#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৫,১৬,১৭
কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম-
-হ্যালো।
ও পাশ থেকে উনিও সুমধুর কন্ঠে বলল-
– হ্যালো, কেমন আছেন?
— হ্যাঁ ভালো আছি?আপনি?
– আমিও ভালো আছি।কি করতেছেন?
– এই তো বেস্টির সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম আপনি?
– অফিসের কাজ করছিলাম।
– অহ!আপনি কিসে চাকুরি করেন সেটা কিন্তু জানতে পারলাম না।
– না জেনেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন।
– মা বাবা ঠিক করেছে যেহুত ভালো জায়গায় করেছে।
– বুঝা যাচ্ছে মা বাবার অনেক বাধ্য মেয়ে।
– তা একটু বলা যায়।
– মাল্টিন্যাশনাল একটা কোম্পানিতে চাকুরি করি।ভাবছিলাম আপনাকে কল দিব কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না। আপনার কল এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যদিও এগারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম যদি না দিতেন তাহলে আমিই কল দিতাম।এর মধ্যে আপনি দিয়ে ফেললেন।
– ইশ! আগে কল দিয়ে মনে হয় ভুল করে ফেললাম।
– আরে ভুল করবেন কেন?আপনি কল দিয়েছেন বরং আমার সুবিধা হয়েছে।আপনি কল না দিলে হয়তো এতগুলো কথা বলতে পারতাম না।ঐরকম কোন মেয়ের সাথে কথা বলে অভ্যস্ত না তো তাই।
– আরে আমি তো মজা করে বলেছি।যাইহোক রাতে খেয়েছেন?
– নাহ এখনও খাই নি।আপনি খেয়েছেন?
– হ্যাঁ খেয়েছি।অনেক রাত তো হলো খেয়ে নিন।
– হুম খাব।
– আচ্ছা শুনেন মা বলছিল কালকে এগারটায় আপনাকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে বিয়ের শপিং করার জন্য।আপনি একটু প্রস্তুত রাখবেন নিজেকে।
কালকে উনি আমাকে নিতে আসবে এটা শুনেই মনটা আনচান করতে লাগল।তাই উানাকে জিজ্ঞেস করলাম
– আপনি আসবেন নিতে?
– আমার হবু বউকে নিতে কি তাহলে অন্য কেউ আসবে।
উনার কথা শুনে আবেগে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম।এক উত্তাল ভালোবাসার ঢেউ মনে বইতে লাগল।আমি চুপ হয়ে মৃদু কন্ঠে উনাকে বললাম-
– আচ্ছা আমি প্রস্তুত রাখব নিজেকে।তবে একটা আবদার ছিল।
– বলেন কি আবদার ?
– আমি আমার সাথে আমার বেস্টিকে নিয়ে যেতে চাই যদি কিছু মনে না করেন।
– আরে এটা তো ভালো কথা।কিছু মনে করব কেন?আপনি আর আপনার বেস্টি নাম কি যেন?
– তোরা।
– হ্যাঁ তোরা দুজনেই একসাথে এগারটায় তৈরী হয়ে থাকবেন।আমি নিতে আসব।
এ বলে উনি ফোন রেখে দিলেন।উনি ফোন কাটার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চাঁদটা জ্বলজ্বল করছে।চাঁদের আলো আমার মুখে এসে পড়েছে।আমি চাঁদটাকে ফোনের ক্যামেরা দিয়ে বন্দি করে রাখলাম।চাঁদের দিকে তাকিয়ে আবার ও আনমনা হয়ে গেলাম।মুহুর্তের মধ্যে স্বপ্নের রাজ্যে চলে গেলাম।তোরার ধাক্কায় আমার স্বপ্নের ঘোর কাটল, তোরা ধাক্কা দিয়ে বলল-
– কি রে নিরু এত আনমনা হয়ে যাচ্ছিস কেন?এত ভালোবাসায় ডুবে থাকলে হবে?
– কি যে বলিস না তোরা।
– তা তুর্জ কি বলল?
