#গল্পঃ_ভিলেন
লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি
পর্বঃ ১৭
———————★★———————–
আমি: সিনহা তুই এখানে ( আবাক হয়ে)
সিনহা: তুই এখানে?
সিনহা দৌড়ে এসে জোরিয়ে ধরলো,,,,
আমি: তুই এখানে আমি সিরিয়াসলি বিশ্বাস করতে পারছি না…!
সিনহা: সেম হঠাৎ করে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি….!
আমি: তো এটা বল কবে দেশে ফিরলি ,,,
সিনহা: এই তো দুদিন হলো.. কাল তোর সাথে দেখা করতে যাবো ভাবছিলাম বাট আজ দেখা হয়ে গেলো,,,
আমি: হুমম বেষ্টুরে তো ভুলেই গেছিস….
সিনহা: তোকে ভুলে যাবো অসম্ভব তুই তো আমার ( বুকে হাত দিয়ে)
আমি: হা হা….
সিনহা: আচ্ছা বস,,,
আমি: হুমমম,,,,,
সিনহা: তো তোর কি খবর শুনলাম বিয়েতে ঝামেলা হয়েছিলো বাটট তারপর আর খোঁজ পাইনি
আমি: অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে গেছে ( মাথা নিচু করে)
সিনহা: কি বলিস কে সে
আমি: সে অনেক কাহিনী অন্যদিন বলবো…..
সিনহা: ওকে ফাইন তারপর বল এখানে কেনো কোন প্রবলেম
আমি: মা মানে শাশুড়ি পাঠিয়ে দিও ইদানিং মাথা ঘুরে বমি বমি পায়…
সিনহা: গুড নিউজ নাকি
আমি: আরে না..! এজন্য তো আসা,,,
সিনহা: ওকে টেনশন করিস না আমি আছি তো
আমি: হুমমমম….
___সিনহা বেশ কিছু টেস্ট করে চেক করতে দিলো দুজনে বসে কফি খাচ্ছি তখনি কেবিনে একটা লোক ডুকলো…..
লোক: ম্যাম রিপোর্ট টা
সিনহা: ওহহ হ্যাঁ দেন…! থ্যাংকস
লোক: জ্বি ম্যাম….
লোকটা চলে গেলো সিনহা রিপোর্ট টা পড়ে হা করে আমার দিকে তাকালো হঠাৎ বসা থেকে উঠে আমায় হাত ধরে হাসতে লাগলো,,
সিনহা: মিথ্যা বললি কেনো
আমি: কি মিথ্যা
সিনহা: তুই পেগনেন্ট
আমি: ওয়াটটট!!!.. আর ইউ সিওর ( শক্ট হয়)
সিনহা: ১০০% বাট কিছু প্রবলেম আছে তোকে খুব সাবধানে থাকতে হবে না হলে বেবির ক্ষতি হবে …! ( না আদিবা কে কিছু বলা যাবে না টেনশন করবে আমি বরং কাকু কাকিমার সাথে কথা বলবো তাছাড়া ওর হাসবেন্ড তো আছে হুম এটাই ব্যাটার হবে)
আমি: বেবি আমার ( পেটে হাত দিয়ে)….. কি করে সম্ভব না এটা হতে পারে না ( চেয়ারে বসে পড়লাম)
সিনহা: কি হলো,,,,
আমি: কি করে সম্ভব
সিনহা: মানে
আমি: না এখন সিনহাকে এসব কি করে বলবো পরে সব খুলে ফেলবো… ( মনে মনে) !! কিছু না ছাড়
সিনহা: ওকে ফাইন বাট সাবধানে থাকতে হবে না হলে বেবিকে বাঁচানো যাবে না একটু সাবধানে চলবি কেমন ( গালে হাত দিয়ে)
আমি: হুমমম ( মুচকি হেসে)
__ সিনহা কে বিদায় জানিয়ে রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা দিলাম….
আমি: কি করে এটা সম্ভব হে আল্লাহ তুমি আমায় এ কোন দোটানায় ফেললে…..
