শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব-৩৪+৩৫

0
764

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_34
#Writer_NOVA

❝ভাই, তোর যদি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকতে মন চায় তাহলে থাকবি। না থাকতে মন চাইলে নিজ দায়িত্বে বের হয়ে যাবি। কিন্তু আমার পার্সোনাল বিষয়ে নাক গোলাইতে আসলে দুই আঙুল দিয়া ফিক্কা ব্লক লিস্টে ফালায় দিমু।❞

ফেসবুক প্রোফাইলের বায়ো তে এই কথাগুলো লিখে রাখছি। তবুও যত চুলকানি পাবলিক আমার কপালেই জুটে। একটু আগে মেয়ের নাম দিয়ে খোলা ফেইক আইডির এক ছেলে ইচ্ছে মতো জ্বালাচ্ছিলো। তাই তাকে দুই আঙুলে ফিক্কা ব্লক লিস্টে ফেলে দিছি। এবার আমার ব্লক লিস্টে আত্মীয়-স্বজনের সাথে থাকুক। একটু বই নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু ফলাফল জিরো। কয়েক পেজ উল্টিয়ে পাল্টিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম। তারপর বাকিটা ইতিহাস। তন্বী আমার পাশে শুয়ে কার সাথে জানি চ্যাটিং করছে। মাঝে মাঝে মুচকি হাসছে। এর লক্ষ্মণ আমার ভালো ঠেকছে না। সময় এখন রাত দশটা। কিন্তু তায়াং ভাইয়া বাইরে থেকে আসেনি। তন্বীকে আবারো মুচকি হাসতে দেখে জোরে এক ঠেলা মেরে জিজ্ঞেস করলাম,

— এই তোর কি হয়েছে রে? তুই এমন মুচকি মুচকি হাসতেছিস কেন? নয়া নয়া প্রেমের লক্ষ্মণ মনে হচ্ছে।

— আরে ধূর। তুমি যে কি বলো না।

— কার সাথে চ্যাটিং করছিস?

— এক ফ্রেন্ডের সাথে।

— ওহ। আমি ভাবলাম প্রেমে পরেছিস। তন্বী!

— হু বলো।

— তোকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।

— হুম বলো।

— আমার দিকে তাকা। মোবাইল রাখ।

তন্বী হাতের মোবাইলটা রেখে উঠে বসলো। তারপর আমার চোখে চোখ রেখে বললো,
— রেখেছি এবার বলো।

— আজকে দুপুরে একটা কাহিনি হয়ে গেছে।

— কি কাহিনি?

— বলছি।

তন্বীকে ক্যাফেতে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা খুলে বললাম। রোশানের কোন কথা লুকালাম না। এনাজের হিরোর মতো এন্ট্রির কথাও বললাম। তন্বী সব শুনে বিস্মিত চোখে বললো,

— আজ এতকিছু ঘটে গেছে!

— জ্বি হ্যাঁ। এখন আমাকে এটা বল এনাজ কি তোর কাছে গিয়েছিল? নয়তো ও জানলো কি করে আমি ঐ ক্যাফেতেই আছি?

— হ্যাঁ, এনাজ ভাইয়া তো আমার কাছে এসেছিলো। তোমার রুমে নাকি তোমাকে খুঁজে এসেছে কিন্তু পাইনি। আমাকে জিজ্ঞেস করলো তুমি কোথায়। আমি ঐ ক্যাফের নাম বলে দিলাম।

— এনাজ কেন এসেছিলো? সেই বিষয়ে কি কিছু বলেছিলো?

— আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “হঠাৎ ভাইয়া আপনি কলেজে?” উনি বললো, “কলেজের পাশ দিয়ে যাচ্চিলাম তাই ভাবলাম তোমাদের সাথে দেখা করে যাই।” তারপর যখন তোমার কথা বললাম সে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো।

— সত্যি উনি যদি সঠিক সময়ে না যেতো তাহলে ঐ রসুইন্না আমাকে আজ তুলেই নিয়ে যেতো। জানিস এনাজ ঐ কাহিনি ঘটার পর আমার সাথে কোন কথা বললো না। থমথমে গলায় শুধু বললো,”বাইকে উঠো।” আমি বাইকে উঠার পর একটানে বাসার গেইটে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। ভালো-মন্দ কিছু বললো না। মাঝে মাঝে এদের কি হয় তাই আমি বুঝি না।

— এরা এমনি। কখন কি হয় তুমি কেন আমিও বুঝি না।

তন্বীর মোবাইলে টুং করে ম্যাসেজ আসতেই তন্বী মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। ভেবেছিলাম তায়াং ভাইয়াকে আজ রোশানের কথা সব বলে দিবো। কিন্তু তার আসার নামও নেই। সময়ও যেন কাটছে না। ও থাকলে দুজন টম এন্ড জেরির মতো লেগে কখন যে সময় পার হয়ে যায় নিজেও জানি না। আমি উঠে খালামণির রুমে চলে গেলাম। খালামণি মোবাইলে সিরিয়াল দেখছে। আমি গিয়ে পাশে বসলাম। আমাকে দেখে মোবাইল রেখে জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু বলবি?