– তুর্জ বলেছে কালকে তোকে নিয়ে যেন প্রস্তুত থাকি আমাদের নিয়ে শপিংয়ে যাবে।
– তোদের মধ্যে আমি নাই।(দুহাত উপরে তুলে)
আমি তোরার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে বললাম
– তুই না গেলে বড্ড অসহায় আর ভয় লাগবে।তুই সাথে না গেলে আমি যাব না।
তোরা আমার দিকে তাকিয়ে একটা অট্ট হাসি দিয়ে বলল-
– আমাকে বডিগার্ড হিসেবে নিতে চাচ্ছিস তাই না।আচ্ছা যাব।
আমি তোরাকে জড়িয়ে ধরে বললাম
-আচ্ছা এবার খেতে চল।
তারপর দুজন খাওয়া শেষ করে রুমে এসে শুলাম।তোরা ঘুমিয়ে গেলেও আমি ঘুমাতে পারছিলাম না।কারণ সবকিছু আমার কাছে স্বপ্ন মনে হতে লাগল।আমার চোখের পাতা বন্ধ করলেই উনার ছবি ভেসে আসছিল।তবুও জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।একটা সময় ঘুমিয়েও গেলেও সকাল ভোরেই ঘুম ভেঙ্গে গেল।ছোটবেলায় ঈদের আগের দিন আমার এমন হত আর আজকে ঈদ ছাড়াই এমন হলো।তবে আজকের খুশিটা ঠিক ছোটবেলার ঈদের দিনের খুশিটার মতো।আমার সাথে তোরা উঠে গিয়ে বলল-
– কি রে সারারাত ঘুমাতে পারিস নি তাই না?আমার বিয়ের সময়েও আমার এমন হয়েছিল।ব্যপার না ঠিক হয়ে যাবে।
ঘুম থেকে উঠেই চুপ করে আনমনা হয়ে বসে রইলাম আর বারবার ঘঁড়ির কাঁটা দেখতে লাগলাম আর ভাবতে লগলাম কখন যে এগারটা বাজবে আর তুর্জ আসবে আমাকে নিতে।আজকে যেন ঘঁড়ির কাঁটাটা নড়ছেই না।অপেক্ষার প্রতিটা সেকেন্ড যেন একেকটা ঘন্টার মত মনে হলো।আর শুধু বুকে ধুকবুক করতে লাগল।নাস্তা খেতে নিয়েও যেন গলা দিয়ে নামছিল না।কিযে এক অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার ভাষা নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কেটে এগারটা বাজল।আমি এর মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেলাম যাওয়ার জন্য।আর তোরাও নিজেকে তৈরী করে নিল।এগারটা দশে ফোনে কল বাজল।খেয়াল করে দেখলাম তুর্জ কল দিয়েছে।তুর্জের কল টা ধরে বললাম-
-হ্যালো।
ওপাশ থেকে আমার স্বপ্নের পুরুষ বলল-
– তৈরী হয়েছেন তো?আমি আপনার বাসার নীচে চলে এসেছি।
– তাহলে বাসায় আসুন।
— বিয়ের আগে যাওয়া ঠিক হবে না।আপনি চলে আসুন নীচে।আর শুনুন একটা আবদার ছিল।
আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম আবদারের কথা শুনে।জানিনা কি আবদার করে বসে আর আমি যদি সেটা রাখতে না পারি, তাই ভয়ে ভয়ে বললাম-
– কি আবদার বলুন। রাখার চেষ্টা করব।
– একটু কাজল পড়ে আসবেন।
উনার আবদারের কথা শুনে আমি খুশিতে ভিতরে ভিতরে নাচতে লাগলাম।উনাকে খুশি মনে জাবাব দিলাম-
– আমি এক্ষুনি কাজল পড়ে আসছি।
তারপর চোখে মনমত গাঢ় করে কাজল দিয়ে তোরাকে নিয়ে নীচে গিয়েই দেখলাম তুর্জ দাঁড়িয়ে আছে।আমি তুর্জের কাছে যেতেই তুর্জ বলল-
– গাড়িতে বসুন দুজন।
আমি গাড়ির পিছনে বসতে নিলে তোরা আমাকে আটকে দিয়ে বলল-
– আরে নিরা কি করছিস।
আমি অবাক হয়ে তোরার দিকে তাকিয়ে বললাম
– কেন কি হয়েছে?
– আরে তুই আর তুর্জ সামনে বস আমি পিছনে বসছি।একসাথে বসলে একটু গল্প করতে পারবি।
তোরার কথা শুনে তুর্জ আর আমি লজ্জা পাচ্ছিলাম।অতঃপর তুর্জ সামনে বসে আমাকে তার পাশে বসার জায়গা করে দিল।তুর্জের পাশে বসতে গিয়েও আমার বুক আর পা কাঁপছিল খুব।অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে তুর্জের পাশে বসলাম।তারপর গাড়ি গন্তব্যের দিকে চলতে লাগল।মাঝপথে তুর্জ যখন বলল আপনার চোখ দুটো অনেক সুন্দর লাগছে।আমি তো লজ্জা আর খুশিতে স্তবির হয়ে গিয়েছিলাম।আপরদিকে গাড়ি চলতে চলতে গন্তব্যে পৌঁছাল।তুর্জ আগে গাড়ি থেকে নেমে আমাকে নামতে বলল।আমিও নামলাম তারপর তোরাকে নিয়ে শপিং করতে লাগলাম।কিন্তু আমার চোখ শুধু কালো শাড়ির দিকেই যাচ্ছিল।তোরা আমার কানে কানে বলল-
– তোর যদি কালো শাড়িটা পছন্দ হয়, নিয়ে নে।বিয়েতে লাল পড়িস।আর ঐ বাড়িতে গিয়ে কালো পড়িস।
– তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস।আমি বিয়ের পর ওদের বাড়িতে কালো শাড়ি পড়ব?আমি এমনেই কালো ওদের বাড়িতে কালো শাড়ি পড়লে মানুষ তো ভূত বলবে।
তোরা হালকা চিমটি কেটে বলল-
– তাহলে খালি কালো শাড়ির দিকে তাকাচ্ছিস কেন?
আমি ফিসফিস করে বললাম-
– কালো শাড়িটা পছন্দ হয়েছিল তাই তাকাচ্ছিলাম।কিন্তু আমাকে পড়লে পেত্নী লাগবে তাই সাহস করে কিনতে পারছি না।আর আসছি তুর্জের সাথে ও যা কিনে তাই নিব।
এর মধ্যেই তুর্জ আমাকে ডেকে বলল-
– আপনি একটু এদিকে আসবেন।
তুর্জের কথাটা মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে তোরা বলল-
– আরে ভাইয়া এখন ও আপনিতে পড়ে আছেন।দুইদিন পর আপনার বউ হবে তুমি করে বলেন।
তোরার কথায় তুর্জ বেশ লজ্জা পেয়ে বলল-
– আচ্ছা ঠিক আছে তুমি করেই বলব।নিরা একটু এদিকে আসবে?
