#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৯
দেখতে দেখতেই কেটে যায় পাঁচ-পাঁচটে মাস। এই পাঁচটে মাসে পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। আইরাতের পেট বের হয়ে গেছে। আগের আইরাত আর এখনকার আইরাতের মাঝে বেশ তফাৎ। কিন্তু তাতেও যেনো তার সৌন্দর্য ফুটে ওঠেছে দ্বিগুণ হারে। মাত্তৃতের সৌন্দর্য। আব্রাহাম অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ না পরলে অফিস যাওয়া তো বহুত দূর বাইরে অব্দিও যায় না। আব্রাহামের বর্তমানে প্রধান কাজ হচ্ছে আইরাতের দেখভাল করা, তাকেই নিজের পূর্ণ সময় দেওয়া। সকাল-বিকেল দুবেলা আইরাত কে নিয়ে হাঁটতে যাওয়া। আইরাত কে খাইয়ে দেওয়া, সবসময় হাসিখুশি রাখা। বাড়ির সবাই আইরাত কে মাথায় করে রাখে। আইরাতের তো মাঝে মাঝে মনে হয় যে জীবনে একটা হলেও বেশ ভালো কাজ সে করেছিলো তাইতো আজ এমন একটা পরিবার জুটেছে তার কপালে। ভাগ্যবতী সে। আর রইলো আব্রাহামের কথা তো তার মতে আইরাত তার লাকি চার্ম। কেননা নিজের জীবনের সব ভালো ভালো কাজগুলো তার আইরাতের আসার পর থেকেই হয়েছে। আব্রাহাম-আইরাতের রুম ওপর থেকে নিচে শিফট করে নেওয়া হয়েছে। কেননা আইরাত এই সিচুয়েশনে সিড়ি বেয়ে একবার ওপরে ওঠতে আবার নিচে নামতে পারবে না। পারবে না বলতে আব্রাহামই তাকে সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে দেয় না। আর আইরাত তো সারাদিনই টইটই করে ঘুরে। রুমে বসে থাকলে নাকি তার দম আটকে আসে। নিচের রুমে ওঠে পরেছে তারা।
এখন রাতের বেলা। আব্রাহাম একটু ছাদে গিয়েছিলো ফোনে কথা বলতে। একটু সমস্যা হয়েছে। তাই সামলাতে হচ্ছে। আইরাতের সামনেই কথা বলতো কিন্তু তা সে করবে না। কেননা সে বলেছে যে যাই হয়ে যাক না কেনো আইরাতের সামনে আর অন্য কোন ঝামেলা জড়িত কথা বিশেষ করে এইসব খুন-খারাবির প্রসঙ্গ তো তুলবেই না। কথা বলা শেষ করে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগে। যেতে যেতে একজন সার্ভেন্ট কে তাদের রুমে স্যুপ পাঠিয়ে দিতে বলে। রুমে গিয়ে দেখে আইরাত নেই।
আব্রাহাম;; আইরাত!
আইরাত;; হুম হুম।
আব্রাহাম;; এই কোথায় তুমি?
আইরাত;; হুম হুম।
আব্রাহাম;; কিসের হুম হুম!
আব্রাহাম কপাল কুচকে শার্টের হাতা গুলো গুটাতে গুটাতে করিডরের দিকে যায়। গিয়ে দেখে ইলাহি কান্ড। আইরাত হালকা ব্রাউনিশ কালারের গোল একটা দোলনার মাঝে বসে রয়েছে। পিঠের পেছনে একটা বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে আছে। কোলে দুই বয়াম আচার। আব্রাহাম চোখ বড়ো বড়ো করে একবার বয়াম গুলোর দিকে তাকায় আরেকবার আইরাতের মুখের দিকে তাকায়। কিযে একটা অবস্থা,, মুখের আশেপাশে আচার লেগে আছে। মনের সুখে আচার খাচ্ছে। আব্রাহাম তার সামনে গিয়ে দুহাত ভাজ করে দাঁড়ালে আইরাত ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; খেতে তো আর মানা করি না। কিন্তু তাই এতো বেশি কেউ খায়। পেট খারাপ করবে যে।
আইরাত;; এইসব ডিম দুধ স্যুপ, ফল-মূল খেতে আর ভালো লাগে না। কেমন এক আষটে গন্ধ আসে। আমার ভালো লাগে না। তাই একটু টক জাতীয় জিনিস খেলাম আরকি।
আব্রাহাম আইরাতেরপাশে উঁকি দিয়ে দেখে ছোট ছোট আচারের দুই বক্স ইতোমধ্যে শেষ করে ফেলেছে সে। আইরাতের দিকে আরেক নজর তাকালে সে তার বত্রিশ টা দাঁত বের করে হেসে দেয়।
আব্রাহাম;; হেহেহে অনেক হয়েছে হাসা এবার চলো এখান থেকে।
আইরাত;; কোথায় যাবো?
