তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় ২ পর্ব-২৭+২৮

0
666

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৭.

-” কি ব্যাপার তোর মত নোংরা মেয়ে এখানে কি করছে? এখানেও কি এসেছিস নিজের রূপ দেখিয়ে কাউকে বস করতে? রিসা তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।

-“করতেও পারিস বলা যায়না তোর মতো নোংরা মেয়েরা সব কিছুই করতে পারে। রিসা শয়তানি হেসে বলে ওঠে।

-“ঠিক আপনার মত নোংরা তাইনা যে অনায়াসে সব কিছুই করতে পারে রাইট মিসেস রিসা খান। বেলা বলে ওঠে ।

-” ইউ.. রিসা বেলা কে মারতে হাত উঠাতেই বেলা হাত ধরে নেয়।

-” সব জায়গা নিজের শক্তি ব্যবহার করতে যাবেন না এটা খান বাড়ি নয় যে আপনি যা ইচ্ছা তাই করবেন আর আমিও মুখ বুজে সব কিছু মেনে নেবো, আপনি যদি আমার থেকে বড়ো না হতেন তাহলে আপনার সুন্দর গাল দুটোতে হাত ছেপে দিতাম। ভুলে যাবেন না আমি এখন আর খান বাড়িতে থাকি না তাই সাবধানে থাকবেন যখন তখন হাত উঠাতে যাবেন না বলা যায় হয়তো কখন দেখলেন এই হাতটা আর রইলো না। বেলা রিসার হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে রুক্ষ কন্ঠে বলে ওঠে।

বেলা একবার তীক্ষ্ণ চোখে রিসার দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে পা বাড়ায়। রিসা বেলার যাওয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে সে কথা শোনাতে এসে নিজেই অপমানিত হয়ে গেলো নিজের মনে স্বগোক্তি করে ওঠে।

-“এখন দেখছি এই মেয়ের খুব বুলি ফুটেছে তবে বিষ দাঁত আমিও ভাঙতে জানি।

এতক্ষণ দূর থেকে একজোড়া চোখ এই পুরো দৃশ্যটাই অবলোকন করছিলো সাথে প্রত্যেকটা কথা তার কর্ণকুহরে পৌঁছেছে কৌতূহলী চোখে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে দেখছিল একটা বাচ্চা মেয়ে কে বোধ হয় ষোলো কি সতেরো বছর বয়েস আর তাকেই কিনা একজন মহিলা এইরকম বাজে কথা বলছে ভাবতেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়।

-“স্যার আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আর আমি আপনাকে সেই কখন থেকে খুঁজছিলাম ওদিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। আকাশ বলে ওঠে।

