তুমি যে আমার পর্ব-৩৩+৩৪

0
756

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_33

‘ তুই বাবা- মা কে না করলি না কেন? রাজি কেন হলি?’

অভ্রর সামনে এসে দাড়িয়ে কথাগুলো বললো নিদ্রা। অভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ না করবো কেন? আমরা দুজনেই বেড়াতে পছন্দ করি আর এখন যখন সুযোগ পেয়েছি তা কাজে লাগবো না!’

‘ তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি! এটা শুধু বেড়াতে যাওয়ার হলে কথা ছিলো? কিন্তু সবাই আমাদের হানিমুনে পাঠাতে এটা দিয়েছি। তুই কি তা শুনিছ নি। শুনেও রাজি হয়ে এই টিকেট নিয়ে আসলি কিভাবে!!’

‘ দেখ নতুন বর ব‌উদের হানিমুনে যেতেই হয়। আমরা ও না হয় যাব এতে এতো সমস্যা কোথায়?’

‘ কিসব বলছিস। মাথা গেছে নাকি তোর। নতুন হ্যাজবেন্ড ওয়াইফ রা কি করে সেটা আমাকে কেন শুনাচ্ছিস? তোর আর আমার সম্পর্ক একদম আলাদা তাই এসব না করে দে আমি কোথাও যেতে পারবো না।’

‘ ইম্পসিবল। আমি কোন না টা করতে পারবো না। কাল আমরা বেড়াতে যাচ্ছি ইটস ফাইনাল ডিসিশন।’

‘ আমি যাব না বলছি তাও তুই যাওয়ার কথা বলছিস?’

‘ আরে তুই এতোটা হাইফাই কেন হচ্ছিস? হানিমুনের টিকেট দিয়েছে তাই কি হয়েছে। আমরা তো আর সত্যি হানিমুনে করবো না। আমার বেড়ানোর জন্য যাব। ফ্রেন্ড থাকতে যেমন যেতাম তেমন।’

‘ আমি…

‘ প্লিজ আর কিছু বলিস না। আমরা ঠিক থাকলেই হলো তাই না। আর কথা না বাড়িয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফেল।’

বলেই অভ্র আলমারি খুলে নিজের ড্রেস বের করে বিছানায় রাখতে লাগলো। নিদ্রা যেতে একদম আগ্রহী না। ওর মনটা ভালো নেই।

‘ কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’

‘ আমার সত্যি যেতে ইচ্ছে করছে না। কোন ভাবে ক্যান্সেল কর না।’

‘ দেখ এখন এই নিয়ে না করলে সবাই আমাদের অনেক কথা শুনাবে। আর তোর মনটা ইদানিং খারাপ থাকে। বেড়াতে গেলে তোর‌ই মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে দেখিস।’

নিদ্রা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। অভ্র ব্যাগ প্যাক করে ফেললো।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরদিন সকালেই বেরিয়ে পরতে হলো অভ্রর সাথে। গাড়িতে করে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু অভ্র গাড়িতে যাবে না ট্রেনে যাবে। একদিন নিদ্রা ট্রেনে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলো অনেক দিন আগে। তখন ওদের ভার্সিটি টুর ছিলো। বাসে নিদ্রা আর অভ্র পাশাপাশি বসে ছিলো। তখন নিদ্রা বলেছিলো।
‘ অভ্র আমরা ট্রেনে গেলে ভালো হতো রে। আমার না ট্রেনে চরার ইচ্ছে অনেক কিন্তু এখনো হয়নি উঠা।’

গাড়িতে নিদ্রা মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে রেখেছিলো। কিন্তু ট্রেন স্টেশনে নামতেই ওর চোখ মুখে বিষ্ময় প্রকাশ পেলো। ও অবাক চোখে অভ্রর দিকে তাকালো উজ্জ্বল মুখে। ট্রেনে উঠে নিদ্রার মলিন মুখটা আর নাই‌। খুশি মনে বসে আছে।
মনটা ভালো করতে পেরে অভ্রর ও ভালো লাগছে।

‘ তুই সেই কথাটা মনে রেখেছিস এখনো?’

‘ আরো অনেক কিছুই মনে রেখেছি।’

‘ সব মনে রেখেছিস কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কথাটাই মনে রাখিস নি। যেটা মনে রাখা দরকার ছিলো বেশি।’

অভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘ কি?’

