#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৩.
জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে বেলা আর তার পাশেই বসে আছে সাঁঝ তার একহাত বেলার কোমরে রাখা আর একহাত দিয়ে সে ট্যাবলেট নিয়ে কাজ করছে। আকাশ একাধারে ড্রাইভ করে যাচ্ছে। গাড়ির মধ্যে অন্ধকারে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে, পাশে থেকে দু একটা গাড়ি পাশ করতে তার আওয়াজ ভেসে আসছে তাছাড়া আর কোনো শব্দ নেই ভিতরে বেলার কানে আসে তার পাশে বসা সাঁঝের নিঃশ্বাসের শব্দ, এছাড়া পুরো স্তব্ধ। বেলা একদম পুতুলের মতো করে বসে আছে সে চেয়েও নিজেকে সাঁঝের থেকে ছাড়িয়ে নেয়নি সে শুধু সাঁঝের স্পর্শের মধ্যে নিজেকে আটকে রেখেছে। বেলার মনে পড়ে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা হোটেল রুমের মধ্যে তার আর সাঁঝের মধ্যে ঘটা ওই আকস্মিক ঘনিষ্ট মুহূর্ত যা সে চেয়েও বাঁধা দিতে পারিনি আর না পেরেছে সাঁঝকে বাঁধা দিতে।
তখন রুমের মধ্যে সাঁঝ বেলাকে আকড়ে ধরে তার অধরসুধা পানে উন্মত্ত হয়েছিলো প্রথমে আগ্রাসী ভাবে বেলার অধরের চড়াও হলেও ধীরে তার সমস্ত রাগ বেলার মধ্যে উগ্রে দিয়ে আগ্রাসী থেকে ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গভীর ভাবে আদুরে স্পর্শে মেতে উঠে নিজের তৃষ্ণা মেটাতে থাকে । বেলাও নিজেকে ছেড়ে দিয়েছিলো সাঁঝের হাতে দুই শক্ত করে সাঁঝের বুকের কাছে খামছে ধরে সাঁঝের উষ্ণ আদুরে স্পর্শ নিতে থাকে। দম আটকে আসলে সাঁঝ বেলার অধর থেকে সরে আসে কপালে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে বড় বড় করে দম নিঃশ্বাস নিতে থাকে বেলা এখনও চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে
-“আজকের পর আবারো যদি আমাকে শুধু বিজনেস পার্টনার মনে হয় তাহলে আজকের যে ডোজ দিলাম মাত্র এর থেকেও ফুল ডোজ হবে। সাঁঝ ক্ষীণ স্বরে বলে ওঠে।
সাঁঝের কথা শুনে বেলা অবাক চোখ খুলে টুকুর টুকুর করে সাঁঝের চোখে চোখ রাখতেই সাঁঝ বেলার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে মৃদু ভাবে কামড় বসিয়ে দেয় কানের লতিতে, সাথেই বেলা শিউরে ওঠে।
-“আজকে শুধুমাত্র ট্রেলার ছিলো এটা, দ্বিতীয়বার এই ভুল করলে পুরো মুভিটা আমি তোমাকে দেখিয়ে দেবো। যদিও তুমি না বললেও এই ডোজের ফুল ডোজও আমি তোমাকে দেবো। সাঁঝ ফিচেল কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে।
সাঁঝের কথায় বেলা কেঁপে ওঠে এখনও সে সাঁঝের সাথে আড়ষ্ট হয়ে আছে, সাঁঝ তাকে আষ্টেপিষ্টে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেয়েও পারেনা বেলা। এতক্ষণ সাঁঝের স্পর্শে গলে গেলেও এখন নিজেকে বাইরে থেকে ধাতস্থ করে নেয়, মাত্রই সাঁঝের বলা কথা গুলো তার শরীরে কাপন ধরিয়ে দিয়েছে সে আর নিজেকে এই ভাবে দুর্বল হতে দেবেনা। বেলা সাঁঝের চোখের দিকে কঠিন ভাবে তাকায়।
-“আপনি আমার কাছে শুধুমাত্র একজন বিজনেস পার্টনার এর থেকে বেশি কিছু নয়। আপনি যতোই ছল করে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিন না কেনো এটা কখনই আমি মেনে নেবো না, আর না আমি আপনাকে মানবো। বেলা শক্ত গলায় বলে ওঠে।
