#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-২১
তোরা পুনরায় কল ধরে নিরাকে আস্বস্থ করে বলল-
– নিরা তুই চিন্তা করিস না। আমি কাগজগুলোর কপি করে পাঠিয়েছিলাম।মূলকপি আমার কাছেই আছে।এখন যা বলি শুন।তোর বাবা মাকে হয়ত তারা কল দিয়েছে অথবা তারা ঐখানে আছে।তাই এখন তোর পরিবারের কাউকে কল দিস না।আমি আমার আগের অফিসের একজনকে বলেছি, তাদেরকে আগেই হাতে যে প্রমাণ ছিল তা পাঠিয়েছি।আমি এখন তাদের কল দিব।বাকিটা তারা ব্যবস্থা করবে।তোর পাশে থাকা ভদ্রলোকটাকে একটু ফোনটা দে।আমি উনার সাথে কথা বলতে চাই।
নিরা আমাকে ফোনটা ধরিয়ে দিল।ওপাশ থেকে তোরা বলল-
– ভাইয়া আমি আপনাকে চিনি না তবে আপনি নিরার জন্য যা করেছেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। যদি অভয় দেন একটা কথা বলতে চাই।
– হ্যাঁ বলুন কি বলতে চান।কোন ভয় পাওয়ার দরকার নেই, নির্ভয়ে বলুন।
– আপনাকে একটু মামলা করতে হবে নিরার হয়ে। ঐ অপরাধীগুলোকে শাস্তি দিতে হবে।পারবেন না ভাইয়া এটুকু সাহায্য করতে।
আমি খুশি মনে বললাম-
– এ আর কেমন কাজ অবশ্যই পারব।এটুকু করতে পারলে আমি আরও খুশি হব।
তারপর নিরাকে নিয়ে থানায় গেলাম।থানায় গিয়ে তুর্জ আর তুর্জের মায়ের নামে একটা মামলা করলাম।তোরার আগের অফিসের লোকগুলার সাহায্যে তুর্জ আর তুর্জের পরিবারের বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ দাঁড় করালাম।পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গেল সাথে ঐ ডাক্তার মহিলাকেও।তুর্জের নানীমা এসবে জড়িত ছিল না তাই তুর্জের নানীমাকে একটা বৃদ্ধাশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করলাম।
তুলি অবাক হয়ে বলল-
– এখন নিরা কোথায় আছে?বাবা মায়ের সাথে আছে?আর ঘটনাটা তিনবছর আগের তার মানে এখন নিরার মেয়ের হয়ত আড়াই বছর।বলুন না কোথায় আছে ওরা।
অরন্য তুলির অস্থিরতা দেখে বলল চলুন এক জায়গায় নিয়ে যাই আপনাকে।তুলি অবাক হয়ে বলল-
– কোথায় নিয়ে যাবেন?
– সাথে ছুরিটা নিয়ে নিবেন তো, অন্য কোথাও নিয়ে গেলে ছুরি দিয়ে মেরে দিবেন।একটা মার্ডার তো করেছেনেই।খুব শখ জাগতেছে খুনের আসামীর সাথে একটু ঘুরতে।খোলা আকাশের নীচে একটু গল্প করতে।বহুদিনের শখ বলতে পারেন।
তুলি অরন্যের কথায় ক্ষেপে গিয়ে বলল-
– আমি কোথাও যাব না।আপনি সব বিষয় নিয়ে কেন মজা করুন বলুন তো।
– বিশ্বাস করতে পারলে চলুন।এত ক্ষেপে যান কেন কথায় কথায়?
তুলি শান্ত গলায় বলল-
– আমি এভাবে বের হলে তো অনেকে আমাকে চিনে ফেলবে।পুলিশ আমাকে দেখলে ধরে নিয়ে যাবে।তার উপর ঐ শয়তান মহিলার আর নিলয়ের লোকজন আশেপাশে আছে।
অরন্য কিছুক্ষণ ভেবে সেখান থেকে উঠে অন্য একটা রুমে গিয়ে আবার কিছুক্ষণ পর ফিরে আসল হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে।ব্যাগটা তুলির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-
– এই নিন।
– এ ব্যাগে কি?এ ব্যাগ দিয়ে আমি কি করব?
