কি করে সামলাতে হয় তা আমি জানি।
শমসের, যাক আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তোমাকে সুবুদ্ধি দিয়েছেন বলে। আল্লাহ তুমিই সব, আমাদের উপর আরও রহমত বর্ষণ করো।
কাব্য, বাবা তাহলে আমি বাইরে থেকে ঘুরে আসি। মা আমার মাস্ক টা তো এখানেই রেখেছিলাম। কোথায় গেলো??
এই নে বলে মিসেস নাদিরা মাস্ক এগিয়ে দেন।কাব্য সেটা পড়ে বেরিয়ে যায়। বাসা থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বাইক নিয়ে থামে।একটা সিগারেট ধরায় আর টান দিতে থাকে কিন্তু হটাৎ খেয়াল করে ওখানে থাকা বাকি ছেলেরা সিগারেট ফেলে দৌড় দিচ্ছে। এর কারণ কী ভাবতে ভাবতেই কেউ একজন এসে ওর সিগারেট ফেলে দেয়। কাব্য দূরত্ব বজিয়ে রাখতে দূরে সরে যায় আর মুখে মাস্ক পরে ( সিগারেট খায় আবার স্বাস্থ্য সচেতনতা দেখায় ) রাগ দেখিয়ে বলে,
কাব্য, এসব কোন ধরনের অসভ্যতা?? কারোর মুখের জিনিস টেনে নিচ্ছেন??
আঁধার আগেই রেগেছিল তার উপর লোকটাকে চেঁচাতে দেখে বলে,
আঁধার, How dare you?? তোমার সাহস কি করে হয় পাবলিক প্লেসেে সিগারেট খাওয়ার ?? তুমি আমাকে চিননা তাই সাহস পাচ্ছো এভাবে সিগারেট খাওয়ার নাহলে আমার
সামনে সিগারেট খাওয়ার সাহস কারোর নেই।
কাব্য, তুমি কি এলাকার নেতা হে??
আঁধার, এই কি বললে আমি এলাকার নেতা তাই না তুমি জানো আমি কে তুমি জানো…
আধার কিছু বলতে পারে না তার আগেই শাওন ওর মুখ বন্ধ করে দেয় আর বলে,
শাওন, ভাই কিছু বলবেন না। আসলে আজ ওর মন খারাপ তো তাই এমন ব্যবহার করছে ।আর কখনো সামনে সিগারেট খাবেন না। নাহলে ও কিন্তু এলাকা মাথায় তুলে ফেলবে আর আপনাকে গণধোলাই খাওয়াবে। আপনার ভালোর জন্যই বলছি আমার কথাটা মাথায় রাখবেন।
কাব্য, তাহলে ভাই উনাকে নিয়ে যান কারন উনাকে দেখেই আমার রাগ উঠছে। সিগারেট সবসময় খাই না হঠাৎ হঠাৎ খায় তাই এখন ধরেছিলাম একটাই মাত্র ছিল কিন্তু উনি সেটা নষ্ট করে দিলেন।
আঁধার, উম……ম….
শাওন, চুপ আধু…. আসি ভাই বলে আঁধার কে নিয়ে বাড়ি ঢুকে যায়।
ফ্ল্যাটে এসে কড়া নাড়তেই নাদিরা খুলে অবাক হয়ে যায় কারণ শাওন আঁধারের চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নাদিরা বলে,
নাদিরা, এই কিরে ওর মুখে ভাবে চেপে ধরে আছিস কেন?
আধার কে নিয়ে ভিতরে ঢুকে শাওন বলে,
শাওন, আর বোলো না চাচী আজ কলেজে একটা ছেলে ওকে প্রপোজ করেছিল আর তখন থেকে সেই রেগে আছে আর আসার সময় একটা লোককে সিগারেট খেতে দেখে বেদম ক্যালানি দিয়েছে।
আধার শাওনের হাতে কামড় দিয়ে হাতটা সরিয়ে দেয় আর বলে,
আঁধার, মিথ্যা কথা বলার জায়গা পাস না না। মা আমি মোটেও ক্যালানি দি নি। শাওন টা বাড়িয়ে বলার অভ্যাসটা গেল না। ছেলেটা আমার সামনে সিগারেট খাচ্ছিল তাই সিগারেট খাওয়ার জন্য দুই কথা শুনিয়ে দিয়েছি ।
শাওন, তোমার মেয়ে কাউকে সিগারেট খেতে দেখলে কি করেে?? আর কি লোকটাকে প্রায় মারতেই গেছিলো সেতো আমি ছিলাম বলে বেচে গেছে।নাহলে তার গর্দান যেত।
নাদিরা শাওনের কথা শুনে আঁধারের গালে হাত রেখে বলে,
নাদিরা, এরকম করলে হয় বল!?এরকম করলে লোকে কি বলবে বল। তুই না আমার লক্ষ্মী বাচ্চা, লক্ষী মেয়ে। লক্ষ্মী মেয়েরা কি রকম করে???
