নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৪০+৪১

0
1448

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪০

আজ সকাল থেকেই আব্রাহামের কোন খোঁজ নেই। মানে ক্ষনিকের জন্য গুম বলা যায় তাকে। আইরাত ফোনের ওপর ফোন করে যাচ্ছে, টেক্সট করে যাচ্ছে বাট নো রেসপন্স। এগুলো দেখে তো আইরাতের মাথা নষ্ট হবার মতো অবস্থা। আইরাত ভাবলো আব্রাহামের বাড়ি যাবে কি যাবে না। কিন্তু সেই চিন্তা পরক্ষণেই আবার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো। কাল রাতে খুব কম কথা হয়েছিলো আব্রাহামের সাথে তার। আর আজ সকালেই সে গুম। এগুলো যেনো আর ভালো লাগছে না। তবে আইরাত ভাবলো যে অফিসে আছে আর হয়তো কোন ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং-এ আছে তাই ব্যাস্ত। আইরাত তার রুম থেকে বের হয়ে নিচে হলরুমে চলে গেলো। যেতেই দেখে রনিত বসে আছে। আইরাত যেই না রনিতের কাছে যেতে ধরবে তখনই আব্রাহামের ফোন। আব্রাহামের ফোন কল দেখে যেনো আইরাতের শান্তি লাগে। তবে ভেবে নেয় যে ফোন ধরতেই আচ্ছা মতো করে বকে দিবে।

আইরাত;; হ্যালো, এই কোথায় আপনি। সেই ভোর থেকে ফোন দিচ্ছি আপনার কাছে কিন্তু রিসিভ করার নাম নেই। মেসেজ দিয়ে পাচ্ছি না। কোথাও না। আপনি কোথায় ছিলেন?

আব্রাহাম;; আরে আস্তে আগে একটু দম নাও।

আইরাত;; ধুর।

আব্রাহাম;; আমি অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছি।

আইরাত;; তা কি এমন কাজ শুনি?

আব্রাহাম;; অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আইরাত;; আমার থেকেও বেশি?

আব্রাহাম;; তোমার জন্যই তো করা।

আইরাত;; মানে?

আব্রাহাম;; এতোকিছু তোমার না বুঝলেও চলবে।

আইরাত;; কিন্তু……

আব্রাহাম;; হে লিসেন, কিছুক্ষন পর একটা পার্সেল যাবে তোমার নামে ওকে তো সেটা পিক করে নিও।

আইরাত;; পার্সেল? কিন্তু কেনো? মানে পার্সেল কেনো?

আব্রাহাম;; সেটা এলেই বুঝতে পারবে। আর আমি এখন রাখছি ওকে পরে কথা বলি।

আইরাত;; আরে বাট হ্যালো, হ্যালো….

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আইরাত একটা ভেংচি কেটে রনিতের কাছে চলে যায়।

আইরাত;; কিরে বিচ্ছু কি করিস?

রনিত;; জাম খাই। খাবে?

আইরাত;; না তুই ই খা।

রনিত;; আরে খাও না অনেক মজা।

আইরাত;; হুমম দেখে-শুনে খাস। জামাতে দাগ লাগাস না নইলে তোর মা তোকে সাবান ছাড়া ধুয়ে দিবে।

রনিত;; 🤐।

তখনই কলিংবেলে চাপ পরে, আইরাত গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দেখে ডেলিভারি বয় দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; জ্বি?

ডেলিভারি বয়;; জ্বি এখানে নুজাইফা বিনতে আইরাত নামে কেউ কি আছে?

আইরাত;; জ্বি আমিই আইরাত, বলুন।

ডেলিভারি বয়;; হ্যাঁ আসলে আপনার নামে একটা কুরিয়ার এসেছে।

আইরাত;; কিন্তু আমি তো কিছু অর্ডার করি নি।

ডেলিভারি বয়;; কিন্তু এটা আপনার নামেই এসেছে।

তখনই আইরাতের আব্রাহামের কথা মনে পরে।

আইরাত;; ওহহ হ্যাঁ হ্যাঁ, দিন।

ডেলিভারি বয়;; এখানে একটা সিগন্যাচার করে দিন।

ডেলিভারি বয় আইরাতের হাতে পার্সেল টা এগিয়ে দিয়ে একটা কাগজ দেয়। আইরাত তাতে সাইন করে দিলে সে চলে যায়। আইরাত দেখে বেশ বড়োসড়ো একটা পার্সেল। সে অনেক বেশি এক্সাইটেড এতে কি আছে তা দেখার জন্য।

রনিত;; আপু এতে কি আছে?

আইরাত;; সেটা তোর জেনে কাজ নেই। জাম খাচ্ছিস চুপচাপ জাম খা।

রনিত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে আইরাতের দিকে। আইরাত তো ঢেংঢেং করে পার্সেল টা হাতে নিয়ে ওপরে তার রুমে চলে গেলো। গিয়েই দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার ওপর ধপ করে বসে পরে। পার্সেল টা নিজের সামনে রেখে খুলতে থাকে। একসময় খোলা শেষ হলে আইরাত ভেতরে দেখে একটা স্কাই ব্লু আর হুয়াইট কালারের কম্বিনেশনে গাউন। অসম্ভব সুন্দর দেখতে। আইরাত তা নিয়ে দেখছিলো তখনই আব্রাহামের ফোন আসে। আইরাত তো না দেখেই ফোন রিসিভ করেছে। তাই গাউনের দিকে তাকিয়েই বলে ওঠে….

আইরাত;; হ্যালো

আব্রাহাম;; পছন্দ হয়েছে?

আব্রাহামের কন্ঠস্বর পেয়ে আইরাত হেসে দেয়।

আইরাত;; আপনি?

আব্রাহাম;; তো কে থাকবে? বলো পছন্দ হয়েছে?

আইরাত;; অনেক বেশি। অনেক সুন্দর গাউন টা।

আব্রাহাম;; আমি জানি আমার চয়েস তোমার থেকে অনেক ভালো।

আইরাত;; হ্যাঁ হয়েছে। কিন্তু এটা কেনো?

আব্রাহাম;; শুনো গাউন টা সুন্দর করে পরে চলে আসবে।

আইরাত;; কিন্তু কোথায়?

আব্রাহাম;; তোমার বাড়ির সামনে আব্দুল চাচা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি শুধু গাড়িতে উঠবে আর চলে আসবে।

আইরাত;; আরে বাবা কিন্তু আসবো কোথায়?

আব্রাহাম;; সেটা তো এলেই বুঝতে পারবে।

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম;; তবে একটা কথা!!

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; সেইদিন তো আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে। আজ প্লিজ এমন কিছু করো না। নয়তো উল্টা-পাল্টা কিছু করে না বসি আমি।

আইরাত;; আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম মানে??

আব্রাহাম;; এখন রাখলাম।

আইরাত আর কি বলবে আগেই ফোন কেটে দেয়। আব্রাহাম যে কি করছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। যাই হোক আইরাত দ্রুত রেডি হয়ে নেয়। আব্রাহামের দেওয়া গাউন টা পরে নেয়। চুল গুলো খুলে দেয়, আর একদম হাল্কা কিছু অর্নামেন্টস।
পায়ে কিছুটা উঁচু জুতা পরেছে। হাতে স্টোনের ব্রেসলেট টা পরে নিচে নেমে আসে আইরাত। আইরাত বাইরে যেতে ধরবে তখনই কলি আসে…

কলি;; কিরে কোথাও যাচ্ছিস?

আইরাত;; হ্যাঁ চাচি একটু বাইরে যাচ্ছি। জলদি ফিরে আসবো।

কলি;; আচ্ছা।

আইরাত বাইরে এসেই দেখে একজন মাঝবয়স্ক লোক গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে উনার নাম আব্দুল রহমান। উনি আব্রাহামের সাথেই আছেন। একসময় আব্রাহামের বাবার ড্রাইভার ছিলেন। এখনো আব্রাহাম উনাকে নিজের সাথেই রেখে দিয়েছেন। আইরাতের বাইরে আসতেই উনি গাড়ির বাইরে বের হন।

আব্দুল;; আসুন ম্যাম, আব্রাহাম বাবা আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।

আইরাত;; আংকেল প্লিজ আপনি আমার বাবার বয়সী। ম্যাম না ডাকলেই ভালো লাগবে।

আব্দুল;; মা ডাকি?

আইরাত;; অবশ্যই 😊।

আইরাত গাড়িতে উঠে বসে। আইরাত শুধু গাড়ির উইন্ডো দিয়ে বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।

আইরাত;; আচ্ছা আংকেল আমরা কোথায় যাচ্ছি?