– খুললেই বুঝবেন।আগে খুলে দেখুন।না খুলেই এত প্রশ্ন করছেন কেন?বোম রাখে নি ব্যাগে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কথাখানা বলেই অরন্য ঐ রুম থেকে প্রস্থান নিল।অরন্য বের হওয়ার পর তুলি ব্যাগ টা খুলে দেখল একটা বোরকা।তাই তুলি দেড়ি না করেই বোরকাটা পড়ে নিকাব পড়ে নিল।নিকাব পড়ার পর রুম থেকে বের হয়ে বলল-
– চলুন এবার বাইরে যাওয়া যাক।কোথায় না নিয়ে যাবেন বললেন।
অরন্য তুলিকে দেখে একটু খামখেয়ালে হাসি দিয়ে বলল-
– আপনার ছুরিটা নিয়েছেন তো।না হয় তো আপনাকে কি থেকে কি করে বসি।তখন তো বিপদে পড়ে যাবেন।আপনার ছুরিটা কোথায় দেখতেছি না যে।
তুলি বিরক্ত গলায় জাবাব দিল-
– সেটা আপনাকে দেখতে হবে না।এতকিছু না দেখলেও চলবে। এবার চলুন।
তুলি আর অরন্য বের হয়েএকটা রিকশা ভাড়া করে দুজন উঠল।তুলির বেশ ফুরফুরা লাগছে বাইরে বের হতে পেরে। কতদিন এ বাহিরটা দেখা হয় নি তুলির।খোলা আকাশের নীচে রিকশা চড়া হয় নি।তুলির মনটা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল।আকাশের দিকে বারবার চোখ যাচ্ছিল আর মনে হচ্ছিল এ খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়তে পারলে হয়ত অনেক ভালো লাগত।এতটা ভালো লাগছে তুলির যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।অজান্তেই কোথায় যেন হারিয়ে গেল।এর মধ্যেই রিকশাটা থেমে গেল একটা গেইটের সামনে।অরন্য রিকশা থকে নেমে তুলিকে বলল-
– কি ব্যপার উপরে তাকিয়ে কি দেখছেন?
তুলি আবার নিজের মধ্যে ফিরে আসল।অরন্যের দিকে তাকিয়ে বলে-
– নাহ কিছু না।আমরা কি চলে এসেছি।
– হ্যাঁঁ চলে এসেছি নামুন।
তুলি রিকশা থেকে নামল।নামার পর অরন্য গেইটটা খুলে ভিতরে ঢুকল।তুলি গেইটের ভিতরে ঢুকে প্রথমে একটা ছোট মাঠ খেয়াল করল।মাঠের কিছু বিস্তৃতি পর কতগুলো ছোট ছোট বাড়ি দেখল। অরন্য তুলিকে নিয়ে সেই বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।একটু হাঁটার পরেই অরন্য তুলিকে নিয়ে একটা ঘরের সামনে গিয়ে দরজা নক করতেই একটা মেয়ে বের হয়ে আসল।মেয়েটাকে তুলির আর চিনতে বাকি রইল না এ মেয়েটাই নিরা।নিরা অরন্যকে দেখে বলল-
– আরে আজকে এ সময় যে?চেম্বার নেই?
– হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস চেম্বার নেই।
নিরা অরন্যকে বাইরে একটা চেয়ার বের করে দিল।ঠিক এ সময় তুলিকে দেখে বলল-
– এ কে অরন্য।এ ও কি থাকবে নাকি এখানে।
– নাহ ও এ আশ্রমটা দেখতে এসেছে।মেহমান বলতে পারিস।
– অহ! তাই বলো।
এটা বলার পর পরই তুলি লক্ষ্য করল একটা বাচ্চা মেয়ে নিরাকে মা মা বলে ডাকছে।অরন্য বাচ্চা মেয়েটাকে দেখেই পকেট থেকে চকলেট বের করে দিল।তুলি আশ্চর্য হল এটা ভেবে যে অরন্য কখন মেয়েটার জন্য চকলেট নিল টেরেই পেল না।নিরা তুলির দিকে তাকিয়ে বলল-
– তোমাকে তো চেয়ার দিতে ভুলে গিয়েছি। কতক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছ মনে কিছু নিও না।
তুলি একটা হাসি দিয়ে বলল-
– আরে না মনে কিছু কেন নিব?তোমাকে দেখেই অনেক ভালো লাগছে।
পাশ থেকে অরন্য নিরাকে আঁটকে দিয়ে বলল
– আরে চেয়ার আনতে হবে না।ওকে নিয়ে একটু ঐ পুকুর পাড়ে বসব।
পুকুর পাড় আছে শুনে তুলির মনটা খুশিতে আনচান করতে লাগল।অরন্য চেয়ার থেকে উঠে তুলির দিকে তাকিয়ে বলল চলুন একটু পুকুর পাড়ে যাওয়া যাক।তুলি পুকুর পাড়ে যাওয়ার আগে বাচ্চা মেয়েটার দিকে একটু তাকাল।তাকিয়ে দেখল মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরি হয়েছে।অথচ নিরার শ্বাশুড়ি এ বাচ্চাটাকে বলেছিল পৃথিবীতে আনতে দিবে না।তার উপর বলেছিল কালো জন্ম নিবে।কিন্তু সৃষ্টিকর্তার লিলাখেলা ভিন্ন তিনি বাচ্চাটাকে অসম্ভ সুন্দর করে গড়েছেন।তুলি বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে বলল-
– তোমার নাম কি?