– হ্যাঁ আসছি।
তারপর উনার কাছে যেতেই উনি আমাকে একটা শাড়ি দেখিয়ে বলল-
– এটা কেমন?
– অনেক সুন্দর।
– এটা নিব।
– হ্যাঁ নিন।
অতঃপর শাড়ি গয়না সব কিনা শেষ হল।গাড়িতে উঠলাম পুনরায়।গাড়িতে চলতে চলতে অবশেষে বাসায় পৌঁছালাম।গাড়ি থেকে নেমে তুর্জকে বিদায় দিয়ে যখন বাসায় আসব ঠিক তখনেই তুর্জ আমার হাতটা ধরে টান দিল।আমি বিস্মিত হয়ে তুর্জের দিকে তাকিয়ে বললাম-
– কিছু বলবেন?
তুর্জ গাড়ি থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল-
– এ কালো শাড়িটাতে তোমাকে বেশ মানাবে।
– এটা তো আমার অনেক পছন্দ হয়েছিল আপনি বুঝলেন কি করে?(অবাক হয়ে)
– চোখ দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম।এবার সাবধানে বাড়ি যাও।
তুর্জ আমাকে কালো শাড়ি দিয়েছে এটা যে কত ভালো লেগেছে বুঝানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।তোরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
– আল্লাহ্ তোর মনমত কাউকে জুটিয়ে দিয়েছে।অনেক ভালো থাকবি দেখিস।
এরপরে দুজন বাসায় আসলাম।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসল।ঘরোয়া পরিবেশে বেশ শান্ত ভাবে আমাদের বিয়ে হলো।বাড়ির সবাইকে ছেড়ে এক অচেনা গন্তব্যে নতুন জীবনের জন্য রওনা হলাম।এরমধ্যে তুর্জের সাথে হালকা কথা বলতাম।আবার একটু চুপ করে থাকতাম এভাবেই ছয় ঘন্টার পথ পার করলাম।অবশেষে শ্বশুড় বাড়ি এসে পৌঁছালাম।
#পর্ব ১৬
নামানো হল।কিন্তু আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম একটা বিষয় দেখে যে, সে বাড়ির আশে পাশে আর কোন মানুষ নেই।সাধারণত নতুন বউ আসলে আশে পাশের মানুষ ছুটে আসে কিন্তু সে বাড়িটা খুব নিস্তব ছিল।আমার শ্বাশুড়ি আমাকে বরণ করে রুমে নিয়ে গিয়ে বলল-
– শুনো বউমা এ বাড়িতে তুমি আমার মেয়ের মত থাকবে।কোন অসুবিধা হলে আমাকে বলবে অথবা তুর্জকে বলবে।শুধু একটা আবদার যে আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বলতে যেও না।আশেপাশের লোকজন খুব খারাপ।তোমাকে উল্টা পাল্টা বলে তোমার খারাপ করে দিবে।আমরা মা মেয়েতে মিলে থাকলে হবে না?
শ্বাশুড়ি মায়ের কথা শুনে উনার প্রতি তীব্র শ্রদ্ধা জাগল এটা ভেবে যে উনি হয়ত চাচ্ছেন না আমি কারোর হাসির পাত্র হই। আমি মায়ের কথায় সম্মতি দিয়ে বললাম-
– আপনি পাশে থাকলে আর কিছু লাগবে না। আমরা মা মেয়েতেই হয়ে যাবে।
আমার কথা শুনে আমার শ্বাশুড়ি মা আমাকে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলল-
– আমার মেয়ের মতো কথা বলেছ একদম।আচ্ছা তুমি তো তোমার মাকে মা বল।তাহলে আমাকে কি বলে ডাকবে?
আমি একটু ভেবে বললাম-
– আপনাকে আম্মু বলে ডাকলে কি খুশি হবেন?
উনি এক চিলতে হাসি দিয়ে বলল
– আম্মু বলে ডাকলেই খুশি হব।এবার চলো তোমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাই।
বলেই আম্মু আমাকে নিয়ে নানীমার ঘরে গেলেন।নানীমার ঘরে নিয়ে গিয়ে আম্মু আমাকে ইশারা দিয়ে বললেন নানীমা কে যেন সালাম করি।আমি নানীমাকে সালাম করার জন্য এগিয়ে যেতেই নানীমা আমাকে ধরে বলল-
– তুই বুঝি আমার তুর্জের বউ।বাহ! দেখতে তো ভারী মিষ্টি।সালাম করতে হবে না।
নানীমার মুখে প্রসংশা শুনে আমার চোখের জল ছলছল করতে লাগল।আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এভাবে প্রসংশা করে নি।চোখে ছলছল জল নিয়ে বললাম-
– নানীমা ঠিক বলেছেন আমি আপনার তুর্জের বউ।কেমন আছেন আপনি?
– আর কি ভালো থাকা যাবে এখন তুই এসে গেছিস।এখন তো চাইলেও ভালো থাকা যাবে না।
ভয়ে ভয়ে নানীমাকে জিজ্ঞেস করলাম-
– কেন নানীমা আমি কি কোন ভুল করেছি?
