তুমি যে আমার পর্ব-৩৭+৩৮

0
752

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_37

রাতে তূর্য বর্ষা’কে জোর করে‌ খাইয়ে কিসের যেন ওষুধ খাইয়েছিলো তারপর আর কিছু মনে নেই ওর। চোখ মেলে বর্ষা নিজেকে বিছানায় শুয়ে আছে আবিষ্কার করে। রাতের কথা মনে পরতেই ধরফরিয়ে উঠে বসে বর্ষা। সকাল হয়ে গেছে। রুমে আর রাতের মতো ফুল নাই। পরিষ্কার। বিছানায় ও একাই শুয়ে আছে। গায়ে কালের শাড়ি‌ই। গহনা কিছু নাই ড্রেসিং টেবিলের সামনে সব। রুমে একটা আলমারি সোফা ও ড্রেসিং টেবিল আর খাট। রুমটা অনেক বড় ট্রি টেবিলের উপর তূর্য এর একটা ছবি এ ছাড়া দেয়ালে প্রেন্ডিং ফটো ছাড়া আর কোন ছবি নাই তূর্য এর । একটা ঘড়ি আছে যাতে দেখলাম দশটা বাজে এটা কি তূর্য এর সেই আগের বাসা যেখানে আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়েছিলো। ভাবতেই বর্ষার বুক কেঁপে উঠলো। বিছানা থেকে নেমে গেলো বর্ষা বারান্দায় গিয়ে দেখবে এটা সেই ভূতুড়ে বাড়ি নাকি। বিছানা থেকে দেখতে পেলো ওর শাড়ি একদিন ঠিক আছে। শুধু কাঁচকে আছে। বর্ষা বারান্দায় গিয়ে চারপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এটা অন্য বাসা। বাগানে ফুলের সমাহার। আর একজন মালি ফুল গাছে পানি দিচ্ছে। আগের বাসায় কালো মুখোশধারী গার্ড ছিলো এটায় তা নাই। গার্ড আছে কিন্তু কম। বাসা ও অজৈব কাছাকাছি আরো‌ আমি ভয় থেকে যেন স্বস্তি পেলাম। ওই ভাবেই বারান্দায় থেকে বেরিয়ে এলাম।
ফ্রেশ টেশ কিছু হলাম না আমি রুমের বাইরে এসে মামার দেখা পেলাম। তিনি খাবার খাচ্ছেন ড্রাইনিং টেবিলে বসে আর তাকে একজন মাঝবয়সী মহিলা খাবার খাওয়াচ্ছে বেড়ে। আমি তাকিয়ে আছি মহিলা টির দিকে এটা আবার কে? তূর্য এর মা? বাড়িতে আমি তূর্য কে খুঁজছি। লোকটা নাই আশেপাশে এখন আমাকে মামার কাছে গিয়ে সব বলতে হবে।
আমাকে বিশ্বাস করবে তো? করবে করবে না কেন। বর্ষা তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিকে এগিয়ে গেলো
মামার খাওয়া শেষের দিকে। উঠবে এখন। বর্ষা দুই সিঁড়ি নামতেই হেঁচকা টান পরলে হাতে। তাকিয়ে দেখে তূর্য। বর্ষা কিছু বলতে যাব তূর্য ওর মুখ চেপে ধরে টেনে রুমে এনে দরজা আটকে দিলো।

বর্ষা ছুটাছুটি করে নিজের থেকে তূর্য কে সরাতে চেষ্টা করছে পারছে না।এবার তূর্য নিজেই ওকে ছেড়ে দিলো। আর ক্রোধান্বিত গলায় বলল,

‘ওমন হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছিলে?’

বর্ষা উত্তর না দিয়ে দরজা খুলতে গেলো তা দেখে তূর্য রাগে ফেটে পরলো যেন। ও রেগে বর্ষার হাত শক্ত করে ধরে সামনে এনে বললো,

‘অ্যানসার মি!’

