#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৩
পরেরদিন সকালে কারো দরজাতে নক করার শব্দে সিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। ঢুলুঢুলু পায়ে, চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আর দরজা খুলতেই স্পষ্ট চোখে চেয়ে সামনে তাকায়। সায়ন!! সে তার হাতে একটা ট্রে তে এক কাপ গরম কফি, আর জ্যাম-ব্রেড এগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়া;; জ্বি!
সায়ন;; জ্বি আসলে এগুলো আংকেল পাঠিয়ে দিলো আপনার জন্য।
সিয়া;; বিল্লাল চাচ্চু!
সায়ন;; হ্যাঁ।
সিয়া;; তো অন্য কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেই হতো। আপনি কষ্ট করে আবার…..
সায়ন;; না না ঠিক আছে। এখন ধরুন এটা।
সিয়া এগিয়ে গিয়ে সায়নের হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে নেয়। তারপর সায়ন চলে যায়। সিয়া ভেতরে এসে পা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আর সিয়ার একটা অভ্যাস আছে খালি পেটেই চা বা কফি খাওয়া। তাই সে কফি টা খেয়ে নিলো। তবে কফি মুখে তুলতেই সেটা আবার এক নিমিষেই ফিক করে বের হয়ে পরে। টিস্যু দিয়ে কোন রকমে মুখ চেপে ধরে। মাত্রাতিরিক্ত তেতো। হয়তো কফি পাউডার বেশি পরে গেছে তাই।
সিয়া;; মানুষ টাকে তো এতো তেতো লাগে না, ভালোই আছে ব্যাবহার। তবে কফি এতো তেতো কেনো?
সিয়া হাত থেকে কাপ টা টেবিলের ওপর রেখে দিয়েই ওয়াসরুমে চলে যায়। বেশ সময় পর টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে রুমে এসেই দেখে অর্নীলের ফোন।
সিয়া;; হ্যালো।
অর্নীল;; গুড মর্নিং সিয়াজান।
সিয়া;; হুম মর্নিং। কেমন আছেন?
অর্নীল;; ভালো আর থাকলাম কই তোমাকে ছাড়া!
সিয়া;; হয়েছে। কি করেন?
অর্নীল;; অফিসে আছি।
সিয়া;; ওহ, তাহলে কাজ করুন আমি রাখি।
অর্নীল;; আমি রাখতে বলছি, এতো বেশি বুঝো কেন!
সিয়া;; না মানে আপনি তো কাজ করছেন।
অর্নীল;; আর কাজ। নানু আর আন্টি এসেছে?
সিয়া;; না এখনো আসে নি।
আদিবা;; সিয়া, সিয়া।
সিয়া;; অর্নীল আপু এসেছে আমি পরে কথা বলি আপনার সাথে ওকে!
অর্নীল;; আচ্ছা, বায়।
দিয়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
আদিবা;; উঠেছিস!
সিয়া;; হ্যাঁ
আদিবা;; নিচে চল ব্রেকফাস্ট করতে।
সিয়া;; আরে না ওইতো সায়ন ব্রেড-জ্যাম আর কফি দিয়ে গিয়েছিল। সেগুলোই খেয়েছি, ব্রেকফাস্টে এতো ভারি খাবার খাই না।
আদিবা;; আচ্ছা চল।
সিয়া আদিবার সাথে নিচে চলে যায়। জাবেদ হঠাৎ আদিবা কে ডাক দেয় তাই চলে আয়। আর সিয়া বাইরে উঁকি দিয়ে দেখে সবাই একসাথে বসে আছে। তাই সিয়া ভাবলো কেননা সবার জন্য চা বানানো যাক। সিয়া রান্নাঘরে চলে গেলো। গিয়েই চা বানাতে লাগলো। সিয়া চা বানাচ্ছিলো তখনই হাতে একটা আপেল ঘুড়াতে ঘুড়াতে সায়ন আসে রান্নাঘরে। চাকু নিয়ে আপেল কাটতে কাটতে বলে ওঠে…..
সায়ন;; ভাবি, কি করছো?