আব্রাহাম;; আমি আরো স্যুপের কথা বলে আসলাম এখন আচার খেয়েছো আবার স্যুপ খেলে এর মাঝে বমি হয়ে যেতে পারে।
ওমনি আইরাত একটা ঢেকুর ছারে।
আব্রাহাম;; 🙂
আইরাত;; 😁
আব্রাহাম একটা টিস্যু এনে আইরাতের মুখটা আলতো করে মুছে দেয়। খেয়াল করে দেখে সে আচারের দাগ লাগিয়ে বসেছে ওরনা তে। আব্রাহাম আইরাতের ওপর থেকে ওরনা টা নিয়ে নেয়। তারপর একটা ঢিলা ঢুলা জামা পরিয়ে দেয়। আধা ঘন্টা যেতে না যেতেই আইরাতের ক্ষিদে লেগে যায়। ফ্রিজে যা ছিলো খিচুড়ি, পাস্তা, বিরিয়ানি সব শেষ। আইরাত তার মতো করে খায় আর আব্রাহাম শুধু গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। খাওয়ার মাঝে আইরাত খাওয়া থামিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে সে মুগ্ধ হয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত চোখের ইশারাতে তাকে জিজ্ঞেস করলে আব্রাহাম মুচকি হাসে, যা তার মুখে দারুন মানায়। আব্রাহামের কাছে মজার ব্যাপার হচ্ছে এটা যে যেই আইরাত আগে ঠিকভাবে একটা প্লেট ভাত অব্দিও খেতে পারতো না সে এখন শুধু খাওয়ার ওপরে থাকে। আয়নার সামনে বসে আছে আইরাত। আর তার পেছনে।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইরাতের চুল আঁচড়ে দিচ্ছে আব্রাহাম। আইরাত তার হাতে একটা বল নিয়ে ঘুরিয়ে যাচ্ছে। তবে আয়নার ওপর পরা আইরাতের প্রতিবিম্বে রয়েছে আব্রাহামের নজর। সে মূলত আইরাতের পেটের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে আব্রাহামের নজর তার দিকেই।
আইরাত;; আচ্ছা আপনি তাকিয়ে থাকেন কেনো শুধু?
আব্রাহাম;; দেখি যে আমার বিবিজান টা আগে থেকে কতোটা পরিবর্তন হয়েছে।
আইরাত;; হুমম, হওয়ারই কথা।
আব্রাহাম;; আমার না কেমন যেনো একটু সন্দেহ হয়।
আইরাত;; কেমন সন্দেহ?
আব্রাহাম;; এইযে তোমার ওপর।
আইরাত;; এমা আমি আবার কি করলাম?