একটু পর বাসায় এসে রিপোর্ট টা রেখে বিছানায় ধপাস করে বসে পড়লাম,,,,তাড়াতাড়ি করে রিপোর্ট কাজটা বের করে দেখতে লাগলাম স্বামীর জায়গা মিঃ শুভর নাম…..!
আমি: কি হচ্ছে আমার সাথে এসব… শুভ কি করে আমার গর্ভ থাকার বেবিটার বাবা হবে ওনার সাথে আজ পর্যন্ত কোন সম্পর্ক গড়েনি উফফফ মাথাটা ফেঁটে যাচ্ছে সন্ধা বেলা বিয়ে কি করবো আমি…. তুষার যতই বলুক সে আমায় ভালোবাসা তারপর আমি কোন দিন তুষার চোখে চোখ রাখতে পারবো না সারাজীবনের জন্য অপরাধি হয়ে থাক না না আমি কারো চোখে ছোট হয়ে থাকতে পারবো না…..
কি করবো আমি মরতে তো পারবো না এই নিশষ্পাপ বাচ্চা তো কোন দোষ করেনি আমি ওরে শাস্তি দিতে পারবো না
____ বসা থেকে পাইচারি করতে লাগলাম…..হঠাৎ তখন রুমে মা আসলো,,,,
মা: কি রে হসপিটাল থেকে আসার পড়ও একবার দেখা করলি না
আমি: না মা আসলে খুব কান্ত লাগছিলো তাই বসে ছিলাম….!
মা: সে কি সকালে তো ঠিক মতো খাও নি দাড়াও খাবার আনছি
আমি: না মা এখন খাবো না….
মা: তুমি দাড়াও আমি আনছি
আমি: মা
মা: কি
আমি: এই বিয়েটা করতে পারবো না আমি…..
মা: কিহহহ!!!.. কেনো করবে না শুভর জন্য তাই না আরে পাগলি মেয়ে কেনো বুঝো না শুভ তোমায় ভালোবাসে না আর ওমন ছেলো সাথে থাকতে হবে না… শুভ কারো ভালোবাসার যোগ্য নাহ তার চেয়ে তুষার তোমায় হ্যাপি রাখবে দেখো।
আমি: কিন্তুু মা আমার কথাটা তো শুনবেন…
মা: কোন কথা না…. তোমার ভালো জন্য বলছি বিয়েটা করে নাও কেমন
আমি: মা শুনেন….
মা চলে গেলো আমি গিয়ে বারান্দায় দাড়ালাম বাইরে হালকা বাতাস বয়ছে…….
আমি: মা কি ঠিক বলছেন,,, সত্যি তো তুষার আমায় ভালোবাসে আর তুষার তো সবটা জানে তারপর কিছের ভয়,,,,, না আর কোন দোটানা যা হবার হবে বিয়েটা সন্ধায় হচ্ছে….!
সন্ধার দিকে পার্লার থেকে কয়টা মেয়ে এসে সাঁজিয়ে দিলো,,,,
আশা: বাহহ একদম রানী ভিক্টরি হিহি
মা: তোর দুষ্টামি গেলো না,,,,,
মা আমার কাছে এসে কপালে চুমু দিয়ে কাজল দিয়ে কপালে টিপ দিয়ে দিলো,,,,
মা: কারো নজর যেনো না লাগে,,,,,
তুলি: হি হি আর কারো না লাগলে তুষার ভাইয়ার লেগে যাবে
আশা: একদম চোখ ফেরাতে পারবে না…….
মা: পাগলি মেয়ে অনেক হ্যাপি হবি দোয়া করি……
আমি মা কে জোরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম,,,,
একটু পর সবাই মিলে নিচে নিয়ে আসলো……আশা আর তুলি নিয়ে গিয়ে তুষার পাশে বসালো।
তুষার: খুব সুন্দর লাগছে তোমায় আদিবা
আমি: থ্যাংকস
___ একটু পর বিয়ের কাজ শুরু হয়ে গেলো
তুষার: শুভ কই….
