তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব-১৫

0
680

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖
#পর্ব_১৫
#Anika_Fahmida

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

–এতোটা ভালোবাসো আমায়?

আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,

–তোর যা মনে হয়।

–ঘুমাবে না আদ্র?

— আমি একটু পড়ে অন্য রুমে ঘুমিয়ে পড়বো। তুই শুয়ে পড়।

অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,

–না, না, তুমি অন্য রুমে যেও না। আমার ভয় করবে।

আদ্র অনুর দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

–ভয় করবে কেন?

–ভূত আসবে তাই।

আদ্র অনুর কথা শুনে হাসল। অনু কতটা ভীতু হলে এমন বোকা বোকা কথা বলতে পারে তা ভেবেই বেশি হাসি পাচ্ছে। আদ্র হেসে অনুকে বলল,

–পাগলী মেয়ে একটা। আচ্ছা আমি কোথাও যাবো না। সোফায় শুয়ে পড়ব। তুই ভয় পাস না।

অনু আদ্রের কথা শুনে আদ্রের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে শুয়ে পড়ল। আদ্র অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। ধীরে ধীরে অনুর চোখে ঘুম চলে আসলো।

সকাল বেলা আদ্র অনুকে গাড়ি করে অনুর বাসার সামনে পৌঁছে দিল। অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–আদ্র আমাদের বাসার ভিতরে আসো?

আদ্র অনুকে বলল,

–না, অনু। পড়ে আরেকদিন আসবো।

অনু মন খারাপ করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র অনুর মন খারাপ দেখে জিজ্ঞেস করল,

–কি হলো অনু মন খারাপ কেন তোর?

–এমনি।

আদ্র গাড়ির সিটের পাশ থেকে একটা বক্স বের করে অনুর হাতে ধরিয়ে দিল। অনু হাতের বক্সটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–এই বক্সে কি আছে আদ্র?

–বাসায় গেলে দেখে নিস অনু।

–আচ্ছা।

আদ্র অনুর গালে চুমু দিয়ে অনু্কে বলল,

–আবারও আমাদের দেখা হবে অনু।

আদ্র গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। অনু গালে হাত দিয়ে আদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাসায় পৌঁছাল। অনু হাতে বক্স নিয়ে বাসায় পৌঁছানোর সাথে সাথেই অনুর মা আমেনা বেগম অনুকে দেখতে পেয়ে দ্রুত জড়িয়ে ধরেন। জড়িয়ে ধরার ফলে অনুর হাত থেকে বক্সটা হাত ফসকে পড়ে যায়। আমেনা বেগম বিচলিত স্বরে কান্না করে অনুকে বলতে লাগল,

–অনু মা তুই ঠিক আছিস তো? আদ্র তোকে কোথায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল? আমার মেয়েটাকে এভাবে কেন আদ্র নিয়ে গিয়েছিল! আমি কত চিন্তা করেছি।

অনু কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও আমেনা বেগমকে শান্ত স্বরে বলল,

–আম্মু আমি ঠিক আছি। আমার কিছু হয় নি। আর আদ্র ভাইয়া আমার উপর রেগে ছিল। তাই শাস্তি দেওয়ার জন্য তুলে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আম্মু তুমি এটুকু বিশ্বাস কর আদ্র ভাইয়া আমার কোনো ক্ষতি করে নি। শুধু সারা রাত কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল৷ কারণ কেন আমি তার ফোন ধরি নি তাই৷

আদ্র অনুকে কোনো শাস্তি দেয় নি। তবুও অনু আমেনা বেগমকে মিথ্যা বললেও আমেনা বেগম অনুর কথা বিশ্বাস করে ফেলে। আমেনা বেগম বলল,

–এই ছেলেটার এতো রাগ কেন আমি বুঝি না। এইটুকু কারণের জন্য আমার মেয়েকে এভাবে শাস্তি দিবে! আমি আজকে আপাকে সব খুলে বলবো।

অনু তাড়াতাড়ি করে আমেনা বেগমকে বলল,

–না আম্মু। খালামনিকে কিছু বলার দরকার নেই। তুমি আদ্র ভাইয়াকে ক্ষমা করে দাও।

আমেনা বেগম অবাক হয়ে অনুকে বলল,

–অনু তুই এই কথা বলছিস?

–হ্যা আম্মু আমি এই কথা বলছি।

অনুর বাবা আরমান রহমান ঘর থেকে বেরিয়ে অনুকে দেখে রাগী স্বরে জিজ্ঞেস করল,

–অনু তোকে আদ্র কেন কিডন্যাপ করেছে?