‘ ছাড়ুন আমার হাত। আমি বাইরে যাব আর মামাকে সব বলে দেবো। তারপর বাপি- মাম্মা সবাইকে আপনারা আসল রুপ দেখাবো। সবাই কে মিথ্যা বলে ভালো সাজার নাটক করা ফাঁস করে দেবো।’
হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বর্ষা।

তূর্য এসব শুনে হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। বর্ষা তীব্র ব্যাথায় আহ করে উঠলো। চোখে জল চলে এসেছে। তূর্য এর সেদিকে খেয়াল নেই ও রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে হুট করেই হো হো করে হেসে উঠলো। বর্ষা ব্যাথার মধ্যে ও বিষ্মিত হলো। অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে তূর্য এর দিকে কি সুন্দর হাসি? কিন্তু গললো না ও ভাবছে এই লোক হাসছে কেন?আমি হাসির কি বললাম?
তূর্য বর্ষার চোখে পানি দেখে আচমকা হাত ছেড়ে দিলো আর বললো,

‘ কি বললে? সব বলে দিবে ওকে বলে দাও কিন্তু তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে? আমি তোমাকে কিডন্যাপ করে ছিলাম? তুমি বললে সবাই কেন বিশ্বাস করবে তোমার কথা! আমি একজন পুলিশ অফিসার হয়ে তোমাকে কেন কিডন্যাপ করতে যাব? আর কিডন্যাপ তো দূরের কথা আমার উপরেই তোমাকে খোঁজার দায়িত্ব এসে পড়েছিল! তুমি নিখোঁজ হওয়ার একমাস তো আমি হন্য হয়ে পাগলের মত ছোটাছুটি করেছি তোমাকে খুঁজতে! বিশ্বাস না হলে থানায় গিয়ে আর তোমার বাবা-মার কাছে থেকে শুনে নিও তারা এটা খুব ভাল করেই জানে।’

‘আমি জানি বাপি আমাকে বিশ্বাস করবেই।’

‘ ওকে আজ বৌ ভাতের অনুষ্ঠানে তোমার বাপি আসলে সব বলে দিও। যদি বিশ্বাস করেন তাও আমার কিছুই করতে পারবে না। উল্টা আমি তাকে থানায় নিয়ে যাব গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটা হারিয়ে ফেলার জন্য। যেটার জন্য ওনি চাকরি থেকে অবসর আছেন।’

‘ওই ফাইল আপনার কাছে। আমি আপনাকে দিয়েছি তার দায় আমার বাপির দোষ নাই।’

‘ সেটা তুমি আমি জানি বাকিরা তো জানে না বর্ষা মনি।’ বলতে বলতে তূর্য বর্ষার কাছে এসে ওর এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে থাকা চুল ফু দিয়ে সরিয়ে দিলো। বর্ষা চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠলো।

দুইটা পিছিয়ে বর্ষা বললো, ‘একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না।’

‘ আমি তো তোমার কাছেই আছি আর চেষ্টা কি করবো?’

‘ ফালতু! আপনি আমার সাথে জোর করে কিছু করতে আসলে আমি হয় আপনাকে খুন করবো না হলে নিজেই মরে যাব।’

‘ জোর করে করবো কিনা এখনো জানি না‌ বর্ষা মনি। কিন্তু শুনো আমি ভালো স্বামী হয়ে এই কথা বলতে পারবো না। তুমি না চাওয়া পর্যন্ত আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না। টাচ তো আমার যখন সেভাবে মন চাইবে সেভাবেই করবোই। আর নিজেকে খুন তুমি করতেই পারবে না তাহলে আমি তোমার বাবা মাকে নরক যন্ত্রণা দেবো। মাইন্ড ইট।’

বর্ষা ঘৃণার চোখে তাকিয়ে আছে। তূর্য আবার বললো,

‘ যাও কুইক ফ্রেশ হয়ে আসো। ব্রেকফাস্ট করবো। আম্মু ওয়েট করছে!’

