Game 2 Part-10+11+12

0
552

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১০

নির্ঝর নিরব কে দেখে চমকে উঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো..
– এই শালা এখানে কি করছে এতো রাতে! এতো রাতে এখানে আসতে কে বলেছিলো ওকে! কিন্তু কেনো এসেছে ও এখানে। মতলব কি ওর!

নির্ঝর দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল নিরব কি করে। এদিকে নিরব এখানে এসেছে মেহেরিন কে দেখতে। মেহেরিন কে অনেক ভালোবাসে সে। কিছুক্ষণ চুপ হয়ে বসে মেহেরিন কে দেখছিলো। ঘুমন্ত মেহেরিন দেখতে ভালো লাগছিলো তার। ইচ্ছে হলো এই ঘুমন্ত মেহেরিন কে একটু ছুঁইয়ে দিতে। সেই নেশায় মেহেরিন’র গালে হাত দিতে যাবে হঠাৎ করে তার হাত কেউ ধরে ফেলল। নিরব চমকে উঠলো অতঃপর সামনে তাকিয়ে দেখল নির্ঝর! সে কিছু বলতে যাবে নির্ঝর চোখের ইশারায় তাকে কথা না বলতে বললো। অতঃপর তাকে টেনে নিয়ে বেলকনিতে এলো।

নির্ঝর রেগে নিরব কে বলে..
– এখানে এতো রাতে কি করতে এসেছিলে?

– তুমি কি করতে এসেছিলে।

– আমি যাই করতে আসি না কেন সেটা তোমাকে বলতে বাধ্য নই।

– সেইম কথা আমারো! আমার মেহেরিন’র ঘরে তুমি কি করতে এসেছো

– তোমার মেহেরিন মানে আমার মেহু পাখি!

– না ও আমার মেহেরিন।

– আমার মেহু পাখি।

– বেশি হচ্ছে কিন্তু আমি চাইছি না কোনো ঝামেলা করতে।

– ইয়েস আমিও চাই না। আমার মেহু পাখির থেকে দূরে থাকবে।

– আমার মেহেরিন’র কাছে আমি আসবো। তুমি কে আমাকে না বলার!

– আমার মেহু পাখি ও।

– আমার মেহেরিন!

এর মাঝে হঠাৎ মেহেরিন এসে বলে উঠল..
– আমি আমার দা এর আদুরী আর কারো সম্পত্তি না!

নিরব আর নির্ঝর ঝগড়া ধামিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে পাশে তাকিয়ে দেখল মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে। দুজনেই অবাক, কি বলবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ করেই মেহেরিন বলে উঠে..

– আমার ঘর থেকে দূর হও দুজন!

তারপর ধপাস করে বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় গিয়ে আবার শুয়ে পড়ল। এদিকে নিরব আর নির্ঝর দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইল।
.
পরদিন বিকালে…
নির্ঝর সবে এসেছে মেহেরিন’র বাসায়। আজ অফ ডে বলে মেহেরিন কে দেখে নি সে। তাই বাসায় চলে এসেছে। এখানে এসে দেখে নিরব আগে থেকেই বসে আছে এখানে। সবাই মিলে আড্ড দিচ্ছে। নিহা নির্ঝর কে দেখতে পেয়ে ডেকে বললো তাদের সাথে বসতে। অতঃপর নির্ঝর তাদের সাথে যোগ দিলো। খানিকক্ষণ ধরেই নির্ঝর আর নিরব দুজনে খেয়াল করছে মেহেরিন তাদের দিকে কিভাবে যেনো তাকিয়ে আছে। তারা দু’জনই ভয়ে আছে মেহেরিন না কাল রাতের ঘটনার কথা সবাইকে বলে দেয়। ও যা মেয়ে বলতে বেশিক্ষণ লাগবে না।

হুট করেই মেহেরিন বলে উঠলো..
– জানো দা কাল কি হয়েছে?

নিরব আর নির্ঝর দু’জনেই শুকনো ঢোক গিলল।

– কিহ?

– কাল রাতে আমি যখন ঘুমিয়েছিলাম…

বলার আগেই নিরব বলে উঠে..
– দা আমি বলছিলাম কি চলো আমরা কোথায় ঘুরতে যাই!

নির্ঝর বলে উঠে..
– দা আমিও কিন্তু এই কথাই ভাবছিলাম!

– ভালোই হয় তোমার ডিসাইড করো কোথায় যাবে। আচ্ছা আদুরী তুমি কি বলছিলে?

– বলছিলাম কি কাল রাতে আমি যখন..

নিরব আবার বলে উঠে..
– দা আরিশা ও যাক আমাদের সাথে!

আরিশার কথা শুনে রোদ্দুর খানিকটা খুশি হয়ে যায়। দা বলে..

– তোমরা বন্ধুরা যাবে এতে আমি কি বলতে পারি!

মেহেরিন বিরক্ত হয়ে বলে..
– আমি কি বলতে চাই সেটাও কেউ শোন!

– আচ্ছা বলো!

মেহেরিন বলতে শুরু করল। নিরব আর নির্ঝর দুজনে একসাথে মাথা নিচু করে নিলো। অতঃপর মেহেরিন বলল..

– কাল আমি ঘুমানোর পর স্বপ্নে এই দু’জন কে একসাথে দেখেছিলাম!

– একসাথে!

স্বপ্নের কথা শুনে দুজনেই হাফ ছেড়ে বাঁচে। এদিকে দুজনে একসাথে স্বপ্নে এই কথা শুনে সবাই অবাক। নির্ঝর বলে উঠে..

– বাবা.. আমাকে স্বপ্নেও দেখলে তুমি!

নিরব বলে উঠে..
– আমাকেও দেখেছে!

– তো!

– কিছু না এমন ভাবে বললে যে খুব কাছের কেউ তুমি.

– আমি তো কাছের’ই।

– আমিও ফ্রেন্ড ওর ‌

– কতোদিন আর থাকবে!

– কি বলতে চাও তুমি!