বাচ্চাটা আধু আধু কন্ঠে বলল-
– পরী।
তুলি পরীকে একটু জড়িয়ে ধরে একটা চুমু একে দিয়ে অরন্যকে বলল-
– চলুন যাই।
অরন্য তুলিকে নিয়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসল।তুলি তখন অরন্যকে জিজ্ঞেস করল-
– এটা কিসের আশ্রম। আর নিরা কি তার বাবা মায়ের সাথে থাকে না।
অরন্য পুনরায় ঘটনা বলা শুরু করল-
– সেদিন নিরার দরকার ছিল একটা সঠিক সাপোর্টের। আমি আর তোরা চিন্তা করে দেখলাম নিরা যদি তার বাবা মায়ের কাছে থাকে তবুও সে অবহেলিত হবে।কারণ পরিবার ও মেয়েদের একটা নির্দিষ্ট সময় পর ভুঝা মনে করে।নিরাকে বললাম কিছুদিন বাবার বাসায় থেকে একটা ভালো চাকুরি পেলে আলাদা বাসা নেওয়ার জন্য।কিন্তু এ সমাজ গায়ের রঙ টাকেই বেশি প্রাধান্য দেয় যোগ্যতার থেকে।ফলে নিরার ভালো চাকুরি হল না।আমি আর তোরা নিরাকে ব্যবস্যার ব্যবস্থা করে দিলাম।নিরা খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে হওয়ার দরুণ একবছরেই ব্যবস্যাটা বেশ ভালো করে দাঁড় করে ফেলে।এর মধ্যে নিরার মেয়ে পরীর জন্ম হয়।নিরা কঠোর পরিশ্রমে তিন বছরে ব্যবস্যাটাকে একদম দাঁড় করিয়ে সফল ব্যবসায়ী হয়।এখন নিরার এ ব্যবস্যা থেকে মাসে ৮০-৯০ হাজার টাকা রোজগার হয়।আস্তে আস্তে অরন্য থেকে হয়ে গেলাম নিরার বড় ভাই।নিরা আমাকে নিরার বড় ভাই মনে করে আমিও নিরাকে ছোট বোনের মত দেখি।নিরার ব্যবস্যা যখন ভালোর দিকে তখন মনে হল আমার একটা খোলা জায়গা পড়ে আছে সে জায়গায় এসব অবহেলিত মেয়েদের জন্য আশ্রম দিলে তো ভালোই হয়।নিরাকে বলার পর নিরা বলল-
-মেয়েদের দেখাশুনার দায়িত্ব আমি নিব।নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
আমিও আর দ্বিতীয়বার না ভেবে আশ্রমটা করেই ফেললাম।নিরা এখানে থাকা শুরু করল।ব্যবস্যার অর্ধেক টাকা এখানে ব্যয় করে।নিরার বান্ধবী তোরাও মাসে মাসে কিছু টাকা এসব সুবিধা বঞ্চিত মেয়েদের জন্য পাঠায়।শুরু হয় আমাদের পথ চলা।
তারপর অরন্য বলল একটু এদিকে আসুন।এবলে অরন্য তুলির হাত ধরে টান দিয়েও ছেড়ে দিয়ে বলল-
– দুঃখিত।হাতটা অনিচ্ছাকৃতভাবে ধরে ফেলেছি।
তুলি অরন্যের ছোঁয়া পেয়ে এক ভালোবাসার অতল সাগড়ে ডুবে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-
– সমস্যা নেই। ঠিক আছে চলুন।কোথায় না নিয়ে যাবেন।
এরপর অরন্য তুলিকে নিয়ে একটা মেয়ের কাছে গেল।মেয়েটা দেখতে পরীর মত সুন্দর বললেও ভুল হবে বলতে হবে পরীর থেকেও সুন্দর।এত সুন্দর মেয়ের ঠাঁই এ আশ্রমে এটা দেখে তুলি বলল-
– এ কে?