‘ নিচের ওইটা আপনার আম্মু?’

‘ ইয়েস আম্মুর সাথে একদম তেরিংমেরিং করবে না। না হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’

বর্ষা রাগে গজগজ করতে করতে ফ্রেশ হয়ে এলো বর্ষা। থ্রী পিস পরে এসেছে। তূর্য বর্ষার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নামলো।সোফায় মামা বসে আছে। ওদের দেখে গুড মর্নিং বললো। নিচের মহিলা যাকে তূর্য মা বলে সম্বোধন করলো তিনি বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো। তারপর খেতে দিলো। বর্ষা দাঁত চেপে সহ্য করছে। এই মহিলাকে ওর একটুও সহ্য হচ্ছে না। তূর্য এর মাকে ও সহ্য কি করে করবে! যার জন্য ওর জীবন টা ধ্বংস হয়ে গেছে। দাঁত কিড়মিড় করতে বর্ষা। কোথা থেকে ছুটে এসে শাওন বসলো আর ওই মহিলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ মা খেতে দাও তারাতাড়ি।’

তারপর বর্ষার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, ‘ গুড মর্নিং ভাবি। শশুরবাড়ির সকাল কেমন কাটছে?’

বর্ষা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো শাওন এর দিকে। যেন চোখ দিয়ে আগুনের কুন্ডলি নিক্ষেপ করে ভষ্স করে দিবে। তা দেখে শাওন আর কিছু বলার সাহস করলো না। চুপ করে খেতে লাগলো।
বর্ষা খাবার শেষ করে গটগট করে রুমে চলে এলো।

এগারোটার দিকে পার্লার থেকে লোক এসে সাজিয়ে দিয়ে গেলো বর্ষাকে। আজকে লেহেঙ্গা পরেছে বর্ষা। গোলাপী রঙের। আর গর্জিয়াস সাজ। খুব সুন্দর লাগছে ওকে কিন্তু ওর মনটা খারাপ প্রচন্ড খারাপ। হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না।
রাজকীয় ভাবে ওকে স্টেজে নেওয়া হলো লাইটিং ফুল দিয়ে রাস্তা কথা আবার বৃষ্টির মতো ফুলের পাপড়ি গায়ে পড়া। বর্ষা অন্য সময় হলে খুশিতে লাফালাফি করতো আজ করছে না। অনেক আত্নীয় স্বজন এসেছে বাসা ভর্তি।‌ বর্ষা চুপ করে স্টেজের সোফায় বসে আছে। তূর্য নিচে দাঁড়িয়ে কাদের সাথে জানি কথা বলছে। একটু পর এসে আমাকে নিয়ে জোর করে নানান স্টাইল এ পিক তুলতে লাগলো। রাগে বর্ষার গা জ্বলে যাচ্ছে। তূর্য ওকো তোয়াক্কা করছে না।
বাপি মাম্মা আসতেই বর্ষা বাপি কে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।

#চলবে……

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_38

মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বুলিয়ে নিজেও চোখের জল ফেলতে লাগলেন নিবিড় চৌধুরী। একমাত্র মেয়েকে ছাড়া তিনি একটি রাত কাটিয়েছেন। মেয়েটাকে দেখার জন্য তার বুকের ভেতরটা হাহাকার করছিল। বাপি কে ছেড়ে মাম্মাকে জড়িয়ে ধরলো বর্ষা। তূর্য দুজনকে সালাম করে হাসিমুখে কথা বললো। তাদের সাথেই দুপুরের খাবারটা খাওয়া হলো। সন্ধ্যার পর শশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য তূর্য বউকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। বর্ষার বাবা-মা আগেই চলে গেছেন। তূর্য’রা একটু পর বের হয়েছে। কারণ বাসায় অনেক গেস্ট ছিলো কিছু গেস্ট কে বিদায় করে ওরা বের হতে হয়েছে। বর্ষা বাসায় যাওয়ার সময় আকুল আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। তূর্য ড্রাইভ করছে আর একটু পরপর আড়চোখে বর্ষার দিকে তাকাচ্ছে। বর্ষা ভুল করেও তাকাচ্ছে না তূর্য এর দিকে।

