পূর্ণতা পর্ব-২৫+২৬

0
660

#পূর্ণতা❤️
#Writer_তানজিলা_তাবাচ্ছুম❤️

২৫ &২৬

‘ সরি আবার ডিস্টার্ব করছি। আসলে কিছু না মনে করলে কিছু প্রশ্ন করতে পারি?’

অনেকটা দ্বিধা নিয়ে বললো আলোক। বৃদ্ধ মহিলাটি মাথা তুলে বললো,

‘ হ্যাঁ বাবা বলো।’

তারপর আলোক শুষ্ক ঠোঁট জোড়াকে জিহ্বা দ্বারা ভিজিয়ে বললো,

‘ আচ্ছা আপনি এইসব কিভাবে জানলেন? না মানে চাঁদের বাবা মা ছাড়া তো কেউই জানত না চেয়ারম্যান এর সম্পর্কে । তাহলে আপনি কিভাবে জানলেন?’

মহিলাটি আলোকের কথা শুনে বসলেন তারপর বললেন,

‘ হ্যাঁ কেউ ই জানতো না। কিন্তু ওইসব আর এখন নেই।তার কয়েকবছর পর সব ধরা পড়েছে। আর বাচ্চা পাচার করার কাজ শুধু ছেলেরা সহ অনেক মেয়েও এই কাজে নিয়োজিত ছিল।’

আলোক কপাল কুচকালো।

‘ ওরা ধরা পড়ার পর জানতে পারি আমার এক চেনা মহিলাও এইসব কাজে ছিল। তখন তার সাথে দেখা করার পর এইসব জানতে পারি। ‘

আলোক কি বলবে বুঝতে পারছে না। বাহিরে যাওয়ার পর এইসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আলোকের মাথায় একটা প্রশ্ন এলো যে এই মহিলাটি কেমন করে এইসব জানলো? আর তাই আবার সে এই মহিলাটির কাছে এসেছে। আলোক ইতস্তত করে বললো,

‘ ইয়ে__আসলে___

মহিলাটি হেসে বললেন,

‘ থাক বাবা আমি কিছু মনে করি নি। বুঝতে পেরেছি তোমার ব্যাপারটা।’

আলোক মৃদু হাসলো। তারপর বিদায় নিয়ে চলে আসতে লাগলে বৃদ্ধা পিছন থেকে বললো,

‘ একদিন চাঁদ কে নিয়ে এসো। অনেকদিন দেখা নেই।’

আলোক পিছনে ঘুরে হাসি মুখে উত্তর দেয়,

‘ জি ইন শা আল্লাহ্।’

এখান থেকে বের হওয়ার পর আলোকের মনে পরে সন্ধ্যার দিকে তো আজ রিপোর্ট দিবে। পকেটে হাত গুজতেই দেখলো সে ফোন অনে নি। পরিশেষে আলোক আর বেশি দেরি করলো না দ্রুত চললো।

______________

রিপোর্ট হাতে নিয়ে থরথর করে কাঁপছে আলোক। তার পুরো শরীর ঝিমঝিম করছে। মাথাটা যেনো ঘুরে উঠছে আলোকের। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে আর বারবার ঢোক গিলছে । তার কেমন লাগছে সে বোঝাতে পারবো না। আলোক কখনো বাবা হতে পারবে না ভেবেই তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু সমস্যা তার নয় সমস্যা চাঁদের। চাঁদ বন্ধ্যা। আর চাঁদ আলোকের ভালোবাসা। বাচ্চার জন্য চাঁদ কে ছাড়বে কীভাবে আলোক? আর চাঁদের জীবন ছোট থেকেই অনেক কষ্টের। তাকে আবার কষ্ট দিবে কিভাবে? আলোক ভেবে পাচ্ছে না চাঁদ শুনলে তার অবস্থা কেমন হবে? চাঁদের তো বেবি খুব পছন্দ কিন্তু আফসোস তার এই ইচ্ছে কখনো পূরণ হতে পারল না। যখন শুনবে সে কখনোই মা হতে পারবে না তখন তার কেমন লাগবে? ভেবেই আলোকের শরীর থরথর করে কাঁপছে। যাই হোক আলোক চাঁদ কে আর কষ্ট দিবে না। কিছুতেই না। আলোক রিপোর্ট নিয়ে চললো বাড়ির উদ্দেশ্যে। জানে না কি হবে। দেখতে দেখতে এসে গেলো আলোক। মুখের তার কষ্টের ছাপ। ভেজা ভেজা মুখ নিয়ে আলোক ভিতরে ঢুকলো। আলোক ঢুকতেই আশার দেখা পেলো। আলোক কে দেখে আলোক একটা ঢোক গিললো। তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে যেতেই আশা অনেক উচ্ছাস নিয়ে বললো,

‘ কি হয়েছে আলোক ? তোর মুখ এইরকম কেনো?’

