মনের পিঞ্জরে পর্ব-১৪+১৫

0
1075

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_14

সোফার এক কোনে কাচুমাচু করে বসে রয়েছে ইশান।তার দিকেই রাগি চোখে তাকিয়ে রয়েছে ইশফা।ইশরা,ইশানের পাশে কুশন নিয়ে খেলছে আর মিটমিট করে হাসছে।ইশান,ইশরার হাত থেকে কুশন টেনে নিয়ে অসহায় সুরে আস্তে আস্তে বলল…….

—ইরু বোইন আমাকে বাচা।দেখছোস ডেভিল রানী আমার দিকে কেমনে তাকাইয়া রইছে।কুশন নিয়ে পরে খেলতে পারবি।দরকার পরলে তোরে আমি খেললা কিনে দিব।তার পরেও এই ডেভিল রানীর হাত থেকে বাচা আমাকে।

ইশরা ভেংচি কেটে বলল……

—আবদার দেখলে বাচি না হুহ।আমারে যখন মিথ‍্যা কইয়া নিয়া রাক্ষসের মুখের সামনে ফালাইছিলি তখন মনে ছিলো না আমার কাছেও সাহায্যর জন‍্য তোর হাত পাতা লাগতে পারে।তুই আমাকে রাক্ষসের মুখে পরতে সাহায্য করছোস তাই আমি এখন তোরে এই ডেভিল রানীর থেকে বাচাতে সাহায্য করবো না।

ইশান ইশরার দিকে কুশন ছুড়ে মেরে বলল……

—আজ থেকে তুই আমার বোইন না।

ইশরা মাছি তাড়ানোর মত করে বলল…..

—যা যা এমন ভাই আমার লাগে না।

ইশান আড় চোখে ইশফার ভাব-ভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করে মিনমিনে গলায় এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল…..

—বোইন এভাবে তাকাইস না।তোর এই তাকানো দেখলে আমার ভয় লাগে।কখন যেন ভয়ে হার্ট এট‍্যার্ক করি।

ইশফা দাতে দাত চেপে বলল……

—তোর মত শয়তান এতো তাড়াতাড়ি দুনিয়া থিকা বিদায় হইবো না।বদের হাড্ডি,মিনমিনা শয়তান।ভাবটা এমন নেয় যেন ভাজা মাছটা উল্টাইয়া খাইতে জানে না।বাহির হো তুই আমাদের বাড়ি থেকে।

ইশানঃতোর বাড়ি হল কিভাবে এটা?এটা আমার মামার বাড়ি।এখানে আমি যখন খুশি আসতে পারবো।যত খুশি থাকতে পারবো।তোর কথা মত হবে নাকি।দুদিন পর তোর টিকেট দেখিস আমিই এই বাড়ি থেকে কাটবো।

ইশফা,ইশানের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল…..

—আমার টিকেট পরে কাটিস আগে এখন বের হ তুই।

ইশানঃআপন হয়ে পরের মত করছিস কেন?কি করেছি আমি যে,তুই এমন ব‍্যবহার করছিস?

ইশফা রাগি গলায় বলল……

—বাহ্ বাহ্ ভাবটা দেখো যেনো কিছুই জানে না।

(ইশান তো ভাব নিয়ে বসে আছে সে কিছুই জানে না।কি আর করার আমরাই ফ্লাসব‍্যাক থেকে জেনে আসি কি হয়েছে।ইশফার ইশানের উপর এমন রাগ করার কারণ কি?

ফ্লাশব‍্যাকঃ

ইশরাকে রাগ করে কলেজ থেকে বের হতে দেখে জিদান, ইশরাকে বাড়িতে পৌচ্ছে দেবার জন‍্য ইশানকে ইশরার সাথে পাঠায়।

ইশান, ইশরাকে নিয়ে ওদের বাড়িতে এসে কিছুক্ষন মিসেস খান এর সাথে গল্প করে তার থেকে বিদেয় নিয়ে বেড়িয়ে যায়।

ইশান নিচে নেমে ইশফাকে রিকসা থেকে নামতে দেখে ইশান একটু আড়ালে লুকিয়ে দুষ্টুমি করে নিজের নাম্বার থেকে কল করে ভয়েস পাল্টিয়ে বলেছে,এই নাম্বারের মালিক এক্সসিডেন্ট করেছে।তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ইশফা হাসপাতালে নাম জিগ্যেস করলে,ইশান হাসপাতালের নাম, ঠিকানা সব দিয়ে বলে,পেসেন্টের অবস্থা কিন্তু খুব খারাপ।বাচার সম্ভবনা একেবারেই নেই।কথাটা শোনার সাথে সাথেই ইশফা ডুকরে কেদে উঠে।কান্না করতে করতে কিছু একটা বলে কিন্তু সেটা ইশানের কানে পৌচ্ছয় না।ইশফার কান্নার আওয়াজ পেয়ে ইশান উওেজিত হয়ে বলে…..

