তার শহরের মায়া ২ পর্ব-২৭

0
597

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৭
#Writer_Liza_moni

বেশ কিছুক্ষণ ধরে অনু একটা কাশফুল ছেঁড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু পারছে না। তূর্য বুকে দুই হাত গুজে অনুর কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। সামান্য কাশফুল ছেঁড়ার শক্তি নেই এই মেয়ের।

সামান্য একটা কাশফুল ছেঁড়ার শক্তি নেই তার আবার কত ভাব।

তূর্যর কথা শুনে অনু ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
খোঁচা মেরে কথা বলবেন না একদম। দেখতেই তো পাচ্ছেন যে ছিঁড়তে পারছি না। আপনি এসে ছিঁড়ে দিয়ে যাবেন তা না খোঁচা মেরে যাচ্ছেন। অসভ্য লোক একটা।

তূর্য কয়েক টা কাশফুল ছিঁড়ে এনে অনুর হাতে দিলো। কাশফুলের কোমল শুভ্রতার ছোঁয়া পেয়ে আনন্দে আত্মহারা অনু।কী নরম তুলতুলে।

তূর্য আর অনু পাশাপাশি হাঁটছে। তূর্যর যে ক্ষুধা ছিল তা যেনো নিমিষেই হারিয়ে গেছে।
তূর্যের হাইটের তুলনায় অনু অনেক ছোট।
তাই সে তূর্যর আগে আগে হাঁটছে।
খাম্বা একটা।

কিছু খাবেন?

আমার ক্ষিদা নাই। আপনি খেয়ে নিন।

আপনি না খেলে আমি বাড়িতে গিয়ে খেয়ে নিবো।

তূর্যর বলা কথা টা শুনে হা করে তাকিয়ে রইল অনু। এমন ভাবে কথা টা বলতে ছিল মনে হচ্ছিল, আপনি না খেলে আমি ও খাবো না। কিন্তু না পুরো বিপরীত একটা কথা বললো। লোকটার কথা বার্তা শুনে বুঝা যায় যে এই লোক ন্যাকামি করতে পছন্দ করে না।

আমি ম্যাসে ফিরবো। অনেক সময় হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা হয়ে যাবে।

হয়ে যাক সন্ধ্যা। আপনার সাথে আজ রাতের শহরটা ঘুরে বেড়ানোর নিষিদ্ধ ইচ্ছে জাগছে মনে।

আমার এত শখ নাই। আপনার সাথে ঘুরতে যাবো কেন? বিয়ের পর আমার জামাই এর সাথে ঘুরবো।

ধরে নিন, বিয়ের আগেই হবু জামাইয়ের চেয়ে সাথে রাতের শহর দেখতে বিকেলেই বের হয়ে গেছেন।

এটা কি অজানা কোনো রাশি যে ধরে নিবো? আপনি যে আমার হাসব্যান্ড হবেন তার গেরান্টি কী শুনি?

আমি যে আপনার হাসব্যান্ড হতেও পারি এটা কি ভেবে দেখেছেন?

আমার এত ভেবে কাজ নেই। সামনে আমার পরীক্ষা।তাই পরীক্ষার আগে আমাকে এমন হুট হাট ডেকে নিয়ে আসবেন না।

আমি তো আপনাকে ডাক দিবোই আমার যখন ইচ্ছে করবে ঠিক তখনই।ওটা মাঝ রাতে ও হতে পারে। আপনি না এসে থাকতে পারবেন তো অনুমেঘা?

তূর্যর মুখে এই প্রথম নিজের নাম টা এত সুন্দর করে শুনলো অনু। কেন জানি বেশ ভালো লাগা কাজ করছে বুকের বাঁ পাশে। সাধারণের তুলনায় হার্ট বিট যেন আরও বেড়ে গেলো। কেমন একটা অনুভুতি। তবে যাই হোক, অনুভূতি টা সুন্দর।অন্য রকম সুন্দর।

অনু কে নিজের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো তূর্য।অনু ঘোরের মাঝেই বলে উঠলো,
আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর।

আপনার কাছ থেকে এই প্রশংসা পেয়ে আমি ধন্য।

কেন আমি ছাড়া কী অন্য কেউ কখনো প্রশংসা করেনি?

অনেক জন করেছে। আমি তেমন কিছু বলিনি।

আপনার হাসিটা আসলেই সুন্দর। হাসলেই গালে টোল পড়ে বিধায় এত কিউট লাগে দেখতে।

তূর্য প্রতি উত্তরে কিছু না বলে বিনিময়ে আবারও সেই হাসিটা দিলো।

এই ভাবে হাসবেন না। বুকের মাঝে ধক করে উঠে।

প্রেমে পড়ে গেছেন।বলে দিলেই তো পারেন।

আপনার মতো পাগলের প্রেমে আমি পড়তে যাবো কোন দুঃখে? আমার জন্য কী ছেলের অভাব হইছে? আমি তো অন্য মেয়েদের কথা বলছি।

অন্য কাউকে নিয়ে আপনাকে এত ভাবতে হবে না। আপনার জন্য ছেলের অভাব হয় নাই। কিন্তু আমার মতো ছেলের অভাব হইছে। বুঝলেন মিস পরমানু? না বুঝলে বলেন আবার বুঝিয়ে দিবো।

আপনি কি আমাকে কোনো অঙ্কের সমাধান বুঝাচ্ছেন যে বুঝবো না? আমাকে দেখে কী আপনার বোকা মনে হয়?

