#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৪
ডার্ক ব্লেক কালারের কোর্ট টা নিজের ওপর জড়াচ্ছে আর পেছন ঘুরে ঘুরে একবার করে আইরাত কে দেখছে আব্রাহাম। সাদা চাদর টেনে আইরাত ঘুমাচ্ছে পরম শান্তিতে। আর আব্রাহামের অফিসে জরুরি মিটিং আছে। তাই তাকে তাড়াতাড়ি উঠতে হয়েছে। রেডি হয়ে আইরাতের কপালে একটা চুমু খেয়ে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়। আব্রাহামের রুম থেকে বের হতেই আইরাত প্রথমে এক চোখ খুলে তারপর আরেক চোখ খুলে। মুখে ঝুলছে শয়তানি হাসি। ঠাস করে উঠে বসে পরে। আড়মোড়া ভাঙছে। কিছুক্ষণ পর নিচে আব্রাহামের গাড়ি চলে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে আইরাত করিডরে গিয়ে নিচে তাকায়। চলে গিয়েছে আব্রাহাম।
আইরাত;; হিহিহিহিহি, একটা বার অফিসে যাও না চান্দু তারপরই বুঝবে মজা 🧛♀️।
এই বলেই আইরাত ফ্রেশ হতে চলে যায়। ওদিকে আব্রাহাম গাড়ি চালাচ্ছে আর কানে ব্লুটুথ লাগানো। তখনই অয়নের ফোন।
অয়ন;; তুই কোথায় ভাই?
আব্রাহাম;; আ”ম অন মাই ওয়ে।
অয়ন;; জলদি অফিসে আয়।
আব্রাহাম;; কেনো! কিছু কি হয়েছে নাকি?
অয়ন;; আশফাক আহমেদ তোর সাথে আবার নিজের পার্টনারশিপ শুরু করতে চায়।
আব্রাহাম;; কিন্তু একটা সময় সে নিজেই সবকিছু শেষ করে আরেক কোম্পানি তে জয়েন করেছিলো প্লাস আমার ক্ষতি করার জন্য উঠে পরে লেগেছিলো।
অয়ন;; আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি। এও বলেছি যে তুই জীবনেও আর ওর সাথে কাজ করতে রাজি হবি না। কিন্তু সে আমার কোন কথাই শুনতে রাজি নয়। বলেছে তোর সাথে কথা বলে তারপরই সবকিছু মিটমাট করবে।
আব্রাহাম;; আজ আমার সময় নেই। ওকে বল আমি এখন পারবো না। আমার কাছে ওকে দেওয়ার মতো এতো আজাইরা সময় নেই।
অয়ন;; আচ্ছা আমি দেখছি।
আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। তার বেশ সময় পর অফিসে এসে পরে। গার্ড রা অফিসের দরজা খুলে দিলে আব্রাহাম ভেতরে চলে যায়। সবাই মর্নিং উইশ করছে আব্রাহামও যেতে যেতে তাদের সবার উত্তর দিচ্ছে। নিজের কেবিনে গিয়ে রাশেদ কে ডাকে।
আব্রাহাম;; সবকিছু রেডি আছে তো?
রাশেদ;; একদম স্যার। কনফারেন্স রুমে সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে।
আব্রাহাম;; ওকে আমি আসছি।
রাশেদ চলে যায়। তার কয়েক মিনিট পর আব্রাহাম কনফারেন্স রুমে চলে যায়। সেখানে অয়ন-কৌশল সবাই আছে। তাকে দেখেই সবাই দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম তাদের বসে যেতে বলে। মনিটর সেট করে নেওয়া হয়। প্রেজেন্টেশন করবে আব্রাহাম।
।
।
ইলা-অনামিকা, দিয়া-অবনি-রোদেলা সবাই হলরুমেই বসে ছিলো। কাজ করছে আর আড্ডা দিচ্ছে।
ইলা;; কিরে সবাই এখানে আছি কিন্তু আইরু কোথায়?
এই কথা বলার সাথে সাথেই ওপরে আইরাতের রুম থেকে বেশ জোরে গানের শব্দ আসে। তাও আবার খাসা একখান গান। গান বাজছে…
“চান্দেও চিনে না, সূর্যেও চিনে না। টিং টিংটিং টিং টিংটিং টিং টিংটিং টিং টিং টিং টিং টিং।
চান্দের বাত্ত্বির কসম দিয়া ভালোবাসিলি, সূর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পোড়াইলি। এখন তো চান্দেও চিনে না, আমারে সূর্যেও চিনে না। চিনবো কেমনে যে চিনাইবো সেও তো চিনে না”।
এমন গানের জোর আওয়াজে সবাই অবাক হয়ে ওপরের দিকে তাকায়। আগা-মাথা কিছুই না বুঝে একে ওপরের দিকে তাকাতাকি করতে লাগে।
দিয়া;; এই সাজ-সকাল বেলা এ আবার কেমন তামাশা রে ভাই!
অনামিকা;; এটা নিশ্চয়ই আইরাতের কাজ। এভাবে কেউ এই সকাল বেলা গান বাজায়।
অবনি;; আবার কোন ভূতে ধরলো কে জানে!
