নাম না জানা পাখি পর্ব-১৬

0
672

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_১৬

খুশির বাসার সব নিয়ম শেষ করে খাওয়া দাওয়া করে এবার আসে খুশির বিদায়ের পালা। মাহিরকে এখন যেতে হবে তার বাসায় সঙ্গে খুশিকেও নিয়ে যাবে। বিদায় সময় খুশি তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না, তার আম্মুর তো খুশি ছাড়া কেউ নেই এখন কে দেখবে আম্মু কে এই ভেবে খুশি কান্না করেই যাচ্ছে। মাহির খুশির এতো কান্না আর দেখতে পারছে না, তাই খুশিকে বলে কাল আবার আসবে এই বাসা। সবাই কে বিদায় দিয়ে খুশিকে প্রায় জোর করেই নিয়ে গেলো মাহির,। মাহির গাড়ি ড্রাইভ করছে পাসে খুশি বসে নাক টানছে। মাহির একটা টিস্যু বের করে খুশিকে দেয় খুশি সেটা নেয়।মাহির বলে,,

“এতো কান্না কেনো করছিলে মনে হচ্ছে তোমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলো তুমি শশুরবাড়ি যেতে চাও না।”

খুশি নাক টানতে টানতে বলে।

“আপনি বুঝবেন না, মেয়েদের শশুরবাড়ি যাওয়ার সময় তার পরিবার রেখে আসতে কতটা কষ্ট হয় তা। আপনি তো ছেলে বউ নিয়ে নিজের বাসায় থাকবেন কিন্তু আমি তো আর আম্মুর কাছে থাকতে পারবো না।”

“এটাই নিয়ম, নিয়ম তো আর পালটানো যাবে না।”

খুশি আর কিছু বললো না, মাহির ও চুপ মাহির গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে খুশি যখন দেখলো মাহিরের ফ্লাটের রাস্তা পার হয়ে চলে যাচ্ছে তখন খুশি মাহিরকে বলে।

“আরে আরে কথায় যাচ্ছেন আপনার ফ্লাটের রাস্তা তো ওই দিকে। ”

“তোমাকে তোমার শশুর বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, আমার আব্বু আম্মু যেখানে থাকে সেখানে।”

“ওহ তো আপনি একা ফ্লাটে কেনো থাকতেন?”

“একা থাকতে আমার ভালো লাগতো তাই।”

“আচ্ছা আপনার আব্বু আম্মু যদি রাজি না হয় এই বিয়ে যদি মেনে না নেই তখন??”

“বাসায় গেলেই বুঝতে পারবে।”

খুশি আর কিছু বললো না তবে মনে মনে তার খুব ভয় করছে। মাহিরের আব্বু আম্মু কেমন হবে ভেবে যদি তাকে মেনে না নেয়? তাহলে কি মাহির তাকে বাসা থেকে বের করে দিবে? মাহিরের আম্মু কি টিভি সিরিয়ালের শাশুড়ী গুলার মতো বজ্জাত নাকি ভালো। আমার সঙ্গে যদি ঝগড়া করে তখন? ,,,,,৷ খুশি এমন হাজারো কথা ভাবতে ভাবতে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পরে। প্রায় ঘন্টা খানিক পরে মাহির খুশিকে ডাকে,, মাহিরের ডাকে খুশি এই ধড়ফড়িয়ে উঠে। মাহির বলে,,

“আমরা এসে গেছি নামো। ”

খুশি গাড়ি থেকে নেমে দেখে বিশাল বড়ো বাড়ি, অনেক সুন্দর ও খুশি ভাবে এতো বড়ো বাড়ি রেখে মাহিরের ফ্লাটে থাকতে ভালো লাগতো আজব ছেলে তো। মাহির খুশির হাত ধরে নিয়ে যায় দরজার কাছে এসে বেল বাজায়। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দেয় মাহিরের আম্মু যেনো তাদের জন্যই বসে ছিলো। খুশি চিনতে পারলো না মাহিরের মা কে তাই তাকিয়ে আছে ওনার মুখের দিকে। মাহিরের আম্মু খুশির গালে হাত দিয়ে বলে।

