তুমি যে আমার পর্ব-২৭+২৮

0
788

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_27

ড্রয়িংরুমে মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে বর্ষা। নিবিড় চৌধুরী বুকে ব্যথা নিয়ে আক্ষেপ করে বলছে,

‘আমার ভুলের শাস্তি আমার মেয়েকে পেতে হলো কেন? আমার চাকরি চলে গেছে যে তো! আমার সবকিছু শেষ হতো দরকার হলে এর জন্য আমার জীবন চলে যেতো কিন্তু তার বদলে মেয়ের এত বড় সর্বনাশ কেন হলো? আমার ভুলের জন্য আজ আমার বর্ষার এতো বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।নিজেকে আমি কি করে ক্ষমা করবো‌!’

বর্ষার মা মেয়ের বুকে জরিয়ে নিলেন। তিনিও কাঁদছে।
বর্ষা চুপচাপ মাথা মায়ের বুকে দিয়ে আছে। নিবিড় চৌধুরী মেয়ের সামনে বসে থাকতে পারছে না। তিনি বুকের ব্যাথা চেপে রুমে চলে এলো। বিছানায় শুয়ে পরলো। মেয়ের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো শুধু তার জন্য। আবার বাসা থেকেও নাকি চলে যেতে হবে কোথায় যাবে সে। বুকের ব্যাথা বাড়ছে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে নিবিড় চৌধুরী হার্ট অ্যাটাক করেন রাতেই। বর্ষা ও ওর মা নিবিড় চৌধুরীর অবস্থা দেখে ভয়ে আতকে উঠে। রাতে দুজন মেয়ে মানুষ কি করবে? বর্ষার মা স্বামীর পাশে বসে কাঁদতে থাকে। বর্ষা দৌড়ে দাড়োয়ান চাচাকে ডেকে নিয়ে আসে।
তারপর ড্রাইভার ও দাড়োয়ান এর সাহায্যে রাতেই নিবিড় চৌধুরীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। স্বামীর এই অবস্থা মানতে পারেনা বর্ষার মা তিনি ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকেও ভর্তি করা হয়।
আর বর্ষা বাবা- মায়ের এই করুন অবস্থায় হাসপাতালের কডিটড়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তখন একটা পরিচিত মুখ দেখতে পায়।
সে আর কেউ না নিদ্রা। নিদ্রা এগিয়ে আসতেই বর্ষা তাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগে। নিদ্রা বর্ষার মাথায় হাত রেখে শান্ত হতে বলে,

‘ শান্ত হ‌ও বর্ষা। তোমাকে এখন শক্ত হতে হবে। তুমি ভেঙে পরলে আঙ্কেল আন্টিকে দেখবে কে?’

‘ আমি শান্ত হতে পারছিনা। আমাদের সাথে এমন কেন হচ্ছে আপু। একে একে সব কষ্ট আমাদের আস্টেপৃষ্টে ধরছে কেন? সব দিক থেকে বিপদ আমাদের ঘিরে ধরেছে।’

‘ সব ঠিক হয়ে যাবে। পানি খাও ধরো।’

বলেই নিজের থেকে বর্ষাকে ছাড়িয়ে নিলো নিদ্রা আর পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বর্ষার গলা শুকিয়ে গেছে। ও ঢকঢক করে পুরোটাই খেয়ে ফেলল।
নিদ্রা ওর পাশে বসলো। কি বলে শান্তনা দেবে নিদ্রার জানা নেই। নিদ্রা সুস্থ হয়েই হসপিটালে চলে এসেছিলো কাজ বেশি থাকায় রাত হয়ে গেছে।
বাসায় চলে যাচ্ছিল তখন বর্ষাকে ও ওর পরিবারের কে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায়। কাছে গিয়ে সব জানতে পেরে নিজেই বর্ষার মাকে দেখেছে‌। বর্ষার বাবাকে সিনিয়র ডাক্তার দেখছেন। বর্ষা একা ছিলো এখানে ভেঙে পরেছিল কিন্তু পরিচিত নিদ্রা কে পেয়ে একটু ভরসা পেয়েছে। বিয়ের সময় নিদ্রার সাথে খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়েছে বর্ষার সাথে।ও নিদ্রাকে নিজের বড় বোন ভাবে তাই নিদ্রাকে পেয়ে কিছুটা স্বস্তি বোধ করছে।

‘ মাম্মা কেমন আছে আপু?’