তূর্য হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’

বর্ষা ভ্রু কুঁচকে তাকালো তূর্য এর দিকে। বর্ষাকে চমকাতে না পেরে তূর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

‘ কি হলো এ ভাবে তাকাচ্ছ কেন? জানতে চাইবেনা কি সারপ্রাইজ!’

‘না আপনার কাছে আবার সারপ্রাইজ আছে নাকি। নিশ্চিত আবার কোন দুঃসংবাদ পাবো তাই আগে থেকে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছি।’

‘বাহ বর্ষা মনি তো খুব শক্ত হয়ে গেছে দেখছি।’

বর্ষা কিছু বললো না। তূর্য রেগে গাড়ি থামিয়ে ফেললো। বর্ষা তাও চুপচাপ র‌ইলো। তা দেখে তূর্য এক হাতে হেঁচকা টানে বর্ষাকে টেনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিলো।বর্ষা ছটফট করছে,

‘ ফাজিল লোক ছারুন আমাকে। রাস্তার মাঝে গাড়ি থামিয়ে কি শুরু করলেন।’

তূর্য কিছু না বলে বর্ষাকে জাপ্টে ধরে র‌ইলো। বর্ষা রাগে দুঃখে তূর্য এর হাতে খামচে দিলো। তূর্য টু শব্দ অব্দি করলো না। পাঁচ মিনিট এভাবেই জাপ্টে থেকে নিজেই ফট করে ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেতেই বর্ষা নিজের সিটে এসে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকালো তূর্য এর দিকে।
তূর্য মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো। হঠাৎ বর্ষার কেন জানি মনে হচ্ছে রাস্তাটা খুব পরিচিত। ও উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে চেনার চেষ্টা করছে এটা কোন জায়গা আস্তে আস্তে থেমে গেল গাড়ি। গেটের দিকে তাকাতে ওর বুকটা ধ্বক করে উঠলো এটা তা ওদের বাসা।
সেই চিরচেনা বাসা। এখানে কেন নিয়ে এলো?
বর্ষা জিজ্ঞেস করতে তূর্য দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি গাড়ি থেকে নামছে। আমার পাশে এসে ও দরজা খুলে আমাকে ও নামতে বললো। আমি নিঃশব্দে নেমে দাঁড়ালাম। তারপর বললাম,

‘ এখানে এসেছেন কেন? আপনার মতলব কি বলেন তো?’

তূর্য ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তখন আব্বু বেরিয়ে এলো বাসা থেকে বর্ষা বাপিকে দেখে চমকে উঠলো। আব্বু এই বাসায় কি করছে? কি হচ্ছে সব ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো। কিন্তু সব কিছু ওর কাছে ক্লিয়ার হলো বাসায় ঢুকে। আব্বু যা বললেন তা শুনে বর্ষা চরমভাবে অবাক হলো। বর্ষা সোফায় বসে থেকে তূর্য এর নাটকীয় মুখটার দিকে তাকিয়ে ভাবছে। উনি এসব কেন করছে? এতে উনার কি লাভ? লাভ ছাড়া তো উনী কিচ্ছু করে না। আবার কি ফন্দি এঁকেছে আল্লাহ জানে। অফিসার আদিল উরফে তূর্য নাকি সেই ফাইল মানে যেটা আমাকে দিয়ে কিডন্যাপ করিয়ে নিয়েছিলো সেটাই নাকি তিনি উদ্ধার করেছেন। কতো বড় নাটক বাজ। আর বর্ষার বাপিকে দায় মুক্ত করেছেন। তাই বাপি নিজের ব্যারিসটার পদ আবার ফিরে পেয়েছেন। আর বাসাটা দেনা দায়ে জন্য যারা দখল করেছিল। তারা খবরে, পেপারে এসব দেখে ফোন করে সময় দিয়েছেন, আর বাসায় আসতে বলেছে।