তখনই আইরাত রুম থেকে বের হয়ে আসে কোমড়ে নিজের দুহাত রেখে। চোখে একদম কালা চশমা আর মুখে একখান ভেটকি। আবার গান শুরু। আর আইরাত উরাধুরা যা খুশি নাচ দিচ্ছে। আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। এসেই দিয়াকে বসা থেকে হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়। তারপর তাকে নিয়ে নাচতে শুরু করে। দিয়া তো শুধু ঘুরছে। একটা সময় দিয়ার হাত আইরাত ছেড়ে দেয়। এতে দিয়া গিয়ে ধিরিম করে সোফার ওপরে পরে। তারপর ইলার কাছে গিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তারপর আবার আইরাতের মন মতো নাচানাচি শুরু। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
।
।
আব্রাহাম প্রেজেন্টেশন শুরু করবে সবই রেডি। রাশেদের হাতে সব ফাইল। সেই এক এক করে আব্রাহাম কে ফাইল আর যাবতীয় সব কিছু দেয়। আব্রাহাম কোর্টের হাতা গুটিয়ে নিয়ে রাশেদের দিকে তাকায়। দেখে রাশেদ হাবলার মতো সব ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম রাশেদের দিকে তুরি বাজায়। ইশারাতে ফাইল চায় তার কাছে। কিন্তু রাশেদ আসলে কি করবে সেটাই তার বুঝে আসে না। সে শুকনো কিছু ঢোক গিলে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়।
আব্রাহাম;; কি হলো ফাইল দিচ্ছো না কেনো?
রাশেদ;; স্যার এগুলো কি আসলেই ফাইল?
আব্রাহাম;; মানে?
রাশেদ;; স্যার এই দেখুন।
আব্রাহামের সামনে রাশেদ সব ফাইল গুলো রাখে। সেগুলো হাতে নিয়ে এক এক করে উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখতে লাগে। কিন্তু ফাইল উল্টিয়ে দেখতে দেখতে তো আব্রাহামের নিজেরই মাথা উল্টে গিয়েছে। আব্রাহামের কপাল ভাজ হয়ে আসে। রাগে মূহুর্তেই চোখ গুলো রক্তবর্ণ ধারন করে। কোর্টের হাতা গুলো আরো শক্ত ভাজে গুটিয়ে নেয়। রাশেদ সিচুয়েশন বুঝতে পেরে দ্রুত সবাই কে কনফারেন্স রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে। মিটিং হুট করেই ক্যান্সেল করে দেওয়া হলো। এখন এছাড়া আর কোন উপায় নেই। অয়ন আর কৌশলও কিছু বুঝে না। আস্তে করে চলে যায়। আব্রাহাম এক হাত তার কোমড়ে রেখে আরেক হাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে। রাগে শুধু ফুসছে। রাশেদ নিজেও আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে পরে। আসলে আব্রাহামের যে সমস্ত ফাইল ছিলো সেগুলোর সব কটাতেই আইরাত তার মহান কারুকাজ করে দেখিয়েছে। ফাইল গুলো সব ধবধবে সাদা আর তাতে একশ একটা কালারিং পেন দিয়ে যত্তসব আজগুবি ড্রোইং আঁকা রয়েছে। আব্রাহাম চেয়েও এখন রাগ দেখাতে পারছে না। কনফারেন্স রুমে কেউই নেই শুধু আব্রাহাম ছাড়া। সে আস্তে করে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। আস্তে করে গা টা এলিয়ে দেয়। আব্রাহাম বেশ ভালো করেই জানে যে এগুলো আইরাত ছাড়া আর কেউ করে নি। কারণ আইরাত ছাড়া বাসাতে কেউ আব্রাহামের এই জিনিস গুলো ধরবে তার প্রশ্নই আসে না। ফর সিওর আইরাত করেছে। আর আব্রাহাম তাকে হারে হারে চিনে। চেয়েও রাগ করতে পারছে না সে এখন। সকালে ফাইল গুলো আবার রিচেক করবে সেই সময় টুকু ছিলো না। আর রাতের অর্ধেক সময় পর্যন্ত তো কাজ করেছেই তাই আর সকালে চেক করে নি। ভেবেছে সবকিছু ঠিকই আছে। আব্রাহাম চেয়ারে বসে সব ফাইল গুলো দেখছে এক এক করে। এক ফাইলে হাতি, হনুমান, কুত্তা, ভেড়া, বিড়াল, আড়শোলা সবই আঁকা। আরেকটা তে একটা পালোয়ানের মতো মানুষ আঁকা। এটা কে প্রথমে চেনা যেতো না কিন্তু মুখে চাপদাড়ি, আর চুলের আকৃতি দেখে স্পষ্ট প্রমাণ যে আইরাত এটা আব্রাহাম কেই আঁকিয়েছে। খেয়াল করে দেখে আব্রাহামের পাশেই ছোট্ট করে একটা পুচকে মেয়ে কে আঁকিয়েছে। সেটাই হয়তো আইরাত। এটা দেখেই আব্রাহাম তাচ্ছিল্যের মতো হাসি হাসে। সে হাসবে নাকি কাদবে ভুলে গেছে। আরেক ফাইলে হয়েছে পুরো উল্টো কাজ। সেখানে একটা বিশাল আকারের মেয়ে কে আঁকানো হয়েছে আর মেয়ে টার পাশেই পুচকু করে একটা ছেলে কে আঁকানো হয়েছে। সেটা হয়তো আব্রাহাম কে আঁকিয়েছে আইরাত। আরেক ফাইলে ৩২ টা দাঁত বের করে, টাক মাথা সহ একটা দানব আকৃতির মুখমন্ডল এঁকেছে সে। আরো কতো শত কারুকাজ তার। আহা, এগুলো কে জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। আইরাতের ভয়ংকর প্রতিভা। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আব্রাহাম ফাইল গুলো সব রেখে দেয় টেবিলের ওপর। বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে আইরাত কে সময় না দেওয়ার ফল এটা। ওইযে একটু ব্যাস্ততা দেখিয়েছে তাই সে এমন করে রেখেছে সব ফাইল। এত্তো জেদ। যেটার জন্য রাত জেগে কাজ করলো সেটা আইরাত পুরো ভেস্তে দিলো।
অন্যদিকে ইচ্ছেমতো নেচে-টেচে ধুপ করে বসে পরে। মিটমিট করে হাসছে। অনামিকা বেশ ভালো করেই বুঝলো যে নিশ্চিত আইরাত কিছু উল্টা-পাল্টা একটা কাজ করেছে তাই এমন করে নাচছে।
অবনি;; ওই ওই
আইরাত;; কি হইছে?