নীল বলে উঠে..
– আরে আরে চুপ! দুজনেই চুপ কর। মেয়েদের মতো এতো ঝগড়া কেন করছিস?

হঠাৎ নীলাশা বলে উঠে..
– কি বলতে চান আপনি আমি আপনার সাথে ঝগড়া করি।

– আরে আমি তো!

– কি আপনি!

– আচ্ছা সরি!

নীলাশা মুখ ভেংচি কাটল। সবাই হেসে উঠল!
আনহা বলে উঠে..
– মেহেরিন স্বপ্নে কি দেখলে সেটা বলো!

মেহেরিন বলল…
– দেখলাম দুজনে আমার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে। ঠিক এভাবেই ঝগড়া করছিল।

কাব্য বলে..
– ঠিক কি বলছিলো আদুরী!

– একজন বলছিলো আমার মেহেরিন আরেকজন আমার মেহু পাখি!

ইহান বলে..
– কেমন জানি বাস্তব বাস্তব লাগছে!

আহিয়ান বলে..
– তো তুমি কি করলে শালিকা!

– আমি! আমি উঠে বললাম আমি তো আমার দা’র আদুরী। তারপর ধপাস করে বেলকনির দরজা বন্ধ করে টপাস টপাস করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম

মেহেরিন’র কথায় এক ঝড় হাসির বন্যা বয়ে গেল।কারো হাসি থামার নাম নেই। সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা! নিশি মাঝে বলে ..
– বাস্তবে এই দুজনের সাথে এমন’ই হবে!

অতঃপর সবাই আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর ঠিক করলো সবাই কক্সবাজার যাবে ঘুরতে।এতেই সবাই রাজি হলো। আরিশা কেও তাদের সাথে যাবার জন্য বলা হলো!

অতঃপর কক্সবাজার যাওয়ার দিন…
আজ সকালেই সবাই কক্সবাজার যাবার জন্য রওনা দিবে। সবাই সকালের মধ্যে’ই তৈরি হয়ে এসে পড়ে খান বাড়িতে। নীল আর নীলাশা এক গাড়িতে। অভ্র, আনহা, আহিয়ান আর নিহা এক গাড়িতে। নিশি, ইহান, কাব্য, রোদ্দুর এক গাড়িতে তবে মেহেরিন ইচ্ছে করেই এই গাড়িতে নিজে আর আরিশা উঠে। অতঃপর আরিশা কে রোদ্দুর’র পাশে বসায়। এই গাড়িটা বড় ছিল বিধায় শান্ত আর অরনি উঠে পড়ে এই গাড়িতে। এই দিকে গাড়িতে সিট আর একজনের। নিরব আর নির্ঝর দুজন দুজনকে দেখছে। তাদের কেউ না কেউ এই গাড়িতে উঠবে ব্যস।

নির্ঝর গাড়িতে উঠবে তখন অভ্র ডাক দেয় যার কারনে নিরব উঠে পড়ে গাড়িতে। নির্ঝর মুড অফ করে তাকিয়ে থাকে। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে ডেভিল আর তার পাশে নিরব। পরের সিটে ইহান, নিশি, রোদ্দুর আর আরিশা। আর পিছনের সিটে মেহেরিন, অরনি , শান্ত আর তার পাশে কাব্য। নির্ঝর রাগে কিছুই বলতে পারছে না। গাড়ির দরজা বন্ধ করতে যাবে এর আগেই অরনি বলে উঠে..

– আমি ব্যাঙ আংকেল এর সাথে বসবো!
( মেহেরিন’র থেকে শুনে শুনে অরনি ও এই নামেই ডাকে, তবে ও একটু ছোট করে ডাকে )

মেহেরিন বলে উঠে..
– আম্মুজান এখানে আর জায়গা নেই তো!

– আমি আংকেল’র সাথেই বসবো। উনি আমাকে চকলেট দেয়।

সবাই বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে এমনকি নির্ঝর নিজেও বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু অরনি তবুও মানে না। অবশেষে কাব্য বলে..

– আচ্ছা নির্ঝর তুমি বরং আম্মু জান কে কোলে নিয়ে বসো। ঠিক আছে আম্মু জান!

অরনি হেসে বলে..
– হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ব্যাঙ আংকেল’র কোলেই বসবো!

নির্ঝর হেসে অরনি কে কোলে নিয়ে মেহেরিন’র পাশে বসে। এদিকে আয়নায় নিরবের দিকে তাকাতেই সে একটা বাঁকা হাসি দেয়।
.
নিরব কিছুক্ষণ পর পরই গাড়ির সামনের আয়নায় তাকিয়ে তাকিয়ে নির্ঝর কে দেখছে। এখানে নির্ঝর তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে। সে গেইম খেলায় ব্যস্ত। শান্ত’র সাথে বাজি ধরে লুডু খেলছে। তার কোনো খেয়াল নেই এখানে তারা দুজন কি করছে।

এখানে আরিশা এখন কমফোর্টেবল ফিল করছে রোদ্দুর’র সাথে। গাড়িতে বসার পর থেকেই কথা আর কথা। রোদ্দুর ও কথা বলছে বেশ। নিশি আর ইহান দুজন দুজনকে খোঁচা মেরে দেখছে তাদের হাল।

#চলবে….

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১১

সারাদিনের জার্নি শেষে অবশেষে তার পৌঁছায় কক্সবাজার। সেখানে একটা রিসোর্টে তাদের রুম বুক করা হয়। তারা আসতে আসতে প্রায় রাত ‌১.৩০ বেজে যায়। রিসোর্টে’র মালিক নিজে এসে তাদের ফুল দিয়ে তাদের স্বাগত জানায়। এতো জার্নির পর সবাই বেশ ক্লান্ত বিধায় কেউই আর দাঁড়িয়ে থাকে। সবাই তাদের নিজ নিজ রুমে চলে যায়। অভ্র, আনহা আর শান্ত’র জন্য একরুম। নীল – নীলাশা’র জন্য এক রুম। আরিশা আর নিশি’র বেশ ভাব জমে যায় এজন্য তারা এক রুমে থাকে। বাকি সবাই তাদের নিজ নিজ জন্য আলাদা আলাদা ঘরে থাকে। তবে নির্ঝর এখানে চালাকি করে মেহেরিন’র ঠিক সামনে অর্থাৎ বিপরীত রুম বুক করে।

যে যার মতো ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তাদের রিসোর্ট’টা সমুদ্রের পাশেই ছিল। রাতে ঘুমানোর সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ কানে আসে। মেহেরিন বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার পর পর’ই ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ ভোরে কারো ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙ্গে যায় মেহেরিন’র। মেহেরিন ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহেরিন কোম্বল মুড়ি দিয়ে বলতে থাকে….

