#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:17
#Mishmi_muntaha_moon
চাঁদ আজ তার পুরো আলো পরিবেশের ওপর ঢেলে দিয়েছে।কি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। ছাদে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক ভাবার মলমাঝেই হাতে থাকা মোবাইলের স্ক্রিন খুলে আরিশ ভাইয়ার নাম্বার ব্লক খুলে কল লাগালাম কিন্তু ঢুকলো না।তাহলে কি ভাইয়া আমার নাম্বার ব্লক করে দিলো নাকি?উনি কি আমার সাথে কথা বলতে চাইছে না তাইতো আমাকে ব্লক দিলো।তাহলে কি আর উনার সাথে যোগাযোগ হবে না আর আমার।
ভাবতেই বুক মচর দিয়ে উঠলো।চোখ টলমল করতে লাগলো।
নিঃশব্দে কান্না করতে করতেই হিচকি উঠে গেলো।কোনোভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছি না।
কোনোমতে চোখ মুছে নিচে গিয়ে পানি খেয়ে মুখ ধুয়ে নিলাম।তারপর সোফায় আপুর সাথে বসলাম। আপু টিভিতে গান দেখছিলো আমাকে দেখে ভ্রু কুচকে বলল
–কিরে তোর চোখ মুখ এমন ফুলে আছে কেনো আর নাকও লাল হয়ে আছে ব্যাপার কি?
আমি মাথা নিচু করে মুখ লুকানোর চেষ্টা করে মৃদু কন্ঠে বললাম
–এভাবেই হয়তো,জানিনা আমি।
আমার কথায় আপু পাত্তা না দিয়ে আবারো টিভি দেখতে লাগলো।
–
সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই উঠে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাই।হাল্কা হাল্কা আলো ফুটেছে চাড়পাশে।পাখির কলকলানিও শুনা যাচ্ছে।
মুখটা ধুয়ে বারান্দায় গেলাম।একটা ভয়াবহ স্বপ্ন দেখলাম ওইটা দেখার পর থেকেই কেমন অস্থির লাগছে।
স্বপ্নে দেখলাম আরিশ ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। একটা বাচ্চাও আছে।সেই বাচ্চা আর বউ নিয়েই আমাদের বাড়ি এসেছে।
স্বপ্নটা পুরো হতে পারে নি আর ঘুম ভেঙে গেলো।
কিছুক্ষন মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে দৌড়ে রুমে গিয়ে আপুর বালিশে নিচে হাত দিয়ে আপুর মোবাইল নিয়ে আবারো একই ভাবে ছুটে বারান্দায় গেলাম।
আপুর লক আমি অনেক আগে থেকেই জানি তাই খুলতে বেশি বেগ পেতে হয় নি।
আপুর মোবাইলের লক খুলে আরিশ ভাইয়ার নাম্বার খুজতে লাগলাম।নাম্বার পেতেই ঠোটে হাসির রেখা ফুটলো।
নাম্বার ডায়াল করে কানে ধরলাম।রিং হচ্ছে।
কয়েকবার রিং বেজে কেটে যেতেই আবার কল দেই। ২য় বারে আরিশ ভাইয়া কল ধরতেই বুক ধুকধুক করতে লাগে।
–হ্যালো।
আরিশ ভাইয়ার মৃদু কন্ঠ শুনে শুকনো ঢোক গিলে ধীরে বললাম
–হ্যালো আরিশ ভাইয়া।
এতোটুকু বলার পরই কল কেটে দিলো।আমি অবাক হয়ে আরিশ ভাইয়ার নাম্বারে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবারও কল করতেই মেয়েলি কন্ঠ ভেসে উঠলো।
–দুঃখীত কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কল কেটে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।উনি আমার সাথে কথাই বলতে চাচ্ছে না।
ধীর পায়ে রুমে গিয়ে মোবাইলটা আপুর বালিশের পাশে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম।উনি নিজ ইচ্ছায় কথা বলতে না চাইলে আমার কি সাধ্য আছে উনার সাথে কথা বলার।
–