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম। খালামণি বললো,
— কি বলবি বল?

— তায়াং ভাইয়া কোথায়? এতরাত হয়েছে তবুও আসে না কেন?

— এর কথা আর বলিস না। একটু আগে কল দিলাম মোবাইল বন্ধ। সন্ধ্যার দিকে নিজেই কল করে বলছিলো আসতে দেরী হবে৷ কিন্তু এখনো আসার খবর নেই। তা তুই হঠাৎ তায়াং-এর খবর নিচ্ছিস যে?

— আমার সময় কাটছে না। তায়াং ভাইয়া থাকলে শয়তানি করতে পারতাম তাই আরকি।

— ওরে ফাজিল মেয়ে। এর জন্য ভাইকে খোঁজা হচ্ছে।

— ও বাসায় না থাকলে আমার ভালো লাগে না। সময় কাটতে চায় না।আর বাসায় থাকলে ওরে জ্বালাতে জ্বালাতে কখন যে সময় চলে যায় নিজেও বুঝি না।

— খেয়ে শুয়ে থাক। অনেক রাত তো হলো।

— না তায়াং ভাইয়া আসুক। তারপর একসাথে খাবো।

— ওর আসার কোন ঠিক-ঠিকানা আছে। ওর জন্য না খেয়ে বসে থাকবি দেখবি এসে বলবে খেয়ে এসেছে। সে এখন খাবে না।

— থাক তবুও আরেকটু অপেক্ষা করি।

খালামণির রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় গিয়ে বসলাম। মাথাটা সোফার পেছনে হেলিয়ে দিয়ে দুপুরের কথা ভাবতে লাগলাম। মোবাইলে টুং করে ম্যাসেজ আসতেই মোবাইল হাতে নিলাম। দেখি ভাইয়া ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ওন করে দেখি ম্যাসেজে লেখা,

— কি রে শাঁকচুন্নি ঘুমাসনি?

আমি দ্রুত রিপ্লাই দিলাম।
— না এখনো ঘুমায়নি। তুই কোথায়? বাসায় কখন আসবি?

অপরপাশ থেকে সিন হলো কিন্তু রিপ্লাই এলো না। সিন করে রিপ্লাই না দিলে বিরক্ত লাগে। তাই কতগুলো এংরি রিয়েক্ট পাঠিয়ে বললাম
— ঐ পাঠা, ম্যাসেজ দেখে রিপ্লাই দেস না কেন?

ভাইয়া সিন করে বললো,
— আমি সিঁড়ি তে আছি৷ দরজা খোল।

আমি মোবাইল রেখে দ্রুত দরজা খুললাম। কিন্তু দরজার অপরপাশে কেউ নেই। উঁকি মেরে দেখলাম সিড়িতেও কেউ নেই। তিন মিনিট অপেক্ষা করার পর তায়াং ভাইয়া এলো। সে ভেতরে ঢুকতেই আমি দরজা আটকে ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম। ভাইয়া ঘেমে একাকার। ওর শার্ট ভিজে গেছে। ওর মুখের থেকে ঘামগুলো নিয়ে আমার মুখে ছুড়ে মেরে বললো,
— এখনও জেগে আছিস যে?

আমি নাক,মুখ সিটকে ওর থেকে দুই হাত দূরে গিয়ে বললাম,
— ইস, খাচ্চর। সর সামনের থেকে। ওয়াক! এই খাচড়ামি গুলো কি তোর যাবে না রে পাঠা। আমার মুখে ঘামের পানি ছিটিয়ে মারতে হবে।ওয়াক থু🤮।

— এত নাক সিটকালি না দাঁড়া তুই।

ভেজা শার্ট-টা খুলে আমার মুখে ছুড়ে মারলো। ঘাম,পারফিউম মিক্সিং হয়ে বিচ্ছিরি গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। সেটা আমার মুখে ছুড়ে মারছে। ভেতর থেকে সব গুলিয়ে আসছে।এর এসব খাচড়ামি এখনো আছে। আমি ফিরতে ওর শার্ট ওর শরীরে ছুড়ে মেরে বললাম,