“মাশআল্লাহ আমার বউমা কত্তো সুন্দর।”

খুশি এবার বুঝতে পারে এটা তার শাশুড়ী আম্মু খুশি সালাম দেয়। তখনি একটা লোক আসে “কই কই আমার বউমা কই ” এই বলতে বলতে। খুশি বুঝলো এটা তার শশুর। ওনাকেও সালাম দিলো খুশি,, খুশির মুখ দেখে খুশি কে একটা গয়না দিলো শশুর আব্বু। আর মাহিরের আম্মু বালা পরিয়ে দিলো। খুশি ভালো করেই বুঝে গেলো তার শশুর শাশুড়ী খুব ভালো মানুষ আর এই বিয়ের ব্যাপারেও জানে আগে থেকে। মাহিরের আম্মু বলে,,

“এখন অনেক রাত হয়েছে বাকি পরিচয় কাল সকালে হবে,, মাহির তুই খুশি মামনি কে কলে করে তোর রুমে নিয়ে যা আমি সব কিছু ঠিক করে রেখেছি। খাবার ও দিয়েছি খেয়ে নিস। ”

মাহির তাই করলো খুশি কে কলে তুলে নিয়ে যেতে লাগলো এতে বেশ লজ্জা পেলো খুশি। শশুর শাশুড়ীর সামনে কলে নিয়েছে কি লজ্জা কি লজ্জা। মাহির খুশিকে নিজের রুমে নিয়ে আসে রুম দেখে তো দুই জনেই অবাক। কি সুন্দর গোলাপ ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজানো। মাহির ভাবেনি তার আম্মু বাসর ঘর সাজাবে তবে মনে মনে খুব খুশিই হলো মাহির তার আম্মু কে ধন্যবাদ দিলো। খুশি লজ্জায় শেষ কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে খুশির। মাহির খুশিকে নামিয়ে বলে।

“যাও ফ্রেশ হয়ে নাও আলমারি তে কাপর রাখা আছে তার মধ্যে ব্লাক শাড়ি টা পরবে।”

খুশি কিছু না বলে কালো শাড়ি টা নিয়ে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। সেই সকালে গোসল করেছে খুশি তাই আবার গোসল করে নিলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো মাহির খাবার বারছে ড্রেস পালটে নিয়েছে মনে অন্য রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসেছে। মাহির ব্লাক টি শার্ট আর টাওজার পরেছে। খুশি গিয়ে মাহিরের পাসে বসে মাহির খুশিকে দেখে গোসল করেছে চুল থেকে পানি পরছে এখনো।

“গোসল করলে কেনো এতো রাতে?”

“ভালো লাগছিলো না তাই, আমার খুদা লাগছে। ”

“আচ্ছা নাও খেয়ে নাও। ”

মাহির খুশি দুই জনে খেয়ে নেয়,, খাওয়া শেষে মাহির প্লেট গুলা নিয়ে নিচে রাখতে চলে যায়। খুশি রুম টা ভালো করে দেখতে লাগে কি সুন্দর রুম টা বেডের ওপরে মাহিরের ছবি গিটার হাতে কি কিউট লাগছে দেখতে মাহির কে। খুশি দেখলো একটা বারান্দায় ও আছে খুশি বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। বাড়ি টা শহর থেকে বেশ দুরেই নিরিবিলি যায়গায় তাই ইট পাথরের বিল্ডিং বাদে গাছ পাহার দেখা যাচ্ছে। খুব সুন্দর লাগছে খুশির কাছে,,, খুশি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ব্যাস্ত তখন পিছন থেকে মাহির এসে জড়িয়ে ধরে খুশিকে। খুশি কেপে উঠে,, মাহির খুশির চুলে মুখ ডুবিয়ে বলতে শুরু করে।

