#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৪০
#Tanisha Sultana
এক ঘন্টা যাবত অভি ডাইভ করেই যাচ্ছে আর তানহা বারবার জিজ্ঞেস করছে “আমরা কোথায় যাচ্ছি? ” অভি বলছে গেলেই দেখতে পাবে।
ভীষণ বিরক্ত লাগছে তানহার। একটু বললে কি হয়? কোথায় যাচ্ছি এটা জানা থাকলে রাস্তা ছোট মনে হয়। কিন্তু সারপ্রাইজের রাস্তা দীর্ঘ হয়।
তানহা জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখছে। অভি আড়চোখে তাকায় তানহার দিকে। তানহা যে রেগে যাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারে অভি।
“তানহা
আস্তে করে ডাকে অভি৷ তানহা কথা বলে না। আসলে তানহা শুনতেই পায় নি। ও তো বাইরের পরিবেশ দেখতে ব্যস্ত।
” তানহা আসলে আমি নিজেই জানি না আমি কোথায় যাচ্ছি। বলতে পারো লংডাইভে যাচ্ছি।
তানহার হাতের ওপর হাত রেখে বলে অভি। তানহা ফিক করে হেসে দেয়।
অভিও মুচকি হাসে।
“এটা আগে বললেই পারতেন। অভির আঙুলের ভাজে আঙুল দিয়ে বলে তানহা।
” যদি তুমি বলতে আমি যাবো না তাই।
অভির চোখের দিকে তাকায় তানহা। কি অদ্ভুত মায়া দিয়ে গড়া ছেলেটা। কতো পবিত্র। মনের মধ্যে কোনো প্যাচ নেই।
“তানহা একটা কথা বলবো? যদি তুমি কিছু মনে না করো। বা রেগে না যাও।
” হুমমম
“তোমার মন খারাপ হয়ে যাবে। তবুও তোমাকে জানানো দরকার।
” বলুন না
“আবির তোমার জন্য এতোটা পাগল কেনো ছিলো জানো? কারণ ও মনে করতো তুমি হাত ছাড়া হয়ে গেলে ওরা পথে বসবে তাই। ওর মধ্যে তোমার জন্য
” অভি থাক না
অভির কথার মাঝেই বলে ওঠে তানহা। অভি চুপ করে যায়। রাস্তার পাশে গাড়ি থামায়।
তানহা চোখ বন্ধ করে আছে।
“আর মাএ তিনদিন। তিন দিন পর দেখা হবে আমাদের।
” তিন দিন পরে কেনে?
“আজ খুলনা যেতে হবে। ফিরবো পৌরসু রাতে। তারপর পরের দিন বিয়ে তো দেখা হবে না।
তানহা মুখটা কালো করে ফেলে।
অভি তানহার ছিট বেল্ট খুলে তার হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসে।
” খুব কি দরকার ছিলো আবার বিয়ে করার? একবার তো বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু তুমি তো তুমিই কবুল না বললে বিয়ে হয় না। তো বলে নিতাম কবুল। ঝামেলা বাঁধিয়ে দিলো। এবার থাকো একা একা।
কিছুটা রেগে বলে অভি।
তানহা মুখটা গোমড়া করে অভির চাপ দাঁড়িতে হাত বুলাচ্ছে।
অভিও চুপ করে থাকে তানহার মুখের দিকে তাকিয়ে।
“বলছিলাম কি
কাচুমাচু হয়ে বলে তানহা।
” কি বলছিলে? এই বিয়ের পরে আবার বলবা এইভাবেও বিয়ে হয় না। অন্য ভাবে বিয়ে করতে হবে। তাই তো?
তানহা যা বলতে যাচ্ছিলো তা আর বলে না।
অভি তানহার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তানহা চোখ বন্ধ করে ফেলে।
“ভালোবাসি
কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে অভি। তানহা কিছু বলে না। ওর শ্বাস আটকে আসছে। কথা বের হচ্ছে না।
অভি তানহার দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে
” কি হয়েছে?