‘ আন্টি সুস্থ আছে এখন। কিন্তু ওনার জন্য এই চিন্তা করাটা রিক্স। আগেও এর জন্য স্টক করেছেন উনি। তাই উনাকে চিন্তা থেকে দূরে রাখাটা বেটার।’

‘ দূরে কি করে রাখবো। সমস্ত দুশ্চিন্তা তো আমাদের জরিয়ে আছে। এটা থেকে মুক্তি নাই।’

নিদ্রা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। তাই চুপ করেই আছে। বর্ষার ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ও তাকিয়ে আছে বর্ষার কান্না রত মুখের দিকে। মা যেদিন মারা গেলো আমিও এমন অবস্থা ছিলাম।কেউ পাশে ছিলো না। একা বসে কেদেছিলাম আজ নিজের জায়গায় বর্ষাকে দেখতে পাচ্ছে ও বর্ষার কষ্ট টা উপলব্ধি করতে পারছে কিন্তু তাকে শান্ত করতে পারছে না।

নিদ্রার চোখেও জল চলে এলো। কিছু বলতে যাবে ওর ফোন বেজে উঠলো। অভ্র কল‌ করেছে।ও রিসিভ করলো না কেটে দিলো।পর পর কয়েকবার কল এলো তাই বাধ্য হয়ে রিসিভ করে সরে দাঁড়ালো আর কানে নিয়ে বললো,

‘ কি হয়েছে কেটে দিচ্ছি দেখছিস না। তাও কল করছিস কেন?’

‘ কাটছিস কেন?আর কোথায় তুই এই শরীর নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিস কেন? আবার রাত হয়েছে গেছে এখনো বাসায় কেন আসিস নি?’

‘ আমি আর আসবো না।আমি আমার বাসায় ফিরে যাব।’

‘ হোয়াট?’

‘ রাখসি আমি বিজি আছি।’

‘ ওয়েট ওয়েট তুই কোথায় আছিস এখন?’

‘ হাসপাতালে।’

বলেই নিদ্রা কল কেটে দিলো। বর্ষাকে একা রেখে যেতে ও পারছে না। মেয়েটার মনের অবস্থা ভালো নাই তাই পাশে বসে র‌ইলো‌। ডাক্তার বের হলো অনেকক্ষণ পর বর্ষার বাবার জ্ঞান ফিরেনি। জ্ঞান ফেরা না পর্যন্ত কিছু বলতে পারছে না‌‌। শত বলেও বর্ষাকে কিছু খাওয়াতে পারলোনা। অভ্র এলো আধা ঘন্টা পর এসেই বর্ষাকে দেখে চমকালো তারপর নিদ্রার থেকে সব শুনলো। নিদ্রাকে একপাশে টেনে নিয়ে গেলো অভ্র।

‘ কি হয়েছে টানাটানি করছিস কেন?’

‘ বাসায় চল।’

‘ সরি আমি আর ওই বাসায় যাব না। তোদের অনেক কষ্ট দিয়েছে অনেক বিরক্ত করেছি। আর করতে চাইনা।’

‘ পাগলামো করিস না‌। বাসায় পুলিশ এসেছে!

‘ মানে কেন? অবাক হয়ে বলল নিদ্রা।

‘ বাসায় গেলেই বুঝতে পারবি। চল আমার সাথে!’

‘ কিন্তু মেয়েটাকে এইভাবে একা রেখে..

‘ ওর আত্নীয় কাউকে আসতে বলি।’

‘ হুম।’

বর্ষাকে বলে চলে গেল নিদ্রা রা।
বর্ষা ওর মামা দের কল করেছিলো কেউ আসবে না। বিপদের সময় কেউ পাশে থাকে না। বর্ষা একাই বসে আছে ওর মাথা ব্যথা করছে ও মাথা চেপে চোখ বন্ধ করে আছে। তখন হাসপাতালে পুলিশ এসে ভিড় করা শুরু করলো।
নিবিড় চৌধুরী কে সব সময় পুলিশের নজরে রাখা হয়েছে। তার এই অবস্থায় কথা জানতে পেরেই সবাই চলে এসেছে। বর্ষাকে সবাই জেরা করা শুরু করলো। বর্ষা এখন বসে থাকতে পারছে না একেতে মাথা ধরেছে তার উপর বাবা মায়ের এই অবস্থা সেখানে এই প্রশ্ন গুলো একটু ও পছন্দ হচ্ছে না ও বিরক্ত হয়ে চুপ করে আছে।

‘ হঠাৎ নিবিড় চৌধুরী হার্ট অ্যাটাক কেন করলো? কি হয়েছিলো বাসায় কেউ কি এসেছিলো? বা কারো সাথে ফোনে ঝগড়া হয়েছে?’