সিয়ার এবার যেনো টনক নড়ে। সে চোখ তুলে ওপরে তাকায়।
সায়ন;; ও ভাবি কথা বলো না কেনো। আচ্ছা শুনো আমার চায়ে চিনি একদম কম দিবে। মানে এক চামচেরও হাফ বুঝলে।
সিয়া;; হু
সায়ন;; কি হু হু করো। কি হয়েছে?
সিয়া এবার তার হাতে চায়ের ট্রে টা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। সায়ন দেখে ভাবি না ভাবির বোন সিয়া।
সায়ন;; আব…স সরি আসলে আমি….
সিয়া;; ভাবি না আমি।
সায়ন;; আপনাকে পেছন থেকে অবিকল ভাবির মতোই দেখতে লাগে। আর আমি তেমন একটা খেয়াল করি নি। আসলে ভাবি রোজ চা বানায় তো তাই ভাবলাম।
সিয়া এগিয়ে গিয়ে সায়নের হাতে একটা চায়ের কাপ ধরিয়ে দেয়।
সিয়া;; আপনার হাফ চিনি ওয়ালা চা।
সায়ন;; ধন্যবাদ।
সিয়া চোখ নামিয়ে ট্রে টা নিয়ে গটগট করে রান্নাঘর থেকে এসে পরে বাগানের পাশে চলে যায়।
সিয়া;; এই যে তোমাদের সবার গরম-গরম চা, নাও নাও।
বিল্লাল;; কিরে তুই রান্না ঘরে গিয়েছিস কেনো?
সিয়া;; কেনো আদিবা আপু তো রোজ যায়। আজ না হয় আমিই গেলাম।
বিল্লাল;; আচ্ছা বুঝলাম।
সিয়া;; হুম।
বিল্লাল;; আচ্ছা শোন, আজ বিকেলের দিকে কিন্তু
ভাবি আর খালামনি আসছে।
সিয়া;; কথা হয়েছে তোমার?
বিল্লাল;; হ্যাঁ।
এভাবেই সময় টুকু পার হয়ে যায়। এক সময় সিয়া, আদিবা, জাবেদ আর রুমানা মিলে বাইরে বের হয়ে পরে৷ জাবেদ যদিও যেতে চায় নি কিন্তু আদিবা টেনে ধরে নিয়ে গেছে। তারা একের পর এক শপিং মলে ঘুড়েই যাচ্ছে ঘুড়েই যাচ্ছে আর যা পছন্দ হচ্ছে তা একটা একটা করে তুলে নিচ্ছে। আর সব ব্যাগ গুলো জাবেদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। জাবেদের তো নাজেহাল অবস্থা। এভাবে ঘুড়তে ঘুড়তেই হঠাৎ সিয়ার চোখ আটকে পরে মলের ভেতরে থাকা একটা পিংকিস কালারের বড়ো মাপের টেডি বিয়ারের ওপরে। সিয়া তা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে সেখানে চলে যায়। কি সুন্দর দেখতে! সিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিবার ডাক পরে। আদিবা এসে দেখে সিয়া একটা মলের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। তাই আদিবা গিয়ে দ্রুত সিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে পরে৷ সেখান থেকে চলে যাওয়ার আগে সিয়া আরেকবার তার মাথা ঘুড়িয়ে টেডি বিয়ার টার দিকে তাকিয়ে যায়। বাইরে এসে পরে। অনেক গুলো কেনাকাটা করেছে। তবে বাইরে এসেই সিয়া দেখে সায়ন দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়া;; আদি…
আদিবা;; হ্যাঁ।
সিয়া;; ও এখানে কেনো?
আদিবা;; এসেছে, আমাদের সাথে না তবে কিছুক্ষণ আগেই এসেছে।
সিয়া;; ওহহ আচ্ছা।
আদিবা;; চল গাড়িতে ওঠ৷
তারা সবাই গাড়িতে ওঠে চলে যায়। বাড়ি গিয়েই দেখে সিয়ার মা আর নানু এসে পরেছে।
সিয়া;; মা এসেছো? আর নানু তোমার শরীর কেমন এখন?
শিউলি;; হ্যাঁ আছি ভালোই।
দোলা;; কোথাও গিয়েছিলি তোরা?