অবনি;; সত্যি কইরা ক ত। কি করছোস তুই?
আইরাত;; আচ্ছা শোন শোন এদিকে আয় বলতাছি। কানে কানে বলি।
আইরাতের কথা মতো অবনিও আস্তে করে আইরাতের মুখের কাছে নিজের কান পেতে ধরে। আর আইরাত তার মুখের এক পাশে আলতো করে হাত এনে অবনির কানে কানে কিছু বলবে বলে এগিয়ে আসে।
আইরাত;; বলছিলাম কি যে…
এই বলেই আইরাত অবনির কানে দেয় এক ফাটা গলায় চিৎকার মেরে 📢। অবনি দ্রুত সরে এসে কানে হাত দিয়ে দেয়। এই মনে হয় কানের পর্দা টা ফেটে গেলো। শেষ শেষ কান পুরো শেষ।
অবনি;; হারামি মাইয়া।
আইরাত;; 🤪
ইলা;; আচ্ছা কি শুরু করেছিস কি তুই! কোন আজাইরা কাম-কাজ করিস নি তো আবার!
আইরাত ইনোসেন্ট ফেইস করে দুপাশে মাথা নাড়ায়। তার মানে সে ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে জানেই না। সেই সময় টুকু এভাবেই যায়। সকাল থেকে না আব্রাহাম আইরাত কে কোন ফোন করেছে আর না আইরাত ফোন করছে তাকে। সে শুধু থেকে থেকে ঘড়ি দেখছে। আইরাত ভেবেছে হয়তো আব্রাহাম ব্যাস্ত তাই ফোন দিচ্ছে না। তাই কৌশল কেই ফোন করে বসে আইরাত।
কৌশল;; হ্যালো।
আইরাত;; হ্যালো, কৌশল ভাইয়া!
কৌশল;; হ্যাঁ বউমনি বলো।
আইরাত;; আব্রাহাম কোথায়?
কৌশল;; সে তো কাজ করছে। তবে আজ যে মিটিং ছিলো তা ক্যান্সেল হয়ে গেছে।
এটা শুনেই আইরাত দাঁত দিয়ে জিভ কাটে।
আইরাত;; হ্যাঁ বুঝলাম। তো এখন কি করে?
কৌশল;; কেবিন রুমেই বসে আছে।
আইরাত;; দুপুর হয়ে এলো। খেয়েছে কিছু?
কৌশল;; না।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা। ভাইয়া আমি রাখি।
কৌশল;; আচ্ছা বউমনি।
আইরাত ফোন কেটে দেয়। উঠে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়। গিয়েই ওরনা কোমড়ে গুজে বিরিয়ানি রান্না শুরু করে। ইলা একবার এসে উঁকি দিয়ে দেখে যায়। দেখে বেশ যত্ন সহকারে বিরিয়ানি রান্না করছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না যে আব্রাহামের জন্যই। দেড় ঘন্টার মাঝেই পুরো বিরিয়ানি তৈরি হয়ে এলো। একটা সুন্দর বক্সে তা বেশটুকু নিয়ে নেয়।
রোদেলা;; ম্যাম, আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন?
আইরাত;; এইযে শুরু হলো আবার। ম্যাম আর আপনি এই দুটো ডাক কি তুমি বাদ দিবে না। দিয়া আর অবনি যেভাবে ডাকে সেভাবে ডাকবে তা না পারলে তুমি বলে ডাকবে। সমস্যা কি!
রোদেলা;; আচ্ছা।
আইরাত;; আমি অফিসে যাচ্ছি আব্রাহামের কাছে। কিছু সময় পরই ফিরে আসবো।
রোদেলা;; আচ্ছা। ড্রাইভার কে বলে দিবো?
আইরাত;; না না আমি একাই যাচ্ছি।
আইরাত বের হয়ে পরে গাড়ির চাবি নিয়ে।
আর ওদিকে আব্রাহামের মেজাজ কিছুটা গরম। ফাইল গুলোর সব নাজেহাল অবস্থা আর তার ওপর মিটিং ক্যান্সেল। আবার আরেক নতুন আপদ এই আশফাক আহমেদ। কিযে ঝামেলা। এইসবের প্যারায় আজ বাসায় ফোন অব্দি দিতে পারে নি। কেবিনে বসে বসে কি যেনো লিখছিলো তখনই রাশেদ কড়া নাড়ে।
রাশেদ;; স্যার।
আব্রাহাম;; এসো রাশেদ।
রাশেদ;; স্যার একজন এসেছে বলছে আশফাকের লোক।
আব্রাহাম;; কেনো এসেছে?