আমর ভয় মাখা চেহারাটা দেখে নানীমা বলল
– আরে বোকা ভুল করবি কেন?তুর্জ তোকে পেয়ে এখন এ বুড়িটাকে ভুলে যাবে তাই বললাম।
নানীমার কথা শুনে একটা স্বাস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নানীমাকে বললাম-
– আপনার মতো সুন্দরী রেখে তুর্জ আমাকে চাইবে না।এত অস্থির হওয়ার কিছুই নেই।
– আহ! দেখা যাবে।খুব ভালো পাম দিতে পারিস তুই।
পাশ থেকে আম্মু নানীমাকে বলে উঠল-
– মা এবার বকবক থামাও।ওকে তুর্জের রুমে দিয়ে আসতে হবে।আর কিছু বলার থাকলে বলে দিও।
নানীমা আম্মুকে বলল-
– আরে তুই বলে দে।এখন তো আধুনিক যুগ।শ্বাশুড়িরা বান্ধবীর মতই।যা বলার তুই বলে দিস।
আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
– বউমা চলো আমার সাথে।একটু কথা বলব। তারপর তুর্জের রুমে দিয়ে আসব।এখানে বসে থাকলে মা তোমার মাথা খাবে কথা বলতে বলতে।পরে কথা বলো মায়ের সাথে।
আমি শান্তভাবে নানীমাকে বিদায় জানিয়ে আম্মুর রুমে গেলাম।তবে ভয় লাগছিল এটা ভেবে যে না জানি আম্মু কি বলে।আম্মুর রুমে যাওয়ার পর আম্মু বলল-
– শুনো মা সরাসরিই একটা কথা বলি আমার একটা নাতির শখ।তুমি কোন ঔষধ খেও না।আমি চাচ্ছি তোমাদের কোল জুড়ে খুব তাড়াতাড়ি সন্তান আসুক।কথা
মায়ের কথা শুনে লজ্জা মাখা মুখে মাকে বললাম-
– আপনি চিন্তা করবেন না।যেভাবে বলবেন সেভাবেই চলব।
এবলে লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম।এরপর আম্মু আমাকে তুর্জের রুমে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে বলল-
– তুমি এখানে বসো।আমি তুর্জকে পাঠাচ্ছি।আর ঐ টেবিলে দুধ রাখা আছে তুর্জকে দিও।
লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নেড়ে বললাম আচ্ছা।তারপর আম্মু চলে গেল।আর আমি তুর্জের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।মিনেট পনের পর তুর্জ আসলো।তুর্জ আসার সাথে সাথে আম্মুর কথা মতো তুর্জের জন্য টেবিলের উপর থেকে দুধের গ্লাসটা হাতে নিলাম।তারপর তুর্জের কাছে গেলাম।তবে বিপত্তি ঘটল যে আমি দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে তুর্জকে কিভাবে সালাম করব এটা ভেবে।কোন উপায় না পেয়ে ভাবলাম দুধটা আবার টেবিলের উপর রেখে আসি তারপর সালাম করে দুধটা তুর্জকে দিব।যেই ভাবনা সেই কাজ।আমি দুধের গ্লাসটা টেবিলের উপর রাখতে যেতে নিলাম এসময় তু্র্জ আমার শাড়ির আঁচল ধরে টেনে বলল-
– কি ব্যপার চলে যাচ্ছ যে?
– নাহ মানে দুধের গ্লাসটা রেখে আপনাকে সালাম করব তো তাই।
– আরে বোকা সালাম করতে হবে না।দাও দুধের গ্লাসটা আমি খেয়ে নিচ্ছি।
লাজুক মুখে নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললাম-
– নিন।
– আমাকে কি তুমি বলা যায় না?এখনও আপনিতে পড়ে আছ যে?(রাগ গলায়)
– নাহ মানে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।আপনি দুধটা খান।
— আবার আপনি?এবার কিন্তু রাগ হচ্ছে খুব।
– সরি তুমি।
– এইতো গুড গার্ল
তুর্জ দুধটা খাওয়া শেষে আমাকে হুট করে কোলে তুলে নিল।আমি ভয়ে উনার গলায় জড়িয়ে ধরে বললাম
– কি করছ কি?পরে যাব তো।
– আমার উপর কি তোমার ভরসা নেই।
– তা তো আছেই।
এ বলে আমি উনার ঘাড়ে আরও শক্ত করে ধরলাম।উনি আস্তে করে আমাকে বিছানায় শুয়াল।তারপর ভালোবাসার গভীর সাগরে নিমজ্জিত হয়ে গেলাম।আবেগের সাগরে হাবুডুবু খেতে লাগলাম।ভালোবাসার উত্তাল ঢেউ যেন সব তছনছ করে দিয়ে শান্ত হয়ে গেল।শীতলতার অনুভুতিটা যেন সারা শরীরে শিহরণ দিল।এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে গেলাম।সকালে উঠে দেখলাম আমার এলো মেলো কুকরা চুলগুলো উনার বুকের উপর বিছিয়ে আছে।আমি উঠতে নিলাম উনি আমাকে শক্ত করে ধরে বলল-
– আরেকটু শুয়ে থাকো
লজ্জায় কিছুই বলতে পারছিলাম না।চুপ করে উনার হার্টিবিটের স্পন্দনটা শুনার চেষ্টা করলাম।
কিছুক্ষণ পর মা দরজায় নক করে বলল-
– নিরা মা ফ্রেশ হয়ে তুর্জকে নিয়ে খেতে আসো।
আমি মায়ের ডাক শুনে উনাকে বললাম –
– এবার তো আমাকে ছাড়ো।মা ডাকছে।
উনি আমার কাপলে আলতো চুমু দিয়ে বলল-
– যাও ফ্রেশ হও।
আমি উঠে ওয়াশ রুমে গেলাম।নিজেকে ফ্রেশ করে ওয়াশ রুম থকে বের হয়ে খেয়াল করলাম তুর্জ ঘরটা সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে।তুর্জ আমাকে দেখে বলল-
– তোমার মা কল দিয়েছিল।আমি ধরে কথা বলেছি।তুমি কল দিয়ে কথা বলে নিও।
এবলে তু্র্জ খাবার রুমে গেল।আমি ফোনটা হাতে নিয়ে মাকে কল দিলাম।ওপাশ থেকে মা বলল-
– কি রে মা কেমন আছিস?