‘ বলতে ইচ্ছে করছে না।’

অভ্র মনে করার চেষ্টা করেও তেমনি কিছু মনে করতে পারলো না। নিদ্রা কোন কথা মনে রাখার কথা বলছে ভাবছে অভ্র।নিদ্রা জানালা দিয়ে বাইরে প্রকৃতি দেখছে।

.
অনেক দিন পর আজ বর্ষা মনটা ভালো লাগছে। নতুন বাসায় আসার পর ও রুমে থেকেই বের হয়নি। যে কয়বার বেরিয়েছে পরিক্ষা দিতে গিয়েছে। আগামীকাল পরিক্ষা শেষ হয়েছে বর্ষার। এই কয়েকদিনে ও একটা পিচ্চির সাথে খুব সখ্যতা গড়ে উঠেছে। খুব চঞ্চল পিচ্চি টা। কাছে আসলে মন খারাপ করে থাকতেই পারে না ও। আমরা আসার কয়েক দিন পরেই পিচ্চিরা এই ফ্ল্যাটে এসেছে। পিচ্চিটার নাম পরী। দেখতেও সে পরীর মত সুন্দর। নাম ও পরী মনে হয় ওর এইরূপ দেখে ওর বাবা মা এই দিয়েছে। দেখতে মনে হয় না পরী খুব চঞ্চল কিন্তু পরী হচ্ছে মারাত্মক চঞ্চল মেয়ে। বাচ্চাদের সাথে কখন আমার তেমন সম্পর্ক হয়নি কারন এরা খুব দুষ্টু হয়। তাই এদের থেকে বর্ষা দুরত্ব বজায় রেখেছে। কিন্তু এই চঞ্চল পরীর সাথে বর্ষার ভাব হয়ে গেছে।
আজ পরীর সাথে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে বর্ষা। এখানে একটা শিশু পার্ক আছে পরী বর্ষাকে নিয়ে সেই পার্ক এ চলে এলো। এসে লাফালাফি ছোটাছুটি করতে লাগলো আরো অনেক বাচ্চারা আছে এখানে বর্ষা ওদের সাথে লাফালাফি করছি অনেকদিন পর প্রাণ খুলে হাসছে। এখানে এসে বর্ষা সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে গেছে যেন।

‘ বর্ষাপু আমি আইসক্রিম খাবো।’

পরীর কথা শুনে বর্ষা চমকে উঠলো। টাকা তো সাথে আনেনি বর্ষা এখন টাকা কোথায় পাবো কি ঝামেলায় পরলাম। টাকা আনার কথা তো মনেই ছিলো না।

পরী বর্ষার হাত ঝাঁকিয়ে বললো, ‘ কি হলো খাওয়াবে না।’

‘ পরী আমি তো টাকা আনিনি। কাল খাওয়াবো তোমাকে কেমন। এখন চলো বাসায় ফিরে যাই।’

পরীর নাছড়বান্দা এখন‌ই খাবে। ওর নাকি খুব খেতে ইচ্ছে করছে। এখন রাগ লাগছে বর্ষার। পরীর ওর স্কার্ট টেনে আইসক্রিম ওয়ালার কাছে নিয়ে এলো। বর্ষা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা পরীর হাত স্কার্ট থেকে ছাড়িয়ে নিলো। পরীর আইসক্রিম চেয়ে ফেলেছে। ও না করছে।

‘ না না দিয়েন না প্লিজ।’

আইসক্রিম ওয়ালা, ‘ বাচ্চা তো চাচ্ছে আপনি দিতে মানা করছে কেন?’

‘ সরি আসলে আমার কাছে এখন টাকা নাই। টাকা ছাড়াই এসেছি।এখন আইসক্রিম নিলে টাকা দেবো কি করে।’

‘ আচ্ছা সমস্যা নাই।টাকা পরে দিয়েন আমি এখানে প্রতিদিন আসি। আপনার বাসা কোনটা?”

‘ ওই কাছেই দশ মিনিটের রাস্তা।’

পরীর জরাজরিতে বর্ষা একটা আইসক্রিম নিলো। কিন্তু আইসক্রিম ওয়ালা জোর করে দুইটা আইসক্রিম দিলো। বর্ষা লজ্জা পেয়ে দুটাই নিলো। পরীর জন্য মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। মেয়েটা এতো চঞ্চল কেন? কতো আনন্দ করছিলাম সব মাটি করে দিলো। ছিঃ টাকা বিহীন আইসক্রিম খাচ্ছি। বর্ষা মনে খারাপ করে দোলনায় বসে র‌ইলো। আর ওর সামনে পরী কানে হাত দিয়ে সরি বলতে লাগলো। এত ইনোসেন্ট আর মিষ্টি লাগছিলো দেখতে যে বর্ষা রাগ উঠে গেল। কিন্তু মুখ গম্ভীর করে রাখলো।

