তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় ২ পর্ব-১৫+১৬

0
746

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৫.
বেলা রেডি হয়ে নিচে বাচ্চাদের মাঝে বসে আর বাচ্চা গুলো তাকে ঘিরে জড়িয়ে রেখেছে! বেলা বাইরে যাওয়ার আগে তাদের লিস্ট বলে যাচ্ছে একে একে কার জন্যে বেলাকে কি আনতে হবে আর বেলাও হাসি মুখে একে একে সব তার ফোনে নোট করছে। ওদের থেকে একটু দূরে বসে আছে মায়া চৌধুরী বেলার নানীমা যিনি মুগ্ধ হয়ে বেলাকে দেখে যাচ্ছে এটা তারই মেয়ের অংশ যাকে আকড়ে তিনি এখনও বেঁচে আছে তিনি একমাত্র সম্বল নাহলে যে বেলাকে দেখার মত কেউ ছিলোনা তিনিই এক হাতে বেলাকে গড়ে তুলেছে। বেলা যখন তার কাছে আসে তখন মাত্র পনেরো বছরের এক সদ্য কিশোরী সেই থেকেই তিনি নিজে হাতে গড়ে পিঠে মানুষ করেছে। বারো বছর বয়সে মেয়ে মা হারিয়ে একা হয়ে গেছিলো তবুও বাড়ির লোক ছিল তিনি ছিলেন কিন্তু কি হলো আবারো একা হয়ে গেছিলো মেয়েটা সেদিন যদি তিনি বেঁচে না থাকতেন তাহলে হয়তো মেয়েটাও এতদিনে শেষ হয়ে যেতো ভাবতেই বুক কেঁপে ওঠে মায়া চৌধুরীর সেদিনের সেই বিধ্বস্ত অবস্থার বেলার রূপ তিনি মনে করতে চাননা আর মেয়েটা এখন হাসি খুশি আছে এটাই অনেক তার কাছে।

এরই মধ্যে বাড়ির মধ্যে ঢোকে শান্তা সে বেলাকে বাচ্চাদের মাঝে থাকতে দেখে সোজা নানীমার কাছে গিয়ে কোলে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে, বেলা যদিও শান্তাকে ভিতরে ঢুকতে দেখে নিয়েছিলো আর নানীমার কোলে মাথা রাখতেই বুঝতে পারে তার মন খারাপ নিশ্চয়ই আবার বাড়ির থেকে ঝামেলা করে বেরিয়েছে এই মেয়ে তার জন্যে ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেলা।

-“কি হয়েছে আমার শান্তার! মন খারাপ বুঝি? মায়া চৌধুরী জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” উম.. শান্তা শুধু মুখ থেকে মৃদু আওয়াজ করে।

মায়া চৌধুরী হেসে ফেলে শান্তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে, এই মেয়েটাও ঠিক বেলার মত পাগলি বেলা বলতে এই মেয়ে পাগল, একটুও খারাপ কথা শুনতে পারেনা সাথে সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে ফেলে।

-” হয়েছে চল অনেক আদর খেয়েছিস এবার ব্রেকফাস্ট করে অফিসে বের হতে হবে আজকে অনেক কাজ। বেলা ওদের কাছে এসে বলে ওঠে।

-” হুম চল খুব খিদে পেয়েছে। শান্তা বলেই উঠে দাঁড়ায়।

-“খাবারে উপরে রাগ না দেখিয়ে খেয়ে এলে পারতি আর নাহলে ঘুম থেকে উঠে সোজা এখানে চলে আসতিস তাহলে আর অযথা কাটাকাটি হতো না। বেলা বলে এগিয়ে যায়।

-“উফ একটুও শান্তি নেই এই মেয়ে সব বুঝে ফেলে। শান্তা নিজের মনে বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে।

বেলা শান্তা আর তাদের নানিমা একসাথে বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে ব্রেকফাস্ট করতে থাকে। বাচ্চারা আগেই খেয়ে নিয়েছে কারণ তাদের আরও অনেক সকালে ঘুম থেকে তোলা হয় তাই তাদের এত বেলা পর্যন্ত না খাইয়ে রাখে না, তবে রাতের ডিনারটা সবাই একসাথে করে মাঝে মাঝে বেলার যেদিন আসতে দেরি সেইদিন ছাড়া।