– হ্যাঁ মা অনেক ভালো আছি।ওরা যে এত ভালো মা, আমি না আসলে বুঝতে পারতাম না।অনেক আদর করছে আমায়।কোন কষ্ট হচ্ছে না মা।
মা স্বস্তিভরা কন্ঠে বলল-
– মারে তোর কথা শুনে শান্তি পেলাম।কত চিন্তা ছিল তোরে নিয়ে আজকে তোর কথা শুনে সব দূর হল।কাল পরশু তোর বাবা আসবে তোকে দেখতে।
– মা তুমিও আসবে কিন্তু।
– সে দেখা যাবে। এখন রাখলাম।শ্বাশুড়ির সাথে একটু কাজকর্ম করিস।
এ বলে মা ফোন রেখে দিল।খেয়াল করলাম তোরার দুইটা মিসকল তাই তোরাকে কল দিলাম।তোরাকে কল দেওয়ার সাথে সাথে তোরা বলল-
– তা কেমন কাটল বাসর।
লজ্জা মাখা মুখে বললাম-
– অনেক ভালো।
– তা কেমন আছিস সেটা বল ঐখানের মানুষ কেমন?
– অনেক ভালো।
তোরার সাথে কথা বলতে বলতে আম্মু ডাক দিল-
– নিরা তাড়াতাড়ি আসো।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
আম্মুর ডাক শুনে তোরাকে বললাম-
– আম্মু খাওয়ার জন্য ডাকছে পরে কথা হবে রাখলাম।
এ বলে ফোনটা রেখে মাথার তোয়ালে টা খুলে চুল গুলো মুছে বারান্দায় তোয়ালে টা নাড়তে গেলাম।বারান্দায় তোয়ালে নাড়ার সময় পাশের বাসার এক মহিলা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
– তুমি কি এ বাসায় কাজ করতে এসেছ।
আমি একটু কষ্ট পেলাম এমন কথা শুনে। কষ্টমাখা মুখে জাবাব দিলাম-
– না কাজ করতে আসি নি।আমি তুর্জের বউ
মহিলাটা কথাটা শুনে অবাক হয়ে বলল-
– মনে কিছু নিও না ওভাবে বলা তোমাকে ঠিক হয় নি।কিন্তু তুর্জ আবার বিয়ে করেছে।পারেও তারা।যেমন মা তেমন ছেলে।
মহিলার কথা শুনে অবাক হলাম এটা ভেবে যে আবার বিয়ে করেছে এটার মানে কি?আমি মহিলাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে নিব এর মধ্যে আম্মু আবার ডাকতে লাগল খাওয়ার জন্য।আম্মুর ডাকে সাড়া দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম মহিলা আর পাশের বারান্দায় নাই।
আমি ভাবনার একটা দেয়ালে আটকা পড়ে খাবার রুমে গেলাম।খেয়াল করলাম মা অনেক কিছু রান্না করে রেখেছে।মা আমাকে আদর করে খাওয়াতে লাগল।মহিলার কথাটা এত সুখের মাঝে বেমালুম ভুলে গেলাম।পরদিন সকালে বাবা, মা আসলো।রাতে মা আমাকে কাছে নিয়ে বলল-
– কি রে এ বাড়িতে কি আশে পাশের কেউ আসে না।
– আরে মা আশেপাশের মানুষ দিয়ে কি করবে?আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করত। তাই হয়ত মা না করে দিয়েছে।
মা হাসতে হাসতে বলল-
– কপাল করে এমন শ্বাশুড়ি পেয়েছিস।
আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম-
– একদম ঠিক কথা বলেছ।
পরদিন মা বাবা চলে গেল।আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইল কিন্তু শ্বাশুড়ি মা দিল না।বলল পরে উনি নিয়ে যাবে।তাই মা বাবাও জোর করল না আর।ভালোই যাচ্ছিল আমার সংসার বেশ আদরেই কাটল দুমাস।দুমাস পরে একটা বিষয় নিশ্চিত হয়ে খুব খুশি হলাম।
#পর্ব-১৭
কারণ আমি জানতে পারলাম।আমি মা হতে চলেছি।জানার পর কতটা যে খুশি হয়েছি লিখে বর্ণনা করা সম্ভব না।সন্ধ্যায় তুর্জ অফিস থেকে আসার সাথে সাথে আমি তুর্জকে জড়িয়ে ধরলাম।তুর্জকে জড়িয়ে ধরে বললাম-
– একটা কথা বলার ছিল।কিভাবে যে বলি।
তুর্জ আমাকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে বলল-
– আমার বউটা আজকে এত খুশি কেন?কি হয়েছে শুনি?