—আরে ইফু তুই এভাবে কান্না করছিস কেন?আমি ঠিক আছি।আমি তো তোর সাথে একটু মজা করছিলাম।

ইশানের কন্ঠস্বর ইশফার কান পযর্ন্ত পৌচ্ছালো না।ইশফা সে তো নিজের কান্নায় ব‍্যস্ত।

জিদান আর ইশানকে ইশফা ছোটবেলা থেকে বড় ভাইয়ের চোখে দেখেছে।আপন ভাই না থাকায় ওদের থেকে একটু আদুরে ডাক, কেয়ার,সাষন পেলেই খুশির কোন সিমা থাকতো না।ইশফা আল্লাহ্ এর কাছে প্রতিনিয়োত শুকরিয়া আদায় করে ওকে এমন দুটো ভাই মিলিয়ে দেবার জন‍্য।

ইশফা যতই নিজেকে সব সময় শক্ত রাখার চেষ্টা করুক না কেন,আপন লোকদের কোন কিছু হয়েছে সুনলে তখন সে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না।মুহূর্তের মধ‍্যে তার সকল কঠিনতা চলে গিয়ে ভিতরের নরম মানুষটা বের হয়ে আসে।)

💦💦💦💦💦💦

আপন মনে ফোন বেজে যাচ্ছে জিদানের।জিদান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে ফোন রিসিভ করে বলল……

— আসসালামু আলাইকুম?কেমন আছেন বাবা?

ফোনের অপর পাশে আওলাদ খান হুংকার দিয়ে বলল……

—রাখো তোমার কেমন আছো?আগে বল কোথায় আছো?তোমার মায়ের কাছে সুনলাম তুমি নাকি অন‍্যের গোলামী খাটার জন‍্য শহরে গিয়েছো?

জিদান তাসিল‍্য হেসে বলল…..

—শহরে এসেছিতো ১৫দিনের উপরে হতে চলল।তা আজ সময় পেলেন নাকি আমাকে ফোন করার?

—তোমার প্রশ্নের উওর দেবার জন‍্য আমি ফোন করিনি।তুমি কাল সকালেই গ্রামে ফিরবে।এটা আমার শেষ কথা।

কথাটা বলেই আওলাদ খান ফোন কেটে দিল।জিদান রাগ করে ফোন বেডে ছুড়ে মেরে বেডের এক কোনে বসে দু হাতে মাথা চেপে ধরে রাখলো।

💦💦💦💦💦💦

ইশফা,তুশি খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাশ করছে।পাশে রিধি বসে ছটফট করছে।স‍্যার কি ক্লাশ করছে কি বুঝাচ্ছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।

ক্লাশ শেষে স‍্যার চলে যেতেই রিধি হাফ ছেড়ে বলল……

—আমার পক্ষে কিছু পেটে না ঢুকিয়ে ক্লাশ করা আর সম্ভব না।এতোক্ষন ক্ষিধের জ্বালায় স‍্যারের কোন কথাই আমার কানে ঢুকে নি।

ইশফাঃসারাদিন শুধু রাক্ষসনীর মত খাই খাই করোস ক‍েন?দুদিন পর তো ফুলে ফুটবল হয়ে যাবি।

রিধিঃতাতে কি হয়েছে।আমার কোন টেনশন নাই।আমি আগেও গুলুমুলু ছিলাম আবার না হয় হয়ে যাব।আর তাছাড়া আমার জামাই এর আমার গুলুমুলু রুপটাই বেশি পছন্দ।

তুশি অবাক হয়ে বলল…..

—তোর জামাই মানে?তোর বিয়ে হয়েছে?

তুশির কথায় রিধির হুস ফিরলো।সে যে কথার ছলে কোন কথা থেকে কোন কথা বলে ফেলেছে এখন বুঝতে পারলো।রিধি আমতা আমতা করে কথা ঘুড়ানোর জন‍্য বলল……

—বি…বিয়ে হলে কি তোরা জানতি না।

ইশফা সন্দেহের চোখে রিধির দিকে তাকিয়ে বলল…..