আলোক প্রতত্তরে কিছু বললো না। আশা আলোকের হাতে লক্ষ্য করে বলে উঠলো,

‘ রিপোর্টে কি আলোক? তুই তো রিপোর্ট আনতে গেছিলি তাইনা?’

আলোক কেমন আনমনা হয়ে আছে। আলোক পেপার টাকে আলগা করে ধরতেই সেটা হাত থেকে পড়ে গেলো কিছুটা দূরত্বে নিচে। আশা সামনে তাকালো , সাথে আলোক ও চোখ তুলে তাকালো। আলোক সামনে গিয়ে রিপোর্ট তুলবে তার আগেই একজন সেটাকে তুলে নেয়। তাসলিমা! তাসলিমা তুলতেই ভিতর ভিতর সে খুব খুশি হয়েছে কিন্তু প্রকাশ করতে পাড়ছে না। তাসলিমা তুচ্ছ করে বলে উঠলো,

‘ ওহ তো বোবা। ওহ আসলে তোর বউ মা হইতে পারবে না কখনো!’

বলে চোখ তুলে আলোকের দিকে তাকালো। আশা সাথে সাথে বড় বড় চোখ করে আলোকের দিকে তাকালো। আলোক মাথা নিচু করে আছে। কিন্তু হঠাৎ পিছন থেকে একজন মহিলা তাচ্ছিল্য ভাবে বলে উঠলো,

‘ জানতাম। যেই বউ রে নিতে অত দুলাদুলি করত সে বউ কোনো দিন বংশের প্রদীপ ই দিতে পারবো না।’

আলোক আবার পিছনে তাকালো সাথে বাকি সবাই তাকালো। রাহেলা ভিতরে হেলেদুলে ঢুকলো।তারপর কেমন বাকা হেসে বললো,

‘ দেহো এহন। এমনেই হয়। বেশি পীড়িত দেখালে এমনি হয়। এহন তো পীড়িত ছাইড়া বিয়া করান লাগব।’

আলোকের মণ মেজাজ এমনিতেই ভাল নেই। তারপর উপর ওনার কথা আলোকের ভিতরে যেনো তীরের মতন লাগছে। আলোক নিজেকে কন্ট্রোল করে শান্ত ভাবে বললো,

‘ অন্যের বাড়িতে উঁকি না দিয়ে নিজের বাড়ি ঘর দেখেন। আমাদের ফ্যামিলি ম্যাটার সলভ করার জন্য আমরা আছি। আপনি আমাদের কথা ভেবে নিজের মস্তিষ্ক কে কষ্ট দিবেন না। এবার আসতে পারেন।’

রাহেলা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গেলো। মহিলাটি কেমন জানি। যখনি আসে খালি খোটা, আর উস্কানি মূলক কথা বলে। আসলে গ্রামের কিছু মানুষের স্বভাব ই এইরকম। আলোক আর কিছু না বলে তসলিমা র হাত থেকে রিপোর্ট নিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে যায়। দরজার সামনে আসতেই আলোক মনে সাহস যোগিয়ে ভিতরে ঢুকলো দেখলো পুরো ঘরেই অন্ধকার। আলোক লাইট জ্বালাল।ঘরে্র মেঝেতে বসে আছে চাঁদ।আলোক নরম কন্ঠে ডেকে উঠলো,

‘ চাঁদ?এই চাঁদ?’

চাঁদের কোনো সারা পাওয়া গেলো না। আলোক কাছাকাছি আসতেই দেখলো চাঁদের চোখ বয়ে পানি পড়ছে। আলোক সামনে দেখলো তার ফোন পরে আছে। আলোকের আর বুঝতে বাকি রইলো না। নিরব বলেছিল সে কল করেছিল আর সব বলেছিল। তার মানে চাঁদ সব জেনে গেছে।আলোক চাঁদের বহু ধরে ডাকলো,

‘ চাঁদ দেখো। চাঁদ এই চাঁদ।’

তারপর চাঁদ কে ঝাঁকালো। চাঁদ একটু চকিয়ে উঠলো। তারপর আলোকের হাত সরালো।

‘ চাঁদ কি হয়েছে তোমার?’

