ভালোবাসি তাই পর্ব-২২+২৩

0
1299

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ২২
#Tanisha Sultana

চায়ের মধ্যে মরিচের গুঁড়ো মিশাতে গিয়ে মিশাই না তানহা। যদি আবার কিস করে। অন্য কিছু মিশাতে হবে। ঘুমের ঔষধ পেলে ভালো হতো দুই চারদিন ঘুম পাড়িয়ে রাখা যেতো। তানহাও দুচারদিন ভালো মতো থাকতে পারতো। অনেক চিন্তা ভাবনা করে বেশি করে চিনি মিশিয়ে দেয় তানহা। অভি একদম চিনি খেতে পারে না। করলার জুস কি না? এক কাপ চায়ে চার চামচ চিনি মিশিয়ে দাঁত কেলায় তানহা। এবার বুঝবেন করলা তানহা কি জিনিস।
অভির রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে বুকে থুথু নিয়ে ভেতরে ঢুকে। অভি খাটে চিত হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
“আপনার চা করলা বাবু। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে তানহা।
অভি লাফ দিয়ে উঠে বসে। তানহার মুখের মিষ্টি হাসি দেখে অভি বুঝে গেছে কোনো গন্ডগোল।
” কি গো জামাই! চা খান
আপনার একমাত্র বউ ভালোবেসে আপনার জন্য চা বানিয়েছে। অভির পাশে বসে বলে তানহা।
অভি গোল হয়ে বসে খাটে। দাঁত কেলায়।
“আমার টুনুমুনু বউটা চা বানিয়েছে আর আমি খাবো না তা কি করে হয়?
” তাহলে খান। চা টা এগিয়ে দিয়ে বলে তানহা।
অভি কাপটা ধরে। তানহা উঠে যেতে নেয় অভি হাত টেনে ধরে।
“চা টা খাওয়ার পরে তোমার ঠোঁটটা প্রয়োজন হবে।
সোজাসাপ্টা বলে দেয় অভি। তানহা ঢোক গিলে।
” কাপ টা দিন আমি ভালো করে বানিয়ে এনে দিচ্ছি। মুখটা ছোট করে বলে তানহা।
অভি তানহাকে টান দিয়ে কোলে বসিয়ে নেয়।
“সেকেন্ড চান্স তো দেবো না। বাঁকা হেসে বলে অভি।
তানহা কাঁদো কাঁদো ফেস করে অভির বুকের লোম গুলো দেখছে। অভি তানহার মাথায় চুমু খায়। তানহা নরেচরে ওঠে।
” ককি করছেন? থেমে থেমে বলে তানহা।
“এখনো তো কিছুই করলাম না। নেশালো কন্ঠে বলে অভি। তানহার কোমরটা ভালো করে জড়িয়ে নেয়।
” আমি কিন্তু আপনাকে ভালোবাসি না। আর আমাদের কিন্তু ভালো করে বিয়েও হয় নাই। হাসফাস করতে করতে বলে তানহা।
অভি হাতটা সরিয়ে নেয়। তানহার গালের দুপাশে হাত দেয়। তানহার দৃষ্টি এখনো অভির বুকের দিকে।
“ভালোবাসার দরকার নেই। শুধু ভালো করে বিয়েটা করি। তারপর
তানহা গোলগোল চোখ করে তাকায় অভির দিকে। অভি ঠোঁট কামড়ে হাসে।
কি অসব্ভ লোকরে বাবা।
” এতোদিন শুরু ওই একটু আকটু
তানহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে। অভি থেমে যায়।
অভি তানহাকে কোল থেকে নামিয়ে পাশে বসিয়ে দেয়। তানহার বুক এখনো বুক টিপটিপ করছে। এই লোকটার হুটহাট এ্যাটাক তানহার দম বন্ধ করে দেয়।
“চা তে কি মিশিয়েছো?
বালিশ কোলে নিয়ে তাতে হাত ভর দিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে অভি।
তানহা কাচুমাচু হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে বলে
” চিনি
“এতোকিছু থাকতে চিনি কেনো? কপালে ভাজ ফেলে বলে অভি।
” লঙ্কা দিলে তো আপনি ঠোঁট কামড়ে দিতেন তাই
থেমে থেমে বলে তানহা।
“আমি তো ভেবেছিলাম বিষ বা ঘুমের ঔষধ মিশিয়েছো।
তানহা চমকে ওঠে। বড়বড় চোখ করে তাকায় অভির দিকে।
” এমা চমকে গেলে কেনো? আমার ভাবনা কি সত্যি? আগ্রহ নিয়ে বলে অভি।
“ইয়ে মানে না। আমি এরকম ভাবিই নি। ভয় জড়ানো কন্ঠে বলে তানহা।
” গুড গার্ল। এরকম কখনো ভাববেও না। তুমি ফেসে গেছো। এই জীবনে তানহা আর অভির থেকে মুক্তি পাবে না। ভালো লাগুক খারাপ লাগুক তানহা অভির।
ইহহহহ তানহা অভিরই। জোর করে আটকে রেখে আবার কথা বলছে। ইডিয়েট করলা কোথাকার। মনে মনে মুখ ভেংচি কেটে বলে তানহা।
“কি গো বউ কিছু বলো? তানহার ঠোঁটের ওপর আঙুল দিয়ে বলে অভি। তানহা কেঁপে ওঠে। শ্বাস প্রায় আটকে গেছে।
” এখনই এতো নার্ভাস হয়ে যাচ্ছো যখন আমাদের বাসর হবে তখন তো জমে বরফ হয়ে যাবে।
কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে অভি। তানহা শ্বাস আটকে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বিছানা চাদর খামচে ধরে। অভি মুচকি হেসে তানহার মুখে ফু দিয়ে দুরে সরে আসে।
অভির নিশ্বাস না শুনতে না অনুভব করতে না পেরে তানহা পিট পিট করে চোখ খুলে। অভিকে দুরে দেখে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অভি বাঁকা হাসে।
তানহা রুম থেকে বেরিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। এই লোকটা এমন কেনো?