– এই লেজ কাটা ব্যাঙ’টা সারাদিন আমাকে জ্বালিয়ে মন ভরে না এখন স্বপ্নতেও জ্বালাতে আসে।

– আমি তোমার স্বপ্ন না মেহু পাখি বাস্তব!

– ওহ্ আচ্ছা ভালো!
বলেই মেহেরিন ঘুমিয়ে পড়ে হঠাৎ মেহেরিন লাফ দিয়ে উঠে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে..

– আমার রুমে আপনি! আপনি এখানে কি করছেন?

নির্ঝর হেসে বলে..
– তুমি আমায় ব্যাঙ বলো কিন্তু ব্যাঙের মতো লাফালাফি তো তুমিই করো।

– আমার ঘরে আসলেন কি করে?

নির্ঝর হেসে বলল..
– এটা ইম্পর্ট্যান্টে না ইম্পর্ট্যান্টে হলো কেন এসেছি!

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নির্ঝর হাতের ঘড়ি’র দিকে একবার তাকিয়ে বলে..
– তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো আর ৭ মিনিট আছে।

– ৭ মিনিট পড়ে কি?

– ৭ মিনিট পড়েই দেখবে এখন জলদি যাও লেট হচ্ছে!

কিন্তু মেহেরিন না উঠে বসেই রইল। নির্ঝর মেহেরিন টেনে উঠিয়ে বলল..
– প্লিজ যাও সত্যি বলছি বোর হবে না।

মেহেরিন বিরক্ত মুখে ফ্রেশ হয়ে এসে একটা কালো রঙের জ্যাকেট পড়ে নিল। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র হাত ধরে বলল..

– আসো আমার সাথে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

– কিসের সময়?
কিন্তু এই কথা নির্ঝরের কানে গেল না। নির্ঝর মেহেরিন কে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। অতঃপর বেলকনিতে আনতেই মেহেরিন রেগে নির্ঝরের হাত ছেড়ে বলল..

– কি হয়েছে টা কি এমন করছেন কেন? এভাবে আমাকে ধরে রাখার মানে কি?

নির্ঝর মেহেরিন’র গাল দুটো চেপে ওপাশে মুখ ঘুরাল। মেহেরিন সেখানে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর মেহেরিন’কে ছেড়ে দিয়ে গ্রিলে হাত দিয়ে বলল..

– কেমন এটা?

– ইটস জাস্ট ওয়াও!

মেহেরিন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সমুদ্রের দিকে। সূর্য উদয় হচ্ছে সবে। খানিকক্ষণ’র মধ্যেই সূর্যের কিরন ছড়িয়ে যেতে দেখল। এটা সত্যি দারুন তবে। খুব অপূর্ব দেখায় যখন সূর্য তার কিরন ছড়িয়ে দেয়। সব অন্ধকার দূর হয়ে দেখা মিলে আলোর। একে একে সব আলোকিত হয়। এর মাঝে সমুদ্রের ধীরে স্থিরে বয়ে চলাও কম মনোমুগ্ধকর নয়। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব খানে দেখা যায় না। মেহেরিন চোখ ভরে এই সৌন্দর্য দেখছিল। সবে সূর্যের আলো এসে পড়েছে মেহেরিন’র মুখে। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে

নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে..
– এটা দেখাতেই এনেছিলাম, সূর্য উদয়। জানতাম তোমার ভালো লাগবে!

মেহেরিন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে..
– এটা খুব সুন্দর !

নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে..
– অপূর্ব সুন্দর!
নির্ঝর সূর্য উদয়ের পুরোটা সময় মেহেরিন’র দিকেই তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ করেই মেহেরিন তার দিকে নির্ঝর চোখ ফিরিয়ে নেয়। মেহেরিন এবার সিরিয়ার হয়ে বলে..

– এখন বলুন রুমে আসলেন কিভাবে?

– তুমি এখনো ভুলো নি!

– নাহ কারন কাল আমি বেলকনির‌ দরজা আটকে দিয়েছিলাম তো বেলকনি দিয়ে আসবেন এটা অসম্ভব!

নির্ঝর শান্ত ভাবেই তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে নির্ঝর’র দিকে। অতঃপর বলে উঠে..
– ডুবলিকেট চাবি! আপনি ডুবলিকেট চাবি নিয়েছেন আমার ঘরের!

নির্ঝর দাঁত বের করে হেসে বলে..
– তুমি আসলেই খুব চালাক।

– ম্যানাজারের চাকরি খেয়ে ছাড়ব, শালা আমার রুমের চাবি আপনাকে দিয়েছেন?

– আরে আরে ম্যানেজার দেয় নি।

– তো!

– সেটা তোমার জানা লাগবে না!

– দা জানলে খবর করে ছাড়বে আপনার!

– তোমার রুমে সিসি টিভি ক্যামেরা আছে আমি জানি তবুও রিস্ক নিয়ে গেছি, বুঝলে!
মেহেরিন’র‌ নাকে টোকা দিয়ে বলল!

হঠাৎ গাড়ির শব্দ আসে। মেহেরিন নিচে তাকিয়ে দেখে এটা তাদের’ই গাড়ি। কিন্তু কথা হলো এতো ভোরে বাইরে গেল কে?

