অল্প থেকে গল্প পর্ব-২৬ এবং শেষ করে

0
1220

অল্প থেকে গল্প🍁
অরিত্রিকা আহানা
অন্তিম পর্ব

নাহিদের বিয়ের পর ছবির সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হয়ে গেলো।টানা দেড় মাস পরীক্ষা পরীক্ষা নিয়ে ঝামেলার পর আজকে বাসায় এসেছে সে।একা আসে নি।শুদ্ধ ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চেম্বারে ফিরে গেছে।
সে এখনো ফেরে নি।ইদানীং চেম্বারে রোগীর ঝামেলা বেশি।ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।

ছবি সারাদিন অধীর আগ্রহে বসে ছিলো কখন শুদ্ধ আসবে।অস্থির লাগছে ওর।সারাক্ষণ এদিক ওদিক পায়চারি করছে।
অবশেষে ক্লান্ত শরীরে সন্ধের দিকে ফিরলো শুদ্ধ।ফ্রেশ হয়ে কফি খেতে খেতে ল্যাপটপ নিয়ে বসতেই ফোন বেজে উঠলো।একটু আগে তার এক ছাত্র ফোন করেছে।ছেলেটা এবছরই এমবিবিএস ফাইনাল প্রফ পাশ করেছে।আগামীকাল ইন্টার্নি জয়েন করার কথা।কিন্তু রেজিট্রেশন নিয়ে কি ঝামেলা হওয়ায় বেচারার জয়েনিং আটকে গেছে।ভয়ে অস্থির হয়ে শুদ্ধর কাছে ফোন করেছে।শুদ্ধ এইব্যাপারে আগেই হায়ার অথোরিটিতে মেইল পাঠিয়েছিল।শুধু ওর নয় আরো বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর রেজিট্রেশন নিয়ে একই ঝামেলা হয়েছিলো।আগামীকালই তাদের মেসেজ পাঠিয়ে জয়েনিং কনফার্ম করবে হায়ার অথোরিট। ফোন রেখে উঠতেই রাতের খাবারের জন্য ডাকতে এলো অনু।

রাতের খাবার খেয়ে ড্রয়িংরুমে বসে কিছুক্ষন গল্প করলো শুদ্ধ আর উপল।আনোয়ারা বেগম ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছেন তাই তিনি খাওয়ার পরই শুতে চলে গেছেন। ছবি অনুর ঘরে গিয়ে বসলো।
অনু অনুপলাকে ঘুম পাড়াচ্ছে।ছবিকে ইতস্তত করতে দেখে বলল,
—কিছু বলবি ছবি?
ছবি লজ্জায় আরক্তিম হয়ে গেছে।অনু ওর হঠাৎ লজ্জা পাওয়ার কারণ বুঝতে না পেরে আবার জিজ্ঞাসা করলো,
—কিরে ছবি কিছু বলবি?
—আপু তুমি কি আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিতে পারবে?
—কেন কোথাও যাবি?
ছবি জবাব দিতে পারলো না।লজ্জায় তার গলা আটকে আসছে। নিরুত্তরভাবে বসে রইলো।অনু বোনের মুখের দিকে তাকালো।গালদুটো লাল হয়ে আছে,চোখেপাতা কাঁপছে,এক হাতের মুঠোয় অন্য হাত ঢুকিয়ে কচলাচ্ছে।অনু হাসলো।বোনের হাতের ওপর হাত রেখে বলল,
—দাঁড়া অনুপলা ঘুমিয়ে গেছে।আমি আসছি।তুই আম্মার ঘরে গিয়ে বোস।
—আমার লজ্জা লাগে!
—কিচ্ছু হবে না।তুই যা আমি আসছি।
—না তুমিও চলো।

অনুপলাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ছবিকে নিয়ে আনোয়ারা বেগমের ঘরে গেলো অনু।তিনি শোওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।ওদের দুজনকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললেন,
—কি ব্যাপার?
অনু মুখ টিপে হাসছে।ছবি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।আনোয়ারা বেগম অনুর হাসির কারন বুঝতে পারলেন না।কড়া গলায় বললেন,
—কি ব্যাপার বড় বউমা? তুমি হাসছো কেন?
—আম্মা ছবি শাড়ি পরবে!
আনোয়ারা বেগম প্রথমে বুঝতে পারলেন না।অনুর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন।ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই উনি লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিলেন।অনুর কাণ্ডজ্ঞান দেখে হতবাক হলেন।শ্বাশুড়ির সামনে অনু এমন কথা বলছে কি করে।ধমকে উঠে বললেন,
—বড়বউমা তোমার কি আক্কেল আন্দাজ কিছু নেই?
ধমক খেয়ে ছবি চুপসে গেলো কিন্তু অনু দমলো না।আনোয়ারা বেগমকে ছবির চাইতে বেশি চেনে সে।বলল,
—কেন কি হয়েছে আম্মা? আমি ভাবলাম আপনি খুশি হবেন!
আনোয়ারা বেগম ধমকে বের করে দিলেন ওদের দুজনকে।অনু হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।ছবি রাগে দুঃখে অভিমানে বলল,
—তুমি আমার সাথে এমন করতে পারলে আপু?
অনুর হাসি থামছে না।ছবি আহত কন্ঠে বলল,
—আম্মা কি ভেবেছেন? লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে!
অনু হাসি থামিয়ে বলল,
—শোন বোকা।তুই আম্মাকে জানিস না? আম্মা ভেতরে ভেতরে খুব খুশি হয়েছেন।বড় বউ হিসেবে এটা তো আমার দায়িত্ব।উনার ছোট ছেলের বউয়ের যে সুমতি হয়েছে সেটা আমি উনাকে জানাবো না?
—তোমার লজ্জা করছে না?
—না করছে না।আমার বিয়ের পর উপলের চাচাত ভাইয়ের বউরা আমাকে নিয়ে মজা করছিলো।আমি ভেবেছিলাম আমার ছোট জায়ের সাথে মজা করবো।তুই আমার বোন হলেও আমার একমাত্র হ্যান্ডসাম দেববের বউ!তাই একটু মজা তো করতেই পারি?
ছবি হাঁ করে অনুর মুখের দিকে চেয়ে রইলো।অনু এখনো হাসছে।হাসি থামিয়ে বলল,
—আয়!তোকে শাড়ি পরিয়ে দেই।দেবর মহাশয় ঘুমিয়ে পড়লে তো সমস্যা!
ছবি সরে গিয়ে বলল,
—ধ্যাৎ!
—আচ্ছা আর বলবো না,আয়।

শাড়ি পরানো শেষ।আয়নায় নিজেকে দেখলো ছবি।অনু প্রশংসিত কন্ঠে বলল,
—খুব সুন্দর লাগছে তোকে।
লাল খয়েরি একটা জামদানী শাড়ি লাল ব্লাউজের সাথে ম্যাচিং করে পরেছে পরিয়ে দিয়েছে ছবিকে।সুন্দর করে ওর ঈষৎ কোঁকড়ানো চুলগুলো খোঁপা করে দিয়েছে।
মুখে হালকা মেকাপ।মাথায় ঘোমটা টেনে দিলো অনু।
সবশেষে ছবি হাতে দুগাছি চিকন চুড়ি আর গলায় স্বর্নের একটা পাতলা চেইন।তাতেই ওকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।বউ বউ রকমের সুন্দর!
অনু দুষ্টু হেসে বলল,
—আয় চল।তোকে ঘরে দিয়ে আসি!
অনুপলা হাঁত পা ছুঁড়ে কাঁদছে।অনু ওকে কোলে নিয়ে ছবিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—অনুপলা জেগে গেছে।এখন আর যেতে পারবো না।
—চলো না আপু প্লিজ?
—আমি গিয়ে কি করবো? অনুপলা কাঁদছে,ওকে ঘুম পাড়াতে হবে।তুই যা।

ছবি অতি সন্তর্পণে ভেতরে ঢুকলো।বুক ধড়ফড় করছে তার।বড় বড় দম নিলো সে।শুদ্ধ ওয়াশরুমে।এই সুযোগে নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে নিলো।তবুও উত্তেজনায় সমস্ত শরীর কাঁপছে।