-” তুমি মানো আর না মানো তুমি আমার ওয়াইফ এটাতো বদলে যাবেনা! শুধুমাত্র আমার তুমি মিসেস রওশন! তুমি যতো আমাকে না মানার কথা বলো কিন্তু তোমার মন অন্য কথা বলে সেটা কিন্তু আমি জানি। সাঁঝ আবারো মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে।
-” আমি মানিনা আপনাকে মানি…।
বেলাকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়েই আবারো অধরজোড়া আকড়ে ধরে।কিছুক্ষণ পরেই ছেড়ে দিয়ে বেলার কপালে উষ্ণ স্পর্শ বুলিয়ে দেয় ।
-” এই না টা খুব তাড়াতাড়ি হ্যাঁ হবে। আর ততদিন এইভাবে আমি তোমার মানিনা এর থেকে না শব্দটা কে নিজের মধ্যে শুষে নেবো। এখন চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে। সাঁঝ বেলার নাকে নাক ঘষে বলে ওঠে।
কোমরে টান অনুভব হতে বেলা তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে সাঁঝ তাকে হ্যাচকা টানে একদম বুকের উপর নিয়ে জড়িয়ে আছে, সাঁঝের হাতের থাকা ট্যাবলেট টা পাশে পড়ে আছে। গাড়ির ভিতরে অন্ধকার বিরাজমান আর তার মধ্যেই সাঁঝের উষ্ণ নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে বেলার গলায় ঘাড়ে। সাঁঝ বেলাকে নিজের বুকের মিশিয়ে রেখে নিজে কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে বেলার ঘাড়ে কাছে নিজের অধর ছুয়ে আছে, গাড়ির হালকা ঝাকুনিতে তা বারবার বেলার ঘাড়ে ছুয়ে যাচ্ছে সাথে বেলাও কেঁপে কেঁপে উঠছে। সাঁঝের বাহুর মধ্যে আবদ্ধ থাকা বেলার শরীরের কাপন সাঁঝের বুঝতে বাকি নেই, সাঁঝ ঠোঁট এলিয়ে হাসে নিঃশব্দে যেটা বেলার আড়ালে ছিল, বেলার কোমরে থাকা সাঁঝের হাত আরো দৃঢ় হয়ে বসে থাকে কোমর পেট সংলগ্ন জায়গায়, বেলা দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে বসে থাকে কোনো কথা না বলে।
গাড়ি মায়ানীড়ের গেটের সামনে এসে থামতে বেলা চটপট নিজেকে সাঁঝের থেকে ছাড়িয়ে নিতে চায় কিন্তু পারেনা, তপ্ত চোখে সাঁঝের দিকে তাকাতেই দেখে সে ঘোর লাগা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে বেলা কিছু বলতে নিলেই সাঁঝ এক হাত দিয়ে বেলার গালে আলতো চেপে অধর ছুয়ে দেয়, কিছুক্ষণ পর সরে এসে বেলাকে ছেড়ে দেয় বেলা সাঁঝের দিকে অগ্নি বর্ষণ এর মত করে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। তবে বেলা যাওয়ার আগেই অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠে।
-“অসভ্য জংলী।
বেলার কথা কানে আসতেই সাঁঝ ঠোঁট এলিয়ে মৃদু হেসে ওঠে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বেলার যাওয়ার দিকে, এক সময়ে বেলা গেটের ভিতরে ঢুকে দৃষ্টির আড়াল হতেই সাঁঝ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আজ কত বছর পর সে তার সুইটহার্টকে কাছে পেয়েছিলো এত বছরের খাঁ খাঁ করা বুকে একটু হলেও শান্তির ছোঁয়া পেয়েছে সাথে জমে থাকা তৃষ্ণাই মিটিয়েছে তার বেলার অধরস্পর্শ নিয়েছে পান করেছে গভীর আশ্লেষে।