তানহা মাথা ঝাঁকায় মানে কিছু না
“শিওর
” হুমম
“তোমার কোনো পবলেম হলে বলতে পারো। আমি তোমার হাজবেন্ড। সব কিছু জানার অধিকার আমার আছে।
” কোনো পবলেম তো নেই।
মাথা নিচু করে বলে তানহা।
“না থাকাই ভালো।
খুব মিস করবো তোমায়।
” আমিও
বেশ খানিকখন নিরবতা পালন করে দুজন।
“নিজের জায়গায় গিয়ে বসো।
তানহা ভদ্র মেয়ের মতো নিজের জায়গায় গিয়ে বসে।
অভি আবার গাড়ি চালানো শুরু করে।
একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামায়। দুজনে সেখান থেকে লাঞ্চ করে শপিং মলে যায়। সেখানে অনিক খালামনি মা সবাই ছিলো। তানহার বিয়ের শাড়ি গহনা সব কিছু কিনে। অভি এক পাশে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো। তানহা আড়চোখে তাকিয়েছে বারবার অভির দিকে।
সবাই গহনা কেনায় ব্যস্ত তখন পা টিপে টিপে উঠে তানহা অভির কাছে চলে যায়। অভি ফোন দেখছিলো। তানহা ছো মেরে ফোনটা নিয়ে যায়। মেসেঞ্জারে অভি মনা নামের একটা মেয়ের সাথে চ্যাটিং করছিলো। তানহা কোমরে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় অভির দিকে। অভি একটা ঢোক গিলে
” নিকনিক করা হচ্ছে তাই তো?
“নিকনিক কি? ইনোসেন্ট ফেস করে বলে অভি।
” ওলে আমার টুনুমুনু বাবাটা রে তুমি নিকনিক বুঝো না?
অভির গাল টেনে বলে তানহা।
“ওওও আমার বেষ্টফ্রেন্ড।
” তো আমি কি বলছি না কি ও আপনার গার্লফ্রেন্ড?
“না মানে তুমি তো
” ঠাকুর ঘরে কে রে
আমি কলা খায় নি”
“আরে তুমি তো
” কোনো ফোন থাকবে না আপনার কাছে। চ্যাটিং করা আমি বের করবো।
তখনই টুন করে একটা শব্দ হয় মেসেজ আসার।। অভি মাথায় হাত দেয়। তানহা মনা নামের মেয়েটিকে মেসেন্জারে ফোন দেয়। সাথে সাথে কল রিসিভ করে। তানহা মেয়েটিকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই শুরু করে
“হেলো কে বলছেন? নাম কি আপনার? যেই হোন আমার কি? আমার জামাইরে ফোন দিবেন না। অভি আমার জামাই। আট বছর হয়ে গেছে আমাদের বিয়ের। চারটা বেবি হয়েছে আমাদের। লজ্জা করে না বাবার বাবার বয়সী একটা লোকের সাথে নিকনিক করতে?
গট করে ফোন কেটে দেয় তানহা। রাগে মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। অভি মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আট বছরে চারটা বেবির বাবা। ভাবতেই শরীরের লোম জাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রেজটিস বলে আর কিছু রইলো না।
” শুনেন আমার সিমটা আপনি নিয়ে যাবেন। আর একটা বাটন ফোন।
“মানে কি?
” আর একটা কথা বললে বাটন ফোনও দেবো না ফোনহীন থাকবেন আপনি।
হনহনিয়ে চলে যায় তানহা।
“এটাকে বউ বলে?
