তোকে ঘিরে পর্ব-১৮+১৯

0
1143

#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_১৮
#ফাবিয়াহ্_মমো🍁

পূর্ব ধাক্কা মেরে পূর্ণতাকে সরিয়ে হাত বারিয়ে কোনোমতে হুডিটা টান দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রুমের বাইরে গিয়ে আবার বারান্দার দিকে উকি মেরে বলে উঠে,

– খেয়েদেয়ে তরতাজা হও আমি সিউর বিয়ের পর ছাড়বোনা! আল্লাহ্ হাফেজ!!

পূর্ব দ্রুত আয়মান ও শ্রেয়াকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। পূর্ণতা মুচকি হেসে দোলনায় বসে দোল খেতে খেতে চোখ বন্ধ করে একটু আগের দৃশ্যগুলো স্মরন করলো। কি অদ্ভুত ছিলো মূহুর্তগুলো! কি অসাধারণ সেই সময়! আচ্ছা পূর্ব এলেই কি সময় দ্রুত চলে যায়? সময় থামানোর কোনো যন্ত্র থাকলে পূর্ণতা সাতপাচঁ না ভেবে ঠিকই সিস্টেমে টাইম ফ্রিজ করে দিতো। আয়মান ও শ্রেয়া চুপিচুপি বারান্দায় এসে পূর্ণতাকে চোখ বন্ধ অবস্থায় মৃদ্যূ ভঙ্গিতে দোলনায় দোল খেতে দেখে। আয়মান চোখ ঘুরিয়ে পেছনে থাকা শ্রেয়াকে দেখে আবার পূর্ণতার দিকে চোখ ফিরিয়ে বলে উঠে,

– বইন অসময়ে স্বপ্ন দেখিস না। পূর্ব কিন্তু এখানে নাই।
পূর্ণতা চোখ মেলে আয়মানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– উনি বিয়ের প্রস্তাব দিছে দোস্ত। এ সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ের সবকিছু ফাইনালাইজ করবেন।

আয়মান চকিত ভঙ্গিতে চোখ ইয়া বড় করে বলে উঠলো,
– কিহ্!!
– চিৎকার করবি না ছাগল! উনি বিয়ের প্রোপাজাল দিয়ে গেছে। উনিতো পারেনা আজকেই মা-কে বলে বিয়ের পিড়িতে বসে। আমি বারন করেছি। বলেছি আগে বাবা আসুক তারপর সব দেখো।
আয়মানকে সামনে থেকে সরিয়ে পিছন থেকে শ্রেয়া এসে বলে উঠে,

– পূর্ব তোকে বিয়ে করতে চাইছে? বিশ্বাসই হচ্ছেনা! কি বলছিস তুই?
– আরে সত্যি বলছি। আমি কোন্ দুঃখে মিথ্যা বলতে যাবো? উনি সব ফাইনাল করেছেন। এখন জাস্ট মা-কে সব বলবেন।
– আন্টি মানবে? তোর মা যেই হিটলার! পূর্বকে তো দেখতেই পারেনা। কি করবি?
– আমি কিছুই করবো না। যা করার উনি করবে।
– বেকুবের মতো কথা বলিস না পূর্ণতা। আন্টি পূর্বকে দেখলে আচ্ছা কেলাবে।
– তোর মনেহয় উনি সোজা জলের মাছ?
– কি বোঝাতে চাচ্ছিস? পেচাস নাহ্!!
– উনি রাজপথ চষে খায়। আর এদিকে আমার মায়ের মতো সামান্য মহিলাকে উনি মানাতে পারবেনা? এটা আমি জীবনেও বিশ্বাস করবো না। দেখিস মা যখন উনার সামনে দাড়াবে কীভাবে উনি চরকি ঘুরায়।

রাতের খাবারটা খেয়ে আয়মান জানালো ওর বাসায় যাওয়াটা জরুরি। ‘কেন জরুরী’– প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতেই কাচুমাচু উত্তর, ‘পূর্ণতা আমার পাবজি খেলার টাইম হয়েছে। না গেলে মাথা ঠিক থাকে না’। লে হালুয়া! ছেলেরা বলে গফ ছাড়া চলতে পারেনা? কে বলবে আয়মানকে দেখে? বেটা তো গেম ছাড়া চলতে পারেনা। বদমাশ একটা! শ্রেয়া আমার রুমেই শুয়ে পড়লো গায়ে পাতলা কাথাটা দিয়ে। আমি রাত তিনটার জন্য অপেক্ষা করছি কখন পূর্ব কল করবেন ফোনে। শ্রেয়া খুব ঘুমকাতুরে টাইপ। শুতে না শুতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার মতো একটা অদ্ভুত রেকর্ড আছে। ফোন হাতে আমি এপাশ ওপাশ ফিরতেই সময় যে কখন তিনটার কাটায় পৌছালো জানিনা আমার ফোনে সেট করা এলার্মটা বেজে উঠলে বুঝে যাই কল করার সময় হয়ে গিয়েছে। আমি উনার দেওয়া নাম্বারটা মুখস্ত রেখেছিলাম। জীবনে ম্যাথের ফর্মুলা দশবার খাতায় না লিখলে মুখস্ত হয়না আজ একচান্সেই উনার এগারো ডিজিটের নাম্বার মুখস্ত রেখেছি ভাবতেই কতো অদ্ভুত লাগে!! ফোন নাম্বার টুকে কল বসিয়ে বিছানা থেকে সর্তকতার সহিত নেমে মায়ের রুমে চলে গেলাম। মায়ের রুমে ও আমার রুমের বারান্দায় খুব শখ করে দুটো দোলনা রেখেছেন আমার শ্রদ্ধেয় বাবা। উনার খুব পছন্দ দোলনা। মায়ের রুমের দোলনাটা বেশ আলিসান বড় বলে পা ছড়িয়ে শুয়ে কথা বলা যায়। পূর্ব ওপাশ থেকে রিসিভ করেই চুপ করে আছেন। আমি দোলনার ছোট কুশনটা ঠিক করে শুয়ে পরতেই বলে উঠলাম,