আব্রাহাম আইরাতের চেয়ার টা ধরে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয় তারপর তার সামনে এক হাটু গেড়ে বসে পরে। তার পেটের দুপাশে আলতো করে ধরে চুমু একে দেয়।
আব্রাহাম;; ও তুমি বুঝবে না। চলো।
আইরাত কে নিয়ে শুইয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমের অতলে হারিয়ে যায় সে। তবে ঘুমের মাঝেই কেমন একটু খুতখুত করে ওঠে। আব্রাহাম একটা নরম বালিশ নিয়ে আইরাতের পেটের পাশে দিয়ে দেয় তখন গিয়ে যেনো সে একটু আরাম মতো ঘুমায়। আব্রাহাম এবার আরো একটু কপাল কুচকে তাকায়। আইরাতের প্রেগ্ন্যাসির পাঁচ মাস চলে। তবে পাঁচ মাসের তুলনায় আইরাতের পেট একটু বেশিই বড়ো। অর্থাৎ পাঁচ মাসের তুলনায় কোন গর্ভবতী নারীর পেট এতো টাও বাড়ে না। আর এই পেট নিয়ে এখনই আইরাতের ঘুমোতে অসুবিধে হয়ে গেছে। আব্রাহাম তো এখনই আর ঘুমাবে না। হয়তো বই পড়বে নয়তো ল্যাপটপ ঘাটবে। উঠে করিডরের দিকে যেতেই চোখে বাধে টেবিলের ওপর থাকা ছোট মাপের ক্যালেন্ডার টা। আজ মাসের একদম শেষ দিন। অর্থাৎ কাল আইরাতের প্রেগ্ন্যাসির বয়স ছয় মাসে পরে যাবে। আব্রাহাম একবার পেছন ঘুড়ে ঘুমন্ত আইরাতের দিকে তাকায়। শান্তিতে ঘুমোচ্ছে সে। সময় যেনো সব চোখের পলকে চলে যাচ্ছে। এতো দ্রুত সময় চলাচল করছে যে বুঝাই যাচ্ছে না। আব্রাহাম ভাবলো কাল সকাল বেলাই আইরাত কে নিয়ে একবার ডক্টরের কাছে যাবে। মাঝরাতে ঘুমোতে যায় আব্রাহাম। মাত্র কয়েক ঘন্টা ঘুম হয়েছে তার। ভোর বেলাই আইরাতের ডাকাডাকি শুরু। আব্রাহাম ঘুম ঘুম ভাবে চোখ খুলে দেখে আইরাত তাকিয়ে আছে।
আব্রাহাম;; কি হয়েছে বেবিগার্ল?
আইরাত;; আমি ওয়াসরুমে যাবো দ্রুত।
আব্রাহাম;; ওহ আচ্ছা আচ্ছা তো আগে বলবে তো।
আব্রাহাম দ্রুত উঠে আইরাতের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর আস্তে করে আইরাত কে উঠিয়ে ওয়াসরুমে নিয়ে যায়। ওয়াসরুমে গিয়েই গরগরিয়ে বমি। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের পেছনের চুলগুলো হাত দিয়ে প্যাচিয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর আইরাত চোখে-মুখে পানি দিয়ে দাঁড়ায়। আব্রাহাম টাওয়াল দিয়ে তার মুখ মুছিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল বেশি খারাপ লাগছে?
আইরাত;; না তেমন না তবে কিছুটা খারাপ লাগছে।
আব্রাহাম;; এখন তো ভোর। বাইরে যাবে তুমি হাঁটতে?
আইরাত;; হ্যাঁ চলুন।
আব্রাহাম;; বাইরে গেলে তাও একটু ভালো লাগবে চলো।
আইরাত একটা আকাশি রঙের জামা পরে বাইরে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম আইরাতের একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে, আরেক হাত আইরাতের কোমড়ে ধরে আস্তে আস্তে করে হাঁটছে। কিছু সময় হেঁটে আব্রাহাম বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি এসে আর ভেতরে যায় না তাকে নিয়ে। বাড়ির বাগানেই বেতের চেয়ার গুলোতে বসে পরে। সার্ভেন্ট কে বলে ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসে। বাইরের আবহাওয়া টা বেশ শীতল আজ। আস্তে আস্তে বাড়ির সবাই উঠে পরে। সবাই বাইরে বসেই বেশ সময় আড্ডা দেয়। সকাল যখন বাজে প্রায় সাড়ে এগারোটা তখন আব্রাহাম আইরাত কে গাড়িতে করে নিয়ে হস্পিটালে চলে যায়। আগে থেকেই বলা ছিলো যে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী তার বউ কে নিয়ে চেকাপের জন্য আসছেন তাই ডক্টর আর কোন পেশান্ট দেখেন নি অন্যান্য দিনের মতো। আব্রাহাম এসে আইরাত কে নিয়ে বসে। ডক্টর আইরাত কে নিয়ে আরো ভেতরে গিয়ে কিছু চেকাপ করে। রিপোর্ট আসতেও বেশি একটা সময় লাগে না। আইরাত আব্রাহামের পাশেই বসে ছিলো তখন ডক্টর হাতে কিছু রিপোর্ট এনে নিজের জায়গায় বসে।
ডক্টর;; আব্রাহাম স্যার প্রথমে আপনার কথা শুনি বলুন।
আব্রাহাম;; স্বাভাবিকের তুলনায় আইরাতের পেট একটু বেশিই বড়ো বলে মনে হয় না!