আদিবা;; হ্যাঁ জেঠিমা আসলে বাইরে গিয়েছিলাম একটু।
জাবেদ;; আর আমার অবস্থা খারাপ।
সবাই হেসে দেয়। তারপর যার যার রুমে চলে যায়৷
রাতের বেলা সিয়া তার রুমে বসে বসে ফোন ঘাটছিলো তখনই হাতে ছোট একটা বাটি নিয়ে আদিবা আসে৷
আদিবা;; এই ওঠ।
সিয়া;; হুম হুম, কি হয়েছে?
আদিবা;; আগে ওঠ তুই?
সিয়া;; উঠলাম, এখন কি!
আদিবা;; এদিকে আয়।
সিয়া;; আসলাম।
আদিবা;; মাথায় তেল দিয়ে দেই। ঘুম ভালো হবে৷
সিয়া;; এই না না না না। একদম না। বইন তুই না ভালা। প্লিজ তেল দিয়ে দিস না৷ একদম ফকিন্নির মতো লাগে রে৷
আদিবা;; কেনো সমস্যা কি? বাসায় ই তো আছিস। আর এই রাতের বেলা তোকে দেখতে কে আসছে! চল উঠ তেল দিয়ে দেই৷
সিয়া;; তুই এভাবে আদা লবণ খাইয়া আমার পেছনে পরছোস কেন? আমি তেল দিমু না। ভালো লাগে না। চিপ-চিপ করে ইয়াক।
আদিবা;; চুপ কর।
আদিবা সিয়া কে টেনে নিয়ে মাথায় তেল দিয়ে দিলো। তবে তেল দেওয়া শেষ হতে না হতেই সিয়ার ফোনে কল আসে। সিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখে অর্নীলের ফোন। এটা দেখেই তো চোখ ছানাবাড়া।
সিয়া;; হ্যালো
অর্নীল;; এই বাইরে আসো।
সিয়া;; হ্য?? কিন্তু কেনো আর আপনি কি বাসার বাইরে নাকি!!
অর্নীল;; হ্যাঁ বাইরে।
সিয়া;; খাইছে রে।
অর্নীল;; ২ মিনিটে নিচে নামবা।
সিয়া আয়নার সামনে গিয়ে একবার নিজেকে দেখে আরেক বার বাইরে। মাথায় তেল দিতে চুবু চুবু অবস্থা। তার ওপর মাঝখান দিয়ে সেথি করে দুই পাশে বেনী করা। ইশ পুরাই ফকিন্নি লুক। সিয়া মেকি একটা হাসি দিয়ে আদিবার দিকে তাকায়। আদিবা কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রু নাচায়।
সিয়া;; তেল কম পরছে মাথায় আরো একটু দে।
আদিবা;; হয়েছে কি?
সিয়া;; হয়েছে কি মানে অর্নীল নিচে এসে দাঁড়িয়ে আছে৷ আর আমাকে যেতে বলছে এখন আমি এই ভাবে নিচে কীভাবে যাবো?!
আদিবা;; আরে আজব, তাই মাথায় তেল দিবি না। এই যা তো যা৷ কিছুই হবে না। যা তুই৷
আদিবা এক প্রকার ঠেলেই সিয়া কে নিচে পাঠিয়ে দেয়। আর সিয়াও মুখ টাকে একদম বাংলার পাঁচ বানিয়ে নিচে যায়৷ তবে কিছুটা লুকিয়েই। যেনো কেউ না দেখে। সিয়া বাইরে গিয়েই দেখে অর্নীল মাত্র গাড়ি থেকে নামছে। সিয়া অর্নীলের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অর্নীল সিয়াকে দেখে বুঝলো যে সে এমন কেনো করছে।
সিয়া;; কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন, আমি চলে যাবো।
অর্নীল;; আরে তেল দিয়েছো তাই কি হয়েছে৷ মানুষ কি দেয় না। আর তুমি কি জানো তোমাকে কি পরিমাণ চুম্পু চুম্পু দেখা যাচ্ছে।
সিয়া;; কি কি?