রাশেদ;; আপনার সাথে কথা আছে নাকি।
আব্রাহাম;; পাঠাও দেখি, আবার কোন ঝামেলা এলো।
রাশেদ;; কিন্তু স্যার….
আব্রাহাম;; পাঠাও।
রাশেদ আর কিছু না বলে লোক টাকে পাঠিয়ে দেয়। কেবিনের দরজায় টোকা পরলে ভেতরে আসতে বলে।
আব্রাহাম;; জ্বি বলুন।
–;; স্যার আসলে আশফাক আহমেদ চাইছেন যে….
আব্রাহাম;; যাকে একবার না বলি তাকে না তেই টিকিয়ে রাখি আমি। এবার আপনি আপনার কথা বলতে পারেন।
লোকটি আর কিছু না বলে এবার তার হাত থেকে দুটো সিলভার কালারের বড়ো বড়ো ব্যাগ বের করে টেবিলের ওপর আব্রাহামের সামনে রাখে। দু ব্যাগ ভর্তি শুধু টাকা আর টাকা। যদিও সব ফরেইন কান্ট্রির ডলার।
–;; আপনি চাইলে এর থেকেও বেশি দিতে পারি কিন্তু বিনিময়ে…
আব্রাহাম;; আশফাকের সাথে পার্টনারশিপ করতে রাজি নই আমি।
–;; আপনি….
লোকটি আর কিছু বলতে পারে না। ওদিকে আইরাত প্রায় ত্রিশ মিনিট পর অফিসের সামনে আসে। গার্ডরা আইরাত কে দেখেই দ্রুত অফিসের দরজা খুলে দেয়। সবাই হেসে হেসে কথা বলছে আইরাতের সাথে। আইরাতের তো আর আব্রাহামের কেবিনে ঢোকার সময় পারমিশন লাগে না। আর লাগলেও আইরাত নিবে না। আইরাত তো সোজা কেবিনের দিকে যেতে লাগে। তবে বাইরে থেকেই ভেতরের দিকটায় কিছুটা শোরগোলের আওয়াজ পাওয়া যায়। আইরাত কপাল কুচকায়। সে দ্রুত কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পরে। তবে এখন যেনো সবই নীরব। একেবারেই শান্ত। আইরাত আশেপাশে চোখ বুলাতে থাকে। শান্ত পরিবেশে হঠাৎ কারো চাপা স্বর পেলে আইরাত আরো কয়েক কদম এগিয়ে যায় কিন্তু তখনই আব্রাহাম বের হয়ে আসে। সে যেনো কিছুটা হাপাচ্ছে এমন। অর্থাৎ জোরে দম ছাড়ছে। হুট করেই আইরাতের সামনে এসে পরাতে আইরাতও অবাক।
আব্রাহাম;; হে বেবিগার্ল!
আইরাত;; আপনি?
আব্রাহাম;; তো আমার কেবিনে আর কে থাকবে?
আইরাত;; না না তা না।
আব্রাহাম;; তুমি অফিসে এলে কখন? বললে না যে!
আইরাত;; না আসলে আমি কৌশল ভাইয়া কে ফোন করেছিলাম। আপনি নাকি কিছুই মুখে তুলেন নি তাই আমিই খাবার নিয়ে এলাম।
আব্রাহাম;; তাই কি এনেছো?
আইরাত;; গেস করুন!
আব্রাহাম;; আব….. কি?
আইরাত;; বিরিয়ানি।
আব্রাহাম;; ওয়াহহহহহ।
আইরাত;; কিন্তু আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
আব্রাহাম;; কেমন?
আইরাত;; আপনি কি রেগে আছেন?
আব্রাহাম;; একদম না। এখন কিছুই করবো না তবে রাতে তোমার খবর আছে।
আইরাত বুঝলো যে আব্রাহাম ফাইলের কথাই বলছে।
আইরাত;; আচ্ছা শুনুন আমি বাড়ি যাই। আর এই রইলো আপনার বিরিয়ানি। এটাই দিতে এসেছিলাম। আপনি খেয়ে নিয়েন কেমন। তারপর না হয় গার্ড কে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েন।
আব্রাহাম;; আরে এতো তাড়াতাড়ির কি আছে!
এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের বাহু ধরে এক টান দিয়ে নিজের কাছে এনে পরে। হাত দিয়ে তার কোমড় প্যাচিয়ে ধরে। আব্রাহাম তার নাক দিয়ে আইরাতের গালে ঘষছে। কিন্তু তখনও আইরাত কারো চাপা স্বর শুনতে পায়। আইরাত কপাল কুচকে তার পেছন ঘুরে তাকাতে যাবে কিন্তু তখনই আব্রাহাম তাকে টান দিয়ে আবার অন্য পাশে ঘুরিয়ে ফেলে। অর্থাৎ আইরাতকে দেখার সুযোগ টুকুও দেয় না।
আব্রাহাম;; আই লাভ ইউ।
আইরাত;; টু (হেসে)
আব্রাহাম;; আচ্ছা শুনো বাড়ি যাও এবার। বাইরে এতো বেশি থাকতে হবে না।
আইরাত;; হুমমম।
আব্রাহাম আইরাতের সারা মুখে চুমু এঁকে দেয়। আইরাত চলে যেতে নেয়। তবে কেবিনের দরজাতে গিয়ে আইরাত একবার দাঁড়িয়ে পরে। ঘুরে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আইরাত;; আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; হুমমম।
আইরাত;; সবকিছু ঠিক আছে তো?