ডক্টর;; মনে তো হবেই। কারণ মেহমান তো আর একজন আসছে না।
আইরাত;; ম মা মানে?
ডক্টর একগাল হেসে দেন।
ডক্টর;; মানে এই যে আপনারা উভয়ের অনেক বেশিই লাকি। আইরাত ম্যাম আপনি দুটো জমজ বাচ্চার মা হবেন। টুইন বেবি হবে। পেট এখনই এতো বড়ো লাগার কারণ হচ্ছে বাচ্চা দুজন। আর বাচ্চা দুজনেই বেশ হাট্টা-কাট্টা। স্বাস্থ্য আছে ভালো।
আইরাত;; গোলুমোলু 🥺❤️।
আব্রাহাম;; Double Trouble…
আইরাত ফিক করে হেসে দেয়।
অবশেষে তারা বেরিয়ে আসে। আইরাত শুধু আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম কে দেখে মনে হচ্ছে যে সে একটা ঘোরের মাঝে আছে। তারা গাড়িতে ওঠে পরে।
আইরাত;; জামাইজান!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; আমার দিকে তাকান।
আব্রাহাম তাকায়। আইরাত আব্রাহামের গালে নিজের দুহাত রেখে বলে…
আইরাত;; আপনি কি হ্যাপি না!
আব্রাহাম নিজের গাল থেকে আইরাতের দুহাত সরিয়ে তাকে নিজের বুকের সাথে ঝাপ্টে জড়িয়ে ধরে।
আব্রাহাম;; আমি বুঝতে পারছি না যে কি বলবো। আচ্ছা আসলেই কি আমি এত্তো এত্তো বেশি সুখের ভাগিদার? আমার বিশ্বাস হয় না যে আল্লাহ এত্তো খুশি একসাথে আমাকে দান করছে। আমার কাছে ভাষা নেই আমার খুশি প্রকাশ করার জন্য,, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি আমি তাই চুপ করে আছি। জীবনে যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসলাম তাকেই নিজের করে পেলাম, এত্তো সুন্দর একটা পরিবার পেলাম আর এখন কিনা আমার বাচ্চা।
আইরাত;; বাচ্চারা!
আব্রাহাম হেসে দেয়। একশ একটা চুমু দিয়ে দেয়। আব্রাহাম আইরাত কে শুধু থেকে থেকে একটা করে লুক দিচ্ছে। যার মানে আইরাত বেশ ভালো করেই জানে। এখন আইরাতের ওপর কেয়ারিং আর নজরদারি আরো গাঢ় হতে যাচ্ছে। আব্রাহাম-আইরাত দুজনেই বেশ এক্সসাইটেড। বাড়ি গিয়ে সবাই কে বললে না জানি সবাই কেমন রিয়েকশন দিবে। খুশিতে সবাই পাগল না হয়ে গেলেই হয়েছে।
।
।
।
।
চলবে~~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬০
খুশিতে আত্নহারা সবাই। মাঝে মাঝে তো এও মনে হয় যে এত্তো খুশি সহ্য করার মতোও ধৈর্যশক্তি তাদের নেই। এই মাত্রাতিরিক্ত খুশিতে আবার তাদের নিজেদেরই নজর না লেগে গেলেই হয়। আব্রাহাম-আইরাত গিয়ে যখন সবাই কে বললো যে টুইন বেবি তখন বাড়িতে যেনো সবার মাঝে খুশির রোল পরে গেলো। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে অয়ন-দিয়ার বিয়ে অব্দিও ঠিক হয়ে গেছে। আপাতত বাগদান করে রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে। অন্য কাউকে দেখার যেনো কারো কাছে সময়ই নেই। সবাই আইরাত কে নিয়েই ব্যাস্ত। তার প্রেগ্ন্যাসির সাত মাস চলে। তাও যেনো শেষ হতে চললো। আব্রাহাম আইরাতের সাথে লাইক আঠার মতো লেগে থাকে। আইরাত কে সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে ফ্রেশ করা থেকে শুরু করে আবার রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগ অব্দি সব কাজ আব্রাহাম নিজে করে। তবে আইরাতের ইদানীং বেশ কষ্ট হয়। বেশ বড়ো পেট, আবার