আব্দুল;; মা আমি আসলে জানি না। আর জানলেও আব্রাহাম বাবা আমাকে বলতে মানা করেছে।

আইরাত;; এইটা কোন কথা।

আইরাত আবার মুখ ফুলিয়ে বসে পরে। কেউ কিছু বলবেই না যেহেতু তাহলে কি আর করার। দেখতে দেখতেই এক সময় একটা খোলা মেলা জায়গায় এসে গাড়ি থামে।

আব্দুল;; মা আমরা এসে গেছি।

আইরাত;; এখানেই?

আব্দুল;; হ্যাঁ।

আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরে আর আব্দুল রহমান গাড়ি নিয়েই চলে যায়। আইরাত এই জায়গা টা চিনে না। একদম অচেনা একটা জায়গা। আইরাত কপাল কুচকে কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়। কোথাও কাউকে দেখতেও পারছে না। কিছুটা সামনে এগোলে আইরাতের চোখ গুলো আপনা আপনিই বড়ো হয়ে যায়। কেননা সামনে সুন্দর একটা পুকুর, তাতে আবার রয়েছে বেশ কিছু পদ্মফুল। সাদা ধবধবে পালকের পাতি হাসগুলো পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে এদিক থেকে সেদিকে। আবার মাঝে মাঝে পানিতে ডুব দিয়ে ওপরে উঠে আসছে। পুকুরের চারিপাশে রয়েছে সারি সারি গাছ। এখানে যতদূর চোখ যায় শুধু খোল আকাশ আর সবুজ ঘাস। রয়েছে মন-মুগ্ধকর খোলা বাতাস। আইরতের এখন মন চাইছে সব ছেড়ে ছুড়ে ছুটে যাক ওই দূর দিগন্তে। কি যে সুন্দর একটা জায়গা বলারও বাইরে। মুগ্ধ নয়নে আইরাত তাকিয়ে তাকিয়ে এইসব কিছু দেখছে। তখনই হঠাৎ আইরাতের মাথার ওপর দিয়ে অনেক গুলো ফুলের পাপড়ি ঝড়ে পরে৷ আইরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই ফুলগুলো কোথা থেকে এলো আবার। তবে নিজের অজান্তেই আইরাতের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে নিজের দুই দিকে তার দুইহাত মেলে দিয়েছে৷ এত্তোগুলো ফুলের পাপড়ি, সব আইরাতের ওপর পরেছে। আইরাত খিলখিল করে হেসে ওঠে। তখনই এক নেশাময় পুরুষালী কন্ঠে আইরাত তার পেছন ঘুড়ে তাকায়।

তাকিয়েই আইরাত অবাক। আব্রাহাম এক হাটু গেড়ে আইরাতের সামনে বসে আছে। হাতে একটা ফুলের বুকে আর রিং।

আব্রাহাম;; আমি ভাবতেই পারি না নিজেকে তোমায় ছাড়া। আমার অস্বস্তি তুমি। আইরাত আছে তো আব্রাহাম। আইরাত নেই, আব্রাহামও নেই। আইরাত আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এই কথা টা আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস অব্দি প্রতিদিন বলেই যাবো। আমার লাইফে আসা ফার্স্ট & লাস্ট মেয়ে তুমি। তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ। না তোমার আগে কেউ ছিলো আর না ই তোমার পরে কেউ আসবে। আমি আমার জীবনের সূর্যদয় টা তোমার সাথে দেখতে চাই আর সাথে সূর্যাস্ত টাও। আমার জীবন তোমাতেই শুরু আর তোমাতেই শেষ 🥀। তুমি যদি একটু আমাকে কমও ভালোবাসো তাও সমস্যা নেই। আমার চলবে। কেননা আমার একার ভালোবাসাই আমাদের দুই জনের জন্য যথেষ্ট। আমি তোমার সাথে ছিলাম, আছি আর সবসময় থাকবো। তুমি শুধু আমার হাত শক্ত ভাবে ধরে রেখো?? আর আমাকে একটু নিজের বলে দাবি করো?? আর তুমি তো আমারই। আমি যেনো বলতে পারি যে “” না, সবাই এক না। সবাই এক হয় না। সবাই ছেড়ে যায় না। কেউ কেউ নিজের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি থেকে যায় “”। আমাদের দুইজনের শেষ বয়সে যখন আমরা ৬০-৬৫ বছরের বুড়ো-বুড়ি হয়ে যাবো তখনও যেনো এই আইরাত এই আব্রাহামেরই থাকে আর এই আব্রাহাম এই আইরাতের। বিকেলের শেষ বেলা টা যেনো আমার হাতে তোমার হাত আর আমার কাধে তোমার মাথা রেখেই শেষ হয়। আইরাত সবাই বলে আমি আমার ভালোবাসার জন্য মরতেও রাজি। কিন্তু আই এম সরি আমি তোমার জন্য মরতে রাজি না। কারণ আমি আমার জীবনটা তোমার সাথে কাটাতে চাই, তোমার নামে লিখে দিতে চাই। একসাথে বাচতে আমি তোমাকে নিয়ে। তো এতোকিছু যে পরিকল্পনা আছে আমার তোমাকে নিয়ে তা কি পূর্ণ করবে তুমি আমার সাথে?? চিরতরে হবে কি আমার? হবে এই আব্রাহামের আইরাত??

আব্রাহাম এই কথা গুলো এক দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছে। আইরাত ভাবেই নি যে আব্রাহাম তাকে এমন একটা সারপ্রাইজ দিবে। টুপ করেই আইরাতের চোখ দিয়ে এক বিন্দু পানি গড়িতে পরে। আব্রাহামের দিকে সেও ঘোর লাগা নয়নে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম, সে যেনো নিজের প্রশ্নের জবাব গুলো আইরাতের চোখে খুঁজে চলেছে। আইরাতের সারামুখে তার চোখ গুলো বিরচন করে চলেছে। আইরাত তার চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। তার চোখের দেওয়ালে সেইদিন সেই রিসোর্টের কথা টা ভেসে উঠলো। আব্রাহাম তাকে এভাবেই সেইদিন প্রোপজ করেছিলো। আইরাত তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো সেইদিন। আর এখন আইরাতের কাছে ক্লিয়ার হলো যে আব্রাহাম কেনো তাকে ফোন করে ফিরিয়ে দেবার কথা বলছিলো। সেইদিন যখন আব্রাহাম আইরাতকে প্রথম প্রোপজ করে তখন আইরাতের বেশ ভয় লেগেছিলো। অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে নিজের দুই পা পিছিয়ে নিয়েছিলো। আইরাত নিজের চোখ মেলে তাকায়। আব্রাহাম এখনো অধির আগ্রহে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো নিজের জবাব পাওয়ার বেকুল ইচ্ছে। আইরাত নিজের দাত দিয়ে ঠোঁট গুলো কামড়িয়ে ধরে কোন রকমে কান্না থামাচ্ছে। ভীষণ ইমোশন কাজ করছে নিজের মাঝে।

আব্রাহাম;; Airat Babygirl, Do you love me?!

আইরাত;; Yes, I do…

আইরাত তো সেইদিন নিজের দুই পা আব্রাহামের দিক থেকে পিছিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু আজ & এখন সে আব্রাহামের দিকে নিজের দুই পা এগিয়ে দিলো।

আব্রাহাম;; Will you marry me💍✨?

আইরাত;; YES….

আইরাত এক হাত দিয়ে নিজের চোখের পানি কোন রকমে মুছে ফেলে। আব্রাহাম ডায়মন্ড রিং টা আইরাতের হাতে পড়িয়ে দেয়। আইরাত ঝট করে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম নিজেও আইরাতকে জড়িয়ে ধরে। একহাত আইরাতের কোমড়ে ধরে আরেক হাত আইরাতের মাথার পেছনে দিয়ে দেয়। আইরাতের মাথার ওপর আলতো করে চুমু একে দেয়। আর তখনই বেশ চিল্লা-পাল্লা করে চারদিক থেকে সবাই ছুটে আসে। সবাই বলতে অয়ন-দিয়া, রহিত-আরুশি, আর কৌশলও। আইরাত ওদের দেখে হেসে দেয়।

আইরাত;; এইইই তোরা সবাই এখানে??