আব্রাহাম;; টোটালি পারফেক্ট বেবিগার্ল। গো হোম।
আব্রাহাম মুচকি হেসে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আইরাতও এসে পরে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আর আইরাতের চলে যেতেই আব্রাহাম কয়েক কদম হেঁটে গিয়ে কেবিনের আরো ভেতরে যায়। একটু আগে যে লোকটা এসেছিলো আশফাকের বিষয়ে আব্রাহামের কাছে সুপারিশ করতে আর টাকা নিয়ে। বেশি কিছু না তবে আব্রাহাম শুধু তাকে মেরে ফেলেছে। এখনো মরছে সে। দুহাত একদম ওপর থেকে ভেঙে দিয়েছে। ঠিক গলার শ্বাসনালি বরাবর একটা চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে সূত্রপাত হয়েই রক্ত ঝড়ে পরছে সারা গা বেয়ে। আর জীবন তো এখনো পুরো যায় নি তার। গলাতে চাকু বিধে রয়েছে আর সেখান থেকেই তার চাপা স্বর বের হয়ে আসছে। আব্রাহাম খুব শান্ত দৃষ্টিতে তার কাছে যায়। লোকটি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে, কথা বের হচ্ছে না তার মুখ থেকে। একে তো এতো জরুরি মিটিং ক্যান্সেল হয়েছে তাই মাথা গরম। যদিও আইরাত ফাইল গুলো দুষ্টুমি করেই নষ্ট করেছে। আর আব্রাহাম চাইলেও আইরাত কে কিছুই বলতে পারবে না। আইরাত দুনিয়া উল্টে ফেলে দিলেও আব্রাহাম তাকে কিছু বলবে না। আর এই আশফাক সব মিলিয়ে আগে থেকেই বেশ রাগ উঠে ছিলো তার ওপর এই উটকো ঝামেলা সইতে না পেরে দিলো মেরে। আইরাতের নজরে যেনো এইসব খুন-খারাবা আর না পরে তাই আব্রাহাম খুব সাবধানেই এটা সামলিয়েছে। লোকটাকে দেখার অবকাশ টুকুও দেয় নি। আর আইরাত যখন আব্রাহামের কেবিনের ভেতরে আসছিলো তখনই তাকে আব্রাহাম নিজের কেবিনের ভেতরে থাকা লুকিং ক্যামেরা তে আগে থেকেই দেখে নিয়েছিলো। তাই সতর্কতা আরো বাড়ে।
আব্রাহাম;; গার্ড (জোর চিল্লিয়ে)
আব্রাহামের ডাকার সাথে সাথেই কেবিনের ভেতরে তিনজন গার্ড প্রবেশ করে।
আব্রাহাম;; এটাকে নিয়ে গিয়ে ওই আশফাকের ঠিক সামনে ফেলে দিয়ে আসবে।
এবার আব্রাহাম রাগে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আরেক দফা ঘুষি মেরে দেয় ওই লোকটির গলা বরাবর অর্থাৎ যেখানে চাকু আগে থেকেই বিধে ছিলো। গার্ডরা ওই লোকটার আধামরা দেহটা তুলে নিয়ে যায়। আর আব্রাহাম শান্ত হয়ে বসে। মুড খারাপ ছিলো তবে আইরাতের হাতে বানানোর বিরিয়ানির গন্ধে মুড অন। কোর্ট টা খুলে ফেলে। ভেতরের শার্টের হাতা গুলো ফোল্ড করে খেতে বসে। আগামী এক ঘন্টা কেবিনে প্রবেশ সবার নিষেধ করে দেয়।
আইরাত বাসায় চলে যায়। ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে বাড়িতেই ঘুরতে লাগে। এক সময় দিয়ার রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে দিয়া পেছনে দুহাত বেধে শুধু পায়চারি করে যাচ্ছে।
আইরাত;; কিরে!
দিয়া;; ওহ, আয় আয় ভেতরে আয়।
আইরাত;; কিছু কি হয়েছে তোর?
দিয়া;; কিছু না। তবে ভালো লাগছে না।
আইরাত;; হয়েছে কি?
দিয়া;; 😒
দিয়ার চাহনি দেখেই আইরাত যেনো কিছুটা টের পায়।
আইরাত;; আব…. অয়ন ভাইয়ার সাথে…….!!