শুদ্ধ ওয়াশরুম থেকে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো।
টেবিলের ওপর থেকে চশমা জোড়া চোখে দেওয়ার সময় দরজার দিকে চোখ পড়লো তার।নতমুখে দরজার কপাটে দুহাত ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লালবসনা ছবি।
স্তম্ভিত হয়ে গেলো শুদ্ধ।চশমাটা ঠিক করে নিলো।হাতের টাওয়েল রেখে আলমারি খুলে কিছু একটা পকেটে ঢুকালো সে।ওর পরনে একটা নীল টিশার্ট আর কালো ট্রাওজার।পায়ে স্যান্ডেল।
ছবির হৃদপিন্ডে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে।ক্রমাগত হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।ধীরে ধীরে ওর কাছে এগিয়ে আসছে শুদ্ধ!
চোখবন্ধ করে ফেললো সে।এইমুহূর্তে শুদ্ধর একেবারে বুকের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে সে।শুদ্ধর চোখের দিকে তাকাতে পারছে না লজ্জায়।শুদ্ধ এখনো ওকে দেখছে।বিস্ময়ভাবটা অনেকখানি কেটে গেছে তার।ছবি কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল,
—কি দেখছেন?
—আমার অর্ধাঙ্গিনীকে!
নিচু হয়ে শুদ্ধকে সালাম করলো ছবি।পকেট থেকে সুন্দর একটা চেইন বের করলো শুদ্ধ।ওকে পরিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
—তোমার গিফট!পছন্দ হয়েছে?
ছবি নিশ্চুপ ভাবে মাথা নাড়ালো।লজ্জায় সারা শরীর ছেয়ে যাচ্ছে।শুদ্ধ মিষ্টি হেসে জিজ্ঞাসা করল,
—শাড়ি কি আমার জন্য পরা হয়েছে?
ছবি তেমনিভাবে চুপ করে রইল।শুদ্ধ আরেকটু কাছে এগিয়ে এলো।আঙ্গুলের ডগায় ওর মুখখানা তুলে ধরে কোমল কন্ঠে বলল,
—বলবে না?..আচ্ছা থাক।লজ্জা পেলে বলতে হবে না।
এরপর আর দেরী করে থাকা চলে না। দুহাতে শুদ্ধর গলা জড়িয়ে ধরলো ছবি।আদুরে কন্ঠে বলল,
— শুধু আপনার জন্য পরেছি!আপনি দেখবেন বলে পরেছি!
শুদ্ধর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠেছে। হাত উঠিয়ে দরজার ছিটকিনি তুলে দিলো সে।দুহাতে জড়িয়ে ধরলো ছবিকে।ছবি ওর বুকে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হাতের মুঠোয় ওর টিশার্ট।আলতো করে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো শুদ্ধ।শিরশির করে উঠলো ছবির সমস্ত শরীর। শিড়দাঁড়া বেয়ে শীতল রক্তের স্রোত বয়ে গেলো।শরীরের সমস্ত ভার শুদ্ধর ওপর ছেড়ে দিলো সে।
দুহাতে ওকে বুকে চেপে ধরে এক পা এক পা করে পেছাচ্ছে শুদ্ধ।তার সাথে সামনে এগোচ্ছে ছবি ।কপালটা আগের মতই শুদ্ধর বুকে ঠেকিয়ে রেখেছে সে।শুদ্ধর গায়ের গন্ধ অনুভব করছে।মিষ্টি মাতাল করা গন্ধ!খাটের কাছে এসে বেড সুইচটা টিপে বাতি বন্ধ করে দিলো শুদ্ধ।ওর টিশার্টের কলার চেপে ধরে ওকে আরো কাছে টেনে নিলো ছবি।হালকা আলোর ছাঁট আসছে বারান্দা থেকে।চারদিকে শুনশান নিরবতা।ঘড়ির কাটায় টিকিটিক।আবছা আলো আবছা অন্ধকারে ভালোবাসার সবচেয়ে পবিত্রতম অধ্যায় পড়লো দুজনে।স্বামী স্ত্রীর বৈধ এবং পবিত্র সম্পর্ক!

তার প্রায় মাসখানেকের ভেতরেই ঘটা করে ওদের রিসেপশনেদ আয়োজন করা হলো।ওলভিয়া পিট দুজনেই রিসেপশন এ এটেন্ড করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলো।দুজনে বিয়ে করেছে।বাংলাদেশের রীতিনীতিগুলো ভীষণ ভাবে এঞ্জয় করলো ওরা।ছবির,নাহিদ মৌনতা,মুক্তা অনু,সবার সাথেই ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো ওদের।যাওয়ার সময় দুজনেই প্রায় কেঁদে ফেলেছিলো।
তারপর অনেকটা সময় কেটে গেছে।অনার্স শেষ করে মার্স্টাসে ভর্তি হয়েচে সে।আগের বাসাটা বদলে নতুন করে দুই ভাই মিলে বাড়ি করেছে।অনুপলাটা বড় হয়েছে।স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে।রোজ সকালে তাকে নিয়ে স্কুলে যায় অনু।উপল রোজ আগের মতই অফিসে যায়।আনোয়ারা বেগম নাতি নাতনীদের সাথে সময় কাটান।শুদ্ধ অবশ্য এখন বাসায় আছে।সামনে তার এফসিপিএস পরীক্ষা।ছুটি নিয়ে বাসায় বসে ধুমছে পড়ালেখা করছিলো সে।রান্নাঘরে বসে বউ শ্বাশুড়ি মিলে রান্না করছিলো।আনোয়ারা বেগম এটা ওটা বলছে,ছবি চুপচাপ শুনছে আর মাঝেমাঝে উত্তর দিচ্ছে।