অনু ভয় পাওয়া স্বরে আরমান রহমানকে বলল,

–আব্বু তুমি রেগে যাচ্ছো কেন? আদ্র ভাইয়া আমাকে কিডন্যাপ করে নি আব্বু। এমনি শুধু কান ধরে শাস্তি দেওয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। আমি আদ্র ভাইয়ার ফোন ধরি নিতো এজন্য।

আরমান রহমান রেগে গিয়ে অনুকে বলল,

–আমাকে তোরা ভুলভাল বুঝাবি আর আমি বুঝে নিব? আমি আদ্রকে খুব ভালো ছেলে মনে করতাম৷ কিন্তু সে এতো খারাপ আগে জানতাম না। আর সামান্য ফোন না ধরার জন্য কেউ এভাবে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়?

–আব্বু তুমি আদ্র ভাইয়াকে ভুল বুঝছো।

আরমান রহমান ধমকে অনুকে বলল,

–চুপ থাক। আর মাটিতে এগুলো কি পড়ে আছে?

অনু নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল আদ্রের দেওয়া সেই বক্স। আর বক্স থেকে চুড়ি আর চকলেট ফ্লোরে পড়ে ছড়াছড়ি করছে। অনু মনে মনে বলল,

–আদ্র তারমানে আমাকে চুরি আর চকলেট দিয়েছে । কিন্তু এখন আমি কি করি? আব্বু তো এই চুড়ি, চকলেট দেখলে এখন আমাকে অনেক বকা দিবে।

আরমান রহমান মাটি থেকে বক্সটা তুলে দেখলেন অনেক চকলেট আর চুড়ি। এতগুলো চকলেট আর চুড়ি দেখে আরমান রহমান অবাক হলেন। তিনি অনুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,

–এগুলো তোকে কে দিয়েছে অনু?

অনু আমতা আমতা করে বলল,

–আব্বু এগুলো… এগুলো…

–কি হলো বলছিস না কেন?এগুলো তোকে আদ্র দিয়েছে?

–হ্যা আব্বু আদ্র ভাইয়া কিনে দিয়েছে।

আরমান রহমান মেয়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর রেগে বক্সটা ছুঁড়ে মাটিতে ফেললেন। সবগুলো চুড়ি চকলেট এখানে সেখানে পড়ে আবারও ছড়িয়ে গেল৷ অনু আরমান রহমানের রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেল। আরমান রহমান রেগে গিয়ে আমেনা বেগমকে বলল,

–আমেনা তোমার মেয়েকে ঘরে নিয়ে যাও।

আমেনা বেগমও অনুকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল,

–অনু তোর আব্বু রেগে গেছে।

–কিন্তু কেন আম্মু?

–গতকাল বিকালে আদ্র তোকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পড় পাড়া প্রতিবেশীরা নানান কথা আমাদের বলতে লাগে। আদ্র তোকে তুলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য প্রতিবেশীরা দেখে ফেলে। আর সেসবই তোর বাবাকে সব বলে দেয়।

অনু ভয় পাওয়া স্বরে আমেনা বেগমকে বলল,

–এখন কি হবে আম্মু?

–কিছুই হবে না। কিছুদিন পর দেখবি তোর বাবার রাগ চলে গেছে৷ তুই আপাতত বাসার বাইরে বের হবি না।

অনু মন খারাপ করে আমেনা বেগমকে বলল,

–ঠিক আছে আম্মু।

আমেনা বেগম রুম থেকে চলে যাওয়ার পর অনু বিছানায় বসে চোখের জল ফেলতে লাগে। আদ্র কত শখ করে অনুর জন্য চকলেট, চুড়ি কিনল আর অনুর বাবা তা ফেলে দিল! অনু তা মানতে পারছে না। অনুর ফোন বেজে চলেছে। আদ্র যখন অনুকে তুলে নিয়ে যায় তখন অনুর ফোনটা বিছানায় পড়ে থাকে। এখনও ফোনটা বিছানায় রয়েছে। অনু চোখের জল মুছে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল পল্লব ফোন করেছে। এতকিছুর মাঝে পল্লবের কথা অনু ভুলেই গিয়েছিল। কল রিসিভ করে অনু বলল,

–হ্যালো পল্লব বলো।

পল্লব বিচলিত হয়ে অনুকে বলল,

–এই অনু তোমাকে আমি কতবার ফোন করেছি তার কোনো ধারণা আছে তোমার? ফোন কেন ধরো নি? আর শুনলাম কাল রাত তুমি বাসায় ছিলে না। কোথায় গিয়েছিলে?

অনু অবাক হয়ে বলল,

–আমি বাসায় ছিলাম না তা তুমি কি করে জানলে?

–তোমার বাসায় আমি গিয়েছিলাম। সেখানে তোমার খুঁজ নিলে জানতে পারলাম তুমি বাসায় নেই। ফোন ধরো নি কেন?