বাপি এমনিতেই তূর্য বলতে অজ্ঞান ছিলো এখন তো আরো। তূর্যের সাথে এতো সুন্দর করে কথা বলছে। আর মাঝে মাঝে হেসে উঠছে। যেন বাপির মতো সুখি আর কেউ নাই। তিনি কতোটা খুশি তা তার এই মুখের হাসি বলে দিচ্ছে। বর্ষা এক দৃষ্টিতে বাপির হাসি মুখটা দেখছে। তিনি যাকে সব চেয়ে আপন ভাবছে সেই যে তার সব চেয়ে বড় শত্রু বর্ষা কি করে বুঝাবে নিজের বাপিকে। বাপি এতোটা বিশ্বাস করে তূর্য কে যে বর্ষার কথাও হয়তো বিশ্বাস করবে না ও জানে। অন্তত এই কাজটা করে তূর্য একদম সেই আশা বরবাদ করে দিছে। মাম্মা রান্না ঘরে ওদের জন্য খাবার তৈরি করছে আগের সেই কাজের মহিলাটা আছে সাথে। বর্ষা নিজের ঘরেই চলে এলো। পেছনে তাকিয়ে একবার বাপি আর তূর্য কে দেখে।
কতোদিন পরে আমার প্রিয় ঘরটায় ঢুকলাম। যেভাবে রেখে গেছি সেভাবেই আছে। অদ্ভুত বিষয় রুমটা খুব পরিষ্কার। এতো দিন না থাকার ফলে তো ময়লা থাকার কথা কিন্তু না। আমি আয়নার সামনে গিয়ে নিজের সব কসমেটিক দেখলাম। সব রেখে গেছিলাম শুধু জামাকাপড় ছাড়া। এছাড়া একটা জিনিস ও নেয়নি।আমার প্রিয় টেডিবিয়ার গুলো একনজর দেখে লাল টা জরিয়ে ধরলাম এটা আমার আট বছর বয়সের জন্মদিনে আব্বু দিয়েছিলো। এটা নিয়ে চুল ছেড়ার কাহিনী আছে।
শপিং মলে ঢুকে টেডিবিয়ার দেখছিলাম। তারপর এই লাল টা আমার খুব পছন্দ হয়ে যায় তখন আরেকটা মেয়েও এই লালটায় পছন্দ করে। দুজনে একটা ধরে টানাটানি করতে‌ লাগি। এক রঙের আরো আছে বলে বাপি আমাকে টানতে লাগে আর মেয়েটাকে তার মা কিন্তু আমরা ছারছিলাম না। আমাদের হাত থেকে টেডিবেয়ার পরে যায় তখন মেয়েটা আমার চুল টেনে ধরে আমিও ধরে। সেকি ঝগড়া আল্লাহ। পরে দুজনেই দুইটা লাল টেডিবেয়ার নিয়ে নেয় আর দুজনের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটি। এখনো মনে পরলে আমি হাসতে লাগি। এখনো হাসছি হাসতে হাসতে বর্ষা বিছানার বসে পরলো। হঠাৎ চোখ পড়লো দরজায় কাছে তূর্য বুকে হাত ভাজ করে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

বর্ষা তাকাতেই বলল, ‘ একা একাই হাসছো মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি?’

বর্ষা হাসি থামিয়ে মুখ গম্ভীর করে টেডিবিয়ার সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আর পাশে বর্ষার লাগেজ দেখা যাচ্ছে। বর্ষা লাগেজ থেকে ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে যায়।
তূর্য একটা ডেভিল হাসি দিয়ে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

.
নিদ্রা আর অভ্র তিন দিন বান্দরবন কাটিয়ে বাসায় এলো। নিদ্রার সমস্ত মন খারাপ নেসটায় চলে গেছে যেনো। আবার দুজনকে খুব ভালো ফ্রেন্ড হয়ে উঠেছে।বাসায় এসেই অফিসার আদিল এর সাথে বর্ষার বিয়ে কথাটা জানতে পারে। আর শুনেই নিদ্রা অভ্রর দিকে তাকায়। কিন্তু না মুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হয়নি।

‘ কি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?’