🌹🌹
আবিরের আনা কালো রংয়ের গাউনটা পড়ে মায়া নিজেকে বারবার আয়নায় দেখছে। ড্রেসটা সত্যি অসাম।
“এটাই আমার জন্য ভালোবাসা।
মনে মনে বলে ঘুরেঘুরে দেখছে। আবির রুমে এসে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় বসে পড়ে। অফিসের ব্যাগটা খাটের ওপর ফেলে। আবিরকে দেখে মায়া বেশ লজ্জা পায়। যদিও আবির এখনো মায়াকে খেয়াল করে নি। পা টিপে টিপে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দরজা ওবদি আসতেই
” স্টপ
আবির বলে ওঠে। মায়া দাঁড়িয়ে যায়।
“কাম হেয়ার। চোখ বন্ধ করেই বলে আবির। মায়া নিঃশব্দে আবিরের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আবির চোখ খুলে তাকায় মায়ার দিকে।

” লুকিং বিউটিফুল
আবিরের মুখে এই কথাটা শুনে মায়া চোখ বড়বড় করে তাকায় আবিরের দিকে। আবির এই কথাটা বললো এটা মায়ার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
“কিসে পড়ো তুমি?
” অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
“গুডড। মায়া এন্টারপ্রাইজের মালিক তোমার বাবা?
” হুমম। মাথা নিচু করে বলে মায়া।
“তুমিই তাহলে আমার চাকরিটা দিয়েছো?
” না মানে
ভয়ে বলে মায়া।
“বড়লোক বাবার মেয়ে হয়ে এতো টর্চার সয্য করছো। বাবাকে কনভিন্স করে চাকরি দিলে। তোমার বাবা আমাকে তোমাদের কোম্পানির মালিক হওয়ার অফার দিয়েছে। এতো কেনো করছো আমার জন্য? মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে।
মায়া মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” ভালোবাসি তাই।
বুকের ভেতর কেমন করে ওঠে আবিরের। এই মেয়েটা এমন কেনো? চোখ নামিয়ে নেয় মায়ার থেকে।
“কতোদিন চেনো আমাকে? জানো আমি একজনকে খুব
” ভালোবাসেন। তানহাকে আপনি খুব ভালোবাসেন। নিজের থেকেও বেশি। আপনার প্রতিটা নিশ্বাসে তানহা মিশে আছে। এসব আমি জানি। পাঁচ বছর যাবত আপনাকে ভালোবেসে আসছি। আপনার হৃদয়ের সব খবর আমি রাখি। আমি আপনার থেকে ভালোবাসা চায় না। জাস্ট আপনার আশেপাশে থাকতে চায়। একটু এটেনশন চায় আপনার। আমার জন্য এই যে ড্রেস এনেছেন এটাই আমার ভালোবাসা। আর কিচ্ছু চায় না।
সরল ভাবে বলে মায়া। মুগ্ধ হয় আবির। এইটুকু একটা মেয়ে এতোটা ভালো বাসতে জানে?
“আমার জন্য খাবার রেডি করো
বলে আবির ওয়াশরুমে ঢুকে। মায়া তৃপ্তির হাসি হাসে।

