ভালোবাসি তাই পর্ব-১১

0
1337

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ১১
#Tanisha Sultana

আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় চারপাশটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। ব্যস্ত রাস্তায় যানবাহনের চলাচল করে গেছে। কুকুর গুলো ঢেউঢেউ ডেকে যাচ্ছে। বেলকনিতে বসে রাতের সৌন্দর্যটা উপভোগ করছে আবির। সারাদিন কিছু খাওয়া হয় নি। তখন তানহার সাথে কথা বলার পর থেকে আর রুমের দরজা খোলে নি। সব কিছুই বিরক্ত লাগছে। তখন থেকে তানহার ফোন বন্ধ বলছে। তানহা খুব কষ্ট পেয়েছে। পাশে থাকা গোলাপ গাছে সদ্য বের হওয়া কলিটা আবির ছিঁড়ে ফেলে। তানহার খুব শখের গাছ এটা। আবিরের বার্থডেতে এই গাছে গোলাপ ফুটবে আর সেই গোলাপ দিয়ে রাত বারোটায় তানহা আবিরকে উইস করবে। এমনটা কথা ছিলো।
“তোমার কথা তুমি রাখবে তো তানহা?
বিরবির করে বলে আবির।
“আসবে তো আমায় উইস করতে?

আসবে না তানহা। আর কখনো ফিরবে না আবিরের জীবনে। তাচ্ছিল্য হাসে আবির। খুব আসহায় লাগছে নিজেকে। এমনটা না হলেও পারতো। এবার আবির মনে মনে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। বাঁচতে হলে এমনটাই করতে হবে।

হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে আবির। বুঝতে পারে ডুপ্লিকেট চাপি দিয়ে মায়া এখানে এসেছে। আবির কোনো রিয়াকশন করে না। মায়া আবিরের পায়ের কাছে বসে। আবিরের হাতের ওপর হাত রাখে

” আই এম সরি
মাথা নিচু করে বলে মায়া।

“ইটস ওকে
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে আবির।
” সরি বললে সব পবলেম সলভ হয় না। আপনি আমাকে সরি বলেছেন বলে আমি তানহার ভয়েস শুনতে পাবো না। তানহার ভয়েস না শুনে আমি থাকতেই পারি না। আপনি কখনো ড্রাগস নেওয়া লোকদের দেখেছেন? ড্রাগস না পেলে কেমন ছটফট করে দেখেছেন? তানহাও আমার ড্রাগস। ওকে না দেখতে পেলে আমিও তেমন ছটফট করি। বুকের ঠিক দুই ইঞ্চি নিচে যে হৃদয়টা আছে সেখানে আগুনে ছ্যাঁকা দিয়ে খোদাই করে তানহার নামটা লেখা আছে। মরে যাওয়ার আগে সেই নাম মোছা যাবে না। আমার প্রতিটা নিশ্বাসে তানহা নামটা উচ্চারণ হয়।

মায়া আবার হয়ে আবিরের কথা শুনছে। এতোটা ভালোবাসে তানহাকে?

“আমি যদি আপনার সাথে কোনো অন্যায় করে থাকি তাহলে হ্মমা করে দিয়েন। কখনো আপনাকে মানতে পারবো না। ইনফেক্ট আপনার সাথে ভালো করে কথাও বলতে পারবো না। আমি তানহাকে ভালোবেসেই সারা জীবন কাটাতে চায়। ভেরি সরি।

আবির উঠে চলে যায়। মায়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ে। এতোটাও ভালোবাসা যায়।

🌹🌹🌹🌹

তানহা ফ্লোরে গোল হয়ে বসে আছে। অভিকেও সামনে বসিয়ে রেখেছে।
” কতোখন বসে থাকবো?
বিরক্ত হয়ে বলে অভি।

“বিয়ে করমু
ঠোঁট উল্টে বলে তানহা।

” কিহহহহহহহহ
চিৎকার দিয়ে বলে অভি।

তানহা লাফ দিয়ে অভির কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলে
“আবির ওই ডাইনিটাকে বিয়ে করে ফুলসজ্জা করছে। আমিও তোকে বিয়ে করবো আবিরকে দেখিয়ে দেবো কত্তো কিউট আমার বেবিটা
অভির নাক টেনে বলে।

অভি তানহার হাত সরিয়ে দেয়। তানহা অভির গলা চেপে ধরে
” বিয়ে না করলে খুন করে ফেলবো।

অভি ভয়ে ভয়ে বলে
“করবো তো বিয়ে

” এখনি বিয়ে করবো আর তারপর ফুলসজ্জা 🙈🙈🙈

অভি মথায় হাত দেয়
“আল্লাহ বাঁচাও।
” আমাদের বেবি হবে। আমরা হ্যাপি কাপাল হবো। আবিরকে দেখিয়ে দেবো আমিও ভালো আছি
অভির গলা জড়িয়ে ধরে বলে।

