ভিলেন পর্ব-১১

0
749

#গল্পঃ_ভিলেন

লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি

পর্বঃ ১১

———————★★———————–

ওরনা গলায় বেঁধে নিলাম!!.. দুচোখ বন্ধ করতেই হঠাৎ কেউ একজন এসে গলা থেকে ওরনা টা ছেড়ে নিয়ে গালে চর বসিয়ে দিলো তাকিয়ে দেখি মা,,,,

মা: পাগল হয়ছো!! এই কি করতে ছিলে এটা,,,,

আমি: মা

মা: আদিবা এই মেয়ে,,,,

আমি: আমি আপনাকে বড্ড ভালোবাসি খুব ভালোবাসি প্লিজজ এমনটা আমার সাথে কয়রেন না,,( বিড় বিড় করে)

হঠাৎ মাথা ঘুরে সেন্সলেন্স হয়ে মায়ের বুঁকে ঢলে পড়লাম,,,,

___একটু পর সেন্স ফিরে তাকিয়ে দেখি মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,,,,

মা: আদিবা

আমি: হ্যাঁ মা,,,

উঠে বসতেই মা টেবিল থেকে দুধের গ্লাসটা এসে সামনে ধরলো,,,,

মা: খেয়ে নাও,,

আমি: না মা খাবো না,,,

মা: খাও বলছি,,,

আমি: হুমমম,,

জোরে করে মা দুধ টুকু খায়ে দিলো,,,,,

আমি: মা সরি,,,,( অসহায় ভাবে তাকিয়ে)

মা: তুমি কেনো সরি বলছো,,,বাইরে থেকে সবটা শুনলাম,,,আমি ভাবতে পারিনি আমার ছেলেটা এমন হবে পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিও,,,,

আমি: মা প্লিজজ এমন করে বলবেন,,,,,

মা: তবে তুমি নিজেকে একা ভেবো না এই যুন্ধ আমি তোমার পাশে আছি আমি থাকতে শুভকে এই কাজটা কখন করতে দিবো না তুমি যে আমাদের ঘরে লক্ষী,,,,

আমি: মা ( জোরিয়ে ধরে) ,,,,,,

মা: তবে তোমাকে কথা দিতে হবে এই পাপ কাজ তুমি কখন করবে না,,,,আর এসব নিয়ে ভাববে না আমি তো আছি দেখো কি করি একটু ভরসা রাখো,,

আমি: হুমম মা,,,

মা আমায় বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো,,,,,,,

রাত কেঁটে সকাল হয়ে গেলো এখন শুভ বাসায় আসে নি… বাইরে দাড়িয়ে দরজার দিকে বার বার তাকাচ্ছি তখনি মা এসে কাঁধে হাত রাখলো,,,,

মা: শুভ এখন আসেনি,,,

আমি: না মা,,,,

বাবা: বউমা শুভ তোমায় কিছু বলেনি,,,,

আমি: কি বলবে বাবা,,,,

বাবা: ও তো কাল অফিসে কাজে মিটিং এ গেছে একটু পর এসে পড়বে

আমি: কই আমারে তো কিছু বলেনি বাবা,,,,

বাবা: হয়তো সময় পাই নি টেনশন করো না কেমন,,,,

আমি: হুমমম,,,,

বাইরের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে সোঁজা রুমে চলে আসলাম,,,,,,,

একটু পর শুভ বাসায় আসলো রুমে ডুকেই বলতে লাগলো,,,,

শুভ: তাড়্তাড়ি রেডি হয়ে নি বের হবো আমরা,,,,

আমি: কোথায় যাবো,,,,

মা: শুভ

শুভ: আম্মু তুমি এসো ভিতরে,,,,

মা: হ্যাঁ,,,,কোথায় যাবি,,,,

শুভ: আসলে আম্মু ওই একটু বের হবো আদিবা হয়তো বাসায় ব্রোর লাগছে তাই না,,,

আমি: হুমম,,,

মা: বাহহ ভালো তো,,,,সাবধানে যাবে কেমন,,,,

শুভ: হুমম আম্মু,,,

কিছুক্ষন পর শুভ গাড়ি করে সোঁজা কোর্টের সামনে গাড়িটা পার্ক করলো

আমি: আমরা এখানে,,,

শুভ: আমাদের ডিবোর্স ব্যবস্থা করতে হবে তো,,,

আমি: কিহহহ,,,,,ডিবোর্স,,,,

শুভ: হুম!! ফাস্ট,,,,

শুভ হন হন করে ভিতরে চলে গেলো আমি গাড়ি থেকে নেমে আসতে আসতে ভিতরে দিকে হাঁটা দিলাম,,,,

শুভ: তাড়াতাড়ি আয়,,,

শুভ হাতটা ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো,,,,,,,, উকিল কিছু পেপার সামনে ধরলো,,,,

শুভ: সাইন কর!!!