বেলা শান্তা রেডি হয়ে বের হতেই দেখে বাইরে সব কটা দাঁড়িয়ে আছে বাইক নিয়ে ওম নিশান বেদ রুহি আর সারাও, ওদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শান্তা ও বেলা ওদের সাথে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে তাদের সবারই গন্তব্য একই এস.আর গ্রুপ তারা এখন একসাথে প্রজেক্ট করছে বলে এখন এস.আর গ্রুপে যেতে হচ্ছে একসাথে ওখানেই কাজ হচ্ছে সাথে আলাদা একটা সাইড প্রজেক্টের কাজের জন্যে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই তারা এস.আর গ্রুপে চলে আসে বাইক পার্ক করে সবাই অফিসে ভিতরে ঢোকে। লিফট থেকে বের হতেই রুহি ধাক্কা খায়, সেই প্রথম বাইরে বেরিয়েছে আর মুখ পিছনে রেখে কথা বলছিল বলেই ধাক্কাটা লাগে। তবে পড়ে যাওয়ার আগেই কেউ তার কোমরে ধরে আটকে নিয়েছে পড়ে যাওয়া থেকে। এদিকে বাকি গুলো সাইটে সরে দাঁড়িয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে সামনে চলতে থাকে হবু হবু রোমান্টিক সিন দেখতে থাকে। রুহি পড়ে যাওয়ার ভয়ে সামনের মানুষটার শার্ট আকড়ে ধরে ছিল তবে নিজেকে পড়তে না দেখে আর নিজের কোমরে স্পর্শ পেয়ে সে চোখ খুলে তাকায় আর সাথে চার চোখ এক হয়ে যায়। রুহির সামনে সারিফ দাঁড়ানো দুজনই দুইজনের চোখে ডুবে আছে একভাবে দেখে যাচ্ছে তাদের আশেপাশে যে কেউ আছে সেটা তাদের মাথায় থেকে বেরিয়ে গেছে আর এটাই দেখছে বাকি গুলো, সারাতো চোখ ছোটো করে বোঝার চেষ্টা করছে আসলেই শে ঠিক দেখছে কিনা।

-“ভাই ফেঁসে গেছে। সারা চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে।

-” আবে শুধু তোর ভাই ফেঁসে যায়নি সাথে এই ম্যাডামও গেছে পুরো জমে গেছে সিন। ওম বলে ওঠে।

বেলা চারিদিকে একবার তাকিয়ে নেয় তারা ছাড়াও আরও অনেকেই দেখছে এই দৃশ্য সাথে মিটমিট করে হাসছে।

-“আজকেই কি দেখে শেষ করে ফেলবেন নাকি কিছু বাকিও রাখবেন! সারাজীবন তো পড়ে আছে পরেও দেখতেই পাবেন। বেলা বলে ওঠে টিজ করে।

বেলার কথা শুনে বাকিরা মুখ চেপে হেসে ওঠে আর সারিফ আর রুহি নিজেদের হুসে ফেরে সারিফ তাড়াতাড়ি করে রুহিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে সবার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ওখান থেকে কেটে পড়ে, আর রুহি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লজ্জায় লাল হতে শুরু করেছে আর বেলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে।

-“কি ব্যাপার হ্যাঁ এমন লজ্জাবতীর মত গুটিয়ে যাচ্ছিস কেনো? সারা মুখ টিপে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“আহা আহা বুঝিসনা লজ্জা পাচ্ছে! ভাবা যায় এই মেয়েও কিনা লজ্জা পায়।

-“লজ্জা কি খায় না মাখে শুনি হ্যাঁ! লজ্জা পাচ্ছে লজ্জা! রুহি নিজেকে ঠিক করে ব্যাঙ্গ করে বলে ওঠে।

-“ওমা জানো না লাগায় তো ! লজ্জা মুখে লাগায় তাইতো দেখো না মুখ কেমন লাল লাল হয়ে যায়। দিশা হঠাৎ করে ওদের মধ্যে এসে বলে ওঠে।

