আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-১৫

0
932

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১৫

সকালে ঘুম থেকে উঠেই অধরা জনিকে ফোন দেয় কিন্তু দুইবার রিং হওয়ার পরও রিসিভ না হওয়ায় ফোন রেখে বারান্দায় চলে আসে। কাল রাত থেকে বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় ঘুম হয়নি তার।

— ” বাসা থেকে এতোটা দূর একটা কবরস্থানে অনুরিমা মামুনি এভাবে লুকিয়ে কেনো গিয়েছিলো? এর কি কারণ থাকতে পারে? ”

হঠাত অর্ণব বারান্দায় প্রবেশ করে অধরার পাশে বসে। অধরা এক নজর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে,

— ” কি হয়েছে ভাইয়া? ”

— ” বোন, তুই আবার কি শুরু করেছিস? ”

— ” আমি আবার কি করলাম? ”

— ” তুই আর জনি মিলে কিসব তথ্য খুঁজে বেড়াচ্ছিস? আশ্বিন এসব জানলে কি হবে ভেবেছিস? জানিস তো, আশ্বিন তার জীবনের সেদিন গুলোর কথা মনে করতে চায় না। ”

— ” জানি ভাইয়া। কিন্তু সত্যিটা আমার জানার দরকার। প্রথম প্রথম শুধু আগ্রহ নিয়ে অনুরিমা মামুনির এমন কাজের কারন জানতে চেয়েছিলাম। এর পর থেকে সবকিছু কেমন যেন রহস্য জনক মনে হচ্ছে।
জানি না কেনো মনে হচ্ছে, যা হচ্ছে তা সত্য না। আর সত্যটা আমরা জানি না। ”

— ” কি হয়েছে আমাকে সব কিছু ঠিক করে বলো। ”

অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবকিছু অর্ণবকে খুলে বলে। অর্ণব সবটুকু শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে,

— ” এমন তো হতে পারে কবরটা উনার কোন দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের। ”

— ” হুম হলেও পারে ভাইয়া। কিন্তু মনের সন্দেহ দূর করতে এর আসল কারণটা আমার জানা দরকার। তাই তো জনি ভাইয়ার সাহায্য নিয়েছি। ”

— অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” অধরা, জনি আমার জন্য অন্যান্য বিজনেস ম্যানদের সব ডিটেইলস কালেক্ট করে ঠিক, কিন্তু আমি কখনো তাকে কারো পার্সোনাল লাইফের তথ্য কালেক্ট করতে দেইনি। এটা ঠিক না।
তোর এট লিস্ট আমাকে জানানো উচিত ছিল। যাই হোক, আমি এবারের জন্য কিছু বললাম না তবে এমন যেন আর না হয়। কোন সমস্যা হলে আগে ভাইয়াকে বলবি। নিজ থেকে মাতব্বরি করবি না। ”

— অধরা মুচকি হেসে, ” ঠিক আছে ভাইয়া। ”

অর্ণব কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা অর্ণবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে,

— ” সরি ভাই। তোমাকে না জানিয়ে এমনটা করা হয়তো ঠিক হয়নি।
ভাইয়াকে আরো আগে বললে হয়তো অনেক সাহায্য করতে পারতো। ”

দেখতে দেখতে দুদিন পার হয়ে যায়। কিন্তু জনি একবারও অধরাকে কল দেয়নি। এর মধ্যে অধরা অর্ণবকে বারবার জনির খবর জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি।
এদিকে আশ্বিনও একটু পর পর কল দিয়ে অধরার খোঁজ নিয়েছে। অধরা হাজার চিন্তিত মন নিয়েও আশ্বিনকে তা বুঝতে দেয়নি।

🌻পরদিন🌻

অধরা কণার রুমে বসে এক ধ্যানে কিছু ভেবে যাচ্ছে। তার পাশে কণা কিছু শাড়ি সিলেক্ট করছে আর অধরার সাথে কথা বলছে।

হঠাত অধরার ফোন বেজে ওঠায় অধরা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে জনি। অধরা তড়িৎ গতিতে ফোন নিয়ে নিজের রুমে এসে,

— ” হ্যালো জনি ভাইয়া, কোথায় আপনি? কালকে আমি কতোবার ফোন করেছি। ”

— ওপাশ থেকে শান্ত কণ্ঠে, ” ছোট মনি, কাল সারাদিন প্রমাণ খুঁজতে ব্যাস্ত ছিলাম। অনেক কষ্টে সব কিছু জানতে পেরেছি। ”

— ” সত্যি? তাহলে কবরটা কার ছিলো? অনুরিমা মামুনি কেনো সেখানে গিয়েছিলো? ”

— ” বলবো। তবে, ফোনে বলা যাবে না। তুমি সম্ভব হলে এখনি বাসার সামনের ক্যাফেতে চলে আসো। ”

— ” আচ্ছা। আমি এখনি আসছি। ”

অধরা ফোন রেখে জলদি রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে।

🌻🌻

অধরা আর জনি কফি শপে মুখোমুখি বসে আছে। জনি অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ বসে আছে। অধরা তার দিকে তাকিয়ে,

— ” জনি ভাইয়া, কি হয়েছে? আপনি কিছু বলছেন না কেনো? ”

— ” ছোট মনি, আসলে,
আমি সত্যিটা জানতে পেরেছি। যদিও অনেক কষ্টে সবকিছু জানতে পেরেছি।