দিয়া;; তো থাকবো না,, তুমি যে তলে তলে কত্তো বড়ো ট্যাম্পু চালাও, আহা।

অয়ন;; সিরিয়াসলি অনেক হ্যাপি হ্যাপি লাগছে। ওহ গড এক্সেপ্ট করে নিয়েছে। এখন তো আমার আর আইরাত নাম ধরে ডাকলে চলবে না। বউমনি বলে ডাকতে হবে।

আরুশি;; কংগ্রেচুলেশন গাইস। যাক তোরা এক হলি অবশেষে।

রহিত;; হুমম অনেক আগে থেকেই এক আছে।

কৌশল;; তোরা সবাই মিঙ্গেল ই থাক। একাই সিঙ্গেল আমি মরি 🙂। আমি মঙ্গল গ্রহে চইলা যাই। মিশন মঙ্গল।

কৌশলের কথায় সবাই হেসে উঠে।

আইরাত;; আছে আছে আমার কাছেও তোমার জোড়া আছে ভাই।

কৌশল;; ওমা তাই নাম কি গো 😃😃?

আইরাত;; অবনিইইইইই।

আব্রাহাম;; তাহলে এখানে সবাই বুক করা!

আইরাত;; আবার জিগায়। অবশ্যই।

এভাবেই চলতে থাকলো। বেশ সময় সবাই মিলে আড্ডা দেয়। তারপর রহিত-আরুশি, অয়ন-দিয়া আর কৌশল চলে যায়। কিন্তু আব্রাহাম আর আইরাত সেখানেই থেকে যায়। আব্রাহাম ঘাসের ওপর বসে আছে আর তার কোলেই হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে আইরাত। আইরাতের এক হাত আব্রাহামের আরেক হাতের ভাজে।

আইরাত;; আমরা কখন বাসায় যাবো?

আব্রাহাম;; মন তো চাইছে যে এখান থেকে তোমাকে সোজা আমার বাড়ি নিয়ে যাই।

আইরাত;; হেহেহেহেহে।

আব্রাহাম;; হুমমমম।

আইরাত;; আচ্ছা আব্রাহাম!?

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; আমার না কেনো জানি মনে হচ্ছে যে আমার চাচ্চু আমাদের ব্যাপার টা নিয়ে রাজি হবেন না।

আব্রাহাম;; হাহাহা, হাহাহা।

আইরাত;; আমি কোন জোক বলি নি। হাসছেন কেনো?

আব্রাহাম;; তোমার কি মনে হয় যে আমি কারো বলা-কওয়ার নিচে পরে থাকবো নাকি। ভাগিয়ে নিয়ে আসবো আমি তোমাকে। তোমার চাচা-চাচি রাজি থাকলেও এই বিয়ে হবে আর না থাকলেও এই বিয়ে তো হবেই৷ হাহ যেখানে আমি তোমার মতামত নিবো না বিয়ের জন্য সোজা তুলে এনে বিয়ে করে ফেলবো। সেখানে কিনা তোমার ওই খাড়ুস চাচা-চাচি,, হাসালে।

আইরাত;; ধুর, এভাবে বলতে হয় না।

আব্রাহাম;; আজ আমি তোমাদের বাসায় যাবো। সেখানে গিয়ে যতটুকু না বললেই নয় ততটুকুই বলবো। তারপর সম্পূর্ণ আমার ইচ্ছে বুঝেছো।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; এখন দাদির সাথে দেখা করে পরে তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসবো, চলো।

আইরাত;; আচ্ছা।

আব্রাহাম আর আইরাত চলে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের বাড়িতে যায়। সেখানে আইরাত আর ইলা বসে অনেক গল্প করে। ইলার যেন এই আধবয়সে একটা সঙ্গী হয়ে গেছে, সেটা আইরাত। তাকে পেলে আর কিছু লাগে না। যাই হোক প্রায় ঘন্টা একের মতো থেকে আইরাত চলে আসে। আব্রাহাম নিজে তাকে নিয়ে আসে। আব্রাহাম আর আইরাত যখন একসাথে আইরাতের বাসায় ঢুকে তখন আইরাতের চাচা-চাচি সবাই ড্রোইং রুমে বসে ছিলো। আব্রাহাম কাউকে কিছু না বলেই সোজা ইকবাল সাহেবের পাশে বসে পরে।

আব্রাহাম;; প্রিয় চাচাজান, ওপস সরি শশুড়আব্বু বেশি না তবে তোমাকে জাস্ট এইটুকু কথা বলতে এসেছি যে আমি তোমার একমাত্র মেয়েকে খুব খুব জলদি বিয়ে করে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চাই। সো আমি হচ্ছি তোমার একমাত্র মেয়ের জামাই বুঝলে। আইরাত আমার। তোমরা রাজি থাকলেও বিয়ে হবে আর না থাকলেও। যদি ভালোভাবে রাজি হয়ে যাও তাহলে ভালো আর না হলে বাকা পথ আমি অনেক ভালো জানি। এটাকে চাই তোমরা আমার মিষ্টি সুরে থ্রেইট ভাবো বা অন্য কিছু। তাড়াতাড়ি তোমার মেয়ের আমার সাথে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাও হবু শশুড় বাবাজী আর আম্মাজান।

আইরাতের বেশ হাসি পাচ্ছে। সে মুখ টিপে হাসছে আব্রাহামের এমন কথা শুনে। আর এছাড়াও এতোদিনে আব্রাহামের ব্যাপারে বেশ ধারনা হয়ে গেছে ইকবাল সাহেবের। আর যাই হোক আব্রাহাম আইরাতের জন্য বেস্ট। আইরাতের জন্য আব্রাহামের থেকে ভালো কোন ছেলে আর হয়ই না। আব্রাহাম এই বলেই উঠে গেলো। সবার সামনেই আব্রাহাম আইরাতের গালের পাশে নিজের হাত রেখে তার কপালে একটা গাঢ চুমু দিয়ে চলে যায়। আইরাত আর কি বলবে সেও নিজের রুমে ওপরে চলে যায়। ইকবাল সাহেব কিছুক্ষন ভাবলেন এই বিষয় টা নিয়ে। তিনি কলির দিকে তাকিয়ে দেখে কলি হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। কলি হঠাৎ করেই ইকবাল সাহেবের হাতে নিজের হাত রাখেন। ইকবাল সাহেব তার দিকে তাকালে কলি চোখের ইশারা দেয়। অর্থাৎ হ্যাঁ, বিয়ে টা হোক। ইকবাল সাহেব মুচকি হেসে উঠে বাইরের দিকে চলে আসে। দেখে আব্রাহাম গাড়ির দরজা খুলছে তখনই ইকবাল সাহেবের ডাক…..

ইকবাল;; আব্রাহাম…!

আব্রাহাম;; আরে শশুড়আব্বু, তুমি এখানে?

ইকবাল সাহেব কিছু না বলেই আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। হুট করেই আব্রাহামের হাত টা নিজের হাতে তুলে নেয়। আব্রাহাম কিছু না বুঝে শুধু তাকিয়ে আছে। আর সে এখন একটু সিরিয়াস হয়।

ইকবাল;; আমার মেয়েটাকে সারাজীবন ভালোবাসায় আগলে রেখো বাবা।

এই বলেই ইকবাল সাহেব চলে যান। আব্রাহাম কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। তার মানে কি? মানে আইরাতের চাচা-চাচি রাজি। ওহ গড। সবাই রাজি হয়ে গেছে। আব্রাহাম হেসে ওঠে। আজ কারো খুশির কোন সীমাই নেই। একদম বাধভাঙ্গা খুশি। আব্রাহাম হঠাৎ ওপরের দিকে তাকায়। দেখে যে আইরাত তার রুমের করিডর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আর বাতাসে তার চুল গুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে চুমুর মতো কিছু একটা দেয়। আইরাত হেসে দেয়। তারপর আব্রাহাম তার গাড়ি নিয়ে চলে আসে, আর আইরাতও ভেতরে চলে যায়। সবাই খুশিতে দিশেহারা।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪১