—আমার তোর কথা, বার্তায় কেমন যেন সন্দেহ হয়?মনে হয় তুই কিছু লুকাচ্ছিস আমাদের থেকে।

রিধি ঘাড়বে গিয়ে বলল……

—ক…কি লু…লুকাবো তোদের থেকে?

ইশফাঃএটাই তুই পাবনা মেন্টেল হাসপাতালের পালাতন রুগী।

ইশফার কথা সুনে তুশি মিটমিট করে হাসতে লাগলো।

রিধি ইশফার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল……

—আমাকে দেখে তোর মেন্টেল মনে হয়?

ইশফাঃকোন সন্দেহ আছে।

রিধি কোমড়ে হাত দিয়ে বলল……

—দাড়া তুই আমিও আজ তোকে দেখাবো এই পাগল কি করতে পারে।

ইশফা রিধিকে তেড়ে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি করে ক্লাশরুম থেকে বের হতে গিয়ে বেঞ্চের সাথে লেগে পায়ে ব‍্যাথা পেল।

💦💦💦💦💦💦

ইশফা পা ধরে বসে রয়েছে। মুহুর্তের মধ‍্যে পা ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে।তুশি ইশফার পাশে পানির বোতল হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।পায়ে পানি দিয়ে ম‍্যাসেজ করে দেবার জন‍্য।কিন্তু ইশফা কিছুতেই কাউকে পা ধরতে দিবে না।

পায়ে ব‍্যাথা পারার পর ইশফা কাউকে পা ধরতে দেয়নি।নিজেই পা ধরে বসে রয়েছে।ক্লাশে স‍্যার আসার সময় হয়ে যাওয়ার কারনে রিধি,তুশি দুজন মিলে ইশফাকে পাশের খালি ক্লাশরুমে নিয়ে আসে।রিধি ইশফাকে ভালোভাবে বসিয়ে দিয়ে ওর দিকে এক পলক রাগি চোখে তাকিয়ে আসছি বলে ক্লাশরুম থেকে বের হয়ে যায়।

তুশি পানির বোতল দিয়ে ইশফার মাথায় হালকা করে মেরে রাগি গলায় বলল……

—আর কতোক্ষন এমনে পা ধইরা মন্ত্র পরবি।এবার তো একটু পায়ে কিছু করতে দে।দেখ পা টা কেমনে ফুলে গেছে।

ইশফা কড়া গলায় বলল…..

— না আমি পা ধরতে দিব না।পা ধরলেই আরো বেশি ব‍্যাথা পাবো।

— তোর পা তুই এমনেই সাজাইয়া রাখ।বান্দর ছেড়ি তোরে আর কিছু বলুম না।কতোক্ষন ধইরা কইতাছি পানি দিয়া পা টা একটু আস্তে আস্তে ম‍্যাসেজ করে দেই।না তার এক কথা পায়ে ব‍্যাথা পাবে।

ইশফা এক হাতে পা ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে রয়েছে।হঠাৎ পায়ের কারো হাতের ছোয়া পেতেই ইশফা ব‍্যাথায় কুকরিয়ে উঠে চোখ মুখ আরো শক্ত করে নিজের হাত দিয়ে অপর ব‍্যক্তির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল……

—আমি না করেছি পায়ে হাত দিতে তোদের।আমার পা ছাড়া।

ইশফার কথা শেষ হতে না হতেই পায়ের ব‍্যাথা মনে হয় তার দ্বিগুণ বেড়ে গেল।ইশফার মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে কেউ ওর ব‍্যাথার জায়গা চেপে ধরেছে।ইশফা চোখখিচে পা সড়ানোর চেষ্টা করতেই একটা গম্ভীর কন্ঠে ভেসে এল……

—পা নাড়ানোর চেষ্টা করলে পায়ে আরো দ্বিগুন ব‍্যাথা দিব।

কথাটা কর্নপাত হবার সাথে সাথেই ইশফা চোখ খুলতেই দেখে তার পায়ের সামনে হাটু গেড়ে সান বসে আছে।সান এক হাত দিয়ে ইশফার পা ধরে আছে আর ইশফা নিজ সানের অপর হাত ধরে আছে।

ইশফা সানকে দেখে ঘারড়ে গিয়ে ফট করে হাত ছেড়ে দিয়ে বলল…..

—আ…আপনি এখানে কি করছেন?

সান দাতে দাত চেপে বলল….