-” ওমা তাই নাকি লজ্জা মুখে লাগায়! আচ্ছা লজ্জা যদি মুখে লাগে তাহলে এত এত টাকা খরচ করে অন্য কিছু যেমন ফেয়ার লাভলি আর বাকি যে যে কসমেটিকস আর প্রোডাক্ট আছে সেগুলো লাগানোর কি প্রয়োজন লজ্জা মুখে লাগালেই তো রূপ সুধা ফুটে ফুটে বের হয় দেখতেও ডানা কাটা সুন্দরী লাগে আর কেউ বলতেও পারেনা ময়দা সুন্দরী। বেলা তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।

এদিকে বাকি গুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেলার বলা কথা গুলো শুনে মুখ টিপে টিপে হাসছে আর দিশা রেগে দাঁড়িয়ে আছে প্রথমে বেলার কথার মানে বুঝতে না পারলেও সবার মুখ টিপে হাসতে দেখে দিশা রেগে যায়। দিশাকে রেখেই বেলা ওখান থেকে সোজা কেবিনে চলে যায়।

-“এই এবার থেকে তোরা দিনে দুবার করে মুখে লজ্জা লাগিয়ে নিস তাহলে আর এত্ত এত্ত টাকা খরচ করতে হবেনা আর আমাদের মত বেচারা ছেলেদের পকেটও ফাঁকা হয়না বেলা ভালো বুদ্ধি দিয়েছে। ওম চোখ টিপে বলে বেলার পিছন পিছন এগিয়ে যায়।

সাথে বেদ নিশান শান্তা রুহি সারা ও কিছুটা রেগে ওমের পিছনে এগিয়ে যায় আর এদিকে দিশা রেগে দাঁড়িয়ে পা ঠুকছে একা একা, তাকে যে সবাই এতক্ষণ অপমান করে গেলো সেটা বুঝতে পারে।

বেলা কেবিনে ঢুকতে গেলে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ টান মেরে পাশের কেবিনে ঢুকিয়ে নেয়। বেলার চোখ মুখ চেপে ধরে থাকায় বেলা কোনো কথা বলতে পারেনা সাথে কিছু দেখতেও পায়না তবে এটা বুঝতে পারে কার এত বড় সাহস তাকে এইভাবে স্পর্শ করার। হটাৎ বেলা অনুভব করে তাকে দেওয়ালে চেপে ধরেছে সাথে চোখ মুখের উপর থেকেও হাত সরে গেছে, বেলা চোখ খুলে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাঁঝ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে নেশার্ত চোখে।

-“এই রকম ব্যবহারের কি কারণ কি হ্যাঁ আমাকে এইভাবে টেনে কেনো আনলেন? বেলা কিছুটা রেগে বলে ওঠে।

-” উম ভালোবাসা পেয়েছে একটু তাই সাথে একটু খিদেও পেয়েছে সকাল থেকে না খেয়ে আছি। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে নেশায় বুঁদ গলায় বলে ওঠে।

-“খিদে পেয়েছে তো আমার কাছে কি গিয়ে খান না যান কেউ কি আপনাকে খেতে বারণ করেছে নাকি? বেলা রাগে কটমট করে বলে ওঠে।

-“বলছো খেয়ে নিতে তাহলে? সাঁঝ বেলার দিকে বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

বেলা সাঁঝের এমন হাসি দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয় হঠাৎ করে সে সাঁঝের কথার মানে বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাঁঝ আক্রমণ করে বসে বেলার অধরযুগল নিজের অধর দিয়ে আটকে ফেলে বেলা চোখ বন্ধ ছটফট করতে থাকলে সাঁঝ বেলার কোমরে আটকে নিজের সাথে মিশিয়ে এক হাত ঘাড়ে রেখে নিজের দিকে আরও বেশি করে টেনে নেয়, মেতে ওঠে নিজের তৃষ্ণা মেটাতে বেলার অধরসুধা পান করতে গভীর থেকে গভীর ভাবে ডুবে যায় বেলার অধরের মাঝে শুষে নিতে থাকে সুধারস বেলাও এক সময়ে শান্ত হয়ে যায় তার এক হাত উঠে আসে সাঁঝের কাঁধে আর বুকে খাঁমছে ধরে শক্ত করে সাঁঝের শার্ট সাঁঝের স্পর্শে বেলার শরীরের মধ্যে অনুরণন শুরু হয়ে যায়।

চলবে…..?

