#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:18
#Mishmi_muntaha_moon
আপু বাদে আমরা সকল বোন ভাইরা ছাদে বসে আছি।বিকেল দিক বেশি রোদ নেই।তাই আরামে বসতে পারছি।
আপুর বিয়ে আর হলুদের প্লেন চলছে।আমি আগেই বলে দিয়েছি পার্লার টার্লারে যাবো না।বাসায় সাজবো।তাই মাহিয়াও যাবে না আর ইতি আপুও যাবে না বলে ডিসাইড হলো।
–আহ তোরা মেয়েরা এই আটা ময়দা মাখামাখি নিয়েও প্লেন করতে হয়।
ফারদিন ভাইয়ার কথা শুনে মাহিয়া হুংকার দিয়ে উঠলো।
–ভাইয়া তুমি আমাদের মেকআপ প্রডাক্ট নিয়ে বাজে কথা বলবে না।মেয়েদের জন্য কতো ইম্পর্ট্যান্ট তা তোমাদের মতো ছেলেরা কিভাবে বুঝবে।হাহ।
মাহিয়ার কথা শুনে ফারদিন ভাইয়া জোরে জোরে হেসে বলল
–ইম্পর্ট্যান্ট তো হবেই কারণ মেকআপ ছাড়া তো তোরা দেখতে পুরোই পেত্নী।
শুরু হয়ে গেলো মাহিয়া আর ফারদিন ভাইয়ার ঝগড়া।
–আরে তোমরা চুপ করো আমরা এখানে আড্ডা দিতে এসেছি নাকি ঝগড়া।
–ঠিক বলেছিস। তোর তো যাও কিছুটা বুদ্ধি সুদ্ধি আছে কিন্তু এক গাধাটাকে বল।
ফারদিন ভাইয়ার কথার মাঝেই রিয়াদ ভাইয়া আর রিয়া ছাদে এলো ওরা হলো আমার মামাতো ভাই, বোন।
ছাদে এসে ওরাও আমাদের সাথে বসলো।
কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর রিয়াদ ভাইয়া বলল
–ওই জিনাত বইন যা কিছু খাবারের নিয়া আয়।
রিয়াদ ভাইয়ার প্রতিউত্তরে কিছু বললাম না বিরক্ত নিয়ে উঠে মাহিয়াকে বললাম
–এই মাহিয়া চল আমার সাথে আমি একা কিছুতেই যাবো না।
আমার কথা শুনে মাহিয়া কিছুক্ষন ভনিতা করে অবশেষে উঠে আমার সাথে নিচে এলো।
আমি আর মাহিয়া মিলে ঝাল মুড়ি বানিয়ে উপরে যেতে নিবো তখনই আম্মুর রুম থেকে আন্টির কন্ঠ ভেসে এলো
–আরিশ এসে পর না আজ আর কাল তো মিথিলার গায়ে হলুদ তুই কি ওর বিয়েতেও আসবি না?
আন্টির কথা শুনে থেমে গেলাম।আরিশ ভাইয়ার নামটা শুনেই হার্টবিট থেমে গেলো।
–কিরে জিনাত এই আরিশ ভাইয়া কোথায় রে?উনার জন্যইই তো এতো ইন্ট্রেস্ট নিয়ে এলাম আর এসে দেখি উনিই নেই।
মাহিয়ার কথা শুনে আমি ওর হাতে ঝাল মুড়ির বাটি দিয়ে বললাম
–তুই একটু মুড়ি নিয়ে যা আমি একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ করে আসছি।
মাহিয়া আমার হাত থেকে বাটি নিয়ে ছাদে গেলো।আর আমি গেলাম আম্মুর রুমে। আন্টি একা বসে ছিলো। আমি উনার পাশে গিয়ে বসতেই শুকনো হাসি দিয়ে বলল
–তুই এখানে কি করছিস সবাই ছাদে না?
আমি মাথা নাড়ালাম।কিছুক্ষন চুপ থেকে মৃদু কন্ঠে বললাম
–আরিশ ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলা??
–হুম।
আন্টির শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম
–উনি কি মিথিলা আপুর বিয়েতেও আসবে না?
–জিজ্ঞাসা করলাম তো কিন্তু কিছু বলল না এড়িয়ে গেলো কথা।
আন্টির কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে ছাদে চলে গেলাম।
ছাদে গিয়ে সবার সাথে বসতেই দেখি উনারা আরিশ ভাইয়ার ব্যাপারে আলোচনা করছে আমাকে দেখে রিয়াদ ভাইয়া উৎসাহ নিয়ে বলল
–কিরে আরিশ কি বিয়েতে আসবে না?