পরী আইসক্রিম শেষ করে সব বাচ্চাদের নিয়ে এসে। পেছন থেকে দোলনায় দোল দিতে লাগলো।বর্ষার মন খারাপ নেস টা একদমই চলে গেল বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বলল ,

‘আরে কি করছিস তোরা?কষ্ট করে আমাকে দোল দিতে হবে না তোরা এখানে বস আমি তোদের দোল দিচ্ছি।’

কে শোনে কার কথা বর্ষার কথা শুনলো না। বর্ষা ওঁদের থামাতে না পেরে দোল খেতে লাগল আর আনন্দে খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো।

আইসক্রিম ওয়ালাকে টাকা দিয়ে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলো একজন মুগ্ধ নয়নে। বর্ষা ঠোঁটে হাসি দেখে তার ঠোঁটের কোনে হাসি চলে এলো।

.
বর্ষার মন ভালো থাকলে তখন ও চুপি চুপি রান্না ঘরে গিয়ে ওর সেই বিখ্যাত চা করে। যা সব থেকে বাজে হয় খেতে। অতি আদরের বলে কখনো মাম্মা ওকে রান্না ঘরের ধারের কাছে ঘেঁষতে দেয়না এজন্য রান্নার ক্ষেত্রে একদম কাঁচা।
কিন্তু চা করতে পারে। কিন্তু সেই চা খাওয়ার যোগ্য হয় না। কিন্তু মাম্মা বাপি খুব আনন্দের সাথেই তা পান করেন। আর বকেও দেয় রান্না ঘরে লুকিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ আমি যদি আঘাত পায় এজন্য।

আজ বাইরে উঁকি মেরে দেখতে যাব কেউ আছে পারে আছে কিনা দরজা খুলতেই একজন অপরিচিত লোক দেখলাম। আমার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার পেছনে থেকে কেমন জানি চেনা লাগছিল। কিন্তু লোকটা এদিকে ঘুরতে যাবে দেখে আমি দরজা আটকে বসে পরলাম। কে এলো এখন আবার। খুব রাত না কিন্তু কে এটা। এখন অবশ্য অনেক কেই আসে বর্ষা সেদিকে লক্ষ্য করে না। সারাদিন রুমে দরজা আটকে বসে থাকে তাই চিনে না কাউকে। আধা ঘন্টা অপেক্ষা করে দরজা খুলে বেরিয়ে রান্না ঘরে চলে এলাম।দরজা আটকানোর শব্দে বুঝতে পেরেছি লোকটা চলে গেছে। রান্না ঘরে এসে চা করতে লাগলো। ট্রে তে তিন কাপ চা করে বাপির রুমের ঢুকে গেলো। ভেতরে ঢুকে বাপি আর মাম্মা কি কিছু নিয়ে আলোচনা করতে দেখলো ও। ওকে দেখেই দুজনে চুপ করে গেলো।
বর্ষা অবাক হয়ে তাকিয়ে এগিয়ে টেবিলের উপর ট্রে রাখলো।

‘তুই আবার রান্নাঘরে গিয়ে ছিলি কেন? চা খেতে ইচ্ছে হয়েছে আমাকে বলতেই পারতি!’

‘তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছিল। আমাকে দেখে থেমে গেলে কেন?’

‘কিছু না!’ মাম্মা বললো।

বাপি বললো, আমার প্রিন্সেসের কি মন ভালো আজ!!’

‘জ্বি বাপি।’

‘সে তো আমি তোমার হাতে চায়ের ট্রে দেখে বুঝতে পেরেছি। কারণটা কি জানতে পারি?

‘ বাপি পরীর সাথে থেকেই আমার মন ভালো হয়ে গেছে। খুব কিউট ও। ওর সাথে থাকলে মন খারাপ করে থাকাই যায় না।’
অনেকটা সময় বাবা-মার সাথে গল্প করলো বর্ষা। আলোচনা বিষয়ে আর জিজ্ঞেস করলো না কারণ ও মনে করলো ওকে জানাতে চায়না তাই আর জিজ্ঞেস করলো না।

.
একদিন রাতে নিবিড় চৌধুরী বর্ষার রুমে এসে ওর পাশে বসলো। বর্ষার শুয়ে ফোন ঘাটছিল বাপিকে দেখে উঠে বসে। নিবিড় চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

‘ বর্ষা আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি?’

