#পূর্ণতা ❤️
#লেখনীতে- তানজিলা তাবাচ্ছুম ❤️
২৭.
‘ এই! এই ছেলে ! এই ছেলে এখানে কি করছে?’
রাগান্বিত হয়ে বলল আলোক। তারপর নাহিদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ তোর কি নিম্নতম লজ্জা বলতে কিছু নেই? এখানে আবার আসার সাহস পেলি কোথা থেকে?’
নাহিদ ইতস্তত করে বলল,
‘ ভাই আমার ক_ কথা শুন।’
‘ বের হ বের হ এখান থেকে।’
নাহিদ আলোকের হাত ধরে অনুতপ্ত কন্ঠে বলল,
‘ ভাই আমি নিজের করা কাজ কর্মে অত্যন্ত লজ্জিত। ভাই আমি তোর আর ভাবির থেকে ক্ষ____
আলোক একটা জোরে ধাক্কা দিলো নাহিদকে। নাহিদ কিছুটা দূরে সরে গেল। তারপর আলোক রাগী কন্ঠে বলল,
‘ ভালো মতন চলে যা এখান থেকে। তোর মতন ছেলে কখনো বদলাতে পারে না। আমাকে কোনো স্টেপ নিতে বাধ্য করিস না। চলে যাহ।[ জোর কন্ঠে]
নাহিদ আর থাকলো না। ওখান থেকে চলে আসলো। নাহিদ যেতে আলোক চাঁদের দিকে তাকিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলল,
‘ ওই এখানে এসেছে কেন?
চাঁদ ভয় পাচ্ছে আলোককে। কিন্তু এই মুহূর্তে আলোকের প্রচন্ড বিরক্তের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে চাঁদের ভয় নামক এই জিনিসটা। আলোক আবার বলল,
‘চাঁদ স্পিক আপ।’
চাঁদ মাথা নিচু করে আছে।
‘ চাঁদ![ রাগান্বিত হয়ে]
চাঁদ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো। আলোক বলল,
‘ ওকে কে ডেকেছে?’
চাঁদ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কাল রাতে চাঁদকে তাসলিমা ডেকেছিল। আর তাসলিমা চাঁদকে বলে, নাহিদ নিজের কর্মের জন্য অনুতপ্ত।সে চাঁদ ও আলোকের থেকে ক্ষমা চেতে চায়। তাই এই দিনে এখানে আসতে চায় নাহিদ। তাসলিমার কথা বলার ভঙ্গি এমন ছিল যে চাঁদ না বলতে পারে নি। পরিশেষে তাসলিমার শক্ত করে বলে নাহিদ আসলে কি চাঁদের কোনো সমস্যা আছে? চাঁদ তাসলিমার দিকে তাকায় না। কারন আলোক চায় না নাহিদ আসুক আর চাঁদ আলোকের কথার বিরুদ্ধে যেতে চায় না। কিন্তু তাসলিমা শেষে একটু রাগ দেখিয়েই কথা বলে যার ফলস্বরূপ চাঁদ ‘হ্যা’ বলে দেয়। আর চাঁদ এমনিতেও চায় তার জন্য যাতে আলোক ও নাহিদের মধ্যে দূরত্ব না থাকুক । তাদের ভাই ভাইয়ের যাতে আবার মিল হয়। তাদের বিছিন্নের কারণ চাঁদ হতে চায় না। কিন্তু এখন আলোক কি বলবে ভেবেই চাঁদ ভয় পাচ্ছে!!
‘ চাঁদ স্পিক আপ!’
নিরুপায় হয়ে চাঁদ নিজেকে ইশারা করলো। আর আলোক কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল,
‘ তোমাকে কি বলেছিলাম মনে নেই? এইসব বিষয়ে আমার পারমিশন ছাড়া কিছু না করতে! বলেছিলাম না?’
চাঁদ ঢোক গিলছে। আলোক তাকে ধমক দিয়ে বলল,
‘ বলো।’
চাঁদ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো। সাথে সাথে আলোক তার দু বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলতে লাগলো,
‘ তোমার উপর কি আমি খুব বেশি জোর দেখাই?খুব বেশি কি আমি তোমার কাছ থেকে চেয়েছিলাম? শুধুমাত্র দুটা কাজেই আমার পারমিশন নিতে বলেছিলাম! এটা কি খুব বেশি হয়েগিয়েছিল চাঁদ?’
