#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২৭
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
কণা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবছে। একটা লোক তার জীবন এসে, অদ্ভুত ভাবে তার জীবনটা পাল্টে দিল। রঙহীন জীবনটা ভালোবাসা দিয়ে রঙিন করে দিল। কণা অনেক খুশি কারণ তার অদেখা ভালোবাসাকে কিছুদিন পরে দেখতে পাবে।
আচ্ছা উনার সাথে সরাসরি প্রথম দেখার অনুভূতি কেমন হবে? উনাকে দেখে আমি কী ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকব। নাকি লজ্জায় চোখ নামিয়ে রাখব। আমি তো উনার সাথে দেখা করার মুহূর্তটা কল্পনা করেই লজ্জায় মরে যাচ্ছি। উনার সাথে দেখা করতে গেলে তো আমি লজ্জায় মাটিতে মিশে যাব। উফ আমার এত লজ্জা কেনো লাগে?
কণার এসব কল্পনা জল্পনার মাঝেই কণার হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটা বেঁজে ওঠল। ফোনের স্কিনে বন্যা নামটা জ্বল জ্বল করছে। বন্যা নামটা দেখেই সে খুশি হয়ে যায়। কণা ঠিক করেছে সে তার প্রেমিক পুরুষের কথা তার ফ্রেন্ডদের বলে দিবে। ফোনটা রিসিভ করে।
কণা আমি সুইসাইড করব।
তো কর না করছে কেডা? কেমনে সুইসাইড করবি? বিষ খাবি, ট্রেনের নিচে ঝাপ দিবি, ছাদ থেকে ঝাপ দিবি, ব্রিজের ওপর থেকে ঝাপ দিবি নাকি ফ্যানের সাথে ঝুলে যাবি? কোনটা করবি তাড়াতাড়ি বল? উফ আমি কত ভালা মানুষ। ফ্রীতে তোকে কতগুলো সুইসাইড করার আইডিয়া দিয়ে দিলাম। যদি বিষ খেয়ে সুইসাইড করার ইচ্ছে থাকে তাহলে তোর জন্য একটা ভালো অফার আছে। আমি দোকান থেকে বিষের বোতল কিনে তোর বাসায় পার্সেল করে পাঠিয়ে দিব।
কণা আমি ফাইজলামু করছি না। আমি সিরিয়াস।
ওলে বাবা আমাদের বন্যা রাণীও কোনো বিষয়ে সিরিয়াস হতে পারে সেটা তো আমার জানা ছিল না। যে নিজের লাইফটাকে মজা মনে করে সে আবার কোনো কিছু নিয়ে সিরিয়াস। হাউ ফানি।
বন্যার কান্নার শব্দে শুনে থমকে যায় কণা। কণা বুঝতে পারছে না বন্যা কেনো কান্না করছে? বন্যার কান্নার শব্দে কণার বুকের ভিতরে হু হু করে ওঠে। কণা জীবনে একবারি বন্যাকে কাঁদতে দেখেছিল। যেদিন ওর দাদু মারা গিয়েছিলেন। এই দিনের আগে বা পরে কখন কাঁদেনি। সিরিয়াস কিছু নাহলে বন্যা কখনো মন খারাপও করে না। আর সেই মেয়ে আজকে চিৎকার করে কাঁদছে। মনের ভিতরে অজানা আতংক বাসা বাধে কণার মনে। কণা
ভয়ার্ত গলায় বলে,
বন্যা তুই এভাবে কাঁদছিস কেনো? আমার কোনো কথায় তোর খারাপ লেগেছে? তোদের বাসার সবাই ঠিক আছে তো? বন্যা নোমান ভাইয়ার কিছু হয়নি তো। সব ঠিক আছে তো বন্যা। আমার প্রচুর টেনশন হচ্ছে।
কিচ্ছু ঠিক নেই। সব এলোমেলো হয়ে গেছে। কণা আমি নোমানকে ছাড়া বাঁচবো না।
তোকে নোমান ভাইকে ছেড়ে বাঁচতে কে বলেছে? নোমান ভাইকে বিয়ে করে ১০০ বছর সংসার করবি আর আমাকে প্রত্যেক বছর খালামনি হওয়ার সুযোগ করে দিবি।
কণা আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
তোর বিয়ে ঠিক করেছে মানে কী? মাত্র তুই অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়িস এখনি বিয়ে। আংকেল না বলেছিল তোর পড়াশোনা না শেষ হলে তোর বিয়ে দিবে না। তাহলে এখন কী হলো?