আব্রাহাম-আইরাতের বিয়ে ❤️🥀। এটা ভাবতেই যেনো মন প্রাণ সব কেমন জুড়িয়ে যায়। যাক অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে,, অবশেষে বিয়ে হচ্ছে দুই ল্যায়লা-মাজনুর। বিয়ে বেশ ধুম-ধারাক্কা করে হবে। আইরাত ভেবেছিলো বিয়ে যদি ছোট খাটো করেও হয় প্রব্লেম নেই তার কিন্তু আব্রাহাম তো আর তা মানে না। আব্রাহামের মতে বিয়ে একবারই হবে। যদি ব্যান্ড-বাজা না বাজিয়ে হয় তাহলে কেমন দেখায়। আইরাতের বাড়ি আর আব্রাহামের বাড়ি দুই বাড়িতেই যেনো বিয়ের সাজে রমরমা। বাড়ির আনাচে-কানাচে সব জায়গা তেই খুশির ছোয়া রয়েছে। আইরাত ফোন করে দিয়া আরুশি অবনি সাথে তার বাকি কিছু ভার্সিটির ফ্রেন্ড সবাই কে ডেকেছে। সবাই এসে পরেছে। বাড়িতে বেশ মানুষ জন হয়েছে। সবাই যার যার কাজে অনেক ব্যাস্ত। কেউ দম ফেলার নাম নিচ্ছে না। ছুটে ছুটে কাজ করতে হচ্ছে। ইকবাল সাহেব তো শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজের লোকদের অর্ডার দিচ্ছে। তবে আইরাত খেয়াল করলো যে তার চাচি কলি আগে থেকে বেশ পালটে গেছে। এখন আর আইরাতের সাথে আগের মতো খিটখিট করে না। এমনকি এখনো নিজের দুই হাতে কাজ করছে। আইরাত সহ বাকি সবাই চেয়েছিলো যে বিয়ে একদিনেই হোক কিন্তু প্ল্যান চেঞ্জ। বিয়ে হবে দুই দিনে। লাইক আব্রাহাম-আইরাতের ড্রিম ওয়েডিং। সেভাবে ধরতে গেলে তো বিয়ে পাঁচ দিন অব্দি টানা যায়। কিন্তু পাঁচ দিনে আব্রাহাম পাগল হয়ে যাবে। তাই সবাই ভেবেছে যে বিয়ে দুইদিনে সম্পন্ন হবে। প্রথম দিনে মেহেন্দি আর গায়ে হলুদ তার পরেরদিন বিয়ে। আজ আইরাতের গায়ে হলুদ। তবে এখানে ঝামেলা পেকেছে। আরুশি দিয়া আর অবনি কন্ডিশন দিয়েছে যে যার যার বাড়ি থেকে তাদের গায়ে হলুদ হবে। মানে আইরাতের বাড়ি থেকে তার আর আব্রাহামের বাড়ি থেকে তার গায়ে হলুদ হবে। মেয়েদের ফাংশনে ছেলেরা নট এলাউড৷ এটা শুনেই ছেলেদের মুড টা একদম ফট করে ফুটে বেলুনের মতো চুপসে গেছে। তবে মেয়েদের সাথে আর পারে কে। ছেলেদের একদম এক প্রকার রাম ধোলাই দিয়ে মেয়েদের ফাংশন থেকে দূর করেছে। আইরাত আব্রাহামের সাথে কথা বলছিলো কিন্তু এই তিন শয়তানের জ্বালায় আর বলতে পারে নি। অর্থাৎ বিয়ের আগে এই দুইদিন ছেলে মেয়ের কোন কথা হবে না। কি আর করার যেমন বলছে তেমন ভাবেই চলতে হচ্ছে।

আজ যেহেতু মেহেন্দি আর হলুদ ফাংশন তাই সকাল থেকে হলুদের ওপর হলুদ বাটা হচ্ছে। কেননা মানুষ অনেক তাই লাগবেই। আইরাত রা মোট চারজন বান্ধবি। আইরাত দিয়া আরুশি অবনি। এই চারজন রাতে একসাথেই ছিলো। কি পরিমান হাসি আর আড্ডা যে হয়েছে। আর রাতে আব্রাহাম যখন আইরাত কে ফোন দিয়েছে তখন আইরাতকে তো ফোন ধরতেই দেয় নি উলটো ফোন ছিনিয়ে নিয়ে সারা ঘরে দৌড়াদৌড়ি লেগে গিয়েছিলো। আর সবাই ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকার অন করেই
“” জিজুউউউউউউউউউউউউ “” বলে সেই ডাক। আব্রাহামের কানের পর্দা ফাটার মতো অবস্থা। তাই রাতে আর কথাই হয় নি। আর আজ সকাল থেকে আব্রাহামের ফোন আসে নি। হয়তো তারাও ওইদিকে অনেক ব্যাস্ত।

এদিকে আইরাত রেডি হচ্ছে। সে একটা এশ কালারের লেহেঙ্গা পরেছে। কিছুটা নেটের আর অনেক সুন্দর কারুকাজ করা। চুলগুলো কার্লি করে একসাইডে রাখা। আর মুখে কিছুটা সাজ। আইরাত কে নিয়ে হলরুমে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে সবার মাঝখানে। এখানে অনেক মানুষ। কেউ কেউ নাচছে, কেউ কেউ আবার আইরাতের পাশেই বসে আছে। জমজমা একটা পরিবেশ। পুরো বাড়ি টাকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আজ বেবি পিংক আর সাদা কালারের কাপড়ে চারিদিকে সাজানো হয়েছে। ইকবাল সাহেব বসে আছেন, কলি হলুদের দিকে নজর দিচ্ছে আর এগুলো দেখছে। আইরাতের হাতে মেহেদী পরানো শুরু হয়। দুই পাশ থেকে দুইজন মেয়ে ধরেছে। দুই হাতেই মেহেদী লাগানো হচ্ছে। দিয়া আর অবনি আইরাতের পাশ থেকে উঠে গিয়ে নাচা শুরু করে দিলো। আর আরুশি বসে বসে আইরাতের সাথে হাসছে। আইরাতের দুই হাতেই অনেক সুন্দর ডিজাইন করে ছোট্ট করে আব্রাহামের নাম লিখে দিয়েছে। আইরাতের মেহেদী পরা শেষ, আরুশিও দিয়েছে এখন দিয়া আর অবনি দিচ্ছে। আইরাতের ভার্সিটির কিছু ফ্রেন্ড রা জোর করে আইরাতকে টেনে নিলো নাচাতে। এভাবেই মেহেন্দীর ফাংশন টা শেষ হলো প্রায় ঘন্টা খানেক পর। আইরাত জলদি রুমে চলে যায় কেননা কিছুক্ষন পর আবার গায়ে হলুদ। তাই এই সব চেঞ্জ করে আবার ফ্রেশ হয়ে এলে হলুদ দিবে সবাই।


অন্যদিকে ছেলেদের তো আর মেহেন্দী হয় না। এর জন্য গায়ে হলুদ। আব্রাহামের দাদি যে কি পরিমান খুশি তা তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। সব সার্ভেন্ট রা বাকি সবাই একদম দিন-দুনিয়া ভুলে কাজ করছে। অনেক হাই ফাই ভাবে সাজানো হয়েছে আব্রাহামের বাড়ি। আব্রাহামের অফিসের স্টাফ, রাশেদ সবাই আসবে। এখন এখানে অয়ন, রহিত, কৌশল আছে। আব্রাহাম কে জ্বালিয়ে মারছে। তবে আজ আব্রাহামের কোন কাজ নেই। না অফিস আর না ই অন্য কোন কাজ। তাই বসে বসে নিজের ফোন ঘাটছে। ফোন ঘাটছে বলতে আইরাতের ছবি দেখছে জুম করে করে। কেননা কথা তো আর বলতে দিচ্ছে না। আব্রাহাম বসে বসে আইরাতের ছবি দেখছিলো তখনই রহিত আসে…

রহিত;; আয় হায় দুলহে রাজা। এতোটুকু দূরত্ব সহ্য হয় না হ্যাঁ। আরে আজ গায়ে হলুদের পর বিয়ে মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। একটু তো সবুর কর।

আব্রাহাম;; মজা নেস শালা। চুপ কর

অয়ন;; হ্যাঁ হ্যাঁ। তুম কারো তো রাসলিলা হাম কারে তো ক্যারেক্টার ঢিলা তাই না।

আব্রাহাম;; বাট আমি করলাম টা কি?

কৌশল;; এই যে ছবি দেখছিস।

আব্রাহাম;; আব্বে ইয়ার আমার বউ আমি দেখছি এতে কি হয়েছে?

অয়ন;; হ্যাঁ হ্যাঁ দেখো।

ইলা;; এই পোলাপান রা!!

আব্রাহাম;; আরে দাদি এসো এসো।

ইলা;; এই তোরা এখানে কি করিস। আরে অয়ন কৌশল রহিত যা ওখানে কাজ কতোদূর এগোলো সেটা দেখ। আমি হলুদ দেখে এসেছি। তোরা বাকি সব দেখ যা তো দ্রুত যা।

ইলার কথায় সবাই চলে যায়। আর আব্রাহামের পাশে তার দাদি বসে পরে। ইলা বসলে ইলার কাধে আব্রাহাম তার মাথা রেখে দেয়।

ইলা;; কি হয়েছে সোনা?

আব্রাহাম;; দাদি,, আম্মুর কথা মনে পরছে অনেক। আম্মু থাকলে কতোই না ভালো হতো বলো। কত্তো খুশি হতো। আমাকে হলুদ লাগাতো। তাই না?