-“তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি নিজের কাছে নিয়ে আসবো ওয়াইফি আর কোনো দূরত্ব থাকবেনা আমাদের মধ্যে। এত বছরের প্রতীক্ষা এবার শেষ হয়েছে তাই আর তোমাকে দূরে রাখার কোনও প্রশ্নই আসে না। নিজের করে এই সাঁঝ রওশনের ওয়াইফ মিসেস বেলা সাঁঝ রওশন হিসাবে তোমাকে রওশন ম্যানশনে নিয়ে যাবো খুব তাড়াতাড়ি।
————
রওশন বাড়ির লিভিং রুমে বসে আছেন সাদিক রওশন আর তার ঠিক পাশেই বসে আছেন মিসেস দোলা মির্জা। আর তাদের থেকে একটু দূরেই বসে আছে দিশা মন খারাপ করে আজকের অফিসে সাঁঝের ব্যবহার সে ঠিক মেনে নিতে পারিনি তাই বাড়ি এসেই নালিশ করে দিয়েছে, সারিফ,সারা সবটা শুনলেও কোনো প্রতিক্রিয়া করেনা কারণ তারা এদের নাটক দেখে অভ্যস্ত। সারিফ আর সারা একপাশে বসে মোবাইলে গেম খেলছে এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস।
-“দাদা এটা কি ঠিক বলুন সামান্য এক কর্মচারীর জন্যে সাঁঝ বাবা দিশাকে সবার সামনে অপমান করে দিলো! দেখো মেয়েটা এসে থেকে কেমন মন খারাপ করে আছে,মানছি ওর একটু ভুল হয়েছে তাই বলেকি সবার সামনে অপমান করা ঠিক! দোলা মির্জা মন খারাপ করার অভিনয় করে বলে ওঠে।
-” দেখুন দাদা কেমন মুখ ছোটো করে বসে আছে! অফিস থেকে ফিরে এখনও কিছু মুখে তোলেনি! আমার মেয়েটা কিসে কম আমারতো সবাই জানি ও সাঁঝকে কতটা ভালোবাসে ।দোলা মির্জা সাদিক রওশন কে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে ওঠে ।
-” আন্টি আপনি যাকে কর্মচারী বলছেন সে আপনার মেয়ের থেকেও সম্মানাধীকার পদে আছে সে ভাইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোনো কর্মচারী নয় যে তাকেই দিশা অপমান করবে, আর তাছাড়া ভুল করলেই আপনি তো জানেন ভাই কাউকে ছেড়ে কথা বলেনা সেটা যে কেউ হোক না কেনো। সারিফ শেষের কথাটা তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-“সারিফ উনি তোমার আন্টি হয় ঠিক করে কথা বলো । সাদিক রওশন গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।
-” আই নো ড্যাড! উনি আমার আন্টি বলেই আমি এখনও শান্ত ভাবে কথা বলছি। সারিফ কঠিন ভাবে বলে ওঠে।
সাদিক রওশন একবার তার সামনে বসে থাকা ছেলের মুখের দিকে তাকান এই ছেলেও তার বড় ছেলের মত হয়েছে তাদের মনে যে কত তার জন্যে অনেক অভিমান ভরে আছে সেটাও তাঁর অজানা নয় ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
-“আচ্ছা আন্টি তুমি যে বললে দিশাদি খাইনি কিন্তু আমিতো দেখলাম সে নিজের রুমে বসে মাটান গলধঃকরন করছিলো আয়েশ করে। সারা বিদ্রুপ করে বলে ওঠে।
সারার কথা শুনে মা মেয়ে দুজনেই থতমত খেয়ে যায়। দোলা মির্জা নিজের মেয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায় রুমের দরজা খুলে রেখে এমন ভুল করার জন্যে। দোলা মির্জা তাড়াতাড়ি করে হেসে উঠে কিছু বলে ম্যানেজ করতে নিলেই বাড়ির সদর দরজা দিয়ে সাঁঝ ভিতরে ঢোকে। সাঁঝ একবার চারিদিকে তাকিয়ে নিয়ে পরিবেশ বুঝে যায়। সাঁঝ এগিয়ে সারার কপালে স্নেহের স্পর্শ বুলিয়ে দেয়, এটা সাঁঝের অভ্যাস সে সবসময় বাইরে থেকে এসেই আগে সারাকে তার স্নেহ স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। সাঁঝ উপরের দিকে পা বাড়াতে নিলেই সাদিক রওশনের কন্ঠে থেমে যায়।