– আপনি কিছু বলবেন না? একমিনিট চৌদ্দ সেকেন্ড পার হয়ে যাচ্ছে তো।

এবার ফোনের ওপাশ থেকে গলা ঝাড়ার আওয়াজ এলো। উনি হালকা একটু কেশে উঠলেন। এরপর আবারো নিরবতা। আজব তো! উনি কথা বলছেন না কেনো? আমি খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলে উঠলাম,

– আপনাকে বিয়ে করাটাই আমার জীবনের মস্ত বড় পাপ হবে! যে আমার সাথে দুই মিনিট কথা বলতে পারেনা, তার সাথে আমার কি কথা? দুঃখিত ফোন করার জন্য। আমি রাখছি!

সাথেসাথে ওপাশ থেকে জোরে জোরে কাশির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। একেবারে যক্ষ্মার রোগীর মতো কাশছে! হঠাৎ উনার কাশির বেগতিক সিচুয়েশনে কেউ উনার উদ্দেশ্যে চড়া গলায় বলে উঠলো,

– তোমার কি হলো হঠাৎ? কাশছো কেন পূর্ব?
উনি কাশতে কাশতে জবাব দিলেন,
– স্যার, ঠান্ডার কারনে গলায় খুশখুশ জনিত সমস্যা হচ্ছে। নাথিং মোর।
– ওহ্। গরম পানি দিয়ে গার্গল করবে। ঠান্ডাকে হেতু ভাবতে যেও না। জ্বর এসে যাবে। গরম পানি আনাতে বলবো?
– না স্যার। আমি ঠিক আছি। কাজটা শেষ হোক বাসায় যেয়ে ঔষুধ নিচ্ছি।
– বেশ।

আমি ফোনের বিপরীতে কথোপকথন শুনে পুরো হতবাক! পূর্ব উনার পার্টির লোকের সামনে আমার সাথে কথা বলছে? এই ভয়ংকর রিস্ক উনাকে কে নিতে বললো? এখন যদি আমাকে নিয়ে উনার কোনো ঝামেলা হয়? ইয়া মাবুদ সহায় হোন! উনি হয়তো কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে বসে আছেন। ফোন কি কাটবো? আমি একবার জিজ্ঞেস করে নিলাম,
– পূর্ব? আপনি আমার কল রিসিভ করলেন কেন? আচ্ছা আমি কি এখন কাটবো?

উনি আবার কাশতে লাগলেন। কি জ্বালা! আমি কি ভাববো? হ্যাঁ নাকি না? আবারো ওই চড়াগলায় পুরুষালী কন্ঠ,

– তোমার কি নিউমোনিয়া ডিজেইজের প্রবলেম আছে? থাকলে চলে যাও। কাল এসে এই প্রচারনার কাজগুলো দেখো। আজ থাক।
– আমি আমার কথাগুলো কমিটমেন্ট হিসেবেই নেই স্যার। হোক সেটা পার্সনাল অথবা প্রোফেশনাল আমি কাজ না শেষ করে যাচ্ছি না।
– তোমাকে বেশ অসুস্থ দেখাচ্ছে। আবার তখন প্রাইভেট মিটিংয়ের মধ্য থেকে কেন চলে গেলে বিষয়টা এখনো অপরিস্কার। আশা করবো কোনো বিরাট ঝামেলায় ফাসোনি।
– একটু সিরিয়াস প্রবলেম হয়েছিলো তাই বাসায় যেতে হয়েছে। আমি অত্যন্ত দুঃখিত ওভাবে না বলে চলে যাওয়ার জন্য।

এবার উনি একটু ইঙ্গিতবাহীতে কেশে বললেন, ‘আমার উচিত চুপ থেকে অপরপক্ষের কথা শোনা।’
– হুম ঠিক। আমি গরম পানিতে আনতে বলছি দাড়াও। এ্যাই ছোটন?….

লাস্ট কথাটা উনি যে আমার জন্য ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন তা উনার কাশির ভঙ্গিমাতেই বোঝা গেছে। মানে এখন আমি কথা বলতে থাকবো আর উনি ওপাশ থেকে চুপ! মাথার নিচের কুশনটা ঠিক করে বলে উঠলাম,