বর্ষার বাপির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ কি সিদ্ধান্ত বাপি?’

বর্ষা মা ও এসে বসে খাটে। দুজনে একটা নিঃশ্বাস ফেলে।
বর্ষার বাপি বললো,

‘ আমরা তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।’

#চলবে……..

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_34

বর্ষা নিরব হয়ে সব শুনলো। কোন কথা বললো না। বাপি মাম্মা অনেক কথা বলে চলে গেলো। বর্ষা চুপচাপ বসে র‌ইলো কিছু সময়। বিছানায় থেকে নেমে বর্ষা বেলকনিতে এসে বসে র‌ইলো। বিয়ে করার একটু ইচ্ছে নাই ওর কিন্তু বাপির কথার উপর কথাও বলতে পারবে না। আর বলতেও চাইনা। তাদের কথা না শুনে তাদের আমি কষ্ট দিতে চাইনা এমনিতেই তারা আমার জন্য অনেক কিছু সাফার করতেছে।তাদের কথার বিরুদ্ধে গিয়ে আর কষ্ট দিতে চাইনা। তারা আমার জন্য যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি মাথা পেতে নেবো। তারা আমার ভালোর জন্য করবে যা করার।
আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো ভাবছে বর্ষা। শত তারা মেলা আকাশ জুড়ে। চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চারপাশ। ছলছল চোখে বর্ষা চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে বর্ষা। হঠাৎ তূর্য ওর মুখটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে।‌ আতকে উঠলো বর্ষা। আকাশে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো নিচের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। যেন তূর্য কে দেখলো আবসা অন্ধকার এ। চট করে উঠে দাঁড়ালো। আর রাস্তার দিকে উঁকি ঝুঁকি দিতে লাগলো না কেউ নাই। সব আমার মনের ভুল। এসব কেন হচ্ছে। ও নিষ্ঠুর লোকটাকে কেন আমার মনে পরে। কেন আমার মনে হয় লোকটা আমার আশেপাশে আছে ছায়ার মতো। সব সময় আমাকে ফলো করে। বর্ষা আর দাঁড়ালো না অসহ্য লাগছে ওর। কোথাও গিয়ে দাঁড়াতে পারে না মনে হয় কেউ তীক্ষ্ণ নজরে চেয়ে আছে ওর দিকে।

রুমে এসে শুয়ে পরলো বর্ষা। চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। কার সাথে আমার বিয়ে হবে ? সে কি জানে আমার সাথে কি ঘটেছিলো? সব কিছু জেনে আমাকে মানতে পারবে তো? চোঁখের কোনা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে বর্ষা।

বর্ষা ঘুমের মধ্যে শরীরে সুরসুরি পেয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলো। সকাল হয়ে গেছে কখন আর ওর সামনে পরীর বসে খিলখিলিয়ে হাসছে ওর অবস্থা দেখে।

‘ আপু তুমি ভয় পেয়েছো?’

পরীকে দেখে বর্ষা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ও ভয় পেয়ে গেছিলো। এই দুষ্টু সাতসকালে চলে এসেছে জ্বালাতে।
কপাট রাগ দেখিয়ে বললো,

‘ এসব কি করছিলে তুমি পরী খালি দুষ্টুমি!’

‘ তুমি এতো বেলা অবধি ঘুমাচ্ছিলে কেন? আমি সেই কখন আসছি। তোমাকে ডাকছি কিন্তু তুমি উঠো নাই‌। তাই তো এভাবে উঠালাম।

‘ আর এমন করবা না।’

‘ আচ্ছা চলো তারাতাড়ি!’

‘ কোথায় যাবো?’

‘ ছাদে চলো একটা জিনিস দেখাবো তোমাকে?

‘ এখন আমি কোথাও যাব না পরী। তুমি একাই যাও।’

‘ আমি তো গেছিলাম। এখন তোমাকে নিয়ে যাব’

‘ আমি যাব না এখন।’

‘ না না তুমি যাবে। চলো না আপু। ‘

‘ জেদ করো না পরী। তুমি একা যাও আমি….