নানা রকম এর প্রশ্ন করে যাচ্ছে বর্ষাকে। কোন উওর দিচ্ছে না দেখে সবাই ব্যর্থ হয়ে চলে গেলো।
দুইজন পুলিশ কে নিবিড় চৌধুরী এর জ্ঞান ফেরার জন্য রেখে গেলো। জ্ঞান ফিরলেই যাতে খবর দেয়।

নিদ্রা বাসায় এসে দেখলো তিনজন পুলিশ বসে আছে সোফায়। আর আয়েশ করে কফি খাচ্ছে। ও তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এগিয়ে এলো।
আদিল খুব তৃপ্তি করেই কফি খাচ্ছে। তখন কাউকে আসতে দেখে মাথা তুলে সামনে থাকালো। নিদ্রার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো আর দাঁড়িয়ে পরলো। বিষ্ময়ে ওর হাতে থেকে কফির কাপ নিচে পরে গেলো আর ঝনঝন শব্দ করে তা ভেঙে গেলো।
ও অবাক নয়নে নিদ্রার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আর নিদ্রা হাঁটা থামিয়ে আদিল এর হতভম্ব হ‌ওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। মাথা নিচু করে ভাঙা কাপের দিকে তাকায়। বাসায় সবাই অবাক হয়েছে আদিল এর রিয়াকশন দেখে।
আদিল এর পাশ থেকে একজন আদিলের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

‘ স্যার আর ইউ ওকে! আপনি এমন করছেন কেন?’

আদিল হকচকিয়ে যায়। নিজেকে কন্ট্রোল করে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ সরি, আপনাদের কাপটা ভেঙে ফেললাম।’

বলেই গম্ভীর করে ফেললো মুখটা আদিল তারপর নিদ্রার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ আপনি মিসেস অভ্র?’

নিদ্রা হ্যা বলে। তারপর বলে,

‘ আপনি যাদের কথার ভিত্তিতে এখানে এসেছেন সেটা সম্পূর্ণ ভুল অফিসার!’

আদিল এগিয়ে এসে নিদ্রা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,

‘ আপনি কি বলতে চাইছেন?’

‘ আমাকে জোর করে বিয়ের আসরে বসানো হয়নি। আমি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি। আর ডির্বোস ও নিজের ইচ্ছায় ই দেবো। এখানে অভ্র বা ওর পরিবারের কোন দোষ নাই। তারা আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। কোন রকম অত্যাচার করেনি। আমার চাচা চাচি নিজের স্বার্থ এ এসব করেছে। আপনি অভ্রকে জেলে নেবেন না প্লিজ।

‘ সরি, আমরা আপনার কথা রাখতে পারবো না‌। কেস যেহেতু করা হয়েছে মিস্টার অভ্রকে আমাদের সাথে যেতেই হবে।’

‘ এটা কি ধরনের কথা আমি নিজে বলছি তো এসব ওদের জোর জবরদস্তি নাই। আমার সম্মতি আছে। আর সম্পর্ক থেকে আমি বের হতে চাইছি।’

‘ এটাই সমস্যা। আপনারা যদি একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে আপনার কথা মেনে নিতাম কিন্তু আপনাদের আলাদা হ‌ওয়ার কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে কেসটা করা ঠিক হয়েছে।আর আপনি সত্যি বলছেন তার কি গ্যারান্টি এমন ও তো হতে পারে আপনার স্বামী আপনাকে ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে এসব বলাচ্ছে নিজে বাঁচতে ‌’

‘ আপনারা আমার কথা বিশ্বাস না করে তাদের কথা কেন বিশ্বাস করছেন যারা আমাকে এক দন্ড সহ্য করতে পারে না। কষ্ট এরা না তারা আমাকে দিয়েছে। আর আপনি তাদের কথায় এখানে আমার হাজব্যান্ড কে গ্রেফতার করতে এসেছে কেন? আর অভ্র আমার বন্ধু ওকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি ওকে আমি বন্ধুর বেশি ভাবিনা তাই ডির্ভোস দিয়ে আলাদা হবে যাবো এতে এতো সমস্যা কোথায়?’

