#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:22
#Mishmi_muntaha_moon
কলেজে যাবার জন্য রেডি হচ্ছি।তুবা কল করে বলল কচিং করাবে নাহলে জানতেই পারতাম না।
রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম।কাল আরিশ ভাইয়াকে রাতে কল করেছিলাম ধরেছিলো কথাও বললাম বেশিক্ষন নয় কিছুক্ষন।আম্মুর সেদিনকার বলা কথা গুলোও বললাম এটাও বলেছি যে আম্মুরা আমার বিয়ে রিজবী নামক ব্যাক্তির কাছেও দিতো না।কিন্তু এখন আর বলে কি হবে বিয়েটা তো হলই।
কলেজে পৌছে তুবাকে দেখলাম।ভেবে পাচ্ছি না ককে আরিশ ভাইয়া আমার বিয়ের কথা বলবো কি বলবো না।অনেক ভেবেচিন্তে বলবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম কারন সবাই যেহেতু যানে বেচারি আমার বেস্টু জানলে সমস্যা কোথায়।
কচিং শেষ বের হতেই পাশেরর একটা ক্যাফেতে গেলাম।
–এই তুবা কি হয়েছে জানিস?
আমার কথা শুনে তুবা কফি খাওয়া ছেড়ে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–হ্যা বল তারাতারি বল।
–আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
আমার কথা শুনে তুবা কিছুক্ষন বড় বড় চোখে তাকিয়ে থেকে কফি খেতে লাগলো।ওর বিহেভিয়ার দেখে অবাক গেলাম কারণ এতোক্ষনে তো ওর চিল্লিয়ে ফেলার অবস্থা হওয়ার কথা।
–কি হলো?কিছু বলছিস না?
–তুই বলবি আমার বিয়ে হয়্র গেছে আর আমি নাচতে নাচতে বিশ্বাস করে ফেলবো।তুই মজা করছিস আমার সাথে আই নো।
–আরে গাধী সত্যি বলছি।আমার আর আরিশ ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে।৩ দিন হয়েও গেছে।
–নো আই কান্ট বিলিভ তোর বিয়ে হয়েছে তাও আবার আরিশ ভাইয়ার সাথে হাহ কিভাবে হবে তোর আম্মু মেনেছে কি করে আর তোর বিয়্র হ
হলে কি আমি জানবো না।আচ্ছা এইসব বাদই দিলাম মাত্র মিথিলা আপুর বিয়ে হলো আর সাথে সাথে তোকে বিয়ে দিবে আমাকে বিশ্বাস করতে বলছিস।আমি গাধী না তুই আমাকে আগস্ট ফুল বানাচ্ছিস।
তুবার কথা শুনে চোখ মুখ কুচকে বললাম
–আগস্ট ফুল আবার কোন ফুল?
–আরে এপ্রিলফুল কিন্তু এখন তো এপ্রিল না তাই আরকি।
তুবার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে উঠে ক্যাফে থেকে বের হয়ে গেলাম।
গাধা মেয়েটাকে সত্যি বললাম তাও ও কোনোভাবেই বিশ্বাস করবে না।উফ!
–
বাসায় এসে আপুকে দেখে দৌড়ে উনার কাছে যাই।
–আরে আপু তুই?
–হুম আমার কেমন জেনো লাগছিলো তাই নাহিদ কে বললাম নিউএ আসতে ও অফিসে যাওয়ার সময় দিয়ে গেলো।
–ওহ,,,ভালোই হয়েছে।তুই রুমে আয় আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে ভাবতে লাগলাম আপুও বিয়ের আগের দিনই এসেছিলো তাহলে অবশ্যই জানবে যে আম্মু আসলে রাজি হলো কিভাবে আর আরিশ ভাইয়ায়া আন্টিকে বলল আর প্রপোজাল নিয়ে এসে পরলো উনি। কে জানে আরিশ ভাইয়া কি কি বলেছে উনাকে?
