বাসন্তী প্রেম পর্ব-২১+২২

0
489

#বাসন্তী_প্রেম 🌼🌼
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#একবিংশ_পর্ব

একজোড়া শীতল পুরুষালী হাত কোমর সংলগ্ন জড়িয়ে ধরতেই নিচে পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যায় সিরাত‌। সাথে করে ভয়ে চোখ মুখ কুঁচকে চিৎকার দিতে গিয়েও থেমে যায় সে। ফাইয়াজ অতি সন্তর্পণে সিরাতকে সোজা করে দাঁড় করাতেই খানিকটা কাছাকাছি চলে আসে দুজন। ফাইয়াজের উত্তপ্ত ভারী নিঃশ্বাস সিরাতের মুখশ্রী ছুঁয়ে দিতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে সিরাত‌। ফাইয়াজের ঘোর কাটাতে নিজ থেকেই ছিটকে সরে আসে পেছনের দিকে। এতে করে ভাবনায় ছেদ পড়ে ফাইয়াজের। হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠে,
– ” আর একটু দেরি করলেই কি হতে পারত এখন সেই আইডিয়া আছে তোমার? এত রাতে নিচে যাওয়ার কি দরকার ছিল!”
– ” আমি তো ইচ্ছে করে পড়ি নি! সিঁড়িতে বোধ হয় কিছু একটা ছিল; আর এখান থেকে পরপর দুবার কিছু পড়ার শব্দ পেয়েই তো রুম থেকে ছুটে এসেছিলাম।”
সিরাতের কথা শুনে খানিকটা ভ্রু কুঁচকে ফেলে ফাইয়াজ। সিরাতের থেকে সরে এসে সিঁড়ির কাছটায় দাঁড়ায়। সিঁড়ির একাংশ জুড়ে কিছু একটা চিকচিক করছে। সন্দেহ বশত সেখানে হাত দিতেই তেল জাতীয় পদার্থ অনুভূত হয় ফাইয়াজের। স্বচ্ছ নারকেল তেল সিঁড়ির রঙের সাথে মিলিয়ে যাওয়ায় খুব একটা খেয়াল না করলে বোঝা যাবে না। একটু আগে সিরাতের পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়তেই মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে উঠে। রাগান্বিত চোখে একপ্রকার চিল্লিয়ে উঠে,
– ” ফজলুল চাচা! ফজলুল চাচা!! ময়না খালা!!”
ফাইয়াজের চিৎকার শুনে সিরাতও ভয় পেয়ে যায়। হুট করেই এমন চিৎকার করার বিশেষ কোনো কারণ খুঁজে পায়না সে। ফাইয়াজের ডাকে ফজলুল এবং ময়না দুজনেই যার যার কাজ ফেলে ছুটে যায় ফাইয়াজের কাছে। মিসেস সাবিনা সহ ফারিহাও বেরিয়ে আসে রুম থেকে।
– ” কি হইছে ছোট হুজুর? কিছু লাগব আপনার?”
বিচলিত কন্ঠে বলে উঠল ফজলুল আর ময়না দুজনেই।
– ” সিঁড়িতে এতখানি তেল এলো কি করে? ময়না খালা, তুমি তো প্রতিদিন ই সিঁড়িতে ধোঁয়া মোছা কর! তাহলে সিঁড়িতে এত তেল কি করছে? এখনি সিরাতের সাথে কত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত তুমি জানো!”
ততক্ষণে দোতলায় সাবিনা বেগম সহ ফারিহা উপস্থিত হয়ে গিয়েছে।
– ” আমি সত্যিই জানি না ছোট হুজুর এইখানে তেল আসছে কেমনে; আমি তো বিকেলেই সব পরিষ্কার করছি!”
আঁতকে বলে উঠে ময়না। ময়নার কথা শুনে খটকা লাগে ফাইয়াজের। মিনিট দুয়েক নিশ্চুপ থাকার পর কিছু একটা ভেবে বলে উঠে,
– ” আচ্ছা ঠিক আছে, তোমরা এখন যাও! আমি না হয় পরে দেখব ব্যাপারটা।”
ফাইয়াজের কথামতো ময়না আর ফজলুল মাথা নাড়িয়ে নিচের দিকে পুনরায় পা বাড়ায়।
– ” কি হয়েছে ফাইয়াজ? কিসের কথা বলছিলি তুই? আর সিরাতেরই বা কি হয়েছিল?”
মিসেস সাবিনা উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করেন।