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৬.
সাঁঝ বেলার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে মিশে দাঁড়িয়ে আছে দুজনেই অস্বাভাবিক ভাবে বড় বড় করে দম নিচ্ছে ফোনের রিংটোনে তাদের ঘোর কাটে নাহলে একটু আগে পর্যন্তও সাঁঝ বেলার অধরসুধাতে মেতে ছিলো। সাঁঝ নিজের শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করে নিয়ে বেলার কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দেয়। বেলা নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে সাঁঝকে ধাক্কা মারে কিন্তু নিজের থেকে সরিয়ে দিতে পারেনা সাঁঝ তাকে শক্ত করে ধরে আছে, বেলার চোখ যায় সাঁঝের বুকের কাছে কিছুটা আঁচড় কেটে রক্ত জমছে একটু একটু করে এটা দেখেই কেমন একটা অনুভূতি হয় তার নিজের মাঝে সে সাথে সাথে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। সাঁঝ এখনও তাকিয়ে আছে বেলার দিকে আর মিটমিটিয়ে হাসছে।

-“উফ এই মিষ্টির কাছে পৃথিবীর সব মিষ্টি হার মানতে প্রস্তুত, সাথে আমার খিদে টাও মিটে গেলো সকাল থেকেই মনটা আনচান করছিলো এই খিদেতে আহা এখন শান্তি। সাঁঝ বেলার ঠোঁটের উপর আঙুল বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে ফিচেল কন্ঠে।

সাঁঝের এমন কথায় বেলা কটমট করে রাগী ভাবে তাকায় সাঁঝের দিকে, বেলার তাকানো দেখে সাঁঝ বুঝতে পারে তার সুইটহার্ট রেগে গেছে কিন্তু কিছু করার নেই বেলাকে যে তার প্রতি মুহূর্তে চাই, আর সাঁঝ নিজেও জানে বেলার দুর্বলতা সে নিজেই বেলার কাছে আসলে বেলা তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে যতো তাকে দূরে সরিয়ে রাখুক না কেনো তার প্রতি বেলার ভালোবাসা এখনও এক টুকরো কমেনি শুধু অভিমানের স্তূপে ঢাকা পড়ে গেছে সেটাই এখন ফুটিয়ে তুলতে হবে আবারো, আবারো তার মাঝে ফিরিয়ে আনতে হবে তার জন্যে ভালোবাসা যে গুলো বেলা অভিমানে জমিয়ে ফেলেছে।

-“ছাড়ুন আমাকে। বেলা রাগে কটমট করে বলে ওঠে।

-“উহুহ ছাড়তে যে মন চাইছে না আমার। সাঁঝ বেলার নাকে নাক ঘষে দিয়ে বলে ওঠে।

-“নিশ্চয়ই থাপ্পড় খেতে মন চাইছে না আপনার? বেলা দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-” বাহ তোমার সাহস দেখছি বেড়ে গেছে আমাকে থাপ্পড় মারার কথা বলছো নট ব্যাড হুম, তবে তোমার এই নরম হাতের থাপ্পড়ও মজা লাগবে তোমার যদি মন চায় তাহলে কোনো বাধা নেই তবে তুমি থাপ্পড়টা আসলেই দিতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। সাঁঝ মৃদু হেসে বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলা কোনো কথানা বলে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয় সে মুখে বললেও কখনোই এই কাজ করতে পারবে না যেখানে রাগের মাথায় মুখ দিয়ে বলে বলতে পেরেছে এমনি হলে কখনই মুখ থেকে এই কথা বের হতো কিনা সন্দেহ আছে থাপ্পড় মারা তো অনেক দূরে থাক। সাঁঝ বেলার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে দেওয়া দেখে মৃদু হাসে বেলার ঠোঁটে আলতো করে আবারো অধরের স্পর্শ বুলিয়ে দিয়ে বেলার ড্রেস ছিল ঠিক করে দেয় যেগুলো একটু আগেই সে ঘেঁটে দিয়েছিলো বেলা কোনা চোখে চুপচাপ সাঁঝের করা কাজ দেখতে থাকে সে জানে এখন কিছু বললেও এই বান্দা তাকে ছাড়বে না বরং আরো বেশি জ্বালিয়ে খাবে। সাঁঝ বেলার থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে গিয়ে বেলাকে যাওয়ার পথ দিয়ে দেয় বেলা এক পলক সাঁঝকে দেখে নিয়ে দ্রুতই সাঁঝের কেবিনে থেকে বেরিয়ে যায় আর এদিকে সাঁঝ বেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।