কাল তানহার গায়ে হলুদ৷ ঊনত্রিশ ঘন্টা যাবত তানহা অভিকে ছাড়া আছে। এই ঊনত্রিশ ঘন্টায় চল্লিশবার কথা হয়েছে দুজনের। বেলকনিতে বসে অভির কথা ভাবছে তানহা। আর তর সইছে না। ইসসস কখন অভি আসবে আর নিয়ে যাবে তানহাকে। একটু আগেই কথা হয়েছে অভির সাথে। ফোনটা নিয়ে গেলে ভিডিও কলে কথা বলতে পারতো। নিজের বোকামির জন্য নিজেই কপাল চাপকাচ্ছে তানহা।
বাড়ির সবার সাথে খুব কম দেখা হয় তানহার। কেনোনা ও ঘর থেকে বের হয় না।
রাতে শুরু সবার সাথে একসাথে বসে খায় তাও বাবার জোরাজুরিতে।
হঠাৎ তানহার চোখ যায় রাস্তার দিকে। রকি নামের ছেলেটা বাইকের ওপর শুয়ে ঠিক তানহার দিকে তাকিয়ে আছে। নরেচরে বসে তানহা। এই ছেলেটা এখানে কেনো?
তানহা তাকাতেই ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হাত নারায়। ভ্রু কুচকে ফেলে তানহা। এই ছেলে তো চেনেও না ওকে।
রুমে চলে আসে তানহা। একটু বই নিয়ে বসে। প্রায় বিকেল হয়ে গেছে।
নিশি আসে। তানহা নিশিকে দেখে ভীষণ খুশি হয়। অভির কথা গল্প করার জন্য একটা মানুষ প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু বাড়িতে তে এমন কেউ নেই।
” তুই?
তানহা এক গাল হেসে বলে।
“ঘুরতে যাবো তাই তোকে নিতে আসলাম।
” আমাকে?
‘জী ম্যাডাম। আপনার তিনি ফোন করেছিলো৷ বললো তার একমাত্র বউ না কি একা একা বোরিং হচ্ছে তাই আমি আর আশিক যেনো তাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাই তার মন ভালো করার জন্য।
খুশিতে তানহার চোখে পানি চলে আসে। এতোটা ভালোবাসে অভি। ওর ভালো লাগা খারাপ লাগা সব বুঝতে পারে। সব দিকে খেয়াল থাকে।
“এই যে মিসেস অভি তারাতাড়ি রেডি হন আমার তিনি দাঁড়িয়ে আছে।
তানহা এক গাল হেসে ড্রেস পাল্টে আসে।
মা বাবা কাদের দাওয়াত দেবে? কে কখন আসবে? কি কি আনতে হবে? এসব নিয়ে কথা বলছিলে। আবির মায়া তাতানকে নিয়ে গল্প করছিলো।
“বাবা আমি বাইরে যাচ্ছি একটু।
তানহা আর নিশি তানহার বাবার সামনে গিয়ে বলে।
“সন্ধার আগে ফিরে এসো। আর নিশি বসো। কিছু খেয়ে তারপর ঘুরতে যাও।
” অন্য দিন খাবো আংকেল।
তানহার বাবাও একটু মুচকি হেসে যেতে বলে।
“এই এই দুপুর বেলায় কেউ ঘুরতে বের হয় নাই। যেতে হবে না।
আবির ফট করে বলে ওঠে।সবাই আবিরের দিকে তাকায়। তানহা বেশ রেগে যায়৷ সব সময় এড়িয়ে চলে তারপরও সব বিষয়ে নাক গলাতেই হবে।
” আমি কি করতো না করবো তা ডিসাইড করার জন্য বাবা আছে আমার হাজবেন্ড আছে। কোনো থার্ড পারসনের নাক না গলানোই ভালো
বলে তানহা চলে যায়।
আবির অপমানিত বোধ করে।
চলবে
#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৪১
#Tanisha Sultana
পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের আলো নদীর পানিতে একদম স্বর্নের মতো লাগছে। পানিতে সূর্যের আলো চিকচিক করছে। শ্বাস নেওয়ার মতো সতেজ হওয়া বইছে। নদীর পানি বাতাসে দুলছে। চারপাশে অনেক অনেক কাপল হাত ধরে হাঁটছে। নিশি আর আশিকও হাত ধরে হাঁটছে। তানহা জিন্সটা একটু উঁচু করে পানিতে পা ভেজায়৷ চোখ বন্ধ করে অভিকে অনুভব করে।
“আমি প্রতি সেকেন্ডে তোমার শূন্যতা অনুভব করি অভি। আপনি কখনো আমার থেকে আলাদা হয়ে গেলে আমি মরেই যাবো। আপনাতেই পূর্ণ আমি।
চটপটি খেয়ে বাসায় চলে আসে তানহা।
এরই মধ্যে পুরো বাড়িটা প্রায় সাজানো হয়ে গেছে। তানহার দুটো মামা৷ একজন অভিদের বাড়িতে আর একজন তানহাদের বাড়িতে এসেছে। নানা নানু তানহাদের বাড়িতে এসেছে৷ বাবার আপন কোনো ভাই নেই। এক ভাই এক বোন। চাচতো ভাই আছে দুটো তারা এসেছে। তানহার মামাতো বোন দুটো আর চাচাতো বোন আছে একটা। মোটমাট তিনজন। একজন নেহা তানহার সেম ইয়ার। বৃষ্টি অনার্স ফাস্ট ইয়ার আর সৃষ্টি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।
তানহা রুমে এসে বসতেই কোথা থেকে ওরা দৌড়ে চলে আসে। তানহা প্রথমে ভয় পেয়ে যায় পরে ঠিক হয়ে যায়।
” তারপর আপু জিজু দেখতে কেমন? বৃষ্টি জিজ্ঞেস করে।
“দেখতে ভালো না রে। তানহা বলে।
ওদের হাসি মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়।
” ভালো না। সৃষ্টি বলে।
“না রে। তোদের ক্রাশ খাওয়ার মতো না। আফসোসের সুরে বলে তানহা। আসলে ওদের স্বভাব সবাইকে দেখে ক্রাশ খাওয়া। তাই তানহা অভিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
” সুন্দর না তাহলে তুই বিয়ে কেনো করছিস? নেহা বলে।
“যাতে তোরা ক্রাশ খেতে না পারিস।
রাত আটটা পর্যন্ত ওদের সাথে আড্ডা দেয় তানহা। ভুলেই গেছিলো অভি নামের কেউ একজন ওর সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছে।
তানহার গায়ে হলুদের তত্ব দেখবে বলে ওরা চলে যায়। তানহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দরজাটা আটকে দেয়। এবার একটু রেস্ট নেবে। এরা যে পরিমাণ কথা বলে তাতে তানহার মাথার পোকা গুলো নরে গেছে।
ফোনটা সাইলেন্ড মুডে খাটের এক কোনায় পরে আছে। তানহা হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করলেই অভির মুখটা ভেসে ওঠে। লাফ দিয়ে উঠে বসে তানহা। খুঁজে ফোনটা হাতে নিতেই তানহার ঘামতে থাকে। দুইশ চার বার মিস কল। এতোবার অভি ফোন দিছে। নিশ্চয় ভিষণ রেগে আছে।
লাস্ট কল দুই মিনিট আগে। সাথে সাথে তানহা কল ব্যাক করে। কিন্তু অভির ফোনটা সুইচঅফ বলছে।
হয়ত চার্জ শেষ।
” আল্লাহ বাঁচাও
বলে আবার শুয়ে পড়ে তানহা। চোখ বন্ধ করতেই ধাপ ধাপ দরজা ধাক্কানোর শব্দ আসে। এবার ভীষণ বিরক্ত লাগছে। বিরক্ত নিয়েই দরজা খোলে। হুরমুর করে তিনজনই ঢুকে পরে।
“তোরা এখানে?