মেহেরিন আর নির্ঝর দুজনেই তাকিয়ে আছে। দেখল ডেভিল নামছে। মেহেরিন একটু অবাক হলেও কিছু বললো না। এর মাঝেই রুমে নক হলো। নির্ঝর দরজা খুলে দেখে একটা সার্ভেন্ট এসেছে দু কাপ কফি নিয়ে। নির্ঝর হেসে তার থেকে কফি নিয়ে তাকে ‌কিছু বকশিস দিল। অতঃপর তাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে চলে এলো মেহেরিন’র কাছে। মেহেরিন কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর এক কাপ কফি মেহেরিন’র হাতে দিয়ে বললো..

– তোমার ভালো মতো ঘুম হয় নি। এটা খাও ভালো লাগবে!

মেহেরিন কফি মগ টা ধরল। তবে কফি খাচ্ছে না। নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হেসে হুট করেই তার হাতের কফি টা নিজে এক চুমুক দিলো। অতঃপর বলল..
– দেখলে কিছু মিশাই নি, এবার খাও!

মেহেরিন একটা ভেংচি কেটে কফি’র মগে চুমুক দিয়ে এসে বেলকনিতে দাঁড়াল। বেলকনিতে থাকা বিন ব্যাগে বসে পড়ল। নির্ঝর এসে গ্রিলে ঠেসে দাঁড়াল। অতঃপর বলল..

– জানো তোমার আমার ভালোবাসা কখনো কমবে না

– আপনাকে তো আমি ভালো’ই বাসি না তো কমাকমির প্রশ্ন আসছে কেন?

নির্ঝর একটা মুচকি হেসে সমুদ্রের দিকে তাকায়।আবারও গাড়িতে শব্দ এলো। নির্ঝর নিচে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল..

– এবারে ও আমাদের গাড়ি!

মেহেরিন উঠে নিচে তাকিয়ে বলল..
– আসলেই তো!

নির্ঝর কিছু বলতে যাবে হঠাৎ আবার কেউ রুম নক করল। নির্ঝর এসে দরজা খুলে দেখে ডেভিল দাঁড়ানো। নির্ঝর তাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়। ডেভিল নির্ঝর কে কিছু না বলে রুমে ঢুকে যায়। নির্ঝর ডেভিল কে দেখে একটুও অবাক হয় না। সে এসেই মেহেরিন কে খুঁজতে থাকে। অতঃপর মেহেরিন কে দেখতে পেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে..

– ম্যাম আর ইউ ওকে!

– আমি ঠিক আছি ডেভিল!

নির্ঝর ডেভিল কে উদ্দেশ্য করে বলে…
– তুমি আসতে লেট করেছো ডেভিল। মেহু পাখি’কে আমি আরো আগেই এনেছি!

– সরি স্যার বাট আমি এখানে ছিলাম না। রোদ্দুর আর আরিশা ম্যামের সাথে বাইরে গিয়েছিলাম। তবে আপনার এটা করা একদমই উচিত হয় নি। না বলে ম্যামের রুমে গেছেন অভ্র স্যার জানলে অনেক রাগ করবে।

– কিন্তু আমি তো।

– তবুও স্যার এরপর এরকম কিছু করবেন না। ম্যামের রুমে সিসি টিভি ক্যামেরা তার সুরক্ষা’র জন্য’ই লাগানো। কিছু হলে জবাবদিহিতা আমাকে করতে হবে।

– ওকে ডেভিল রিলেক্স ‌! এরপর তোমাকে বলেই যা করার করবো।

মেহেরিন বলে উঠে….
– রোদ্দুর আর আরিশা বাইরে গেছিল।

– জ্বি ম্যাম বিচে গেছিল। সূর্য উদয় দেখতে। আপনাকে নিতে চেয়েছিল তবে আমি মানা করেছি কারন কাল আপনি খুব টায়ার্ড ছিলেন এরপর অভ্র স্যার জানলে আমাকে বকতেন তাই!

– ওহ আচ্ছা!

নির্ঝর বলে..
– তলে তলে তো দেখি অনেকদূর। একদিনেই এতো আগায় তোমার ফ্রেন্ড!

মেহেরিন হেসে বলে..
– আমার ফ্রেন্ড তো তাই! আচ্ছা ডেভিল তুমি যাও রেস্ট নাও আমি ঠিক আছি।

– ওকে ম্যাম!
.
অতঃপর ডেভিল চলে যায়। খানিকক্ষণ বাদেই মেহেরিন নির্ঝর’র রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে আসতে নিলে দেখা হয় নিরবের সাথে। নিরব তাদের দেখে অনেক অবাক হয়। নিরব কিছু বলার আগেই মেহেরিন বলে..
– আমার খুব ঘুম পাচ্ছে নিরব পরে কথা বলবো!

অতঃপর মেহেরিন চলে যায়। নির্ঝর দরজা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিরব’র দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। নিরব রেগে চলে যায় সেখান থেকে।

সকাল ৯ টার দিকে সবাই ব্রেকফাস্ট করে বের হয় বিচে ঘুরতে। সবাই বিচের ধারে ঘুরে ফিরে। মেহেরিন নজর রাখে আরিশা আর রোদ্দুর’র দিকে। দুজনের হাব ভাব ভালো লাগছে না তার। তবে এটাও কি সম্ভব একদিনেই একটা মেয়েকে এভাবে পটাতে। কিন্তু রোদ্দুর বলে হয়তো পারে। শালা একটা প্লে বয়। এই না আরিশা’র সাথে দু দিন রিলেশন রেখে আবার ছেড়ে দেয়। এরকম কিছু‌ হলে মেহেরিন ছেড়ে কথা বলবে না।

নীল আর নীলাশা দুজনে জীপ নিয়ে বিচের পাশে ঘুরতে থাকে কারন নীলাশা’র জন্য বেশি হাঁটাহাঁটি এখন মোটেও ভালো না। এদিকে অরনি আর শান্ত সমুদ্রের ধারে বালি নিয়ে খেলতে থাকে। আহিয়ান আর অভ্র মিলে তাদের সাথে খেলছে আর তাদের পাহাড়া দিচ্ছে। যেই বিচ্ছু দুজন বলা যায় না কি করে বসে। বাকি সবাই অলরেডি সমুদ্রে নেমে গেছে। সমুদ্রের পানিতে এখন বেশি স্রোত নেই। সবাই একসাথে খুব মজা করছে। কিন্তু এখানে মেহেরিন আর নিরব দূরে জীপে বসে সবার কান্ড দেখছে। মেহেরিন তো বসে বসে কয়েক প্যাকেট চকলেট অলরেডি শেষ করে ফেলেছে। এখানে নিরব শুধু তার পাশে বসে বক বক করছে। নির্ঝর এসব দেখে মেহেরিন’র কাছে গিয়ে বলল..