দিয়া;; বাদ দে। অয়ন অনেক ব্যাস্ত থাকে। হয়তো ও অন্য কাউকে ভালোবাসে রে।
আইরাত;; আরে নাহ তেমন না।
দিয়া;; এমনই রে।
আইরাত;; আচ্ছা তোর এতো চিন্তা করতে হবে না। আমি সামলাচ্ছি সব।
দিয়া;; লাভ নেই রে। অয়ন অন্য কাউকেই ভালোবাসে।
আইরাত;; হ কইলেই হইলো। চুপ কর তুই।
তখনই আইরাতের ফোন আসে।
।
।
।
।
চলবে~~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৫
বিকেলের দিকে হঠাৎ করেই আইরাতের শরীর প্রচুর খারাপ লাগতে শুরু করে। এতো টাই খারাপ যে অবশেষে তাকে দ্রুত হস্পিটালে যেতে হয়েছে। আব্রাহাম তো বাসায় ছিলো না তাই আইরাত অনামিকা আর অবনির সাথে হস্পিটালে গিয়েছিলো চেকাপের জন্য। সেখানে ডক্টর কিছু টেস্ট দিলে আইরাত সব টেস্ট গুলো করে নেয়। রিপোর্ট আসতে একদিন সময় লাগবে। আর আব্রাহাম যদি শুনে যে আইরাত হস্পিটালে গিয়েছিলো মানে আইরাতের শরীর খারাপ তাহলে সে অযথাই হাইপার হয়ে যাবে। আর তেমন কিছু সিরিয়াস ম্যাটারও না। তাই আইরাত আব্রাহাম কে এই কথা বলতে সবাই কেই বারণ করে দেয়। তবে আইরাতের মন টা কেমন একটু ভার ভার। যেনো কিছু নিয়ে চিন্তিত সে। রাতে আব্রাহাম বাড়ি ফিরে আসে। অন্যান্য দিন আব্রাহাম এসেই দেখে আইরাত হলরুমেই সবার সাথে রয়েছে কিন্তু আজ আইরাত এখানে নেই। আব্রাহাম ইলা কে জিজ্ঞেস করলে ইলা বলে আইরাত নাকি বেশ সময় যাবত নিচেই নামে নি। ওপরে রুমেই রয়েছে। আব্রাহামও আর কিছু না বলে দ্রুত পায়ে রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত বিছানার ওপর থেকে ওরনা নিজের ওপর জড়াচ্ছে। আব্রাহাম কে দেখে আইরাতের মাঝে তেমন কোন হাবভাব দেখা যায় না। আব্রাহাম হয়তো কিছুটা টের পেয়েছে। জেকেট টা নিজের ওপর থেকে খুলে ফেলে। শার্টের হাতা গুটাচ্ছে আর সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আইরাতের দিকে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; ____________________
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; হুমম
আব্রাহাম;; হলরুমে সবাই তুমি এখানে একা একা কি করো?
আইরাত;; না এমনি। আমার ভালো লাগছিলো না তো তাই আরকি নিচে যাই নি।
আব্রাহাম যেনো এটা মেনে নিতে পারলো না। আইরাত চলে যেতে ধরলে আব্রাহাম তার বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। বিছানার ওপর আইরাত কে বসিয়ে দেয়। আর সে আইরাতের সামনে এক হাটু ভাজ করে বসে পরে। সামান্য উঁচু হয়ে আইরাতের কপালে আর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে আবার বসে। বেশ নরম সুরেই বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; কি হয়েছে?
আইরাত;; কিছু না।
আব্রাহাম;; বলো আমায় কি হয়েছে?
আইরাত;; আব্রাহাম আমার ভালো লাগে না। (কিছুটা জোরেই)
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; আব্রাহাম মানলাম আমি একটু চঞ্চল, মাঝে মাঝে একটু বেশিই বাচ্চামো করি কিন্তু আমি অবুঝ নই। অবুঝ নই, আমি বুঝি।
আব্রাহাম;; হয়েছে কি?
আইরাত;; আপনি কি এগুলো ছাড়বেন না। এইসব মারপিট, ঝামেলা। এইসব খুন-খারাবি কবে ছাড়বেন আপনি!?
আব্রাহাম;; আইরাত ত……
আইরাত এবার উঠে আব্রাহামের সামনে থেকে এসে পরে।
আইরাত;; আমি দেখেছি আজ অফিসে সব। আপনি ওই লোকটাকে মেরেছেন। আমি সেখান থেকে এসেই পরতাম। বাইরেও এসে পরেছিলাম কিন্তু আপনার কেবিনে আমি আমার ফোন রেখে এসে পরেছিলাম। তাই সেটা নিয়ে আসার জন্য আবার ঘুরে যাই। আর গিয়েই দেখি আপনি লোকটাকে মেরে বসেছেন।
আইরাত রাগ-ক্ষোভ নিয়ে কপাল কুচকে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।
আব্রাহাম এবার উঠে আইরাতের কাছে যায়। আইরাতের গালে নিজের দুহাত রেখে দেয়।
আব্রাহাম;; ভয় পাও আমাকে?
আইরাত;; ____________________
আব্রাহাম;; বলো। ভয় পাও আমাকে তুমি?
আইরাত;; নাহ।
আব্রাহাম;; আমার ওপর বিশ্বাস আছে?
আইরাত;; অনেক টাই বেশি। নিজের থেকেও বেশি।
আব্রাহাম;; তাহলে তো তুমি এও জানো যে আমি বিনা কারণে কাউকে মারি না।
আইরাত;; কিন্তু মেরে ফেলার কি দরকার। কথা বলে বুঝিয়েও তো মিটমাট করা যায় নাকি!
আব্রাহাম;; আইরাত শুনো আমি তোমায় ভালোবাসি বুঝলে তুমি। ঠিক ততো টাই ভালো আমি আমার প্রফেশন কেও বাসি। এন্ড ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার প্রফেশন খুন করা নয়, মানুষ কে মেরে ফেলা নয়। সাধে মারি না আমি। না আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো আর না ই আমি আমার প্রফেশন কে। আমি বলছি না যে আমি এইসব বারবার করবো। তবে হ্যাঁ আর কখনো এইসব তোমার চোখের সামনে পরবে না। কখনোই না।
আইরাত কে জড়িয়ে ধরে আব্রাহাম নিজের বুকের সাথে। বুঝলো যে অফিসে সেই কান্ড টা দেখার পরই আইরাতের মন খারাপ। তবে আইরাত কে নিজের বুকে নিয়ে আব্রাহাম বুঝলো যে আইরাতের শরীর অনেক পরিমাণে গরম। আব্রাহাম তার মুখ তুলে ধরে। তার গালে, কপালে ভালো করে হাত রেখে দেয়। কপাল কুচকে বলে…
আব্রাহাম;; বডির টেম্প্রেচার এতো বেশি কেনো! জ্বর এসেছে নাকি তোমার?