তার মাঝে হালকা হালকা ব্যাথা করে। এমতাবস্থায় উঠা-বসা, বা অধিক নড়াচড়া বেশ কষ্টসাধ্য আইরাতের পক্ষে। হাঁটতে গেলেও একহাত পেটের ওপর আলতো করে রেখে তারপর হাঁটতে হয়। মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত সবত্র পরিবর্তন এসেছে তার। বেশ মোটাসোটা হয়েছে আইরাত। লাইক গোলুমোলু স্কয়ার। গালের দিকে মাংস বেড়েছে। দুধে-আলতা গায়ের রঙ। ঘন চুলগুলো অনেক বড়ো হয়েছে। কোমড় ছাড়িয়ে আরো নিচে নেমে গিয়েছে। আব্রাহামের সবথেকে পছন্দের হচ্ছে আইরাতের চুলগুলো আর তার গাল। আইরাত যে ঠিক কবে তার চুলে হাত দিয়েছিলো মনে নেই। চুলে তেল দেওয়া, বেধে দেওয়া সব আব্রাহামই করে দেয়। ইদানীং আব্রাহাম আইরাত কে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গাঢ় ধূসর রঙের, গোলাপি-মিষ্টি রঙের আর বিশেষ করে সাদা ধবধবে রঙের জামা পড়িয়ে দেয় বেশি। তার কাছে নাকি এভাবেই আইরাত কে ভালো লাগে। চুলগুলো হালকা করে বেধে বাকি গুলো ছেড়ে দিয়ে, ওরনা টা একপাশে মেরে, সাদা জামা পরে সারা বাড়ি টইটই করে ঘুরে বেড়ায় আইরাত। এক কথায় তাকে মায়াবতী লাগে। একরাশ মায়া-স্নিগ্ধতা কাজ করে তার মাঝে। আর আইরাত কে দেখে নিজের দুই চোখ ভরিয়ে তোলে আব্রাহাম। তবে নিজের দেহে পরিবর্তন আসলেও নিজের স্বভাব, আচার-আচরণে কোন পার্থক্য আসে নি। সেই আগের মতোই চটপটে আর চঞ্চল আইরাত। সবাই হলরুমে বসে ছিলো। আব্রাহামও হলরুমে আইরাত তখন রুম থেকে বেরিয়ে আসে। আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে যেতে লাগে। আর সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে, আইরাত তা খেয়াল করে বলে….
আইরাত;; ব্যাপার কি! সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে?
আইরাত এসে সোফাতে আব্রাহামের পাশে বসে পরে। আর আব্রাহাম আইরাতের গালগুলো টেনে দেয়।
আব্রাহাম;; ওরে আমার পেঙ্গুইন রে🐧।
আইরাত মুখটা খানিক কুচকে সরিয়ে আনে।
আইরাত;; আমার গালগুলোকে কি পেয়েছেন টা কি আপনি হ্যাঁ?
আব্রাহাম;; আমার সম্পত্তি।
আইরাত;; ওই ওইই ওইইই।
আব্রাহাম;; হুমমম।
আইরাত;; আমি না বাইরে যাবো।
আব্রাহাম;; না।
আইরাত;; নিয়ে যান না প্লিইইইইইজ।
আব্রাহাম;; কোথায় যাবে?
আইরাত;; বাগানের দিকে। নয়তো আমি একাই যাই!
আব্রাহাম;; হুম থাক হয়েছে, আমিই নিয়ে যাচ্ছি।
আব্রাহাম উঠে আইরাত কে ধরে। আইরাতও আস্তে করে উঠে আব্রাহামের সাথে চলে যায়। বাইরে গিয়ে বাগানের পাশে দোলনা টাতে বসে পরে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল তুমি বসো, আমি আসছি।
আইরাত;; কৈ যান?
আব্রাহাম;; আসছি।
কয়েক মিনিট পর আব্রাহাম তার হাতে একটা বাটি নিয়ে আসে। তাতে ধোঁয়া ওঠানো গরম খিচুড়ি। দোলনাতে আইরাতের পাশে বসে পরে। চামচে করে খিচুড়ি তুলে তাতে হালকা ফু দিতে দিতে আইরাতের মুখে পুড়ে দিচ্ছে। আর আইরাত নিজের মতো বকরবকর করছে + খাচ্ছে। আর আব্রাহাম তার কথামতো শুধু হুমম হুমম করে যাচ্ছে।
আব্রাহাম;; আরো আনবো?
আইরাত;; নাহ।
আব্রাহাম;; এখন নামো তো দোলনা থেকে।
আইরাত;; কেনো!