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি আপু খাটে বসে আছে।আমিও উনার পাশে গিয়ে বসলাম।
— তোকে দেখি আজ অসম্ভব সুন্দরী লাগছে।বুঝলাম বিয়ে হওয়ার পর সকলের মুখের লাবন্য দ্বিগুণ হয়ে যায়।
আপুর কথায় পাত্তা না দিয়ে উনাকে বললাম
–আচ্ছা আপু আম্মু আর আব্বু বিয়েতে রাজি হলো কিভাবে না মানে।
আমি কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আপু বলল
–কেনো তুই জানিস না এই ব্যাপারে?
–নাহ তাই তো তোকে জিজ্ঞাসা করলাম।
–আন্টি আরিশ ভাইয়া বলেছে উনি তোকে বিয়ে করবে আর তাও তিনদিনের মধ্যে নাহলে অন্য কোনো দেশে চলে যাবে।আর আম্মু প্রথম রাজি হচ্ছিলো না তারপর রাজি হয়ে গেছে। আমার তো মনে হয় তোর কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে এইটা ভেবেই উনিও রাজি হয়ে গেছে আর আরিশ ভাইয়ার মতো মেয়ের জামাই পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।উফ তোর ভাগ্যটা কি ভালো রে আরিশ ভাইয়ার মত হাসবেন্ড পেয়ে গেলো।সব মেয়েরাই,,,
আপুর কথা শেষ করার আগেই বিরক্ত হয়ে বললাম
–আচ্ছা তুই এখন চুপ যা।আর এই টপিক ও বাদ দে তুই বল তোর কথা।
–
সকাল,,
রাতেই নাহিদ ভাইয়া আপুকে নিয়ে চলে গেছে।
খাওয়া দাওয়া করে রুমে গেলাম।ভালো লাগছে না।
কাবার্ড থেকে আরিশ ভাইয়ার দেওয়া শাড়ি টা বের করে নিলাম।আজ পরবো বলে।
শাড়িটা খুলতেই দেখলাম খুব খুব খুবই সুন্দর শাড়িটা।কালো রঙের শাড়িটা।মাঝে আবার সুতোর কাজ আছে মানে বর্ণনা করা সম্ভব না।
এখন বুঝলা। আরিশ আইয়া এইজন্য আপুর বিয়ের দিন কালো পাঞ্জাবী পরেছিলো।উনি আমার শাড়ির সাথে মেচিং করে পরেছিলো।
ভেবে মন খারাপ হয়ে গেলো সেইদিন আরিশ ভাইয়াও অনেক কষ্ট পেয়েছিলো এই শাড়িটা পরলেই ভালো হতো ধুর,,,।
গোসল সেড়ে সুন্দর করে শাড়ি টা পরে নিলাম।চিকন করে আইলাইনার দিয়ে হাল্কা লিপস্টিক লাগালাম।
ওয়াও সুন্দর লাগছে।
শাড়ি কিছুক্ষন নিজেকে নিজে দেখে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম।
এই শাড়ি পরে বাহিরে যাবো কি যাবো না এই সিদ্ধান্ত টাই নিতে পারছিনা।বিরবির করে বলতে লাগলাম
–আরিশ ভাইয়া তো এখন আমার হাসবেন্ড তাহলে উনি আমাকে শাড়ি দিতেই পারে।
এইসব ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম জিজ্ঞাসা করলে আরিশ ভাইয়ার নামই নিবো।
রোদ অনেকটা কমে গিয়েছে।বিকেল ৫ টার কাছাকাছি বাজে।
দরজা খুলে বাহিরে গেলাম।কাউকে না দেখে দ্রুত পায়ে সোফার রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখি সোফায় আরিশ ভাইয়া বসে আছে আর আরেক সোফায় আন্টি আর আম্মু বসে কথা বলছে।
আন্টি আর আম্মুর দিক থেকে নজর সরিয়ে আরশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি হাল্কাভাবে ঠোট কামড়ে ধরে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আম্মুর কথা শুনে উনার থেকে চোখ সড়িয়ে আবার আম্মুর দিকে তাকাই।
–কিরে এই শাড়িটা কোথা থেকে পেলি?