— সর খাচ্চড়। আমার মুখটাকেই খারাপ করে দিলো। এখন ইচ্ছে মতো ফেশওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। তোর সামনে থাকাই আমার ভুল হয়েছে।

— তোর ঐ আটা-ময়দার থেকে আমার ঘামের পানি অনেক ভালো।

— তোর ভালো নিয়ে তুই থাক।

— এগুলো হলো তোর শাস্তি। সেদিন আমাকে জোর করে মূলার তরকারি খাইয়েছিলি না তার বদলা। এখন এই ঘামে ভেজা শার্ট দিয়ে তোর মুখ মুছে দিবো। তুই শুধু একটু দাড়া।

ওর সামনে গিয়ে চুলগুলো ইচ্ছে মতো টেনে পিঠে দুটো কিল বসিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলাম। এই শয়তান ভালো হবে না। এটা ওর ছোট বেলার অভ্যাস। মাঝে এমন করেনি বলে আমি ভেবেছিলাম অভ্যাসটা বোধহয় বদলে ফেলেছে। কিন্তু ঐ যে একটা কথা আছে না পাহাড় স্থান পরিবর্তন করেছে তা বিশ্বাস করো। কিন্তু কেউ ছোট বেলার অভ্যাস কেউ পরিবর্তন করেছে তা বিশ্বাস করো না।

💖💖💖

পূর্ব দিগন্তে রক্তিম আভায় চারিদিক আলোকিত হয়েছে। আরো একটি নতুন সকালের সূচনা। নামাজ পরে কোরাআন পরে নিলাম। এখন ঘুমালে দশটার আগে উঠতে পারবো না। তবে আজ কলেজ যেতে একটুও ইচ্ছে করছে না। কবে যে গ্রামে যাবো সেই টেনশনে আছি। ভাইয়াকে বলছিলাম হলুদের দুই দিন আগে যাবো। কিন্তু তায়াং ভাইয়া বলছে হলুদের দিন যাবে। কিন্তু সেদিন গেলে আমার আনন্দ মাটি। আমি এমনি জার্নি করতে পারি না। জার্নি করে বাসায় গেলে দুই দিন বেডের থেকে মাথা উঠাতে পারি না। মাথা ঘূর্ণায়। তাই ভাইয়া হলুদের অনুষ্ঠানের একদিন আগে যেতে রাজী হয়েছে। তাও ভালো। গ্রামের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো শহরের মতো না হলেও আনন্দ অনেক বেশি হয়। আজ চাচাতো ভাইয়া ও বোন ঢাকায় আসবে। বিয়ের মার্কেটিং সব এখান থেকে করে নিবে। তায়াং ভাইয়া তাদের নিয়ে কোন শপিংমলে নাকি যাবে। তায়াং ভাইয়ার সাথে এনাজও যাবে। তাই ভাইয়াকে সকাল দশটার আগে ডাক দেওয়া নিষেধ। খালামণির সাথে কিচেনে হাতে হাতে কাজ করে দিতে লাগলাম। কখন যে সাড়ে নয়টা বেজে গেছে বুঝতেই পারলাম না।

সদর দরজায় বেশ কয়েকবার খটখটানির শব্দ পেয়ে দ্রুত সেদিকে ছুটলাম। এই কাজটা হলো বিচ্ছু দুটোর। মাঝে মাঝে দরজায় জোরে থাপড়িয়ে কিংবা কোলিং বেল বাজিয়ে দৌড় মারে। আজ হাতে পেলে মোয়া বানাবো। দরজা খুলে বাইরে উঁকি মেরে কাউকে দেখতে পেলাম না৷ নেংটি ইদুরটা নিশ্চয়ই বাসায় ঢুকে গেছে। আমি কিছু সময় দরজা আবজিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ খট করে ইফাতদের বাসার দরজা খুললো। আমি ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভেবেছিলাম বিচ্ছু দুটোর একজন হবে। কিন্তু না। ওদের আম্মু এক বালতি জামা-কাপড় নিয়ে বের হলো। মাঝারি সাইজের বালতিটা নিয়ে উনি হাঁপিয়ে গেছে। বালতি মেঝেতে রেখে উনি দুই হাতে কোমড় ধরে দাঁড়ালেন। বোঝাই যাচ্ছে উনার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি বাইরে বের হয়ে তাকে বড় করে এক সালাম দিলাম।

— আসসালামু আলাইকুম শাশুড়ী আম্মা।

— ওয়া লাইকুমুস সালাম।

— কেমন আছেন?