আঁধার, আরে না তেমন কিছুই না জাস্ট এমনি রেগে গেছিলাম। তুমি শুধু শুধু সিরিয়াসলি নিচ্ছ। এমন কিছুই হয়নি ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি কবে থেকে লোকের কথা শুনতে শুরু করলে।তুমি তো আগে করতে না??
নাদিরা, বয়স বারলে সবই করতে হয়। তোর বয়স বেড়েছে তাই তোকেও করতে হবে। তোর বয়সে থাকতে আমিও এসবে তোয়াক্কা করতাম না কিন্তু সমাজ তো সমজ। তাই একটু বয়স বেড়ে যাওয়ার পর সব কিছুর তোয়াক্কা করতে হয়েছে। এখন আমাকে যেরকম করতে হয়েছে তোকেও করতে হবে এটাই সমাজের নিয়ম। আর এই সমাজের মধ্যে আমরা বাস করিতে আমাদের সবাইকেও সমাজের নিয়ম মেনে চলতে হবে।
আধার, আমি চেষ্টা করবো মা তোমার কথা শুনে চলার। আচ্ছা যাই হোক তোমরা সবাই খেয়েছো তো?? তোমার তো আবার অভ্যাস সকালের খাবার দুপুর তিনটায় খাওয়ার।
নাদিরা, আরে না না না আর তোর মত একটা মেয়ে থাকতে আমি কি এত অনিয়ম করতে পারি। নিয়েছি আমি তোকে চিন্তা করতে হবে না আর আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করিস না তো। মাকে নিয়ে এত চিন্তা করলে তুই তোকে নিয়ে কখনো চিন্তা করবে। যাই হোক আজকে তোদের দুজনের পরীক্ষা কেমন কাটলো??
আঁধার, পরীক্ষা তো দিয়েছি এখন ছাড়া যদি দয়া করে নাম্বার দিয়ে দেয় তাহলে আমি সারা জীবন আমাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব কারণ উনাদের নাম্বার দেওয়ার উপরে ডিপেন্ড করবে আমি সব করতে পারবো কিনা।
শাওন, আরে না না চাচী ও নাটক করছে। ও টপ করবে আমি সিওর। আমি নিজের টা নিয়ে বলতে পারছি না কারণ আমি তেমন একটা ভাল করে পড়ি নি।
আঁধার, কিন্তু আমি শিওর যে তুই আমার পরেই থাকবি। কারণ তুই তো কখনো আমাকে টপকে টপার হস না সবসময় আমার সাথে সিরিয়াল ধরে আমার পরে থাকিস। আচ্ছা যাই হোক আমি এখনো পড়ে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিব।
শাওন, আমিও ফ্রেশ হয়ে আসি বলে দুজনেই ফ্রেশ হতে চলে যায় নিজেদের ঘরে। কিছুক্ষণ পর দুজনে ফ্রেশ হয়ে এসে নাদিরা আর শমসের এর সাথে ড্রইং রুমে বসে।আঁধার চা আনতে উঠে।আঁধার উঠতেই কলিং বেল বেজে উঠে।আঁধার বলে,
আঁধার, এই সময় আবার কে এলো??
শমসের আর নাদিরা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে।আঁধার আড়মোড়া ভেঙে খুলতে যায়। হোল দিয়ে কিছুই দেখতে পায় না কারণ মানুষটা অনেক লম্বা।আঁধার দরজা খুলতেই দরজার পাশের ব্যক্তিও আঁধারের দিকে তাকায়।
দুজনেই একসাথে বলে উঠে ‘ তুমি ‘
To be continued…..