” আমরা তো তোর সাথেই ঘুমবো
বলেই ওরা শুয়ে পরে।
“তোকে খেতে ডাকছে। তোর বাবা বসে আছে। বলে নেহা।
তানহা শুধু ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে। এরা এখানে থাকবে মানে কি? এরা থকালে তো অভির সাথে কথাও বলা হবে না। ধুর
কেনো যে বিয়ে করার শখ জাগলো? বিয়ে তো হয়েই গেছে আমাদের। জামাই থাকতেও সিঙ্গেল সিঙ্গেল ফিল।
তানহা ধাপধপ পা ফেলে চলে যায় খেতে।
দুজনের জায়গায় চারজন শুয়েছে। জায়গা হচ্ছে না। তারওপর ভীষণ গরম। ফ্যানের বাতাসে কাজ হচ্ছে না। আবার অভিও ফোন দিচ্ছে না ধরছেও না। নানান ধরনের বিরক্তিতে তানহার ঘুম আসছে না। ওরা দিব্যি ঘুমচ্ছে।
জোর পূর্বক চোখ বন্ধ করে থাকে তানহা।
আজ তানহার গায়ে হলুদ। সকাল বেলা শাশুড়ী মায়ের কাছে ফোন দিয়ে জেনেছে অভি এসেছে কি না? তিনি জানিয়েছে অভি রওনা দিয়েছে এখনো পৌছায় নি।
তানহার ফোন অভি রিসিভ করছে না৷ ভীষণ রেগে আছে।
পার্লার থেকে বিউটিশেয়ান আনা হয়েছে। তানহাকে সাজিয়ে তারা বৃষ্টি সৃষ্টি আর নেহাকে সাজাচ্ছে। তানহা ফোনটা হাসে নিয়ে কয়েকটা সেলফি তুলে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে নিজেকে। কুচি ছাড়া হলুদ শাড়ি যার পার টকটকে লাল। কাঁচা ফুলের গহনা। মুখে ভারি মেকাপ। সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে।
” ইসস যদি অভি আমার এই রুপটা দেখতো। তানহা মনে মনে বলে।
তানহাদের বাড়ির সামনে উঠোন আছে বেশ সড়সড়। সেখানেই হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নেহা তারা দিচ্ছে তানহাকে যাওয়ার জন্য। তানহা শেষ একবার অভিকে ফোন দিয়ে চলে যায়।
অভিদের বাড়ি থেকে কতোগুলো মেয়ে এসেছে হলুদ দিতে। সবাই হলুদ শাড়ি পড়া। একে একে সবাই তানহাকে হলুদ ছোঁয়ায় তবে খুব সামান্য করে। তানহার মনের মধ্যে শান্তি নেই। অভি এমন কেনো? সব সময় ও যা বলবে সেটাই।
সবার হলুদ ছোঁয়ানো শেষ হলে ফ্যামেলি ফটো তুলে। বাবা মায়ের সাথে অনেক ছবি তুলে।
এরপর নাচ গান হবে। তানহার ওয়াশরুমের কথা বলে রুমে আসতে নেয়। বাড়ির ভেতরে পা রাখতেই সামনে এসে দাঁড়ায় আবির। তানহা একবার চোখ তুলে তাকায়।
“বাহহহ দারুণ লাগছে তোমায়।
” আমায় সব সময় দারুণ লাগে। আমার বর বলে।
মুচকি হেসে বলে তানহা চলে আসে। আবির থমথমে মুখ করে তাকিয়ে থাকে।
রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নেয়। এতো এতো মানুষের ভিরেও নিজেকে একা মনে হচ্ছিলো।
হঠাৎ তানহা পেটে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেয়ে চমকে ওঠে। চিৎকার করতে যাবে তার আগে একটা হাত মুখ চেপে ধরে। আর একটা হাত কোমরে।
“একদম শব্দ করবা না। দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলে অভি।
তানহার দুচোখ খুশিতে ভরে ওঠে।
” ইডিয়েট মন কোথায় থাকে? আমি দুরে গেলেই বেঁচে যাও তুমি তাই না?
ঠোঁটের ওপর হাত রেখেই বলে অভি।
তানহা হাত সরাতে ইশারা করে। অভি হাত সরিয়ে নেয়।
“আসলে বোনরা এসেছে ওদের
তানহার কথা শেষ হওয়ার আগেই অভি তানহার কোমর শক্ত করে আকড়ে ধরে।
” বলছিলাম না সব কিছুর আগে আমি। ওদের বলা যেতো না আমি পাঁচ মিনিট কথা বলে আসি? বা আমায় বলা যেতো না আমি পরে কথা বলছি?