– মেহু পাখি পানিতে নামবে না।

– না!

– কেন?

নিরব বলে..
– ও নামবে না ওর ইচ্ছে তুমি এতো কেন জিজ্ঞেস করছো।

নির্ঝর হেসে বলে..
– সেটাই তো আমি মেহেরিন কে জিজ্ঞেস করেছি তুমি কেন বলছো!

মেহেরিন বলে উঠে..
– দুজনেই অফ যান আমি পানিতে নামবো না।

– বিচের কাছে যাবে!

– হাঁটতে ইচ্ছে করছে না!

নির্ঝর এসে মেহেরিন’র পাশে বসল। মেহেরিন ড্রাইভিং সিটের পাশে বসা ছিল। নির্ঝর বসে জীপ চালাতে শুরু করল। জীপ নিয়ে একদম সমুদ্রের বিচের কাছে নিয়ে গেল। এভাবেই হৈ হুল্লোড় করে দিনটা কাটাল সবাই!

রাতে ডিনারের জন্য সব ব্যবস্থা ছাদে করা হয়। ছাদ খুব সুন্দর করে লাইটিং করা। অনেক বড় একটা টেবিল রাখা হয়েছে মাঝখানে। সবাই সেখানে বসে। মেহেরিন বসে আছে তার পাশে আরিশা আর আরিশা’র পাশে নিরব। আর এপাশে নির্ঝর! আরিশা’র ঠিক উল্টো পাশে রোদ্দুর! মেহেরিন তাদের দু’জনের কাহিনী দেখছে। কেমন চোখে চোখে কথা বলছে তারা। আরিশা কেমন লজ্জা পাচ্ছে রোদ্দুর মুচকি মুচকি হাসছে। কাহিনী টা হচ্ছে কি?

মেহেরিন খাওয়া রেখে ওদের দুজনের কাহিনী দেখছে। হঠাৎ তার কানের কাছে এসে নির্ঝর বলে উঠে…

– খাওয়া রেখে ওদের কাহিনী কি দেখছো । দুজনে প্রেম করছে।

– প্রেম এভাবে করে বুঝি!

মেহেরিন”র কথা শুনে নির্ঝর ফিক করে হেসে দেয়। নিরব এসব খেয়াল করে। হঠাৎ অভ্র এসে মেহেরিন কে নিয়ে যায়। অতঃপর নিজের হাতে তাকে খাইয়ে দিতে থাকে।

খাওয়া দাওয়া’র পর সবাই একসাথে বসে আড্ডা দেবার জন্য। সবাই গোল হয়ে বসে। গান বাজনা শুরু হয়। মেহেরিন আর রোদ্দুর গিটার বাজায়। অভ্র গান শুরু করে একে একে সবাই গান গায়। রোদ্দুর পুরো গানটাই আরিশা’র দিকে তাকিয়ে বলে। মেহেরিন ভালোই সেটা খেয়াল করে। অতঃপর সবাই ঘুমানোর জন্য চলে যায় কিন্তু মেহেরিন রোদ্দুর কে রেখে দেয় কথা বলার জন্য।

#চলবে….

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১২

রোদ্দুর ছাদের গ্রিলে এসে বসল। মেহেরিন ওর পাশে দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। রোদ্দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন বলে উঠে…

– তুই আরিশা কে ভালোবাসিস!

রোদ্দুর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। অতঃপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে…

– হুম অনেক ভালোবাসি!

– সত্যিকারের ভালোবাসা নাকি মিথ্যা মিথ্যা!

রোদ্দুর মেহেরিন’র গাল টেনে বলে..
– সত্যি সত্যি ভালোবাসা জান!

– ওহ্ আচ্ছা। তবে যদি মিথ্যা মিথ্যা ভালোবাসা হয় না রোদ্দুর তোর খবর আছে। আরিশা কিন্তু আমার ভালো বন্ধু!

– জান! তুই জানিস আমি সবাইকে মিথ্যে বললেও তোকে বলি না।

– হুম তো দেখছি তো। অনেক ভালোবাসা বাড়ছে!

– কোথায় আর ভালোবাসা বাড়ছে তোমার ফ্রেন্ড এখনো গ্রীন সিগন্যাল দেয় নি।

– আহারে বেচারা! ঢং কতো, ভাবে কিছুই দেখি নি।

– জান..

– তুই প্রপোজ করেছিলি যে গ্রীন সিগন্যাল পাবি!

– না তো!

– তাহলে বলছিস প্রপোজ না করা অবদি কোনো সিগন্যাল পাবো না।

তখন পিছন থেকে নির্ঝর বলে উঠে..
– আরে ব্রো আমি প্রোপজ করার পরও কোনো সিগন্যাল পায় নি আর তুমি বলছো এই কথা!

মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নির্ঝর প্যান্টের পকেটে দু হাত রেখে তাদের দিকে আসছে। সে এসেই রোদ্দুর’র ওপাশে দাঁড়ায়। রোদ্দুর বলে উঠে..

– মানে! তার মানে তুমি ও কাউকে প্রোপজ করেছিলে!