ইলা;; আমি আছি না!

আব্রাহাম;; 😅😅, তুমি তো আছো অবশ্যই আছো। কিন্তু আম্মু থাকলে ভালো হতো তাই না।

ইলা ভেতর থেকে এক দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

ইলা;; আচ্ছা হয়েছে এবার চলেন মিস্টার আব্রাহাম চৌধুরী। কি যেনো বলে ওইটাকে। আরে ওইযে কি যেনো বলে না ওইটা।

আব্রাহাম;; কোনটা?

ইলা;; আরে ওইযে কি যেনো একটা তোরা বলিস না। আরে ওইযে,, মা ম মা

আব্রাহাম;; মাফিয়া!!

ইলা;; হ্যাঁ হ্যাঁ মাফিয়া মাফিয়া। চলেন মাফিয়া।

আব্রাহাম;; দাদি 😆।

ইলার কথার আব্রাহাম জোরেই কিছুটা হেসে দেয়।

সব রেডি এবার গায়ে হলুদ। বাইরে সব কিছু রেডি করে বসে আছে। কিন্তু আব্রাহাম ওপর থেকে এখনো নিচে নামে নি। অয়ন যেই না আব্রাহাম কে আনতে যাবে তখন আব্রাহাম ওপর থেকে নিচে নামে। একদম সাদা ধবধবে একটা প্যান্ট আর গেঞ্জি। এত্তো হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে। আব্রাহাম যখন ওপর থেকে নিচে নামছিলো তখন আব্রাহামের অফিসের সব মেয়ে স্টাফ রা গোল গোল চোখে কেমন তাকিয়ে ছিলো। যাই হোক আব্রাহাম এসে হলরুমে বসে পরে। সামনে হলুদের বেশ কিছু বাটি। ইলা এসে সবার আগে আব্রাহাম কে হলুদ দেয়। ইলা দুই হাতে হলুদ নিয়ে আব্রাহামের গালে হলুদ লাগিয়ে দেয়। কিন্তু আব্রাহামের গালে বেশি একটা হলুদ লাগে না। কারণ আব্রাহামের গালভর্তি চাপদাড়ি যা আইরাতের উইকন্যাস। ইলা কিছুটা হলুদ আব্রাহামের কপালে আর নাকের ডগায় লাগিয়ে দেয়। হাতে, শল্ডারে লাগিয়ে দেয়। তারপর আব্রাহামের কপালে চুমু খেয়ে ইলা সরে আসে। এবার যত্তসব হারামি দের পালা আব্রাহামের গায়ে হলুদ লাগানোর। অয়ন যেই না আব্রাহামের কাছে আসবে হলুদ লাগাতে আব্রাহাম বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; দেখ ভাই প্লিজ উলটা পালটা কাজ করবি না ভদ্র ভাবে হলুদ লাগিয়ে যা।

অয়ন;; 😁। আচ্ছা যা কিছু করবো না।

অয়ন কৌশল আর রহিত এসে আব্রাহাম কে সুন্দর করেই হলুদ লাগিয়ে দেয়। রাশেদও আসে আব্রাহাম কে হলুদ লাগায়। কিন্তু আব্রাহাম নিজেই এবার পল্টি খায় সে হলুদ নিয়ে আচ্ছামতো অয়ন রাশেদ কৌশল আর রহিতের গায়ে মুখে লাগিয়ে দেয়। একদম মুখ হাত ভরে গেছে। সবাই আসতে হাসতে শেষ। তখনই একজন ক্যামেরাম্যান আসে এসে এই পাঁচজনের এক সাথে হলুদ মাখা ছবি ক্লিক করে ক্যামেরা বন্দি করে নেয়।
বেশকিছুক্ষন হলুদে থেকে আব্রাহাম ফ্রেশ হয়ে আসে।

আর এবার পালা গায়েহলুদের তত্ত্বের। বিয়ের অন্যতম একটি রীতি আর অংশ হলো গায়েহলুদের তত্ত্ব। গায়েহলুদে বর কনের বাড়িতে তত্ত্ব পাঠানোর রীতি অনেকটাই আনন্দদায়ক। আসলে বিয়েতে হলুদ দেওয়ার অন্যতম একটা কারণ হলো বর-কনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি। এখানে যদিও বর-কনে দুইজনেই মাশআল্লাহ। বিয়ে উপলক্ষে বর কনের বাড়িতে যেই উপহার গুলো পাঠানো হয় মূলত তাকেই তত্ত্ব বলে। এখনো সেইম তাই। আব্রাহাম উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে। আব্রাহাম নাকি নিজে যাবে আইরাত দের বাসায় কিন্তু কীভাবে যাবে তাই বুঝছে না। কেননা ছেলেদের যাওয়া নিষেধ করে দিয়েছে মেয়েরা। বিয়ের তত্ত্ব নিয়ে আব্রাহামের দাদি আর অন্য স্টাফরা আসবে। কিন্তু আব্রাহাম তো এই নিয়ম জীবনেও ফলো করবে না। আব্রাহাম হলুদে একদম চুবুচুবু অবস্থা। নিজেকে আয়নাতে দেখে কেমন যেনো লাগছে। এই ফার্স্ট আব্রাহাম তার জীবনে হলুদ মেখেছে তাও তার দাদির কথায়। আব্রাহাম ফ্রেশ হয়ে এসে টাওয়াল দিয়ে নিজের চুল মুছছে আর আইরাত কে একটা মেসেজ করলো। ভাগ্যিস এবার ফোনটা আইরাতের হাতেই ছিলো। মেসেজ পেয়ে আইরাত তা ওপেন করে।।

“” বেবিগার্ল, তোমাকে হলুদ তো সবার আগে আমিই লাগাবো “”

আইরাত হেসে দেয়। সেও আবার রিপ্লাই দেয়।

“” হা করে বসে থাকুন, বাড়িতে অনেক মানুষ আর এখানেই তারাই আমাকে আগে হলুদ লাগাবে দেইখেন। পারবেন না আপনি “”।

আব্রাহামের মেসেজ…

“” হুম দেখা যাবে। কে আগে হলুদ লাগায় “”।

আইরাত মেসেজ টা দেখে হেসে ফোন রেখে দেয়। তারপর আবার একটু নিচে যায়। এদিকে দুই গাড়ি ভরে সব জিনিসপত্র নেওয়া হয়েছে। অয়ন রাশেদ কৌশল রহিত ওরা সবাই বাড়িতেই থেকে যায়। ইলা আর আব্রাহাম চলে যায়। তবে আব্রাহাম যে গিয়েছে তা কেউই জানে না। মূলত আব্রাহাম লুকিয়ে চুড়িয়েই গিয়েছে। দেখতে দেখতে এক সময় আব্রাহামের গাড়ি আইরাত দের বাসার সামনে এসে পরে। ইলা কে দেখে আইরাতের চাচা-চাচি এগিয়ে যায়। কম করে হলেও ইলার সাথে ৬ জন স্টাফ এসেছে। সবাই হাতে এত্তো গুলো জিনিস নিয়ে বাড়ির ভেতরে আসে। আইরাত হলরুমে দাঁড়িয়ে ছিলো ইলা কে দেখে সে এগিয়ে আসে। ইলা আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। আর হ্যাঁ হলুদ আব্রাহামের বাড়ি থেকে আইরাতকে দেওয়া হয়েছে। সব কিছু এদিকে রেডি। কলি গিয়ে আইরাতকে জলদি করে চেঞ্জ করে আসতে বলে। আইরাত ওপরে চলে যায়।

ব্রাউন কালারের একটা লেহেঙ্গা পরেছে আইরাত। এমনিতেই দুধে আলতা গায়ের রঙ তার ওপর ব্রাউন যেন ফুটেছে ভালো। আইরাত তো গুনগুন করে গান গাচ্ছিলো আর কানে নিজের ঝুমকো পরছিলো। তখনই হুট করে লোড সেডিং হয়ে যায়। নিচে মানুষের সমাগমের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তবে অন্ধকার দেখে তো আইরাতের অবস্থা খারাপ। সে অন্ধকার দেখে প্রচন্ড রকমের ভয় পায়। আইরাত দরজার বাইরে নিজের এক পা ফেলতে যাবে ঠিক তখনই একটা হাত এসে তাকে হেচকা টান দেয়। আকষ্মিক এমন কান্ডে আইরাত অবাকও হয় আর সাথে বেশ ভয় পায়। ভয় পেয়ে সে চিৎকার দিতে যাবে তখনই কেউ তার শক্ত হাত দিয়ে আইরাতের মুখ টা চেপে ধরে। তবে এই ছোয়া আইরাতের বেশ চেনা-জানা। কেনো যেনো মনে হচ্ছে যে এই স্পর্শ সে বেশ ভালো করেই চিনে। নিজের মুখের ওপর আইরাত কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারে। যেনো তার মুখটা নিজের বেশ কাছে।

আইরাত;; উম মম উমমম উমম্ম…

আব্রাহাম;; হুশশশশশশশশ!!