হুংকার দিয়ে বলে অভি৷ তানহা কাচুমাচু হয়ে যায়। এই মুহুর্তে চুপ থাকাটাই বুদ্ধি মানের কাজ। তানহা নিচের দিকে তাকিয়ে ফ্লোর দেখছে। অভির দিকে তাকানোর সাহস নেই।
অভি চোখ বন্ধ করে রাগ কমানোর চেষ্টা করে। তারপর শক্ত করে তানহাকে জড়িয়ে ধরে।
“পাক্কা তিনদিন পরে দেখলাম তোমায়।
তানহা অভির বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে। এই জায়গাটাই তানহার নিরাপদ মনে হয়। এই জায়গাটায় সুখ খুঁজে পায়। অভির বুকের ধুকবুকানি কান পেতে শুনছে তানহা।
কোমরে ঠান্ডা অনুভব হয়। তানহা চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারে অভি হলুদ লাগাচ্ছে। তানহা অভির বুকে মাথা রেখে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। অভি তানহার সারা শরীরে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে।
” ককি করছেন? হকচকিয়ে বলে তানহা।
“ডোন্ট ডিস্টার্ব। এমনিতেই রেগে আছি এখন ডিস্টার্ব করলে মেরে ফেলবো।
” প্লিজ ছাড়ুন
“প্লিজ ডিস্টার্ব করো না। প্লিজ
তানহা হতাশার নিশ্বাস ফেলে চুপ করে যায়। সারাশরীরে হলুদ মাখানো শেষে অভি দুইহাতে হলুদ নিয়ে তানহার দুগালে লাগিয়ে দেয়।
লজ্জায় তানহা লাল হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে মাটিতে মিশে যেতে। চোখ খুলতেও পারছে না। অভির দিকে তাকাবে কি করে?
অভি তানহার মুখটা দেখে মিটমিটিয়ে হাসছে। লজ্জা পেলে মেয়েটাকে একদম টমেটোর মতো লাগে।
অভি তানহার গালের কাছে নিজের গালটা এগিয়ে ঘসা দেয়। অভির মুখের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে তানহা হালকা ব্যাথা পায়৷ তবুও চুপচাপ সয্য করে নেয়।
মদের মতো লাগছে তোমায়।
নেশালো কন্ঠে বলে অভি।
তানহা ভ্রু কুচকে তাকায়। অভি তানহার দুই গালে হাত দেয়।
” মদ খেলে যেমন নেশা হয়। আমারও তেমন নেশা হচ্ছে। ইচ্ছে করছে
তানহার ঠোঁটের দিকে এগোতে এগোতে বলে অভি। তানহার হার্ট লাফাচ্ছে।
“তানহা দরজা খোল
বৃষ্টির ডাকে সিটকে চোখ খুলে তানহা। অভি বিরক্ত হয়ে চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
” আরে এদের কি কোনো কাজ নেই? সারাক্ষণ আমার রোমাঞ্চের বারোটা বাজিয়ে দেয়।
তানহা অভির থেকে সরে আসে৷ নিজের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।
এবার এই অবস্থায় বাইরে বের হবো কিভাবে?
অভি তানহার দিকে কোমরে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।
“ওকে বলো তুমি পরে যাবে।
শান্ত গলায় বলে অভি।
” আআমি
থেমে থেমে বলে তানহা।
“যদি বলতে না পারো তো বলো না। কিন্তু আমি এখান থেকে যাচ্ছি না। করলার নুডলস রান্না করে আনবে খাবো দেন যাবো। সেই সকালে খেয়েছি আর খাওয়া হয় নি।
অভি খাটে খোল হয়ে বসে পরে। তানহা মাথায় হাত দেয়।
” লোকজন যদি জানে বিয়ের আগের দিন বর শশুড় বাড়ি চলে এসেছে তো সবাই হাসাহাসি করবে। আবার এতো লোকজনের মধ্যে কি করে করলার নুডলস রান্না করবে। কেউ হেলেপ করো
চলবে