আম্মুর প্রশ্নে থতমত খেয়ে বললাম
–আর,,, না মানে শাড়িটা।
কিছুটা থেমে আবারো বললাম
–ও হ্যা তুবা,,,তুবা দিয়েছে।গিফট।
কথাটা বলে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।
আম্মু আমার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল
–তুবা দিয়েছে,,।বাহ ভালোও তো শাড়িটা খুব সুন্দর।
আম্মুর কথায় মুচকি হাসলাম।আম্মু আর আন্টি আবারো কথা বলতে লাগলে আমি আমার রুমে চলে যাই।
জানালার কাছে দাঁড়িয়ে হাত খোপা করতে নিতেই কমড়ে কারো স্পর্শে ভয় পেয়ে কেপে উঠি।
তারাতারি পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি আরিশ ভাইয়া।
–আপনি আমার রুমে কি করছেন?
–তোর রুম??
–তো কার রুম আপনার।
–শাট আপ।যেদিন পরতে বলেছিলাম সেইদিন বড় উচ্ছাস নিয়ে রিজবীর দেওয়া ড্রেস পরেছিলি।
–উফ আপনি এইই রিজবী রিজবী করা বন্ধ করুন।আমি জানতামই না ওই ড্রেস টা রিজবী ভাইয়া দিয়েছে।
আরিশ ভাইয়া আমার গালে হাত দিয়ে বলল
–এখন কি ছেলেটার নাম নিয়ে মুড খারাপ করিস না।
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম।
–আমি বলেছি না কি আপনি।আপনি তো রিজবী,,,,
আর কিছু বলতে পারলাম না।আরিশ ভাইয়া আমার ঠোট জোরা নিজের দখলে নিলো।সাথে সাথেই সাড়া শরীর শিউরে উঠলো।
হার্টবিট দ্বিগুণ ভেগে ছুটতে লাগলো।
অনেকক্ষন পর ভাইয়া আমার ঠোট জোড়া ছেড়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল
–পরপুরুষ দের নাম মুখে আনলে এইভাবেই শাস্তি দেওয়া হবে।
ভাইয়ার কথা শুনে চোখ এদিক ওদিক ছুটতে লাগলো।মুখের কথাই ছিনিয়ে নিয়ে গেলো।
–ওয়েট একটা কথা মেয়েরা লজ্জা পেলে তাদের গালগুলো লাল কেনো হয়ে যায়।এইটা তো ভাববার বিষয়
আরিশ ভাইয়ার এমন উদ্ভট কথা শুনে বললাম
–আপনার এতো জানার ইচ্ছে যখন ছিলো তাহলে বিজ্ঞানী হতেন তারপর তো আর চিন্তাই নেই সারাদিন এইসব ব্যাপার নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষা করে বেড়াতেন।
ডান পাশে থাকা পড়ার টেবিলে দৃষ্টি আবদ্ধ করলাম এরই মাঝে আরিশ ভাইয়া ঘারে উনার ঠোট স্পর্শ করতেই হেসে দিয়ে তারাতারি দূরে গিয়ে দারালাম।
–উফ এমন করবেন না বলে দিলাম।
আরিশ ভাইয়া আবারো আমার হাত টেনে উনার সাথে মিশিয়ে বলল
–কেনো?আমি এখন তোর হাসবেন্ড বুঝলি।এখন কে আটকাবে আমাকে??