-“সাঁঝ তুমি অফিসে সবার সামনে দিশাকে কেনো অপমান করলে তোমার এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল দিশা কে! সাদিক রওশন বলে ওঠে।
-” আমি আমার অফিসে কার সাথে কেমন বিহেভ করবো তার কৈফিয়েত কাউকে দিতে বাধ্য নই। আর দিশা কে! আমার সাথে কি তার কোনো সম্পর্ক আছে? আমার তো মনে হচ্ছেনা তার সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক আছে বলে, সে তোমার আত্মীয় আর আমার অফিসের একজন মডেল এর বেশি কিছু সম্পর্ক নেই আমার কাছে তাই ভুল করলেই তাকে কথা শুনতেই হবে সে যেই হোকনা কেনো। সাঁঝ গুরুগম্ভীর ভাবে বলে নিজের রুমে চলে যায়।
এদিকে সাঁঝের বলা প্রত্যেকটা কথা দিশার রাগের পারদ ছাড়িয়ে গেছে অপমানে তার মুখ লাল হয়ে গেছে সাঁঝের বলা প্রতিটা শব্দ তার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।
-“তোমাকে আমার হতেই হবে সাঁঝ! আমার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেইনা এবার তুমিও দেখবে তোমার সাথে আমার কি সম্পর্ক তৈরী হয় যা তুমি চাইলেও অস্বীকার করতে পারবেনা। নিজের মনে মনে বলে দিশা পৈশাচিক ভাবে হেসে ওঠে ভিতরে ভিতরে।
চলবে…?
#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৪.
সকাল সকাল শান্তা রেডি হয়ে নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলে জয়েন করে, আজ থেকে তাদের প্রজেক্টের কাজ অফিসিয়াল ভাবে শুরু হতে চলেছে তার জন্যে একটা প্রেস কনফারেন্স আছে আর তাছাড়াও নতুন প্রজেক্ট মানে শুরু থেকেই সব কিছু প্রচুর হেডেক, আর তাছাড়া সে বেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট তো সব কিছুই তাকে দেখতে হবে বলতে গেলে বেলার পরই সে তবুও নিজেকে বেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে সে দেখতে চেয়েছে তাই তাকে এই পদে রাখা হয়েছে তার কোম্পানিতে অধিকার কম কিছু নেই বেলার পরেই তার নাম আসে।
টেবিলে রিসা খান, বেলার বাবা বুরহান খান, শান্তার মা মিসেস সীমা খান সাথে তার বাবা জাহির খান বসে আছে, শান্তা কে এমন রেডি হয়ে হন্তদন্ত করে টেবিলে আসতে দেখে সবার ভ্রু কুঁচকে যায় সবাই কিছুটা অবাক হয়ে তাকায় শান্তার দিকে। শান্তা এত তাড়াতাড়ি কখনই টেবিলে আসেনা আর যখন তারা থাকে তখন তো আরো বেশি করে এড়িয়ে যায় তাই তারা কিছুটা অবাক হয়েছে। শান্তা কারোর মুখের দিকে না তাকিয়ে প্লেট নিয়ে নিজের মত খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে, সবাই যে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার কোনো ধ্যান নেই বলা ভালো দিতে চাইছেননা সে খেয়েই যাচ্ছে। বাকিরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে খাওয়া শুরু করেছে আবারো তবে তাদের চোখ এখনও শান্তার মুখের দিকে। শান্তাকে কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেতে দেখে জাহির খান আর চুপ করে থাকতে পারেনা।
-“টুসুন..