‘এমনি!’

অভ্র খবরটা আগেই শুনেছে। নিজে থেকে বর্ষার সাথে কথা না বললেও ওর সব খোঁজ খবর ই রেখেছিলো। কিন্তু সেটা আড়ালে লুকিয়ে। কারণ ও চায় না ওর এসবে আর নিদ্রা কষ্ট পাক।

বৌভাতের যাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছিল আদিল নিদ্রাকে কিন্তু ওরা ক্লান্ত হয়ে বান্দরবান থেকে বাসায় ফিরেছে তাই আর যেতে পারেননি।

পরদিন হসপিটালে গিয়ে নিদ্রা বসে ছিলো নিজের চেম্বারে। বিকেলের দিকে আদিল কে দেখলো। এসেই খুব কিউট করে একটা হাসি দিয়ে বসলো।

‘ কেমন আছেন মিসেস অভ্র?’

‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা আপনি এখানে?’

‘ হুম আপনাকে আমার বাসায় যেতে হবে। সেটা বলতেই এসেছি।’

‘ কেন? আমি আপনার বাসায় কেন যাব?’

‘ বৌভাত তো আসলেন না। তাই সেই উপলক্ষে যাবেন।’

‘ এ্যা এটা আবার কেমন কথা? আমরা ক্লান্ত ছিলাম আপনাকে বলেছি।’

‘ হুম বলেছেন। তাই তো আজ যেতে বলেছি।’

‘ আজ?’

‘ হুম প্লিজ। আপনি আর মিস্টার অভ্র দুজনে ডিনারের দাওয়াত। আসবেন কিন্তু আমি আপনাদের অপেক্ষায় থাকবো। বাই।’

বলেই নিদ্রা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো তূর্য। নিদ্রা করে তাকিয়ে র‌ইলো। এমন ভাবে বললো এখন না গিয়ে ও উপায় নাই।

.
রাতটা কাটিয়ে দশটার দিকে তূর্য বর্ষাকে বাসায় নিয়ে এসেছে। বর্ষা চুপচাপ এসেছে কিছু বলেনি। কিভাবে এসব থেকে বেরোতে পারবে জানেনা।সারাদিন তূর্য বাইরে বাইরেই ছিলো। আর বর্ষা রুমে শুয়ে বসে শাশুড়ি মা এক বার রুমে এসেছিলো। বর্ষা দুপুরে খেতে বের হয় তখন তূর্য ও ছিলো। শাওন ছিলো না। তিন জন খাবার খেয়েছি। অবাক করা একটা বিষয় বিকেলেই জানতে পারে এটা শাওন এর মা। তাকে তূর্য আম্মু বলে। আর রুমে তূর্য এর বাবা আছে যিনি কথা বলতে পারে না আবার হাঁটতে ও পারে না। তাকে দেখে আরেক ঝটকা খেয়েছি একদম তূর্য এর মতো দেখতে। আমাকে শাওন এর মা নিয়ে পরিচয় করে দিয়েছে এটা আমার শশুর মশাই। সন্ধ্যার দিকে তূর্য এসে জানায় তার নাকি একজন স্পেশাল গেস্ট আসবে তাই রান্নার আয়োজন করতে।

শশুরের সাথে দেখা করে এসে রুমে বসে ছিলাম। তূর্য ঘেমে একাকার হয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পরে দশ মিনিট পর উঠে আমার দিকে তাকিয়ে। আবার উঠে ফ্রেশ হয়ে চলে যায়।

#চলবে..

( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)