– আপনি এতো ব্যস্ত থাকেন কেন? এই ব্যস্ততা আমার সহ্য না। ওরা কি আপনাকে বেতন দেয় বলুন? শুধু শুধু এসব অনিশ্চিত দুনিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আচ্ছা? আপনি তো সারাদিন বাইরে থাকবেন আমার সামনে আসবেন কখন? রাতেও যদি বাইরে থাকেন তাহলে আপনি রেস্ট নিবেন কখন? রাতে খেয়েছেন? শ্রেয়া আজ খুবই মজার একটা ডিস রান্না করেছিলো আপনি আরেকটু থাকলে খেতে পারতেন। ও দারুন রান্না পারে। বাসায় আমি একা থাকি। মা আমাকে তেমন সময় দেয়না। বাবা যা একটু সময় দেয় তাও বছরের বেশিরভাগ টাইম দেশের বাইরেই থাকে। আমি নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছি পূর্ব। আমার জীবনে আয়মান, শ্রেয়া, রাজিব ছাড়া আর কেউ নেই। আজ তো রাজিব…আপনাকে আমি বিচার দিতে চাই। আপনি ওই রাজিবকে মেরে ফেলুন। ও খুবই নোংরা পুরুষ। খুবই জঘন্য। আপনাকে সেদিন নোংরা বলার পর কি যন্ত্রণায় ছিলাম জানেন না। আপনি কি আমার কথা শুনছেন? একটু কেশে বোঝান না!! আপনি সব শুনছেন?

উনি সত্যি সত্যি হালকা করে কাশলেন। চোখ বন্ধ করে জোরে নিশ্বাস ছাড়লাম। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি টুয়েন্টি ওয়ান মিনিট্স ওভার। আমার হাতে চারটা পযর্ন্ত টাইম যা বলার এ সময়ের মধ্যেই বলতে হবে। আবার বলা শুরু করলাম,

– গ্রামে যে বিয়ে করতে চাচ্ছেন আমি কিন্তু আপনার দাদুর ওই বিশাল বাড়িতে উঠবো না। আপনার দাদুর যে টিনের বড় ঘরটা আছে না? ওখানে উঠবো। সেদিন যেনো মুষলধারে বৃষ্টি নামুক। এমন বৃষ্টি যা পুকুর, নদীর পানি কয়েক সেন্টিমিটার বারিয়ে দিবে। টিনের উপর ঝনঝন বৃষ্টিজোড়ার শব্দ, আধো আধো অন্ধকারে হারিকেন জ্বালানো স্বল্প আলো। রুমে একটা চৌকি থাকবে। একটা বালিশ থাকবে। মোটা একটা কাথা থাকবে। জালির জানালাটা থাকবে খোলা। সেখান থেকে তুমুল বর্ষনের হালকা ছাটঁ এসে বিছানা ভিজবে। আমি একটা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরবো। বৃষ্টি বিলাস করে আমরা টিনের ঘরটায় আবার অন্য বিলাসে ভিজবো,

হঠাৎ কাশির আওয়াজ জোরালো হয়ে আসলে পূর্ণতা চোখ মেলে কল্পনাতীত থেকে বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে আসে! পূর্ব কাশতে কাশতে টেবিলের উপরে রাখা ঢাকনা দেওয়া গ্লাসটা নিয়ে ঢকনা সরিয়ে পানি খেতে থাকে। মেয়েদের কল্পনাশক্তি এতো প্রখর এতো বলিষ্ঠ এতো সুস্পষ্ট যে সে তোমাকে অন্য দুনিয়ায় ঘুরিয়ে আনার মতো ক্ষমতা রাখে! পূর্ব নিজেকে কন্ট্রোল করে কাঠের চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,

– স্যার? কাজ তো প্রায় শেষ। আমি কি যেতে পারি?
– হ্যাঁ, মানে..আচ্ছা যাও। কাল ঠিক সময়ে এসে পরো।
– ধন্যবাদ। আসি।

পূর্ব চটপট সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতেই বলে উঠে,
– তোমাকে আমি মেরেই ফেলবো পূর্ণ! কি পরিমাণে যে জালাচ্ছো! সব হিসাব তিল তিল করে উসিল উঠাবো দেখো খালি!

পূর্ণতা পূর্বের কথা না বুঝে বেশ অবুকের মতো বলে উঠে,
– আপনি রাগ করছেন কেন?
– ন্যাকামো করছো? পাজি কোথাকার! যেভাবে জালাচ্ছো আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে অলরেডি তোমার অবস্থা কি করে দিতো?
– আমি এমনেই সবার কাছ থেকে মেন্টাল স্টেজের উপাধি পেয়েছি বুঝলেন?

পূর্ব এবার ঠান্ডা হয়ে কোমল গলায় বলে উঠলো,
– ইমোশনাল হলে চলবে না পূর্ণতা। তুমি আমার সাথে ঘর বাধতে চাইছো আমি না করিনি। প্লিজ বিয়ের আগ পযর্ন্ত একটু অপেক্ষা করো, আমি তো বলেছি তুমি বললে এক্ষুনি তোমাকে বিয়ে করে আমার কাছে রেখে দিতে পারি।
– আপনি এতোদিন পরপর গুম হয়ে যান। আমার কথা একবারো মনে পরেনি?
– পাগল তুমি? খেতে,বসতে,দাড়াতে প্রচণ্ড মিস করেছি।
– আপনি রাতে এখনো খাননি ঠিক না?
– সকাল থেকেই খাইনি।
– আপনি আবার বলুন তো কি বললেন?
– কিছুই বলিনি। এবার ঘুমাও।
– কথা ঘুরাচ্ছেন কেন? আপনি এইসব ছাইপাঁশ পলিটিক্স ছাড়ুন! কোনো দরকার নেই আপনার এইসব কাজ করার! আমার বাবাকে বলে আপনার জন্য জবের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
– আমি খুব অগোছালো পূর্ণ। বিয়ের পর খাওয়াদাওয়া, ঘুম, পোশাক সবই তোমাকে দেখতে হবে।
– আপনি আসুন তো এক্ষুনি এসে আমাকে নিয়ে যান। না খেয়ে আছেন কিভাবে? আপনি মানুষ?
– আব্বুর জন্য অপদার্থ। আম্মুর জন্য সাত রাজার ধন। এখন তোমার কাছে কি মূল্য…
– আপনি আমার কাছে সব পূর্ব! প্লিজ আপনি গাড়ি ঘুরিয়ে চলে আসুন আমি রান্না বসাচ্ছি।