– কাউকে না আমার পাখি টা কে।

রোদ্দুর’র আর বুঝতে বাকি নেই নির্ঝর কার কথা বলছে। এদিকে মেহেরিন নির্ঝরের কথা ইগনোর করতে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে থাকে। রোদ্দুর বলে উঠে..
– কবে করলে আর ভালোই না সব লুকিয়ে লুকিয়ে করো তোমরা।

– আরে ভাই না তেমন ভাবে করি নি। শুধু আর কি মুখেই বলেছিলাম এতে তোমার জান যেই ব্যান্ড আমার বাজিয়েছে তা আর এখন নাই বললাম!

– আচ্ছা ভাই বুঝতে পেরেছি। তো এবার আমায় কি করতে বলছো!

নির্ঝর ইশারা করে মেহেরিন’র দিকে।‌ রোদ্দুর তাকিয়ে দেখে মেহেরিনের কানে হেডফোন। রোদ্দুর খোঁচা মেরে মেহেরিন ডাকে। মেহেরিন কানের হেডফোন নামিয়ে বলে…

– আজাইরা প্যাচাল শেষ!

– 😒

রোদ্দুর বলে উঠে..
– তোরা দুজন অফ কর। মেহেরিন এরপর কি করবো সেটা বল!

– কি আর করবি প্রপোজ করবি।

– তবে প্রপোজ করাটা কিন্তু সহজ না এটা ভেবে নিও।

– নেগেটিভ কথা বলা কি আপনার স্বভাব!

– আমি বাস্তব কথাই বলছি।

– তোরা থামবি! কিভাবে প্রপোজ করবো সেটা বল।

দুজন একসাথে বলে..
– প্রেম করাও শিখিয়ে দেই!

রোদ্দুর বেক্কল এর মতো দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে আর দু’জন দু’জনের দিকে! রোদ্দুর অসহায় মুখ করে বলে..

– হেল্প চাচ্ছি গাইস!

অতঃপর নির্ঝর আর মেহেরিন দুজনেই সমুদ্রের দিকে তাকায়! অতঃপর দুজনেই একসাথে বলে..

– বিচে প্রপোজ কর!

রোদ্দুর দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। নির্ঝর আর মেহেরিন একে অপরকে দেখে আমার সমুদ্রের দিকে তাকায়। নির্ঝর বলে উঠে..

– কথায় বলে সমুদ্রের বিশালতা পরিমাণ ভালো বাসা উচিত। কারন ভালোবাসা সমুদ্রের মতোই সীমাহীন!

মেহেরিন আর রোদ্দুর নির্ঝরের দিকে তাকায়। অতঃপর মেহেরিন বলে..

– ভালোবাসার গভীরতা’র সাথে সমুদ্রের গভীরতা’র তুলনা করা যায়। সমুদ্রের প্রতি ঢেউয়ের মাঝে ভালোবাসা উপলব্ধি করা যায়। এক একটা ঢেউয়ের শব্দ নাকি ভালোবাসার স্লোগান দিয়ে যায়।

রোদ্দুর মেহেরিন’র কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে। মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– ভালোবাসা নিয়ে এতো উক্তি তুই কবে থেকে শিখলি।

মেহেরিন ভেংচি কেটে বলে..
– মন চাইলো বললাম!

রোদ্দুর বলে..
– যাই হোক বিচে প্রপোজ’র আইডিয়া টা খারাপ না। ওকে গাইস আমি যাই সব এ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হবে।
বলেই রোদ্দুর উঠে চলে গেল।

মেহেরিন আর নির্ঝর সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। নির্ঝর বলে উঠে..
– ভালোবাসার গভীরতা যে সমুদ্রের গভীরতা সমান সেটা বুঝ অথচ আমার ভালোবাসা বুঝো না।

মেহেরিন হেসে বলে..
– যেটা অনুভব করি সেটাই বুঝি।

– তার মানে বলতে চাও আমার ভালোবাসা অনুভব করো না।

– হুম!

– আচ্ছা তাহলে এখন তোমাকে আমার ভালোবাসা অনুভব করাবো আমি!

মেহেরিন নির্ঝর’র দিকে তাকিয়ে হেসে চলে যায়। নির্ঝরের কাছে হাসিটা উপহাস বলে মনে হয়। যেন মেহেরিন তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলছে এমন কিছু হবে না। নির্ঝর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে..
– ভালোবাসা আসলেই অদ্ভুত! সবকিছু’র সাথেই এটা তুলনা করা যায়।‌ যুগে যুগে কবিরা এই আকাশ, সমুদ্র, নদী দিয়ে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করেছে তবে সেটা যদি কখনো কাউকে বোঝানোর কথা আসে তাহলেই আকাশ সমান চিন্তা এসে ভর করে তাকে। এই ভালোবাসা কখনো আগুন হয়ে জ্বালিয়ে আবার কখনো পানি হয়ে মিশে যায়। তবে মেহু পাখি! তোমার আমার ভালোবাসা যে কি হবে জানি না। কারন এখানে পানি ভালোবেসেছে জলন্ত আগুনকে। আর পানির ধর্ম’ই হলো আগুন নিভানো। তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এখানে বিপরীত কিন্তু ঘটবে। আগুন না এই পানিকেই শেষ করে দেয়!

বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নির্ঝর!
.
এই কয়েকদিন ধরেই বেশ ঘোরাঘুরি চলে কক্সবাজারে। এর আশেপাশে জায়গায় ও বেশ অভিযান চলে। বেশ মজাদার ভাবেই কাটে এইসব। অবশেষে চলে যাবার দিন ঘনিয়ে এলো। রোদ্দুর ভেবেই পারছে না আরিশা কে কি বলবে। কেন জানি খুব অস্থির হয়ে পড়ছে আরিশা কে নিয়ে। পরশু সবাই চলে যাবে। রোদ্দুর ভেবেই নিয়েছে আজ তাকে কিছু না কিছু করতেই হবে। অবশেষে সবাই ঘুরে হোটেল ফিরার পর রোদ্দুর চলে যায় বিচে। বিচের এক পাশে একটা টেবিল রাখে। সেখানে বসার আয়োজন করে সে। তার চারপাশে কাপড় দিয়ে দেয়। অতঃপর বিভিন্ন ধরনের লাইটিং ও করে। মেহেরিন, নির্ঝর , নিরব, নিশি , কাব্য আর ইহান ও তার কাজে হাত লাগায়। বিচের আশেপাশে গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে ছড়িয়ে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের লাইটিং তো আছেই।