🌹🌹

রাতের খাবার রান্না করছে অভি। তানহা গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে। অভির ফোনটা বেজে ওঠে। তানহা ভাবে কে না ফোন দিছে তাই দেখে না। পর পর কয়েকবার বাজার পরে তানহা উঁকি দিয়ে দেখে। স্কিনে শশুড় মশাই নামটা দেখে বুকের ভেতর ঢক করে ওঠে। কতোদিন বাবার সাথে কথা বলা হয় না। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করে। কানের কাছে ফোনটা ধরতেই অতি পরিচিত কন্ঠটা ভেসে ওঠে।
” অভি তানহাকে ফোনটা দাও কথা বলবো আমি। কিছুটা আকুতি ভরা কন্ঠে বলে তুহিন।
তানহার গলা ধরে আসছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
“অভি দাও না প্লিজ। আমি জানি তানহা আমার সাথে কথা বলতে চায় না তবুও আমি কথা বলতে চায়। জাস্ট ওর ভয়েস শুনবো। ও আমাকে ঝাড়ি মারবে আমি সেটাই শুনবো। আমার পাগলীটা কতোদিন আমায় বাবা বলে ডাকে না।
ধরে আসা গলায় বলে তুহিন ইসলাম।
” ববাবা। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে তানহা। তুহিন কিছুটা চমকে ওঠে।
“আই এম সরি মা। ভেরি সরি। আমি বুঝতে পারি নি তুমি এতোটা পছন্দ করতে আবিরকে। খুব সরি। প্লিজ মাপ করে দাও।
” ইটস ওকে বাবা। আমি আর রেগে নেই।
হাসি ফুটে তুহিনের মুখে। প্রাণ ভরে কথা বলে দুজনে। কতো কথা জমে আছে।
“আমি তোমার ওপর আর কখনো কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবো না। তোমাকে আর কোনো কিছুতেই জোর করা হবে না। তুমি অভির সাথে থাকতে না চাইলে আমি তোমায় নিয়ে আসবো
” আমি থাকতে চায় না। আমি পড়াশোনা করতে চায় বড় হতে চাই।
তখনই অভি এসে ফোনটা ছো মেরে নিয়ে যায়। তানহা চমকে ওঠে। আছাড় দিয়ে ফোনটা গুড়োগুড়ো করে দেয়। ভয়ে গুটিয়ে যায় তানহা।।
“তুমি কোথাও যাবে না। শুধু আমার কাছে থাকবে।
তানহার পাশে বসে তানহার দুই কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বলে অভি।
” বিয়েটা ছেলে খেলা নয়। আমি তোমাকে ছাড়বো না। ভালো না লাগলেও সারাজীবন আমার সামনে থাকতে হবে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অভি।
তানহা মাথা নিচু করে আছে। ভেতরে ভেতরে ভীষণ রেগে যাচ্ছে। কিছু বললেই ধমক খেতে হবে তাই বলছে না।
তানহার মাথাটা অভি বুকের ওপর রাখে।
“খুব কি কষ্টে আছো? থাকো না আমার কাছে। তুমি চাইলে চাঁদটাও এনে দেবো।
” ওরে ঢপ বাজ। আরো যে কতো ঢং দেখবো কে জানে? তোমার মতো বদের হাড্ডি করলার সাথে আমি একদম থাকবো না৷ ইটস মাই ফাইনাল ডিসিশন।
মনে মনে বলে তানহা।
“ওই বউ। যেয়ো না প্লিজ
” আপনার গা থেকে ঘামের গন্ধ আসছে
নাক মুখ কুঁচকে বলে তানহা। অভি দুরে সরে যায়।
“মাএ রান্না শেষ করলাম তো তাই।
তানহা ছাড়া পেয়ে বউয়ে মুখ গুঁজে নেয় যাতে অভি চলে যায়। একদম পড়তে ইচ্ছে করছে না তবুও অভির থেকে পালানোর জন্য এই পদ্ধতি।
অভি এক পলক তাকিয়ে ওয়াশরুমে যায়। লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে টাওজার আর চিকন ফিতার স্যান্ডো গেঞ্জি পড়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়।