“সব হবে এবার ছাড়ো আমাকে

” ছাড়বো কেনো? আমাকে তোর কেমন লাগে

“ডাইনীর মতো
বিরবির করে বলে অভি

” কিহহহ বললি
চোখ গরম করে বলে তানহা।

“খুব ভালো লাগে। মন চায় থাক কইলাম না
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অভি।

” তাহলে এখনি বিয়ে করবো
অভির বুকে মাথা রেখে বলে তানহা।

“কাল সকালেই বিয়ে করবো
মাথায় হাত বুলিয়ে বলে অভি

” কেনো?

“এভাবে তো বিয়ে হয় না। কোর্টে যেতে হবে।

” তাহলো চল ফুলস
তানহার কথা শেষ হওয়ার আগেই অভি কিছুটা ভেবে উঠে পড়ে।
কাবাড থেকে একটা কাগজ আনে।
” আই এম সরি তানহা। এটা আমাকে করতেই হবে।

অভি তানহার কাছে কাগজটা এনে কলম তানহার হাতে দেয়।
“এখানে সই করে দাও

” আমি সই করবো না বিয়ে করবো

“এখানে সই করলেই তো বিয়ে হবে

” লায়ার

“সত্যি

তানহা অভির মুখের দিকে একটু তাকিয়ে কলম ঠিক করে ধরে। কোনোরকমে সাইন করে দেয়। অভি তৃপ্তির হাসি হাসে। আবার কাজগটা জায়গা মতো রেখে আছে।
তানহা বিছানায় বসে।

” ওই করলার বাচ্চা এখানে আয়।

তানহার মুখে তুই তুকারি শুনে অভি চোখ ছোটছোট করে তাকায়।
“এখন আমাদের ফুলসজ্জা
দাঁত কেলিয়ে বলে তানহা।

” এবার আমার এখান থেকে বেরোতে হবে। নাহলে এই ইডিয়েটটা আমাকে

মনে মনে ভেবে অভি আস্তে আস্তে দরজার কাছে আসে। তানহা খপ করে হাত ধরে ফেলে। অভিকে টেনে নিয়ে যায়।
“বিয়ে করে পালাচ্ছিস কেনো? ভয় পাস আমাকে?

কপালে ভাজ ফেলে বলে তানহা।

” সাট আপ

“কিসের সাটআপ? বউকে বকলে পুলিশ কেচ করবো বলে দিলাম।

” আল্লাহ কার পাল্লায় পড়লাম

অভি কি করবে বুঝতে পারছে না।
তানহা অভিকে খাটে বসি দিয়ে নিজে পাশে বসে।

“হাইরে কি কপাল আমার মনের মানুষ পাইলাম না
উচ্চ স্বরে গান শুরু করে দেয় তানহা। অভি তানহার মুখ চেপে ধরে।
” কেউ শুনে ফেললে আমাকে ভাইরাল করে দেবে। প্লিজ বোইন চুপ থাক
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে অভি।

তানহা হাত সরানোর জন্য ছটফট করছে। অভির হাতে কামড় দেয় অভি আহহহ করে হাত সরিয়ে নেয়।
“ঠিক আছে গান গাইবো না কিন্তু আমি নাচবো

তানহা দৌড়ে সরে গিয়ে আবোলতাবোল নাচা শুরু করে দেয় আবোলতাবোল গান গেয়ে। অভি মাথায় হাত দিয়ে একটু বসে ভিডিও করা শুরু করে দেয়।
” কাল সকালে দেখাবো তোমায়।
ভিডিও সেভ করে বলে অভি।
কিছুখন নাচানাচি করে তানহা ক্লান্ত হয়ে অভির বুকে ঢোলে পড়ে।

“আবিরকে খুব ভালোবাসি আমি খুব
বিরবির করে বলে।

অভি তানহাকে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।

” আবির আবির আর আবির
বিরক্ত হয়ে বলে অভি।

“এই করলা শোন
আধো আধো চোখ খুলে বলে তানহা।

” জ্বী মেডাম বলুন
কোমরে হাত দিয়ে বলে অভি।

“আমাদের কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে। সবাইলে বলে দিস
বলে আবার চোখ বন্ধ করে তানহা। অভি একটু হাসে লেজ ছাড়া বাঁদর।

বেরিয়ে যায় রুম থেকে। কিছুখন পরে হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে এসে অভি ঢোক গিলে। চোখ বড়বড় করে তাকায়।
” এই মেয়ে আজ আমায় পাগল করেই ছাড়বে

চলবে।