‘ আপনার স্বামী অন্য কাউকে ভালোবাসে সে জন্য আপনাকে ডিভোর্স দিতে চায় শুনছি আমরা।’

নিদ্রা , অভ্র ও ওর পরিবারের সবাই পুলিশ কে বুঝানো চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।অভ্রকে জেলে নিয়ে গেছে।নিদ্রা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো সোফায়। এখন অভ্রকে জেলে থেকে ছাড়াবো কি করে ভাবছে নিদ্রা।

আদিল যাওয়ার আগেও নিদ্রার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলো যা নিদ্রার চোখ এড়ায়নি।

#চলবে……….

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_28

পুলিশ চলে যাওয়ার এক ঘন্টা পর নিদ্রা ও অভ্রের বড় ভাই থানায় এসে হাজির হয়। নিদ্রা থানায় গিয়ে জানায় ও অভ্রকে ডির্ভোস দেবে না। নিদ্রার কথায় অভ্র কে ছেড়ে দেয়। নিদ্রার সিদ্ধান্ত শুনে অভ্র অবাক হয়ে যায়। হতভম্ব হয়ে ভাই এর সাথে আগে আগে বেরিয়ে আসে। নিদ্রা তখনও আদিল এর কেবিন এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদিল তা দেখে বললো,

‘ কিছু বলবেন মিসেস অভ্র?’

নিদ্রা মাথা নেড়ে না বলে পেছনে ঘুরে চলে যেতে ধরে তখন আদিল আবার ডেকে উঠে নিদ্রাকে চমকে দাঁড়িয়ে পরে নিদ্রা। আদিলের কেবিনে কেউ নাই ও আশেপাশে লক্ষ্য করে নিদ্রার সামনে এসে আমতা আমতা করে বলে,

‘ আপনার হাতটা একটু দেখি।’

নিদ্রা আদিলের কথা শুনে চমকে উঠে। চোখ বড় করে বলে, ‘ হোয়াট?’

আদিল নিজের হাত বাড়িয়ে নিদ্রার বাম হাত টেনে ধরে। নিদ্রা লাফিয়ে উঠে তা দেখে চেঁচিয়ে উঠে বলে,

‘ কি করছেন কি হাত ছাড়ুন? আমার হাত কেন ধরেছেন? কি অসভ্যতামি হচ্ছে ছাড়ুন হাত?

নিদ্রা রাগে গজগজ করছে। কতো বড় অসভ্য ছেলে হলে এভাবে একটা মেয়ের হাত ধরা যায়।
আদিল কোন রিয়াকশন না করে হাতের মুঠো খুলে কি যেন দেখলো তারপর ছেড়ে দিয়ে ছলছল চোখে তাকালো নিদ্রার মুখের দিকে।
নিদ্রা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলো। হাত আলগা হতেই ছাড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় আদিল এর দিকে কিন্তু আদিলের ছলছল চোখ দেখে থমকে যায়। রাগ টা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। ও আদিলের মলিন মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার মতিগতি কিছুই বুঝছেনা‌‌ নিদ্রা।

‘ কাঁদছেন কেন? ‘

নিদ্রার কথা শুনে আদিল চোখের জল মুছে নেয় ঝটপট। তারপর অন্য দিকে ঘুরে বলে,

‘ আপনার হাত ধরার জন্য সরি। আমি কোন খারাপ মতলবে আপনার হাত ধরি নি। আমাকে খারাপ ভাববেন না। আপনি এখন আসতে পারেন।’

নিদ্রা স্তব্ধ হয়ে কথা শুনছে।ওর মনে হয়না অফিসার আদিল ওকে মিথ্যা বলছে। কেন জানি কথাগুলো বিশ্বাস হলো খুব। ও আর হাত ধরা নিয়ে কিছু বলল না।
শুধু জিজ্ঞেস করল, ‘ কারণটা জানতে পারি কি?’