ফোনের ওপাশে শূন্য নিরবতা বিস্তার করছে!উনি আবারো মৌনব্রত পালন করছেন উফ! আমি রাগান্বিত গলায় খারাপ কিছু বলবো উনি হঠাৎ বলে উঠলেন,

– এক সপ্তাহ পর।

আমি কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিয়েছেন পূর্ব। স্ক্রিনে বড় বড় করে সাদা রঙে ’04:00′ সময়টা ভেসে আছে। সময় কি আজও আমাকে ছুতো দেখিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো? প্রিয় মানুষের সাথে কথা বললে সময় বুলেট স্পিডে ফুরিয়ে যায় কেনো?
বুকে ফোন জড়িয়ে দোলনায় ঘুমিয়ে পরলাম আমি। কোনো কিছু ভালো লাগছেনা কেনো জানি।

শর্ট পরে উপুড় হয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে আয়মান। কোলবালিশটায় একপা উঠিয়ে দুইহাত ছড়িয়ে নাক ডাকছে থেমে থেমে। ঘড়িতে এখন সকাল সাতটা বাজে। বিকট আওয়াজে বালিশের নিচ থেকে কম্পন হচ্ছে কিছু! আয়মান হুড়মুড়িয়ে উঠে বসতেই বালিশের নিচ থেকে ফোন নিয়ে চোখ কচলিয়ে নাম্বারটা দেখতেই দুনিয়ার বিষভরা বিরক্তের মতো বলে উঠে,
– হাউয়া হাউয়া…শান্তি মতো ঘুমাইতেও দেয় না। এডিরে যে কি করতে ইচ্ছা করে..

মুখের ভাষা খারাপ করে গালাগাল করতেই ফোনের ওপাশ থেকে কন্ঠ পেয়ে আয়মান তোতলাতে থাকে। একটু আগে যে গালি দিচ্ছিলো তার একটাও যদি এখন উচ্চারন করে দ্যান আয়মান সিকদারকে শিকের মধ্যে ফ্রাই করবে!

– আসসালামুয়ালাইকুম ভাভাই। কিকিছু হইছছে?
– তোতালামি সাইডে ফেলে বাইরে আসো!

ঠিক দুইঘন্টা পর পূর্ণতার ফোনে কল আসে আয়মানের! ভয়ার্ত গলায় হাকিয়ে বলে উঠে,

– বইন বইন জলদি আয়!! আসমা টাওয়ারের মাঠে অঘটন ঘইটা গেছে!! তাড়াতাড়ি আয়!!

– ‘ চলবে ‘

#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_১৯
#ফাবিয়াহ্_মমো

– বইন বইন জলদি আয়!! আসমা টাওয়ারের মাঠে অঘটন ঘইটা গেছে!! তাড়াতাড়ি আয়!!

আয়মান এমন চিৎকার করে কথাগুলো বলছিলো যেনো ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে ওখানে! আমি মা-কে বিদায় দিয়ে তাড়াতাড়ি করে কাধের ব্যাগ ঝুলিয়ে আয়মা টাওয়ারের সামনে গেলাম! সকাল নয়টা বিধায় এখন মানুষ খুবই কম! আশেপাশে কোথাও আমি আয়মানকে দেখতে পাচ্ছিনা। ও কোথায়? একমিনিট! ও কি আয়মা টাওয়ারের পিছনের মাঠে নয়তো? যেয়ে দেখবো? আমি দৌড়ে আসমা টাওয়ার সামনের পথ ধরে পেছনের মাঠটায় গেলাম! সকালের ঝাঝালো রোদের মধ্যেই দেখতে পাই মাঠের শেষ কোণাটার বটগাছের নিচে একদল ছেলে ঘেরাও করে দাড়িয়ে আছে। দূর থেকে ওদের মুখ স্পষ্ট না! আশ্চর্য! আয়মান আমাকে এখানে ডাকলো কেন?

পূর্ণতা বিশাল গোলাকার মাঠ পেরিয়ে ওই গাছটার কাছে এসেই হতভম্ব হয়ে যায়! পূর্ব গাছের সাথে হেলান দিয়ে পকেটে হাত গুজিয়ে দাড়িয়েছিলো হঠাৎ পূর্ণতার উপস্থিতি পেয়ে ও ছেলেদের ইশারায় কিছু নির্দেশ দিলো। গাছের মোটা ডালের সাথে ঝুলিয়ে রাখা রাজিবকে ওরা গাছ থেকে নামিয়ে সোজা মাটিতে হাটু ভেঙ্গে বসিয়ে দেয়। আয়মান কি যে ভয় পেয়েছে!! পূর্বের নৃশংসরূপ দেখে দুটো ঘন্টা যাবৎ শুধু ঢোকই গিলে যাচ্ছে। মুখের জবান টোটালি বন্ধ! পূর্ব গাছ থেকে সরে এসে রাজিবের পেছনে দাড়িয়ে চোখ খুলে দিয়ে পূর্ণতাকে বলে উঠে,

