তার শহরের মায়া ২ পর্ব-২৬

0
568

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৬
#Writer_Liza_moni

অনুর ম্যাসের সামনে একটা ইটের রাস্তা আছে। সেই রাস্তার বাম পাশে বড় একটা কাঠ বাদাম গাছ আছে। অনুর ম্যাসের রুমের জানলা থেকে সেই কাঠ বাদাম গাছের নিচটা স্পষ্ঠ দেখা যায়। তূর্য সেই কাঠ বাদাম গাছের ছায়ার নিচে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে অনুর রুমের দিকে উঁকি দিচ্ছে।জানলায় পর্দা ঝুলছে।রোদ চোখে পড়বে বলেই অনু পর্দা টেনে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। তূর্য ভাবলো অনেক দেরি হয়ে গেল বুঝি। কিন্তু এখানে আসার পর মনে হচ্ছে খাবার খেয়ে আসলেই ভালো হতো।এই ভাবে খালি পেটে ক্ষিদা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না।এই মেয়েদের ম্যাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে তার নিজেরই নিজেকে কেমন বখাটে বখাটে ফিল হচ্ছে।

সামনে দিয়ে যেই যাচ্ছে সেই আড় চোখে তাকে দেখে দেখে যাচ্ছে।

প্রেম বেশি উতলাই পড়লে এমনি হয়।এই দিকে প্রচন্ড ক্ষুধা লাগছে। সকালে ও ঠিক মতো কিছু খাই নাই। দুপুরে ও কিছু খাই নাই।অল রেডি সাড়ে চারটা বাজে।কচুর মাইয়াডার আসার ও খবর নাই। অপেক্ষা করমু বলছিলাম দেখে এখন আমাকে এতো অপেক্ষা করাচ্ছে।পুরাই একটা রাক্ষসি।

কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দে অনুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ পিটপিট করে তাকালো সে। তার হাতের সাথে লেগে বিছানার পাশের টেবিল থেকে একটা বয়াম পড়ে শব্দের সৃষ্টি হয়। আলসেমির জন্য উঠতে ইচ্ছে করছে না তার। বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে সময় দেখে নিলো। কিছু একটা মাথায় আসতেই চট করে শোয়া থেকে উঠে জানলার কাছে চলে গেল।পর্দা না সরিয়েই পর্দার ফাঁক দিয়ে তূর্য অপেক্ষা করছে কিনা দেখতে লাগল। তূর্য কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কেন জানি খুব ভালো লাগলো অনুর। ব্যাপার টা সুন্দর। অপেক্ষা করবে বলে ছিল।আর এখন অপেক্ষা করছে। উনার উশখুশ দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করছেন তিনি।

পরে যাওয়া বয়ামটা তুলে টেবিলের উপর রেখে,
অনু চট জলদি ওয়াস রুমে চলে গেল চোখে মুখে পানি দিতে। কিছুক্ষণ পর ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে মুখ মুছে বিছানার উপর থেকে ওড়না টা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে বের হয়ে গেল।দ্রুত পা চালিয়ে তূর্যর সামনে এসে হাঁপাতে থাকে অনু।

অনু কে এমন হাঁপাতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে তূর্য জিজ্ঞেস করে,
কী ম্যাম কিছু চুরি করতে গিয়ে কি মালিকের দৌড়ানি খেয়ে আসলেন নাকি? এমন হাপাঁচ্ছেন কেন শুনি?

কিছু চুরি করতে যাবো কেন আজব। আমাকে দেখে কী আপনার চোর মনে হয়?কী চুরি করেছি শুনি?

আমার মনটাই চুরি করে নিয়েছে। আবার বলেন কী চুরি করছে?পাক্কা চোর একটা।

কী বিড় বিড় করেন মিস্টার?

কিছু না মিস।বাইকে উঠে বসুন।

কেন? এখন আমি কোথাও যেতে পারবো না।
কী বলতে চান এখানে বলে বিদায় হোন।

সকালে নাস্তা করার পর এখন পর্যন্ত এক গ্লাস পানি ও খাইনি আমি।

ওহ এই কথা বলার জন্য আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন?
আগে বলবেন না মিয়া। আমি আসার সময় আপনার জন্য এক বোতল পানি নিয়ে আসতাম।

তূর্য চোখ ছোট ছোট করে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না।প্রথম দেখে মেয়েটাকে অনেক শান্ত শিষ্ঠ মনে হলে ও এখন মনে হচ্ছে এই অনুর মতো ফাজিল, দুষ্টু আর একটা মেয়ে ও নাই।

তূর্য কিছু না বলে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিয়ে অনুর দিকে তাকালো। আপনাকে কী আবার বলতে হবে উঠে বসতে?

আমি তো এখন কোথাও যাবো না।উঠে বসবো না আমি।যা বলার এখানেই বলুন।

এখানে কিছু বলতে পারবো না ঠিক মতো। দেখছেন না মানুষ গুলো কী ভাবে তাকিয়ে আছে।

থাকুক তাকিয়ে। আপনার যা বলার এখানেই বলুন। আমি কোথাও যাবো না।

অনুর এমন ত্যাড়ামিতে রাগ উঠে গেলো তূর্যর।সে এবার অনু কে ধমক দিয়ে বলে,
ঠাটিয়ে কানের নিচে এক চড় মারবো। একটা কথা কত বার বলতে হয় আপনাকে? বলছি না এখানে মানুষ গুলো কী ভাবে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। এখানে আমার সাথে আপনাকে এত কথা বলতে দেখে এই মানুষ গুলো তো আপনাকেই খারাপ ভাবছে। আপনার ম্যাসের ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখেন। অনেক মেয়েই আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।আর বলছি না যে আমি এখন ও কিছু খাইনি। আমার খুব ক্ষুধা লাগছে। আপনার জন্যই না খেয়ে বের হয়ে আসছি।

কেন আমি কি আপনাকে খাইতে বারন করছি নাকি?আর আপনাকে না খেয়ে আসতে কে বলছে?