শুদ্ধ স্টাডি রুমে পড়ছিলো।এফসিপিএস এর জন্য প্রচুর পড়াশোনা করতে হচ্ছে তাকে।নিরিবিলিতে বসে পড়ছিলো সে,তাদের চারবছরের ছেলে স্পর্শ গুটিগুটি পায়ে বাবার স্টাডি রুমে ঢুকলো।
শুদ্ধর কনুই চেপে ধরে ডাক দিলো,
—বাবা!
বই থেকে মুখ তুলে ছেলের দিকে তাকালো শুদ্ধ।মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
—কি বাবা?
—আমাদের বাবু কবে আসবে?
ছবি তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা।স্পর্শ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের নতুন বাবু কবে আসবে।প্রতিদিন একবার করে জিজ্ঞেস করবে,
—আর কতদিন লাগবে বাবা?
আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি।ছবি রান্নাঘর থেকে বারবার নিষেধ করে দিয়েছিলো,
—বাবা এখন পড়ছে স্পর্শ।বাবাকে একদম ডিস্টার্ব করবে না।বাবা ঘরে যাবে না,ঠিক আছে?
স্পর্শ হ্যাঁ না কিছু না বলে সোজা বাবার ঘরে চলে এলো।
উত্তরের অপেক্ষা বাবার মুখের দিকে চেয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সে।
শুদ্ধ দুহাতে ছেলের ছোট্ট নরম শরীরটাকে শূন্যে উঠিয়ে কোলে তুলে নিলো তাকে।একহাতে বই বন্ধ করে স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালো।ছবির রান্না শেষ।মাছভাজি হয়ে গেলেই চুলা বন্ধ করে দেবে সে।
—এই শুনছো?
শুদ্ধর কোলে ছেলেকে দেখে ছবি বিরক্ত কন্ঠে বলল,
—তোমাকে মা নিষেধ করেছি না স্পর্শ,বাবাকে এখন ডিস্টার্ব করবে না?
স্পর্শ জবাব দিলো না।ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলটা মুখে পুরে দিলো সে।শুদ্ধ ছেলের মুখ থেকে আঙ্গুলে বের করে বলল,
—ছি!বাবা ময়লা!
ছবি ছেলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
–আসো মায়ের কাছে আসো।
মুখ ফিরিয়ে নিলো স্পর্শ।
—থাক!আমার কাছে।
ছবি বিড়বিড় করে বলল,
—বড্ড জ্বালাচ্ছে এই ছেলে!
শুদ্ধ মুচকি হেসে বলল,
—ছেলের বাবা সেটা পুষিয়ে দেবে!
ছবি লজ্জায় থতমত খেয়ে বলল,
—আপনি পড়বেন না?
—না।এখন আমার ছেলের প্রশ্নের উত্তর দেবো।
—রোজ রোজ এই এক প্রশ্ন!তোমার বিরক্ত লাগে না?
শুদ্ধ হাসলো।বলল,
—বিরক্ত লাগবে কেন?আমি তো আমার ছেলের ধৈর্য দেখে মজা পাই!..তো বলুন বাবুর আম্মু, আমাদের নতুন বাবু কবে আসছে?
—আমি জানি না।আপনারা বাবা ছেলে মিলে হিসেব করুন!
শুদ্ধ আবারো হাসলো।রান্নাঘরে ভেতরে চোখ বুলিয়ে বলল,
—মা কোথায়?
—উনার ঘরে।বড়মামা ফোন করেছেন, উনার সাথে কথা বলছেন।
—ভাবি এখনো অনুপলাকে নিয়ে ফেরেনি?
—আজকে স্পোর্টস কম্পিটিশন আছে।ফিরতে দেরী হবে।
স্পর্শ বাপের ঘাড়ে মাথা এলিয়ে দিয়ে বুকের সাথে মিশে আছে।শুদ্ধ ছেলেকে কোলে নিয়ে মায়ের ঘরের দিকে গেলো।যাওয়ার টুক করে একটা চুমু খেয়ে গেলো ছবির গালে।
ছবি একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে।এখনো কত সুন্দর এই মানুষটা!একটুও পরিবর্তন হয় নি।এখনো তার মুখের দিকে তাকালে মনে যেন মায়ার সাগরে ডুব দিয়েছে ছবি।এখনো কাছে এলে বুক ধড়ফড় করে ছবির।হাসি হাসি মুখে তাকালে মনে হয় যেন সমস্ত পৃথিবী আলোকিত হয়ে গেছে।ছেলেটা হয়েছে একেবারে বাপের মত।সরলশান্ত, কিন্তু জলের মত স্বচ্ছহৃদয়!
অবাক লাগছে ছবির।এতটা সময় কোনখান দিয়ে কেটে গেছে টেরই পায় নি সে।তবে অল্প অল্প করে সাজিয়ে তোলা গল্পটা এখনো অল্প মনে হয় তার।মনে হয় যেন হাজার বছর বেচে থাঁকলেও সেই গল্পটা অল্পই মনে হবে।শুদ্ধ কখনো পুরোনো হতে দেয় নি সেই গল্প,প্রতিবার নতুন করে নতুন রূপে সাজিয়েছে।মনের অজান্তেই হাসছে ছবি ।সুখের হাসি প্রচন্ড সুখের!
.
.
সমাপ্ত