– ননষ্টপ থাপ্পর দিতে পারবে? নো থামাথামি! জাস্ট হাত চলবে। পারবে? অলরেডি দম যাই যাই করছে। যা করার জলদি করো।

পূর্ণতা রাজিবের দিকে চোখ ঘুরিয়ে হালকা একটা ঢোক গিলে অজান্তেই ভয়ে কাঁপতে থাকে। রাজিবের চোখ দুটো থেকে স্রোতের মতো রক্ত পরছে, আর্দশ সুন্দর হিসেবে ট্যাগ পাওয়া মুখের অবস্থা বাজে হয়ে গেছে, শরীর ওর হাপড়ের মতো কাঁপছে। আচ্ছা? রাজিবের চোখদুটো কি অন্ধ করে দিয়েছে? এতো রক্ত কেনো পরছে? পূর্ণতা রাজিবের এই অবস্থা দেখে প্রচণ্ডরূপে ভয় পাচ্ছে। পূর্ব এতটা বিভৎস আচরন করতে পারে পূর্ণতার তা জানা ছিলো না। পূর্ণতা এক পা করে খুবই ধীরাজ ভাবে পিছাচ্ছে। গতকাল পূর্ণতা রাগের বশে বলে ফেলেছিলো ওকে মেরে ফেলতে! তাই বলে এভাবে তো নৃশংসভাবে মারতে কখনো বলেনি। পূর্ব খুবই ভয়ংকর! খুবই বিপদজ্জনক! যদি কখনো পূর্ণতাকে মেরে ফেলে? আয়মান যেভাবে ভয়ের চোটে নাকানিচুবানি খাচ্ছে পূর্ণতা সেখানে ভয়ের তিন ডাবল ফিল করছে। আয়মান পূর্ণতার স্থিরদৃষ্টির আড়ালে থাকা চাপা ভয়টা বুঝতে পেরে খুব সাবধানে পূর্বের পাশ কাটিয়ে পূর্ণতার পাশে দাড়িয়ে দাতঁ কিড়মিড় করে বললো,

– পূর্ণণতা…বববইন, আমমারে মমাফ করিস। পূর্ব ভাই নানানা বললে আমি তোরে এইখখানে ডাককতাম না। রাজিজবরে দুটা থাথাবড়া দিয়া জাজাগা…আআমি..

আয়মানের ফিসফিসিয়ে বলার ভঙ্গিটা পূর্বের কাছে কৌতুহলের উদ্রেক হলো! সে হঠাৎ করে আয়মানের ফিসফিস কথায় বলে উঠলো,

– ওর কানে কি পট্টি দিচ্ছো?

আয়মান এমনভাবে শিউরে উঠলো যেন পূর্ব ওকে ধমক দিচ্ছে। কৈলেশ পূর্বের কাছে এসে কানের কাছে বললো,

– পূর্ব দা? এই ছেলেটা আপনাকে হেব্বি ভয় পাচ্ছে। কি করবো?
পূর্ব পকেটে থেকে হাত বের করে চুল পেছনে ঠেলে বললো,

– কিছুই করবি না। সব চুপ!

পূর্ব রাজিবের চোখের পট্টিটা আবার বেধেঁ দিয়ে পূর্ণতার সামনে সটান মেরে দাড়িয়ে বললো,

– ভয় পাচ্ছো কেন? কি সমস্যা? তোমার পেটে যে খামচি মেরেছে তার উপঢৌকন হিসেবে দুটো থাপ্পর কি দেওয়া যায় না?

পূর্ণতা ঢোক গিলতেও প্রচুর হিমশিম খাচ্ছে। পূর্বের কাছ থেকে দ্রুত কয়েক কদম পিছিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি করে তোতলিয়ে বলে উঠলো,

– আপপনাকে আমমি চিনি না…রারাজিবকে পুলিশের হাতে দিয়ে দিন।

বলতে দেরি পূর্ণতা পা ঘুরিয়ে হুড়মুড় করে দৌড়ে পালালো! বুকের ভেতর ধপাস ধপাস করে হৃৎপিন্ড লাফাচ্ছে! শরীর ঘেমে উঠছে! পূর্ণতার চোখের সামনে রাজিবের চোখ থেকে নির্গত রক্তগুলোর বিভৎস দৃশ্য ভাসছে! সমস্ত শরীরের পশম কাটার মতো খোচাচ্ছে পূর্ণতার! পূর্বের এই দৃশ্যবিবরণী মনকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ভাষা খুজে পাচ্ছেনা। পূর্ণতা একমিনিটের মধ্যেই গতরাতের সব অনুভূতি উড়িয়ে প্রাণপণে দৌড়ে পালালো! নাহ…ওর পূর্বকে চাই না। পূর্ব খুবই ভয়াবহ…খুব বেশি।