—তোমার পা ভাঙার ব‍্যবস্থা করছি স্টুপিট।

ইশফা পা সরানোর চেষ্টা করে বলল……

—আমি আমার পা কাউকে ধরতে দেই না।আপনি আমার পা ছাড়ুন।

সান হুমকি দিয়ে বলল…….

—এখন তো পায়ের পাতায় ব‍্যাথা পেয়েছো।বেশি তিড়িং বিড়িং করলে পুরো পায়ে ব‍্যাথা পাবার ব‍্যবস্থা করে দিব।

💦💦💦💦💦💦

জিদান ক্লাশে ঢুকে ইশরাকে চুপচাপ লাষ্টবেঞ্চ বসে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো।মনে মনে বলল…..

—ডোজটা তাহলে কাজেই দিয়েছে।

জিদান ক্লাশ করাচ্ছে আর আড়চোখে ইশরাকে দেখছে।ইশরা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর মনের সুখে কলম মুখে দিয়ে বসে রয়েছে।জিদান,ইশরাকে কিছু না বলে নিজের মত ক্লাশ করে গেল।ক্লাশ শেষে জিদান ইশরার দিকে তাকিয়ে বলল……

—মিসেস ইশরা খান। আপনার কিছু নোটস আমাকে কাছে আছে। এসে নিয়ে যান।

কথাটা বলেই জিদান ক্লাশরুম থেকে বের হয়ে গেলো।ইশরা চোখ বড় বড় করে জিদানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।পাশ থেকে লিপি ধাক্কা দিয়ে বলল…….

—তোর বিয়ে হয়ে গেছে আর তুই আমাদের কে জানাসনি।এই প্রতিদান দিলি বেষ্ট ফ্রেন্ড হবার।স‍্যার জানলো অথচ আমি জানতে পারলাম না।

লিপির ধাক্কা খেয়ে ইশরা লিপির দিকে কাদো কাদো ফেস করে তাকিয়ে সবার দিতে চোখ বুলিয়ে নিল। ক্লাশের সবাই ওর দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে রয়েছে।ইশরা মনে মনে জিদানকে ইচ্ছে মত বকছে আর বলছে…..

—আমি জানি তো তিনি ইচ্ছে করেই আমাকে হেনস্থা করার জন‍্য এমন করেছে।মিঃস‍্যার আমি এখান থেকে বেচে ফিরতে পারলে আপনাকেও বুঝিয়ে দিব কার সাথে পাঙ্গা নিতে এসেছেন।

#চলবে,

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_15

নিস্তব্ধ রজনীতে ছাদের এক কোনে কফির মগ হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে সান।তার মাথায় ঘুড়ঘুড় করছে প্রয়সীর জন‍্য নানান চিন্তা।একটা নজর প্রয়সীকে দেখার জন‍্য মরিয়া হয়ে উঠছে সে।অন‍্যের মাধ‍্যমে যতই প্রয়সীর খবর তার কাছে পৌচ্ছাক না কেন, নিজের চোখের দেখা আর অন‍্যের থেকে খবর নিয়ে নিজের অবাধ‍্য মনকে সান্ত করা কি এক?

আজ তিন দিন হয়ে গেছে সান ইশফাকে দেখে না।দেখবে কি ভাবে ইশফা তো তিনদিন ধরে ভার্সিটিতেই আসে না।সেদিনের পায়ের ব‍্যাথা থেকেই জ্বর এসেছে।জ্বর আর পায়ের ব‍্যাথা দুটো একসাথে কাবু করে বসেছে ইশফাকে।

সান আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের অবাধ‍্য মনকে নানান ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করল।কিন্তু কিছুতেই তার অবাধ‍্য মনকে বুঝাতে পারলো না।শেষে অবাধ‍্য মনের কাছে হার মেনে নিজেই নিজেকে প্রতিজ্ঞা করল,কাল যা কিছু হয়ে যাক না কেন,যেভাবেই হোক তার প্রয়সীকে সে এক পলক দেখবেই।

💦💦💦💦💦💦

হাতের মধ‍্যে ঔষধ নিয়ে তার দিকে কাদো কাদো ফেস করে তাকিয়ে রয়েছে ইশফা।ইশরা পাশে দাড়িয়ে হিজাব ঠিক করছে আর আড় চোখে ইশফার কান্ড দেখছে।

—ঢং করে ঔষধ এর দিকে তাকিয়ে না থেকে এবার ঔষধগুলো গিলে ফেল।তোর এই ঢং দেখে আমার বিরক্ত লাগছে।

ইশরা নিজের হিজাব ঠিক করতে করতে ইশফাকে কথাগুলো বলল।

ইশফা সামনের থেকে একটা কুশন ইশরাকে ছুড়ে মেরে তেজি গলায় বলল……

—বান্দরনী আমারে দেইখা তোর মনে হইতাছে আমি ঢং করতাছি?

