ভালোবাসি তাই পর্ব-৪৭

0
1397

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৪৭
#Tanisha Sultana

সারা রাত তানহার ঘুম হয়নি। এপাশ ওপাশ করে কাটিয়েছে। পাশেই অভি নাক ডেকে ঘুমিয়েছে। অনেকটা সময় তানহার সাথে সময় দিয়ে তারপর ঘুমিয়েছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতেই তানহা উঠে বসে। এরই অপেক্ষায় ছিলো। এপাশ ওপাশ করতে করতে কান ব্যাথা হয়ে গেছে। একটু বেলকানিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে তারও সাহস নেই। ভয় পায়। অভিকে ডাকারও সাহস পায় নি।

উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় তানহা। ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে যায়। বাড়ির কেউ এখনো উঠে নি। নিজের জন্য এক কাপ চা করে বেলকনিতে মোরা টেনে বসে। এখনও আবছাআবছা অন্ধকার রয়ে গেছে। তানহা ভেবে রেখেছে আজকে সূর্য উঠা দেখবে। পূর্ব দিকে মুখ করে বসে আছে।

সকাল সকাল অভিকে বেরতে হবে তাই এলার্ম দিয়ে রেখেছিলো। এলার্ম বাজতেই হুরমুর করে উঠে বসে অভি। পাশে তাকিয়ে দেখে তানহা নেই। বেলকনিতে উঁকি মেরে দেখে তানহা বসে আছে পূর্ব দিকে মুখ করে। অভি উঠে তানহার কাছে যায়। পেছন থেকে তানহাকে জড়িয়ে তানহার ঘাড়ে থুতনি রাখে।
তানহা প্রথমে চমকালেও পরে বুঝতে পারে এটা অভি।
“এতো সকাল সকাল এখানে যে?
ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে অভি।
তানহা কেঁপে ওঠে। এতোদিনেও অভির এরকম ভয়েস শুনে নি তানহা। অভি ভ্রু কুচকে মুখটা একটু বাঁকিয়ে তাকায় তানহার দিকে।
” কি হলো?
“সারা রাত ঘুমাই নি। তানহা ঢোক গিলে বলে
” টাচ করছি বলে? সেই দুঃখে?
“আরে না। ঘুম আসছিলো না।
” আমাকে ডাকতা।
“আপনি তো অনেক টায়ার্ড ছিলেন তাই।
” ঠিক আছে। গোছল করো যাও
“ঠান্ডা
নাক মুখ কুঁচকে বলে তানহা।
” মাইর দিবো। ঠান্ডা না। যাও
“আগে আপনি যান আপনার লেট হবে
” নাহহ আগে তুমি যাইবা। আমার লেট হবে না।
“প্লিজ
” যাও
“আমি সূর্য উঠা দেখবো। প্লিজ ডিস্টার্ব করিয়েন না। আমি পরে গোছল করে নেবো।
” তানহা আমার লেট হচ্ছে কথা বারিয়ো না। নাহলে কিন্তু চুবিয়ে রাখবো পানিতে।
অভি তানহাকে ধরে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দেয়। আবার শুয়ে পড়ে অভি।
কোনোরকমে গোছল করে অভিকে বকতে বকতে বের হয় তানহা। অভি লাভ দিয়ে উঠে বসে।
“এতো তারাতাড়ি শেষ।
” তো গোছল করতে কতখন লাগে? ত্যাড়া ভাবে জবাব দেয় তানহা।
“ইডিয়েট
” আপনি
“মুখে মুখে তর্ক করতে শিখে গেছো?
” মুখ আছে কথা বলবোই।
“বিশ্ব কটা
” উচিত কথা বললেই কটা। আজিব

অভি চোখ বাঁকিয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে গোছল করতে যায়। এর সাথে তর্ক করতে গেলে আজ আর অফিসে যাওয়া হবে না সবে পাওয়া চাকরিটা চলে যাবে। তানহা চুল মুছে আবার কিচেনে চলে যায় অভির জন্য নাস্তা বানাতে।

করলা ভাজি আর রুটি বানায় তানহা। টেবিলে খাবার রেডি করবে তখন অভির মা রান্না ঘরে আসে।
“আরে তুই রান্না কেনো করছিস?
” বাহ রে বউ হয়েছি রান্না করবো না?
রুটি টেবিলে রেখে বলে।
“তাই বলে একা একা
” হুমম। এখন থেকে আমিই রান্না করবো। তুমি রেস্ট নিবা। অনিক ভাইয়া বিয়ে করলে আমরা দুই জা মিলে রান্না করবো।
মিষ্টি হেসেবলে তানহা।
“পাকা হয়ে গেছিস।