– এ সাবিহা।বয়স সতের।মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।তবে হয়ত মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এত সুন্দর মেয়ে এখানে কেন?নিরার গায়ের রঙ হয়ত কালো তাই হয়ত তার জীবনে এত ঝামেলা হয়েছে কিন্তু এ মেয়ে তো ফর্সা তাই বলে সে কি এ সমাজের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে?নাহ পায় নি এসমাজ তাকেও অসহ্য যন্ত্রণা দিয়েছে।সুন্দর হয়ে জন্ম নিয়েছে এটাই তার অপরাধ।সত্যি বলতে মেয়েদের সবকিছুতেই অপরাধ খুঁজে বেড়ায় এ সমাজ।মেয়েটার জীবনে ঘটে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
মেয়েটা সন্ধ্যায় একদিন বাসায় ফিরছিল।চার পাঁচটা বখাটে ছেলে ধরে ধর্ষণ করে। ধর্ষিত হওয়ার পর মান সম্মানের হানি ঘটবে তাই মেয়েটার বাবা মা কোন মামলা করে নি।হায়রে সমাজ এখানে নাকি ধর্ষিত হলে মান যায় আর যারা ধর্ষণ করে তাদের মান যায় না।মেয়েটার মনের ব্যথা কেউ বুঝে নি।কয়েকদিন পর মেয়েটার পেটে বাচ্চা আসে।মেয়েটা বুঝতেই পারে নি।যখন বুঝতে পেরেছে তখন অনেক দেড়ি হয়ে গিয়েছিল।বাচ্চাটা নষ্ট করার মত কোন উপায় ছিলনা।মেয়েটার পড়ালেখা বন্ধ করে ঘর বন্দি করে রেখে দেওয়া হয়েছিল।অবশেষে মেয়েটার বাচ্চা হয়।তবে সেটা সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।কারণ তারা ডাক্তারের কাছে নিয়েই যাই নি মেয়েটাকে, তথাকথিত মান সম্মান যাবে বলে।বাচ্চাটাকে হয়ত কোন এক ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল।তখন হয়ত সবাই বাচ্চাটাকে দেখে মনের অজান্তেই মেয়েটাকেই গালি দিয়েছিল।এ সমাজে কেউ বলে না, কেমন বাবা নিজের বাচ্চাকে এভাবে ফেলে দিয়েছে।এ সমাজ শুধু বলতে জানে কেমন মা নিজের বাচ্চাকে এভাবে ফেলে রেখেছে।কিছুদিন পরে মেয়েটার ভাই বিয়ে করে। মেয়েটার ভাই বিয়ের পর মেয়েটার বাবা, মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় আর মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।সেদিন মেয়েটা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আমার কাছে আসল।আমি তখন টং দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম।মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল-
– ভাইয়া একটু খাবার দিন।সকালে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। থাকার জায়গা নেই সারাদিন কিছু খায় নি।
মেয়েটার মুখটা দেখে কলিজাটা ফেটে গিয়েছিল।তখন মেয়েটার বয়স ছিল ষোল।মেয়েটাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?মেয়েটা তার জীবনের ঘটনা গুলো খুলে বলল।মেয়েটার ঘটনার শুনে বুকটা কেঁপে গিয়েছিল।আর বলে উঠেছিল-
“হে সমাজ তোমার কি কখনও টনক নড়বে না”
কারণ যখন মেয়েটাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল তখন মেয়েটার বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর ছিল।এ অল্প বয়সে কত কষ্টটাই না সহ্য করেছে।আমি নিরাকে কল দিলাম।নিরা ঐখানে গিয়ে মেয়েটাকে আশ্রমে নিয়ে আসল।এক বছর যাবৎ মেয়েটা এখানে থাকে।