আমি: সত্যি তো শুভ কই ( মনে মনে)
নদী: দুপুর থেকে শুভরে দেখিনি জানি না কোথায় গেছে,,,,
মা: ছেলেটা আবার কই গেলো,,,,
তুষার: ওয়েট কল দি
নদী: লাভ নাই অনেক চেষ্টা করছি,,,,
আমি: মানুষটা আজ হঠাৎ কই গেলো,,,,,( মনে মনে)
তুষার: অদ্ভুত তো হঠাৎ কই গেলো,,,,
আংকেল: যায় হক পড়ে দেখা যাবে বিয়েটা শুরু হক কত দেরি করবো আর
তুষার: হুমম সেটাই,,,,
আমি: লোকটা কই গেছে…! আল্লাহ তুমি উনারে ভালো রেখো যেখানে আছে ( মনে মনে)
___ একটু পর বিয়ের শুরু হয়ে গেলো…. কাজী সাহেব কবুল বলার জন্য তাড়া দিলো,,,,
তুষার: কি হলো বলো
আমি: ( কি করে বলবো বদযন্ত্র যেনো আটকে গেছে… বুকটা ধুক ধুক করতে লাগলো)
মা: আদিবা ,,,,,
বাবা: বউমা কি হলো বলো….
চারপাশে সবাই বলার জন্য তারা দিলো…! যখনি কবুল বলতে যাবো ঠিক তখনি সামনে তাকিয়ে দেখি আব্বু আম্মু সবাই দাড়িয়ে আছে আমি উঠে বসলাম,,,,
আমি: আব্বু, আম্মু
দৌড়ে গিয়ে আব্বুকে জোরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম,,,,
আমি: আমি জানতাম তোমরা রাগ করে থাকতে পারবে না….
আব্বু: তুই আমাদের কলিজ্বা তোকে ছাড়া কেমনে থাকি বল
আম্মু: তোর কোন ক্ষতি হক আমার সেটা বসে বসে দেখতে পারবো নারে মা
তুষার: ভালো হলোই আংকেল চলে আসলো আদিবার মন খারাপ ছিলো আপনাদের জন্য ( মুচকি হেসে)
আমি: হুম আব্বু …..
মা: ভালো করেছেন ভাইজান এসে এবার বিয়েটা সম্পূর্ন হবে….
আব্বু: হুমম সে জন্য তো আসা,,,,শুভ কই গেলো
শুভ: আংকেল আছি
হঠাৎ শুভ বাসায় ডুকলো সোঁজা গিয়ে তুষার সামনে দাড়ালো,,,
তুষার: তার মানে তুই উনাদের আনতে গেছিলো ভালো করেছিস এই না হলে আমার বেষ্টু তুই….!
শুভ: হুমমম বেষ্টু ( মুচকি হেসে)
তুষার: তো চলো এবার বিয়েটা শেষ হক,,,,,
শুভ: হুমম হবে তো বিয়ে তোর কত দিনের স্বপ্ন তাই না,,,
তুষার: হুমমম,,,,
হঠাৎ তুষার এসে আমার হাতটা ধরে হাঁটা দিতেই শুভ আমার আরেকটা হাত ধরলো,,,,
তুষার: কি হলো,,,,,ছাড় ওর হাত বিয়ে সময় পার হয়ে যাচ্ছে তো
হঠাৎ শুভ আমার হাতটা ধরে টান দিতেই ছিটকে গিয়ে দূরে পড়লাম তখনি শুভ তুষারেরর দু গালে কষিয়ে দুটো চর মারলো সবাই নিঃস্তব্দ হয়ে দাড়ালো,,,,,
শুভ: ভাবতেই লজ্জা হচ্ছে তুই আমার বেষ্টু ছিঃ….
তুষার: শুভ….