-” উম! হুম চলো। সাঁঝ বলে ওঠে।

মুখে সার্জিকাল ব্ল্যাক মাস্ক পরনের ড্রেস ও পুরো ফুল ব্ল্যাক চুল গুলো ব্যাক ব্রাশ করা মুখ না দেখা গেলেও এমনি বডি স্ট্রাকচার দেখলেই যে কেউ সহজেই বলে দিতে পারবে নিঃসন্দেহে একজন সুদর্শন পুরুষ। সাঁঝ একবার সামনের দিকে তাকিয়ে আকাশের সাথে ভিতরের অনুষ্ঠানের দিকে পা বাড়ায়। ভিতরে একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি রঞ্জন বোসের মেয়ের বিয়ে সেখানেই গেস্ট হিসাবে এসেছে সাঁঝ তবে অনুষ্ঠানে আসলেও নিজের মুখ ঢেলে রেখেছে কারণ এখানে তার মুখ কেউ দেখে নিলে হালচাল শুরু হয়ে যাবে হয়তো দেখা গেলো সবাই বিয়ে ছেড়ে তাকে নিয়ে পড়ে গেলো তাই নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্যে মাস্ক পরে হলেও এসেছে। সাঁঝ রঞ্জন বোসের সাথে দেখা করে বাইরে গার্ডেনের দিকেই এসেছিল ভিতরে হইচই দেখে, গার্ডেনের একপাশে এসে দাঁড়াতে তার চোখ পড়ে তার থেকে কিছুটা দূরে কোনো এক মেয়ে বসে আছে তবে এখানে বসে কি করছে বুঝতে না পেরে কৌতুহল নিয়ে আরো একটু এগিয়ে যেতেই দেখে মাটিতে বসে ছোটো বিড়াল ছানার সামনে খাওয়ার রেখে তার সাথে কথা বলছে মেয়েটার মুখের একপাশে দেখা যাচ্ছে লম্বা চুল গুলো ছাড়িয়ে আছে চারদিকে আর মুখের একপাশে পড়ে অর্ধেক মুখ ঢেকে রেখেছে। রিনরিনে মিষ্টি একটা গলা শুনেই সাঁঝ থমকে যায় কি অদ্ভূত ভাবে বিড়াল ছানার সাথে কথা বলে যাচ্ছে আর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বিড়াল বাচ্চাটাও পরম আদরে খেয়ে নিচ্ছে একটু একটু করে খাবার গুলো সাঁঝ মুগ্ধ চোখে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর মেয়েটার রিনরিনে মিষ্টি কন্ঠে বিড়াল ছানার সাথে বলা কথা গুলো শুনে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর খাওয়া হয়ে যেতে মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়ে পিছনে ঘোরে সাথে সাথে পুরো মুখটা সাঁঝের সামনে মুখটা দৃশ্যমান হয়ে আর এদিকে সাঁঝের দৃষ্টি থমকে যায় প্রথম বারের মত হার্টবিট দ্রুত গতিতে বিট করছে মুগ্ধ চোখে সে একভাবে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে মেয়েটাকে দেখতে এত ব্যস্ত ছিল কোনো দিকেই তার খেয়াল ছিল না তবে কারোর কন্ঠে সাঁঝের ঘোর কেটে যায় আর তারপরেই দেখে মেয়েটা কে এক মহিলা খারাপ খারাপ কথা বলে যাচ্ছে তবে মেয়েটা যে এইভাবে প্রতিবাদ ও করতে পারে দেখেই সাঁঝকে প্রভাবিত করে।

সাঁঝ আর আকাশ একসাথে ভিতরে এসে একপাশে দাঁড়িয়ে যায় বিয়ের কার্য চলছে সবাই সেদিকে মেতে আছে সাঁঝ ফোনে তার দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে তবে হঠাৎ করেই হাসির ঝংঙ্কার কানে এসে লাগতে সাঁঝ মাথা তুলে পাশে তাকায় সাথে সাথে তার চোখ থমকে যায় বাইরের সেই মেয়েটা কেমন করে হেসে চলেছে মেয়েটার সাথে রয়েছে আরো কয়েকজন ছেলে মেয়ে তাদের সাথেই কথা বলছে আর হাসছে।

-“বেলা মা তোমাকে তোমার নানিমা ডাকছে। মেয়েটার সামনে একজন মহিলা এসে বলে ওঠে।

-” আসছি মামনি চলো।

-“উম মেয়েটার নাম তাহলে বেলা। সাঁঝ বেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে নিজের মনে বলে ওঠে ।