অভি অফিসের জন্য রেডি হয়ে গলায় ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হয়। খাবার টেবিলে বসে তারাতাড়ি খাবার দিতে বলে
তানহা খাবার বেরে দেয়।অভি রুটি ছিঁড়ে মুখে পুরতে গিয়ে থেমে যায়।
” তুমি খাবে না?
তানহার দিকে তাকিয়ে বলে। নিশ্বদে চলে যায়। এবার ছেলে মেয়ে খাবে।
“আপনি খান আমি পরে খাবো।
অভির খাবার প্যাক করতে করতে বলে তানহা।
” তুমি তো রাতে ঘুমাও নি। অনেক খিদে পেয়েছে তোমার। বসো।
“আরে পরে খাবো।
” তাহলে আমি না খেয়েই চলে যাবো।
তানহা বাধ্য হয়ে বসে পড়ে। ডিম ভাজি দিয়ে রুটি নেয়। করলা খাওয়া তানহার জন্য অসম্ভব। অভি মুচকি হেসে খেতে থাকে।
“শোনো একদম পাকামি করে একা একা রান্না করতে যাবে না। মায়ের সাথে রান্না করবা। হাত পুরে যাবে। বুঝছো।
” হুমমম
“আজ ভার্সিটি যেয়ো অনিকের সাথে। আর ওর সাথেই ফিরে আসবা। কেমন?
তানহা মুখে খাবার দিয়ে ছোট করে বলে
” হুমমম
“বেশি তিরিং বিরিং করবা না।
” আমি কি বাচ্চা?
“দেখতে বড় হলেও স্বভাবটা বাচ্চাদের মতো।
” কিহহহহ
তানহা তেরে উঠে বলে। অভি থামিয়ে বলে
“নো ঝগড়াঝাঁটি তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করো আর ভার্সিটির জন্য রেডি হও
তানহা ভেংচি কাটে। অভি তারাতাড়ি করে খেয়ে উঠে যায়। তানহা আস্তে আস্তে খাচ্ছে। অভি অফিস ব্যাগটা নিয়ে তানহার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তানহা ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে ” কি”
অভি হুট করে তানহার কপালে চুমু দেয়।
“আসছি
তানহা মিষ্টি হেসে হাত নারায় অভি চলে যায়।

তানহার বাবা মা এসেছে তানহাকে নিতে। বিয়ের পর আর যায় নি মেয়েটা। অভি বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই এসেছে। তানহাকে লাগেজ গোছাতে বলছে তানহা অভির মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। অভিও মাও যেতে বলে। তানহার মুখটা চুপসে যায়। ভেবেছিলো অভির মা অন্তত বাধা দেবে। বাধ্য হয়ে মুখ গোমড়া করে রুমে চলে যায় তানহা। ফোনটা হাতে নিয়ে অভিকে ফোন দেয়।
অভি ফাইল চেক করছিলো তখন ফোনটা বেজে ওঠে। স্কিনে তানহার নাম প্লাস হাসি মুখটা ভেসে ওঠে। অভির কপালে দুটো ভাজ পরে। এখন তো তানহার ক্লাসে থাকার কথা। তাহলে ও ফোন কেনো দিচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে কলটা কেটে যায়।
অভি কল ব্যাক করে। সাথে সাথে তানহা ফোনটা রিসিভ করে।
” এই যে শুনছেন?
“হুমম শুনছি। বলুন ক্লাসে না গিয়ে ফোন কেনো দিছেন?
” বাবা নিতে এসেছে? কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তানহা।
“তো যাও। স্বাভাবিক ভাবেই বলে অভি।
“যাবো মানে? অনেক দিনের জন্য নিয়ে যাবো? বাসায় এসে আমার মুখটা দেখতে পাবেন না? আমার নিশ্বাস শুনতে পাবেন না।
” তো
তানহা হা হয়ে যায়।
“তো মানে?
” কয়েকটা দিন শান্তিতে থাকতে পারবো। কেউ আর ডিস্টার্ব করবে না।
অভির কথা শুনে তানহা খট করে ফোন কেটে দেয়।
শান্তিতে থাকবে তো থাকুক। যাচ্ছি আমি।
মনে মনে বলতে বলতে সব গুলো কাপড় গুছিয়ে নেয় তানহা। বাবা যতদিনের জন্য নিতে আসছে তার থেকেও বেশি দিন থাকবে ও।
লাগেজ গোছাচ্ছে আর চোখের পানি মুছছে তানহা। কিভাবে বললো অভি?

বেরোনোর সময় কারো সাথে কথা বলে না তানহা পরনের শাড়িটা পাল্টাও না। ওইভাবেই যায়। গাড়িতেও বাবা মায়ের সাথে একটাও কথা বলে না।বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কেউ বোঝে না হঠাৎ হলো টা কি?

সন্ধা হয়ে গেছে তানহা ঘুমিয়ে আছে। বিকেলে পৌঁছেছে বাসায়। এসেই দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়েছে। রাতে ঘুম না হওয়ায় এখন ঘুম আসছে প্রচুর।

“তানহা দরজাটা খোলো?
অভির কন্ঠ শোনে তানহা। ভাবে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে। তাই পাত্তা দেয়না।
হঠাৎ মনে হলো দরজাটা ভেঙে গেলো। তানহা ধরফরিয়ে উঠে বসে।

চলবে