— এই তো মা আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি এই বালতি নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

— এই তো ছাদে রোদ দিতে।

তার কথা শুনে আমার চোখ চড়কগাছ। বলে কি উনি? এই ৮ মাসের প্রেগন্যান্ট অবস্থায় উনি এই বালতি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে যাবে। আমি চেচিয়ে বললাম,

— আপনি পাগল হইছেন? কি বলেন এসব? আল্লাহ না করুক সিঁড়ি থেকে স্লিপ কেটে যদি নিচে পরেন তাহলে কোন উপায় আছে? এই অবস্থায় কোন ভারী জিনিস নেওয়ায় উচিত না। আর আপনি সেটা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে যাবেন? বিপদ ডেকে আনতে ইচ্ছে করছে?

উনি আমার কথায় হাসলেন। তবে তার হাসিতে আমি লুকানো কষ্ট খুঁজে পেলাম। মুখে হাসি হাসি ভাব রেখেই বললো,
— এতগুলো ধুতে পারলে ছাদে দিতে সমস্যা কি?

তার কথা শুনে আরেকদফা অবাক। ৮ মাসের পেট নিয়ে উনি নাকি এগুলো ধুয়েছেন। কিছুটা রাগী গলায় বললাম,

— আপনাদের কাজের বুয়ার হয়েছে কি? এর দুই দিন পরপর কি হয়? আর আপনার শাশুড়ী কোথায়?

— কাজের বুয়া বললো আজ আসতে পারবে না। কোন কারণ বললো না। আর শাশুড়ী অসুস্থ।

— সত্যি অসুস্থ? নাকি অসুস্থ হওয়ার ভান করছে?

— জানি না মা।

— আচ্ছা আপনাকে না বলছি কোন দরকার হলে নিঃসংকোচে আমাকে ডাকবেন। আপনি একটু কষ্ট করে ইফাতকে কিংবা সিফাতকে পাঠাবেন। তাহলেই তো আমি চলে আসি। আর কাজের বুয়া আজ আসেনি। কাল তো আসবে। কাল এগুলো তাকে দিয়ে ধুইয়ে নিতেন। আপনাকে অসুস্থ শরীরে এসব কাজ করতে বলছে কে?

উনি আমার কথা শুনে চোখের পানি ফেলে বললেন,
— মা গো সবার কপালে তো সুখ জোটে না। আমিও সেই হতভাগী। গরিবের মেয়ে বলে আমার খারাপ লাগার কোন দাম নেই। আল্লাহ আমাকে নিয়ে গেলেই ভালো হবে। আর ভালো লাগে না এই সংসার জীবন।

তার প্রতিটা কথার মাঝে একরাশ বিষন্নতা ও চাপা কষ্টের আঘাত খুঁজে পাচ্ছি আমি। সামনে গিয়ে দুই চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,
— বাচ্চাদের মতো কান্না করেন না তো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কষ্টের পর সুখ রেখেছে।

আমার কথায় উনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আফসোসের সুরে বললো,
— আর সুখ!

— আমাকে বালতিটা দিন। আমি ছাদে জামা-কাপড় মেলে দিয়ে আসি। আর কখনো এসব ভারী বালতি নিয়ে ছাদে যাওয়ার কথা চিন্তাও করবেন না। দরকার পরলে কোন লজ্জা না পেয়ে আমাকে ডাকবেন। শাশুড়ীর এতটুকু সাহায্য না করতে পারলে কেমন বড় বউ হলাম?

আমার কথা শুনে উনার কান্নামাখা মুখে এক চিলতে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। সেটাই আমাকে মুগ্ধ করলো। আমি তার হাতের কাছ থেকে বালতিটা নিয়ে হাসিমুখে বললাম,

— যান, নিজের রুমে গিয়ে বিশ্রাম করুন। আমি ছাদে জামা-কাপড় রোদ দিয়ে আসছি। আপনার শাশুড়ীর সাথে আমার কিছু কথা আছে। ভেবেছিলাম কিছু বলবো না। কিন্তু এখন দেখছি চুপ করে থাকাটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল।

— না না তুমি তাকে কিছু বলো না।

— আপনি ভয় পেয়েন না। আমি এমন করে তাকে বলবো যে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙ্গবে না।

উনি বাসার ভেতরে ঢুকে পরলেন। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বালতি নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। জামা-কাপড় দড়িতে মেলে খালি বালতি নিয়ে ইফাতদের ফ্লাটে চলে গেলাম। দরজা আগের থেকে খোলা ছিলো। আমি বালতিটা ওয়াশরুমের সামনে রেখে ইফাতের দাদীর রুমে গিয়ে উঁকি দিলাম। ইফাতের দাদা এমন সময় বাসায় থাকে না। চালের আড়তে ঢু মারতে যায়। ওর দাদী সম্ভবত ওয়াসরুমে গিয়েছে। আমি তাই চুপটি করে খাটে বসে এদিক সেদিক দেখতে লাগলাম। হঠাৎ পেছন থেকে ইফাত আমাকে নাম ধরে ডাকলো,

— নুবা!