বন্যা কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না। কণা বিরক্তি কন্ঠে বলে,
ফ্যাচ ফ্যাচ করে না কেঁদে বলবি কী হয়ছে?
গতকালকে যখন ভার্সিটি শেষে নোমানের সাথে পার্কে ঘুরতে যায় তখন আব্বু দেখে ফেলেছিল। বাসায় যেতেই আব্বু জিঙ্গেস করে তোমার সাথে ছেলেটা কে ছিল? তুই তো জানিস আমি আবার মিথ্যা বলতে পারি না। হয়ত এটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি ফট করে বলে দেই বয়ফ্রেন্ড। আব্বু কিছু না বলে চলে যায়। রাতে এসে বলে আব্বুর বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছে। আর এই বিয়েটা আমাকে করতেই হবে। আগামীকাল বিকালে ছেলেপক্ষ আমাকে দেখতে আসবে। কথাটা বলেই আব্বু চলে যায়। আব্বু চলে যেতেই আমি নোমানকে ফোন করে সবটা বলি। সবটা শোনার পর নোমান বলে, আমার আর তার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে আব্বুর কাছে। পরেরদিন সকালবেলা নোমান আন্টি এবং আংকেলকে নিয়ে আসে আমাদের বাসায়। নোমান আর আমার বিয়ের কথা বলতেই আব্বু উনাদের অপমান করে বাসা থেকে বের করে দেয়। কারণ হচ্ছে নোমান বেকার। আব্বু কিছুতেই একটা বেকার ছেলের হাতে আমাকে তুলে দেবে নাহ। আব্বু আমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চায় নাহ তাই আজকে বিকালেই কাবিন হয়ে যাবে। আমি নোমানকে ছাড়া অন্য কাউকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারব না। এখন তুই বল সুইসাইড করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় আছে।
এতকিছু ঘটে গেল আর তুই আমাকে এখন বলছিস। নোমান ভাইয়া জানে কাবিনের ব্যাপারটা?
নাহ। আমি নোমানের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। এখান থেকে যাওয়ার পর থেকেই নোমানের ফোন বন্ধ। তোর সাথে কী করে যোগাযোগ করব আব্বু আমার ফোন নিয়ে নিয়েছে। ভাবির ফোন দিয়ে লুকিয়ে তোকে কল করেছি।
তোর ভাইয়া কিছু বলছে না?
ভাইয়া আব্বুর সাথেই।
তুই টেনশন করিস না। আমরা এখনি তোর বাসায় আসছি। সুইসাইড করার ভূত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলে আর কোনো দিন যদি সুইসাইড করার কথা বলিস থাপড়ায়া তোর গাল লাল করে দিব। সব ঠিক হয়ে যাবে ওল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবি না। বাই ।
আমি ফোনটা কেটে দিয়ে অহির রুমের যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। দরজার কাছে আসতেই মনে পড়ল অহি তো বাসায় নাই। সাফাত ভাইয়ার সাথে ঘুরতে গেছে।
৬৩
সাফাত আর অহি বসে আছে একটা পার্কের লেকের সামনে। অহি সাফাতের কাধে মাথা রেখে লেকের স্বচ্ছ পানির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে মানুষের মন যদি স্বচ্ছ পানির মত হত তাহলে এই পৃথিবীর কেউ কারো জন্য কষ্ট পেত না। দুজনেই চুপচাপ, কেউ কোনো কথা বলছে না। শুধু মুহূর্তটাকে অনুভব করছে। তাদের এই নিরাবতা ভেঙে গেল ফোনের শব্দে। অহির ফোন বাজছে। সাফাত জিঙ্গেস করছে,
কে ফোন করেছে?