চাঁদ বসা থেকে দাড়ালো।চাঁদ যাবে আলোক তার হাত ধরলো। তারপর বললো,

‘ কি হয়েছে? এমন করছো কেনো?’

চাঁদ আলোক কে ধাক্কা মেরে সরালো। আলোক কিছু টা দূরে গিয়ে বললো,

‘ হোয়াট হ্যাপেন্ড চাঁদ?’

চাঁদ কাঁদতে লাগলো। তারপর ইশারা করে কিছু বলল। আলোক বোঝার চেষ্টা করলো। বুঝতেই নিজের সর্ব জোড়ে একটা থাপ্পর মারলো। আজ দ্বিতীয় বার আলোক চাঁদ কে থাপ্পর মারলো। কিন্তু কি করবে চাঁদ যা বলতে চেয়েছে তাতে আলোকের প্রচন্ড রাগ লাগছে।তারপর রাগী কন্ঠে বলল,

‘ পাগল হয়েছো তুমি? ?মাথা খারাপ হয়েছে?’

চাঁদ নিরবে কাদঁছে। আলোক বুঝতে পারলো তার থাপ্পর মারাটা উচিত হয়নি। তাই সে আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

‘ সরি।‌রিয়ালি সরি।’

তারপর হাত ধরে বসলো বিছানায়। বেশকিছুক্ষণ নিরবতা তাদের মাঝে। আলোক নিরবতা কেটে বলে উঠলো,

‘ চাঁদ লুক অ্যাট মি!’

‘ চাঁদ!’

চাঁদ তাকালো।আলোক শান্ত ভাবে বললো,

‘ চাঁদ! আমিও একটা অনাথ ছেলে জানো?’

চাঁদ তো আগে থেকেই জানে। কারণ সেদিন আশা বলেছিল। কিন্তু আলোক যে এইসব জানে তা চাঁদ জানত না।

‘ আমার আসল মা আমি ছোট থাকতেই মারা গেছে। বাবা তো দেখোই সবসময় ব্যাস্ত থাকে। যদি আশা মা না থাকতো তাহলে জানো আমিও আজ অনাথ আশ্রমে থাকা এক ছেলে হতাম।’

চাঁদ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

‘ এই পৃথিবীতে হাজার হাজার এইরকম অনাথ বাচ্চা আছে। আমরা নাহয় তাদের মধ্য থেকে একজনকে আমাদের ‘পূর্ণতা’ করে আনলাম।তাতে কি কোনো সমস্যা হবে চাঁদ?

চাঁদ মাথা নিচু করলো।কারন বলার মতন তার কাছে কিছু নেই।

‘ আমি জানি তুমি চাও। আমি আবার বিয়ে করি ।কিন্তু আমার দ্বারা এটা সম্ভব হবে না চাঁদ। কিছুতেই হবে না।

চাঁদ হুহু করে কেঁদে দিল। আলোক তাকে জড়িয়ে বলল,

‘ কাঁদো কেনো পাগল? আমার থেকে এত সহজে ছাড়া পাবে না তুমি। অন্তত আমি না মরা পর্যন্ত। তাই এইসব চিন্তা ছেড়ে দাও।

______________________

মুখের ভাব বৈ আজন্মকাল যার অন্য ভাষা নেই তার চোখের ভাষা অসীম উদার এবং অতলস্পর্শ গভীর ,অনেকটা স্বচ্ছ আকাশের মতো, উদায়াস্ত এবং ছায়ালোকের নিস্তব্ধ রঙ্গভূমি। এই বাক্যহীন মানুষের মধ্যে বৃহৎ প্রকৃতির মতন একটা বিজন মহত্ব আছে। সে নির্জন দ্বিপ্রহরের মত শব্দ হীন এবং বাক্য হীন।

অনেকক্ষণ যাবত ঘুমন্ত চাঁদের দিকে তাঁকিয়ে আছে আলোক আর ভাবছে এইসব। তার আলোক উঠে চললো তার মায়ের রুমে। আশার কাছে আস্তে আলোক প্রতিবারের মতন অনুমতি নিয়েই ঢুকলো। তারপর আশার কাছে গিয়ে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘ মা তোমরা কি চাও আমি দ্বিতীয় বিয়ে করি?’