আমার নামের বিকৃত উচ্চারণ শুনে কপাল কুঁচকে ইফাতের দিকে তাকালাম। দিলো রে দিলো, এই নেংটি ইদুর শেষ পর্যন্ত আমার নামটারও মান-ইজ্জ্বত মেরে দিলো।

#চলবে

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_35
#Writer_NOVA

— নুবা!

আমার নামের বিকৃত উচ্চারণ শুনে কপাল কুঁচকে ইফাতের দিকে তাকালাম। দিলো রে দিলো, এই নেংটি ইদুর শেষ পর্যন্ত আমার নামটারও মান-ইজ্জ্বত মেরে দিলো। আমি রাগী চোখে একবার ইফাতের দিকে তাকাতেই ইফাত আবার মুখ কুচোমুচো করে ডাকলো,

— নুবা, ও নুবা, আমার নুবা।

আমি ইফাতের দিকে কটমট করে তাকিয়ে নিজের কপালে জোরে একটা চাপড় মারলাম। নোবা বললেও একটা কথা ছিলো। তা না করে নুবা😑।আম্মু খুব শখ করে শিশুদের নামের বই থেকে আমার নাম রেখেছিলো নোভা। এটা একটা বিদেশি নাম। যার অর্থ নক্ষত্র। আম্মুর ধারণা ছিলো আমি নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করবে। কিন্তু এখন তার ভাষ্যমতে আমি নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করাতো দূরেই থাক তারার মতো মিটমিটও করি না। আরেকটা নাম আছে আমার। যেটার সংক্ষিপ্ত হলো রাই। এই নামে আমায় খুব কম মানুষই ডাকে।

কিন্তু আজকে ইফাত আমার নামের পুরো দফারফা করে দিলো৷ আমি ওর দিকে খাইয়া ফালামু লুক দিয়ে হাতের ইশারায় সামনে আসতে বললাম। ও মাথা নাড়িয়ে বললো,

— আসবো না। এখন আসলে তুমি আমাকে মারবে।

— না আসলে আরো বেশি মারবো। জলদী এদিকে আয়। আমার এই নতুন নাম তুই পেলি কোথায়?

— আমি বানাইছি।

— তা আকিকা দিছিস? আমার নাম রাখছিস নতুন করে আর আকিকা দিবি না? তুই এদিকে আয়। তোর সাথে আমার কথা আছে। বিচ্ছু পোলা। আমার নামটাকে পুরো মান-সম্মান শেষ করে দিলো।

ইফাত দাঁত কেলিয়ে আবারো মাথা নাড়ালো। আমি উঠে ওর দিকে যাওয়ার আগেই দৌড়ে পালালো। তখুনি খট করে ওয়াসরুমের দরজা খুলে গেল। ইফাতের দাদী বের হতেই আমি ভুবন ভুলানো এক হাসি দিয়ে তাকে লম্বা সালাম দিলাম।

— আসসালামু আলাইকুম দাদী। কেমন আছেন?

— আরে বড় নাতির বউ যে।ওয়া লাইকুমুস সালাম। আল্লাহ রাখছে ভালোই। তুমি কেমন আছো?

— আল্লাহর রহমত এবং আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ। তা আপনার শরীর ভালো আছে তো?

— আছে কোনরকম। হঠাৎ আমার কাছে?

— আমি হঠাৎ হঠাৎই আসি। হুট করে এসে কাউকে চমকে দিতে আমার ভালোই লাগে। আন্টি বললো আপনার শরীরটা নাকি ভালো না তাই আপনাকে দেখতে এলাম।

উনি একটু হেসে ওয়ারড্রবের ওপর থেকে পানের বাটা নিয়ে খাটে বসলেন। আমার আবার একটা গুণ আছে। এটাকে ভালো গুণই বলে। গুণটা হলো যে যেরকম তার সাথে আমি সেরকম ভাবে মিশতে পারি। তার মনের মতো হয়ে খুব কম সময়ে তার মন জয় করার ক্ষমতা আমার আছে।যদি আমি চাই তাহলে। নয়তো না। এই যে ধরুন তেল মারানো মানুষের সাথে তার মন মতো চলতে পারবো। কিপ্টের সাথে থেকে কিপ্টামি করতে পারবো। শুচিবাই মানুষের সাথে তার মন মতো চলে তার মন জয় করতে পারবো। ইফাতের দাদী নিজের প্রশংসা শুনতে ভীষণ পছন্দ করে। সুতরাং এখন তার প্রচুর প্রশংসা করে তাকে ফুলিয়ে আমার কাজ হাতাতে হবে।