‘ আমি একা গেছিলাম। তোমাকে একটা জিনিস দেখাতেই তো ডাকতে এলাম। চলো না আপু।’

বর্ষার হাত ধরে টানতে লাগলো পরী। এই মেয়ে একবার যেহেতু বলেছে না রাজি হ‌ওয়া পর্যন্ত ছারবে না।

‘ আচ্ছা যাবো। তুমি হাত ছারো আমার আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’

‘ ওকে আপু।’

পরীর হাত ছাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো বর্ষা
। প্লাজো আর টপস পরা ছিলো বর্ষা। আলমারি খুলে ওরনা খুঁজে গলায় পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো। এলোমেলো চুল হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ঝুটি করে। ছাদে ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নাই। পরীর ছাদে এসেই বর্ষাকে আকাশের দিকে তাকাতে বললো। বর্ষা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘুড়ি।

‘ ওই দেখো কি ওটা আকাশে উড়ছে!!

বর্ষা লাল ঘুড়িটাকে দেখেই ওর ঠোঁট হাসি চলে এলো। ঘুড়ি ওর ও ছিলো মাঝে মাঝে বাপিকে নিয়ে উড়াতো। অনেকদিন পর দেখছে। পরীর এটা দেখাতে এনেছে।
পরীর ঘুড়ি চিনে না বোধহয় বর্ষা নাম বলে দিলো। শুনেই কিনার জন্য লাফিয়ে নিচে চলে গেলো। এখনি নাকি তার আম্মুকে বলবে। বর্ষা একাই ছাদে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।
পরীর কান্না কাটিতে বিকেলেই কিনে আনতে হলো। ওর ঘুড়িটা হলুদ রঙের। এনেই আমাকে নিয়ে এলো ছাদে উড়ানোর জন্য। বিকেলে ছাদে এসে আরো মুখ দেখলাম সেখানে। সবার থেকে দূরে গিয়ে ঘুড়ি উড়ানোর কাজ করছি। আগের আমি হলে এখন এই সবার সাথে গল্প আড্ডা জুড়ে দিতাম। কিন্তু এখন আমার কারো সাথেই কথা বলতে মন চায় না।
পরীর হাতে ঘুড়ি দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়াতে বললাম।আর আমি সুতো ধরে দাঁড়িয়ে আছি।ও ছেড়ে দিতেই বাতাসে ঘুড়িটা আকাশে উড়ে গেলো। এখন ভেসে বেড়াচ্ছে। পরীর খুশি দেখে কে চেঁচিয়ে যাচ্ছে, লাফালাফি করছে খুশিতে। হাত তালি দিচ্ছে। ফুরফুরে মেজাজে বাসায় এসে সোফায় বসে পরলাম। আমার মনটা আজ ও ভালো। মাম্মা এসে আমার পাশে বসলো। আর আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।

‘ মাম্মা কিছু বলবে?’

‘ হুম। তোকে একটা কথা বলার ছিলো!’

‘ কি বলো?’

‘ ছেলের সাথে দেখা করবি না। কার সাথে তোর বিয়ের ঠিক করলাম দেখবি না?’

‘ না মাম্মা। আমি কারো সাথে দেখা করতে চাই না।’

‘ তুই কি বিয়েতে খুশি না? মন থেকে বল মা। তোর উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। ‘

‘ এমন কিছু না। আমি তোমাদের খুব ভালোবাসি, ও বিশ্বাস করি মাম্মা।আমি জানি আমার জন্য যা ভালো সেই সিদ্ধান্ত‌ই তোমরা নিবে। কিন্তু আমি দেখা করতে চাই না।’

‘ কেন ছেলেকে তোর পছন্দ হয় নাকি দেখবি না।’

‘ তোমাদের উপর সেটুকু ভরসা আছে। আমার জন্য বেস্ট টাই চয়েজ করবে।’

‘ তাই বলে একবার দেখবি না।’

‘ নাহ। আচ্ছা মাম্মা এসময় এসব না করলে চলতো না। আমাদের অবস্থা‌ তো এমনিতেই ভালো না। এখন এসব করা কি খুব দরকার ছিলো।’

‘ হ্যা ছিলো। আমাদের কিছু হয়ে গেলে তোর আর কেউ থাকবে না এই পৃথিবীতে। তখন তোর কি হবে। এতৈ কিছু যাচ্ছে এসবে তোর ও কম ক্ষতি হয় নি। এখন তোকে একজন ভালো মানুষের হাতে তুলে দিতে পারলে আমি আর তোর বাবা স্বস্তি পাবো। নিশ্চিত হতে পারবো। যে আমাদের একমাত্র সন্তান কে দেখে আগলে রাখার মতো কেউ আছে।’

বর্ষা চুপচাপ শুনলো। তারপর উঠে রুমে চলে এলো।

.
‘ব্রো কি বলছিস এসব? এটাও সম্ভব? তোকে তারা একজন ভালো ছেলে খুঁজে দিতে বললো আর তুই নিজেকেই দাড় করিয়ে দিলি!!’