এবার আইরাতের চোখ গুলো একা একাই বড়ো হয়ে যায়। সে চিনতে পেরেছে এটা আব্রাহাম ছাড়া আর কেউ না।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল..!

আইরাত;; মম উমম উমম্ম…

আব্রাহাম তার হাত টা আইরাতের মুখের ওপর থেকে সরিয়ে ফেলে। আইরাত বড়ো বড়ো দম ছাড়ে।

আব্রাহাম;; হেই জানপাখি।

আইরাত;; আপনি? আপনি এখানে কি করছেন? আর কীভাবে এলেন? আপনি জানেন কেউ যদি আপনাকে এখানে দেখে ফেলে তাহলে কি হবে? এই লোড সেডিং ও আপনি করিয়েছেন তাই না? আল্লাহ আব্রাহাম যান এখান থেকে। কেউ দেখে ফেললে ঝামেলা আছে।

আব্রাহাম;; ওও হ্যালো বিয়ের বর আমি। এমন ভাবে বলছো যেনো চুরি করতে এসেছি।

আইরাত;; আচ্ছা কি হয়েছে কি? মানে কেনো এসেছেন?

আব্রাহাম;; কেনো এসেছি?

আইরাত;; হ্যাঁ কেনো এসেছেন?

আব্রাহাম একদম আইরাতকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। একহাতে আইরাতের কোমড় পেচিয়ে ধরে। আরেক হাতে আইরাতের গাল আর গলার ঠিক মাঝ বরাবর স্লাইভ করে চলেছে। আব্রাহাম একদম আইরাতের গলা ঘেষে কানের কাছে গিয়ে স্লো ভয়েসে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; বলেছিলাম না যে তোমাকে গায়ে হলুদ সবার আগেই এই আমিই লাগাবো।

আইরাত;;

আব্রাহাম;; আমি যখন বলেছি তাহলে তো তা অবশ্যই করবো তাই না। তুমি ভাবলে কি করে যে আমার কথা ভুল হবে। তোমার গায়ে হলুদ তো আমার হাত দিয়েই লাগবে তাও সবার আগে।

আইরাত;; কিন্তু….

আব্রাহাম;; চুপ।

হঠাৎ আইরাত তার গালে আব্রাহামের গালের স্পর্শ পায়। আব্রাহামের খোচা খোচা দাড়ি গুলো তার গালে লেগে সুরসুরি দিচ্ছে। আইরাত কিছুটা হেসে ওঠে। পরক্ষণেই আইরাত নিজের গালে ঠান্ডা কিছু একটার আভাস পায়। তার মানে এটা হলুদ। আব্রাহামের গালে হলুদ ছিলো আর সেই হলুদ আব্রাহাম তার গাল দিয়েই আইরাতের গালে লাগিয়ে দেয়। এভাবে আইরাতের দুই গালে আব্রাহাম তার গাল গুলো ছুইয়ে দেয়। তখনই আইরাত নিজের কোমড়ে আবার বেশ শীতল কিছুর স্পর্শ পেয়ে আইরাত কেমন কেপে ওঠে। আব্রাহামের হাতে হলুদ ছিলো অনেক। সেই হলুদ নিয়ে সে আইরাতের কোমড়ে লাগিয়ে দেয়। আব্রাহামের হাতের স্পর্শ পেয়ে আইরাত নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর আব্রাহাম এখনো নিজের গাল আইরাতের গালের সাথে লাগিয়ে রেখেছে। মূহুর্তের মাঝেই আইরাতের কোমড় একদম হলুদে লেপ্টে গেলো। তখনই ধুপ করে বাড়ির লাইট এসে পরে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম কে দেখেই সে হেসে ওঠে। শেষে নিজের দিকে তাকায়। দেখে তার অবস্থা খারাপ।

আইরাত;;ধুর আব্রাহাম এটা আপনি কি করেছেন। এভাবে হলুদ লাগিয়েছেন কেনো? ইশশশ কি অবস্থা। ড্রেস টাও শেষ আমার। আমার পছন্দের লেহেঙ্গা ছিলো।

আইরাতের কথা শুনে আব্রাহাম কিছুই বলে না। সে সোজা নিজের হলুদময় হাত দুটো দিয়ে আইরাতের দুই গাল ধরে ফেলে। তারপর আইরাতের ঠোঁট দুটোতে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। আইরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আব্রাহাম এবার তার একহাত দেওয়ালে রেখে আরেক হাত আইরাতের কোমড়ে পেচিয়ে রাখে। আইরাতও তার হাত দুটো আব্রাহামের বুকের ওপরে রেখে দেয়। কিছুক্ষন পর আব্রাহাম নিজেই আইরাতকে ছেড়ে দেয়। আইরাত মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। আব্রাহাম আইরাতের কপালে চুমু খায়। তারপর বেশ কয়েক মিনিট হয়ে যায় কিন্তু আব্রাহামের কোন কথাই আইরাতের কানে আসে না। আইরাত কপাল কুচকে সামনে তাকায় কিন্তু সামনে কেউ নেই। আইরাত কপাল কুচকে আব্রাহামকে এদিক ওদিক খুজে বেড়াতে থাকে কিন্তু সে নেই। মানে আব্রাহাম হাওয়ার বেগে এসেছে আর হাওয়ার বেগে চলে গিয়েছে। আইরাতের মুখ টা চুপসে আসে। কিন্তু তখন দিয়া আর অবনি এদিকে আসতে থাকে। সামনে আইরাতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায় তারা। কেননা আইরাতের গালে, গলায়, পেটে, কোমড়ে সব জায়গায় হলুদে একদম লতপত অবস্থা। আইরাত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। দিয়া আর অবনি একবার তাদের দিকে তাকায় তো আরেকবার আইরাতের দিকে…

দিয়া;; কিরে আইরু তোর এই অবস্থা কেনো?

অবনি;; তুই হলুদ দিয়ে এমন হলুদিয়া পাখি সেজে আছিস কেনো?

আইরাত;; আব..না মানে ইয়ে আসলে। আমি ওইতো

দিয়া;; আরে কি এমন হলি কি করে?

আইরাত;; মা মানে আমি আসলে আরে ওইযে ইলেক্ট্রিসিটি হ্যাঁ ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়েছিলো না ত তো তখন হলুদের বা বাটির ওপর পরে গিয়েছিলাম আর কি।

অবনি;; পাগল পেয়েছিস। হলুদের বাটিতে পরে গেলে হলুদ ছিটে আসতো এভাবে একদম পারফেক্ট ভাবে গায়ে লেগে থাকতো না।

আইরাত;; আরে আমি…

কলি;; আইরায়ায়ায়াত, আইরাত। আরে কোথায় তোরা সব জলদি নিচে আয়।

আইরাত;; ওইতো ডাকছে চাচি। জলদি চল।

আইরাত দিয়া আর অবনিকে এড়িয়ে কোন রকমে নিচে চলে যায়। যাই হোক আব্রাহামের বাড়ি থেকে যে হলুদ এসেছিলো তাই আইরাতের গায়ে লাগাতে হবে। আর আইরাতের গায়ে আগে থেকেই হলুদ লাগানো দেখে সবাই একই কথা জিজ্ঞেস করে। আর আইরাতও সবাইকে ওই এক কথা বলেই কোন রকমে বুঝ দেয়। সবাই এক এক করে আইরাতকে হলুদ লাগিয়ে দেয়। আইরাতের এই হলুদে ভরা মুখ টা যে কি পরিমান কিউট লাগছে তা বলার বাইরে। তবে আব্রাহামের বেলায় যা হয়েছে আইরাতের বেলাতেও সেইম তাই হয়। দিয়া অবনি আইরাত আর আরুশি সবাই হলুদ দিয়ে একদম যা ইচ্ছে অবস্থা। আইরাতের দুই হাতে গালে পায়ে হলুদ লাগানো। ইলাও আইরাতকে হলুদ লাগায়। ফটোগ্রাফার এসে তাদের একসাথে অনেক গুলো ছবি তুলে। এভাবেই হাসি-খুশিতে আইরাত-আব্রাহামের মেহেন্দি আর গায়েহলুদ শেষ হয়ে যায়।