বেলা আজ তার নানিমা আর নিশান বেদ শান্তা ওম রুহি ওদের সাথে বিয়ে বাড়িতে এসেছে আর এখানে খান বাড়ির থেকে রিসা খানও এসেছে। সাঁঝ একবার চারিদিকে তাকিয়ে নিয়ে আবারও বাইরের দিকে চলে যায়। চারদিকে তাকিয়ে খুঁজে চলেছে ক্ষণিকের দেখা সেই মেয়েকে, তার এই জীবনে এতদিন পরই একটা বাচ্চা মেয়ে এসে তার মনে অদ্ভূত এক আকর্ষণ তৈরী করে দিয়েছে তাকে কেমন একটা অস্থির করে দিয়েছে মাত্রই কিছুক্ষণ হচ্ছে মেয়েটাকে সে দেখেছে কিন্তু তারপরেও মেয়েটাকে দেখার জন্যে কেমন একটা অস্থির হয়ে উঠেছে সে কিন্তু এটাতো হওয়ার কথা নয় সে তার আবেগ অনুভূতি কন্ট্রোল করতে জানে কিন্তু আজকে সে কিছুতেই নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছেনা তার পিছন কত মেয়ে পড়ে আছে তাদের দেখে কখনই মনে এমন অস্থিরতা কাজ করেনি কিন্তু আজকের এই বাচ্চা মেয়েটা এক মুহূর্তের জন্যেও তাকে কেমন অস্থিরতায় ভুগাচ্ছে। চারদিকে দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই চোখ যায় উপরের দিকে থেকে কথা বলতে বলতে নিচে নামছে তবে সে উপরের দিকে তাকিয়ে নামছে যে কোনও মুহূর্তে অসাবধানতার সাথে পড়ে যেতে পারে তাই সাঁঝ এগিয়ে যায় আর তারই মধ্যে বেলা সাঁঝের ভাবনা কে সঠিক প্রমাণ করে পা পিছলে পড়ে যেতে নিলেই দুটো হাত এসে জাপটে ধরে তাকে নিজের সাথে, বেলা পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচার জন্যে সাঁঝের কোট আকড়ে ধরে, সাঁঝ এক দৃষ্টিতে বেলার ভয়ে কুকড়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বেলা কোনো ব্যাথা না পেয়ে টুকুর টুকুর করে তাকাতেই দেখতে তার দিকে ঝুঁকে দুটো চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে তবে মুখ দেখা যাচ্ছেনা। বেলা ভ্রু কুঁচকে ওই চোখের দিকে তাকাতে ওই গভীর নীল চোখের মাঝে ডুবে যায় ওই নীল চোখ দুটো কেমন একভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

-“ঠিক আছো তুমি?

হঠাৎ করেই তীক্ষ্ণ পুরুষালি কন্ঠস্বর কানে আসতেই বেলা কিছুটা কেঁপে ওঠে, সাঁঝ বেলাকে ঠিকভাবে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বেলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে। বেলা সাঁঝের দিকে তাকিয়ে চোখের পলক নামিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়।

-” এইভাবেই কেউ নামে আরেকটু হলে তো ব্যাথা পেতে পড়ে গিয়ে। সাঁঝ আবারো সেই একই ভাবে বলে ওঠে ।

-” আসলে খেয়াল করিনি, ধন্যবাদ আপনাকে। বেলা কিছুটা থেমে থেমে বলে ওঠে।

-” নাম কি তোমার? সাঁঝ বেলার দিকে আরও একটু এগিয়ে এসে বলে ওঠে।

সাঁঝের প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়ে একবার সাঁঝের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয় সাঁঝের কন্ঠস্বর তাকে কেমন কাঁপিয়ে তুলছে। বেলাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারো জিজ্ঞেস করে ওঠে সাঁঝ।

-” বললে না তো তোমার নাম কি?

-” বে বেলা খান চৌধুরী। বেলা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে।

-“পরেরবার থেকে দেখে হাটবে নাহলে আবারো পড়ে যাবে আর তখন তোমাকে ধরে নেওয়ার মত কেউ নাও থাকতে পারে বুঝতে পেরেছ। সাঁঝ বলে ওঠে।

বেলা নিজের মাথা নাড়িয়ে একবার সাঁঝের দিকে তাকিয়ে দ্রুত চলে যায়, আর সাঁঝ বেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।

-” পরেরবার যদি কখনো তোমার সাথে আমার আবারও দেখা হয় তাহলে তোমাকে এই সাঁঝেরবেলা করে নেবো । সাঁঝ নিজের মনে বলে ওঠে ।

-” বেলা এই বেলা কোথায় হারিয়ে গেছিস? নাকি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জেগে ঘুমাচ্ছিস? শান্তা বেলাকে ধাক্কা দিয়ে ডেকে ওঠে।