তানহা ততোখনে বেলকনিতে চলে গেছে। এই বেলকনিটা তানহার খুব পছন্দের। একদম মেইন রোডের পাশে বাসা হওয়াতে বেলকনি থেকে স্পষ্ট পিচ ঢালাই রাস্তাটা দেখা যায়। সারাক্ষণ সো সো করে গাড়ি চলতে থাকে। রাস্তার পাশেই ছোট একটা নদী। নদীতে পানি খুবই কম কিন্তু চারপাশে ঘাস কাশফুল দিয়ে বোঝাই। বৃষ্টি থামার পরে দারুণ লাগে।
অভি তানহার পাশে এসে দাঁড়ায়।
” খাবে না?
“কখন বললাম খাবো না? তেড়া ভাবে বলে তানহা। এমনিতেই ভীষণ রেগে আছে অভির ওপর।
” খাবে তো চলো।
“আমার যখন ইচ্ছে খাবো।
” তা তোমার কখন ইচ্ছে খাওয়ার
“আপনাকে কেনো বলবো?
” লিসেন ইডিয়েট তোমাকে জোর করে রাখছি মানে কিন্তু এটা না তোমার যখন যা ইচ্ছে হবে করবে আর আমি কিছুই বলবো না। তুমি এখানে থাকবে। আমি যা বলবোতাই করতে হবে তোমায়। নাহলে
“নাহলে কি? ভ্রু কুচকে বলে তানহা।
অভি বাঁকা হেসে তানহার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলে
” বিয়েটা পরে হবে আগে
তানহা ঠোঁট কামড়ে অভির দিকে তাকায়। অভি থেমে যায়।
“এমন কেন আপনি? কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তানহা।
তানহার এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলে
” আমি এমনই। আর তোমাকেও এই আমার সাথেই থাকতে হবে। ফুলবল টিম বানাতে হবে। আমি আবার মেসির ভক্ত। তাই ভাবছি ছয়টার নাম মেসি রাখবো আর ছয়টার নাম নেইমার। চলবে
তানহা অভিকে ধাক্কা মেরে বলে।
“আপনার মতো বদের হাড্ডি করলার সাথে তো আমি থা
অভি তানহার ঠোঁটে আঙুল দেয়।
” ইসসসসস প্রথমবার তাই কিছু বললাম না। নেক্সট টাইম থাকবো না বললে পা কেটে দেবো। ক্লিয়ার?
তানহা ঢোক গিলে।
এতো দেখছি আবার গুন্ডাও। এই ছেলের যে আরও কতো রুপ আছে কে জানে? আস্ত এক গন্ডারের পাল্লায় ফেসে গেছিস তুই তানহা। এবার তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। এই লোকটা তোর হার্ট অ্যাটাক করিয়েই ছাড়বে