অর্নীল;; চুম্পু চুম্পু। মানে কিউট কিউট।
সিয়া;; হয়েছে জানি ফকিন্নি আল্ট্রা প্রো মেক্স লাগতাছে।
অর্নীল;; আচ্ছা ওয়েট একটা জিনিস আছে তোমার জন্য।
সিয়া;; কি?
অর্নীল;; ওয়েট জান।
এই বলেই অর্নীল গিয়ে তার গাড়ির পেছনের সীট থেকে একটা বড়ো সড়ো বক্স নিয়ে এলো।
অর্নীল;; নাও৷
সিয়া;; কি এটা?
অর্নীল;; আরে ধরো তো। আর হ্যাঁ রুমে গিয়ে খুলো দেখবা।
সিয়া;; আচ্ছা।
অর্নীল;; এবার যাও। এটা দিতেই এসেছিলাম আর দিলাম।
সিয়া;; আচ্ছা।
অর্নীল;; আমি যাই!
সিয়া;; আচ্ছা শুনুন।
অর্নীল;; বলো।
সিয়া;; ভালোবাসি।
অর্নীল সিয়ার গালে টুক করে একটা চুমু একে দেয়। তারপর চলে যায়। আর সিয়া কেউ দেখার আগেই রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দরজা জানালা সব অফ করে আস্তে আস্তে কাচি দিয়ে র্যাপার টা খুলতে লাগে৷ প্রায় সিয়ার সমান বক্স টা। সে জানে না যে এতে কি রয়েছে৷ তাই এক্সাইটেড। আস্তে আস্তে বক্স টা খুলে ভেতরে দেখতেই সিয়া অবাক। আজ শপিং মলে গিয়ে যেই টেডি বিয়ার টা সিয়া দেখেছিলো আর পছন্দ হয়েছিলো কিন্তু কেনার সুযোগ পায় নি জলদি জলদি এসে পরেছে। সেই টেডি বিয়ার টা। সিয়ার সে কি খুশি। সে টেডি টাকে জড়িয়ে ধরে বেশ শক্ত করে৷ তবে আবার সিয়ার মনে পরে যে অর্নীল কি করে জানলো। সিয়া অর্নীল কে ফোন দেয়।
অর্নীল;; হ্যাঁ সিয়াজান।
সিয়া;; আপনি কি করে জানলেন যে এই টেডি টা আমার পছন্দ হয়েছিলো?
অর্নীল;; দেখেছি আজকে আমি তোমাকে। আদিবার সাথে ছিলে তুমি।
সিয়া;; কি? কখন দেখেছেন? আমাকে ডাক দেন নি কেনো?
অর্নীল;; না এমনি।
সিয়া;; থ্যাংক ইউ।
অর্নীল;; তা না হয় মানলান। কিন্তু দেখো আবার আমার থেকে বেশি ভালো তুমি ওই টেডি কে বেসো না।
সিয়া এভাবে আরো বেশ সময় কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
।
।
।
পরেরদিন~~
দোলা;; বিল্লাল তোমার নাস্তা দিবো?
বিল্লাল;; না ভাবি, একজন আসবে তো তাই উনার সাথে দেখা করতে হবে। পরে যাই একটা দরকারি মিটিং আছে৷ আসলে ওইতো আমার কাজের জন্যই আর কি৷
দোলা;; কে আসবে??
বিল্লাল;; আবরার চৌধুরী অর্নীলের বাবা।
দোলা;; ওহ অর্নীল আচ্ছে, ওর বাবা কে?
বিল্লাল;; আরে ওইতো সাগর চৌধুরী।
ব্যাস এইতো দোলার মাথা টা ঘুরে গেলো। সে বেশ অবাক।
দোলা;; কি, কি বলো এইসব। অর্নীলের বাবা সাগর চৌধুরী?
বিল্লাল;; হ্যাঁ। কেনো জানো না!
দোলা সেখান থেকে চলে আসে। মাথা যেনো আর কাজ করছে না। দোলা বাইরে আসতেই দেখে সাগর চৌধুরী গাড়ি থেকে নামছে। এখন সবকিছু বাদ দিয়ে দোলার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুড়ছে তা হচ্ছে অর্নীলের বাবা সাগর চৌধুরী।
।
।
।
।
চলবে~~