ভার্সিটি গিয়েও লেকচার ভালোমতো এটেন্ড করতে পারলো না। স্যার ওখানে বিশাল বিশাল লেকচার দিলেও পূর্ণতার অদ্ভুত মন বারবার ওই দৃশ্যপটে আটকে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাচ্ছে। পূর্ণতা মাথা চতুর্দিকে ঘুরায়। যদি পূর্ব এখানে এসে পরে? পূর্ণতা ডেস্কে হেড ডাউন করে থাকে। বুকটা এখনো ধুকধুক করছে। মাথার ভেতর ঝিমিয়ে উঠছে। পূর্ণতা ক্লাস থেকে অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে যায়। ক্লাসে মন বসছেনা। ভয় হচ্ছে। আয়মান সেই কখন থেকে কল দিচ্ছে। পূর্ণতা ফোন সাইলেন্ট করে চুপচাপ শ্রেয়াকে ওর ডিপার্টমেন্ট থেকে ডেকে আনে। শ্রেয়াকে সব খুলে বলে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে পা বারিয়ে আবার থমকে যায়। যদি পূর্ব চলে আসে? এই ভয়টা কোত্থেকে উদয় হলো? পূর্ণতা তো পূর্বকে ভয় পায় না। শ্রেয়া পূর্ণতাকে আশ্বস্ত করে বলে উঠে,

– ক্যান্টিনে যেতে ভয় লাগছে? এক কাজ করি, দোতলার যেই বড় রুমটা আছে না? ওখানে চল। কেউ আসবেনা সিউর দিচ্ছি।
– আমার বুকটা এখনো ধুকধুক করছে দোস্ত। এক বোতল পানি খেয়েও শান্ত হতে পারছিনা।

– পূর্ণতা? নিজেকে সামলা। ভয় পেলে পূর্ব তোকে লেবুর মতো চিপড়ে কঠিন জেরা করবে।

পূর্ণতা ঝট করে শ্রেয়ার হাত চেপে ভয়ার্ত গলায় বলে উঠে,
– পূর্বকে কি উত্তর দিবো? আমি..আমি..আমি প্রচুর ভয় পাচ্ছি। আমার মাথা কাজ করছেনা। পূর্ব যদি রাগের মাথায় আমাকেও মেরে ফেলে? শ্রেয়া? ও কি স্বাভাবিক? আমি কি ভুল কারোর প্রেমে পরলাম? ও কি আমাকে আদৌ ভালোবাসে? আমি কি খুব জলদি করছি?

শ্রেয়া পূর্ণতার গালে দুহাত রেখে অভয় বানীতে শক্ত করে বলে উঠে,

– পূর্ণ রে, ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি থাকতে তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিচ্ছু হতে দিবো না। ঠান্ডা হ পাগল। পূর্ব তোকে যদি খারাপ কিছু করতেই চায় তার আগে আমাকে ট্যাকল করতে হবে! চল দোতলায়। আমার কাছে টিফিন আছে। আসার সময় তিনটা কোক কিনেছিলাম। দুজনে একসাথে খাবো।

পূর্ণতা মাথা নাড়িয়ে শ্রেয়ার পিছু পিছু দোতলার সিড়ি ধরে উপরে যায়। বড় রুমটার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলে দেখে বেন্ঞ্চগুলোতে একপাল্টা ময়লা পরে আছে। শ্রেয়া নিজের ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করে দুটো লো বেন্ঞ্চ এবং একটা হাই বেন্ঞ্চ মুছে দুজনে মুখোমুখি হয়ে বসে। হাই বেন্ঞ্চের উপর শ্রেয়া টিফিন বক্সের ঢাকনা খুলে কোকের বোতল পাশে রাখে। পূর্ণতা এখনো চুপচাপ হয়ে আছে। ওই ইবলিশ আয়মানটা যদি পূর্ণতাকে না ডাকতো পূর্ণতা এতো ভয় পেতো না। আয়মান কি জানে না? পূর্ণতা হঠাৎ এমন অঘটন দেখলে ভয় পায়? আজ তোকে ছাড়বো না ইবলিশ! এতোদিন তুই আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছিস আজ তুই বেকুবের মতো পূর্ণতাকেও জ্বালাতন করলি। আয় খালি তুই! তোকে আচ্ছা কেলাবো হারামি! শ্রেয়া চামচভর্তি খাবার তুলে পূর্ণতাকে জোর করে খাইয়ে দেয়। পূর্ণতা অন্যমনস্ক হয়ে খাবার চিবুতে থাকলে হঠাৎ খালি রুমে মধ্যে কারোর পায়ের প্রতিধ্বনি শুনতে পায় শ্রেয়া। পূর্ণতা এখনো অন্যমনস্ক হয়ে আছে! শ্রেয়া পূর্ণতার পিছনে কাউকে দেখে বেন্ঞ্চ থেকে ঝটাং করে দাড়িয়ে যায়। পূর্ণতা নিজের সন্ধি ফিরে পেলে শ্রেয়ার দিকে ভ্রু কুচকে কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে একটা হাত এসে পূর্ণতার ডান কাধ থেকে বাম কাধ বরাবর গলায় হাত রাখে। পূর্ণতা মাথা নুয়ে গলার কাছে হাতটা দেখেই চোখ বিশাল বড় করে ঢোক গিলে। মাথার উপর কিছু অনুভব করে পূর্ণতা। হয়তো পূর্ব নিজের হাতটা রেখেছে মাথার উপর। শ্রেয়া স্তব্ধ হয়ে নির্লিপ্ত চাহনিতে ঢোকের পর ঢোক গিলেই যাচ্ছে। খুব কষ্টসহকারে একটা ঢোক গিলে পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে কম্পান্বিত কন্ঠে বলে উঠে,

– আ আ আ মা কে, ছে ছেড়ে দি দি ন…

শ্রেয়া স্থির দৃষ্টিপাতে চোখের পলক না ফেলে বলে উঠে,

– ভাইয়া আপনি এখানে কিভাবে এলেন? আপনাকে দারোয়ান ঢুকতে দিলো?