– আমি কি জন্য খুশি সেটা জানার পর তুমিও খুশি হয়ে যাবেন।
– তা বলো শুনি কি হয়েছে?
– তুমি মা! উফ! না আমি মা আর তুমি বাবা হতে যাচ্ছ।
এটা বলার পর তুর্জ আমাকে ধরে খুশিতে হাসতে হাসতে বলল-
– এখন কি বাংলা সিনেমার মত তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরাব?
– কি যে বলো না তুমি সবসময় এমন মজা করো।বাচ্চার বাবা হচ্ছ, এখনও বাচ্চামি করলে হবে?(মৃদু হেসে)
– হয়েছে এত পাকামি করতে হবে না।খবরটা মাকে দিয়ে আসো আগে।
– আমি পারব না আমার লজ্জা লাগে তুমি দিয়ে আসো গিয়ে।
– আমার সাথে মায়ের রুমে চলো, দুজন একসাথে খবরটা দেই।তাহলে মা খুশি হয়ে যাবে।
তুর্জ আমাকে নিয়ে মায়ের রুমে গিয়ে আম্মুকে ডেকে বলল
– মা তোমাকে একটা খুশির খবর দেওয়ার ছিল।
মা আমার মুখের দিকে প্রথমে তাকাল তারপর বলল-
– নিরার মুখের দিকে তাকিয়েই আমি বুঝতে পেরেছি তুই কি বলবি।এটাই তো বলবি যে আমি দাদীমা হতে চলেছি।কিগো নিরা মা ঠিক বলে নি?
আমি লজ্জায় মাথাটা আরও নীচু করে ফেললাম।মা আমার মাথাটা তুতনিটা ধরে উপরে তুলে বলল-
– এত লজ্জা পেলে চলবে?এখন থেকে আমি যেভাবে বলি সেভাবে চলবে।আর তুর্জ বাসার বাইরে কম থাকবি।বউমাকে সময় দিবি বেশি।আমার কথা মত চলতে হবে কিন্তু।
আমি হাসতে হাসতে বললাম-
– আপনি যা বলবেন তাই হবে।
উনি আমার আমার মাথায় আলতো স্পর্শ করে বলল-
– তোমার মাকে কি খুশির খবর টা দিয়েছ?
আমি মাথা নেড়ে না বললাম।তারপর উনি বলল
–আমি জানাচ্ছি।তুমি রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও।
কথাশেষে আমি আম্মুর রুম থেকে তুর্জকে নিয়ে চলে আসলাম।তুর্জ বাথরূমে গোসল করতে ঢুকল এর মধ্যে মা কল দিল। মায়ের কলটা ধরার সাথে সাথে মা ওপাশ থেকে বলে উঠল-
– কি রে তোর শ্বাশুড়ি যে খুশির সংবাদটা দিয়েছে তা কি সত্যি?আমি নাকি নানীমা হতে যাচ্ছি।
– হ্যাঁ মা সত্যি।
– শুন এসময় কোন চিন্তা করবি না।ভালো মন্দ খাবি।আর তোর শ্বাশুড়ি কে বলেছিলাম তোকে নিয়ে আসতে।তোর শ্বাশুড়ি বলল উনার নাতি উনার বাসায় হবে। তাই আমি আর বাড়াবাড়ি করে নি।
– আরে মা চিন্তা করো না উনি আমার অনেক যত্ন নেন।তুমি শুধু শুধু এসব ভাবছ, কপাল গুণে এমন শ্বাশুড়ি পেয়েছি।
মা হাসতে হাসতে বলল-
– তা একদম ঠিক বলেছিস।আচ্ছা আমি রাখলাম তোর বাবাকে খবরটা দেই।
বলতে বলতেই মা ফোনটা রেখে দিল।আমি তোরাকে একটা কল দিলাম।ও কে কিছু না জানালে আমার পেটের ভাত হজম হয় না।তোরাকে কল দেওয়ার সাথে সাথে হালকা চেঁচিয়ে বললাম-
– তুই খালা মনি হতে যাচ্ছিস।
তোরা একটা জোরে চিল্লানি দিয়ে বলল-
– আমার পরে বিয়ে করে আমার আগে খুশির সংবাদ দিলি।ওরে নিরা তুই সেই উইকেট ফেলছিস।
– আরে ধুর কি যে বলিস না তুই।
– হাহা…. ভালো থাকিস আর নিজের যত্ন নিস।সাবধানে চলিস।
– আচ্ছা আচ্ছা সব ঠিকঠাক করে করব।এবার ফোনটা রাখি।মাথা খারাপ করিস না আর।পারিস ও এত বকবক করতে।
– হাহাহা….আচ্ছা.।
বেশ সুখেই যাচ্ছিল আমার সময়।আম্মু আমাকে নিজের মেয়ের মত যত্ন করতে লাগল।আমার মত মেয়ে এতটা ভালোবাসা আর সম্মান পাবে কখনও বুঝে নি।নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে হচ্ছে এমন একটা পরিবারে বিয়ে হওয়ার পর।আজকে বেশ তেঁতুল খেতে মন চাচ্ছে তাই তেঁতুল হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে খাচ্ছিলাম।এর মধ্যে আবার সেই মহিলা বারান্দায় আসলো।সেই মহিলাকে দেখেই আমার আগের কথা মনে হয়ে গেল।মহিলাকে ডেকে বললাম-
– ঐদিন আপনি কি বলেছিলেন আমি কিন্তু বুঝতে পারি নি।তুর্জ আবার বিয়ে করেছে মানে কি?