আমি: শুভ প্লিজজ

শুভ: করতে বলছি,,,

কাঁপা কাঁপা হাতে পেপারটা হাতে নিয়ে সাইন করলাম হঠাৎ টপ করে পেপারেরর উপর চোখ বয়ে এক ফোটা পানি পড়লো,,,

শুভ: কি হচ্ছে এসব,,, ( রেগে)

আমি: সরি সরি,,,

শাড়ির আচল দিয়ে পেপার উপর থেকে পানি টুকু মুছে শুভর দিকে দিলাম,,,,শুভ পেপার উকিলের কাছে দিতেই উকিল বলে উঠলো,,,

উকিল: মাস খানিক সময় লাগবে তবে টেনশন করবেন না ডিবোর্স হচ্ছে,,,

শুভ: মাস খানি মানে

উকিল: এসব কোর্টের কাজ সময় তো লাগবে,,,

শুভ: ও মাই গড,,,,ওকে ফাইন যত তাড়াতাড়ি পারেন একটু চেষ্টা করুন কেমন,,,

উকিল: ওকে স্যার,,,,

শুভ: থ্যাংকস,,,,

কোর্ট থেকে বের হয়ে এসে গাড়িতে বসলাম!! মনে হচ্ছে দেহ থেকে প্রান টা কেঁড়ে নিচ্ছে কেউ… গাড়িতে কোন কথা বললাম না

একটু পর বাসায় ডুকে সোঁজা মা রুমে গিয়ে মাকে জোরিয়ে ধোরে কাঁদতে লাগলাম মা আবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়লো,,,

আমি: সব শেষ হয়ে গেলো!! মা আপনার ছেলে সব শেষ করে দিলো ( কাঁদতে কাঁদতে)

মা: কি হয়ছে বলবে তো,,,তোমরা তো ঘুরতে গেছিলা,,,

আমি: আপনার ছেলে আজ ডিবোর্স পেপারে সাইন করালো,,,মা আমি মরেই যাবো শুভকে ছাড়া প্লিজ আপনি শুভকে একটু বুঝান আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না,,,,

মা: আদিবা শান্ত হও একটু আমি বলছি তো সব ঠিক করে দিবো একটু সময় দেও,,,,

আমি: মা আমি যে আর পারছি না বুঁকটা ফেঁটে যাচ্ছে

মা: নিজেকে শক্ত করো,,, এভাবে ভেঙ্গে পড়লে কিছু হবে না

আমি: কিন্তুু

মা: আমি আছি তো একটু নিজেকে শান্ত করো

আমি: হুমম মা ঠিক বলছেন নিজেকে শক্ত করতে হবে,,,,

মা: এই তো লক্ষী মেয়ে আমার ( চোখের পানি মুছে দিয়ে)

আমি: হুমমম,,,,

★★ এভাবে কেঁটে গেলো আরো কিছুদিন,,,,,,,

নিচে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে আমি চা এনে সবাইকে দিচ্ছি হঠাৎ শুভ বাইরে দাড়িয়ে বলতে লাগলো,,,

শুভ: পাপা, আম্মু দেখো কে এসেছে,,,,

শুভ কথা শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি তুষার দাড়িয়ে আছে নিজের অজান্তে বুকের ভিতরটা মুচরে উঠলো,,,,

বাবা: তুষার !! ওমাই গড হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি সুস্থ

তুষার: সব আপনাদের দোয়ায় কাকা,,,( সালাম করে)

পাপা: থাক থাক বেঁচে থাকো,,,

আয়শা: আরে তুষার ভাইয়া যে কেমন আছো,,

তুষার: ভালো!!.. তুমি,,,

আয়শা: ভালো,,,এসো না বসো,,,

তুষার: হুমম,,,কাকিমা যে,,,

মা: হুম থাক দীর্ঘজীবি হও ( বিরক্ত নিয়ে)

তুষার: হুমম ( মুচকি হেসে)

তুষার আমার দিকে এগিয়ে আসতেই তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘরে দিকে চলে আসলাম,,,,,

____একটু পর হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন জোরিয়ে ধরতেই চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে আবাক হলাম,,,,,

আমি: আপনি,,,,

তুষার: কি চমকে উঠলে যে,,,

আমি: না মানে আপনি এখানে,,,,

তুষার: হ্যাঁ কোন প্রবলেম ( মুচকি হেসে)

আমি: হ্যাঁ না মানে,,,

সামনে দিকে তাকিয়ে দেখি শুভ রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,,,

তুষার: সমস্যা কি কিছু দিন পর তো তুমি আমার বউ হতে চলেছো

আমি: নিশ্চপ,,,

তুষার: রাগ করেছো,,ওকে ফাইন এমন কিছু আর করবো না সব তুলে রাখলাম বিয়ের পর সুদে আসলে নিয়ে নিবো ,,,,

তুষার হাসতে হাসতে চলে গেলো আমি দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস নিলাম,,,,

আমি: এই কি ছিলো আমার কপালে,,,,,, এটা কিছের পাপের শাস্তি দিচ্ছো খুদা…!