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে বললাম।
–প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন। আমার অনেক সুড়সুড়ি লাগে।
আরিশ ভাইয়া আমার কথা শুনে কিছুক্ষন গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বাকা হাসে।
সাথে সাথে আমার হার্ট এট্যাক আসার উপক্রম।
উনার মাথায় যে দুষ্টামি করার বুদ্ধি ঘুরছে তাও বুঝতে পারলাম।
উনি বাকা হেসে আমার হাত চেপে চেপে ধরে গলায় মুখ ডুবালো।
সাথে সাথে আমি মুচরা মুচরি করতে লাগলাম তার সাথে তো জোরেশোরে হাসা ফ্রি।
–
শাড়ি পরেই ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।চারপাশে অন্ধকার। আকাশে লালচে অর্দেক চাঁদ দেখা যাচ্ছে।আর কিছুদিন পর আকাশে চাঁদ দেখা যাবে তারপর আবার নতুন করে সম্পূর্ণ চাঁদ চোখে পরবে।
বিকেলের কথা মনে পরতেই ঠোটে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
উফ উনি আমার হাসবেন্ড আমি উনার ওয়াইফ মিসেস জিনাত মিস্টার আরিশ আহমেদ এর ওয়াইফ কি মধুর শুনতে।
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার মাঝেই চাঁদ কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পরলো।বাতাসও বইতে লাগলো।কি ঠান্ডা বাতাস পুরো শরীর শিউরে উঠে।
–
সকালে রেডি হয়ে বাহিরে গিয়ে দেখি আরিশ ভাইয়া গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।গায়ে তার পার্পেল রঙের শার্ট।
আমি ধীর পায়ে হেটে গাড়ির কাছে গিয়ে ভিতরে উকি দিয়ে বললাম
–এখানে কি করছেন??
–আজ থেকে যেখানেই যাবি আমি দিয়ে আসবো।
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে ফট করে বললাম
–কেনো আপনার কি কাজ টাজ নেই?
আরিশ ভাইয়া ক্ষীপ্ত দৃষ্টিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
–কেনো তোকে কি আমাকে বেকার বলে মনে হয় নাকি?
–না তা না।
–আমি কাজের থেকে তোকে বেশি ইম্পরট্যান্ট দেই তাই।এখন বেশি কথা না বলে গাড়িয়ে বস।
–
কলেজে পৌছে আরিশ ভাইয়াও আমার সাথে যেতে লাগলো।
–আপনি কোথায় আসছেন।
আমার কথার মাঝেই তুবা এলো।
আরিশ ভাইয়া আমার কথা শুনে বলল
–তোর কচিং সেন্টারের একটা রাউন্ড লাগিয়ে যাই।
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে মাথা হাল্কা নাড়িয়ে তুবার দিকে তাকালাম।
তুবার উদ্দেশ্যে কিছু বলতে নিবো তার আগেই কোথা থেকে অনিক এসে বলল।
–ওহ জিনাত এসেছো তুমি আমি তো ভেবেছি তুমি কচিং করবে না।
আমি চুপ করে থাকার মাঝে অনিক আবারো বলল
–ওহ তোমার ভাই তোমাকে দিয়ে যেতে এসেছে।
আরিশ ভাইয়ার দিওএ তাকাতেই দেখি উনি কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।উনার চাহনি দেখে মনে হচ্ছে বেশি কথা বললে কখন মাথায় তুলে আছাড় দিবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
আরিশ ভাইয়া আমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল
–নো, ভাই না হাসবেন্ড হই আমি জিনাতের।
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে চোখ বড় হয়ে গেলো আমি আরো লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি আর উনি সবাইকে বলে বেরাচ্ছে।
অনিকের দিকে তাকিয়ে দেখি ও শকড হয়ে তাকিয়ে থেকে আমাকে বলল।
–সিরিউয়াসলি জিনাত?
অনিকের কথা শুনে মাথা উপর নিচ দুলালাম।
আমি কচিং সেন্টারের ভিতরে ঢুকতেই ভাইয়া চলে যায়।
–আরিশ ভাইয়া কি বললো তখন তাহলে কি সত্যি তোদের বিয়ে হয়ে গেছে।
আমি আড়চোখে তুবার দিকে তাকিয়ে বললাম
–তাহলে তোকে তো বলেছিলামই।ডাফার কোথাকার।
–ইশ আর আমি ভেবেছি তুই মজা করছিস।
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।)