–আসলে পল্লব আমার ফোনটা বাসায় ছিল।

–ফোন বাসায় রেখে তুমি রাতে কোথায় ছিলে?

অনু আর কিছু না ভেবে পল্লবকে বলেই দিল,

–পল্লব আমি আসলে আদ্রের সাথে ছিলাম।

অনুর মুখে কথাটা শুনে পল্লবের বুকের ভিতরটা ধক করে উঠল। কিছুক্ষণের জন্য পল্লব স্তব্ধ হয়ে গেল। পল্লব কথা বলছে না দেখে অনু পল্লবকে জিজ্ঞেস করল,

–হ্যালো পল্লব তুমি কি আমার কথা শুনছো?

পল্লব নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল,

–হ্যা অনু শুনছি৷ কি যেন বললে? ওহ হ্যা আদ্রের সাথে ছিলে? আদ্র ফিরে এসেছে? আদ্র কখন লন্ডন থেকে এসেছে অনু?

অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

–হ্যা গতকাল আদ্র দেশে ফিরে এসেছে।

পল্লব অনুকে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,

–আদ্র কি তোমাকে টাচ করেছে অনু?

পল্লবের কথা শুনে অনু রেগে গিয়ে বলল,

–এসব কি ধরনের কথা পল্লব?

পল্লব যেন মুখ ফসকেই কথাটা বলে ফেলেছে। তাই নিজেকে দ্রুত স্বাভাবিক করে বলল,

–আই এম সরি অনু।

অনু বিরক্ত স্বরে পল্লবকে বলল,

–ইট’স ওকে। আমি এখন ফোন রাখলাম। বাই।

অনু বিরক্তি নিয়ে ফোন রেখে দিল। পল্লব একটু বেশি পারসোনাল কথা অনুকে জিজ্ঞেস করছিল যা অনুর একদম পছন্দ হচ্ছিল না।

এদিকে অনু ফোন কেটে দেওয়ায় পল্লব হতাশ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। পল্লবের বুকের ভিতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। পল্লব আপনমনে বলতে লাগল,

–অনুর আদ্র চলে এসেছে! এখন কি অনু আমাকে ভুলে যাবে? আমাদের ফ্রেন্ডশিপটাও কি নষ্ট হয়ে যাবে?
আমি যে অনুকে নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবাসি কথাটা অনুকে আজ পর্যন্ত বলতেও পারলাম না। যদি অনু আমাকে ভুল বুঝে এই ভয়ে বলা হলো না আমার ভালোবাসার কথা। আদ্র আসায় অনু আমার থেকে দূরে সরে যাবে নাতো? তাহলে আমার কি হবে? আমি যে অনুর সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না।

আদ্র নিজের বাসার ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে। নিজের কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে গম্ভীরভাবে আদ্র বসে আছে। সামনে আদ্রের বাবা আনোয়ার হোসেন দাঁড়িয়ে আছেন।রেহেনা পারভিন তার ছেলে আসাতে অনেক খুশি কিন্তু আপাতত আনোয়ার হোসেনের রাগ দেখে তিনি চুপ করে আছেন। আনোয়ার হোসেন আদ্রের উপর যথেষ্ট রেগে আছেন। তাই আনোয়ার হোসেন আদ্রকে গম্ভীর স্বরে বলল,

–এভাবে মান সম্মান ধুলোয় না মিশালে তোমার শান্তি হচ্ছিল না আদ্র?

আদ্র তার বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

–এতে মান সম্মান নষ্টের কি আছে বাবা? আমি তো বললাম আমি কোনো ভুল করি নি। তাও কেন বার বার একই কথা বলছো?

আনোয়ার হোসেন রেগে আদ্রকে বললেন,

–অনু তোমার খালাতো বোন হয় আদ্র। তুমি কিনা অনুকে এভাবে সকলের সামনে থেকে তুলে নিয়ে কোথাও গায়েব হয়ে গেলে! আবার বলছো তুমি কিছু ভুল করো নি?

–বাবা অনু আমার খালাতো বোন হয়৷ মানে আমার কাজিন হয়। অনু আমার নিজের বোন না। অনুর উপর আমার অধিকার আছে। আর সেই অধিকারবোধ থেকেই আমি অনুকে নিয়ে গিয়েছিলাম।

–এখন তুমি অধিকারবোধ দেখাচ্ছো?

–হ্যা দেখাচ্ছি। আর আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই বাবা।

আনোয়ার হোসেন গম্ভীর স্বরে আদ্রকে বলল,

–কি বলতে চাও?

আদ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আনোয়ার হোসেনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

–বাবা আমি অনুকে ভালোবাসি। আমি অনুকে বিয়ে করতে চাই।

#চলবে…