-“ডোন্ট কল মি টুসুন, আমি এই নাম আপনাদের কারোর মুখে শুনতে চাইনা। শান্তা তার বাবার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে ওঠে।
মেয়ের কথা শুনে জাহির বাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মেয়েটা যে তাদের কে কতটা পর করে রেখেছে সেটা তার কথার মাধ্যমে বোঝা যায় এখনও তাদেরকে আপনি করে ডাকে।
-“কোথাও যাবে নাকি তুমি? এত সকাল সকাল রেডি হয়ে টেবিলে চলে এলেযে সীমা খান জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” কেনো! আমি এসেছি বলে কোনো সমস্যা হচ্ছে নাকি? শান্তা বাঁকা ভাবে উত্তর করে।
-“শান্তা তুমি কিভাবে কথা বলছো! তোমাকে কি কোনো কথা জিজ্ঞেস করা যাবেনা? সীমা খান কিছুটা রাগী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-“দেখো না কেমন বেয়াদব হয়েছে বড়দের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও ভুলতে বসেছে। সব হয়েছে ওই নষ্টা মেয়ের সাথে মিশে মিশে। রিসা মুখ বাকিয়ে বলে ওঠে।
রিসার কথা শুনে টেবিলে থাকা বাকি তিনজন কোনো কথা বলেনা চুপ করে থাকে আর এটা দেখেই শান্তার মনের ক্ষোভ টা আরো বেশি বেড়ে যায় সাথে মুখে ফুটে তাচ্ছিল্যভরা হাসি।
-“কার সাথে ঠিক কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। যে যেমন মানুষ আমি ঠিক তার সাথে সেই ব্যবহার টা করি। আর বড়দের সঙ্গেও কিভাবে কথা বলতে সেটাও ভুলে যায়নি, তবে আমি এইরকম কথা বলাটা বড়দের কাছের থেকে শিখেছি আর বড়রা সহবদ ভুলে গিয়ে কোথায় কিভাবে এর মেয়ে সম্পর্কে এত খারাপ কথা বলতে পারে আর বাকিরাও মুখ বুঝে মেনে নিতে পারে সেখানে আমি আর কি ভালো কি শিখতে পারি বলুনতো। মেয়েটা নিজের না হলেও সম্পর্কে মেয়েই হয় আরে কাকে কী বলছি যার মেয়ে তার কোনো হুস পরের কথা উঠবস করে নিজের রক্ত কে ভুলে যায় সেখানে আপনি একজন বাইরের মহিলা সৎ মা। বিদ্রুপ করে বলে ওঠে শান্তা।
-“শান্তা উনি তোমার বড়মা হন। বুরহান খান বলে ওঠে।
-” উনি আমার কেউ হয়না কেউ না, আমার বড়মা একজনই আর তার জায়গা কেউ নিতে পারবেনা আর এই মহিলাতো কখনই নয় যে একজন মেয়ে হয়েও একটা ছোটো বাচ্চাকে রেহাই দেয়না ছিঃ। আর একটু আগে এই মহিলা যখন নষ্টা মেয়ে বলে নিজের রক্ত কে খারাপ কথা বলছিল তখন বুকে বাধেনি এখন যেই আমি বললাম অমনি গায়ে লেগে গেছে তাইনা ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃণা করে। রাগে ফেটে পড়ে শান্তা বলে ওঠে।
টেবিলে বসে থাকা সবার দিকে একবার তাকিয়ে খাবার ফেলে রেখে উঠে যায়। বুরহান খান এখনও স্তব্ধ হয়ে চুপ করে বসে আছে শান্তার বলা কথা গুলো যেনো তার বুকে ছুরির মত গেঁথে গেছে তিনিও কিছু না বলেই আবারো চুপ করে খেতে থাকেন যেনো এটাই নরমাল, বাকিরাও তাই। শান্তা রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় গাড়ি নিয়ে এই বাড়ির কারোর মুখ দেখতেও তার ইচ্ছা করেনা তবে শুধুমাত্র বেলার জন্যে রয়ে গেছে যে অপরাধে বিনা দোষে বেলা বাড়ি ছেড়ে ছিলো শুধু তার হিসাব নিতে শান্তা এখনও খান বাড়িতে পড়ে আছে তা নাহলে কবেই সে এই খান বাড়ি ছেড়ে চলে যেতো।
————