– ” তেমন কিছুই না মা, জাস্ট ছোট একটা এক্সিডেন্ট ছিল। নাথিং এল্স!”
না বলায় ব্যাপারটা নিয়ে তেমন ঘাঁটাঘাঁটি করেন নি মিসেস সাবিনা। মিসেস সাবিনা চলে যেতেই পেছন ফিরতেই সিরাতের বাম হাত খপ করে ধরে ফেলে ফাইয়াজ।
– ” তুমি আমার সাথে এসো; তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।”
– ” কিন্তু ক,কে,কেন?”
সিরাতের কথার ভ্রূক্ষেপ না করে হাত ধরে রুমের দিকে পা বাড়ায় ফাইয়াজ।
এদিকে একে একে সবাই চলে যেতেই আড়াল থেকে অতি সন্তর্পণে বেরিয়ে আসে রিয়া‌। এতক্ষণ সিঁড়ির অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সবকিছু চুপচাপ পরখ করছিল সে‌। তার তৈরি করা পরিকল্পনা এভাবে ভেস্তে যাবে দেখতেই রাগে শরীর রি রি করছে।
– ” আমার তৈরি করা প্ল্যান একের পর এক ফ্লপ হয়ে যাচ্ছে আর আমি কিছু করতে পারছি না! প্রত্যেকবার এই থার্ড ক্লাস মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য কোনো না কোনো ভাবে মুগ্ধ হাজির হয়ে যায়। কিন্তু আর না! এর পরের প্ল্যানে তোমাকে পা দিতেই হবে সিরাত‌। শুধুমাত্র তোমার জন্য আমার মুগ্ধ আমাকে সবার সামনে আমাকে রিজেক্ট করেছে। এর শোধ আমি গুনে গুনে নিব, আর যদি সেটার জন্য তোমাকে আমার আর মুগ্ধের জীবন থেকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে ফেলতে হয় তাও সরিয়ে ফেলব।”
বলতেই মুখের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল রিয়ার‌।
রুমের ভেতরে প্রবেশ করতেই ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল ফাইয়াজ।
– ” আরে কি করছেন আপনি? ছাড়ুন আমাকে। রুমের দরজা বন্ধ করলেন কেন?”
আঁতকে কথাগুলো বলে উঠে সিরাত‌।
– ” হুস! আর একটা কথাও বলবে না! এক মিনিটে এতগুলো কথাগুলো বলো কি করে?”
ধমকের সুরে বলে ফাইয়াজ। এতে করে চুপসে যায় সিরাত‌।
সিরাতকে খাটের উপর বসিয়ে আলমারির কাছে চলে যায় ফাইয়াজ।
– ” আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? আন্টি কিংবা ফারিহা আমাকে আপনার রুমে দেখলে কি ভাববে বলুন তো!”
– ” কি ভাববে? আমি আমার হবু ওয়াইফি কে আমার রুমে নিয়ে এসেছি!”
– ” লোকটা এমন কেন? মুখে কিছু আটকায় না নাকি? লাজ লজ্জা বিহীন প্রাণী!”
মনে মনে প্রলাপ বকে সিরাত।
মিনিট পাঁচেক পর আলমারি থেকে ছোট একটা বক্স নিয়ে আসে ফাইয়াজ। সিরাতের সামনে বসতেই সিরাত বলে উঠে,
– ” কি হয়েছে বলুন তো! ”
– ” কিছুই হয়নি! হাত বাড়াও!”
ফাইয়াজের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকায় সিরাত।
– ” কি হলো হাত বাড়াও।”
ফাইয়াজের কথামতো ধীরে ধীরে নিজের ডান হাত ফাইয়াজের দিকে বাড়ায় সিরাত‌। হাত বাড়াতেই বক্সের ভেতরে থাকা সিলভার স্টোনের পেন্ডেন টা হাতের উপর তুলে দিতেই মৃদু হেসে বলে উঠে,
– “হ্যাপি বার্থডে মেরি জান! ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে!”
ফাইয়াজের কথায় বিস্মিত হয়ে যায় একপলকেই সিরাত‌। আজ তার জন্মদিন! কথাটা তো মাথা থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল।

