#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৪৪
#Tanisha Sultana
অভি ছিটকে দুরে সরে যায়। বিছানা থেকে নিচে পরে যায়। রনিও নেমে শাড়ি খুলে ফেলে। অভি হা করে তাকিয়ে আছে। স্মৃতি হালিজা অনিক বিহান ওরা হাসতে হাসতে রুমে ঢুকে।
“তুই কি ভেবেছিস তানহাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবি? আল্লাহ একটুর জন্য বেঁচে গেছি। না হলে ও আজ আমার ইজ্জত নিয়ে নিতো।
নেকামীর কান্না করে বলে রনি।
অভি ভেবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে।
” আমার বউ কই?
সবার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে গম্ভীর সুরে বলে অভি।
“তোর বউকে
অনিক বলতে গিয়ে থেমে যায় অভির চোখ দেখে।
” মাএ দুই ঘন্টা রাত আছে৷ আর তোরা ফাজলামো শুরু করে দিছিস?
ধমক দিয়ে বলে অভি।
অভির ধমকে সবাই মোটামুটি ভয় পেয়ে যায়। সবাই আগে থেকেই অভিকে ভয় পায়।
“ভাই ধমক না দিলে একটা কথা বলতাম। লিপস্টিক মুছতে মুছতে বলে রনি। অভি দাঁত কটমট করে তাকায়।
” একটু LAFZ বা FOGE লাগিয়ে নে। না হলে ভাবি
রনির কথা শেষ হওয়ার আগেই অভি তেরে যেতে নেয় রনি গিয়ে ওদের পেছনে লুকায়।
“ভাই টাকা দে আমরা চলে যাচ্ছি।
অভি কোনো কথা না বলে দশ হাজার টানা বের করে দেয়। ওরা টাকা টা নিয়ে অভিকে অল দ্যা বেস্ট বলে চলে যায়।
অভি ওয়াশরুমে গিয়ে গোছল করে। সত্যিই যদি ঘামের গন্ধ থাকে। টাওয়াল গায়ে জড়িয়ে আরেকটা টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয় অভি। তানহা খাটে বসে অভির জন্য অপেক্ষা করছিলো। খট করে দরজা খুলে যাওয়ায় সেদিকে তাকায়।
সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয় তানহা।
” কোথায় ছিলে এতোখন?
অভি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে বলে।
“খালামনির রুমে।
ঘোমটা ফেলে দিয়ে বলে তানহা।
” আরে আরে ঘোমটা ফেললে কেনো? এটা আমি সরাবো।
অভি চিরুনি রেখে বলে।
“গরম। দেখেন না কারেন্ট নাই।
তানহা হাত দিয়ে বাতাস নিতে নিতে বলে।
অভি খাটে উঠতে গেলে তানহা বাঁধা দেয়
” আগে চেঞ্জ করে আসুন
অভি থ্রি কোয়াটার প্যান্ট নিয়ে চলে যায়।
“বেসরম
একটু পরেই অভি এসে তানহাকে আবার ঘোমটা দিয়ে দেয়।
” এবার আমি খুলবো।
“একই তো
” এক না
তানহার বিরক্ত হয়। একে তে প্রচন্ড গরম তারপর আবার ঘোমটা।
অভি আস্তে আস্তে তানহার ঘোমটা সরিয়ে দেয়। তানহা এবার লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে ফেলে।
“দেখুন খালাম্মার সাথে কিন্তু
রিনরিনিয়ে বলে তানহা।
অভি তানহাকে থামিয়ে বলে
” খালাম্মার সাথে কিন্তু কিছুই করি নি। জাস্ট গোমটা সরিয়েছি।
মিটমিট করে হেসে বলে অভি।
তানহার লজ্জা বেড়ে যায়।
“আমি চেঞ্জ করবো।
শাড়ির আচল মোচড়াতে মোচড়াতে বলে তানহা।
” হুমম শিওর
যাও
তানহা চট করে উঠে নীল একটা সুতি শাড়ি নিয়ে চেঞ্জ করতে যায়।
আচল ঠিক করতে করতে রুমে এসে দেখে অভি বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছড়াচ্ছে। তানহাকে দেখে মেকি হেসে বলে
“ওরা দিতে ভুলে গেছিলো।
তানহা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
অভিও তানহার পেছন পেছন যায়।
আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। চাঁদের চারপাশে মিটমিট করে জ্বলছে হাজার হাজার তারা। তানহা বেলকনির রেলিং এর ওপর হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
অভি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তানহাকে। তানহা হালকা কেঁপে ওঠে।
” প্লিজ রাগ করিয়েন না। আমার শরীর খারাপ। আই এম সরি।
অসহায় ফেস করে বলে তানহা মাথা নিচু করে।
অভি তানহাকে নিজের দিকে ঘোরায়। মুখের পরে থাকা ছোট চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়।
“কেনো মনে হলো আমি রাগ করবো?