চাঁদ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কেঁদে দেয়। আলোক তার বাহু জোরা ছেড়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ একদম কাঁদবে না। কান্না অফ করো। আমার দূর্বলতা নিয়ে আর খেলো না। জাস্ট স্টোপ ক্রায়িং।’
আলোক তাকাচ্ছে না। কারন আলোকের দূর্বলতা অশ্রুজল। সে যে কারোর চোখে এটা সহ্য করতে পারে না। আর তার প্রিয়জনের তো একদমি না। চাঁদ নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রয়াস চালায়। কারন এই মুহূর্তে আলোকের সামনে এভাবে ভয়ে কাঁদলে সে আরো রেগে যাবে। চাঁদ আলোককে ভালো ভাবে বুঝাতে চায়। তার আলোক নিশ্চয়ই বুঝবে। চাঁদ গিয়ে আলোকের হাত ধরলো। আলোক তাকাতেই তার হাতে একটা কিস করলো। ব্যাস! আলোকের মন গলে গেল। সে মনে মনে কিছুটা খুশি হলো। কিন্তু পরক্ষনে চাঁদ যা ইশারা করে বলতে চাইলো তাতে আলোকের রাগলো আর চেঁচিয়ে বলল,
‘ তুমি সবসময় নিজের কথাই দেখ। আমার কোনো কথা শোনোও না মানোও না।’
বলে নিজের হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে নিল। তারপর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
‘ তোমার সাথে এই মুহূর্তে আমার কোনো কথাই বলতে ইচ্ছে করছে না জাস্ট বিরক্ত লাগছে।’
বলে হাঁটা দিবে চাঁদ এসে তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কিন্তু আলোক নিজের মন কে শক্ত করার চেষ্টা করছে। না আজ সে কিছুতেই নরম হবে না। আজ আলোকের মনে এক সমুদ্র অভিমান। আলোক চাঁদকে ছাড়িয়ে হাঁটা দিলো তারপর পিছনে ঘুরে জোরে জোরে বলল,
‘ কাইন্ডলি প্লিজ আমাকে ডির্স্টাব করবে না। মুক্তি দাও আমাকে একটু।’
বলে চলে গেল আলোক। আলোকের যাওয়ার দিকে চাঁদের ছলছলে চোখ দুটি তাকিয়ে আছে। আজ আলোকের চাঁদের অনেক অভিমান। চাঁদ কি পারবে আলোকের এই অভিমান ভাঙ্গাতে? চাঁদের বিশ্বাস তার আলোক তার সাথে বেশিক্ষণ রেগে থাকবে না। চাঁদ আলোকের পিছু পিছু যেতে লাগলো। এদিকে এত চেঁচামেচি শুনে ইরা, নিরব,আশা আসলো। দেখলো আলোক হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে। আর তার ঠিক কিছুটা পিছনে চাঁদ চোখের পানি মুছতে মুছতে যাচ্ছে।আশা এমনটা দেখে বলল,
‘ কি হয়েছে ওদের?’
ইরা মুখে খানিকটা হাসি টেনে বলল,
‘ হয়তো ওদের মধ্যে অভিমাননী খেলা চলছে। তাই একজন আরেকজন রাগ ভাঙ্গাবে।’
আশা ঠিক ভাবে বুঝলো না। নিরব ভ্রু জোড়া উঁচু করে বলল,
‘ চলুন অ্যান্টি । ওদের সমস্যা ওরা নিজেরাই মিটমাট করে নিবে।[ হেসে হেসে]
আশা আর কিছু বলল না। তারা সবাই আগের মতন আগের জায়গায় চলে গেল।
__________
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ। আলোক ঢোকা মাত্রই দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। চাঁদ দরজায় নক করলো। কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। চাঁদ জোরে জোরে শব্দ করলো দরজায়। আর তাতে আলোকের কর্কশ কন্ঠ শোনা গেল।
‘ চাঁদ প্লিজ আমাকে ডির্স্টাব করো না। একটু শান্তিতে থাকতে দাও।’
চাঁদ কাঁদতে কাঁদতে আবার দরজায় শব্দ করলো। আলোক বিরক্তি নিয়ে বললো,
‘ উফফ চাঁদদ!’