নিজের মুখের উপর উষ্ণ নিঃশ্বাস আছড়ে পড়তে অনুভব করে পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় সাঁঝ রুমের মধ্যে অন্ধকার হয়ে আছে প্রায় আলো নেই বললেই চলে সাঁঝ চোখ খুলে নিজের মুখের উপরেই দেখতে পায় একটা মুখ ঝুঁকে আছে রুম অন্ধকার হলেও সাঁঝের বুঝতে অসুবিধা হয়না তার মুখের উপর কে এইভাবে থাকতে পারে। এটা বুঝতে পেরেই মুহূর্তেই চোখের থেকে ঘুম পালিয়ে গিয়ে চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এখুনি যেনো সব শেষ করে ফেলে।
সাঁঝ ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে তার গলার উপরে থাকা হাত টা টান মেরে সরিয়ে দিয়ে মুখের উপরে ঝুঁকে থাকা মুখে গায়ের জোরে একটা থাপ্পড় মেরে দেয় সাথে সাথে উল্টে ফ্লোরে পড়ে যায় সাথে চিৎকার করে ওঠে। সাঁঝ শোঁয়া থেকে উঠে বিছানার উপরে সোজা হয়ে বসে নিচের পড়ে থাকা দিশার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। যে এখন ফ্লোরে উল্টো হয়ে পড়ে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিয়েছে, সাঁঝ ভয়ংকর রেগে চোখ মুখ শক্ত করে চেয়ে থাকে দিশার দিকে তার মন চাইছে দিশাকে মেরে ফেলতে এই মুহূর্তে তাহলেই হয়তো তার রাগ কমে যাবে।
-“সাঁঝ তুমি আমাকে মারতে পারলে হ্যাঁ? দিশা কাঁদতে কাঁদতে নাক টানতে টানতে বলে ওঠে।
সাঁঝ নিচু হয়ে দিশার গালে আরো দুটো থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়, থাপ্পড় এর জোরে ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে। ইতি মধ্যে দিশার চিৎকারে বাড়ির সবাই সাঁঝের রুমে এসে হাজির হয়েছে দিশাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে দোলা মির্জা ছুটে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে, আর বাকিরা একবার সাঁঝের রাগী মুখের দিকে তাকায় এই মুহূর্তে তাকে দেখতে ভয়ংকর লাগছে।
-“সাঁঝ বেটা তুমি দিশা কে কেনো মারলে? কি দোষ করেছে আমার মেয়ে দেখো ওর ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে ।দোলা মির্জা বলে ওঠে।
-” তার আগে ওকে এটা জিজ্ঞেস করুন সকাল সকাল ভাইয়ার রুমে কি করছিলো। সারা কঠিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
সারার কথা শুনতেই দোলা মির্জা কিছুটা থমকে যায় সাথে দিশা জোরে কান্না করে ওঠে, সারিফ চোখ মুখ কুঁচকে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার এই মুহূর্তে প্রচুর বিরক্ত লাগছে এই মেয়ের কাজে তাদের এই ন্যাকামি দেখতে দেখতে ক্লান্ত এসে গেছে কিন্তু তারপরেও কিছু বলতে পারেনা তাদের বাবার জন্যে নাহলে কবেই এই দুটো কে বাড়ি থেকে বের করে দিত।
-“কি হলো আন্টি এখন চুপ কেনো জিজ্ঞেস করুন কেনো এখন এই সকাল বেলা ভাইয়ের রুমে আর কি করছিলো। সারা আবারও জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” ওকে এখান থেকে নিয়ে যান আর যেনো আমি আমার রুমে না দেখি। সাঁঝ বলে কঠিন ভাবে বলে ওঠে।
সাঁঝের এমন রাগী কন্ঠস্বর শুনতেই দোলা মির্জা কেঁপে ওঠে সাথে সাথে দিশা কে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যায় সারা সারিফ ও এক পলক তাকিয়ে থেকে তারাও বেরিয়ে যায় সাঁঝের রুম থেকে।
চলবে….?
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।