শান্ত গলায় বলে অভি।
” যতবার আপনি……… ততোবারই তো রেগে গেছেন।
মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে বলে তানহা।
অভি তানহার মাথাটা নিজের বুকের ওপর রাখে।
“আমি রাগ করি নি। তুমি বুঝতে ভুল করছো। জাস্ট জানতে চেয়েছি।
তানহা কিছু বলে না। চুপচাপ অভির হার্ট বিট শুনতে থাকে।
” কান্না করলে না যে? ঠোঁট এলিয়ে জিজ্ঞেস করে অভি।
“বড় হয়ে গেছি। মানিয়ে নিতে শিখে গেছি। আপনার শূন্যতা আমাকে অনেকটা বদলে দিয়েছে।
বুকের পশম গুলোতে হাত বুলিয়ে বলে তানহা।
” মাঝে মাঝে কাছে আসার জন্য দুরে যেতে হয়।
“হুমমম
” তো সিঙ্গার সাহেব নিজের বউকে একটা গান শোনাবেন না?
মাথাটা উঁচু করে বলে তানহা।
“কেনো নয়
অভি দুটো মুরা আর গিটার নিয়ে আসে। একটাতে অভি বসে আটেকটাতে তানহা। তানহা অভির কাঁধে মাথা রেখে বসে।
“এ জীবনে যা রে চেয়েছি
আজ আমি তারে পেয়েছি
তুমি আমার সেই তুমি আমার
তোমাকে খুঁজে পেয়েছি
তুমি ছিলে না ছিলো না আশা
তোমায় পেয়ে আশা বেঁধেছে বাসা
(আর পারি না🥱)
গান শেষ হতেই তানহা বলে ওঠে
” এই না হলে আমার বর।
“এতো সুন্দর গান শোনালাম তো তোমার উচিত না আমাকে কিছু দেওয়া?
” কি দেবো?
অভি গিটারটা রেখে তানহাকে কোলে তুলে নেয়।
“আরে আরে করছেন কি? বললাম না
” ইসসসসস
অভি চুপ থাকতে বলে। তানহা ভয়ে ঢোক গিলে।
অভি তানহাকে খাটের মাঝ খানে বসিয়ে দেয়।
“ওয়েট
তানহার মুখের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে।
তানহা অভির কান্ডকারখানা দেখছে।
অভি আলমারি খুলে একটা বক্স বের করে। তানহার পাশে বসে বক্স খোলে।
” কি আছে এতে? উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে তানহা।
“দেখতেই পাবে
বক্স খুলে কোমরের বিছা বের করে। তানহা হা করে তাকিয়ে আছে। অভি তানহাকে কোলে বসিয়ে নেয়। তানহার কোমর থেকে কাপড় সরিয়ে অতি যত্ন সহকারে তানহার কোমরে বিছাটা পরিয়ে দেয়।
তানহা ঘনঘন পলক ফেলছে।
পড়ানো শেষে অভি তানহার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে।
” হহয়ে গেছে তো।
অভির বুকের দিকে তাকিয়ে বলে।
“আমার গিফট?
ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে অভি।
‘
” আআমি তো কিছু আনি নি? ইনোসেন্ট ফেস করে বলে তানহা।
“আনো নাই? তাহলে তোমার কাছে যা আছে তাই দাও।
” আমার কাছে তো শাড়ি গহনা ছাড়া কিছুই নেই।
“আছে তো
” কিহহহ
অভি তানহার দুগালে হাত দিয়ে তানহার ওষ্ঠদ্বয় নিজের দখলে নিয়ে নেয়।
তানহা এটা জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো। তানহা চোখ খিঁচে বন্ধ করে অভির হাত শক্ত করে ধরে।
চলবে
#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৪৫
#Tanisha Sultana
ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তানহার। অভি তানহাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমচ্ছে। হা করে আছে। তানহা হাত এগিয়ে মুখটা বন্ধ করে দেয়। পেটের ওপর থেকে হাত সরিয়ে খাট থেকে নেমে যায়। বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
রেলিংয়ের ওপর হাত রাখতেই চমকে ওঠে। একটা চিরকুট রাখা।
তানহা চিরকুট খুলে
“খুব চালাক তুমি। এতোদিন গিফট দিলাম আমি। এতো এতো প্রেমপত্র লিখলাম আর তুমি অভিকে বিয়ে করে নিলে। ইটস নট ফেয়ার বেবি। বিয়ের দিন তুমি কি করে জানলে গো? কেনো অন্য রুমে গেছিলে? কাজটা ঠিক করলে না?
তানহা বাঁকা হাসে।
বিয়ের দিন আগেই মন খচখচ করছিলো তাই সাজুগুজুর পরে মায়ের রুমে চলে গেছিলো।
ছিড়ে কুটিকুটি করে চিরকুটটা ছিঁড়ে ফেলে।
” আমার আর অভির সম্পর্কে কেউ ফাটল ধরাতে পারবে না।
মনে মনে বলে তানহা।
ভরের আলো ফুটতেই এলার্ম বেজে ওঠে। অভির সকালে রেকর্ডিং আছে তাই এলার্ম দিয়ে রেখেছিলো। চোখ খুলে পাশে তানহাকে দেখতে পায় না। ভ্রু কুচকে ফেলে।
আশেপাশে চোখ বুলায়।
“তানহা
একটু জোরে শব্দ করে ডাকে।
তানহা বেলকনিতে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো। অভির শব্দে হুরমুর করে উঠে। এক প্রকার দৌড়ে রুমে যায়।
” বলুন
“কোথায় ছিলে?
” বেলকনিতে
“আমার জন্য করলার জুস বানিয়ে দাও। রেকর্ডিং আছে।
অভি তোয়ালে নিয়ে বলে।
” করলার জুস
তানহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে।
তানহা করলা ব্লান্ডার করে জুস বানিয়ে খাবার টেবিলে রাখে। শাশুড়ী রান্না করছে। বাড়ির মেহমানরা যে যার মতো আছে।
অভি রুম থেকে আবার তানহা বলে ডাকে।
তানহা করলার জুসটা নিয়ে রুমে যায়। অভি সাদা শার্ট কালো জিন্স পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে।
“আপনার করলার জুস
তানহা জুসটা তানহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে।
” খাও
“কিহহহ
তানহা চমকে জোরে বলে ওঠে। অভি চিরুনি রেখে তানহার দিকে তাকায়।
” চিল্লাও কেন?
“আমি এটা খাবো মানে কি?