আশা কিছু বললো না। কিন্তু তার ভাবসাবে প্রকাশ পাচ্ছে সে চায়। আলোক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

‘ আমি আমি কিছুতেই পারবো না চাঁদের উপস্থিতিতে আরেকটা বিয়ে করতে।’

আশা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘ মা আমি জানি ইসলামে সূরা আন নিসার আয়াত নং তিন ছেলের চার টা বিয়ের কথা বলা হয়েছে। আর সামর্থ্য থাকলে করতেও বলা হয়েছে। আর আমি জানি আমার তা আছে। কিন্তু__!!

আশা মনোযোগ সহকারে শুনছে আলোকের কথা।

‘ বেশির ভাব মানুষই একাধিক একাধিক বিয়ে করে লাফায়। কিন্তু আসলে এই একাধিক বিয়ের শর্ত কেউ জানে? কেউ মানে? সামর্থ্য থাকলে একাধিক বিয়ে করা যাবে। কিন্তু এর পরের আয়াত কি কেউ দেখে? “আর তোমরা যতই কামনা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে কখনো পারবে না। সুতরাং তোমরা (একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে তোমরা (অপরকে) ঝুলন্তের মত করে রাখবে। আর যদি তোমরা মীমাংসা করে নাও এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[৪:১২৯] আন নিসা। তাপসীরে আরো বলা আছে, এটা এক দ্বিতীয় অবস্থা। কোন ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকলে আন্তরিক সম্পর্ক ও ভালোবাসায় সে সবার সাথে এক রকম আচরণ করতে পারবে না। কেননা, ভালোবাসা হল অন্তরের কাজ যা কারো এখতিয়ারাধীন নয়। এমনকি নবী করীম (সাঃ)-এরও তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে আয়েশা (রাযীআল্লাহু আনহা)র প্রতি সব চেয়ে বেশী ভালোবাসা ছিল। চাওয়া সত্ত্বেও সুবিচার না করতে পারার অর্থই হল, আন্তরিক টান এবং ভালোবাসায় অসমতা। আন্তরিক এই ভালোবাসা যদি বাহ্যিক অধিকারসমূহে সমতা বজায় রাখার পথে বাধা না হয়, তাহলে তা আল্লাহর নিকট পাকড়াও যোগ্য হবে না। যেমন নবী করীম (সাঃ) এর অতি উত্তম দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক আন্তরিক এই ভালোবাসার কারণে অন্য স্ত্রীদের অধিকারসমূহ আদায়ের ব্যাপারে ত্রুটি করে এবং যার প্রতি বেশী ভালোবাসা বাহ্যিকভাবে তার মত অন্য স্ত্রীদের অধিকার আদায় না করে তাদেরকে দোদুল্যমান অবস্থায় ছেড়ে রাখে; না তাদেরকে তালাক দেয়, আর না স্ত্রীত্বের অধিকারসমূহ আদায় করে। এটা অতি বড় যুলুম; যা থেকে এখানে নিষেধ করা হয়েছে।(বায়ান ফাউন্ডেশন)

বলে আলোক থামলো। আশা হয়তো বুঝতে পড়ছে আলোক কি বলতে চাইছে।

‘ মা আমি নিজে confidence নিয়ে বলতে পারি , আমি চাঁদের উপস্থিতিতে আরেকজন ভালোবাসতো পারবো না। আমি কখনোই তাকে চাঁদের মতন মন থেকে অধিকার দিতে পারবো না। হয়তো আমি তাকে বাচ্চার জন্য বিয়েও করলাম। কিন্তু কেউ না জানুক, আমি আর আল্লাহ তো জানি যে আমি মন থেকে দুজনকে সমান অধিকার দিতে পারছি না।’

বলে আলোক দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।

‘আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই’জন স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়ল, ক্বিয়ামাতের দিন তার পঙ্গু অবস্থায় উপস্থিত হবে।[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৩৩,হাদিসের মান: সহিহ হাদিস,Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD ]’