২৮ টা দিন কেটে গেলো।প্রবাদ আছ না “সময় আর স্রোত কারো জন্য থেমে থাকে না” তেমনই আমার জীবনে এই ২৮ টা দিন আরিশ ভাইয়াকে ছাড়া খুবই কষ্টদায়ক হলেও কেটে গেলো।কিন্তু ২৮টা দিনের প্রতিটা মুহূর্তে বিন্দু বিন্দু জমা অভিমান এখন জেনো আকাশ সম হয়ে গেছে।
১ টা মাস চলে যাচ্ছে কিন্তু আরিশ ভাইয়ার সাথে কোনোই যোগাযোগ নেই।আমি অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করার পরও ব্যর্থ হয়েছি তাই এখন চেষ্টা করাই ছেড়ে দিয়েছি।
২দিন পর আপু বিয়ে।কিন্তু বিয়ের সব তৈরি গতকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে।আমাদের সব আত্নীয় রাও এসে উঠেছে আমাদের বাড়িতে।মেহমানে বাড়িতে গমগম ভাব।আশেপাশের আবহাওয়ায় আর সকলের হইহুল্লোরে আমেজ ছরিয়ে আছে সারা বাড়িতে।
কিন্তু আমার মনে যেনো আমেজের ছিটে ফোটাও খুজে পাচ্ছি না।মনে হচ্ছে খুশি হওয়ার মতো তো কিছুই নেই তাহলে কিসের এতো হইহুল্লোর?
কিন্তু আপুর সামনে আমার এই ছন্নছাড়া ভাব প্রকাশ করা যাবে না কারণ এই কয়েকটা দিন আপুর পুরো লাইফের মধ্যে চিহ্নিত একটা স্পেশাল ডে।আমার জন্য আপুর এই খুশি ভাবের মধ্যে এক ছিটে ফোটা মন খারাপও আমি চাই না।
সব অলসতা পায়ে মড়িয়ে হাটা দিলাম উদ্দেশ্য আপুর পাশে বসে দু একটা কথা বলা।আমি গেস্ট রুমে বসে ছিলাম আর আপু হয়তো রুমেই আছে।
রুমে গিয়ে দেখি আপু কাবার্ড থেকে আমার আআর ওর নিজের সব জামাকাপড় বের করে ভাজ করছে।
আমি অবাক হয়ে আপুর পাশে গিয়ে দারালাম।
–কি করছিস এগুলো?
আমার কথায় আপু ভাজ করতে করতেই আমার দিকে ফিরে মুচকি হেসে বলল
–এলোমেলো হয়ে ছিলো তাই ভাবলাম পরিষ্কার করি।
আমিও আপুর সাথে ভাজ করতে করতে বললাম
–আমি তো ভাবলাম তুই হয়তো লাউডে গান বাজিয়ে নাচবি!
আমার কথায় আপু আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে কিছু না বলে আবার কাপড় ভাজ করতে লাগে।
বুঝতে পারলাম আমার মতো হয়তো আপুরও মন খারাপ।এইটা ভেবে আমারও মন খারাপ হয়ে গেলো।আমি মৃদু কন্ঠে কিছু নিবো তার আগেই আম্মুর ডাক পরে।আমি একনজর আপুর দিকে তাকিয়ে আম্মুর ডাক অনুসরণ করে উনার রুমে যাই।
আম্মুর রুমেই সকলে বসে ছিলো।ইতি আপুর ফেমিলিরাও এসেছে আন্টি হয়তো উনাদের দাওয়াত দিয়েছে।আর আমার চাচা চাচি, মামি, ফুপ্পিরাও এসেছে সবাই একসাথেই আম্মুর রুমে বসে কথাবার্তা বলছিলো।আমাকে দেখে বলল
–শুন মিথিলার বিয়ে আর গায়ে হলুদের শপিং আজই করতে যাবো সকলে মিলে।তুই বাহিরে গিয়ে ইতি,মাহিয়া,ফারদিন সকলকে গিয়ে বলে দে রেডি হতে একটু পরই বের হবো।বিকেল তো প্রায় পেরিয়েই যাচ্ছে।
আম্মুর কথায় মাথা নেড়ে বাহিরে গেলাম।আমার সব কাজিনরা,ইতি আপু ইহান ভাইয়া সবাই টিভির ঘরে বসে ছিলো।আমি সেখানে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলাম।
–আরে জিনাত এতোক্ষনে এলি।জানোস কি মজা করছিলাম আমরা ফারদিন ভাইয়া আমাদের হাসাতে হাসাতে পেট ব্যথা হয়ে গেছে।
মাহিয়ার হাসিমাখা কথা শুনে আমিও মুচকি হাসলাম।মাহিয়া হলো আমার চাচাতো বোন আর ফারদিন হলো ফুপাতো ভাই।
আমি হাসি দিয়ে কিছু বলতে নিবো তখনই ফারদিন ভাইয়া আমার মাথায় চাটি মেরে বলে।
–কিরে জিন সারাদিন কই থাকোস কোনো জিন সঙী পেয়ে গেছিস নাকি?