বিষ্ময় এর চরম সীমায় পৌঁছে গেছে শাওন।

‘ হুম’

‘ আর তারা রাজি হয়ে গেলো?’

‘ ইয়েস আমি কি পাত্র হিসেবে খারাপ নাকি যে রাজি হবে না।

‘ তা না পরিবার সম্পর্কে কিছু বলে নি!

‘ বলেছে আমি বলেছে কেউ নেই আমার।’

‘ বিশ্বাস করলো?’

‘ বিশ্বাস করতে না পারলে তিন দিন পর আমার বিয়ে থাকতো না নিশ্চয়ই।’

‘ ব্রো আমার মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। তুমি কেন ওই বর্ষাকে বিয়ে করছো? আবার কি মতলব আকছো বলো প্লি…

আর টুকু বলতে পারলো না শাওন তূর্য এর চাহনী দেখে।

‘ কি হয়েছে আবার এমন করে তাকাচ্ছো কেন?,’

‘ কি বললি তুই?

‘ আমি আবার কি বললাম?’

‘ বর্ষাকে কি বললি?’

‘ কি আবার বলবো বর্ষা বলেছি কেন?’

‘ একটা ঘুসি মেরে তোর নাক ফাটাবো আমি। আর একবার বর্ষা বললে!’

‘ তাহলে কি বলবো? আর বর্ষা বললে সমস্যা কোথায়?’ ভীতু মুখ করে বললো শাওন।

‘ ভাবি বলবি আর কখনো ওকে নাম ধরে ডাকবি না। ‘

‘ ব্রো তুমি ওই বর্ষার….

‘ আবার এবার কিন্তু সত্যি.

‘ আচ্ছা সরি। ব্রো তুমি ভাবির প্রেমে পরেছো সাথে ভালো ও বেসে ফেলেছো তাই না। কিন্তু আমার কাছে স্বীকার কেন করছো না বলতো।

‘ তুই কোন দেশের প্রেসিডেন্ট রে আমার তোর কাছ এ স্বীকার করতে হবে।’

‘তার মানে ইউ লাভ বর্ষা সরি সরি ভাবি?’

তূর্য কিছু বললো না। ঠোট বাঁকিয়ে হাসলো।

.
বিয়েতে আয়োজন বলতে কিছুই হবে না। বর আসবে কবুল বলা হবে শেষ। বাপি এমনটা কখনো চায়নি। কিন্তু তার এখন শত্রুর অভাব নাই তাই তিনি এভাবে লুকিয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছে। বর্ষার কাছে এসে বাপি আক্ষেপ করেছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে ধুমধামে দিতে পারলো না। বর্ষা কতো স্বপ্ন ছিলো বিয়ে নিয়ে কতো ভাবে সাজবে, কোন পার্লারে সাজবে, ছবি তুলবে, পোশাক সব কিছুতেই কতো পাগলামো করেছিলো আগের বার কিন্তু এবার তেমন কিছুই করছে না।বর্ষা মামা ফুপিরা এসেছে বিয়েতে। এদের বিপদে পাওয়া না গেলেও এখন পাওয়া যাবে। ঘনিষ্ঠ না হলে এদের বাপি ডাকতো না। ফুপি আর তার মেয়ে এসেছে।আর এদিকে মামা মামা এসেছে।
বর্ষার কথা বাবা-মা রেখেছে। জোর করে দেখা করায় নি। মেয়ে রাজি হয়েছে এতেই খুশির সীমা নাই। মেয়ের একটা গতি হলে তারা চিন্তা মুক্ত হতে পারবে।
বর্ষার ফুফাতো বোন লোপা বিছানায় বসে আছে। ওর সামনে বিয়ের পোশাক, গহনা দিয়ে ভরপুর। এসব কিছু ছেলে পক্ষ থেকে এসেছে। পরীর আমাকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে লাল টকটকে ওরনা আমার মাথা দিয়ে বললো,

‘ লাল পরী লাগছে তোমাকে আপু।’

‘ তাই নাকি পরী। কিন্তু আমি তো পরী না পরী তো তুমি।’

‘ হুম আমি তো ছোট পরী। আর তুমি বড় মিষ্টি পরী। আজ তোমার বিয়ে।’

বলেই লাফালাফি করতে লাগলো।

#চলবে……..