নিস্তব্ধ রজনীর দ্বিপ্রহর‌। চারপাশের ব্যস্ত নগরীর কোলাহল নির্জনে পরিণত হয়েছে। বিছানায় শয্যারত অবস্থায় থাকলেও চোখে বিন্দু পরিমাণ ঘুমের রেখা পর্যন্ত নেই চন্দ্রিকার। মাথার উপর সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণায়মান বাতাস খুলে রাখা চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছে নিমিষেই। তবুও তার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই যেন। বহুকষ্টে চোখ জোড়া বন্ধ করতেই বিরক্তিকর সুরে ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। পাশ ফিরে তাকিয়েও ফোনটা রিসিভ করে না সে। কারণ চন্দ্রিকা খুব ভালো করেই জানে কলটা আর কেউ নয় বরং রূপই করেছে। কিছুক্ষণ থামার পর আবারো বেজে ওঠে ফোন‌। এরকম তিন চারবার হওয়ার পর না পেরে ফোন রিসিভ করে কানের কাছে নিতেই অপর পাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে,

– “এতক্ষণ জেগে থেকেও ফোন রিসিভ করছিলে না কেন?”
রূপের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় চন্দ্রিকা। সে এতক্ষন ঘুমায় নি তা রূপ জানল কি করে ভেবেই মাথা ঘোরাচ্ছে তার। তবুও কথা ঘোরানোর জন্য বলে উঠে,
– “ক,কে বলেছে আমি জেগে ছিলাম? আপনার অনবরত ফোনকলের জন্যেই তো ঘুম ভেঙে গিয়েছে আমার।”
– “হুম সেজন্যই তো তোমার কন্ঠে ঘুম জড়ানো ভাব নেই। আর কতবার বলব আমার কাছে মিথ্যে কথা কোনো লাভ নেই।”
আরো একদফা অবাক হয় চন্দ্রিকা। কিন্তু পরমুহূর্তেই মুখের মধ্যে কাঠিন্যের ছাপ ফুটিয়ে তুলে গম্ভীর হয়ে বলে উঠে,
– “নান অফ ইউর বিজনেস ডক্টর রূপ! আর এত রাত পর্যন্ত জেগে আমাকে ফোন করে সময় নষ্ট না করে সে সময় টুকু আপনার প্রফেশনাল লাইফে কাজে লাগান। ভবিষ্যতে কাজে আসবে। আমার পিছু পিছু ঘুরে কোনো লাভ নেই। আমার উত্তর একই থাকবে। রাখছি এখন!”
বলেই খট করে কল কেটে দেয় চন্দ্রিকা‌। এদিকে অপর পাশে থাকা মানুষটি অর্থাৎ রূপ ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
– “তোমার ঐ না কে আমি হ্যাঁ তে পরিণত করবই এন্ড দ্যাটস্‌ মাই প্রমিজ। ইউ নো সুইটহার্ট, তোমাকে ছাড়া আমার একদম ই চলবে না। অন্য কোথাও মন বসাই কি করে তাহলে?”
ফোনের গ্যালারিতে থাকা চন্দ্রিকার বহু পুরনো একটা ছবির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠে রূপ।
ফোনটা পাশে রাখতে গিয়েও রাখল না চন্দ্রিকা। কয়েক পলক ফোনটার কললিস্টের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল সে। রূপ নামক মানুষটা প্রতিনিয়তই তার জীবনের সাথে জুড়ে যাচ্ছে যাকে আর চাইলেও জীবন থেকে সরিয়ে ফেলতে পারছে না। অদৃশ্য কোনো শক্তিই যেন সেটা করতে বাধা দেয়। কিন্তু রূপের এমন প্রতিনিয়ত তার জীবনের সাথে জুড়ে যাওয়া কি আদৌ ঠিক তার হিসেব মিলাতে মিলাতে একসময় অতল ঘুমের ঘোরে হারিয়ে যায় চন্দ্রিকা।

রুমের মধ্যে অনেকক্ষণ যাবৎ সিরাতের অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে নিশাত‌। টেবিলের উপর থাকা বই থেকে মাথা তুলে ঘড়ির দিকে তাকায় সে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সে। মাথায় ওড়না দিয়ে পরিপাটি হয় রুমের দরজা খুলে বের হতে যাবে এমন সময় কারো বিশালাকার দেহের সাথে ধাক্কা খেতেই ব্যাথায় ককিয়ে উঠে।…………..

#চলবে 🍂

#বাসন্তী_প্রেম 🌼🌼
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#দ্বাবিংশ_পর্ব

রুম থেকে বের হতেই কারো বিশালাকার দেহের সঙ্গে ধাক্কা খেতেই দু কদম পিছিয়ে যায় নিশাত। সাথে খানিকটা ব্যাথায় ককিয়ে উঠে সে। সামনে থাকা ব্যক্তিটা ও যেন ঘটনাক্রমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। একরাশ রাগ নিয়ে কিছু বলার উদ্দেশ্যে সামনে তাকাতেই মুখশ্রী থেকে রাগের রেশ উধাও হয়ে যায়।
– “আপনি!!”
অবাকের সুরে বলে উঠে নিশাত। সামনে থাকা ব্যাক্তি অর্থাৎ ধ্রুব নিজের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে সামনের দিকে চোখ তুলে তাকালো।
– “আ’ম সরি! আসলে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করিনি। আর ইউ ফাইন মিস নিশাত?”
বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে ধ্রুব।
– “ইটস্ ওকে। আ’ম ফাইন। তবে এত রাতে আপনি এখানে?”
– ” আমি তো ফাইয়াজের ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম; কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। কিন্তু আপনি এত রাতে কোথায় বের হচ্ছিলেন মিস নিশাত‌?”
– “এইতো সিরাত আপুকে খোঁজার জন্য বের হচ্ছিলাম। তিন ঘন্টা ধরে ঘরে আসেনি তাই ভাবলাম নিচে গিয়ে একটু খুঁজে আসি!”
– “ওও আচ্ছা।”
এভাবেই টুকটাক কথাবার্তার মাঝে মিনিট পাঁচেক কেটে যায়। কথাবার্তার মাঝেই আড়চোখে বারবার নিশাতের দিকে তাকায় ধ্রুব। নিশাতের ঠোঁটের নিচে থাকা লালচে রঙের তিলটায় যেন না চাইতেও চোখ আটকে যায় তার‌। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা বজায় রেখে কোনোমতে টুকটাক কথা বলার সেখান থেকে কেটে পড়ে ধ্রুব। কথার মাঝে হুট করে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে নিশাত।

হাতের উপর পেন্ডেনের সংস্পর্শ আর ফাইয়াজের বলা কথা শুনে চমকে উঠে সিরাত। আর তার জন্মদিন? কথাটা তো মাথা থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল! কিন্তু সিরাতের জন্মদিন সম্পর্কে ফাইয়াজ জানল কি করে ভেবে ভেবে একাকার হয়ে যাচ্ছে সিরাত।
– “কি ব্যাপার কোথায় হারিয়ে গেলে? গিফট পছন্দ হয় নি?”
ফাইয়াজের কথায় হুস ফিরে সিরাতের।
– “ক,কই কিছু না তো! আর পছন্দ হবে না কেন? খুব পছন্দ হয়েছে। তবে একটা কথা বলুন তো রকস্টার সাহেব, আমার জন্মদিনের কথা আপনি জানলেন কি করে? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।”
– “তোমার সাথে জুড়ে থাকা প্রতিটা জিনিস আমি জানব না তো আর কে জানবে? আফটার অল আ’ম ইউর উডবি!”
খানিকটা মুচকি হেসে বলে উঠে ফাইয়াজ।
– “উডবি? আপনি এত শিওর দিয়ে বলছেন যেন বিয়ে হয়ে গিয়েছে আপনার সাথে আমার। আর আমি কি একবারও বলেছি যে আপনাকে আমি বিয়ে করব!”
বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে ঠাট্টার ছলে বলে উঠে সিরাত‌। তবে তার কথা শুনে সামনে থাকা ব্যক্তিটির যেন ঠিক বোধগম্য হয় নি। চোখে মুখে রাগের আভা স্পষ্ট। হুট করে সিরাতের বাম বাহুদ্বয় ধরে টান দিয়ে বসে সে। আচমকা হেঁচকা টানে টাল সামলাতে না পেরে ফাইয়াজের অনেকটা কাছাকাছি এসে পৌঁছায় সিরাত‌। সাথে খানিকটা ভয়ের রেশ ও লেগে যায় সমস্ত শরীর জুড়ে। পুরো মুখশ্রী জুড়ে ভারী উত্তপ্ত নিঃশ্বাসের ছোঁয়া লাগতেই শিউরে ওঠে সিরাত।
– “ক,ক্,কি করছেন আপনি?”
– “একটু আগে কি বলছিলে আরেকবার বলো তো! আমিও শুনতে চাই তুমি একটু আগে ঠিক কি বললে!”
রাগ মিশ্রিত কন্ঠে ফাইয়াজ বলে উঠলো।
– “আমি তো মজা করছিলাম। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন‌। আর কখনো বলব না প্রমিজ।”
অস্ফুট স্বরে কম্পিত কন্ঠে বলে সিরাত। সিরাতের কথার প্রত্যুত্তরে ফাইয়াজ মুখশ্রী সিরাতের সামনে থেকে সরিয়ে সিরাতের কানের কাছে নিয়ে ঠোঁট জোড়া কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে ফিসফিস করে বলে উঠে,
– “আর একবার এ কথা ফেললে জানে মেরে ফেলব। ইউ আর অনলি মাইন‌। অনলি ফাইয়াজ আহমেদ মুগ্ধর। অন্য কারও হতেও পারবে না কখনো, মেরি জান।”