মহিলা গলার আওয়াজ টা একটু নীচু করে বলল
– আরে মেয়ে আস্তে কথা বলো তোমার শ্বাশুড়ি যদি দেখে আমাদের সাথে কথা বলছ তোমার বারোটা টা বাজাবে।আগে তুমি তোমার রুমের দরজা নক করে আসো, না হয় কখন তোমার শ্বাশুড়ি রুমে ঢুকে যাবে খেয়াল থাকবে না।আমি এখানেই দাঁড়িয়ে আছি।
মহিলার কথা শুনে একটু রহস্যময় লাগছিল। আমি দৌঁড়ে আমার রুমের দরজা লাগিয়ে বারান্দায় এসে বললাম-
– এবার বলুন কি হয়েছে?
মহিলা এরপর যা বলল তা শুনে আমার ভিতরটা কেঁপে গেল।এরকম কিছু শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।কারণ মহিলা বলল-
– শুনো মেয়ে তুমি করেই বললাম।কারণ তুমি আমার ছোট হবে।সময় থাকতে এ বাড়ি থেকে চলে যাও।
– কেন চলে যাব? কি হয়েছে?
– এটা একটা অভিশপ্ত বাড়ি।কেউ এ বাড়ির আশে পাশে যায় না।তোমার আগে তুর্জ তিনটা বিয়ে করেছিল।আর প্রতিটা বউ এর মৃত্যু ঘটে গর্ভবতী হওয়ার পাঁচ মাস সময়ে।আর তুর্জ এত সুন্দর ছেলে হয়েও কেন জানি অন্যরকম মেয়ে বিয়ে করত।এর মানে বুঝলাম না এখনও?
– অন্যরকম মেয়ে মানে?
– প্রথম বিয়ে করেছিল মেয়ের চোখে কম দেখত।দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল মেয়ের বাবা গরীব অনেক।তৃতীয় বিয়ে করেছিল মেয়ের কথায় জড়তা ছিল।আর তুমি তো অনেক কালো।প্রতিবারেই বাচ্চা হওয়ার পাঁচ মাসের সময় কেন বউরা মরে সেটা আজও বুঝলাম না।আর উনাদের তো এত টাকা পয়সা ছিল না প্রথম বউ মারা যাওয়ার পর এত টাকা পয়সা হয়েছে।তুমি এ অসময়ে তেঁতুল খাচ্ছ যে তার মানে তুমিও গর্ভবতী।যাইহোক সাবধানে থেক।আমার বলার দরকার ছিল বললাম।এটা আবার তোমার শ্বাশুড়ি কে জিজ্ঞেস করো না।
এবলে মহিলা চলে গেল।আমি শুধু ভাবতে লাগলাম মহিলার কথা কি সত্যি নাকি মিথ্যা?এ বাড়িতে এসে কখনও খারাপ কিছু পাই নি।তবে একটা মহিলা শুধু শুধু এত মিথ্যা কেন বলবে?এটা বলে উনার তো কোন লাভ নেই।আর সত্যিই তো এ বাড়িতে কেউ আসে না।আমি কি করব বুঝতে না পেরে তোরাকে কল দিয়ে সবটা জানালাম।তোরা বরাবরেই খুব বিচক্ষণ মেয়ে ছিল।তাই তোরা সবটা শুনার পর বলল-
– দোস্ত আমার কাছে ব্যপার রহস্যময় লাগছে। এ আধুনিক যুগে অভিশাপ বলে এগুলা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। মহিলার কথা সত্যি হলে এর পিছনে গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে।আমাকে অনুমতি দিলে তোর শ্বাশুড় বাড়ি এসে ব্যপারটা খুঁজ নিতে পারি।এমন ভাবে নিতে হবে যেন কেউ টের না পাই।
– অনুমতির কি আছে তুই কালকে চলে আয়।আমি মাকে বুঝাব নে।তবে এত ভালো মানুষের খারাপ দিক থাকতে পারে এটা ভাবতেই যেন কষ্ট লাগছে।
– আরে বোকা আগে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে দে।আর একদম চুপ করে থাকবি।ওদের সাথে না জেনে এ ব্যাপারে কথা বলবি না।যদি ব্যাপারটা মিথ্যা হয় তাহলে ওরা কষ্ট পাবে।আর যদি বিষয়টা সত্যি হয় তাহলে রহস্য তো বের করতে হবেই।আমি কালকে চলে আসব বুঝছিস।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ফোনটা রেখে দিলাম।সারাদিন একটা চিন্তার মধ্যে গেল।খেতে ইচ্ছা করছিল না তবুও আম্মু জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে বলল-
– আরে এসময় না খেলে চলবে?