চলবে

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ২৩
#Tanisha Sultana

ইলিশ মাছ দিয়ে খুব তৃপ্তি করে ভাত খাচ্ছে তানহা। করলা ভাজি দিয়ে খাচ্ছে অভি।
“তাকিয়ে আছো দেখো মনে হয় জীবনে মেয়ে চোখ দেখি নি।
ভেংচি কেটে মনে মনে বলে তানহা।
” এতো কাঁটাওয়ালা মাছ কি করে খাচ্ছো? ভাত মুখ পুরে বলে অভি।
“হাত দিয়ে মাছ তুলে কাটা বেছে মুখ দিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছি। বিরক্তি নিয়ে বলে তানহা।
” ইডিয়েট
কিছুখন চুপচাপ খেয়ে অভি বলে
“কেউ কাটা বেছে দিলে আমিও খাইতাম। বাচ্চাদের মতো ফেস করে বলে অভি। তানহা এদিক সেদিক তাকায়।
” আশেপাশে কি দেখছো? ভ্রু কুচকে বলে অভি।
“কেউ বলতে ঠিক কাকে বোঝাতে চাচ্ছেন সেটা বোঝার চেষ্টা করছি।
” তোমাকে বলছি। দাও
“বয়েই গেছে।
“দিবা না?
” কখনোই না
“আমার না খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে। ঠোঁট কামড়ে বলে অভি। তানহা একটা ঢোক গিলে বলে
” দিচ্ছি
তানহা নিজের পাতে মাছের টুকরো নিয়ে কাটা বেঁছে অভির পাতে দেয়। অভি গালে হাত দিয়ে দেখছে। তানহার অনইজি লাগছে।
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? নরেচরে বসে বলে তানহা।
” সামনে এরকম হট হট বিউটি বসে থাকলে চোখ তো তার দিকেই থাকবে। বাঁকা হেসে বলে অভি। তানহা লজ্জা পায়।
“অসব্ভ্য
মনে মনে বলে নিজের দিকে তাকায় তানহা। গায়ে ওড়না নেই। কখন পড়ে গেছে এটা জানা নেই। চোখ বড়বড় করে ফেলে তানহা।এদিক ওদিক চোখ ঘোড়ায়। উঠে যেতে নিলে অভি হাত ধরে ফেলে
” এতোখন তো ছিলে
তাছাড়া আমি তোমার অর্ধেক স্বামী। মানে হাফ হাজবেন। আমরা আমরাই তো নো পবলেম
ঠোঁট চিপে হেসে বলে অভি। কেনো জানি তানহার খুব লজ্জা লাগছে।
“এতো লজ্জার কিছু নেই। সবই আমার দেখা।
তানহা তাকাই অভির দিকে। অভির চোখে মুখে দুষ্টু হাসি।
” না বসলে কিন্তু আমি…. অভির কথা শেষ হওয়ার আগেই তানহা বসে পড়ে। নার্ভাস হয়ে আছে।
অভি মাছ খায়। কোনো কমেন্ট করে না।
“তুমি খাও খালি আমাকেই খাওয়াবে না কি?
নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বলে অভি। তানহা কোনোরকমে খাওয়াটা শেষ করে। রান্নাটা অভি ভালোই করে।

খাওয়া শেষে তানহা পড়ার টেবিলে পড়তে বসে। অভি বেলকনিতে বসে ফোনে গেমস খেলছে। প্রথমে রুমেই বসেছিলো কিন্তু তানহার মাইকের মতো করে চেচিয়ে পড়ার ধাচ দেখে বেলকনিতে এসেছে। তানহার জোড়ে জোরে পড়ার স্বভাব। দুই ঘন্টা পড়ালেখার পরে তানহার প্রচন্ড ঘুম পায়। এটাই সুযোগ অভিও রুমে নেই। তাড়াতাড়ি অন্য রুমে গিয়ে দরজা দিতে হবে। বই খাতা গুছিয়ে রেখে আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে দম নেয় তানহা। আল্লাহ বাঁচাইছে। আজ শান্তিতে ঘুমবো। ওই করলার সাথে ঘুমতে হবে না।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

অভি রুমে এসে দেখে তানহা নেই। বুঝে যায় তানহা অন্য রুমে গিয়ে ঘুমিয়েছে।
“আজ তোমার খবর আছে স্টুপিট।