ফাইয়াজের এমন ফিসফিস করে বলা কথা শুনে পুরো শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায় সিরাতের‌। এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। ফাইয়াজকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাঁটা শুরু করে বাইরের দিকে। এই মুহূর্তে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মোটেও সম্ভব নয়। লজ্জা নামক বস্তুটি তাকে চারপাশ থেকে যেন আঁকড়ে ধরেছে।
দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের রুমের সামনে এসে পৌঁছাতেই কারো হাত জোড়া তার গলা জড়িয়ে ধরে।
– “হ্যাপি বার্থডে আপু!!”
উৎসুক হয়ে বলে উঠে নিশাত। সিরাত ও খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে নিশাতকে। ঘরের ভেতর প্রবেশ করতেই পেছন থেকে কারো পদধ্বনি ভেসে আসে তার কানে।
মিসেস সাবিনা, ফারিহা, ধ্রুব, ফাইয়াজ সবাই উপস্থিত হয়েছে সিরাতের রুমে। হাতে থাকা কেকের ট্রে পাশে টেবিলের উপর রাখতেই সিরাতের দিকে এগিয়ে যায় ফারিহা।
– “হ্যাপি বার্থডে ভাবি।”
সিরাতকে জড়িয়ে ধরে বলে ফারিহা‌। ফারিহার কথা শুনে উপস্থিত সকলেই ফিক করে হেসে উঠে।
একে একে কেট কেটে বেশ খানিকক্ষণ সময় কাটানোর মাঝেই ফারিহা বলে উঠে,
– “এই ভাইয়ু আজ তো সিরাত আপুর জন্মদিন। আর এমন স্পেশাল দিন একটু স্পেশাল ভাবে সেলিব্রেশন হবে না তা হয় নাকি! সিরাত আপুর জন্মদিন উপলক্ষে তোর স্পেশাল একটা গান শোনা প্লিজ!”
ফারিহা সহ সবার জোরাজুরিতে ফাইয়াজ একপ্রকার বাধ্য হয়েই উঠে রুম থেকে তার নিত্যসঙ্গী গিটার নিয়ে আসে। গিটারের টুংটাং শব্দ তুললেও দৃষ্টি তার সিরাতের দিকে স্থির।

খামোশিয়ান্‌ আওয়াজ হ্যায়,,
তুম শুননে তো আও কাভি,
ছুঁ কার তুমহে খিল যায়েগি
ঘার ইনকো বুলাও,,,কাভি!