সন্ধ্যা হতে আর কিছুক্ষণ বাকি। নিশি আরিশা কে তৈরি করে চোখ বেধে নিয়ে আসে বিচের কাছে। তার পরনে লাল রঙের একটা গাউন। আরিশা’কে এখানে দাড় করানোর পর নিশি চলে যায়। আরিশা বোঝতে পারে সে এখানে একা। তাই সে চট করেই চোখে বাঁধা কাপড় টা খুলে ফেলে। অতঃপর চারদিক তাকিয়ে দেখে। এইরকম একটা রোমান্টিক পরিবেশ দেখে আরিশা’র আগ্রহ বেড়ে।

এদিকে নিশি, মেহেরিন ওরা সবাই দূর থেকে ওদের দেখছে! আরিশা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কারো উপস্থিত পায় না। অতঃপর সে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। সমুদ্রের পানিতে ঢেউ আছে তবে স্রোত বেশি না। হালকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে এখান দিয়ে। সূর্য অস্ত যাবে যাবে এমন একটা সময়। এমন একটা মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আরিশা’র মন টা আবার ভালো হয়ে যায়। সে দু’হাত ছাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে এই বাতাস কে অনুভব করতে থাকে। খানিকক্ষণ পর কারো উপস্থিত পায় সে। সে এসে এক হাত আরিশা’র কোমরে হাত রেখে অপর হাত দিয়ে আরিশা’র এক হাত ধরে। আরিশা আনমনে বলে উঠে..
– রোদ্দুর!

সে মুচকি হেসে হাসে, এই হাসির আওয়াজ আরিশা’র কানে পৌছায়! রোদ্দুর আরিশা’র কানের কাছে মুখটা এনে বলে..
– বাহ এতো তাড়াতাড়ি চিনে ফেললে আমায়। জবাবে আরিশা হেসে উঠে।

মেহেরিন এসব দেখে চট করে চোখে হাত দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। অতঃপর বলে…

– কি ভালোবাসা!

ওর কথা শুনে সবাই হেসে উঠে! ইহান মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে…
– ওরে ভালোবাসা রে কেন ওদের ভালোবাসা দেখে তোর জ্বলছে নাকি!

– ব্রো যার ভালোবাসার মানুষের অভাব তার জ্বলে আমার কোনো অভাব নেই বুঝলি।

কাব্য বলে উঠে..
– যাই হোক জান তোর এইসব দেখে কাজ নেই তুই আমার সাথে আয়।

নিশি বলে..
– কারো জ্বলছে আমি বুঝতে পারছি।

কাব্য বলে উঠে…
– হায় মেরা দিল, হায় মেরা দিল!

সবাই হেসে উঠে, নিশি বলে..
– আহা বেচারা, ঢং কতো। সবাই চল আমরা ভিতরে গিয়ে আড্ডা দেই।

নির্ঝর বলে..
– সেটাই ভালো না হলে অন্যের ভালোবাসা দেখে আমাদের কি?

নিরব বলে..
– নিজের ভালোবাসা না থাকলে কিছুই না!

সবাই ওদের দুজনের দিকে তাকায় ‌, মেহেরিন ওদের ইগনোর করে কাছে থাকা ক্যাফে তে চলে যায়।

এদিকে রোদ্দুর আরিশা কে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরায়। অতঃপর তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। বাতাসের গতি কিছুটা বাড়ে। আরিশা’র চুল গুলো তার মুখে এসে পড়ে। রোদ্দুর সেগুলো তার কানে গুঁজে দিয়ে আরিশা’র গালে হাত রাখে। অতঃপর তাকে কাছে টেনে দু’জনের কপাল ঠেকায়। কিছুক্ষণ এইভাবে থাকে দু’জন। এখানে শুধু তাদের দু’জনের অনুভূতি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায়।

কিছুক্ষণ পর রোদ্দুর আরিশা গালে হাত রাখে। আরিশা রোদ্দুর’র হাত ধরে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। রোদ্দুর আরিশা’র দিকে তাকিয়ে বলে…

– আমার অনুভূতি গুলো বুঝতে পেরেছো তুমি! আমার অনুভূতি তে শুধু তুমি ছিলে, ছিল আমার ভালোবাসা। আমি ভালোবাসি তোমায়। প্রথম দেখায় আমি প্রেমে পড়েছিলাম তোমার ওই মায়াবী চোখ দেখে। কিছু ছিল এই চোখের মাঝে যা বারবার আমায় পাগল করে তুলতো। আমি ভালোবাসি তোমায় আরিশা! তুমি কি ভালোবাসা আমায়। আমার জন্য কি তোমার মনে সেই এক অনুভূতি যা আমাকে তোমার ভাবনায় নিয়ে আসে। তুমি কি হবে আমার আরু!

আরিশা কিঞ্চিত হেসে রোদ্দুর’র দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়। আরিশা’র মুখে হাসি দেখে রোদ্দুর’র ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে। সে আরিশার কপাল বরাবর একটু চুমু খায়। অতঃপর তাকে ছেড়ে একটু দুরে তাকায়। আরিশা এবার রোদ্দুর’ দিকে তাকায়।‌ একটা কালো রঙের ব্লাক স্যুট পরা সে। দেখতে খুব সুদর্শন লাগছে। তার মুখের হাসি তার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলছে। হুট করেই রোদ্দুর আরিশা’র সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। অতঃপর আরিশা’র হাত ধরে বলে..

– ভালোবেসে আমি একবার ঠকেছি আরু! সেই কথা তোমার অজানা নয়। তোমাকে সব কিছুই বলেছি আমি। আবার সেই এক ভুল করতে চাই না।
বলেই রোদ্দুর পকেট থেকে একটা রিং বের করে আরিশা’কে বলে..

– উইল ইউ ম্যারি মি আরু!