সূর্য তার মিষ্টি রোদের আভা চারিদিকে ছড়িয়ে গগনে ভেসে উঠেছে। দিয়া অবনি আর আরুশি গিয়ে আইরাতকে ঘুম থেকে টেনে তুলে। তবে আজ যেনো আইরাতের এক নতুন রুপ দেখা যাবে।

দিয়া;; কিরে উঠ উঠ তোর বিয়ে আর তুই পরে পরে ঘুমাস। আরে উঠ আইরু।

আইরাত;; এই যা তো যা যা। ঘুমাতে দে এখন ভালো লাগছে না আমার। সবাই কে গিয়ে বল বিয়ের দিন আরো একটু পেছাতে। আমার এখন বিয়ে করার মুড নেই। ঘুমাবো আমি।

আরুশি;; আয় হায় মাইয়া কয় কি 😵

অবনি;; মারবো না একটা চটকানা। উঠ উঠ আইরুউউউ বেবি উঠ।

আইরাত;; এএএ ধুরু যা।

আইরাতকে ঘুম থেকে তুলে তাকে জোর করেই ফ্রেশ হতে পাঠালো। কিন্তু সে এই যে ওয়াসরুমে গিয়েছে আর বের হয় না। এবার দিয়া গিয়ে আইরাতের ওয়াসরুমের দরজাতে লাথি দিতে শুরু করে। অবশেষে ওয়াসরুমের ভেতরে গিয়ে যেখে যে আইরাত ব্রাশ করছে আর ঘুমাচ্ছে।

দিয়া;; আল্লাহ তুমি কই আছো 🤦‍♀️🤦‍♀️🤦‍♀️

আইরাত;; 😴

দিয়া;; এই আইরু

আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ।

দিয়া;; তোর ঘুমের গুষ্টি কিলাই হারামী। উঠ বইন ডা ভালা উঠ।

আইরাত;; এহহহহ যার বিয়া তার খবর নাই পাড়া পরশির ঘুম নাই।

দিয়া আইরাতের ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে পরে আর আইরাত ফ্রেশ হয়ে এসে পরে। এবার যেনো আইরাতের ঘুম ভেঙেছে। আইরাত এলে আরুশি তাকে খাইয়ে দেয়।

তারপর আইরাত কে রেডি করাতে থাকে। আজ যেনো আরো কাজ বেশি।


আব্রাহাম ঘুম থেকে ওঠেছে। সে ভাবতেই পারছে না যে আইরাত তার হচ্ছে। একদম পুরো পুরি ভাবে তার হচ্ছে। আব্রাহাম ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে আইরাতের ছবির সামনে বসে ছিলো। তখনই রুমে তিন বাদর আসে।

অয়ন;; দোস্ত একটা কথা আছে।

আব্রাহাম;; হুম কি হয়েছে?

কৌশল;; গেস কর গেস কর কি?

আব্রাহাম;; তোরা যেহেতু তো ভালো কোন কাজ তো হবেই না। এখন দ্রুত বলে ফেল।

অয়ন;; ভাং।

আব্রাহাম;; হুয়াট?

রহিত;; আরে হ্যাঁ তাও আবার খাটি ইন্ডিয়ান ভাং।

আব্রাহাম;; এগুলো কেনো এনেছিস তোরা। জানিস তো এগুলো খেলে নেশা হয়। তাহলে কেনো। আর সবাই থাকবে তো।

কৌশল;; আরে এগুলো শুধু আমাদের জন্য।

আব্রাহাম;; খা তোরাই।

রহিত;; ওহহ হ্যাঁ তুমি তো আবার ব্যান্ড মেইনটেইন করো প্রচুর পরিমাণে।

আব্রাহাম;; আরে তা না। কিন্তু আমি খাবো না। তোরাই খাস।

সব শেষে আব্রাহাম রেডি হতে চলে যায়। হুয়াইট আর গ্রে কালারের কম্বিনেশনে আব্রাহাম একটা পাঞ্জাবি পরেছে। চুলগুলো ঝড়ঝড়ে একদম সিল্কি। হাতে গোল্ডেন কালারের ওয়াচ। ফর্সা মুখে একদম কালো চাপদাড়ি গুলো ঝলমল করছে। রেডি হয়ে আব্রাহাম তার হাতার কিছু বাটন লাগাতে লাগাতে বাইরে আসে। বাইরে আসতেই অয়ন বলে ওঠে….

অয়ন;; মেয়েরা কি আর এমনি এমনিই লাট্টু তোর ওপর!

কৌশল;; ভাই হ্যাব্বি হ্যান্ডসাম লাগছে তোকে।

আব্রাহাম;; থ্যাংকস।

সবকিছু রেডি এবার শুধু আব্রাহামের আইরাতের কাছে যাবার পালা।


আইরাত আর একটা পুতুলের মাঝে আজ কোন পার্থক্য নেই। বুঝা মুশকিল যে কোনটা আইরাত আর কোনটা পুতুল। লাল টুকটুকে বউ। বেশ বড়ো সড়ো আর ভারি কাজ করা সুন্দর একটা লেহেঙ্গা পরেছে। কানে বড়ো ঝুমকো হাত ভর্তি চুড়ি। গলায় ন্যাক্লেস। বেশ সাজ সেজেসে আইরাত। আরে বিয়ে বলে কথা সাজতে তো হবেই। আইরাত আয়নার সামনে বসে ছিলো তখন দিয়া এসে আইরাতের কাধে হাত রাখে। আইরাতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে…

দিয়া;; কি যে মিষ্টি লাগছে আমার বোনু টাকে। হায় কারো নজর না লাগে।

আইরাত;; লাপ্পিউ।

দিয়া, অবনি আর আরুশিও কিন্তু কম সাজে নি। তখনই হঠাৎ বাইরে বেশ চিল্লা-পাল্লার আওয়াজ শোনা যায়। অর্থাৎ আব্রাহাম এসে পরেছে। আজ কেনো জানি যতোই সময় এগোচ্ছে আইরাতের বুকের ধুকপুকানি ঠিক ততোই বেড়ে যাচ্ছে। দিয়া অবনি আর আরুশি ছুটে চলে যায় বাইরে। আরে জামাই আসবে গেট ধরতে হবে তো। টাকা নিতে তো হবে। মেয়েরা গিয়ে আচ্ছা মতো ধরে ফেললো ছেলেদের। টাকা না দিলে ভেতরে আসা যাবে না। আর আইরাত ওপর থেকে সবার এমন কান্ড দেখছে আর হাসছে। মেয়েদের এমন কান্ড দেখে আব্রাহাম বলে….

আব্রাহাম;; এখানে আসার সময় আমার বড়ো একটা কাগজে লিখে নিয়ে আসা উচিত ছিলো যে “” আমার বউ আমি নিবো গেটে টাকা কেনো দিবো “”।

আব্রাহামের এই কথায় সবাই চিল্লিয়ে উঠে আর হেসে দেয়। অবশেষে আব্রাহাম পঁচিশ হাজার টাকা দিয়ে তারপর ভেতরে ঢুকে। দিয়া অবনি আর আরুশি ভেতরে এসে পরলে আইরাত তাদের খামছিয়ে ধরে।

আইরাত;; এই ফকিন্নি গুলা টাকা দে টাকা দে। আমার জামাইয়ের টাকা। আমাকে 50% দে। নইলে উশঠা খাবি। দে দে আমার ভাগের টাকা দে। দে কইছি।

কি আর করার আইরাত সত্যি সত্যি অর্ধেক টাকা নিয়ে নেয়। একসময় কাজি আসে। আইরাতকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। আইরাত যখন সিড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো তখন আইরাতের মাথার ওপর দিয়ে একটা লাল কালারের পাতলা ওরনা ধরা হয়। ওরনার একপাশে দিয়া, একপাশে অবনি, আরেক পাশে আরুশি, আরেক পাশে আরো একটা মেয়ে ধরে। এভাবেই আইরাত কে নিচে নিয়ে আসা হয়। আইরাত যখন নিচে নামছিলো আব্রাহামের কেনো জানি তখন মন চাইছিলো যে ছুটে গিয়ে আইরাতকে জড়িয়ে ধরতে। এক সেকেন্ডের জন্যও আইরাতের ওপর থেকে তার চোখ সরেনি। আইরাত এসে আব্রাহামের পাশে বসে পরে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে কিছুটা ঝুকে ফিসফিস করে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; হায় কোয়ি তো রোক লো। তুমি আমাকে একের পর এক ঘায়েল করে মেরেই ফেলছো (বুকের বা পাশে হাত দিয়ে)

আইরাত;; আহাম,, আহাম৷

কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়। আইন & ইসলামের বিধি-বিধান মেনে তিন বার কবুল বলে আইরাত-আব্রাহাম চিরতরে একে ওপরের হয়ে যায়। এখন তারা স্বামী-স্ত্রী।


ওদিকে রায়হান একের পর এক মদের পেগ খেয়েই যাচ্ছে। তখনই একজন গার্ড আসে তার কাছে।

গার্ড;; বস

রায়হান;; কেনো এসেছিস?