————-

শান্তা ওম বেদ নিশান রুহি পরপর বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে তবে তাদের মধ্যে কাজ করতে গেলে বলতে গেলে তারা কাজ করার মধ্যে দিয়ে মাঝে মাঝে অলীক স্বপ্নে হারিয়ে যাচ্ছে বেশি। বেদ একভাবে রুমের বাইরের দিকে সামনের ডেস্কে তাকিয়ে আছে কাঁচের দেওয়াল তাই বাইরের সব কিছু অনায়াসে দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু ভিতরের কিছু দেখা যায়না, বেদ ল্যাপটপে কাজ করছে কম বাইরে তাকিয়ে আছে বেশি আসলেই সামনের ডেস্কে সারা দাঁড়িয়ে অফিসের একজন বয় স্টাফের সাথে অনেকক্ষণ দিয়ে কথা বলে যাচ্ছে শুধু তাইনা হাসছেও এটাই যেনো তাকে আরো বেশি করে রাগিয়ে তুলছে কিন্তু এর কারণ বেদ এখনও খুঁজে পাইনি তার এমনি হয় যখন সারা অন্য কারোর সাথে এইভাবে হেসে কথা বলে মনে হয় তাকে গিয়ে খুব করে পিটিয়ে আসে।

নিশান কাজ করছে আর তার সামনে বসা শান্তা কে দেখছে আর মাঝে মাঝে বাঁকা হাসছে যদিও এরও কারণ আছে শান্তা কাজের মাঝে কিছুক্ষণ পরপর উসখুশ করছে আর এটা দেখেই নিশানের এই বাঁকা হাসি। নিশান কাজের মাঝে পা দিয়ে শান্তাকে সুড়সুড়ি দিয়ে চলেছে পালকের সাহায্যে শান্তা খুঁজে দেখার পরই কিছু পাইনি সাথে বুঝতেও পারিনা কি হচ্ছে তাই কাজের মাঝে বারবার উসখুশ করছে আর নিশান তার মজা নিচ্ছে, শান্তা রাগিয়ে দিতে ঝগড়া করতে তার খুব ভালো লাগে শান্তার সাথে না লাগলে তার রাতের ঘুম হয়না মনে হয়। কিন্তু অন্য সবার কাছেই নিশান একদম শান্ত বেদ ওম যতোটা দুরন্ত ছটফটে চঞ্চল হিসাবে জানা যায় নিশানকে তার বিপরীত একদম শান্ত লাগে কিন্তু সবার সাথে থাকা এই শান্ত ছেলে শান্তার সামনে আসলেই অশান্ত হয়ে পড়ে তখনই লেগে যায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এটা দেখেও মাঝে মাঝে সবাই অবাক হয়ে যায়।

এদিকে ওম একদম শান্ত হয়ে কাজের মধ্যে ডুবে আছে তার এখন কোনো দিকে ধ্যান নেই এদের মত সে এখনও কোনও ঝামেলায় জড়িয়ে পড়িনি তাই তাকে শান্ত ভাবেই দেখা যায় সব সময়ে কোনো চাপ নেই তবে সবার মধ্যে বদমাশের শিরমনি কিন্তু এই ওমকে ধরা হয়।