আরিশা কথাটা শুনে প্রথমে থমতম খেয়ে যায়। রোদ্দুর আরিশা কে দেখে ভয় পেয়ে যায়। আরিশা কি না বলে দেবে তাকে। কিছুক্ষণ থমথমে পরিবেশ থাকে। রোদ্দুর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আরিশা’র দিকে। খানিকক্ষণ পর আরিশা’র ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা দেখা যায়। রোদ্দুর যেন প্রান ফিরে আসে। আরিশা’র মাথা নাড়ানো হ্যাঁ সম্মতি পেয়ে রোদ্দুর তার অনামিকা হাতে রিং পড়িয়ে দেয়। অতঃপর সেই হাতে কিস করে উঠে দাঁড়ায়। সাথে সাথে আরিশা তাকে গিয়ে জরিয়ে ধরে। রোদ্দুর ও তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। অতঃপর আরিশা বলে..

– আমি সারাজীবন থাকতে চাই তোমার সাথে। থাকবে তো সারাজীবন আমার সাথে!

– শেষ নিঃশ্বাস অবদি!

আরিশা হেসে রোদ্দুর’র বুকে মুখ লুকায়!
.
রোদ্দুর আর আরিশা’র প্রেম কথা সবার জানা হয়ে যায় বিশেষ করে রোদ্দুর’র দেওয়া আরু নামটা। মেহেরিন এখন থেকেই তাকে আরু ভাবী বলে ডাকতে থাকে। সবাই বেশ মজা নেয় এই নাম টা নিয়ে!

পরদিন..
নির্ঝর অনেক জোর করে মেহেরিন কে নিয়ে আসে বিচে। আজ তাদের শেষ দিন কাল’ই চলে যাবে। মেহেরিন কোনো মতে বিচে আসতে চায় নি তবে নির্ঝর ও হার মানার পাত্র না। মেহেরিন শক্ত করে নির্ঝরের হাত ধরে রেখেছে। নির্ঝর তাকে বলে..

– জুতো খুলো খালি পায়ে ভেজা মাটিতে হাটবো।

– ন..না আমি খুলবো না।

– মেহেরিন বর্ষা খান কে কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে। সে কি ভয় পাচ্ছে!

– মেহেরিন কোনো কিছু তে ভয় পায় না।

– তাহলে চিন্তা কিসের আর আমিও তো আছি। জুতো খুলো।

মেহেরিন তার পায়ের জুতো ভেজা মাটিতে পা রাখল। এই অনুভূতি টা চমৎকার লাগলো তার কাছে। সে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর হেসে বলল..

– বললাম না ভালো লাগবে তোমার। চলো হাঁটা যাক।

অতঃপর নির্ঝর ও জুতো খুলে ফেলল। দুজনেই হাঁটতে লাগলো সমুদ্রের কাছে। দূর থেকে নিহা, অভ্র, নীল আর আহিয়ান এসব দেখছিল। নিহা হেসে বলল..

– দেখলে দা মেহেরিন বিচে হাটতাছে!

নীল বলে উঠে..
– এটা সত্যি অবিশ্বাস্য! নাহ হলে তো ও কখনো বিচের কাছে যায় না।

আহিয়ান বলে উঠে..
– কিন্তু কেন?

অভ্র বলে..
– আছে কিছু স্মৃতি তবে আজ থাক সেসব কথা তবে মেহেরিন কে খুশি দেখে খুব ভালো লাগছে।

নিহা বলে উঠে..
– নির্ঝর’ই একমাত্র যে তোমার পর সামলাতে পারবে আদুরী কে।

অভ্র নিহা’র দিকে তাকিয়ে হেসে বলে..
– তোর পছন্দে আমার কোনো সন্দেহ নেই তবে মেহেরিন’কে নিয়ে আমি নিশ্চিত নই।

নিহা বলে উঠে…
– চিন্তা করো না দা! আদুরী আমার বোন একদিন ও বুঝতে পারবে নির্ঝর ওর জন্য ঠিক।

অভ্র এই জবাবে মুচকি হাসে। দূর থেকে নিরব এইসব কথা শুনে। এসব শোনার পর অনেকটা রেগে যায় সে। মেহেরিন’র পাশে অন্য কাউকে কখনো সহ্য করতে না সে। নির্ঝরের মেহেরিন’র এতোটা কাছে আসা মেনে নিতে পারছে না সে। কিন্তু তবুও নিরব সেখানে চুপ থাকে।
.
পরদিন সবাই ঢাকায় ফিরে আসে, ফিরে আসার পর পর’ই নিরব’র জমে থাকা রাগ বের হয়। পুরো ঘর তছনছ করে দেয় সে। ডেসিন টেবিলের আয়নায় ঘুষি মেরে ভেঙ্গে ফেলে সে। তার হাত গড়িয়ে রক্ত পড়তে থাকে। নিরব রক্তের দিকে তাকিয়ে বলে..

– এর ফল তোমাকে পেতে হবে নির্ঝর। মেহেরিন শুধু আমার! আর কাউকে হতে দেবো না তাকে,তোমাকে না! দরকার পড়লে তোমার চাপ্টার ক্লোজ করবো আমি। খুব শীঘ্রই!

কয়েকদিন পর..

নিরব রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নির্ঝরের গাড়ির পিছু করতে থাকে। আজ কিছু না কিছু করবেই সে। অনেকক্ষন পর গাড়ি টা এক জায়গায় থামে। নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে একটা দোকানে যায়। অতঃপর সেখান থেকে কিছু চকলেট নিয়ে গাড়ির কাছে আসতে যায় তখন নিরব তার গাড়ি নিয়ে নির্ঝরকে ধাক্কা মারে। নির্ঝর ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ে। নিরব গাড়ি থামিয়ে দূর থেকে তাকে দেখতে থাকে। তখন হঠাৎ করেই তার চোখে গাড়ির বাইরের গ্লাস দিয়ে মেহেরিন কে দেখা যাচ্ছে। নিরব এটা দেখেই চমকে উঠে!

#চলবে….