ইশরা ভেঙচি কেটে বলল…..

—তয় কি করতাছো তুমি?ঔষধ হাতে নিয়ে মন্তর পরতাছো?

—সামনে আয় তুই তোর কানের নিচে দুইটা দিয়ে দেখাই আমি কি করতাছি।কতগুলো ঔষধ তার উপরে কত বড় বড়।এগুলো আমার গলা দিয়ে যে কেমনে ঢুকাই আমিই জানি।ছাতার মাথা ঔষধ খেতে আর ভালো লাগে না।

—ছাতার মাথা হোক বা ব‍্যাঙের মাথা হোক। ঔষধ তোমাকে খেতেই হবে।গত তিনদিন যেভাবে গিলেছো সেভাবেই ভালো মেয়ের মত ফটাফট ঔষধগুলো গিলে ফেলো।

ইশফা ইনোসেন্ট ফেস করে বলল……

—তুই না আমার সুইট বোন, আমার কলিজা।প্লিজ ঔষধ গুলো মা দেখার আগে ফেলে দে না।

—যতোই তেল মারো না কেন বেহেনা কাজ হবে না।আমি তোমার কথা সুনছি না।চুপচাপ ঔষধগুলো খাও।

ইশফা কাদো কাদো মুখ করে বলল…..

—প্লিজ…..

ইশরা চোখ রাঙিয়ে বলল…..

—খাবে নাকি জোর করে খাওয়াবো।

ইশফা নাক ফুলিয়ে কোন কথা না বলে ঔষধগুলো খেয়ে নিল।

ইশরা মুচকি হেসে আয়নায় আরেকবার নিজেকে দেখে ব‍্যাগ হাতে নিয়ে বলল……

—আসছি আমি।বিকেল পযর্ন্ত সান্তিতে থাকো।কলেজ শেষে ফুপির বাসা হয়ে আসবো।আল্লাহ্ হাফেজ।

ইশরা দরজার দিকে পা বাড়াতে নিলেই ইশফা ডাক দিয়ে বলল……

—ইরু শোন?

ইশরা,ইশফার সামনে এসে বলল…..

—কিছু বলবি?

—ভাইয়ার সাথে তোর কথা হয়?

ইশরা চোখ ছোট ছোট করে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল…….

—আর কিছু?

—মনে রাখিস ভাইয়া কিন্তু ঐ কলেজের একজন টিচার।তাই ভাইয়াকে বেশি জ্বালাবি না আর দুষ্টুমি তো একদমি করবি না।

ইশরা রাগি গলায় বলল……

—তোর ঐ সাধু ভাইকে আমি জ্বালাই না।তোর ঐ সাধু ভাই কি করেছে জানিস?ক্লাসের সবার সামনে আমাকে বলেছে,মিসেস ইশরা খান আপনার কিছু নোটস আমার কাছে আছে।এসে নিয়ে যান।(ব‍্যাঙ্গ করে)এই কথা সুনার পর সবাই আমাকে গাজি বাঘের মত ধরেছে।বিয়ে হয়ে গেছে বলিনি কেন,দাওয়াত দেইনি কেন ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি।লিপি তো চোখের জল নাকের জল এক করে ফেলেছিলো।জানিস কত কষ্ট করে সবাইকে মানিয়েছি।আর যখন তোর ঐ সাধু ভাইকে গিয়ে জিগ্যেস করলাম,আমাকে মিসেস ইশরা খান কেন বলেছেন?তখন বলে কি আমি মিস ইশরা খান বলেছি।আপনি সুনতে ভুল করেছেন।বল তখন মেজাজটা কেমন লাগে?

ইশরার কথা সুনে ইশফা মিটমিট করে হাসতে লাগলো।

—তোর সাথে কথা বলাই বেকার।

কথাটা বলে ইশরা রাগ দেখিয়ে গটগট করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

💦💦💦💦💦💦

জিদান,ইশরা পার্কের এক বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে।ক্লাশ শেষে জিদান এক প্রকার জোর করেই ইশরাকে এখানে নিয়ে এসেছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।দুজন নিরব হয়ে বসে আছে।

—স‍্যার আমাকে এখানে কেন এনেছেন?আপনার সাথে এখানে আমাকে কেউ দেখলে উল্টাপাল্টা ভাবা শুরু করবে।তা যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।

জিদান ইশরার কথা সুনে ইশরার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলল……

—আমার সাথে থেকেও তুই লোকের কথাকে ভয় পাচ্ছিস?