আর রুহি সেতো কিবোর্ডে আঙুল চালাচ্ছে কম ভাবনার জগতে বিচরণ করছে বেশি সারিফের সাথে প্রথম দেখা হওয়া থেকে এই পর্যন্ত হওয়া ঘটনা ভাবতে থাকে দেখতে গেলে তাদের দুইবার দেখা হয়েছে তবে দুইবারই সারিফ তাকে ধরে নিয়েছে পড়ে যাওয়া থেকে আর তারপরেই শুরু হয়ে যায় তাদের চোখে চোখে চলতে প্রতিযোগিতা হালকা পাতলা একটা মোমেন্ট ক্রিয়েট।

বেলা রুমে ঢুকে এক এক করে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে দেখে সবাই যেযার ধ্যানে মগ্ন হয়ে আছে একইতো সাঁঝের জন্যে তার মাথা গরম হয়ে আছে সে যতো চাচ্ছে তার থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্যে ততই আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিচ্ছে এর জন্যে সে বিরক্ত তার উপর এরাও শুরু করেছে কাজে ফাঁকি বেলা কাছে গিয়ে সব কয়টার মাথায় বাজিয়ে দেয় সারাকেও রুমে ডেকে এনে তাকেও কিছুটা ঝাড় দিয়ে কাজ শুরু করে সবাই মিলে, বলতে গেলে সাঁঝের উপরে রাগটা এদের উপরে থেকে গেছে অল্প করে। সাঁঝ তার রুমে বসে ল্যাপটপে ফুটেজে সবটা দেখতে থাকে সাথে বেলার রাগী মুখটা দেখে আরো বেশি হাসতে থাকে তারও বুঝতে বাকি নেই তার রাগটা ওদের উপরে ঝেড়ে দিচ্ছে।

————

ডিয়ার জিন্দগি❤️

তুমি কি জানো তোমার ওই বাঁকা ঠোঁটের হাসি আমাকে প্রতিটা সময়ে তাড়া করে বেড়ায় এক মুহূর্তের জন্য ও শান্তি দেয়না। তোমার ওই ভ্রু উঁচু করা তীক্ষ্ণ গভীর নীল চোখের ওই দৃষ্টি আমাকে কতটা পোড়ায় চোখ বন্ধ করলেই ওই চোখ জোড়া চোখের সামনে ভেসে ওঠে গভীর ভাবে আমাকে আকর্ষণ করে। তোমার ওই ঝাংঙ্কারময় তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর আমাকে নেশাগ্রস্ত করে দেয় ইচ্ছে প্রতিটা মুহূর্ত এই ভয়েস শুনতে থাকি যদি এমন কোনো উপায় থাকতো যে ভালোলাগা নেশাগ্রস্ত কোনো ভয়েস খেয়ে ফেলা যেতো তাহলে সেটা আমি এতদিনে খেয়ে নিয়ে নিজের পেটের মধ্যে রেখে দিতাম। জানো যখন কথা বলতে বলতে হটাৎ করে চোখ তুলে তাকায় হায় মনে সময় টা এখানেই থেমে যাক আর আমি সারাক্ষণ তোমার ওই নীল চোখের গভীর সমুদ্রে ডুবে যাই। তোমার গলায় থাকা তিল টা আমাকে তীব্র ভাবে আকর্ষণ করে যখনই তুমি আমার সামনে আসো তখনই আমার দৃষ্টি কেড়ে নেয় নেশা লাগিয়ে দেয়। তোমার সাথে আমার প্রথম দেখাটা ছিল খুবই অপ্রত্যাশিত ভাবে আমি কখনো কল্পনা করিনি আমার জীবনেও সিনেমাটিক কিছু ঘটতে পারে বলে। সেদিনই তোমার ওই চোখের মায়াতে পড়ে গেছি যেটা দিন দিন ক্রমশ গভীর থেকে গভীর হয়েই গেছে। তোমার আসক্তি আমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলেছে কোনো ভাবেই এর থেকে বেরোতে পারছি না। যতোই এই আসক্তি থেকে বের হতে চাইছি তত আরো বেশি গভীর ভাবে ডুবে যাচ্ছি। জানি এই আসক্তি আমার জন্য ক্ষতিকারক তবুও বের হতে পারছি না যা কখনো হওয়ার নয় জানা সত্ত্বেও বারবার তার মাঝেই ডুব দিতে চাইছি কি করব সব কিছুই যে আমার হাতের বাইরে চলে গেলে পুরো কন্ট্রোললেস হয়ে গেছে আমার মন সে যে একটুও আমার কথা শুনতে রাজি নয়। মন যে আমার আয়ত্তে নেই সে যে কারোর কথা শোনে না এতে কি করার আছে আমার। হ্যাঁ করার আছে অবশ্যই করার আছে তার প্রতি আকর্ষিত হতে দোষ নেই তার মায়াতে ডুবে যেতে ও দোষ নেই তাকে ভালোবাসতে ও দোষ নেই আমি চাইনা আমার মন কে বাঁধা দিতে ভালোবাসাটাতো অন্যায় নয়। আমি তাকে এই ভাবে ভালোবেসে যাবো তবে সে কখনই জানবে না আমার মনের কথা সব কিছুকেই আমি মনের দরজার ভিতরে তালা বদ্ধ করে রেখে দেবো থাক না কিছু অপ্রকাশিত তাতে কি কারোর ক্ষতি হবে? একদমই না বরং সেও ভালো থাকবে আমিও ভালো থাকবো। তাকে ভালোবেসে না হয় মনের কোণে প্রতি মুহূর্তে রঙিন করে রাখবো যেখানে নেই কোনো বাঁধা শুধু থাকবে এক আকাশ ভালোবাসা…..। ❤️❤️❤️