আব্রাহাম;; খেয়েছো এখন এক জায়গায় বেশি বসে থেকো না। উঠে আস্তে আস্তে চারিপাশে একটু হাঁটো। নয়তো পরে নড়তে পারবে না জান। অস্বস্তি লাগবে তোমারই।
আইরাত;; জামাইজান!
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; আমি কি অনেক বেশিই মোটা হয়ে গেছি ☹️?
আব্রাহাম আইরাতের কাছে এগিয়ে আসে। মুচকি হেসে আইরাতের মাথার দুপাশে হাত রেখে কপালে চুমু এঁকে দেয়।
আব্রাহাম;; প্রথমত আমার আইরাত যেমনই হোক না কেনো! চায় সে মোটা হোক, চিকন হোক সাদা-কালো যাই হোক না কেনো আমার কাছে তোমার থেকে সুন্দর আর কেউ না কেউই না। তুমি আমার জন্য পারফেক্ট, আমার জন্য বেস্ট। আর রইলো মোটার কথা তো তুমি তো জানোই যে আমার এতো পাটকাঠি ভালো লাগে না। আমার বউ গোলুমোলু থাকবে এটাই। আর এমনটাই তুমি।দ্বিতীয়ত তুমি মোটা না জান আমার। এই সময়ে এমন চেঞ্জ আসা স্বাভাবিক। তার মধ্যে আমরা টুইন বেবির প্যারেন্টস্ হতে যাচ্ছি, তো হ্যাঁ এখন মোটা হওয়া নরমাল। তোমার ধারনা নেই, তোমার বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই যে তোমাকে কি পরিমাণ সুন্দর আর কিউট লাগে এমন ভাবে জানপাখি। আমি তো শুধু একটা কথাই সেই কবে থেকে ভাবছি।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; তোমাকে কি যে সুন্দর লাগে, তাই আমি একটা কাজ করবো। তোমাকে সবসময় আমি প্রেগন্যান্ট বানিয়েই রাখবো।
আইরাত;; ইশশশশ কিসব বলেন আপনি। লজ্জা-শরমের বালাই নেই। চুপ করুন।
আব্রাহাম হেসে দেয়।
আইরাত;; ব্যা 😝
আব্রাহাম;; মন তো চায় খেয়ে ফেলি। পুরাই রসোগোল্লা।
আইরাত;; এহহহহহহ আসছে রে।
আইরাত সেখান থেকে চলে আসতে ধরে কিন্তু আব্রাহাম তার হাত ধরে ফেলে। আইরাতের সামনে গিয়ে নিজের হাত দিয়ে তার কোমড়ে ধরে নিজের মাথা টা তার মাথার সাথে ঠেকিয়ে নেয়।
আব্রাহাম;; আইরাত!
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; বেবিরা আসার পর কি আমার ওপর তোমার ভালোবাসা কমে যাবে?
আইরাত;; যদি বলি হ্যাঁ তো?
আব্রাহাম মাথা তুলে তাকায়। হালকা হাফ ছেড়ে বলে।
আব্রাহাম;; হাহহহহ, কি আর করার তখন। কিছুই না।
আইরাত হেসে দিয়ে এক কদম আব্রাহামের দিকে এগিয়ে আসে। আব্রাহামের দুগালে হাত রেখে বলে…
আইরাত;; আব্রাহাম আমার পুরো দুনিয়া আপনি। আমার সব। আব্রাহাম কে ছাড়া আইরাত কে কল্পনাও করা সম্ভব নয়। আর আপনি কিনা বলছেন যে বেবিরা আসলে ভালোবাসা আমার কমে যাবে আপনার জন্য। হাহাহাহাহাহা, আজ বুঝলাম আপনার মাঝে বাচ্চামো স্বভাব কোথাও না কোথাও এখনো তো বাকি আছেই।
আব্রাহাম;; হুমম। এবার ভেতরে যাওয়া যাক!
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম-আইরাত ভেতরে যেতে ধরেছিলো তখনই গাড়ির হর্ণ বাজে। পেছন ঘুরে দেখে বাইরে গাড়ি থেকে কৌশল, অবনি আর দিয়া নেমে এলো। হাতে এত্তো গুলো ব্যাগ। দ্রুত স্টাফ রা এসে সেগুলো ধরে।
আইরাত;; কিরে কোথায় গিয়েছিলি তোরা?