বিকালের দিকে শুভ জোর করে তুষার সাথে ঘুরতে নিয়ে গেলো,,,,শুভ ড্রাইভ করছে আমি আর তুষার পিছনে বসে আছি হঠাৎ তুষার হাতে হাত রাখলো,,,

তুষার: এসে গেছি চলো,,,,

আমি: ওহহ,,,,,

গাড়ি থেকে নামতেই শুভ বলতে লাগলো,,,,

শুভ: তোরা হাঁটা দে আমি আসছি

আমি: যাবো মানে আপনি,,,

শুভ: যেতে বলছি,,( চোখ রাগিয়ে)

তুষার: তুইও চল,,,,

শুভ: নদী আসবে ওরে নিয়ে আসছি তোরা যা,,,,

তুষার: ওকে চলো,,,

আমি: হুমমমম,,,,

তুষার আমার হাত ধরে হাঁটা দিলো আমি বার বার পিছনে দিকে তাকালাম কিন্তুু শুভ একবারও আমার দিকে তাকালো না ,,,

তুষার: চলো ওখানে বসে কথা বলি,,,

আমি: হুমমম,,,,,

তুষার: জানো আজ আমার কাছে সবচেয়ে স্প্যশাল ডে এই যে তুমি আমার পাশে,,,,,

আমি: ওহহহ আচ্ছা,,,,,

তুষার: হুমমমম,,,,আচ্ছা তোমার এখন কি সেই হাওয়ায় মিঠে, গোলা প্রিয়,,,

আমি: হুমমম,,,

তুষার: ওয়েট আনছি দু মিনিট,,,,

আমি: না থাক এখন খাবো না

তুষার: কেনো

আমি: এমনি,,,,,

তুষার: কোন প্রবলেম,,,,,

আমি: উহু ( মাথা নাড়িয়ে)

তুষার: একটা প্রশ্ন করবো সত্যি বলবে,,,,

আমি: হ্যাঁ বলেন,,,,,

তুষার: তুমি কি শুভকে ভালোবাসো,,,

তুষারের কথা শুনে আবাক হয়ে তাকালাম,,,, কিছু বলতে যাবো তখনি শুভ সামনে দাড়িয়ে ইশারা করে না বলে দিলো,,,,

আমি: না,,,,,

তুষার: সত্যি

আমি: হুম,,,,

তুষার: আমি জানতাম তুমি শুধু আমায় ভালোবাসো,,,

তুষার হাসতে হাসতে হাঁটা দিলো আমি শুভর দিকে তাকিয়ে দেখি নদীর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে,,,

আমি: কেনো এমন করছেন আমার সাথে,,,হে আল্লাহ আর কত ধয্যের পরিক্ষা নিবে,,,,( মনে মনে)

তুষার: কি হলো আসো,,,,

আমি: হুমম যায়,,,,,,

___সন্ধার দিকে বাসায় চলে আসলাম,,,,,বাসায় ডুকে দেখি সবাই বসে আছি আমায় দেখে আশা দৌড়ে আসলো,,,,

আশা: ভাবি গুড নিউজ আপুর আগামী মাসে বিয়ে ফ্রিকস হয়ে গেছে উফ কত কি প্লান বাকি,,,,

আমি: তাই ( মুচকি হেসে)

আশা: হুমমম ড্রেস গুলো তুমি পছন্দ করে দিবে,,,,

আমি: ওকে ওকে,,,,

মা: অনেক হয়ছে,,আদিবা রুমে ফ্রেস হয়ে নাও,,,,,

আমি: যায় মা,,আসছি কেমন

আশা: ওকে,,,,,

শুভ গিয়ে সোফায় বসে পড়লো আমি রুমে দিকে যেতেই হঠাৎ মাথাটা ঘুরে ধাপাস করে ফ্লোরে পড়ে যেতেই সবাই বসা থেকে উঠে দৌড়ে আসলাম,,,,,

শুভ: আদিবা!! কি হলো আপনার!!

মা: আদিবা,, রহিমা পানি আনতো,,,

বাবা: ডক্টরকে কল দিতে হবে,,,,

শুভ: ওয়েট আমি দিচ্ছি,,,,

আশা: ভাবি চোখ খোল,,,আম্মু কি হলো হঠাৎ,,,,

বাবা: টেনশন করো না বউমার কিছু হবে না,,,,

শুভ: কল করেছি এসে যাবে,,, দেখো সরো তো,,,

শুভ সবাইকে সোরিয়ে দিয়ে আমায় কোলে তুলে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো,,,,,,

একটু পর ডক্টর এসে কিছু টেস্ট করলো,,,,,

বাবা: কি হয়ছে সব ঠিক আছে তো,,,,

হঠাৎ ডক্টর মুচকি হেসে বলতে লাগলো!!!…….

( চলবে)