তারপর না পেরে আলোক ফোন টা নিয়ে ‘ কতো জানাজার পরেছি নামাজ’ নামে একটা টোন প্লে করে হেডফোন সহকারে কানে দিলো। আজ আলোকের বড্ডো অভিমান চাঁদের উপর। আলোকর ভিতরে যেন তোলপাড় চলছে। সে আজ তার চাঁদ পাখির সাথে রাগ করছে। তার সেই মায়াবীনির উপর। আলোকের ইচ্ছে করছে চাঁদের সাথে কথা বলতে। কিন্তু না! আজ কিছুতেই না। অপরদিকে আলোকের আর কোনো সাড়া না পাওয়ায় চাঁদ তীব্র বেগে কাঁদতে শুরু করে। চাঁদের নিজের উপর খুব রাগ লাগছে। কি করে সে আজ আলোককে কষ্ট দিলো? আলোক কতোই না কষ্ট পেয়েছে। স্বামী নামক সেই ছেলে তাকে কতো ভালোবেসেছে, তাকে কতো সম্মান দিয়েছে। একজন স্বাভাবিক মেয়েও মনে হয় এমন স্বামী পায় না ।সেখানে সে অনাথ বোবা হওয়ার পরেও আলোক তাকে কত ভালোবেসেছে। আর আজ তার মতন একজনকে চাঁদ কষ্ট দিলো? আলোক তো রাগ করার মতো ছেলে না। আলোক তো কখনোই চাঁদের সাথে এমন করে নি। কিন্তু আজ সে চাঁদের কাজে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে ভেবেই চাঁদের বুকের ভিতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে। চাঁদের নিজের উপর খুব রাগ, ঘৃণা লাগছে। চাঁদ খুব জোরে জোরে কাঁদছে। তার ভিতরে যেন আর্তনাদে ফেটে যাচ্ছে। ভিতর থেকে যেন কেউ চিৎকার করে বলতে চাচ্ছে , আমাকে মাফ করে দাও আলোক। আম সরি।’ কিন্তু সে তো কথা বলতে পারে না যদি পারতো তাহলে চিৎকার করে বলতো।আজ সকালে যখন চাঁদ চোখ খুলল তখন দেখলো আলোক এক পলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর চাঁদ উঠতেই তার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ ছুঁইয়ে দেয়। চাঁদের এইসব মনে পড়ছে ।আর কান্নার বেগ এতটাই তীব্র যে, সে ঠিক মতন শ্বাস নিচ্ছে না। চাঁদ জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে কিন্তু তার কান্না তো কিছুতেই থামছে না। তার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিভাবে তা বলবে সে?
____________
পরপর দুবার এই টোন টা শুনলো আলোক। কিন্তু কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। চাঁদ তার জীবনে আসার পর থেকে তাকে ছাড়া আলোকের কিছুই ভালো লাগে না। আলোকের আর ভালো লাগছে না। আলোক ভাবলো চাঁদ তো তারই জন্য করেছে। যাতে তাদের ভাই ভাইয়ের সম্পর্ক ঠিক হয়ে যায়। আলোক ফোনটা কে রাখলো। তারপর দরজা খুলতেই যেন সে আঁতকে উঠলো। মেঝেতে এলোমেলো চুলে উল্টো হয়ে পড়ে আছে চাঁদ। আলোক তড়িৎ বেগে বসলো তারপর চাঁদ সোজা করলো দেখলো তার মুখ ঘা ঘেমে ভিজে ভিজে হয়ে আছে। চাঁদের চোখ বয়ে পানি পড়ছে কিন্তু তার চোখ জোড়া বন্ধ। আলোক তার হাতের তালু দারা চাঁদের পুরো মুখ মুছলো। তারপর আলোক একটা ঢোক গিলে ডাকলো,
‘ চাঁদ! চাঁদ পাখি?’
চাঁদের কোনো সাড়া পাওয়া গেল না।
‘ চাঁদ কি হয়েছে তোমার? চাঁদ ! এই চাঁদ।’
গালে হালকা করে মারতে লাগলো। কিন্তু তবুও চাঁদের কোনো সারা নেই। আলোকের জোরে জোড়ে শ্বাস ফেলছে। তার ভিতরে কেমন এক অজানা ভয় কাজ করছে। আলোক কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে,
‘ চাঁদ দেখো আমার দিকে । দেখ আমি রাগ করি নি। প্লিজ উঠো। আমি জানি আমার এইরকম করা উচিত হয়নি। সরি। প্লিজ উঠো।তোমার কি শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে? চাঁদ ।এই চাঁদ!’
আলোকের ভয় আসতে আসতে আরো বেড়ে যায়। আর এক সময় তার আর্তনাদে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠে। আলোকের চেঁচানো শুনে বাড়ির সবাই উপস্থিত হয়। আশা ,রায়হান, তাসলিমা আসলো। তারা আসতেই আশা বসে পড়ে বলল,
‘ কি হয়েছে?’
আলোক কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘ মা দেখো না ও দেখছে না।’
আশা চাঁদের গালে হাত দিয়ে ডাকে,
‘ চাঁদ! চাঁদ মামনি। কি হয়েছে?’
চাঁদ কোনো সাড়া দিল না। আলোক তার বাবাকে বলল,
‘ বাবা প্লিজ গাড়ি বের করো। ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।’
রায়হান যাবে তখনি নিবর ইরা আসে। ইরা দেখা মাত্রই বসে পালস চেক করলো। তারপর ছিটকে কিছুটা দূরে গেল। ইরা কেমন হাপাচ্ছে, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরেছে। তারপর ইতস্তত করে বলল,
‘ ও__ও__ মা__মার_মারা গেছে। স_সী ইজ নো মোর।’
কথাটা শুনে আলোকের সব কিছু যেন থমকে গেল। আলোকের পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো। সে চাঁদকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। আলোকের ব্রেন যেন হ্রাস পাচ্ছে। তার কানে শোনা কথায় কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।
#চলবে…..