এখানে মেয়েটা বসে নেই।পড়াশুনা করছে পাশাপাশি সুতার কাজ করে নিজের খরচটা নিজেই জুগিয়ে নিচ্ছে।আর ঐসব নরপশুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।তাদের বিষয়টা পুলিশ দেখছে।তবে ন্যায় বিচার নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দিহান রয়েছে।
তারপর অরন্য পাশে থাকা আরেকটা মেয়েকে দেখিয়ে বলল।ওর নাম তাহিরা বয়স পঁচিশ।বিয়ে হয় বিশ বছর বয়সে।বিয়ের তিন বছর পর একটা বাচ্চাও হয়।বেশ সুখেই ছিল।কিন্তু সে সুখ বেশিদিন টিকে নি ওর কপালে।স্বামী পরকিয়া করে ডিভোর্স দিয়ে দেই।বাপের বাড়িতে গ্রহণ করে নি।তাই ঠাঁই পেয়েছে আমার এ আশ্রমে।তবে সে এখন তার নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে বেশ ভালো হস্ত শিল্প পাড়ে মেয়েটা।
আশে পাশে তাকান দেখেন অনেক মেয়েই আছে তারা অবহেলিত হয়ে এখানে এসেছে।তবে তারা কেউই বসে নেই।তারা ঠিকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।আমি বলব-
“হে নারী তুমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিও না।অন্যায়ের রসাতলে নিজেকে গুটিয়ে ফেল না।তুমি ঘুরে দাঁড়াও।তোমার মাঝে রয়েছে অসংখ্য প্রতিভা সেটা শুধু প্রকাশ কর।রুখে দাড়াঁও আপন শক্তিতে।সমাজ তোমাকে বদলে দিবে না বরং সমাজকে তুমি বদলে দাও।তোমার সুপ্ত প্রতিভা গুলোকে জাগিয়ে তুল।নিজের পায়ে দাঁড়াও।কারণ তুমি নারী,তুমিই মা,তুমিই মেয়ে,তুমিই অর্ধাঙ্গিনী। ”
এ বলে অরন্য একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে মাঠের ঘাসের উপর বসল।তুলিও অরন্যের কথা শুনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল।মনের ভিতর এক অদ্ভূত সাহস পেল।আশেপাশের মেয়েগুলোকে দেখেও এক অদ্ভুত শান্তি পেল মনে।অরন্যের দিকে তাকিয়ে বলল-
– আপনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন নিঃসন্দেহে সেটা অনেক ভালো উদ্যোগ।তবে একটা বিষয় আমার কাছে এখনও ধোঁয়াশায় আছে। বিষয়টা কি একটু খুলে বলবেন।
অরন্য মুচকি হাসি দিয়ে বলল-
– বলে ফেলুন শুনি।পেটে কথা চেপে রাখলে বদহজম হবে।
– আমি কি জানতে পারি আপনার স্ত্রী রুপা কোথায়?আর এ উদ্যোগটা নেওয়ার পিছনে কি কোন কারণ আছে।
আকাশপানে তাকিয়ে অরন্য বলল –
-সত্যিই কি জানতে চান?
– জানার জন্যই তো বললম
তাহলে শোনোন
– আমি তখন মেডিকেলে ইন্টার্নি করছিলাম।পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী ছিলাম।কোন মেয়ের দিকে তকাতাম না।প্রেম ভালোবাসায় মোটেও বিশ্বাসী ছিলাম না।মনে হত এসব পাগলের কান্ড কাহিনী।পড়াশোনার বাইরে কোন কিছু ভাবতেই পারতাম না।নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখতাম বইয়ের গন্ডিতে।বেশ ভালোই কাটছিল আমার দিনকাল।
আমি একটা বাসা ভাড়া নিয়ে মেডিকেলের কাছেই থাকতাম।কেন জানি না হলের খাবার গলা দিয়ে নামত না।তাই আলাদা বাসা ভাড়া করে নিজেই কোনরকমে রান্না করে খেতাম।একদিন বাসা থেকে বের হয়ে একটা বিষয় লক্ষ্য করে বেশ অবাক হলাম।
চলবে?