উনি মনোযোগ দিয়ে পান সাজাচ্ছে। আমি কিছুটা থেমে তাকে বললাম,

— দাদী একটা পান দিয়েন তো। তবে জর্দা দিয়েন না। জিহ্বা পুড়ে যায় আমার। চুন সামান্য পরিমাণ। আপনার হাতের পান আমার ভীষণ পছন্দ। একবার মুখে দিলে শেষ হয়ে গেলেও মনে হয় এখনো মুখে লেগে আছে। আমি অনেকের হাতের পান খেয়েছি কিন্তু আপনার হাতের সাজানো পানের মতো আজ অব্দি কারোটা এত স্বাদ লাগেনি।

আহা, আমার তোষামোদে উনি একেবারে ফুলে ঢোল হয়ে গেলো। দ্রুত একটা পান সাজিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে খুশি খুশি মনে বললো,

— প্রতম (প্রথম) দুইবার পিক ফালায় দিবা। ঐগুলার মধ্যে বিষ থাকে। পরেরগুলো দেখবা চাবাইতে চাবাইতে মিঠা লাগে। তখন গিইলা ফালাইয়ো।

আমি বিসমিল্লাহ বলে দু চোখ বুজে পান মুখে পুরলাম। আজকে আমার খাওয়া বন্ধ। পান খেলে গালের মাংস ছিলে যায়। তবে মুখে হাসি হাসি ভাব বজায় রেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললাম,

— আহা কি স্বাদ! কতদিন পর এতো স্বাদের পান খেলাম। লাভ ইউ দাদী।

— লাভ ইউ টু বউ।

লাভ ইউ টু শুনতেই চোখ উল্টিয়ে দরজার দিকে তাকাতে দেখলাম ইফাত মুচকি হেসে উঁকি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আর লাভ ইউ টু সেই বলেছে। আমি ঠোঁট কামড়ে রাগী ভঙ্গিতে ওকে বললাম,

— তোর লাভ ইউ টু বের করতাছি। দাঁড়া তুই।

আবার ছুটে পালালো। ওর কান্ড দেখে আমি ও দাদী দুজনে একসাথে হেসে উঠলাম। আমি বেশি দেরী করতে চাইছি না। সরাসরি কাজের কথায় ঢুকতে চাচ্ছি।বুড়িকে দেখে দিব্যি সুস্থ মনে হচ্ছে। আর উনি নাকি অসুস্থ। আমিই ঠিক ধরেছিলাম। উনি অসুস্থ হওয়ার ভান করছে। কিছুটা নরম সুরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

— কি হয়েছে আপনার দাদী? হঠাৎ অসুস্থ যে।

— আর বইলো না।প্রেশারে মাথা ঘুরায়।খাঁড়ায় (দাঁড়ায়) থাকতে পারি না।

আমি ব্যস্ত হওয়ার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম,
— ও আল্লাহ বলেন কি? মাথায় তেল দিছেন?

— না, মাথায় একটু পানি দিয়ে আসলাম।

— আপনার মাথা ঘুরায় আর আপনি তেল দেননি। এটা কোন কথা। তেলের বোতল কোথায়? দিন আমি আপনার মাথায় তেল দিয়ে দেই। এতে মাথাটা একটু ঠান্ডা লাগবে।

— আরে লাগবো না। তুমি বসো।

— কোন কথা শুনছি না আপনার।

💖💖💖

আমি দ্রুত ওয়ারড্রবের ওপর থেকে তেলের বোতল এনে জোর করে উনার মাথায় দিয়ে দিতে শুরু করলাম। এখন তেল দিয়ে দিবো আর নরম সুরে তাকে যদি পারি ডিটারজেন্ট ছাড়া ধুয়ে দিবো। নয়তো তাকে পটাবো। উনি মুখে বিরক্তি দেখালেও মনে মনে যে খুশি তা তার কথায় বুঝতে পারছি। মুখে বিরক্তি ভাব রেখে বললো,

— দেখ তো নাতনির কান্ড। এত করে বললাম দিতে না। তবুও শুনলো না।

— কোন কথা বলেন না তো। তা দাদী আপনি জুয়ান (যৌবন) কালে নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর ছিলেন তাই না?নয়তো দাদা কি আর এমনি এমনি রুপসীর পাগল হয়েছে?