আইরাত;; কৈ না তো।
আব্রাহাম;; শরীর খারাপ লাগছে?
আইরাত;; হ্যাঁ কিছুটা।
আব্রাহাম;; তুমি, তুমি এখানে বসো।
আইরাত তার মাথার পাশে হাত রেখে দেয়। মাথা টা কেমন ঘুরিয়ে উঠলো। আব্রাহাম আইরাত কে শুইয়ে দেয়। তারপর ফ্রেশ হয়ে আসে। নিজে খায় সাথে আইরাত কেও খাইয়ে দেয়। সারাটা রাত আইরাতের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই পার করে দিয়েছে আব্রাহাম।
।
।
দিয়া তো জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। প্রায় কয়েক দিন যাবত অয়ন তার সাথে ভালোভাবে কথা বলছে না, দেখছে না অব্দি। যদিও আগে এইসবে দিয়ার কিছুই আসিতো-যেতো না। তবে ইদানীং কেনো যেনো দিয়ার বেশ খারাপ লাগে অয়নের এমন কান্ডে। না পারে মুখ ফুটে তাকে কিছু বলতে আর না পারে সহ্য করতে। দিয়া নিজেও জানে না যে তার এমন কেনো লাগছে। অয়নের সাথে তো তার বনেই না তাহলে কেনো জ্বলছে সে। দিয়া চেয়েও নিজেকে নরমাল রাখতে পারে না। এবার আর না পেরে দিয়া ঠিক করলো যে যাই হয়ে যাক না কেনো দিয়াই সবকিছু বলে দিবে অয়ন কে আর অয়নের মনে আসলে কি খিচুড়ি পাকছে তাও জানবে। সবাই হলরুমে বসেই ছিলো। ছেলেরা সবাই অফিসে। দিয়া ভেবেছিলো অয়নও হয়তো অফিসেই। কিন্তু দেখে অয়ন তার রুম থেকে নামছে। এতোক্ষন সে তার রুমেই খাপটি মেরে বসে ছিলো। অয়ন ছাদের দিকে যেতে ধরে, আইরাত তাকে দেখে দিয়া কে ইশারা দেয়। অয়ন যাওয়ার পর দিয়াও উঠে ছাদের দিকে যেতে লাগে। ছাদে তীব্র বাতাস, তার সাথে প্রখর রোদও। দিয়া ছাদের আশেপাশে তাকাতাকি করে দেখতে লাগে। অবশেষে দেখে ছাদের এক কিণারে রেলিং এর ওপরে হাত রেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। কানে এখনো ফোন রয়েছে। হেসে হেসে কথা বলছেই। এটা দেখেই তো দিয়ার মাথা খারাপ হয়ে যায়। দিয়া তেড়ে অয়নের কাছে যায়। রাগ আর সামলাতে না পেরে অয়ন কে নিজের দিকে জোরে ঘুরিয়ে আনে। তারপর তার কান থেকে ফোন নিয়ে সোজা একটা আছাড় মারে নিচে। ফোন ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে যায়। অয়ন তো হাবলাকান্তের মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আর দিয়া সোজা কথা রাগে ফুসছে।
অয়ন;; কি হলো এটা?
দিয়া;; আপনার মুন্ডু টা হয়েছে।
অয়ন;; মানে কি! বলা নেই কওয়া নেই। এভাবে এসে ফোন ভেঙে ফাললে কেনো! আজব।
দিয়া;; আজব তাই না আজব! আর এই কয়েকটা দিন যাবত আপনি যা করে আসছেন এগুলো কি হ্যাঁ? এগুলো কি? ফোন একটা মুহুর্তের জন্যও হাত ছাড়া করেন না, সারাদিন কানের সাথে ফোন কে চিপকেই রাখেন। এতো হেসে হেসে কিসের কথা, এতো কিসের কথা! নিজে সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও কথা বলেন না। আজকে সব বলবেন আমায় সব। তা নাহলে গালি দিবো, ভয়ংকর গালি। সব আইরাতের কাছ থেকে শিখে এসেছি।
অয়ন;; কুল কুল কুল।
দিয়া;; রাখেন আপনার কুল।
অয়ন;; আরে এভাবে রাগ করলে তো ফেটে যাবে।
দিয়া;; কিইইই!
অয়ন;; চুপ চুপ।
দিয়া এবার চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয়। নিজেকে যথেষ্ট ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু হয় উল্টো টা। নিজেকে শান্ত করতে গিয়ে দিয়ার চোখই ভিজে আসে। যেনো সব রাগ চোখের জল হয়ে বের হয়ে এলো। তবুও চোখ বন্ধ রেখেই অয়নের পাশ কেটে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। বাতাসে দিয়ার চুলগুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। অন্য পাশে মাথা ঘুরিয়ে চোখের কার্ণিশে আশা অশ্রু ফোটা গুলো মুছে ফেলে। বার কয়েক নাক টান দেয়। অয়ন দিয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। সে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই দিয়া কিছুটা ভরাট কন্ঠে বলে ওঠে….