আব্বু: গলা নামিয়ে কথা বল লজ্জা হওয়া দরকার তোর,,,,
তুষার: আংকেল আপনি ভুল বুঝছেন আমায়
শুভ: আর কত নাটক করবি তুই বলবি আরে তুই তো সিনেমার হিরো দের থেকে বড় এক্টর…!
তুষার: দোস্ত তুই কি যাতা বলছিস
শুভ: নাটক কম
তুষার : শুভ প্লিজ শোন ….
আব্বু: তোর কত বড় সাহস আমার মেয়ের জীবনে আবার পা দেওয়া,,,,
ঠাসসসসসসসস!!!.
তুষার: এইইইইই বুইড়া ( হাত তুলে)
আমি: আব্বু….
____হঠাৎ শুভ হাতটা ধরলো…! তুষার এমন রুপ দেখে সবাই আবাক হয়ে তাকালো…..
শুভ: লজ্জা করে না বাবার বয়সের লোকের গায়ে হাত তুলতে ছিঃ
তুষার: বাবা হুমম এই লোকটা সেই ৪ বছর আগে থেকে আমার লাইফটা হেল করে দিয়েছে….
★★ ৪ বছর আগের কথা…..!
তুষার: আজ আদিবা প্রপোজ করেই ছাড়বো…
অনিক: দোস্ত তোর দ্বারা হবে
তুষার: কি করবো বল ওরে দেখলেই নার্ভাচ লাগে…
অনিক: তুই বলছিস এসব কথা তুই এই এলাকার লোকজন সবাই তোরে ভয় পাই আর তুই একটা মেয়েকে দেখলে নার্ভাচ হয় যাস….
রুমান: হাউ পানি ব্রো…
তুষার: তোরা মজা নিস… এখন যদি শুভ থাকতো ঠিক হেল্প করতো আমায় দোস্ত প্লিজ চলে আয়
অনিক: বায় দ্যা ওয়েহ শুভ কবে ফিরছে দেশে
তুষার: সিওর জানি,,,,
রুমান: তুষার আদিবা…..
__ পিছনে তাকিয়ে দেখি নীল ড্রেন্স পড়ে আদিবা কলেজে ডুকছে! সেই দিন নতুন করে আদিবার প্রেমে পড়েছিলাম “”” ওই চোখের চাহনি, ওর মিষ্টি ঠোঁটের হাসি, ওর সব কিছু যেনো আমার কাছে নেশার মতো লাগতো বার বার আমায় মুগ্ধ করতো..!
তাড়াতাড়ি করে আদিবার সামনে দাড়ালাম
তুষার: আদিবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
আমি: আমার সাথে! আচ্ছা বলেন…
তুষার: আসলে… ওয়েট আসছি….
আদিবা কে দাড় করিয়ে দৌড়ে কলেজের বাইরে এসে কিছু গোলাপ নিয়ে তাড়াতাড়ি করে কলেজে ডুকলাম কিন্তুু আদিবা ওখানে ছিলো না অনেক খুঁজে দেখি ক্যাম্পাসে বসে ফ্রেন্ড সাথে আড্ডা দিচ্ছে,,,,
তুষার: তোমাকে তো ওখানে দাড়াতে বলছিলাম এখানে কেনো ( রেগে)
আমি: আসলে ভাইয়া
সিনহা: তুষার ভাইয়া আমি এখানে এনেছি ওরে। ও আসতে চাই ছিলো না
তুষার: স্টুপিড,,,,যায় হক
সেইদিন হাঁটু গেরে পুরো ক্যাম্পাসের সামনে হাজার গোলাপ দিয়ে আদিবাকে প্রপোজ করে ছিলাম…!
কিন্তুু আদিবা আমায় রিজেক্ট করে পুরো ক্যাম্পাসের সামনে লজ্জিত করেছিলো,,,,,
ঠিক সেইদিন বিকালে ক্লাবের পাশে সবাই আড্ডা দিচ্ছি হঠাৎ আদিবার আব্বু মানে আংকেল হাজির,,,,
আংকেল:……… ?
( চলবে)