ভাইয়ার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম
–এমন কিছুই না আর আমাকে জিন বলবা না।
ও তোমার জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম আসল কথা। আম্মু বলেছে রেডি হতে সবাইকে বিয়ের শপিং করতে যাবে আজ।
কথা শেষ হওয়া মাত্রই সবাই ছুটে রেডি হতে গেলো।আমিও উঠে গেলাম।আপুকেও তো যেতে হবে দেখি গিয়ে রেডি হয়েছে কি না?
–
শপিং মলে ঘুরছি।আমাদের সবার মার্কেটিং শেষ।আপুরও জুয়েলারি সব কেনা শেষ কিন্তু এখন উনার গায়ে হলুদে পড়ার জন্য কোনো শাড়ি পছন্দ হচ্ছে না একটা হয়েছিলো কিন্তু ওইটা আরেকজন কিনে ফেলেছে বেশি দাম দিয়ে।এখন আপুর জন্য আমাদেরওও ঘুরতে হচ্ছে।
আরও প্রায় আধা ঘন্টা ঘুরার পর আপুর শাড়ি পছন্দ হয়েছে আর আম্মুও তারাতারি কিনে ফেলেছে নাহলে আরেক সমস্যা দেখা দিয়ে পারে।
বাসায় এসে বিছানায় গা এলাতেই চোখে রাজ্যের ঘুম দেখা দেয়।শপিং এর চক্করে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পরেছি তাই ঘুম আসবে এটাই স্বাভাবিক।
–
মাহিয়ার চিল্লানি তে অবশেষে চোখ মেলে তাকিয়ে উঠে বসি।ঘুমের মাঝেই মাহিয়া নামক মেয়ে এসে কানের সামনে ঘেনঘেন শুরু করেছে আমিও ঘুম ভাঙার পরও চুপচাপ চোখ বন্ধ করে ছিলাম কিন্তু এই মেয়েটাও প্রতিজ্ঞা করেছে যতক্ষন পর্যন্ত আমি চোখ না খুলবো বেনবেন ঘেনঘেন আরও যতো কিছু আছে সব করতেই থাকবে।
বিরক্ত নিয়ে উঠে বসতেই মাহিয়া এক গাল হাসি নিয়ে বলল।
–ওয়াও কাল মিথিলা আপুর বিয়ে এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।আর তুই এখানে ঘুমিয়ে আছিস!বাহিরে দেখ স্টেজ সাজানো শুরু হয়ে গেছে উফ কি সুন্দর সাজাচ্ছে।মিথিলা আপুর বিয়েটা একদম গ্রেন্ড হবে।
আমি রাগ নিয়ে কিছু বলতে নিয়েও বললাম না।ফ্রেশ হয়ে বাহিরে গেলাম।
খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে আমাদের বিল্ডিং এর ছাদেই সাজানো হচ্ছে।আমি কিছুক্ষন সাজানো দেখে রুমে এসে পরলাম।
মনে একটা কথাই ঘুরছে
আরিশ ভাইয়া কি আমার উপর রাগ করে আপুর বিয়েতেও আসবে না।শুধুই আমার জন্য।
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই)