তোকে ঘিরে পর্ব-১৬+১৭

0
1096

#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_১৬
#ফাবিয়াহ্_মমো🍁

আকাশে সূর্যের দেখা নেই! ঘন কালো হয়ে ঢেকে আছে সকালের আকাশ! বেলা বারোটা বাজলেও প্রকৃতি ধারন করেছে সন্ধ্যার আভাস! এ কেমন ভয়ংকর অন্ধকার? গা ভয়ে শিউরে উঠে দুমকা হাওয়ার শীতল পরশ পেয়ে!! মনের মধ্যে খারাপ কিছু নিয়ে পূর্বাশঙ্কা অনুভব হচ্ছে! যেন ঘোর কিছু অনুচিত ঘটবে। পূর্ণতা ভার্সিটির লেকচার গ্যাপ দিয়ে আড্ডাস্থল হিসেবে ক্যান্টিনে এসেছে। আজ ওর মন ভালো লাগছেনা। কি নিয়ে যে তীব্র ভয় অনুভূত হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। শুধু মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হবে! ক্যান্টিনের ভেতর সবগুলা লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টিময় আবহাওয়ায় সবাই ক্যান্টিনে কফি বা চা খেতে ভীড় করছে। আয়মান এখন আগের তুলনায় বেশ সুস্থ, মাথায় পেচানো ব্যান্ডেজের পরিবর্তে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগানো হয়। রাজিবের কোনো খোঁজ নেই। আয়মান ওর মেসে গিয়েছিলো কিন্তু রাজিব দেখা করতে চায়নি। পূর্ণতা কল দিয়ে আয়মান ও শ্রেয়াকে তথানুযায়ী ক্যান্টিনে আসতে বললো। পূর্ণতা ওদের অপেক্ষায় টেবিলে হাত রেখে তাতে গাল লাগিয়ে ক্যান্টিনের জানালা দিয়ে কালো অন্ধকার করা আকাশ দেখছে। আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেছে পূর্বের সাথে দেখা হয়না। সেই যে দেখা হয়েছিলো গাড়িতে! তাতেই যেনো পূর্ণতার রূহ আটকে আছে! বাসায় এখন মায়ের সাথে প্রচুর ঝগড়া হয় পূর্ণতার। এইতো ভার্সিটি আসার আগে নাস্তার টেবিলে বলে উঠে,

– বিকেলে তোর বাবার দেখা একটা ছেলেপক্ষ আসবে। তুই যথাসময়ে রেডি থাকবি।

পূর্ণতা ভেবেই পায়না মা কেনো বিয়ে দেওয়ার জন্য উতলা হয়ে গেছে! ও কি পরিবারের জন্য কঠিন বোঝাস্বরূপ হয়ে গেছে? ও পরিবারের একমাত্র মেয়ে! সেখানে থাকবে ওকে নিয়ে আদর, কদর, বহু সমাদর! এদিকে মা পাগলপ্রায় হয়ে গেছে বিয়ে দেওয়ার জন্য! আর পাড়া প্রতিবেশীর নিন্দুক আন্টিরা তো আছেই আগুনে ঘি তেল ঢালতে! পূর্ণতা নাস্তা না খেয়ে বলে উঠলো,

– মা আমাকে একটু সময় দাও? আমি একটু নিজেকে গোছাতে চাই। আমি চাই না হুটহাট একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সারাজীবন পস্তাতে।
– হ্যাঁ সময় দেই!পরে আনিশার মতো কীর্তিকলাপ করবি! তাই না!
– আনিশা আপুর উদাহরণ টানছো কেন? সব মেয়েরা কি তার মতো কাজ করবে? অবশ্যই না।
– মেয়েজাত তো। ভুলি কিভাবে! তুই তো এখনো ওই বান্দার নাম উচ্চারণ করার সাহস পাস না! তোহ্? তোর বিয়ে করতে সমস্যা কি!

বারবার একই খোটা শুনতে শুনতে পূর্ণতার মাথা বিগড়ে গেছে। পূর্ণতা অনেকটা না ভেবেই রাগত সুরে বলে উঠলো,

– তুমি নাম শুনতে চাইছো না? ঠিকআছে শুনো তাহলে! উনার নাম পূর্ব। আয়াশ ওয়াসিফ পূর্ব। আরো খবর চাও? তাও শুনো! উনি তোমার বাবার বন্ধু ওয়াসিফ নানার বড় নাতী! শুনছো সব? এবার থামবা? আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ছাড়ো মা! অনেক হইছে প্লিজ! আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা।

পূর্ণতার মা হতভম্ব হয়ে হাত থেকে পরোটার প্লেট ছেড়ে দিলে ফ্লোরের সাথে তুমুল যুদ্ধ পাকিয়ে চুরমার হয়ে যায় কাঁচের প্লেট! পূর্ণতা হকচকিয়ে পানি খাওয়া আটকে মায়ের থমকানো মুখটা দেখলো। মা এতো চমকালো কেন? পূর্ণতা টেবিল থেকে ব্যাগটা তুলতেই মায়ের কাছে এসে কাধে হাত রেখে বললো,

– প্লেট ফেলে দিলে কেন?
পূর্ণতার মা শুধু ঢোক গিলছেন। চোখের পলকটা পযর্ন্ত ফেলছেনা এমন কঠিন ভাবে হতভম্ব হয়ে গেছে জাস্ট নামটুকু শুনে। পূর্ণতা জিজ্ঞাসু সুরে আরো একবার বললো,

– মা? প্লিজ! কিছু তো বলো? কি হয়েছে? এমন রিয়েক্ট করছো কেন?
থমথমে গলায় মা বললেন,
– তুই যার নাম উচ্চারণ করলি তাকে চিনিস?ভালো করে জানিস কি করে?
– তুমি এভাবে রসকসহীন গলায় কথা বলছো কেন?
– যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর ভালোভাবে দে পূর্ণতা! কোনোরূপ মিথ্যা বা বানিয়ে বলার চেষ্টা করবিনা!
পূর্বর ব্যাপারে যতটুকু জানে সবটাই বলে দিলো পূর্ণতা। খোদেজা মেয়ের দিকে তাকিয়ে হতভাগার মতো বলে উঠে,
– তুই কি ভুলে যাচ্ছিস রাজনীতি কি জিনিস?
– মা আমি উনার কর্ম দেখে ধর্ম কেনো বিবেচনা করতে যাবো? উনি যা ইচ্ছা করুক। নীতিবিরোধী কিছু না করলেই চলবে।

পূর্ণতার উত্তর শুনে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কষিয়ে চড় মারে খোদেজা। পূর্ণতা গাল ধরে কিছুটা দূরে ছিটকে গেলে খোদেজা গর্জন করে বলে উঠে,

– তুই আমাকে কখনোই বুঝলি না পূর্ণতা!আজীবন ভেবেই গেলি মা খারাপ! আমাকে কখনো মূল্য দেয়না! আরে? তোর বাপ যেখানে ব্যবসা দাড় করাতে যেয়ে ঋণের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়েছিলো আমি নিজে তোর দিকে তাকিয়ে তখন হাসপাতালে দিনরাত খেটেখুটে নিঃস্ব হয়েছি! নিজের ইনকামের টাকায় তোর আর তোর বাবার সকল চাহিদা পূর্ণ করেছি! তোর বাপ এখন আবার ব্যবসা দাড় করিয়েছে! কিন্তু? তুই কখনো ভেবেছিস মা কেন খারাপ ব্যবহার করে? তুই সর্বদা নিজেরটা নিয়ে ভাবিস! তুই একটা স্বার্থপর মেয়ে হয়েছিস পূর্ণতা! ছোট থেকে বড় করলাম তোকে ওই পলিটিশিয়ানের হাতে তুলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য? আমি এই রাজনীতি, নেতা, টেতা নিয়ে প্রচুর ভয় পাই! কখন কাকে কোন সময় জবাই করে ফেলে! মরতে তোকে আমি ওই ছেলের হাতে তুলে দিবো?তোর বাপ কিভাবে মুখ সেলাই করে থাকলো এতোদিন? আজ তোর বাপ আসুক!

– কিরে কাঁদোস কেন?

পূর্ণতার ভাবনার উনুনে পানি ঢেলে চেয়ারে বসে প্রশ্ন করলো আয়মান। পূর্ণতা চোখ মেলে টেবিলের উপর থেকে মাথা উঠিয়ে দেখে সামনের চেয়ারে আয়মান বসেছে ও পাশে শ্রেয়া! পূর্ণতা চোখ মুছতেই আয়মানের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

– আমার মনটা ভালো না। প্রচুর খারাপ লাগছে। প্রচুর বেশি খারাপ লাগছে।
– কেন?, আয়মান ভ্রু কুন্ঞ্চিত করে বললো!

পাশ থেকে শ্রেয়া চেয়ার টেনে পূর্ণতার খুব কাছে এসে পিঠে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,
– আন্টি কোনো ঝামেলা করেছে? বল পূর্ণতা!!
পূর্ণতা মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে মাথা টেবিলের দিকে নুয়ে বলে উঠে,

– মা-কে পূর্বের ব্যাপারে সব বলার পর থেকে মন বসে গেছে শ্রেয়া। কি যেনো অঘটন ঘটবে!! মনটা ভালো সংকেত দিচ্ছেনা।

আয়মান চট করে বলে উঠলো,
– বইন মনটারে স্যাটেলাইট বানাইস না প্লিজ! ওইটা সংকেত দিতে পারেনা।

শ্রেয়া ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠলো,
– তোর নষ্টালজিক কথাবার্তা অফ কর ইবলিশ! একটা থাপ্পর লাগাবো! পূর্ণতা? আন্টিকে সব বলার পর কি হয়েছে? আন্টি কি খারাপ কিছু বলছে যেটা শুনে তোর মন খারাপ?
পূর্ণতা জোরে নিশ্বাস ছেড়ে হালকা গলায় বলে উঠে,
– মা বলছে উনার সাথে বিয়ের চিন্তাভাবনা কথা নিছক! একটা পলিটিক্স করা ছেলেকে বিয়ে করা মানে নিজের হাতে নিজের মৃত্যু গ্রহন করা।

আয়মান আশ্বস্ত গলায় পূর্ণতাকে বুঝিয়ে বললো,
– পূর্ণতা? পূর্ব তোকে ‘লাভ ইউ’ বলছে? বিয়ে করতে চাইছে? কোনোপ্রকার ফোর্স করছে যা তুই নিতে পারোস না? আমার তো মনে হয়না, পূর্বর মতো মানুষ এগুলার একটাও করছে। জাস্ট আমি এটুকু বলতে চাই, বিয়ের চিন্তা আপাতত সাইডে ফালা। আগে পূর্বর স্ট্রেটেজি বোঝার ট্রায় কর। এক সপ্তাহ হইছে পূর্ব তোর সাথে যোগাযোগ করেনাই। বুঝিস ব্যাপারটা! তোর চাইতে হাজারগুণ বেশি ছটফটানি ওর হইতাছে। মাথা ঠান্ডা কর। আমি তিনটা ক্লোড কফি অর্ডার দিয়া আসতাছি।

আয়মানের অর্ডার করা কোল্ড কফিতে চুমুক দিয়ে ভাবছি পূর্ব এখন কোথায় থাকতে পারে! উনি কি আমাকে একটুও মিস করছেন না? আয়মানের তথ্যমতে, ছেলেদের মধ্যে অস্থিরতার বেগ বেশি। তবে পূর্ব কি নিজেকে মহাপুরুষের মতো কন্ট্রোল করছে? কিন্তু কেন? আমি কফিতে আরেক চুমুক দিয়ে মোবাইল গেমস খেলা আয়মানের দিকে তাকিয়ে বলি,

– দোস্ত শোন না? তোর কি মনেহয় পূর্ব আমায় মিস করছে?
আয়মান গেমসের দিকে মগ্ন হয়ে জবাব দিলো,
– টিস্যু যেমনে একফোঁটা পানি দেখলে শুষার জন্য উইঠে পইরে লাগে! ওমনে মিস করতাছে! কাগজে লেইখা নে।

এই আয়মানের জিলাপি মার্কা উত্তর শ্রেয়ার মগজে ঢুকতেই ওর দৃষ্টি রাগান্বিত করে দিলো। শ্রেয়া রেগে গিয়ে বললো,

– ছি! তোর এই ঘুতুঘুতু মার্কা এক্জেম্পাল শুনলে গা ঝাড়া দেয় আয়মান!
– বাইরে ড্রেনের পানিতে একবার চুবানি খা! তাও আমার মাথা নষ্ট করিস না।
– তুই কি বললি!
– ওলে বাবুটা…উর্দু ভাষায় বলছি বুঝেনাই!!
– তুই আমাকে বাবু বললি?
– হারামজাদা! তুই আমার ভাষা বোঝার ক্ষমতা নিয়া পয়দা হইছোস? আলকাতরা চেচাস কেন? চুপ যা!

মানে, আমার এখন ইচ্ছা করছে হাত উঠিয়ে ঠাস ঠাস করে দুটোর গালের চামড়া লাল করে দেই! ‘সময় নাই, গময় নাই, বাবু একটা টিকেট দেন!’ — এই প্রবাদের মতোই ওরা যখন তখন ঝগড়া শুরু করছে! আমি ভয়ংকর রাগে চেচিয়ে বলে উঠি,

– তোরা যদি কামড়া কামড়ি বন্ধ না করিস! আমি স্যান্ডেল খুলে দুটোর গাল শেষ করবো!
আয়মান আমার কথা শুনে লাজুক ভঙ্গিতে গাল টুকটুক করে হেসে বললো,

– তুই দুষ্টু দুষ্টু কথা বলিস না তো। আমি ভালো পোলা।

ওমা! আমি দুষ্টুমির কি কথা বললাম? ওরা দুটো ঝগড়া করছে থামতে বলেছি তাতে দুষ্টু কথা কি করেছি?

– ওই ছাগল! আমি দুষ্টু কথার কি বললাম?
– তুই না খুবই পাজি হয়ে গেছিস পূর্ণতা। পূর্বর সাথে থাকতে থাকতে তুই এখন ওর মতো দুষ্টু কথা বলিস।
– কি আশ্চর্য!
– শ্রেয়ার সাথে কখন আমি কামড়া কামড়ি করছি বইন? এই আখ্যা দিস না প্লিজ! আমার ফিউচার বউ কষ্ট পাইবো।

আমি শ্রেয়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে কিছু বলবো তার আগেই শ্রেয়া ফিক করে হেসে দেয়। শ্রেয়ার হাসিতে আমরা দুজনও অট্টহাস্যে ফেটে পরি। হায়রে কপাল! কেউ আমাকে এই দুটোর হাত থেকে রক্ষা করো!! এই পায়ে পরে ঝগড়া! এখন আবার খিটখিটিয়ে হাসি! কই যে যাবো আমি!!

বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে নূরানী ও আমি টিভি দেখতে বসেছি হঠাৎ দরজায় ক্রি ক্রি করে কলিং বেল বাজলো। নূরানী দরজা খুলতে গিয়েছে আমি সোফায় বসে তাকিয়ে আছি সেদিকে। কে যে আসলো!! একটু পর নূরানী ফিরে এসে রুমের দরজায় দাড়িয়ে বলে উঠলো,

– আপা, আপনের বন্ধু রাজিব ভাইয়ে আইসে। হেরে আপনের রুমে বসতে বলছি।

রাজিব? ও কেন বাসায় আসলো? এতোদিন গুম থাকার পর এখন কেন বেহায়ার মতো আসলো? পূর্বর ব্যাপারে যেই ভয়াবহ মিথ্যা বলেছে ইচ্ছা তো করছে ওর জিহবাটা কেচি দিয়ে কেটে দেই! আমি কোল থেকে মোবাইল নিয়ে সোফা থেকে পা ফেলে রুমের দিকে যেতে যেতেই আয়মানকে কল করি,

– আয়মান! দোস্ত শোন শোন!! রাজিব এখানে! তুই আর শ্রেয়া তাড়াতাড়ি আয়! জলদি!

আমি কল কেটে আমার রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখি রাজিব আমার আলমারি খুলে আমার টিশার্টে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে! এই দৃশ্য দেখে আমার চোখের কোটর বৃহৎ হয়ে গলা ভেদ করে দারুন এক ধমক এলো!

– রাজিব! তুই এটা কি করছিস!

রাজিব চমকে উঠে মাথা পিছনে ঘুরিয়ে আমাকে দেখে চটজলদি টিশার্টটা রেখে আলমারি আটকে দিলো। আমার মাথা গরম হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে ! রাজিব কি করছিলো এটা? আমার গায়ের পশম কাটা দিয়ে উঠেছে দৃশ্য দেখে! রাজিব খুব ধীরপায়ে আমার সামনে এসে অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো,

– তুই আমার দিকটা ভাববি না পূর্ণ?
– পূর্ণ ডাকবি না রাজিব! আমার লাস্ট ওয়ার্নি!
– হা হা, তোকে রাগলে কি অদ্ভুত কিউট লাগে! তুই জানিস?
– তুই এখানে কি করতে এসেছিস রাজিব! কেন এসেছিস! একটু আগে কি করলি এটা!
– তোর গায়ের মিষ্টি গন্ধটা খুব করে মিস করছিলাম পূর্ণতা। আমি তো কখনো তোর থেকে দূরে দূরে থাকতাম না। তুইও পাশেই থাকতি । এই প্রথম দূরে..
– ছি! ছি! তুই আমার বন্ধু হওয়া…
– ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে কখনো বন্ধুত্ব থাকেনা। হয়তো সেটা ভালোবাসার দিকে এগুবে নয়তো ঘৃণার দিকে।
– তোর ফিলোসফি শোনার ইচ্ছে নেই রাজিব! বেরিয়ে যা এখান থেকে!
– আচ্ছা? পূর্ণতা? আমি কি দেখতে খুব খারাপ? আমাকে ভালোবাসা যায় না?

রাজিবের মুখে উপচে পরা দুঃখ প্রকাশ পাচ্ছে কিন্তু আমার এতে কিছুই করার নেই। আমি ওকে বন্ধুবেশে ভাইয়ের মতোই দেখেছি যেমনটা আয়মানের জন্যে দেখি! রাজিব আমার দিকে একধাপ এগিয়ে এসে বললো,

– চুপ করে আছিস তার মানে তুইও আমাকে ভালোবাসিস!! ঠিক না পূর্ণ? আমিও তোকে ভালোবাসি! বহু আগে থেকেই ভালোবাসি পূর্ণ। কিন্তু সময় ও সুযোগ কখনো পাইনি। আজ বলছি! তোকে ভালোবাসি।

– তোর কষ্ট হলেও সত্যি আমি তোকে বন্ধুর মতোই দেখেছি রাজিব। তুই আমার খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু কখনো বন্ধুর চেয়ে বেশি হওয়া আমার পক্ষে পসিবল না। তুই আমার ভাই ব্রাদারের মতো দোস্ত!

রাজিব হঠাৎ ওর অসহায় চেহারার মুখোশ পাল্টে মুখের আভাস রণচন্ডী রূপে পরিবর্তন করলো! রাজিবের নাক ফুলে উঠছে হিংস্রতার নিশ্বাস ছেড়ে! হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে!

পূর্ণতা কপাল কুচঁকে কিছু বুঝবে তার পূর্বেই রাজিব ওর উপর হামলা করলো! পূর্ণতাকে দরজার সাথে চেপে নিজের শরীরের ভর ওর উপর ছেড়ে হাত উচু করে দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো। পূর্ণতা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলে রাজিব ওর মুখ চেপে গলা থেকে ওড়না টেনে ফ্লোরে ছুড়ে! পূর্ণতা প্রাণপণে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছে! রাজিব ওকে ছাড়ছেনা! পূর্ণতা ছটফট করতে করতে একপর্যায়ে কেদেঁ দেয়! বাইরে থেকে দরজায় লাগাতার ধাক্কা দিয়ে চেচামেচি করছে নূরানী!

– আপা? পূর্ণতা আপা? দরজা খুলেন আপা! ও রাজিব ভাই আপনে আপার লগে কি করতাছেন! দরজা খুলেন কইতাছি!ও আপা!! আপা গো!!

রাজিব পূর্ণতার কোমরের কাছ থেকে কামিজ উঠিয়ে পেটে হাত রাখতেই পূর্ণতা চোখ কুঁচকে বদ্ধমুখেই চিৎকার দিয়ে উঠে! রাজিবের গলায়, ঘাড়ে, হাতে অজস্র নখ ঢুকিয়ে ছিলে দেয়! রাজিব উফ শব্দটাও করছেনা! পূর্ণতার নখের আচড়ও যেন অদ্ভুত আনন্দ দিচ্ছে রাজিবকে! পূর্ণতাকে ছুঁয়ে দেখার মধ্যে যেন ভালোবাসার ইন্দ্রজাল অনুভব করছে! রাজিব পূর্ণতার কপালে চুমু দিলে পূর্ণতা দুহাতে ধাক্কা দিয়ে উঠে! রাজিব পুরুষত্বের শক্তি খাটিয়ে পূর্ণতার কপাল থেকে চুমু দিতে দিতে গালে নামলে ধস্তাধস্তি একপর্যায়ে হতবিহ্বল পূর্ণতা স্থির হয়ে যায়। মাথার ভেতরটা দপদপ করছে পূর্ণতার, নার্ভের অতিরিক্ত উত্তেজনায় হাত ঠান্ডা হয়ে শরীর অসাড়তাপূর্ণে নেমে যাচ্ছে। রাজিব এদিকে পেটে হাত রেখে খামচে ধরে পৈশাচিক লালসায় নিমজ্জিত হলে চোখ বন্ধ করে পূর্ণতা সাহায্যের জন্য আল্লাহ্কে ডাকে! এই মূহুর্তে পূর্বকে খুব মনে পরছে পূর্ণতার! পূর্বের সেই ওয়াদা, ‘ আবার দেখা করবো ‘, সেই অব্যক্ত অনুভুতি, ‘বুকে আসো প্লিজ’, সেই অস্থির গলা, ‘কাঁদছো কেন?’। পূর্ণতা হু হু করে কেদেঁই যাচ্ছে। পূর্ব একবার আসুন প্লিজ! আমি মরে যাবো! রাজিব আমাকে ছাড়বেনা পূর্ব! আমাকে মেরে ফেলবে!! হঠাৎ দরজায় নূরানীর আহাজারীর পাশাপাশি শোনা গেল একজোড়া অস্থিরচিত্ত গলা!

– কুত্তার বাচ্চা! শালা তোরে আমি জবাই করমু! দরজা খোল শালা! দরজা খোল!!তোর কল্লা নামামু! দেখ তোরে কি করি!!

– রাজিব দরজা খোল বলছি! তুই আজ পার পাবিনা!! পূর্ণতাকে ছাড়!!

আয়মান ও শ্রেয়ার কন্ঠ পেয়ে রাজিবের হিংস্রতা বেড়ে গেছে! পূর্ণতার ঘাড়ে একহাত রেখে আরেকহাতে পূর্ণতার মুখ চেপে কানে কামড় দিচ্ছে রাজিব! পূর্ণতার চোখের পানি রাজিবের হাতের উপর পরছে। পূর্ণতার চিৎকার বাইরে যাচ্ছেনা! আয়মান কোনো উপায় না পেয়ে শেষে নিজেই দরজায় লাত্থি মারে! দরজার ছিটকিনি আলগা হয়ে খুলে যেতেই সজোড়ে ধাক্কা খেয়ে রাজিব পূর্ণতার থেকে ছিটকে উল্টে ফ্লোরে যেয়ে পরে। দরজার ধাক্কায় পূর্ণতা পিঠে ব্যথা পেয়ে অন্যদিকে ধপাস করে পড়ে যায়! আয়মান ভেতর ঢুকে পূর্ণতার দিকে না তাকিয়ে শ্রেয়াকে ইশারা দেয় পূর্ণতাকে ধরার জন্য! শ্রেয়া ফ্লোর থেকে ওড়না উঠিয়ে পূর্ণতাকে ঢেকে বেরিয়ে যায় পাশের রুমে! আয়মান এলোপাথাড়ি মারতে মারতে রাজিবের নাক দিয়ে রক্ত বের করে ফেলেছে! যেকোনো মূহুর্তে আয়মানের উত্তম মধ্যম ধোলাই খেয়ে সিরিয়াস একটা এক্সিডেন্ট ঘটে যাবে! আয়মান রাজিবের বুকের দুইপাশে পা রেখে মুখে ঘুষি মেরে বললো,

– তুই বন্ধু নামের কলঙ্ক! আমাদের বন্ধু নামক সুন্দর সম্পর্কটারে তুই কলঙ্কিত করলি শালা! পূর্ণতারে তুই ভালোবাসিস? বা* বাসিস! তোর বাচাঁর অধিকার নাই!! তুই পূর্ণতার সাথে…

আয়মানের চোখ ভিজে আসে। রাজিব আহত চোখে পিটপিট করে তাকালে আয়মান আরেকটা ঘুষি দিয়ে বলে উঠে

– আজকের পর থেকে না আমরা তোরে চিনি! না তুই আমাদের! মরে গেছিস তুই! আর জীবনেও তোর দূষিত চেহারা দেখতে চাইনা!!

সুদূর মসজিদ থেকে ভেসে আসছে মাগরিবের আযানের সুর। নীল আকাশের কালো মেঘগুচ্ছ এখন বেগুনি রঙে ফুটে উঠেছে। দিনের আলো রাতের আধারে সজ্জিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পূর্ণতা বিছানায় সটান হয়ে ঘূর্ণায়মান সিলিং ফ্যানের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেমে থেমে চোখের অশ্রু ফেলছে। পূর্ণতার বাঁ পাশে বিছানায় আসন করে বসে নিরবে কাদঁছে শ্রেয়া। আয়মান পূর্ণতার ডানদিকে বিছানায় পিঠ লাগিয়ে বসেছে। নেভি ব্লু রঙের ল্যাভিস শার্টের দুটো বোতাম খুলে বির্মষ দৃষ্টিতে ফ্লোরে তাকিয়ে আছে। রাজিবকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পর থেকে কেউ একটা ওয়ার্ডও উচ্চারন করেনি। সবচেয়ে বেশি থমকে গেছে পূর্ণতা। ডান কানটায় রক্ত জমে লাল হয়ে আছে। হাতের কয়েকটা জায়গায় নখের দাগ। রাজিব ভয়াবহ রকমের ক্ষতি করতে পারেনি পূর্ণতার। কিন্তু পূর্ণতার মনে খুব গভীরে দাগ কেটে গেছে আজকের ঘটনা। জালিমের হাত থেকে বেঁচে গেছে ঠিকই কিন্তু জোরপূর্বকের হাত থেকে নিস্তার পায়নি। নূরানী ট্রেতে করে আয়মান ও শ্রেয়ার জন্য লেবুর শরবত এনে টেবিলে রাখে। পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ওড়নায় মুখ চেপে অশ্রু ফেলে। একটু পর আয়মানের দিকে তাকিয়ে কান্না কন্ঠে বলে উঠে,

– আয়মান ভাই, খালাম্মায় আইলে কি কমু? খালাম্মায় আপারে বকবো।

আয়মান স্তম্ভিত কন্ঠে ফ্লোরে তাকিয়ে বলে উঠে,

– আন্টিকে কেউ কিছু বলবিনা। সব ঠান্ডা হোক। আমি নিজেই বলবো।

শ্রেয়া ফুপিয়ে কেদেঁ দুহাতে মুখ ঢাকে। আয়মানের কানে শ্রেয়ার কান্নাধ্বনি গেলে হালকা ঢোক গিলে বলে উঠে,

– চুপ কর শ্রেয়া। পূর্ণতা পাশে। তোর কান্না দেখলে পূর্ণতা কষ্ট পাবে।

শ্রেয়া হেচকির তালে কেঁপে উঠে চোখ মুছে পূর্ণতার দিকে তাকালো। সকালে বলেছিলো ওর মনটা খারাপের দিকে টানছে। কিছু অঘটন ঘটার আগাম পূর্বাভাস পাচ্ছে। কেউ বিশ্বাস করেনি। হাসিতে উড়িয়ে দিয়েছে। মাঝেমাঝে মেয়েদের গাট ফিলিংগুলো সত্যি হয়। এই গাট ফিলিং মন থেকে একটা ইঙ্গিত দেয় — ‘তোমার সাথে কিছু খারাপ ঘটবে’! অনেকে সেটা মেনে নিজেদের নিরাপদ রাখে। অনেকে অবিশ্বাস করে মনের ভুল হবে নিজেদের বিপদে ফেলে। আয়মান অনেকক্ষন নিরবতা পালন করে পূর্ণতার শূন্যচোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

– বইন? কিছু তো বল। কাদিঁস না। আমারে আর শ্রেয়ারে একটু বকা দে না। ওই পূর্ণতা…

আয়মানের কথা শুনে শ্রেয়ার চোখ আবার ঝাপসা হয়ে আসে। নূরানীও দৌড়ে পালায় সেখান থেকে। হয়তোচোখের নোর্নজল গুলো এবার বাধ মানবেনা। পূর্ণতা কিছুকালব্যাপী নিরব থেকে রোবটের মতো ঠোঁট নাড়িয়ে বলে উঠে,

– পূর্বকে চাই…

– ‘ চলবে ‘

#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_১৭
#ফাবিয়াহ্_মমো🍁

বির্দীর্ণ আকাশ চিড়ে বজ্রপাতের মতো কারোর হাউমাউ কান্নার প্রলাপ ভেসে আসছে! রুমের দরজা ভেতর থেকে লাগানো সত্ত্বেও গগনচুম্বী কান্নার তপ্তধ্বনি ড্রয়িংরুম পযর্ন্ত স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে! প্রচণ্ড উৎকন্ঠায় এদিক ওদিক পায়চারি করছে আয়মান! শ্রেয়া সোফায় বসে মাথা নিচের দিকে নুয়ে চুপিসারে কাঁদছে! দুপুরের বিভৎস ঘটনাটা পূর্ণতার নরম মনে বিষাক্ত হুলের মতো এখনো বিদ্ধ করছে! ওয়াশরুমের ঝর্ণা ছেড়ে মাথার চুল টেনে ফ্লোরে বসে আত্মহুতির মতো বিলোপ করছে পূর্ণতা! ছোটবেলার বন্ধু কেন অসৎ উদ্দেশ্যে স্পর্শ করলো? একসাথে খেলাধুলা করা চারটে সাথীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছেলেবন্ধুটা এতো জঘন্যতম কাজ করলো?ধিক্কার! পূর্ণতা ফ্লোর থেকে উঠে দেয়ালে দুইহাত রেখে সজোরে নিজের মাথা দেয়ালে বারি দিলো! দারুন শব্দ হলো একটা! আয়মান ও শ্রেয়া চমকে উঠে পূর্ণতার বন্ধ রুমের দরজা ধাক্কাতে লাগলো!

– পূর্ণতা বইন!! নিজের ক্ষতি করিস না! দরজাটা খোল হারামি!

– প্লিজ দোস্ত, দরজা খোল!! পূর্ণতা একটাবার দরজা খোল না…

শ্রেয়া দরজায় ধাক্কাতে ধাক্কাতে হু হু করে মাথা নুয়ে কেদেঁ দিলো। আয়মান শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে দরজায় ধাক্কা দেওয়ার জো খুঁজে পেলো না। শ্রেয়ার মাথায় অকপটভাবে হাত রেখে বললো,

– প্লিজ শ্রেয়া কাদিঁস না। তুই কাদঁলে….

শ্রেয়া আয়মানের কথায় মুখ তুলে তাকায়। আয়মান চট করে কথা ঘুরিয়ে ওর মাথা থেকে হাত সরিয়ে বলে উঠে,

– নাক মুছ খাচ্চর! পুরা খাচ্চরের লাগান লাগতাছে!

আয়মান কথার প্রসঙ্গ পাল্টে আবার দরজা ধাক্কা দেওয়ায় মগ্ন হলে শ্রেয়া হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে নাক মুছে। দরজায় কান লাগিয়ে ভেতর থেকে কিছু শোনার চেষ্টা করছে আয়মান। নাহ্…ঝর্ণার হালকা শব্দ ছাড়া কিচ্ছু শোনা যাচ্ছেনা! আয়মান ব্যতিব্যস্ত হয়ে নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে সোফার কাছে যেয়ে দাড়ালো। ফোনের কিপ্যাডে নাম্বার ডায়াল করতেই শ্রেয়াকে বলে উঠলো,

– শ্রেয়া? দরজা থেকে সরে আয়। সোফায় বস!
শ্রেয়া আয়মানের কঠোর নির্দেশনা পেয়ে বিস্ফোরিত চোখে গুটিগুটি পায়ে সোফায় যেয়ে বসতেই বলে উঠে,

– কাকে কল দিচ্ছিস আয়মান?
– যাকে কল দিলে পূর্ণতা এই মূহুর্তে ঠান্ডা হবে!
– মানে? শ্রেয়ার কন্ঠে স্পষ্ট কৌতুহল!
– মানে টানের উত্তর দেওয়ার সময় নাই! চুপচাপ বসতে বলছি! বস!

আয়মান কানে ফোন এটেঁ কাউকে কলের বিপরীতে বলে উঠলো,

– আসসালামুয়ালাইকুম বড় ভাই, কেমন আছেন?

ওপাশ থেকে হাসিমুখের উত্তর,

– আরে আয়মান দেখি! হঠাৎ কি মনে করে স্মরন করলা মিয়া? ভুইলাই গেছো ফোনই দেওনা।
– বইলেন না বড় ভাই। সেমিস্টারের যেই চাপ! শালার পড়ালেখা খাইয়া দিছে। ভাই? একটা দরকার ছিলো,
– ফর্মালিটি করিস না বেটা! বল কি দরকার?
– ওয়াকিল ভাই? একজনের নাম্বার লাগবো আর্জেন্ট! বুঝছো? একটু তাড়াতাড়ি দিতে পারবা?
– আর্জেন্ট? আচ্ছা নাম কও।
– পূর্ব বসের নাম্বারটা একটু লাগতো ভাই! একটু প্রাইভেট টক করতাম।
– উনার নাম্বার লাগবো? কিও পলিটিক্স করতে ইচ্ছা জাগছে নি?
– হা হা…ওই আরকি একটু ডিসকাস সারতাম। দেওয়া যায়?
– আমার কাছে তো নাই। আমি দেখি ম্যানেজ করে দিতেছি। দশটা মিনিট সময় দাও।
– আচ্ছা ভাই। তাহলে একদিন টিএসসি মোড়ে আসতেছি। চা চাই কিন্তু!
– আবার জিগায়!! আইসা পরবা! বিলের জন্য ফিকার নট!
– রাখি ভাই, আল্লাহ্ হাফেজ।

শ্রেয়া অনেকক্ষন পর বুঝতে পারলো আয়মান খুবই চাটুকারিতার সাথে পূর্বের নাম্বার ম্যানেজ করে ফেলেছে! ইশশ…চোর গেলে বুদ্ধি আসে! আগেই যদি ওয়াকিলকে ধরে পূর্বের নাম্বার জোগাড় করতো তাহলে এমন কষ্টভোগ পূর্ণতার করতে হতো না! পূর্বের সাথে ঠিকই ফোনে যোগাযোগ করতে পারতো। ওয়াকিল ওর কথামতো ঠিক পনের-দশ মিনিটের মধ্যে পূর্বের নাম্বার টেক্সট করে পাঠায়। আয়মান চাতক পাখির মতো ব্যকুল হয়ে ছিলো যেই টেক্সট দেখলো ওমনেই ধুপধাপ কল! শ্রেয়া সোফা ছেড়ে আয়মানের পাশে হাত নাড়াচাড়া করে চিন্তা করছে। এদিকে ফোন বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! পূর্ব রিসিভ করছেনা! আয়মানের সন্দেহ হলো, এটা কি আদৌ পূর্বের নাম্বার? ধরছেনা কেনো? আবার ট্রায় করতেই ওপাশ থেকে ভারী গলার কন্ঠ,

– হ্যালো, ওয়াসিফ পূর্ব বলছি। পরিচয় দিন।

পূর্বের উত্তর শুনে বোঝা গেলো পূর্ব এসব আননোন নাম্বারের সাথে খুবই পরিচিত। প্রায়ই নানা নাম্বার থেকে হুটহাট কল আসে আর পূর্ব এমন করেই সর্বপ্রথম নিজের পরিচয় উপস্থাপন করে।

– আসসালামুয়ালাইকুম, বস। আপনার সাথে খুবই জরুরী কথা ছিলো!!
– ওলাইকুমসসালাম। জ্বি বলুন।
– বস! আমি পূর্ণতার বন্ধু আয়মান বলছি। পূর্ণতার সাথে….

আয়মান কথাটা বলতে গিয়ে হোঁচট খেলো! কি করে স্পষ্ট ভাষায় বলবে পূর্ণতার সাথে কি হতে যাচ্ছিলো? আয়মান চোখ ঘুরিয়ে শ্রেয়ার চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে খুবই আস্তে করে প্রতিটা শব্দ থেমে থেমে বললো,

– পূর্ণতার…খারাপ…কিছু…

আয়মান চোখ বন্ধ করে কথাটুকু গিলে এক নিশ্বাসে হড়বড় করে বলে উঠলো,

– আপনি এক্ষুনি ওর বাসায় আসেন বস! পূর্ণতা ভালো নেই! রুমের মধ্যে নিজেকে আটকে রেখেছে! একটু আগে খুব জোরে শব্দ হয়েছে…

আয়মানের বলাটা শেষ না হতেই টুট টুট টুট করে ফোনের ওপাশ থেকে লাগাতার একটা টোন আসতেই আয়মান হকচকিয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে, ‘The call is dropped’. পূর্ব কল কেটে দিয়েছে? পূর্ব কি আসবে নাকি তোয়াক্কা না করে হেলা করবে? উপস্থিত আয়মান ও শ্রেয়ার মধ্যে প্রশ্নের প্রচুর ঝড় উঠছে!!কি করবে পূর্ব?

ঘড়ির কাটা সাতটা বেজে বিশ মিনিটে টিক টিক করে ক্লকওয়াইজ ঘুরছে। পূর্ণতার দরজা খোলার অপেক্ষা করতে করতে পেরিয়ে গেছে দেড়ঘন্টা! শ্রেয়া ও আয়মান নিজেদের বাসায় বলে দিয়েছে আজ ওরা পূর্ণতার বাসায় পার্টি করবে। খোদেজা এখনো কিছুই জানেনা। একটু আগে ফোন করে জানিয়েছে রাতে তিনটা ডেলিভারির পেশেন্টের জন্য বাসায় ফিরতে পারবেনা। পূর্ণতার বাবা ব্যবসার তাগিদে দেশের বাইরে গিয়েছেন। বলতে গেলে সবসময়ের মতো পূর্ণতা বাসায় একা। হঠাৎ কলিংবেল বাজার শব্দ হলে নূরানী রান্নাঘর থেকে হন্তদন্তে বেরিয়ে দরজা খুলে। গায়ে কালো হুডি পরা, মাথায় শক্ত করে হুডি টানা, চুলের কারনে চোখ দেখা যাচ্ছে না, মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক, কে উনি বোঝা যাচ্ছেনা। নূরানী ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,

– কেডায় আপনে? কারে চান?

– এটা পূর্ণতার ফ্ল্যাট না?

নূরানী কয়েকধাপ বেশি কৌতুহল নিয়ে ভ্রু কুচকায়! রাজিব শয়তানটা আবার লোক পাঠালো নাকি? নূরানী দরজা ধরে পিছনে মাথা ঘুরিয়ে আয়মান ও শ্রেয়াকে ডাকে,

– আয়মান ভাই? ও শ্রেয়া আপা? এ কেডায় জানি আইসে। আপার খবর জিগায়?

আয়মান বিশিষ্ট দৌড় প্রতিযোগী উসাইন বোল্টের মতো অনেকটা দৌড়ে এসে বাইরে থাকা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে বললো,
– পূর্ব বস?
– হু।

আয়মান তাড়াতাড়ি দরজা থেকে নূরানীকে সরতে বলে পূর্ণতার দরজার কাছে নিয়ে গেলো। শ্রেয়া পূর্বের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন পৃথিবীতে এলিয়েন জীবটা পর্দাপন করেছে। পূর্ব সার্জিক্যাল মাস্কটা থুতনিতে নামিয়ে বলে উঠলো,

– পাজিটার কি হয়েছে? দরজা বন্ধ কেন?

শ্রেয়া ধাক্কা খেলো পূর্বের মুখে পূর্ণতার ইঙ্গিতবার্তা শুনে। কোনো বাবু সোনা না ডেকে ডিরেক্ট পাজি বলে সম্বোধন করলো? শ্রেয়াকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়মান পুরো ঘটনা বর্ননা বিশ্লেষণ করে বললো। পূর্ব চমকিত কন্ঠে দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে,

– দরজা ভাঙলে প্রবলেম হবে? কুইক বলো!

– বস্, এটা আন্টির রুম। এই রুমের দরজা ভাঙ্গলে আন্টি পূর্ণতাকে বকবে। আমরা চাচ্ছিনা আন্টি এ বিষয়ে এখনই কিছু জানুক।

– এক্সট্রা চাবি? নবের লক খুলার জন্য কোনো চাবি নেই?
– না বস্।
– বস্ বস্ করবে না! ভাই ডাকো! একটা প্লাস্টিকের মোটা কাগজ দাও! ফাইলের মলাটে যেরূপ প্লাস্টিক কাগজ থাকে আনো!

আয়মান নূরানীকে বলে পুরোনো ফাইলের মলাট এনে পূর্বের হাতে দিলে পূর্ব সেটা খুব টেকনিক্যালি দরজার সরু চিপায় ঢুকিয়ে নব বরাবর নিচের দিকে একটান মারে! নব কিভাবে যেনো খুলে যায়! অবুঝের মতো তাকিয়ে আছে আয়মান আর শ্রেয়া। ততোক্ষনে পূর্ব ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।

পূর্ব থুতনি থেকে টান মেরে মাস্ক খুলে পকেটে রাখতেই রুমের ভেতর পানির শব্দটা শুনতে পায়! পূর্ব বামপাশে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখে ওয়াশরুমের দরজা আধ খোলা সেখান থেকে আসছে ঝর্ণার শব্দটা! দরজায় আলতো ধাক্কা দিতেই হতভম্বের মতো স্তব্ধ হয়ে যায় পূর্ব! হাটুভেঙ্গে ধপ করে দরজার বাইরে বসে পরে। পূর্ণতা একটা ভারী বস্তু পরার মতো শব্দ পেয়ে আলতো করে মাথা উঠিয়ে ঝাপসা দৃষ্টিতে কাউকে দেখতে পায়। চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছে পূর্ণতার। কপালের একপাশে উচুস্তম্ভের মতো ফুলে নীল বর্ণ ধারন করেছে। শাওয়ার পানিতে পুরো শরীর ভিজে একাকার অবস্থা, অল্পবিস্তর গা কাপছে। চোখের সামনে সব সাদা পর্দার মতো ছেয়ে আছে কয়েকবার চোখ ঝাপটা মেরেও পরিস্কার দেখতে পাচ্ছেনা। বিষন্ন গলায় কেউ বিচলিত হয়ে বলে উঠলো,

– নিজের কি হাল করেছো তুমি পূর্ণ? এই দৃশ্য দেখার চেয়ে আমাকে মেরে ফেলো।

পূর্ণতা আরেকবার চোখ ঝাপটা মেরে ভ্রু কুচকাতেই কপালের চামড়ায় টান লেগে ব্যথিত সুরে ‘আহ্’ চোখ বন্ধ করে ফেলল। আমি কি কানে ভুল শুনলাম? আমার অবচেতন মন কি আবারো হ্যালুয়েশন দেখছে? আমি মরলেও তো পূর্বের এখানে আসার কথা না! দুনিয়ার সবচেয়ে বড় দামী মানুষটা আমার জন্য এখানে আসবে? অসম্ভবের চেয়েও ব্যাপক অসম্ভব! হঠাৎ আমার মাথা উপর থেকে শাওয়ারের পানি আর গায়ে পরছেনা! আমার শরীরের উপর যেনো কিছু একটা দেওয়া। আমি ঝট করে চোখ খুলে দেখি পূর্ব ক্লথ হ্যাঙ্কারে আমার শুকনো জামা রাখছেন। আমার শরীরের উপর শুকনো টাওয়াল দেওয়া। আমাকে পিটপিট করে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি দ্রুতবেগে বলে উঠলেন,

– ভেজা কাপড় চেন্জ করে বাইরে আসো।

উনি উল্কা স্পিডে চা চালিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দরজা টেনে দিলেন। আমি পানির ট্যাপ ধরে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেই। কপালের ডানপাশে ব্যথায় টনটন করছে। কপালে ভাজ ফেলতে পারছিনা। অসহ্য ব্যথা করছে! ভেজা কাপড় পাল্টে শুকনো কাপড় গায়ে দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোজা বারান্দায় গিয়ে ভেজা জামাকাপড় তারে রাখলাম। পূর্ব আমার বিছানায় শুয়ে মাথার নিচে দুহাত রেখে চোখ বন্ধ করে আছেন। উনি সম্ভবত আমার উপস্থিতি পাননি। তবে পেয়েছেন কিনা তাও তো জানিনা সবসময় নরমাল হয়ে থাকেন বোঝার উপায় নেই। বাইরে চাদেঁর আলোটা ধীরে ধীরে খোলাশা হয়ে কিরন বিকাচ্ছে। কি দারুন লাগছে এখন!! বারান্দার গ্রিল ধরে আমি নিষ্পলক দৃষ্টিতে আকাশ দেখছি। হঠাৎ আমার পিছন থেকে উনার সাবধানী পায়ের আওয়াজ এসে দোলনার কাছে থেমে গেলো।

– পূর্ণ পিছনে ঘুরো।

আমি পিছনে ঘুরে গ্রিল থেকে হাত সরিয়ে তাকালাম। পূর্ব চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেনো দেখছেন। একটু পর দুহাত দুপাশে মেলে কাছে ডেকে বলে উঠলেন,
– আমার কাছে আসো প্লিজ। দূরে দাড়িয়ে থেকো না।

আমাকে নির্বিবেকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে উনি দোলনা থেকে উঠে আমাকে টান দিয়ে উনার পাশে বসিয়ে নিলেন। উনার মাথা থেকে পুরো শরীর একটা কালো হুডিতে জবুথবু। উনার বেশভূষা দেখে চট করে মাথায় প্রশ্নের চিহ্ন ঝুলে গেলো উনি আজ এভাবে কেন? পূর্ব হুডির চেইনটা উপর থেকে নিচে একটান দিয়ে খুলে সেটাকে পাশের বেতের মোড়ার উপর রেখে দিলেন। গায়ে উনার আসমানী রঙের শার্ট। হুডির কারনে উনার চুল পুরো এলোথেলো হয়ে আছে। পূর্ব হাতের ঘড়িটা খুলে হুডির উপর রেখে শার্টের হাতা ফোল্ড করতেই বলে উঠলেন,

– একটু আগে কি দেখলাম আমি? ওভাবে মেন্টালের মতো ওয়াশরুমে ভিজছিলে কেন? মাথা কি নষ্ট?

আমি ঘোরের মধ্যে জবাব দিলাম,
– আপনি কি আমার হ্যালুয়েশন?

উনি কপাল এমনভাবে কুচকালেন যেন আমি খারাপ কিছু বলে অপরাধ করে ফেলেছি। উনি গম্ভীর গলায় রাগ দেখিয়ে বলে উঠলেন,

– আমাকে তোমার হ্যালুসিয়েশন লাগে? ইয়ার্কি করছো? আমি কক্ষনো এই টাইমে আসতাম না! তোমার বন্ধু যদি আমাকে খবর না দিতো মরে তো লাশ হয়ে থাকতে!

চোখ থেকে জল টপটপ করে ঠোটেঁর উপর বিন্দু বিন্দু পরছে আমার। আমি কি আদৌ উনার জীবনে একজিস্ট করি? আমার তো এই লুকোচুরি, চুপিচুপি দেখা সাক্ষাৎ করতে ভালো লাগেনা। স্বাভাবিক একটা সম্পর্কের মতো চলতে ইচ্ছে করে যা আমি কখনোই পূর্বের কাছ থেকে পাইনা। আমি মরলেই কি বেটার হতো না? উনার এতো মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমার জন্য কষ্ট করে আসতে হতো না। উনি আমার উপর রাগ দেখিয়ে মুখ ঘুরিয়ে আকাশে দৃষ্টি দিয়েছেন।। উনার যে রাগ প্রচুর লাগছে তা হাতের মুষ্ঠিবদ্ধ থরথর কাপুনিতেই বুঝে গিয়েছি। আমি নিচু গলায় চোখ নামিয়ে বলে উঠি,

– আপনি তাহলে চলে যান। আপনার মতো ব্যস্ত মানুষের জীবনে একটা তুচ্ছ মানুষের যেহেতু মূল্য নেই আমি দুঃখিত। আমি প্রচণ্ড বেহায়া হয়ে গিয়েছি। চিন্তা নেই ভাবনা নেই…হুটহাট আপনার জন্য পাগলামি করি। মাফ করে দিবেন। আমার জন্য আর আসতে হবেনা। আজই শেষ। আমি অবশ্যই নিজের সর্বস্ব চেষ্টা করবো ভুলে…

উনি এমন ক্ষিপ্র গতিতে আমার উপর ঝাপিঁয়ে পরলেন আমি কয়েকসেকেন্ড স্তব্ধ ছিলাম কি হলো আমার সাথে। উনি আমার ভেজা চুলোগুলোতে আগের মতোই আঙ্গুলের শক্তযোগে খামচে ধরে আমার ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে জাপটে ধরেছেন। অস্থির লাগছে পূর্বকে! এই পূর্বকে আমি চিনিনা! উনি অস্ফুটিত কন্ঠে এতোই নিচু করে বলছেন যে আমার শুনতে প্রচুর সজাগ থাকতে হলো।

– এই কথাগুলো বলার আগে চিন্তা করেছো আমাকে কি পরিমাণ কষ্ট দিলে? আমি তোমার জন্য কি কি করছি তুমি জানো না পূর্ণ। আমারও কষ্ট হয়, যন্ত্রণা হয় এভাবে লম্বা সময় পর পর তোমার সাথে দেখা করতে। মরিয়া হয়ে উঠি আমি। তবুও আমি তোমার সাথে দেখার করার সাহস পাই না। আমার একটা ভুলের জন্য যদি তোমার ক্ষতি হয় আমি খতম হয়ে যাবো পূর্ণ!

পূর্বকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম উনি ছাড়লেন না। উনার পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত সুরে বলে উঠলাম,

– আপনার যদি বেশি সমস্যা হয় আপনি সব বিচ্ছিন্ন করতে পারেন। আমি আর কষ্ট পাবো না।

উনি আরেকদফায় জোরে চেপে ধরলেন। আমার শরীরের হাড্ডিগুলো ভেঙ্গে ঝুলে পরে কিনা কে জানে? আমি উনার কানের কাছে মুখ এনে বলে উঠলাম,

– কি অধিকারে আপনি ধরে রেখেছেন বলুন? একটু আগেই তো বললেন আপনি কক্ষনো আসতেন না। এখন ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

উনি আমার চুলে তীব্রভাবে খামচে ধরলেন। কষ্ট দিচ্ছেন উনি! এখন টর্চার করছেন আমার উপর! কিছুক্ষণ পর উনি আমায় ছেড়ে দিয়ে শান্ত হয়ে বসতেই ফের আমার হাত টান দিয়ে উনার কোলে বসিয়ে নিলেন। আমার দুহাত উনার গলা জড়িয়ে রেখে গালে হাত বলে উঠলেন,