কণা।
হ্যালো
অহি তুই কই?
আমি তো সাফাতের সাথে একটা পার্কে আসছি।
তুই সাফাত ভাইয়াকে নিয়ে বন্যাদের বাসায় যা।
কেনো?
( কণা অহিকে সবটা খোলে বলে।) তুই আর সাফাত ভাইয়া তাড়াতাড়ি বন্যাদের বাসায় যা। নাহলে বন্যা উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলবে। আমি ও বাসা থেকে বের হয়ে গেছি।
তুই চিন্তা করিস না। আমরা এখনি বন্যাদের বাসায় যাচ্ছি।
অহি ফোন কেটে দিয়ে সাফাতকে উদ্দেশ্য করে বলে,
আমাদের এখনি বন্যাদের বাসায় যেতে হবে। আর তুমি নোমান ভাইয়ার সাথে একটু যোগাযোগ করার চেষ্টা কর।
নোমানের ফোন তো বন্ধ আর আমরা বন্যাদের বাসায় কেনো যাবো?
আংকেল বন্যাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছে। ( অহি সাফাতকে সবটা খোলে বলে। )
মামা বাড়ি আবদার নাকি যে একটা এডাল্ট মেয়েকে তার মতের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে। দরকার পড়লে আমরা পুলিশের আশ্রয় নিব। আমি আভিয়ানকে বলছি নোমানদের বাসায় যেতে।
এখন চল।
হুম চল।
৬৪
সাফাত আর অহি দাঁড়িয়ে আছে বন্যাদের বাড়ির দরজার সামনে। সাফাত কলিংবেল বাজাতেই রোমেনা বেগম ( বন্যার মা) দরজা খুলে দেয়। অহি সাফাতের পিছনে তাই তিনি অহিকে দেখতে পাননি।
কাকে চাই?
জামান সাহেবের (বন্যার বাবা) সাথে দেখা করতে আসছি।
কিন্তু তুমি কে?
তখনি অহি সাফাতের পিছন থেকে বেরিয়ে আসে।
রোমেনা বেগম খুশি হয়ে বলেন, আরে অহি তুই? তোর সাথে এই ছেলেটা কে?
আমার হবু বর। কিছুদিন পর ওর সাথে আমার বিয়ে। আংকেল কী বাসায় আছেন?
হ্যাঁ আছে। তোমরা ভেতরে এসে বস।
সাফাত আর অহি ড্রয়িংরুমের সোফায় গিয়ে বসে। রোমেনা বেগম চলে যায় জামান সাহেবকে ডাকতে। একটু পর জামান সাহেব আর অনিক ( বন্যার ভাই ) রুম থেকে বের হয়ে আসেন। উনারা দুজন এসে অহিদের সামনের সোফায় বসে পড়ে। জামান সাহেবকে দেখে সাফাত সালাম দেন। কিন্তু উনি উত্তরে কিছু বলেন নাহ। জামান সাহেব অহি আর সাফাতের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। জামান সাহেব গম্ভীর গলায় বলে,
দেখ আমি জানি তোমরা এখানে কেনো এসেছ। যার জন্য এসেছ সেটা কখন সম্ভব নয়।
কেন সম্ভব নয়?
কারণ নোমান বেকার।
নোমান তো আর সারাজীবন বেকার থাকবে না। আপনার মেয়ে যে নোমানকে ভালোবাসে সেটা আপনি দেখবেন নাহ।
এটা ভালোবাসা না যাস্ট আবেগ। সময়ের সাথে সাথে কেটে যাবে। বন্যা বাচ্চা মেয়ে তাই কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা আবেগ তার পার্থক্য করতে পারছে না। আমি তো আর বাচ্চা না। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। আমি…..
অনিক তার বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, বাবা এত কথা বলার তো কোনো দরকার নেই। লিসেন, আমি আমার বোনকে কোনো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিব না।
বাহ বাহ খুব ভালো বললেন অনিক ভাইয়া। আপনি আপনার বোনকে কোনো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবেন নাহ। আর আপনি যখন বেকার হয়ে অন্য একজনের বোনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তখন লজ্জা করেনি।
চলবে……