রাগ? নাকি অভিমান? তার কন্ঠে কিছুই বোঝা গেলো না। শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে জবাব দিলো পূর্ণতার পিছনে থাকা ব্যক্তিটা,

– জালিয়াতির দুনিয়ায় সব সম্ভব। আমি প্রাইভেসি চাই। বাইরে অপেক্ষা করো। কেউ যেনো ভুলেও ভেতরে না আসে। বুঝছো?
– ভাইয়া ও তো ভয়…
– ওটা আমার দেখার বিষয়। বাইরে যাও। বাইরে যেয়ে পাহারা দাও। জাস্ট কিছু কথা বলবো।

শ্রেয়া না চাইতেও পূর্বের কঠিন আজ্ঞাধীন পেয়ে বাইরে যেতে বাধ্য হলো। পূর্ণতা ভয়ে রীতিমতো ফোপাচ্ছে। পূর্ব গলা থেকে হাতটা সরিয়ে পূর্ণতার পাশে বসে ওকে নিজের দিকে ঘুরালো। এখনো চোখ খিচুনি দিয়ে বন্ধ করে দাতেঁ দাতঁ চেপে কিড়মিড় করছে।

– চোখ বন্ধ করে থাকলে একটা থাপ্পর লাগাবো। ওখান থেকে পালিয়ে এসেছো কেন?

চোখ খুলেও আবার বন্ধ করে ফেলে পূর্ণতা। মাথা নুয়ে কাদঁছে এখন। পূর্ব নিজের রাগ সংবরন করতে প্রচুর ধকল খাচ্ছে। থাপ্পর মেরে দাতঁগুলো সব ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে! কি বুঝে বেকায়দায় পালালো? আবার বললো, ‘আমি আপনাকে চিনিনা?’। ধাম করে খুব বিকট একটা শব্দ হলো! পূর্ণতা ভয়ে চমকে উঠে চোখ মেলে দেখে পূর্ব হাই বেন্ঞ্চে ঘুষি মেরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছে। পূর্ণতা একবার পূর্বের দিকে তাকাচ্ছে। আরেকবার চোখ ফিরিয়ে দেখছে হাতের দিকে। পূর্ণতা কি উত্তর দিবে? কথাগুলো জটলা পাকিয়ে গলায় আটকে যাচ্ছে। পূর্ব কিছুক্ষণ পর গম্ভীর সুরে বলে উঠলো,

– বিয়ে করতে চাচ্ছো? না করলে বলো আমি চলে যাই। এসব ভেল্কিবাজি আমার দেখতে ইচ্ছে নেই !

পূর্ণতা জিহবা দিয়ে আলতো ঠোঁট ভিজিয়ে গলায় ঢোক ফেলে বলে উঠে,
– আপনি কি মানুষ মারেন?
– পরিস্কার করে বলো!
– আপনি কি রাজনীতিতে মানুষ খুন করেন? আজ..আজ আপনি রাজিবকে..
– ওকে ওভাবে মারাটাই কি উচিত ছিলো না?

পূর্ণতা চুপ করে থাকে। কোনো মেয়ের শালীনতায় হাত দেওয়া পুরুষের কি শাস্তি দেওয়া উচিত না? হ্যাঁ উচিত। কিন্তু সেটা নিজ হাতে নিয়ে তো নয়। আইনের সাহায্যে করা উচিত। তবে পূর্ব কি নিজেও আইনের উপর বিশ্বাস করতে পারে না? দেশের অযাচিত দুর্নীতি দুরবস্তায় আইন যে নতজানু হয়ে পরছে এজন্য কি উনি ভরসা পান না? পূর্ণতা চোখ তুলে পূর্বের দিকে তাকায়। ওভাবে না বলেকয়ে হুটহাট পালিয়ে আসাতে পূর্ব নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে? পূর্ণতা হাত এগিয়ে পূর্বের গাল স্পর্শ করতে যাবে পূর্ব ঝাপটানি দিয়ে হাত সরিয়ে দিচ্ছে। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রেখেছে। পূর্ণতা এগিয়ে আসে পূর্বের দিকে। নিজের বোকামির উপর অনুতপ্ত হয়ে দ্বিতীয় দফায় গালে হাত রাখবে পূর্ব আবার সরিয়ে দিয়ে বলে উঠে,

– আমার সাথে কাহিনি করবে না! টাচ করার চিন্তা ভুলে যাও!

পূর্ণতা কপাল কুঁচকে পূর্বের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। পূর্ব ওকে ধরেনি একদম। প্রচণ্ড রাগে, মারাত্মক জিদে শরীর ফেটে যাচ্ছে পূর্বের। পেয়েছে কি? একটু আগে তামাশা করে কি স্বাদ মিটে নি? পূর্ব নিজের উপর থেকে পূর্ণতাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে পূর্ণতা দুহাতে জাপটে ধরে পূর্বের দিকে আলতো করে মুখ তুলে বলে উঠে,

– মাফ করা যায় না?
– না!, পূর্বের রাগান্বিত উত্তর!
– কি করলে মাফ করবেন?
– জানি না!