দিয়া;; দেখুন অয়ন আমি জানি না আপনার মনে কি আছে বা আপনি আসলে কি চান। কি এক্সপেক্ট করেন। আমি জানি যে আপনি আর আমি একসাথে থাকলেই শুধু ঝগড়া বেধে যায়। কিন্তু ঝগড়া গুলোও যে আমার বড্ড বেশি ভালো লাগে। জানি না কীভাবে ভালো লাগতে শুধু করলো। ভালো লাগতে শুরু করলো আপনার নামকে, আপনার করা সব কাজ কে, আপনাকে। আমি জানি না আপনি অন্য কাউকে পছন্দ না আসলে ভালোবাসেন কিনা। আপনার মনে অন্য কেউ রয়েছে কিনা। আমি চাই নি এভাবে বলতে তবে আর পারছি না। অয়ন আমি…
অয়ন;; তোমাকে ভালোবাসি।
অয়নের কথায় অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে দিয়া ফট করে পেছন ঘুরে তাকায়। দিয়ার মাঝে বিচলতা স্পষ্ট। যেনো সে বিশ্বাসই করতে পারছে না। কিন্তু অয়নের মাঝে এমন বিচলতার ছিটেফোটাও নেই। সে তার মতো করেই শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিয়ার দিকে। অয়ন কয়েক কদম এগিয়ে যায় তার দিকে।
অয়ন;; আমি তোমাকে ভালোবাসি দিয়া।
দিয়া;; ক ক কিন্তু আ আপনি তো…
অয়ন;; হুমম এবার বুঝলাম সব ক্লিয়ার করে। শোন ফোনে বেশিক্ষণ যাবত কারো সাথে কথা বলা বা হেসে হেসে বলার মানেই এই না যে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি বা চুটিয়ে প্রেম করছি। এমন টা না। আর হ্যাঁ কয়েক দিন ধরে আমি ফোনে একটু বেশি টাইম দেই। জানি আমি। মিথ্যে বলবো না আমি। হ্যাঁ যার সাথে কথা বলতাম সে একজন মেয়েই।
দিয়া চোখ তুলে তাকায়।
অয়ন;; মেয়েটা আমার কাজিন লাগে। তাও আবার বিবাহিত। আমার থেকে বড়োও। উনার হাসবেন্ড আর্মিতে রয়েছেন। বাসায় এসেছেন প্রায় দু বছর পর। তাই আমাকে জোর দাবি জানাচ্ছে সেখানে বেড়াতে যেতে। সবার সাথেই কথা হয়। তাই একটু বেশিই টাইম দিচ্ছিলাম। আমি ভাবি নি যে তুমি এটাকে অন্য কিছু ভেবে বসবে।
এটা বলেই অয়ন হেসে দেয় ফিক করে। কিন্তু দিয়া তো নিজেই ‘ব’ তে বলদ হয়ে গেলো। যাহ বাবা, কি ভাবলো আর কি হলো।
অয়ন;; তবে একটা দিক দিয়ে ভালোই হলো বলো। তোমাকে জ্যালাস তো ফিল করাতে পেরেছি। এই অনেক। তবে পরিশেষে এই বলবো যে আমি আমার না বলা কথা বলতে পেরেছি। ভালোবাসি আমি তোমায়।
অয়ন দিয়ার দিকে নিজের দুহাত মেলে দাড়ালে দিয়া ছুটে এসে অয়নের বুকে আচড়ে পরে। জড়িয়ে ধরে। এভাবে তারা দুজন কতোক্ষন ছিলো জানা নেই। তখনই ছাদের দরজাতে আইরাত আর অবনি আসে। এসেই দেখে ছাদে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা একে ওপর কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দেখেই আইরাত-অবনি হেসে দেয়। হঠাৎ করেই তাদের দুই প্রেমিক-প্রেমিকার পাশ দিয়ে কারো গলা খাকাড়ির আওয়াজ আসে।
দিয়া;; অয়ন!
অয়ন;; হুমম।
দিয়া;; আপনার কি গলা খারাপ হয়েছে?
অয়ন;; না তো।
আইরাত;; হায়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য় আমার লায়লি-মজনু রে।
আইরাতের কন্ঠ পেয়েও অয়ন আর দিয়া দুজন দুজন কে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দেয়। দুজনেই ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়ায়।
অবনি;; হয়েছে যা দেখার তা দেখে ফেলেছি আর লুকিয়ে লাভ নেই।
আইরাত;; যাক একটা রোমান্টিক সিন তো নজরে পরলো।
অয়ন;; না মানে বউমনি আসলে ইয়ে মানে….
আইরাত;; হয়েছে থাক। দুজনেই নিচে যাও এবার সবাই ডাকছে।
অয়ন-দিয়া জলদি করে চলে যায়। আইরাত আর অবনি হাসছিলো কিন্তু তার মাঝেই আইরাত হঠাৎ তার মুখ টা একেবারে কুচকে দিয়ে একহাত পেটে চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে দ্রুত নিচে ছুটে যেতে লাগে। অববি আগামাথা কিছুই না বুঝে সেও সোজা আইরাতের পিছে পিছে ভৌ দৌড় লাগায়।
।
।
।
।
চলবে~~