মাঝরাতে নিজেকে বন্দি অনুভব করে তানহা নরতে যায়। পারে না। টেনেটুনে চোখ খুলে কারো উন্মুক্ত বুকের লোম দেখে ভরকে যায় তানহা।
” এই খাটাশটা এখানে আসলো কিভাবে? আর খালি গায়ে কেনো?
নরেচরে ওঠে তানহা। অভির বাধন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করে।
“অনেক জ্বালিয়েছো এতোখন এখন একটু ঘুমতে দাও প্লিজ সোনা। ঘুমঘুম কন্ঠে বলে অভি চোখ বন্ধ করে আরও শক্ত করে তানহাকে জড়িয়ে। তানহা কিছুই বুঝতে পারছে না। বলছে টা কি অভি?
” আআআমি আপনাকে জ্বালিয়েছি মানে?
ভয় জড়ানো কন্ঠে থেমে থেমে বলে তানহা। অভি তানহার ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে ঘুমায়।
“ওইই বলেন না। আকুল হয়ে বলে তানহা।
” ভালোবাসলে আর এখনই ভুলে গেলে? এক নজর তানহার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে বলে অভি।
তানহার এখন কান্না পাচ্ছে। তাহলে কি অভি তানহার ঘুমানোর সুযোগ নিয়েছে? অভি কি এতোটাই খারাপ? তানহার ঘুম তো খুব ভাড়ি না। গভীর ঘুম থাকলেও কেউ ডাকলে বা ছুঁলে তানহার ঘুম ভেঙে যায়। তাহলে আজ কি হয়েছিলো?

তানহা জোরে অভিকে ধাক্কা মারে। কিছুটা দুরে সরে যায় অভি। ঘুম জড়ানো চোখেই উঠে বসে। তানহাও বসে।
“আআপনি কি করেছেন আমার সাথে? রাগী কন্ঠে বলে তানহা।
অভি তানহাকে ঘুরিয়ে তানহার ঘাড়ে মাথা রাখে।
” যা করার তুমি করেছো আমি কিচ্ছু করি নি। আই সোয়ার
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে অভি। তানহা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় অভিকে।
“আআআমি করেছি? অবিশ্বাসের সুরে বলে তানহা।
” হুমমম।
কেনো করলে এমনটা? এখন আমি মুখ দেখাবো কি করে? আমার তো বিয়েও হবে না। কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে অভি।
তানহা ভরকে যায়। মনের মধ্যে ঝড় উঠেছে। এদিক সেদিক চোখ ঘুরাচ্ছে।
“আআআমি
” কি আমি আমি করছো?
“আপনি মিথ্যে বলছেন। জোর গলায় বলে তানহা।
” কি মিথ্যে বলছি? ভ্রু কুচকে বলে অভি।
“আমাদের মধ্যে কিছুই হয় নি। এদিকে সেদিন চোখ ঘুরিয়ে বলে তানহা।
” কি হওয়ার কথা কিছো?
তানহার এবার খুব রাগ হয়।
“দেখুন
আঙুল তুলে বলে।
” দেখাও। তানহার দিকে একটু ঝুঁকে বলে অভি।
তানহা আঙুল নামিয়ে নেয়।
“অসব্ভ্য লোক
” তোমার জন্য ই হয়েছি
তানহা রেগে গাল ফুলায়
রাতটা কি জেগে জেগে পাড় করবো না কি? না কি আবার ভালোবাসতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছে হলে আমার আপত্তি নেই। দায়সারা ভাব নিয়ে বলে অভি।
তানহা অসহায় ফেস করে তাকায় অভির দিকে। অভি চুপ করে যায়।
“আমি কি এবার ঘুমাবো? বিছানার দিকে ইশারা করে বলে অভি। তানহা নাক ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। অভি ধপ করে শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে বলে
” একটু ভালোবাসা যায় না তানহা?
অভির এরকম কথা শুনে বুকের ভেতর ধক করে ওঠে তানহার। কি বলবে? কেনো জানি চট করে “না” বলে দিতে পারছে না তানহা। কোথাও একটা বাঁধছে। আজকাল তানহার মনে হয় তানহার মনে অভির জন্য একটা অনুভুতি আছে। যেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে না।