ইশরা কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।

ইশরাকে কিছু বলতে না দেখে জিদান পূনরায় বলল……

—কবের থেকে লোকের কথাকে তুই ভয় পাস ইশু?তুই তো লোকের কথাকে পরয়া করিস না।কে কি বলল না বলল তাতে কিছুই তোর যায় আসে না।

ইশরা হালকা চেচিয়ে বলল…..

—সেই ইশু মরে গেছে।সেই ইশু আরো ৪বছর আগেই মরে গেছে।এখন লোকের কথাকে আমি অনেক ভয় পাই।পারবো না আর আমি আমার বাবা,মা কে লোকের সামনে মাথা নিচু করে দাড়াতে দেখতে।

কথাগুলো বলতে বলতে ইশরার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল।

—কি হয়েছে না হয়েছে আমি সব তোর মুখে সুনতে চাই।

—কেন ৪বছর আগের পুরোন গায়ে কি নতুন করে লবন দিয়ে তাজা করতে চাইছেন?

জিদান সামনের দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল…..

—পুরনো কথা জানতে চেয়ে তোর গা আমি তাজা করতে চাই না।আমি তোকে সত‍্যের মোকাবেলা করাতে চাই।

ইশরা শক্ত গলায় বলল……

—অন‍্য কোন কথা আছে আপনার?

জিদান তাসিল‍্য হেসে বলল……

—আমার অন‍্য কথা শোনার কি সময় হবে তোর?

ইশরা কিছু না বলে চুপ করে রইল।ইশরাকে চুপ থাকতে দেখে জিদান চোখ বন্ধ করে বলল….

— “কাছে থাকতে আগলে রেখো
হাড়িয়ে গেলে খুজো না
তখন আর পাবে না।”

💦💦💦💦💦💦

বিকেল বেলা ইশফা বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে ফোনে নিক্স কার্টুন দেখছে।নিক্স এর মধ‍্যে ইশফার সব থেকে পছন্দের হল নিম্বু।ইশফা নিক্স দেখা শুরু করার পর থেকে কুকুর ভয় পায় বিধায় শখ করে একটা বিড়াল ছানা বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো।নামও রেখেছিলো নিম্বু।কিন্তু মায়ের বকনিতে সেটা আর বাড়িতে রাখা সম্ভব হয়নি।

কলিং বেলের শব্দ পেয়ে মিসেস খান দরজা খুলে দিল।তুশি মিসেস খানকে দেখে ঢোক গিলে বলল….

— আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন আন্টি?

মিসেস খান সালামের জবাব নিয়ে হাসি মুখে বলল…..

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো?

—আমিও ভালো আন্টি।

—আরে বাহিরে দাড়িয়ে রয়েছো কেন?ভিতরে আসো।

তুশি শুকনো ঢোক গিলে বলল……

—আসলে আন্টি আমার সাথে আমার এক ভাই এসেছে।ইফুকে দেখতে আসতে চাওয়ার পর মা একা বাসা থেকে বের হতে দেয়নি।তাই ভাইয়াকে সাথে করে নিয়ে এসেছি।ভাইয়া নিচে দাড়িয়ে আছে।আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে ভাইয়াকে আমি ভিতরে আসতে বলতাম।

—আমার থেকে অনুমতি নেয়ার কি আছে মা।তোমার ভাই আমাদের বাড়িতে এসেছে তুমি তাকে বাহিড়ে দাড়া করিয়ে রেখেছো এটা কিন্তু ঠিক করো নি।এতে আমি খুব রাগ করেছি।তুমি ডাকো তোমার ভাইয়াকে।

তুশি ফোন দিতেই মুহূর্তে মধ‍্যে একজন সুদর্শন ছেলে এসে দরজায় দাড়ালো।শ‍্যামবর্ন গায়ের রং,মুখ ভর্তি দাড়ি,চোখে কালো চশমা,চুলগুলো সুন্দর করে সেট করা।ছেলেটি এসে মিসেস খানকে নম‍্রভাবে সালাম দিয়ে বলল…..

— আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন আন্টি?(ছেলেটি কে🤔)

#চলবে,

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।রিচেক করা হয়নি।ধন‍্যবাদ)