দাদী লাজুক হেসে তার শৈশব, কৈশোরেের গল্প জুড়ে দিলো। আমিও এটা ওটা জিজ্ঞেস করে তার কথা শোনার আগ্রহ প্রকাশ করছি। বৃদ্ধারা কারো সাথে গল্প করতে ভীষণ পছন্দ করে।একজনকে পেলেই তার সাথে নানা গল্প জুড়ে দেয়। আমি ধীরে ধীরে তেল দিতে দিতে তার অনেক কথা শুনলাম। তারপর আমি আমার কথা শুরু করলাম,

— দাদী, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি কিছু কথা বলি।

— হ্যাঁ বল।

— আন্টি আট মাসের প্রেগন্যান্ট। তার এখন ফুল রেস্টে থাকার কথা। আল্লাহ না করুক একটা অঘটন ঘটে গেলেই বাচ্চা ও মায়ের দুজনের ক্ষতি। আপনার হয়তো কিছু না। কারণ আন্টির কিছু হলে আপনি আপনার ছেলেকে আরেকটা বিয়ে করাবেন। এক বউ গেলে আরেক বউ পাবেন।কিন্তু ইফাত,সিফাত কিন্তু নিজের মা কে হারাবে। তারা কিন্তু নিজের মা পাবে না। আজকাল খবরে দেখা যায় নিজের সন্তানকেই দুচোখে দেখতে পারে না। তাহলে সতিনের ছেলেকে কি করে নিজের ছেলে ভাববে বলুন তো? উনি এই পেট নিয়েও সারা ঘরের কাজ করে। আপনি একটু উঁকি মেরে দেখতেও যান না। এটা কি ঠিক বলুন?

উনি চুপ করে আমার কথা শুনছেন। কোন উত্তর দিলেন না। আমি আবারো বললাম,

— হ্যাঁ আন্টি গরীবের মেয়ে। কিন্তু উনার মনটা আপনাদের থেকেও অনেক বড়। অন্ততপক্ষে আপনাদের মতো নিচু মন-মানসিকতার নয়। উনি আপনাদেরকে নিজের বাবা-মা ভাবে। যদি আপনাদেরকে বাবা-মা না ভাবতো তাহলে আপনাদের সংসারে নিত্যদিন ঝগড়া, অশান্তি লাগতো। উনি কিন্তু সব মুখ বুজে সহ্য করে নেয়। সংসারে কোন ঝামেলা করেন না। উনার মতো ছেলের বউ সবাই পায় না দাদী। খুব ভালো মনের মানুষ। যদি খারাপ হতো তাহলে আপনার ছেলের কানে আপনাদের নামে বিষ দিয়ে এতদিনে আলাদা হয়ে যেতো। কিন্তু সে সবসময় আপনার ভালোর কথা চিন্তা করে। দাদার ভালোর কথা চিন্তা করে। তাহলে আপনার কি উচিত না উনাকে এই সময় একটু সাহায্য করা। ঘরের কাজগুলো তো বুয়াই করে। যেদিন বুয়া না আসে সেদিন না হয় আপনি একটু কষ্ট করে কাজগুলো করে দিলেন। এতে তো আপনাদের শাশুড়ী, বউয়ের সম্পর্ক মজবুত হবে। আর তো মাত্র ১ মাস। তারপর বাচ্চা হওয়ার কয়েকমাস অব্দি আপনি সংসারের হালটা ধরে রাখুন। এতে তো বাচ্চা, মা দুজন সুস্থ থাকবে। উনার প্রতি এখন বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু আপনি তো বাড়তি খেয়াল দূরেই থাক স্বাভাবিক খেয়ালটাই রাখছেন না। আজ যদি আন্টির বদলে আপনার মেয়ে হতো তাহলে কি এতো অবহেলা করতে পারতেন? উনাকে না হয় নিজের মেয়ে হিসেবে এতটুকু খেয়াল করুন। বউকে নিজের মেয়ে ভাবতে এতো কষ্ট কেন আপনাদের মতো শাশুড়ীদের?