কাল তোমার কথা শোনার পর, প্রথমেই আমি সাথে সাথে কবরস্থানের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা লোকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারা বলেছে এই কবরটা নাকি বেশ আগের তখন উনারা এখানের দায়িত্বে ছিলেন না। তাই এই কবর সম্পর্কে কিছু জানেন না। তবে এই কবরটা নাকি হঠাত রাতারাতি হয়ে গিয়েছে। কেউ তেমন এর সম্পর্কে জানে না। ”

— ” তারপর…। কিভাবে জানতে পারলেন? ”

— ” উনাদের সাথে কথা বলে যখন আমি চলে আসছিলাম তখন হঠাত একটা বৃদ্ধ লোক এসে জানান, হালিম সাহেব নামক একজন লোকের কথা। যে কিনা বলতে পারবে এই কবরটা কার।
আমি উনার কাছে ঠিকানা নিয়ে সেই অনুযায়ী যাই। কিন্তু দুর্ভাগ্য উনারা তখন সেই এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলেন।
আশেপাশের অনেক মানুষদের জিজ্ঞেস করে একটা ধারণা পেয়েছিলাম উনি এখন কোথায় আছেন তাই দেরি না করে সেখানে চলে যাই।

কিন্তু, এতো কষ্টে উনাকে খুঁজে পাওয়ার পরও তেমন লাভ হয়নি। কারণ উনি নাকি একটা এক্সিডেন্টে প্যারালাইস্ড হয়ে গিয়েছেন। কথা বলার ক্ষমতাও উনার নেই। ”

— অধরা আফসোস করে, ” মানে কি? সবটা শুনে তো মনে হচ্ছে কেউ একজন সব তথ্য গোপন রাখতে এসব করছে। ধুর!
যাই হোক, তারপর? ”

— ” আমি যখন হতাশ হয়ে ফিরে আসছিলাম তখন উনার ছেলে এসে জানান সেই কবরটা কার উনি সেটা জানেন।
আমি কারণ জানতে চাইলে বলেছেন, অনেক দিন আগে একজন মহিলা তার বাবার কাছে এসে কবরটার কথা জানতে চেয়েছিলেন। প্রথমে তার বাবা ভয়ে বলতে না চাইলেও পরে মহিলার প্রতি মায়া লাগায় তিনি বলেছেন। আর ফল স্বরূপ সেদিনই তার বাবার এক্সিডেন্ট হয়।
হয়তো মহিলাটা আর কেউ না অনুরিমা ছিলো। ”

— ” কেউ একজন ইচ্ছে করে উনার এক্সিডেন্ট করাননি তো?
অনুরিমা মামুনিও প্রথম এই কবরটা সম্পর্কে জানতো না। এটা কি করে সম্ভব? ”

— ” আমি যখন ছেলেটাকে কবরটা কার জিজ্ঞেস করলাম তখন তার উত্তর আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছিলো। আমি কোনভাবেই কথাটা বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু তারপর সব তথ্য নিয়ে জানতে পারি এটাই সত্যি। ”

— ” কার ছিলো? কে সে? ”

— ” কবরটা,
আকাশ চৌধুরীর। আশ্বিনের বাবার। ”

জনির কথাটা হঠাত করে শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়। মাথায় রক্ত চলাচল যেনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার।

— অধরা কাপা কণ্ঠে, ” ক..ক..কিহহহ? ”

— ” এটাই সত্য ছোট মনি। ছেলেটা বলেছিলো এই কবর মহিলাটার স্বামী মানে আকাশ চৌধুরীর। ”

— ” আরে জনি ভাইয়া। এটা সম্ভব না। আকাশ চৌধুরী তো লন্ডনে থাকে। সেখানেই উনার বিজনেস সামলে রাখছেন…। ”

— ” এটা মিথ্যা। এই দেখো, আকাশ চৌধুরীর পাসপোর্ট। হ্যা উনি এখানে থেকে পাসপোর্ট চেক করালেও তিনি সেই ফ্লাইট দিয়ে লন্ডনে যায়নি।
লন্ডনে আমি আমার লোক দিয়ে খোঁজ নিয়েছি বাট সেখানে কেউ জানেন না আকাশ চৌধুরীর কথা।
এইযে সব তথ্য এখানে আছে। ”

অধরা কাপা কাপা হাতে ফাইল নিয়ে সব চেক করতে শুরু করে। সবটা দেখে অধরা সোজা হয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। তার মাথায় কোন কাজ করছে না।

— ” কিভাবে হলো এসব? উনি কিভাবে মারা গেলেন? আর এই কথা অনুরিমা মামুনি কাউকে কেনো বললেননি? ”

— ” খুব সম্ভবত উনাকে খুন করা হয়েছে। আর তাই সব প্রমাণ শেষ করে দিতে সবকিছু করেছেন।
আর আমার মনে হয় অনুরিমা সব জানেন। তাকেও হয়তো কোন এক ভাবে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে নয়তো উনিও এর সাথে জড়িত।
আমাদের পুলিশকে জানানো উচিত। ”

— ” এখনই বলা যাবে না। কাল অনুরিমা মামুনির সাথে আমি কথা বলবো। তারপর চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ”

— ” ঠিক আছে। ”

অধরা কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আশ্বিনের জন্য খুব খারাপ লাগছে তার। আশ্বিন সবটা জানতে পারলে কতোটা কষ্ট পাবে। আর দাদি, উনাকে কি বলবো? কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অধরা।

—চলবে❤