আশা মৃদু হাসলো।

‘ তাহলে মা কিভাবে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারি? আমার মন আমার নাফস তো আমার কথা মতো চলবে না। যদি বিয়ের পর আমার মন ওই মেয়েটার দিকে না যায়? তখন কি হবে মা? মেয়েটার সাথে অন্যায় করা হবে। যার জন্য কিয়ামতের দিন আমাকেই জবাব দিহিতা করতে হবে। বেশির ভাগ মানুষ ই দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে নবী সাঃ এর উদাহরণ পেশ করে। কিন্তু আমরা কি আদৌ ওনার মতন হতে পারবো? উনি তো ছিলেন নিষ্পাপ। আল্লাহর নবি। আমরা কি কখনোই তার মতন হতে পারবো? অন্য ক্ষেত্রে নবি সাঃ এর কথা বললে, মানুষ বলে ওনার সাথে আমাদের তুলনা করাটা বোকামি। কারণ উনি আল্লাহর নিষ্পাপ নবী আর আমরা পাপী বান্দা। কখনোই তার মতন হতে পারবো না। তাহলে বিয়ের ক্ষেত্রে কেনো ওনার সাথে তুলনা করা হয় ?’

আশা আলোকের মাথায় হাত বুলাতে শুরু করলো।

‘ বিয়ে করা টা সহজ মা। কিন্তু আমি মন থেকে যদি একজনের উপর ঝুঁকে পরি তাহলে সেই‌ ক্ষেত্রে একাধিক বিয়ে নাজায়েজ হবে মা। আর আমার মন তো আমার কথা অনুযায়ী চলবে না।’

আশা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

‘ এখন তুই কি করতে চাস?’

আলোক অনেকটা অসহায়ত্বের মতন বললো,

‘ মা আমি তো একজন অনাথ মা। যদি তুমি আমাকে না দেখতে ,আমাকে ভালবাসতে, যদি তুমি না থাকতে তাহলে আমিও আজ অনাথ থাকতাম মা।’

‘ মা আমি চাই এই দুনিয়ায় অনেক অনাথ বাচ্চা আছে। সেখান থেকে নাহয় একজন কে আনলাম। তাহলে কি খুব খারাপ হবে মা?’

আশা হেসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো। আশা জানে তার ছেলে কখনোই কোনো ভুল ভাল ডিসিশন নেয় না। যা করে তা অনেক ভেবেই করে আলোক। আলোক কে টেনে আশা কপালে একটা চুমু দিল।তারপর হাসি মুখে বললো,

‘ তুই যা ভালো বুঝিস তাই কর বাবা।’

তারপর মায়ের সাথে অনেক কথা বলে।আলোক চাঁদের পুরো অতীত আশাকে বললো।আশা পারেনি নিজের চোখের কর্নিশের পানি কে আটকাতে। হুহু করে কেঁদে দিয়েছে। আলোক সব জানিয়ে চললো। আশা আর কিছু বলে নি কারণ আশার নিজেই একজন বন্ধ্যা। আলোক তার নিজের ছেলে নয় তবুও সে আলোক কে অনেক ভালোবাসে। কারণ টা আশা নিজেও জানে না।

___________

এভাবেই কেটে যায় দু তিন দিন। আলোক ছাড়ে নি চাঁদের হাত। যাকে ভালোবাসে কি করে ছাড়বে তার হাত? তাসলিমা রিদওয়ান এখনো যায়নি। কারণ আর দু সপ্তাহ পরেই তাদের মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী। এইদিনে প্রতি বছর রায়হান আর আশা গরীব, অসহায়, মিসকিন মানুষদের খাবার খাওয়ায়। এইবার যখন রিদওয়ান রা এসেছে তাই ভেবেছে এটার পরেই তারা চলে যাবে। দেখতে দেখতে এসে গেলো সেদিন। আলোক নিরব আর ইরা কেও ডেকেছে। চাঁদ সাথে আলোকের্ মধ্যে বাচ্চার ব্যাপারে আর কোনো কথা হয়নি আর চাঁদ ও সাহস পায়নি বলার। তাসলিমা বা অন্য কেউ কিছু বলে নি।

__________

এখন প্রায় সন্ধ্যা । দুপুরে অনেক মানুষ কে খাবার খাওয়ানো হয়েছে। নিরব ইরাও এসেছে কিন্তু ‌তারা আশার সাথে কথা বলছে ।এখন এখানে চাঁদ আলোক একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদ ইশারা করে আলোক কে সামনে তাকাতে বললো। আলোক‌ সামনে তাকাতেই থমকে গেল। আলোকের রাগ উঠছে প্রচন্ড।

#চলবে….

*রি-চেক হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]