পূর্ণতা পূর্বকে ছেড়ে উঠে দাড়ালে পূর্ব নিজেও উঠতে যায় বেন্ঞ্চ থেকে। কিন্তু পূর্ণতার আকষ্মিক কান্ডে পূর্ব হকচকিয়ে যায়! পূর্ণতা ওর কোলে বসে দুহাতে চুল টেনে পূর্বের চোখে ঠোঁট বসিয়ে দিচ্ছে! কপালে, গালে..উফফ! আবার শুরু করেছে এই মেয়ে! কোন্ ভাষায় ওকে বোঝাবো! পূর্ব আবার বিড়বিড় করে নিচুকন্ঠে বলে উঠে,

– পূর্ণতা ছাড়ো, এখন এরকম করো না। তুমি বুঝো না কেন?

পূর্ব পূর্ণতার কানের কাছে হাত রেখে আলতো স্বরে বলে উঠে,

– তুমি আমার মাফ পাওয়ার জন্য এই নিয়ম খাটাচ্ছো?খুবই খারাপ কাজ করছো পূর্ণ। কষ্টটা তুমি কথা দ্বারা দিয়েছো। শোধরাতে হলে কথা দ্বারাই শোধরাও। এভাবে আদর-স্পর্শ করে ভুল শোধরানো যায় না।

পূর্বের ‘কথা,কাজ,কর্ম’ সবকিছুতে যেন আলাদা ন্যায়শাস্ত্র বিরাজ করে। পূর্ণতা যে নিজ থেকে ওকে আদর করতে আসে এক্ষেত্রে রাজিব হলে পূর্ণতার সাথে সব লিমিটেশন শেষ করে ফেলতো। পূর্ণতার এই কাজে রাজিব ওর কোমর জড়িয়ে ঠোঁটে অজস্র স্পর্শ এঁকে উন্মাদের মতো আচরন করতো! কিছুই ছাড় দিতো না একবিন্দু! পূর্ব পূর্ণতার হাতদুটো নিজের চুল থেকে সরিয়ে স্বাভাবিক হয়ে কোলে বসতে বলে। হাই বেন্ঞ্চ থেকে কোকের বোতল নিয়ে ছিপি খুলে পূর্ণতার ঠোঁটে এগিয়ে খাওয়ার ইশারা করে বলে উঠে,

– কোনো মেয়ে একটা ছেলের কোলে বসলেই মাথা খারাপ হয়ে যায় পূর্ণতা। তার উপর এতো কাছাকাছি, এতো নিকটে থাকলে ‘প্লাস-মাইনাস’ ধর্মের মতো ম্যাগনেটেড হয়ে যায় দুজন। তুমি অবশ্যই আমার প্রতি যে ফিলটা করছো তোমার তুলনায় তিনগুণ বেশি ফিল আমি করছি। তোমার বোঝা উচিত আমি স্টিল তোমায় ওভাবে ছুইনি। চাইলে কি ছুতে পারতাম না? আমি চাচ্ছি না। তোমার ঠোঁটদুটো দেখলে আমারও কি মাথা নষ্ট হয়না? হয়। তোমার চোখদুটোতে নিজের স্পর্শটা গামট্যাপের মতো লাগিয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু আমি এখনো তা করিনি। আমি যে তোমাকে কোলে নিয়ে বসে আছি আমার লিমিট এটুকুই। এর চেয়ে বেশি কিছু তুমি আমার কাছ থেকে বিয়ের আগ পযর্ন্ত পাবে না। ঘন্টা দুয়েক আগে তুমি যেভাবে বললে, ‘আমি আপনাকে চিনি না’…আমার ইচ্ছা ছিলো তখনই সবার সামনে দুটো কষিয়ে মারি। লজ্জাবোধ হলে তোমার শিক্ষা হতো। আমি কিছুই করিনি। তোমার উচিত ছিলো আমার রাগ ভাঙানো। তুমি উল্টো আমায় চুমু দিতে শুরু করেছো এটা কি যুক্তিসংগত হলো? কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয় এটা জানো! কিন্তু কথার কষ্ট কথা দিয়ে কিভাবে দূর করতে হয় সেটা জানো না? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করো তো, তুমি আদৌ আমার যোগ্য কিনা? আমার রাগ যদি ভাঙাতে না পারো, আমাকে যদি বুঝতে না পারো, আমি চাইছি তা যদি ধরতে না পারো…তবে আমি দুঃখিত পূর্ণতা! তুমি আমার পূর্ববতী হওয়ার লায়েক না। তুমি আর আনিশা অনেকটাই সেম কাজগুলো করছো। আনিশা ভুখার মতো আমার পিছু পিছু ঘুরতো, আমার পাত্তা পেতো না। কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে আমি সিরিয়াস হয়েও তোমার কাছ থেকে পজেটিভ ভাইভ পাচ্ছিনা। আমার স্ট্যাটাস বা আমার মুখদর্শন দেখে প্রেমে পরা মেয়ে আমি চাই না। আমার অগোছালো, এলোমেলো জীবনটাকে পূর্ণতা দেওয়ার মতো একটা তুমি চাই। আমার ক্ষুদ্র চাহিদা যে পূর্ণ করতে পারবে আমি তার জন্য জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধাবোধ করবো না। তুমি এখনো পূর্বকে বুঝতে পারলে না…আফসোস।

– ‘ চলবে ‘

#FABIYAH_MOMO