উনার উত্তরের পরোয়ানা না করে আমি একটু থেমে আবার বলতে লাগলাম,

— আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার সময় প্রেগন্যান্ট থাকতেও ধান,পাট নিয়ে সংসার করেছেন। তাহলে আপনার ছেলের বউ এতটুকু করে কেন সংসার চালাতে পারবে না? আপনাদের সময় আর এখনকার সময় আকাশ পাতাল তফাৎ। পুরনো বিষয় ধরে বসে থাকলে তো হবে না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। এখনো সময় আছে উনার প্রতি একটু যত্নশীল হোন। সে তো আপনাদের একটু কেয়ারই চাইছে। টাকা-পয়সা তো নয়। সারাদিন প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের খেয়াল রাখছে।ছেলে দুটোকে মানুষ করছে। এটাও কি কম? আর কষ্টগুলো কেন করছে সে? আপনাদের বংশধর আনতেই তো? নাকি অন্য কোন কারণে? আজ আপনি থাকতে উনি নিজে এক বালতি জামা-কাপড় ধুয়েছে। এতে তো উনার পেটে নিশ্চয়ই চাপ পরেছে।যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকারক। উনি এই বালতি নিয়ে ছাদে যেতে চেয়েছিলো। আমি দেখায় রক্ষা। সিঁড়িতে যদি স্লিপ কেটে কোন বিপদ ঘটতো তাহলে কি হতো ভেবেছেন আপনি?নিজেকে প্রশ্ন করেন তো আজ অব্দি কতটুকু একজন আদর্শ শাশুড়ী হতে পেরেছেন? এই প্রশ্নটা নিজেকে নিজে করবেন।শেষ একটা কথাই বলবো দাদী। থাকতে মূল্য দিন। হারিয়ে গেলে কেঁদেও লাভ হবে না।

কথাগুলো বলে আর থাকলাম না। দ্রুত উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। দাদী এখনো চুপ করে বসে আছে। তার ভেতরে একটা তোলপাড় সৃষ্টি করে দিয়েছি। রুম থেকে বের হতেই দেখলাম আন্টি ওড়নায় মুখ গুঁজে কাঁদছে। নিশ্চয়ই আমার সব কথা শুনেছে। আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে দরজা খুলে বের হলাম। তবে বের হওয়ার আগে দাদীর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।কৌতুহলবশত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। উনি আন্টিকে ডাকছে।

— ছোট বউ, ও ছোট বউ। কোথায় তুমি?

অপরপাশ থেকে আন্টির গাল শুনলাম,
— জ্বি মা বলুন।

— শুনো ছোট বউ, আজ দুপুরে কি রান্না করবো বলো তো? তোমার রান্নাঘরে যাওয়ার কোন দরকার নেই।
আজ থেকে সংসার আমি সামলাবো। তুমি বরং একটু রেস্ট নাও।

— কিন্তু মা আপনার তো শরীর ভালো না। আপনি একা এতকিছু পারবেন না।

— বেশি কথা বলো না তো। তোমাকে রেস্ট নিতে বলছি তাই নিবা। কি কি করতে হবে বলো। আমি সব করে নিচ্ছি। সংসার নিয়ে তোমার আর ভাবতে হবে না। এখন থেকে সব আমি দেখবো। তুমি কি সকালে খেয়েছো? না খেলে কিন্তু এখন তোমার খবর আছে। একদম আমার দিদিভাইকে না খেয়ে কষ্ট দিবে না।

চোখ দুটো আপনাআপনি পানিতে ভিজে গেলো। না আমি সফল হয়েছি। এটাই অনেক বড় পাওয়া। কথাগুলো যে এত দ্রুত তার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।পেছন ঘুরে যাওয়ার আগে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। তাকিয়ে দেখি আন্টি কান্না মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে আরো কান্না করতে লাগলো। তবে আমি জানি এই কান্না কষ্টের নয়। বরং তার আনন্দের। বড় কিছু পাওয়ার আনন্দ। উনি কয়েক মিনিট পর আমার মাথায়, গালে হাত বুলিয়ে ভেতরে চলে গেল। আমি কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে থেকে বাসার দরজার দিকে গিয়ে একটুর জন্য ধাক্কা খেলাম না। তার আগেই কেউ আমাকে কোমড় পেচিয়ে জড়িয়ে ধরে ফেললো।

— আরে আস্তে! চোখ কোনদিকে রেখে হাঁটো টিডি পোকা?

দুজন মুখোমুখি হয়ে আছি। তাকিয়ে দেখি এনজিও সংস্থা।এখন দুজনেই পুরো চোখাচোখি। আজকেও তার সাথে আমার ড্রেস ম্যাচিং হয়ে গেছে। দুজনেই কালো। আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার হাত আমার কোমড় থেকে সরালাম। তারপর কটমট চোখে তার দিকে একটা রাগী লুক দিয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকে গেলাম। একটু সুযোগ পেলেই আমার কাছে আসার ধান্দা। বদমাশ বেডা!

#চলবে