শুধু বোকা না,আস্ত একটা গাঁধী মনে হয়।
তূর্যর কথা শুনে অনু রেগে গিয়ে ওর পিঠে ইচ্ছে মতো কিল মারলো।

উফফ বিয়ের আগেই এত অত্যাচার? বিয়ের পর না জানি কি করবে আমার অবস্থা? সেই চিন্তায় চিন্তায় শুকিয়ে যাচ্ছি।

আপনাকে বিয়ে করতে যাবে কোন পাগলে?

ওমা পাগলে কেন বিয়ে করবে? আপনি থাকতে আমি পাগল কে বিয়ে করবো এমন ছেলে আমি না।

আপনার সাথে কথা বলাটাই বৃথা।
.
.
জেমি কে তোমাদের কেমন পছন্দ হয়েছে বললে না তো তৃণা?বিয়েটা কী হবে?নাকি হবেনা। কিছুই তো জানালে না।

সব দিক দিয়ে ঠিক আছে কিন্তু সমস্যা হলো মেয়ের ড্রেসাপ। শাড়িটা ও শালীন ভাবে পড়তে পারে না। অতিরিক্ত আধুনিকতার ছোঁয়া সব কিছুতেই।এত আধুনিক মেয়ে ঠিক মতো সংসার করতে পারবে কিনা তা নিয়ে একটু চিন্তা হচ্ছে আমার।

এই বিষয় নিয়ে এত চিন্তার কী আছে? বিয়ের পর সব কিছু তুমি নিজের হাতে ওকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিবে আম্মু।

তার মানে তুই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাস?

আম্মু তুমি আমার এক্সের কথা ভুলে গেছো?সে অনেক আধুনিক মেয়ে ছিল।সে কী বলে ছিল আমি নাকি গ্রাম্ম খেত কোনো একটা মেয়ে কে বিয়ে করে নিবো। এখন ঐ মেয়েরে দেখাতে হবে না আমার বউ ওর চেয়ে ও বেশি স্মার্ট। সুন্দরী সব দিক থেকেই ওর থেকে পারফেক্ট।

শ্রেয়া আপু তোকে কী ছ্যাকা টাই না দিয়ে ছিলো ভাইয়া।ছ্যাকা খেয়ে তুই পুরো দেব দাস হয়ে গিয়েছিলি। এখন অবশ্য অনেক টা ঠিক আছিস আগের তুলনায়।

তূর্য তো দেখতে গেলো না জেমি কে।

তূর্য তো আমার থেকে সুন্দর দেখতে।যদি জেমি তূর্য কে পছন্দ করে ফেলতো তাহলে তো ওর সাথে আমার বিয়ে টা হতো না।তাই আমি ওকে যেতে বারন করে ছিলাম।

আম্মু দেখেছো বড় ভাইয়া কেমন বিয়ে পাগলা হয়ে গেছে? ছোট ভাইয়া কে ও দেখতে যেতে দেয়নি।

তাহলে এখন কী জেমির আব্বু আম্মু কে আমাদের মতামত জানিয়ে দিবো যে মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। এবং তাদের মতামত ও শুনে নিবো। দু’পক্ষের যদি পছন্দ হয়ে যায় তাহলে খুব শীঘ্রই শুভ কাজটা শেষ করে ফেলবো।কী বলো তৃণা?

মিসেস তৃনা বসা থেকে উঠে রুমে যেতে যেতে উত্তর দিলেন,যা ভালো মনে করছো তাই করো। আমি আর আলাদা করে কিছুই বলবো না।যার সাথে সারাটা জীবন সংসার করবে তার পছন্দ হলেই হলো।

মায়ের কথা টা ঠিক হজম হলো না তিয়াসের।সে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
মা কী রাগ করেছে আব্বু? আম্মুর কী জেমি কে পছন্দ হয়নি? কিছুই তো ক্লিয়ার করে বললো না।

তোর মাকে চিনিস না?হয়তো পছন্দ হয়েছে আবার নয়তো। আমি পরে জেনে তোকে বলবো।

বড় ভাইয়া তুই তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ছোট ভাইয়ার রাস্তা ক্লিয়ার কর।তোরা দুজনে বিয়ে করে ফেললেন আমি দুইটা কিউট কিউট ভাবি পাবো।

আমরা বিয়ে করে ফেলার পর তোকে ও বিয়ে দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে বাড়ি ফাঁকা করবো।

আব্বু দেখছো তোমার ছেলে কী বলে? বাবার গলা জড়িয়ে ধরে অভিমানী কন্ঠে বলে উঠে জুঁই।
বাবা এক হাত দিয়ে জুঁই এর মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললেন আমার রাজকন্যা কে আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবো না। আমার রাজকন্যার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।

বাবার কাছে তার মেয়েরা রাজকন্যাই হয়। হোক না সেই বাবা গরীব কিংবা ধনী। তাদের কাছে তাদের মেয়েরা একটু বেশিই আদরের।
.
.
চার দিকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। মিনিট পাঁচেক আগেই তূর্য অনু কে ম্যাসের সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়।অনু কে ম্যাসের সামনে নামিয়ে দিয়ে সে সোজা বাড়িতে চলে আসে।ক্ষিদার জ্বালায় আর টেকা যাচ্ছে না। সেই কখন থেকে খাবে খাবে করে আর খাওয়া হয়নি। বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে মাকে ডাকতে লাগলো।
মিসেস তৃনা তখন সবে মাত্র নামাজ পড়ে হাতে তসবিহ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসেন।ডাইনিং টেবিলে আগে থেকেই তূর্য বসে ছিল। তূর্যর মুখ দেখেই তিনি বুঝে গেলেন সারা দিনে এই ছেলে কিচ্ছু খায়নি।না খেয়ে টই টই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে নবাব পুত্র।

চলবে,,,,