হঠাৎ করে ধাক্কা খেতেই আর ঝাঝালো কন্ঠস্বর কানে আসতেই বেলা তার স্মৃতির পাতায় থেকে বেরিয়ে আসে এতক্ষণ সে নিজের পুরোনো স্মৃতির মাঝে ডুবে ছিল সাঁঝ আর তার প্রথম দেখার কথা ভাবছিল কিভাবে সবটা শুরু হয়েছিলো তাদের পথচলা শুরু হয়েছিলো। বেলার হাতে ধরা ডায়েরি টা বন্ধ করে দেয় এত বছর পর ডায়েরি টা হাতে নিতে পুরোনো দিনের সেই উজ্জ্বল স্মৃতি গুলো চোখের পাতায় দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিলো।

চলবে….?

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৮.

-“কি চুপ করে আছিস কেনো বল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিলিস? শান্তা আবারো জিজ্ঞেস করে ওঠে।

বেলা শান্তার কথা শুনে শান্তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায় দেখে শান্তা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আসায়। শান্তা বেলার হাতের দিকে তাকাতেই দেখে তার হাতে ডায়েরি।

-” আরে এটাতো সেই ডায়েরিটা না যেটাতে তোর সব সিক্রেট কথা লেখা আছে। শান্তা বেলার হাতের দিকে উদ্দেশ্যে বলে ওঠে।

-” হুম এটাই সেটা। বেলা শান্ত ভাবে বলে ওঠে।

-“তারমানে তুই এই ডায়েরি নিয়ে পুরোনো স্মৃতি ঘেঁটে যাচ্ছিলিস! আর আমি ভাবলাম তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্চছিলিস। শান্তা মুখ চেপে হেসে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ আমিতো ঘোড়া তাইনা যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাবো। বেলা মুখ বাঁকা করে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ লম্বা বডি ফিজিক্স দেখে তেমনই মনে হচ্ছে ঘোড়া ঘোড়া। শান্তা টিজ করে বলে ওঠে।

-“টুসুনের বাচ্চা আজকের তোর একদিন কি আমার একদিন। বলেই বেলা নিজের হাতের ডায়েরি বিছানায় ফেলে শান্তার পিছে পিছে ছুটতে থাকে।

শান্তা বেলার থেকে বাঁচার জন্যে দৌড়াচ্ছে আর বেলাকে খেপাচ্ছে আর বেলাও ছুটে চলেছে শান্তাকে ধরার জন্যে। বেলার আর শান্তার চিৎকার চেঁচামেচিতে নিশান বেদ ওম সারা রুহি জাকিয়া রুমের ভিতর ঢুকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কারন ততক্ষণে রুমের মধ্যে তারা দৌড়ের মাঠ বানিয়ে ফেলেছে তারা।

-“আরে কি হচ্ছে এইসব? তোরা এমন দৌড় ছুট কেনো করছিস? রুহি বলে ওঠে।

-” আরে রু বেলা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ খুলে রেখেই ঘুমাচ্চছিলো ঠিক যেমন করে ঘোড়া ঘুমায়। শান্তা বেলার থেকে বাঁচার জন্যে ছুটতে ছুটতে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ! ঘোড়া!! জাকিয়া অবাক বিস্ময় হয়ে বলে ওঠে।

-“দাঁড়া টুসুনের বাচ্চা ঘোড়া না আজকে আমি তোকে দেখাবো ঘোড়া দৌড় কাকে বলে দাড়া তুই। বেলা ছুটতে ছুটতে হাতের কাছে কুশন তুলে নিয়ে ছুড়ে মারছে।

-“বেলা ইয়ার শান্তার বেবি কোথায় থেকে আসবে এখনও বিয়ে হয়নি তাহলে বেবি কি ডাউনলোড হয়ে আসবে? নিশান বলে ওঠে।