অবনি;; আর বলিস না কিছু জিনিস বাকি ছিলো সেগুলোই আনলাম।
আব্রাহাম;; আমি ডায়মন্ডের রিং অর্ডার করেছি। সেগুলো নিয়ে হয়তো মেনেজার আজ আসবেন বাসায়। দিয়া আর অয়নের বাগদানের জন্য রিং।
কৌশল;; হ্যাঁ আর বাকিগুলো আমরা গিয়ে নিয়ে আনলাম।
আব্রাহাম;; তো হবু জামাই কোথায়?
কৌশল;; অয়ন তো বের হয়েছিলো আমাদের সাথেই তবে অফিসের সামনে নেমে পরেছে। দেখানে রোদেলা আর রাশেদও আছে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা এখন ঘরে চল।
সবাই এক এক করে ভেতরে যেতে লাগে। সবার পেছনে আব্রাহাম ছিলো। সে পেছন ঘুরে মেইন গেটের দিকে তাকায়। দেখে দুটো কালো কালারের বাইক সেখান দিয়ে গেলো। এমন মনে হলো যে তারা এতোক্ষণ এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আব্রাহামের চাওনি দেখে সেখান থেকে দ্রুত কেটে পরলো। আব্রাহামের ব্যাপার টা কেমন সুবিধার মনে হলো না। আব্রাহাম বাইরের গার্ড দের দিকে এগিয়ে গিয়ে নজরদারি বাড়ির দিকে আরো বাড়িয়ে দিতে বললো। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। সে মনে প্রাণে চাচ্ছে যে তার আগের রুপ যেনো আবার ফিরে না আসে। কারণ আইরাত ভয় পায় তাতে আর আব্রাহাম চায় না যে অন্তত নিজের জন্য আইরাত ভয় পাক। সে খুব করে চাচ্ছে যে কোন প্রকার কোন ঝামেলা যেনো না হয়। সবাই হলরুমে গিয়ে বসে।
দিয়া;; আইরু দেখ দেখ এগুলো সব তোর জন্য এনেছি আমি।
আইরাত;; কি এগুলো?
দিয়া;; খুলে দেখ।
কৌশল;; বউমনি এই নাও।
আইরাত;; চকোলেট!
কৌশল;; হ্যাঁ।
আইরাত;; থাংকু, থাংকু ভাই ☺️।
আব্রাহাম তখন ভেতরে আসে। এসেই দেখে আইরাত এক বক্স চকোলেট পেয়ে খুশিতে গদগদ।
আব্রাহামের কথা কে শুনে। এতো চকোলেট খেলে পরে আর অন্য খাবার খেতে চায় না আইরাত। এইযে তাকে না বলে কিন্তু সে এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে সুন্দর করে তা বের করে দেয়। আর সবাই কে মানা করলেও আইরাত হয়তো অয়ন বা কৌশল কে বলে চকোলেট নিয়ে আসেই। তারাও লুকিয়ে লুকিয়ে আইরাত কে এনে দেয় যা যা খেতে চায় সব। আইরাত চকোলেট খাচ্ছে আর দিয়ার দেওয়া জিনিস গুলো খুলে খুলে দেখছে। দিয়া আর অবনি পারে নি পুরো দোকান তুলে আনতে। বেবিদের সব জিনিস, কাপড়-চোপড়, ফিডার, ডায়পার অব্দিও সব নিয়ে এসে পরেছে। এগুলো দেখে আইরাত হাসতে হাসতে শেষ।
ইলা;; হেসে লাভ নেই মনা। বাচ্চাদের এগুলোই পড়াতে হবে।
আইরাত;; না না আমি এই ভেবে হাসছি যে বাচ্চাই এলো না এখনই এইসব কিনে নিয়ে এসেছে এই দুই পাগলি।
অবনি;; আরে কি করবো। শো-রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন চোখে পরলো বেশ মনে ধরেছে তাই সোজা গিয়ে তুলে নিলাম।
সবার মাঝে একটা হাসির রোল পরে যায়। তার মাঝেই আব্রাহামের ফোন বেজে ওঠে, সে হাতে ফোন নিয়ে কথা বলতে বলতে চলে যায়। তা আইরাতের নজর কাড়ে কিন্তু পরক্ষণেই আবার দিয়ার ডাকে সে বাকিদের সাথে খোশগল্পে মেতে ওঠে।
।
।
।
।
চলবে~~