আপনি অনেক বেশি কথা বলেন পরমানু। চুপ চাপ বাইকে উঠে বসুন।

অনু গাল ফুলিয়ে বাইকে উঠে বসে তূর্যর পিঠে একটা কিল মেরে বিড় বিড় করে বলে,
অসভ্য লোক একটা। আমাকে নাকি চড় মারবে।দেন এবার আমি নিজেই আপনার পিঠে কিল মেরে দিছি।

সব কিছুর হিসাব রাখতাছি।সময় আসুক আমি ও সব কিছু সুদে আসলে ফেরত দিবো মহারানি। অপেক্ষা করুন।

তূর্য বাইক নিয়ে সোজা নদীর পাড়ে আসলো।এত সময় অনু মুখ ফুলিয়ে রাখলে ও নদী কে আনন্দে চোখ জ্বল জ্বল করে উঠে।

বাইকে বসে বসে এতক্ষণ তূর্য কে বকা দিয়ে যাচ্ছিল।আর এখন এতো এতো ধন্যবাদ দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে।অনুর এই সব পাগলামি দেখে মুচকি মুচকি হাসছে তূর্য।

অনুর দিকে তাকিয়ে তূর্য আপন মনেই খাইলো,

ও আমি জানি,কত খানি ভালোবাসি তোমার পাগলামি।
গলা ছেড়ে জোরে বলি তুমি আমার,আমি তোমারি।

তূর্যর এই গান টুকু অনুর কান অব্দি পৌঁছায় না।শরৎ এর সময়। নদীর পাড়ে কাশফুলের মেলা বসেছে। কিছুদিন আগেই অনুর মন খারাপ ছিল।কারন সে এই বছর কাশফুলের রাজ্যে যেতে পারেনি। তূর্য যে তার এই ইচ্ছেটা পূরণ করে দিবে তা সে ভুলে ও ভাবেনি।

না মানুষ টা কে যত খারাপ ভাবছি তত খারাপ উনি না। কিন্তু বেশি ভালো মানুষ ও উনি না। আগে বললে মায়ের নীল শাড়ি টা পড়ে আসতাম।

তূর্য অনুর দিকে এগিয়ে এসে বলল,
আপনি শাড়ি পড়ে আসেন নাই কেন? আপনি জানেন না বয় ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে আসার সময় গার্লফ্রেন্ডরা বেশির ভাগ সময় শাড়ি পড়ে আসে। নীল শাড়ি পড়া,চুড়ি পরা, খোলা চুলে চোখে কাজল আঁকা কপালে ছোট্ট একটা টিপ,কানে ঝুমকা এমন সাজে অনু কে কেমন লাগবে তা ভাবতে থাকে তূর্য।

আর তূর্যর কথা শুনে ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে যায় অনু্। আমি তো এখন ও ঠিক ঠাক ভাবে একটা প্রেম ও করতে পারলাম না। তাহলে আমার বয় ফ্রেন্ড আসবে কোথা থেকে?এই লোকের কী মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?

আমার মাথা তো আপনি খারাপ করে দিয়েছেন।

আমি আপনার মাথা খারাপ করে দিয়েছি?কখন? কোন সময়? কোন দিন? আমার তো মনে পড়ছে না।যত দুর মনে আছে আমি তো আপনার মাথায় ভাড়ি কিছু দিয়ে এখন ও আঘাত করিনি। তাহলে আপনার মাথা খারাপ হলো কী করে? আচ্ছা আপনার যে মাথা খারাপ হয়ে গেছে এটা কি আপনার বাড়ির লোক জানে?

স্টপ ইট।ড্রামা কুইন একটা।সব কিছু বুঝতে পারার ও এত নাটক করছেন কেন আপনি?

কারন আপনি সরাসরি প্রপোজ করছেন না।

প্রপোজের কথা আপনি ভুলে যান। আমি আপনার মতো অর্ধ পাগলী মেয়ে কে প্রপোজ করবোই না।

কী বললেন আপনি? আমি অর্ধ পাগলী? আমি পাগল? এই আমি? আপনার ১৪ গোষ্ঠী পাগল। ধুর ছাই কী বলি এই সব? উনার ১৪ গোষ্ঠী অনেক ভালো। উনি নিজেই আস্ত একটা পাগল।

আমি ও পাগল আপনি ও পাগলী।চলেন দুই জনে পাবনা মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি হয়ে সেখানে সংসার করে খাই।

দেইখেন কিন্তু। শেষ পর্যন্ত এই পাগলি মেয়ে কেই না আপনার বিয়ে করতে হয়।
বলে অনু কাশফুল নেওয়ার জন্য হাঁটা ধরলো। পেছন থেকে তূর্য অনুকে ডাক দিলো।

এই পরমান,,

কী চাই?

“আপনাকে”

চলবে,,,,