“তোমাকে রোদের সঙ্গে হাসাহাসি করে হাতে হাত রেখে যেতে দেখে আমার খুব রাগ লেগেছিলো তাই পরের দিন সকালে জারা কে ডাকি। আমার বেডে থাকতে বলি,, আমি জানতাম রাহুলকে পড়িয়ে তুমি আসবে আর আমাকে এভাবে অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে দেখে কষ্ট পাবে তাই আমি এমন করেছি। জারার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই শুধু জারা কেনো অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গেই আমার সম্পর্ক নেই আমি তো একজনকেই ভালোবাসি সেটা রামপুর গ্রামের সেই পিচ্চি সাদা ড্রেস পরা মেয়েটাকে। যে আমাকে আমারদেরই আম গাছের আম চুরি করিয়েছে সেই মেয়েটাকে। এখনো ভালোবাসি খুব,, আমি কলকাতাই ব্যাক করার আগে তোমার সঙ্গে দেখা করতে যায় সেদিন। তুমি নদীতে পরে যাও আমি তোমাকে বাচায়। বাট গ্রামের কিছু লোক আমাকে ভুল বুঝে আমি নাকি তোমাকে রেপ করার চেষ্টা করেছি। সেদিন গ্রামে আমার আব্বু আমাকে আমার দাদু কে অপমান করে তোমার আব্বু আর বড়ো আব্বু। গ্রাম থেকে চলে যেতে বলে আমাদের আমি আশা নিয়ে বসে ছিলাম তুমি আসবে আর সব সত্যি সবায়কে বলবে। কিন্তু তুমি আসো নি তাই তোমার ওপর আমার রাগ অভিমান অভিযোগ জমা হয়েছিলো। এক বছর আগে কলকাতাই দেখি তোমাকে রাগ আরও বেরে যায় পুরনো ক্ষত আবার জেগে উঠে তাই তোমাকে বিয়ে করি। পরে আসতে আসতে বুঝতে পারি আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। এটাও মাথায় আসে সেদিন তুমি নদীতে পরে যাওয়ায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে। তুমি জানো না আমার সঙ্গে কি হয়েছে তা। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তোমাকে ফারাতে পারবো না আমি।

মাহিরের সব কথা শুনে খুশির চোখে পানি চলে আসে, গ্রামে এমন হয়েছিলো খুশি সত্যি জানতো না। খুশি মাহিরের দিকে ফিরে মাহিরকে জড়িয়ে ধরে আর বলে।

“আমি জানতাম না গ্রামে আপনার সাথে এমন হয়েছে আমাকে কেউ কিছুই বলে নি। এমন কি আপনি চলে যাওয়ার কিছু দিন পরেই আমাকে রামপুর শহরের হোস্টেলে রেখে আসে আমি ওখানেই এচ আস সি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি মাখে মধ্যে আব্বু আম্মুর সঙ্গে দেখা করতে আসতাম। কিন্তু আমার এচ এস সি এক্সামের পরে আব্বু মারা যায় বড়ো আব্বু ও আমাদের আর বাড়ি তে থাকতে দেয়না। তখন আমরা কলকাতাই চলে আসি অধরার সাহায্যে। ”

“হুম বুঝছি আমি,, এখন এসব ছাড়ো তুমি আমাকে আগের মতো তুমি করেই বলো এখন।”

“আপনি ই তো আপনি করে বলতে বলেছেন। ” (মুখ গমরা করে বলে খুশি)

“এখন আমি বলছি তুমি করে বলতে তাই বলবে।”

“আচ্ছা।”

“আজ কিন্তু আমাদের বাসর রাত।”(খুশির কাছে গিয়ে বলে মাহির)

খুশি লজ্জায় মাথা নিচু করে,, মাহির খুশির গাল ধরে নিজের দিকে নিয়ে এসে লো ভয়েসে বলে।

” রেডি?”