– আমায় বিয়ে করবে?
– কককি..
– তোতলাচ্ছো কেন? বলো বিয়ে করবে আমায়?
– আপপনি ঠঠিক
– আমি ঠিক আছি। বলো পূর্ণ! আমাকে বিয়ে করা যায় না?
– যায়,
– তোমার বাসায় কি এক্ষুনি প্রস্তাব পাঠাবো? রাত এখনো দশটা বাজে নি। আমি সব ম্যানেজ করতে পারবো।
– আপনি কি বলছেন?
– আমি তিনদিন ধরে বাসায় যেতে পারছিনা। পার্টির কাজে বাইরে ব্যস্ত পূর্ণ। তোমার বন্ধু আয়মান আমাকে কল দিতেই আমি সব ছেড়ে চলে এসেছি। বিশ্বাস কর, তুমি যতোটা না যন্ত্রণায় আছো। তার চেয়ে বহুগুণ বেশি কষ্ট আমি ভোগ করছি। বলো বিয়ে করবে এখন?
– এখন? মা তো হাসপাতালে। বাবা দেশের বাইরে।
– হাসপাতালের ঠিকানা দাও। আমি এক্ষুনি আমার আব্বুকে বলে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি।
– আপনি শান্ত হন…
– আমি শান্ত হতে পারবো না। তুমি কষ্ট পাচ্ছো। আমি সহ্য করতে পারছিনা। আমার সাথেই থাকবে তুমি। বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করবো। এভাবে বারবার তোমার কাছে এসে নিজেকে কন্ট্রোললেস বানাতে চাইনা।
– আপনি এগ্রেসিভ হচ্ছেন…
– আমি যে তোমাকে চুমু দিতে পারছিনা এই সমস্যা তুমি বুঝবে? কতটা সীমাবদ্ধতায় রাখতে হচ্ছে জানো? তোমার কষ্ট আমি কমাতে পারছিনা!তোমাকে আমি নিজের সাথে রাখতে পারছিনা। উফফ.. বলো এখন তুমি বিয়েতে রাজি?

পূর্ণতা মোহময় দৃষ্টিতে পূর্বকে দেখছে। একটু আগে কি জিদ উঠছিলো পূর্বর উপর! এখন পূর্বের অবস্থা দেখে বুকটা মোচড় দিচ্ছে পূর্ণতার। পূর্ব যে বিয়ে করার জন্য কতোটা এগ্রেসিভ সেটা ভেবে প্রচণ্ড খুশি লাগছে!! পূর্ণতা পূর্বের তালুর চুলে হাত রেখে পূর্বের লালবর্ণের ঠোঁটদুটোর দিকে এগুতেই ঝট করে পূর্ণতার মুখে হাত রেখে বলে উঠে,

– কি করছো! মেরে ফেলবা নাকি! খরবদার এখন কিছু করো না!

পূর্ণতা হাসিহাসি চোখে পূর্বের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের ঠোঁটের উপর পূর্বের হাত দেখে পূর্ণতা আলতো করে ঠোঁট ছুয়িয়ে দেয়। পূর্ব ঝটাং করে হাত সরিয়ে বলে উঠে,

– আমার উপর এরকম অত্যাচার করো না পূর্ণ। আমি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবো।
– আপনার এই অবস্থা দেখে আমার মজা লাগছে।
– প্রচুর পাজি হয়ে গিয়েছো। মাইর দেওয়া দরকার। থাপ্পর দিয়ে…

পূর্বের কথা শেষ না হতেই কপালের চুল সরিয়ে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দেয় পূর্ণতা। ভ্যাবাচেকা খেয়ে চুপ হয়ে যায় পূর্ব। এই মেয়েটা আজ দারুন জালাচ্ছে তো!! একবার বিয়েটা হোক তারপর বুঝবে খেলা! পূর্ণতা মুচকি হেসে বলে উঠে,

– যত কিছুই হোক আপনি যে কন্ট্রোল হারাবেন না এইটুকু ভরসা আমার আছে। কবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন?
– পূর্ণ…
– বলুন।
– বিয়েটা গ্রামে করলে কোনো অসুবিধা হবে?
– গ্রামে করতে চাচ্ছেন?
– শহরের চারধারে যদি তোমাকে বিয়ে করছি এই খবর জানে দ্যান প্রবলেম করতে পারে। আমি চাচ্ছি গ্রামে…
– সেটাই হোক। গ্রামেই হোক। আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতে হলেই আমি খুশি।
– আমি এ সপ্তাহের মধ্যেই সব ফাইনাল করে ফেলছি।
– আমার কিছু চাই পূর্ব।
– বলো,
– আপনার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে শুধু একটা ঘন্টা আমার জন্য চাই। একান্ত আমার সময় হিসেবে।

পূর্ব খানিকটা সময় নিশ্চুপ থেকে বলে উঠলো,

– রাত তিনটা থেকে চারটা চলবে?
– গভীর রাতে?
– একটু বুঝো পূর্ণ। আমি তোমাকে দুনিয়ার সামনে সিক্রেট রাখতে চাচ্ছি।
– তাহলে দিন নাম্বার!!
– যেটা দিবো সেটা প্রাইভেট নাম্বার। সাবধান! ভুলেও কাউকে এই নাম্বারের ব্যাপারে বলতে যাবা না। সারাদিন অফ থাকবে জাস্ট রাত তিনটায় অন করবো।
– আজ থাকবেন?
– অসম্ভব। আমি চলে যাবো। আমি কাউকে বলে আসিনি। রাস্তায় কার যে পার্ক করা বাইক উল্টে এসেছি নিজেও জানিনা। এখন যেতে হবে পূর্ণ।

উনি আমার জন্য অন্যের বাইক উল্টে ফেলে এসেছেন কি সাংঘাতিক! উনি এক্সিডেন্ট করেননি? ইয়া আল্লাহ্! আমি তাড়াহুড়ো করে উনার কপালের উপর চুল সরিয়ে চেক করছি কোথাও কেটেছে কিনা। কোমরে উনার হাত অনুভব করলাম। আমি চমকে উঠে থমকে গিয়ে উনার চোখের দিকে তাকালে উনি মুগ্ধ গলায় বলে উঠেন,

– আমি এক্সিডেন্ট করিনি পূর্ণতা। ব্যথা পাইনি।

পূর্ণতা টুপ করে পূর্বের পাপড়িভরা চোখে চুমু দিতে থাকে। ঝড়ের বেগে উত্তেজনাপূর্ণে বিহ্বল হয়ে পূর্ব পূর্ণতার কোমর চেপে ধরে। পূর্ণতার স্পর্শে মাতাল হচ্ছে এখন! মেয়েটা আমায় জ্বালিয়ে মারছে! শিট! আমি একবার যদি নিয়ন্ত্রণ হারাই পূর্ণ ইউ উইল বি গন!!পূর্ব চোখ খিচ মেরে বিড়বিড় করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠে,

– প্লিজ প্লিজ… ছাড়ো পূর্ণ, ছাড়ো। আমি ভয়ঙ্কর কিছু করে ফেলবো। পূর্ণ আমার!! প্লিজ প্লিজ..

পূর্ণতা পূর্বের কীর্তিতে খিলখিল করে অট্টহাসিতে হাসতে থাকে।ঠিক দম বন্ধ করা টাইপ খিলখিল হাসি!! হাসতে হাসতেই পূর্ণতা বহুকষ্টে হাসি চেপেচুপে বলে উঠে,

– আপনার ভীতু চেহারাটা দেখতে কিন্তু দারুন লাগছে পূর্ব!! আরেকটু জ্বালাই???

– ‘ চলবে ‘

#FABIYAH_MOMO🍁