আলো আধারি অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে বেলা বারান্দায় থাকা গাছের সাথে লাগিয়ে রাখা টুনি বাল্ব গুলো জ্বলছে মিটমিট করে আর তার লাল নীল হলুদ আলোয় আলো আধারি হয়ে আছে গোটা বারান্দা। তবে বেলার সেদিকে কোনো ধ্যান নেই তার হাতে ধরা আছে একটা চিরকুট যেটা বেশ কিছুটা পুরোনো আর তার লেখা গুলোই আবারো চোখ বোলাতে আবারো কেমন করে সে দুর্বল হয়ে পড়ছে তার ভিতরে মনের ঘরে তালা বন্ধ সেই অভিমানে জমা ভালোবাসা বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে চোখ জুড়ে নেমেছে অশ্রুবর্ষা দৃষ্টি সামনের কালো নিকষ অন্ধকারে দিকে। চোখের সামনে যেনো একে একে ভেসে আসতে চাইছে কিন্তু সেটা বেলা আসতে দিতে চাইছেনা সে আর কিছুতেই চাইছে না পুরোনো কিছু মনে করতে তাই নিজেকে সামলাতে এই অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখের অশ্রুবর্ষা সংবরন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেনো যে আবারো তার হাতে এইগুলো পড়লো সাথে কেনো বা সাঁঝ আবারো ফিরে এলো সেটার হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারছেনা কেনো যে তার জীবনে ফিরে এসে আবারো তাকে যন্ত্রণায় পুড়িয়ে দিতে চাইছে সেটা জানে না এত বছর একা থেকেতো কম যন্ত্রণা পাইনি তাহলে আবারো কেনো? বেলা এক মনে হিসাব করে যাচ্ছে সব কিছু। হটাৎ নিচু থেকে চিৎকার চেঁচামেচির হাসির আওয়াজ আসতে বেলার ঘোর কেটে যায় সে তার ভাবনার থেকে বেরিয়ে আসে বুঝতে পারেনা হঠাৎ করে এমন চিৎকার করছে কেনো কি হয়েছে এত আনন্দিত কেনো বাচ্চা গুলো ভেবেই বেলার ভ্রু কুঁচকে আসে। নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক করে নিয়ে রুমের ভিতরে এসে চিরকুটটা রেখে দিয়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে যায়। সিঁড়ির কাছে আসতেই বেলার চোখ যায় নিচে সাথে সাথে তার চোখ মুখ অবাক আর বিস্ময়ে ঘিরে যায় সাথে চোখ গুলোও বড় বড় হয়ে যায়।

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।