বেকারার হ্যায় বাত কার নে কো
কেহ্ নে দো ইনকো জারা,,,,,!
খামোশিয়া,,,,,,,তেরি মেরি খামোশিয়া,
খামোশিয়া,,,,,,,লিপটি হুয়ি খামোশিয়া,

কেয়া উছ গালি মে কাভি তেরা যানা হুয়া
যাহাছে জামানে কো গুজরে জামানা হুয়া
মেরা সামায় তো ওয়াহি পে হে ঠেহ্‌রা হুয়া,,
বাতাউ তুমহে মেরে সাথ কেয়া কেয়া হুয়া!

মমমম‌, খামোশিয়া ইক সাজ্ হ্যায়
তুম ধুন কই লাও জারা
খামোশিয়া আলফাজ হ্যায়,,
কাভি আ গুনগুনালে জারা,,

বেকারার হ্যায় বাত কার নে কো
কেহ নে দো ইনকো জারা,,
খামোশিয়া,,,,,,,তেরি মেরি খামোশিয়া
খামোশিয়া,,,,,,,লিপটি হুয়ি খামোশিয়া

নাদীয়া কা পানি ভি খামোশ বেহ্ তা ইয়াহা
খিলি চান্দনি মে ছিপে হ্যায় লাখ খামোশিয়ান্
বারিশ কি বুন্দো কি হোতি কাহা হ্যায় জুবা্
সুলাগতে দিলো মে খামোশি হ্যায় উঠতা ধুঁয়া,,

খামোশিয়ান আকাশ হ্যায়,,
তুম উড়নে তো আও জারা,
খামোশিয়ান্ এহসাস হ্যায়
তুমহে মেহসুস হোতি হ্যায় কেয়া,,,
বেকারার হ্যায় বাত কার নে কো
কেহ্ নে ইনকো জারা,,,

খামোশিয়া,,,,,,, তেরি মেরি খামোশিয়া
খামোশিয়া,,,,, লিপটি হুয়ি খামোশিয়া

পুরোটা গানের মাঝে ফাইয়াজের দৃষ্টি যেন সিরাতের মাঝেই বিদ্ধ ছিল। সিরাত ও একমনে সবটা শুনে গিয়েছে নীরবে। চোখে মুখে ছিল অদ্ভুত মুগ্ধতা। মন খারাপের মাঝেও এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে সব যেন নিমিষেই মিলিয়ে যায় কর্পূরের ন্যায়। ফাইয়াজের ধ্যান ফিরে আসে ফারিহার করতালির আওয়াজ শুনে।
খোলা দরজার অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সবটাই পরখ করে নেয় রিয়া। খানিকটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে নিঃশব্দে মনে মনে বিড়বিড় করে উঠে,
– “আনন্দের পাল্লা খুব ভারি হয়ে গিয়েছে তাই না সিরাত‌। তবে এই খুশি শুধুমাত্র অল্প সময়ের জন্য। তোমার ঐ খুশি সবার কান্নায় পরিণত করে দেব আমি। যেটা আমার সেটা শুধু আমারই। আমার আর ফাইয়াজের মাঝে তুমি থার্ড পার্সন হয়ে গেলে তোমাকে তো সরতেই হবে আর সেটাও খুব তাড়াতাড়ি।”
বলার সাথে সাথে মুখের কোণে শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে রিয়ার।
বেশ খানিকটা রাত হয়ে যাওয়ার ফলস্বরূপ সবাই ধীরস্থির ভাবে বেরিয়ে পড়ে সিরাতের রুম থেকে। ফাইয়াজ ও রুমের বাইরে পা বাড়াবে এমন সময় পেছন থেকে সিরাত মৃদু স্বরে বলে উঠে,
– “থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ, রকস্টার সাহেব!”
সিরাতের কথা কর্নগোচর হতেই পেছন ফিরে তাকায় ফাইয়াজ। মুখে মুচকি হাঁসি পূর্বের তুলনায় বজায় রেখে এগিয়ে যায় সিরাতের দিকে। আলতো হাতে সিরাতের বাম চিবুকের উপর স্পর্শ করে ফিসফিস আওয়াজে বলে উঠে,
– “ইউ আর ওয়েলকাম‌ মেরি জান! গুড নাইট!”
বলেই পুনরায় সামনের দরজার দিকে হাঁটা শুরু করে সে।………….

#চলবে 🍂