-“বেবি তো তুই অর্ডার করবি নিশান এবার কোথায় থেকে করবি তুই ভালো জানিস, আরেকটা কথা বললে এবার কোথায় থেকে কিভাবে বেবি আসবে পুরো ডেফিনেশন দিয়ে দেবো। বেলা নিশানকে বলে ওঠে।

বেলার কথা শুনে নিশান একদম চুপ হয়ে যাবে আর কোনো কথা বলেনা ঠিক জোঁকের মুখে নুন পড়ার মত কুকড়ে গেছে, বেলার কথা শুনে বাকিরা কিছুটা অবাক হলেও এখন অন্য দিকে মন দেওয়ার মতো তারা এখনও দৌড় ছুট দেখছে বেলা শান্তার।

-“এই তোরা এবার তোদের ছুট দৌড় থামিয়ে দিবি নাকি আমরা কিছু করবো? বেদ বলে ওঠে।

-” ইয়ার এই বেলাকে থামা নাহলে আমাকে দৌড় করিয়ে করিয়ে আমাকে শহীদ করে ফেলবে। শান্তা হাফাতে হাফাতে বলে ওঠে।

-“আচ্ছা যা তোকে ছেড়ে দিলাম। বলে বেলা বিছানায় বসে পড়ে।

বেলা বসে পড়তে শান্তা এসে বেলার কোলে এসে শুয়ে পড়ে শান্তা বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে হেসে ওঠে ওদের দেখে বাকিরাও বেলার পাশে গিয়ে বসে পড়ে, কেউ কি বলবে এক্ষুনি তারা একে অপরের পিছনে ছুটে যাচ্ছিলো আর এখন দেখো কেমন গলায় গলায় হয়ে হেসে যাচ্ছে।

-“আরে বাহ এটা সেই ডায়েরি না বেলা বেবি! এতেই তোর জিন্দেগিকে তোর সব কথা লেখা আছে। ওম ডায়েরি হাতে নিয়েই বলে ওঠে।

-” হুম এই ডায়েরি হাতে নিয়েই তো ম্যাডাম ভাবনার জগতে হারিয়ে গেছিলো। শান্তা বেলার কোমর জড়িয়ে ধরে কোলে শুয়ে থেকে বলে ওঠে।

-” জিন্দেগি মানে ভাইয়া তাইনা! এতে ভাইয়াকে নিয়ে লেখা আছে ওয়াও। জাকিয়া উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ ম্যাডাম আপনার ভাই আমাদের বেলা রানীর জিন্দেগি যেটা আমরাও কেউ জানতাম না। বেদ বলে ওঠে।

-“হু যেখানে আমিও প্রথমে জানতাম না যে ওই বান্দা ওই খাড়ুশ অ্যাটিটিউডের দোকান সাঁঝ রওশন বেরোবে। বেলা মুখ বাঁকা করে বলে ওঠে।

-“ওহ হোও ভাই তাহলে খাড়ুশ অ্যাটিটিউডের দোকান? কিন্তু এটাও ভুলে যাস না সেই কিন্তু তোর বর। সারা টিজ করে বলে ওঠে।

-“হু সেই বর । বেলা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে ওঠে।

– “জানো জাকিয়া তোমার এই ভাবি কিন্তু তোমার ভাইকে নিয়ে দিনরাত জেগে জেগে স্বপ্ন দেখত আর যখনই দেখবে তখনই কথা বলছে। রুহি বলে ওঠে।

-“তবে একটা কথা না বললেই নয় তখন তোমার ভাই আমাদের বেলার জীবনে এসে আমাদের বেলার মধ্যে আবারো প্রাণ সঞ্চার করেছিলো। শান্তা আবেগী হয়ে বলে ওঠে।

-” মানে? জাকিয়া কিছুটা অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-“আরে মানে হলো বেলার মুখে সারাক্ষণ হাসি ফুটে থাকতো সারাক্ষণ জিন্দেগি জিন্দেগি করতো। সারা তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে।