বলেই জোর করে খাইয়ে দিল।এমন মানুষ গুলার খারাপ দিক আছে আমি ভাবতেই পারছি না।নাহ ঐ মহিলা হয়ত মিথ্যা বলেছে।একবার কি জিজ্ঞেস করব আম্মুকে, নাহ তোরা না করেছে কিছু বলার জন্য।তাই আমি শুধু মাকে বললাম-
– মা তোরাকে কিছুদিন এর জন্য আপনাকে না জিজ্ঞেস করেই আসতে বলেছি।ওর সাথে সময় কাটালে একটু মন ভালো থাকবে তাই।
– আসতে বলেছ ভালো করেছ।তোমার যা ভালো লাগে করো।এবার যাও বিশ্রাম নাও।
আমি মায়ের কথায় বিশ্রাম নিতে রুমে আসলাম।তবে আমার চিন্তা পড়ে রইল সেই মহিলার কথার মধ্যে।রাতে তুর্জ আসল।খুব বেশি কথা বললাম না।তুর্জ আমার নীরবতা দেখে বলল-
– কি গো আমার বউ এর কি হয়েছে?আজকে এত চুপচাপ কেন?
তুর্জের কথা শুনে ভাবতে লাগলাম এমন ভালো মানুষ আমাকে ঠকাতে পারে বলে মনে হয় না।একবার কি তুর্জকে জিজ্ঞেস করব!নাহ থাক আগে তোরা আসুক।আমি তুর্জকে বললাম-
– নাহ একটু শরীর দুর্বল লাগছে তো তাই।
তুর্জ আমার পাশে এসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল-
– এ সময় নাকি একটু এমনি লাগে।তুমি একটু চুপ করে শুয়ে থাকো।
– হুম
সারারাত ছটফট করতে করতে গেল। তুর্জের মুখের দিকে তাকিয়ে কোনভাবে মনে হচ্ছিল না যে তুর্জ এমন করতে পারে।প্রতিদিনের মতই অজশ্র ভালোবাসায় সকালটা শুরু হল।শ্বশুড় বাড়িতে এত আদর পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার ছিল।তবুও মহিলার কথাটা মনে গেঁথে গিয়েছিল।আর বিয়ের প্রথম দিন থেকে মা আমাকে কারও সাথে মিশতে দিত না।তাহলে কি এ কারণে মিশতে দিত না।এসব কথা মাথায় বাজতে লাগল।তোরার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।হুট করে বিকেল দিকে কলিং বেলের শব্দ পেলাম আম্মু গিয়ে দরজা খুলল।তোরার কন্ঠ শুনে দৌঁড়ে গেলাম। তোরা আম্মুকে জিজ্ঞেস করছে-
– আন্টি কেমন আছেন?
– হ্যাঁ ভালো আছি তুমি?
– ভালো আছি আন্টি।
– যাও ভিতরে নিরা আছে।অহ! এই যে নিরা চলে এসেছে।নিরা তোরাকে নিয়ে ভিতরে যাও।আর ওকে ফ্রেশ হওয়ার পর টেবিলে শরবত রাখা আছে দিও।আমি একটু নাস্তা বানাই কেমন।
– আচ্ছা আম্মু।
এরপর তোরাকে আমার রুমে নিয়ে এসে বললাম-
– আমার খুব অশান্তি হচ্ছিল তোর এত দেড়ি হল কেন?সে কখন রওনা দিয়েছিস।
– কারণ আছে।আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসছি।এসে তোকে সবটা বলছি।তুই একটু নিজেকে প্রস্তুত রাখ।
– কেন কোন কিছু কি হয়েছে?আমাকে বল দয়াকরে।আগে বলে তারপর যা।
– আরে বোকা এত অস্থির হলে চলবে নাকি?একটু স্থির হ।অসময়ে এ অস্থিরতা অনেক বিপদে ফেলে।
আমি তোরার কথা শুনে নিজেকে স্থির করে বললাম
– আচ্ছা ঠিক আছে তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।
খানিকক্ষণ পর তোরা ফ্রেশ হয়ে আসার পর শরবত এনে দিলাম।তোরা শরবতটা খেতে খেতেই আম্মু তোরার জন্য নাস্তা এনে বলল-
– রুমেই নিয়ে আসলাম। ভাবলাম নিরার সাথে কথা বলতে বলতে খাও।কিছু মনে করো না
– কিছুই মনে করে নি।বরং আরও খুশি হয়েছি।
– আচ্ছা মা তুমি খাও আমি গেলাম।
– আচ্ছা যান আন্টি।
আম্মু চলে গেল আর তোরা নাস্তা খেতে খেতে বলল-
– একটা বিষয় আমি আসার সময় জেনে এসেছি।
– কি জেনে এসেছিস বল?
– তুর্জের আগের বিয়ের বিষয়টা।আচ্ছা দরজাটা খুলা রেখে কথা বলা সমস্যা।কেউ এসে শুনে ফেললে হিতে বিপরীত হতে পারে।দরজা লক করলে কি কেউ কিছু বলবে?
– আরে না কেউ কিছু বলবে না।দাঁড়া লক করে আসি।
তোরা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
– তোর এ শরীর নিয়ে বারবার উঠতে হবে না।তুই বস আমিই লক করে আসছি।
এরপর তোরা দরজা লক করে আমার পাশে বসে বলল-
চলবে।