গার্ড;; বস, আইরাত ম্যামের বিয়ে তো হয়ে গেছে।

এই কথা শুনেই রায়হান এক চুমুক মদ খেয়ে রাগে উঠে পরে বসা থেকে। তারপর স্টীলের একটা চেয়ার হাতে নিয়ে রাগে তুলে আছাড় মারে। রাগে যেনো সে ফুসছে।।

রায়হান;; বিয়ে তো হয়েই গেলো আটকাতে পারলাম না আমি। কিন্তু,, কিন্তু আব্রাহাম আর আইরাতকে কখনোই এক হতে দিবো না আমি কখনোই না। আজ হোক কাল হোক ওই দুইজন কে আলাদা করেই ছাড়বো আমি। দুইজন কে আলাদা করে দিবো আমি। (রেগে লাল হয়ে)


বিদায় পালা আইরাতের। কলির মন কিছুটা খারাপ। ইকবাল সাহেব কাদো কাদো ভাব। রনিত ঠোঁট উল্টিয়ে বসে আছে। কিন্তু আইরাত তো আইরাতই। আইরাতকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবনি আইরাতের কানে হাল্কা ভাবে বলে ওঠে….

অবনি;; কিরে তোর বিদায় হচ্ছে। চলে যাচ্ছিস তুই। একটু তো কান্না কর!!

আইরাত;; এহহহহহহ আমার বয়েই গিয়েছে কান্না করতে। এতো কষ্ট করে সেজেছি কান্না করলে সব নষ্ট হয়ে যাবে না। বিয়ে করেছি আমি, কাদবো কেনো ধুর। আমার সাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তুই কান্না কর চোখে গ্লিসারিন দিয়ে। আমার এতো কান্না আসে না ঘোড়ার ডিম।

আইরাতের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। সবাইকে বলে কয়ে আইরাত চলে আসে। গাড়িতে আব্রাহাম আর আইরাত একসাথে বসে আছে। এক সময় এসে পরে আইরাত আব্রাহামের বাড়ি। ভেতরে আসার সময় আব্রাহাম আইরাতকে কোলে করে নিয়ে তারপর ভেতরে আনে। ইলা গিয়ে আইরাতকে আব্রাহামের রুমে বসিয়ে দিয়ে আসে। রুম টা সিম্পলের মাঝে ভারি সুন্দর কাগছে। সাদা-গোল্ডেন কালারের বিভিন্ন সাইজের বাতি দিয়ে সাজানো। আব্রাহামের রুমের চারিপাশে শুধু আইরাতের ছবি। আবার কিছু কিছু আব্রাহামের সাথেও।

আব্রাহাম কে আগেই তার রুমে যেতে দেয় না অয়ন কৌশল আর রহিত। বেশ সময় আড্ডা দেয়। তারপর ঠিক ১২ঃ৩০ এর দিকে আব্রাহাম তাদের থেকে নিজের পিছ ছাড়িয়ে ভেতরে আসে। ভেতরে এসে আব্রাহাম অবাক। কেননা আইরাত রুমে নেয়। এই সময় আইরাতকে বেডে এক হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে থাকার কথা কিন্তু আইরাত নেই। আব্রাহাম আশে পাশে আইরাতকে খুজতে খুজতে এগিয়ে যায়। কিন্তু ঠিক তখনই নিজের রুমের করিডর থেকে আব্রাহাম কিছু শব্দ শুনে…

“” Ek hat main sharab duja piyo mere sath piti ja piti jayungi main sari sari rat~~

“”Ek hat main sharab duja piyo mere sath piti ja piti jayungi main sari sari rat~~

এমন আজাইরা মার্কা গান শুনে আব্রাহাম এগিয়ে যায়। আর যা দেখে তাতে আব্রাহামের চোখ কপালে। কেননা আইরাত করিডরের রেলিং এর ওপরে বসে আছে। আর হাতে একটা এলকোহলের বোতল। তার মানে আইরাত ড্রিং করেছে। ওয়াহহহ যা করে আসার কথা আজ জামাইয়ের ছিলো তা উল্টো বউ করে বসে আছে। আইরাত তার মাথার ঘোমটা খুলে লেহেঙ্গা কিছুটা ওপরে তুলে এক হাত কোমড়ে রেখে এগুলো বলছে।

আইরাত;; এই এই আমি গেলাম, আমি গেলাম আব্রাহাম বেবি আমি গেলাম।

এই বলেই আইরাত পরে যেতে ধরে। আব্রাহাম ভয় পেয়ে ধরতে গেলে আইরাত নিজেই দেওয়াল ধরে থেমে যায়। আবার হিহিহি করে হেসে দেয়। আব্রাহাম খুব বুঝিয়ে আইরাতকে নিচে নামিয়ে আনে। আইরাত নেমেই আব্রাহামের কাধ দুই হাতে জড়িয়ে ধরে। মানে আব্রাহামের গলায় ঝুলছে।

আব্রাহাম;; এই রাতে মেয়েরা বিছানাতে বসে নিজের সামনে ইয়া বড়ো একটা ঘোমটা টেনে বসে থাকে লজ্জা পেয়ে। কিন্তু তুমি তো উলটো। বাহ রে মানে কি বউ আমার।

আইরাত;; সবার থেকে আলাদা বুঝলা সোনা। এইসব এতো নেকামো আমার দ্বারা পসিবল না। এই শুনো না।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ বলো।

আইরাত;; তুমি এতো চার্মিং কেনো, এতো হ্যান্ডসাম কেনো তুমি? আর তোমার হাতের মাসালস গুলো এতো ফুলা ফুলা কেনো? (আব্রাহামের মাসালসে গুতো দিয়ে)

আব্রাহাম;; জিম করি যে তাই।

আইরাত;; তোমার এই সুন্দর চুল, এই সুন্দর চোখ। দেখো চোখের পাপড়ি গুলো আমার থেকেও বড়ো। হায় তোমার এই সিক্স পেগ বডি, এই চাপদাড়ি। ওলেএএএএএএএএ আমার জামাই টারে। পুরাই কুচুপুচু।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল তুমি ড্রাংক এখানে বসো।

আইরাত;; ওরে আমার বেবিবয় টারে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা তুমি এই এলকোহল কোথায় পেলে আগে এটা বলো তো!?

আইরাত;; আগে বলো তুমি কি রোজ ড্রিং করেন?

আব্রাহাম;; তুমি আমায় তুমি করে বলছো?

আইরাত;; আরে আগে বলো না!

আব্রাহাম;; একদম না। আমি মাঝে মাঝে জাস্ট টেস্ট টা মনে রাখার জন্য খাই ব্যাস।

আইরাত;; তাহলে তোমার কাছে এলকোহলের এতো গুলো কালেকশন রাখা কেনো?

আব্রাহাম;; হেই ওয়েট মানে কি?

আইরাত;; মানে এই যে আমি তোমার কালেকশন গুলো থেকে এটা নিয়েছি। হিহিহিহিহিহিহিহি 😁🥴।

আব্রাহাম;; ওহহ গড।

আইরাত আবার চুমুক দিতে যাবে তখন আব্রাহাম তার হাত ধরে সাথে সাথে থামিয়ে দেয়। আইরাত আব্রাহামের গালে কষে একটা চুম্মাহহহহহহহহ দিয়ে দেয়। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে।

আইরাত;; আব্রাহাম আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি। অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।

হঠাৎ আইরাত কেম শান্ত হয়ে গেলো। আব্রাহাম তা বুঝতে পেরে আইরাতকে তুলে দেখে আইরাত সেন্সল্যাস হয়ে গেছে। আব্রাহাম কিছুটা হাফ ছাড়ে। আবার হেসে দেয় আইরাতের এইসব কান্ড দেখে। আব্রাহাম আইরাত কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানাতে শুইয়ে দেয়। তারপর সে আইরাতের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। আব্রাহাম নিজের এক হাতে আইরাতের হাত নিয়ে রেখেছে, আরেক হাত দিয়ে তার মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছে। আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে সে এক নয়নে। মাঝে মাঝে নিজের ঘুমন্ত আইরাতের কপালে চুমু দিচ্ছে। এইতো এভাবেই কেটে যায় আইরাত-আব্রাহামের সেই রাত 🤎🦋।



চলবে~~