অভি তানহাকে বসে থাকতে দেখে টান দিয়ে শুয়িয়ে দেয়। তানহার পেটের ওপর আলতো করে হাতটা রাখে।
“ঘুমাও বউ। আমাদের মধ্যে কিছুই হয় নি। জাস্ট মজা করে বলেছি।
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে অভি। তানহা মনে মনে এটা শোনারই অপেক্ষা করছিলো। অভির দিকে তাকিয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে অভি ঘুমিয়েছে না কি। অভির নিশ্বাস ভারি হওয়াতে তানহা বুঝে যায় করলাটা ঘুমিয়েছে। ঠোঁট মেলে প্রশান্তির হাসি হাসে তানহা। অভির হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে অভির দিকে পেছন ফিরে চোখ বন্ধ করে তানহা।

“আপনার সাথে সংসার করতে পারবো না আমি। আমাকে আমার ফিউচার ব্রাইট করতে হবে। আবিরের মতো আমাকেও মস্ত বড় চাকরি করতে হবে। আমার এখন পুরো মনোযোগটা পড়াশোনার ওপর দিতে হবে। হ্মমা করে দেবেন আমায়। সুযোগ পেলেই আমি চলে যাবো।
মনে মনে বলে তানহা।

__

সকাল বেলা তানহার কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অভি। পেটের ওপর বালিশ চেপে ঠোঁট কামড়ে কাঁদছে। লাফ দিয়ে ওঠে অভি।
“তানহা কি হয়েছে? বিচলিত হয়ে বলে অভি।
” ককিছু না। ঠোঁট চিপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে তানহা।
“স্টুপিট, আমি বুঝতে পারছি তোমার কিছু হয়েছে। কি হয়েছে? পেট ব্যাথা করছে?
তানহা মাথা নারে।
” ফুডপয়জিন হয়েছে। ঔষধ দিচ্ছি। এতে কাঁদতে হয়? ইডিয়েট একটা। আমাকে ডাকলেই পারতে।
অভি উঠে দাঁড়ায়।
“ফুডপয়জিন না। তানহা হেঁচকি তুলে বলে।
” তো? ভ্রু কুচকে বলে অভি।
তানহা উওর দেয় না।
“পিরিয়ড? অভি জানতে চায়।
” হুমম। অস্পষ্ঠ স্বরে বলে তানহা।
“কান্না করো না। আমি আসছি
বলে তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়ে শার্ট নিয়ে অভি বেড়িয়ে যায়। তানহার স্বভাব এটাই। একটু কিছু হলে কেঁদে ভাসিয়ে দেয়।
তানহা আস্তে আস্তে উঠে বিছানা চাদরটা ভিজিয়ে রাখে। ফ্রেশ হয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে যায়। কিচেনে গিয়ে গরম পানি করে। তখন অভি আসে।
” তুমি এখানে কেনো?
তানহা কিছু বলে না। আসলে ওর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আলসি লাগছে। অভি হাত ধরে
“রুমে চলে। তোমার যা লাগবে আমাকে বলবা।
বলে তানহাকে টেনে রুমে আনে। বিছানায় বসিয়ে পরোটা আর ডিমভাজি কিনে এনেছিলো সেগুলো প্লেটে সার্ভ করে।
পরোটা ছিড়ে তাতে ডিম দিয়ে তানহার মুখের সামনে ধরে।
” খাও
তানহা অভির থেকে খাবারটা নিয়ে হাত দিয়ে নিজে নিজে খেতে থাকে। অভির মাথা গরম হয়ে যায়। একটু বেশিই তেড়া এই মেয়েটা।
“ইডিয়েট একটা
বিরবির করে বলে অভি।
খাওয়া শেষ হতেই অভি একটা পেইনকিলার তানহার হাত ধরিয়ে দেয়। তানহা ঔষধটা খেয়ে নেয়।
” আপনি খাবেন না?
“হুমম
অভি মাথা চেপে ধরে বলে।
” হুমম কি?
“খাবো
” তো খান। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো

অভি তানহার দিকে এক নজর তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তানহা বই নিয়ে বসে।
“অভিকে একটু অন্য রকম লাগলো। কিছু হয়েছে কি?
বই খুলে ভাবতে থাকে তানহা।

চলবে।