আদিল অন্যদিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘ আপনার সাথে আমার খুব প্রিয় একজন মানুষের সাথে খুব মিল। যাকে আমি অনেক দিন আগে হারিয়ে ফেলেছি। আপনি দেখতে অবিকল তার মতো।তাই একটা জিনিস আপনার হাতে চেক করছিলাম। এভাবে আপনার হাত ধরা উচিত হয়নি। আমাকে ক্ষমা করবেন।’

নিদ্রা আর কিছু না বলে বেরিয়ে আসে থানা থেকে।বাইরে এসে দেখে অভ্র আর ওর ভাই দাঁড়িয়ে আছে। নিদ্রা তাদের বাসায় চলে যেতে বলে।

‘তুই যাবি না?’

‘যাব কিন্তু তার আগে আমার এক জায়গায় যেতে হবে।’

‘কোথায় যাবি?’

‘ওই বাসায়! চাচা চাচির সাথে একটা বোঝাপড়া করতে হবে।’

‘তুই একা যাবি! আমিও যাই তোর সাথে।’

‘ তার দরকার নাই। তুই বাসায় যা।’

‘ না আমিও তোর সাথে যাব।’

‘জেদ করছিস কেন?’

‘এই রাতে বেলা তোকে একা ছাড়বো না।’

‘বাসা কাছেই 10 মিনিট লাগবে যেতে!’

‘তারা খুব একটা সুবিধার না। তাদের কাছে তোকে একা ছাড়তে পারবো না আমি সরি।’

অজ্ঞতা অভ্র কে নিয়েই যেতে রাজি হয় নিদ্রা।

.
12 ঘণ্টার মধ্যে বর্ষার বাবা জ্ঞান ফিরে। তার অবস্থা খারাপ ছিল। কিন্তু আল্লার রহমতে সুস্থ হয়েছেন তিনি।
বর্ষা বাপির সাথে দেখা করে বাইরে বসে আছে। মায়ের কাছেই ঘুমিয়ে ছিলো। মাম্মা জেগে বাপির জন্য উতলা হয়ে গেল। সকালে তাকে আগে বাপির সাথে দেখা করাতে হলো। তারপর শান্ত হলো।
এবার টাকার বন্দোবস্ত করতে হবে। মাম্মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো বর্ষা। বাপিকে কয়েক দিন হসপিটালে থাকতে হবে। এ টাকা পয়সা কোথা থেকে দেবো সেই চিন্তা করছেন মাম্মা।
তখন বর্ষার মাথায় এলো একটা কথা। ও তাড়াতাড়ি মাম্মার কাছে গিয়ে বলল,,,,

‘মাম্মা বাপি যে আমান নামে একটা অ্যাকাউন্ট করেছিলো মনে আছে তোমার। সেখানকার টাকা তো বাপি কখনো খরচ করবে না বলেছিলো। আমার হয় সে টাকা এখনও অক্ষত আছে। আমরা সেই টাকা দিয়ে তো কিছুদিন চলতে পারি বাপিকে হসপিটাল থেকে ছাড়াতে পারবো তাই না।’

বর্ষার কথা শুনে ওর মায়ের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। বর্ষার একাউন্ট থেকে টাকা উঠিয়ে হসপিটালে যাবতীয় খরচ যাবে।

পরদিনই বাসা ছাড়ার লোক এসেছিল। বাপির এই অবস্থা দেখে তারা কিছুই করেনি। এক মাস টাইম দিয়েছে। বর্ষা নিজের প্রিয় ছাদে দোলনায় বসে আছে এখন। নিজের মন মতো এই ছাদটা ও সুন্দর সাজিয়েছে। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ছাদে, বাসার আনাচে কানাচে। সব মায়া ছিন্ন করে বাসা থেকে চলে যেতে হবে। সব তো ওর জন্য ই হচ্ছে। লোকটা আমাদের নিঃস্ব করে ছাড়লো। ওই লোকটার জন্য ওর মনের কোনে একটু একটু অনুভূতি জন্ম হয়েছে ছিঃ। দোলনা থেকে ওঠে ওর প্রিয় ফুল গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে।
মাম্মা হাসপাতালে গেছে বাপির জন্য খাবার নিয়ে। বর্ষা রেলিং এ হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে উদাশ হয়ে। তখন ওর মনে হলো কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে ও আশেপাশে তাকালো কিন্তু সন্দেহ জনক কাউকে না পেয়ে সরে গেলো সেখানে থেকে। আর দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে চলে এলো।
কোথাও গিয়ে এক দন্ড দাঁড়াতে পারেনা বর্ষা সবসময় মনে হয় কেউ না কেউ ওকে লক্ষ করছে। আর মাত্র কয়েকদিন এইবাসায় থাকতে পারবে ভাবতেই চোখে জলে ভড়ে উঠছে। বর্ষা বিছানার শুয়ে পরলো। আর ঘুমিয়ে পড়ল। কলিংবেলের শব্দে ঘুম থেকে উঠলো। মাম্মা দাঁড়িয়ে আছে।
ভেতরে এসে বললো,