খুশি কিছু বলে না মুচকি হাসে, মাহির তার উত্তর পেয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পরে খুশিকে ছেরে দেয় মাহির, খুশি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে মাহিরের দিকে তাকাচ্ছেই না। কিছুক্ষণ পরে মাহির খুশির কাছে এসে বসে।

“তোমার শাস্তি তো এখনো বাকি আছে। ”

“কিসের শাস্তি? ” (অবাক হয়ে বলে খুশি)

“জামাই রেখে আবার বিয়ে করা তাই না।”

খুশি অসহায় চোখে মাহিরের দিকে তাকায়,, মাহির রাগি ভাব নিয়ে খুশির দিকে তাকিয়ে আছে। খুশি মিন-মিন করে বলে।

“তখন তো বুঝিনি এতো কিছু।”

“সে যাইহোক শাস্তি তো পেতেই হবে তোমাকে। ”

মাহির খুশিকে কলে তুলে রুমে নিয়ে আসে বেডে শুয়ে দেয় খুশি বুঝতে পারে কি শাস্তি দিবে তাকে। খুশি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেই লজ্জায়,, মাহির খুশির মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেয়।। এতো দিনের ভুল বুঝাবুঝি শেষ করে এক হয়ে গেলো দুই জনে।

সকালে,,,,,

খুশি গোসল করে চুল মুছতে মুছতে রুমে আসে মাহির এখনো ঘুমাচ্ছে। খুশি গিয়ে মাহির কে উঠাতে লাগে,,,

“ওই শুনছো উঠো না সকাল হয়ে গেছে। ”

মাহির চোখ খুলে খুশিকে টেনে তার ওপরে নিয়ে বলে।

“আহা কি মিস্টি ডাক,’ওই শুনো না’ বউ বউ লাগছে।”

“আমি তোমার বউ ই কাল বাসর করে আজ কি ভুলে গেলে সব?”

“না না ভুলনি তবে অনেক ভাল্লাগছে। ”

“হ্যাঁ জানি ভালো লাগবে,,, আচ্ছা শুনো একটা প্রশ্ন কাল থেকে করবো ভাবছি বাট করা হয়নি।(খুশি বলে)

” কি প্রশ্ন? “(খুশির চুল নারতে নারতে)

” কাল তুমি বললে রামপুর থেকে তুমি চলে এসেছো আমার ওপর রেগে কিন্তু তাহলে আমাকে চিঠি কে দিয়েছিলো? তুমি যেহেতু রেগে চলে গেছিলে সেহেতু তুমি চিঠি দিবে না তাহলে দিলো কে আমাকে? ”

“আমি তো কোনো চিঠি দেয়নি,, কি লেখা ছিলো চিঠিতে? আছে এখনো চিঠি টা?”

“হ্যাঁ আছে আমি তোমার চিটি ভেবেই এতো বছর রেখেছি, তুমি আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছো চিঠিতে একদিন ঠিক আসবে আমাকে নিতে এমন লিখা ছিলো। ”

মাহিরের ব্যাপারটা তে ঘাপলা দেখতে পায় কোনো গন্ডগোল আছে,, মাহির বলে।

“তুমি সেদিন নদীতে পরলে কি করে?”

“আমি পরিনি তো আমার মনে আছে আমি তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম ঠিক তখনই কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়েছিলো নদীতে। পরে আর এই ব্যাপার টা মনে ছিলো না তুমি চলে যাওয়ায়। ”

মাহিরের কাছে এবার পরিস্কার হয়ে যায়, খুশিকে ধাক্কা দেওয়া থেকে মাহিরকে অপমান করে গ্রাম থেকে বের করা খুশিকে চিঠি দেওয়া কেউ ইচ্ছে করে করেছে। মাহির সব বের করবে সব।

চলবে?

(বানান ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক মন্তব্য করুন গল্প প্রায় শেষের দিকে।)