আমি আশাহত কন্ঠে বললাম
–জানিনা।
–
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ১১ টা বাজে।টাইম দেখে অবাক হয়ে গেলাম এতো বেলা হয়ে গেলো আর কেউ ডাক দিলো না বিস্ময়কর ব্যাপার।
উঠে বাহিরে যেতেই দেখি মাহিয়া আর ইতি আপু সোফায় বসে আছে।আমি যেতেই আমার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার নিজেরা কথা বলতে লাগলো।আমি মাহিয়ার পাশে বসে বললাম
–কি ব্যাপার আজকে এতো লেট হয়ে গেলো আর কেউ জ্বালাতেও আসে নি?
মাহিয়া আমার দিকে ফিরে ফিসফিস করে বলে
–ঘুমিয়ে তো ছিলি দিন দুনিয়ার খবর রাখিস?
মাহিয়ার কথার ধরণ দেখে মনে হলো আপু হয়তো পালিয়ে টালিয়ে গেলো এরকম টাইপ কোনো ঘটনা হবে কিন্তু বিয়েটা তো লাভ মেরিজ তাহলে আপু পালাবে কেনো।
এইসব ভাবার মাঝেই মাহিয়া আবারো বলল
–মিথিলা আপু সকালে কতো কাদলো চাচি কে ধরে।সবাই ইমোশনাল হয়ে পরেছিলো।
মাহিয়ার কথা শুনে ছোটছোট চোখ করে তাকিয়ে উঠে রুমে যেতে লাগলাম।কি ভাবলাম আর শুনালো কি।রুমে গিয়ে দেখি আপু গোসল করে বেরিয়েছে।একটু পরেই তো পার্লারের লোক আসবে আপুকে সাজাতে।
আপু বারান্দায় কাপড় মেলে দিয়ে আমার সামনে এসে দারায়।
আমি আপুকে দেখে বলি
–মাহিয়া বলল, সকালে নাকি ইমোশনাল হয়ে পরেছিলি?
আপু আয়নার সামনে গিয়ে চুল আচড়াতে আচড়াতে বলল
–তো।বিয়ের দিন গুলোতে সবাই ইমোশনাল হয়ে পড়ে।তোর বিয়ের দিন টের পাবি।
আপুর কথার মাঝেই কিছু মেয়ে আমাদের রুমে আসলো আপুকে সাজাতে।
মেয়েগুলোকে দেখে আমি বেরিয়ে গেলাম।বাহিরে গিয়ে দেখি মাহিয়া মুখে ফেসপেক লাগিয়ে বসে আছে।একদম স্ট্যাচুর মতো।আমাকে দেখে বলল
–কিরে জিনাত কোথায় ছিলি কখন থেকে খুজছি।দেখ আমি ফেসপেক লাগিয়েছি তোর জন্যও রেখেছি লাগিয়ে নে।
–না বাবা আমি এইসব লাগাবো না।আমি গেলাম শাওয়ার নিতে।তুই বসে থাক।
–
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।ছাদে অলরেডি গান বাজনার তীব্র ধ্বনি কানে বারি খাচ্ছে।
আমরা সবাই আমার রুমে রেডি হচ্ছি।আমার সাজগুজ শেষ এখন শাড়ি পরছি।আম্মু আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে।আমি শাড়ি পরতে পারি কিন্তু এরকম বিয়েশাদি তে আমি নিজে পরি না বাসায় মাঝেমধ্যে পরলে সেইটা অন্য ব্যাপার।
আমরা আজ সবাই আজ হলুদ রঙের শাড়ি পরবো বলে চুস করেছি কারণ গায়ে মানেই তো হলুদের সমারোহ।
আর ছেলেরা সবুজ রঙের পাঞ্জাবী।
আমার শাড়ি পড়া শেষ হতেই মাহিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ও এখনও সাজছে। ওর একই কথা এইটা বাকি ওইটা বাকি আরও কতো কি!
–
প্রায় সাড়ে সাতটার দিকে মাহিয়ার ফুল এন্ড ফাইনাল সাজা শেষ হলো।
তাও আবার চাচির বকাঝকা শুনে হয়তো একটু তারাতারি করেছে।আমাদের ফ্লাট একদম খালি পরে আছে সবাই ছাদে অনুষ্ঠান ইঞ্জয় করছে মাঝেমধ্যে আম্মু,আব্বু অথবা কেউ আসছে আবার দ্রুত পায়ে ছাদে যাচ্ছে।আমি মাহিয়াকে বললাম
–ওই সুন্দরী তোর হয় না সাজা।একটু আগে না বললি সাজা শেষ?