” সকাল বেলা করলার জুস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সো এবার তুমি অর্ধেক খাবে আর আমি বাকি টা
দুই হাত গুঁজে বলে অভি।
তানহা গ্লাসটা ড্রেসিং টেবিলের ওপর গ্লাসটা রেখে দৌড় দিতে নেয়। অভি হাত ধরে ফেলে।
“কোথাও যাওয়া হবে না বেবি খেতে হবে।
তানহা হাত মুচরামুচরি করছে। করলার জুস মুখে দেওয়া জাস্ট ইমপসিবল।
” দেখুন এটা খেলে আমি বাঁচবো না।
ভয় জড়ানো কন্ঠে বলে তানহা।
“কিছুই হবে না। জাস্ট চিল
খাও
অভি জোর করে ধরে তানহাকে এক ঢোক খাওয়ায়। তানহা উয়াক উয়াক করতে করতে ওয়াশরুমে চলে যায়। অভি মুচকি হেসে পুরো গ্লাসটা এক চুমুকে শেষ করে।
তানহা বমি করে মুখে পানি দিয়ে এসে খাটে বসে হাঁপাতে থাকে।
অভি তানহার সামনে দাঁড়িয়ে তানহার কপালে একটা চুমু দেয়। তানহা ধাক্কা দিয়ে অভিকে সরিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
” আসছি বউ। রাতে তোমার রাগ ভাঙাবো। এতোখন তুমি রেগে গাল ফুলিয়ে থাকো ওকে
বলে অভি চলে যায়।
তানহা দাঁত কটমট করে অভির চলে যাওয়া দেখে।
দুপুরের পার্লারে গিয়ে সেজে আসে তানহা স্মৃতি হালিজা। এখন তানহা স্টেজে বসে আছে। অভি এখনো আসে নি। তানহার এবার খুব টেনশন হচ্ছে। এতোখন লাগেনা কি?
আস্তে আস্তে উঠে রুমে চলে যায় তানহা সবার চোখের আড়ালে। অভিকে ফোন করবে। ফোন হাতে নিতেই দেখে অভি রুমে ঢুকছে। তানহা দরজার পেছনে লুকিয়ে পরে। অভি দেখে ফেললে ঝামেলা হবে।
অভি ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়েও ঢোকে না।
“তানহার গন্ধ পাচ্ছি। কোথায় তুমি?
পুরো রুমে চোখ ঘুরিয়ে বলে অভি।
তানহা কাঁদো কাঁদো ফেস করে। অভি তানহার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তানহা দরজার পেছন থেকে বেরিয়ে এক দৌড় দেয়। অভি আর ধরতে পারে না।
রিসেপশনে তানহার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় অভি। তানহার লেহেঙ্গারের সাথে মেচিং করে শার্ট পড়েছে। বৃষ্টি সৃষ্টি হিমি স্মৃতি হালিজা সবাই তানহাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
অভি বসারই চান্স পাচ্ছে না। হাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে।
তানহার বাবাকে দেখে অভি তার কাছে যায়।
” শশুড় মশাই কেমন আছেন?
দাঁত কেলিয়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে অভি।
উনি শান্ত চাহনিতে অভির দিকে তাকায়। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে।
“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
ওনার হাসি দেখে অভি অবাক হয়ে যায়। আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে?
” আপনি হাসছেন তাও আবার আমার সাথে কথা বলে?
অবাক হয়ে বলে অভি।
উনি অভির গালে হাত দিয়ে বলে
“আই এম সরি
বলতে বলতে উনি কেঁদে ফেলে।
অভি ভরকে যায়। কি হয়েছে ওনার? নিশ্চয় বড় কিছু। নাহলে এভাবে কাঁদবে কেনো?
” আপনি কাঁদছেন কেনো?
অভি জিজ্ঞেস করে।
উনি চোখের পানি মুছে নেয়।
“কাঁদছি না। আমি তানহার কাছে যাচ্ছি
বলে তারাহুরো করে চলে যায়।
অভি ভাবতে থাকে।
” কি এমন হতে পারে? যে উনি পাল্টি খেলেন?
রাত দশটা বাজে। এখনো তানহার রুমে আসার নামই নেই। ওই মেয়ে গুলোর সাথে গল্প করছে। অভি রুমে পায়চারি করছে।
অভি পায়চারি থামিয়ে চোয়াল শক্ত করে চলে যায় তানহার কাছে। সবার মাঝখান থেকে তানহার হাত ধরে।
“আরে ইয়ার খালি ওদের সময় দিলে হবে? তোমার একমাত্র বর তো তুমি হীনা থাকতে পারছে না।
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে অভি।
সবাই হো হো করো হেসে ওঠে। তানহা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
চলবে