‘ ১৭ তারিখ থেকে তোর এক্সাম শুনলাম। বলিসনি কেন আমাকে।’

‘ আমি পরিক্ষা দেবো না মাম্মা।’

‘ কি বলছিস?’

‘ ঠিক‌ই বলছি। এই অবস্থায় আমার পড়া আর হবে না।’

‘ এক চর দিয়ে তোমার গাল লাল করে দেবো। এসব বললে। চুপচাপ পরতে যাও।

‘ কিন্তু মাম্মা .

‘ লেখাপড়া নিয়ে আমি কোন কথা শুনতে চাইনা।’

‘ মাম্মা এতো টাকা খরচ না করলে হয় না।”

‘ রুমে যাও।’

বর্ষা চুপচাপ রুমে চলে এলো। বেতন আর ফিশ বাবদ বাইশ হাজার টাকা লাগবে এখন এতোটা খরচ করতে হবে ভেবেই ও এসব নিয়ে ভাবতে চায়নি। কিন্তু মাম্মার কথার উপর কথাও বলতে পারবে না। তাই পরিক্ষা দিতেই হবে। রুমে এসে পরতে বসতে হলো।

.
আরিয়ান বাসায় এসেছে আজ। ওর জানা হয়ে গেছে নিদ্রা আর অভ্র কে ডির্ভোস দেবে না। সব একদিকে ফেলে ও চলে এসেছে রাগে ওর শরীর কাঁপছে। বাবা মায়ের থেকে এটাও জানতে পেরেছে নিদ্রা ওর বর কে নিয়ে এসে অপমান করে গেছে।
আরিয়ান রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলো। আর সোজা নিদ্রার হাসপাতালে এলো।
নিদ্রা নিজের কেবিনে বসে ছিলো। ওর সামনে বসে আছে আদিল। দুজনে কিছু বলে হাসছে।
তখন আরিয়ান দরজা শব্দ করে খুলে ভেতরে প্রবেশ করে।
দরজার শব্দে তাকিয়ে নিদ্রা দাঁড়িয়ে পরে আর রাগান্বিত আরিয়ানের মুখ দেখে। কতোদিন পর আরিয়ান কে দেখলো খেয়াল নেয় কিন্তু অনেকদিন পর দেখছে। আদিল রেগে পেছনে তাকালো। কি সুন্দর আড্ডা দিচ্ছিলো এমন সময় কে এলো ওদের ডিস্টার্ব করতে। পেছনে তাকিয়ে চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে ফেললো। আরিয়ান আদিলের মুখ দেখার আগেই। আরিয়ান কোন দিকে লক্ষ্য না করে নিদ্রার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে এলো হসপিটাল থেকে। নিদ্রা হাত ছাড়ানোর জন্য যুদ্ধ করতে লাগলো। ” ভাইয়া আমার হাত ছাড়ুন! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এভাবে?’

আদিল টিস্যু দিয়ে মুখ ডেকে বসে ছিলো আরিয়ান চলে যেতেই উঠে দাঁড়ালো। ওর মস্তিষ্কে ঢুকছে না আরিয়ান নিদ্রাকে এভাবে টেনে নিয়ে গেলো কেন?
ও হাসপাতালের বাইরে এসে কাউকে কল করলো। সাথে সাথে একটা সাদা রঙের প্রাইভেটকার এসে থামলো আর একজন দৌড়ে এসে দরজা খুলল,
আদিল ভেতরে গিয়ে বসতেই গাড়ি চলতে লাগলো। আদিলের পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,

‘ ডাঃ নিদ্রার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। মনে হয় এতেই তোর প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।’

#চলবে……….