মাহিয়া শাড়িতে পিন লাগাতে লাগাতে বলল।
–আরেহ হয়েই গেছে দেখোস না এই পিন টা আবার খুলে গেছে এখন ছাদে গিয়ে যদি খুলতো মানইজ্জত সব প্লাস্টিক হয়ে যেতো।
আমি আবারো বিরক্ত নিয়ে বললাম
–আচ্ছা তারাতারি ঠিক করে নে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই মাহিয়ার কাজ শেষ হতেই আমরা ছাদের দিকে পা বাড়ালাম।ছাদের ভিতরে ঢুকার আগেই আবার মাহিয়া হাত টেনে দার করালো
–কি?
–একটু দেখ না সব ঠিক ঠাক আছে তো?
–হ্যা পুরাই পাটাকা লাগছে।
আমার কথা শুনে মাহিয়া লজ্জামাখা হাসি দিলো।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
–তোর উপর জেলাসি হচ্ছে আমার কতো সুন্দর লাগছে তোকে আমি ছেলে হলে উঠিয়ে নিয়ে যেতাম।
–হইসে হইসে চল এইবার।
ছাদে ঢুকতেই হইচই চেচামেচি কানে আসে তার সাথে লাউড মিউসিক।আমি আর মাহিয়া আপুর কাছে যাই।গায়ে হলুদ টলুদ লাগিয়ে এক কর্নারে এসে দারাই।
তখনই কোথা থেকে একটা ছেলে এসে হায় হ্যালো করতেই মাহিয়া এভাবে গল্প জুরে দিলো যেনো কতো বছর পুরনো সম্পর্ক। আমি বিস্ময় কাটিয়ে আশেপাশে দেখতে লাগলাম।সবাই ভালোই ইঞ্জই করছে।
কিছুক্ষন পর একটা পিচ্চি ছেলে এসে অনেকগুলো তাজা গোলাপ ফুল আর একটা চিরকুট দিয়ে গেলো।
আমি কিছু জিজ্ঞাস করতে নিবো তার আগেই ছেলেটা ছুটে উধাও হয়ে যায়।আমি কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে চিরকুট খুলি পরতে লাগি।
“তোমার ওই খোপা করা চুলে গোলাপ ফুলের থেকে বেশি মানানসই আর কি হতে পারে”
লেখাটা পরে ভ্রু জোড়া কুচকে গেলো।কে দিলো এই চিরকুট কে জানে। আমি ফুল গুলোর দিকে একনজর তাকিয়ে কোনো ব্যবস্থা করতে নিবো তার আগেই কোথা থেকে মাহিয়া এসে চিরকুট ছিনিয়ে নিয়ে পরতে লাগলো।পড়া শেষ করে আমার দিকে অবাক চোখ তাকিয়ে বলল
–জিনাত তোর বয়ফ্রেন্ড ও আছে বিশ্বাস হচ্ছে না আর তুই আমাকেও বললি না।
কিছুক্ষন মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে দেখে আমার হাত থেকে ফুল গুলো ছিনিয়ে নিয়ে হাসি দিয়ে বলল
–যাই হোক মাফ করলাম।এখন যেহেতু বয়ফ্রেন্ড আছে আবার গোলাপ ফুলও পাঠিয়েছে তাই দে এগুলো আমি তোর খোপায় লাগিয়ে দেই।কারণ প্রেমিক পুরুষ দের কথা অমান্য করতে নেই।
মাহিয়ার কথা শুনে ভ্রু কুচকে বললাম
–কে বলেছে তোকে এই অযুক্তিকর কথা?আর প্রেমিক পুরুষ পাঠিয়েছে এটাই বা কোথায় উল্লেখ আছে।
–আরে মনের উল্লেখ বড় উল্লেখ।এইসব ইম্পর্টেন্ট না।তুই বস।
মাহিয়া জোর করে বসিয়ে আমার খোপায় একে একে করে সব ফুল লাগিয়ে দিলো।
–উফ কি সুন্দর লাগছে একদম এখানের সবার থেকে ইউনিক।
মাহিয়ার কথা শুনে খোপায় হাত বুলিয়ে পা বাড়াতেই আম্মুকে উদ্দেশ্য করে আন্টির হাসিমাখা কন্ঠ শুনতে পেলাম।
–আরিশ এসেছে।
চলবে