সারার কথা শুনে জাকিয়া হাসে, আর এদিকে সব কয়জন চোখ বড় বড় করে তাকায় শান্তার দিকে এখুনি কি না কি বলে ফেলতো এই মেয়ে। এরই মধ্যে কর্কশ আওয়াজে ফোনের রিং বেজে উঠতে সবাই নড়েচড়ে বসে।

-“জিকু বেবি দেখোতো কে ফোন করেছে? কার দরকার পড়লো আবার আমাকে? শান্তা বেলার কোলে ভালো করে শুয়ে বলে ওঠে।

-” মিসেস খান নাম সেভ করা আছে। জাকিয়া পাশে টেবিলে হাত বাড়িয়ে ফোন দেখে বলে ওঠে।

জাকিয়ার কথা শুনেই সবাই নড়েচড়ে বসে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে সবাই গম্ভীর হয়ে যায় শান্তা তো বেলাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বেলা শান্তার মাথায় আলতো হাতে বুলিয়ে দেয়।

-” কথা বল দেখ কি বলছে। বেলা মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে ।

-” বলুন কি দরকার। শান্তা বেলার কথা শুনে জাকিয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে বলে ওঠে ।

-” শান্তা কোথায় আছো তুমি? শান্তার মা বলে ওঠে।

-” সেটা জেনে আপনি কি করবেন? আর আজকে হঠাৎ এত কেয়ার কেনো? শান্তা রুক্ষ কন্ঠে বলে ওঠে।

-” শান্তা আমি তোমার মা তোমার জন্যে আমার চিন্তা হয়। মিসেস খান বলে ওঠে।

-” ওমা তাই নাকি জানতাম না তো! যাইহোক কেনো ফোন করেছেন সেটা বলুন। শান্তা বিদ্রুপ করে বলে ওঠে।

-” শান্তা কাল থেকে তুমি বাড়িতে ফিরছো না কোথায় আছো এটাও জানাওনি আমাদের কি চিন্তা হয়না? মিসেস খান বলে ওঠে।

-“আজ হঠাৎ এত বছর পর আমি কোথায় যাই কোথায় আছি বাড়ি কেনো ফিরছিনা এটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে কথা গুলো হাস্যকর শুনতে লাগছে তাইনা? শান্তা তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।

-” শান্তা শোনো আমার কথা.. ।

-“আমাকে যে কেনো ফোন করেছেন আর কার কথায় ফোন করেছেন বা কি জানতে ফোন করছেন সেটা আমার বোঝার বাকি নেই তাই একদম আলগা দরদ দেখাতে আসবেন না আমার ইচ্ছা হলে তখন দেখা যাবে বাড়ি যাবো কিনা, এখন ফোন রাখুন আলগা দরদ দেখিয়ে ফোন করার কোনো দরকার নেই আমাকে। বলেই শান্তা ফোন কেটে পাশে ছুড়ে ফেলে দেয়।

বেলা শান্তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, শান্তা বেলার উদরে মুখ গুঁজে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বেলাকে ওম বেদ নিশান সারা রুহি সবাই একদম চুপচাপ হয়ে গেছে আর জাকিয়া সেতো একদম অবাক বিস্ময় হয়ে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ করে সবার মন খারাপ এসে জেকে বসেছে।

-“এইযে আধি ঘরওয়ালি বউটা কিন্তু আমার হ্যাঁ আর এদিকে তুমি পুরো দখল করে নিয়েছ তাকে সাথে আমার না হওয়া এখনও পর্যন্ত কোল টাও।

হঠাৎ করে এমন কথা শুনতেই সবাই মাথা ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখে সাঁঝ কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। সাঁঝের মুখে এমন কথা শুনে বেলা চোখ কটমট করে তাকায় সাঁঝের দিকে, আর বাকি গুলো সব সাঁঝের কথার মানে বুঝে মিট মিট করে হাসছে তাদের মধ্যে এতক্ষণ এর গুমোট মন খারাপ ভাবটা উধাও হয়ে গেছে, আর সাঁঝ বেলার তাকানো দেখে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।