Game 2 Part-29+30+31

0
515

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৯

নির্ঝর কে দ্রুত হসপিটালে নেওয়া হয়। তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে তার জন্য। সময় যত যাচ্ছে সবার চিন্তা ততোই বেড়ে যাচ্ছে। কি হবে এর পরিমাণ কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। মেহেরিন শুধু চুপচাপ বসে আছে। তার কানে নির্ঝরের শেষবার ডাকা “মেহু পাখি” ডাকটা বার বার বাজছে। নিজেকে অনেকটা অস্থির লাগছে তার কাছে। বার বার মনে হচ্ছে কিছু না হয়ে যায়। কিন্তু এমনটা কেন লাগছে এই কথাটা সে বুঝতে পারছে না।

প্রায় অনেকক্ষণ পর ডাক্তার বের হলেন ওটি থেকে। নিহা আর নীল ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করছে নির্ঝর এখন কেমন আছেন। মেহেরিন বসে থেকে সেসব কথা শুনতে পারছে। তার শরীর কাঁপছে, ভয় একটাই যদি কিছু হয়ে যায়। তার জন্য মেহেরিন নিজেকেই দায়ী করবে, কারন তাকে বাঁচাতে গিয়েই নির্ঝরের আজ এই অবস্থা। মনের কোথায় যেন খুব কষ্ট হচ্ছে তার। অভ্র এসে মেহেরিন’র পাশে বসল। মেহেরিন এক হাত দিয়ে অভ্র’র হাত আঁকড়ে ধরল। অভ্র তাকে আশ্বাস দিল। এর মধ্যে ডাক্তার বললেন..
– “নির্ঝর এখন ভালো আছে, বিষের প্রভাব তার শরীর থেকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এখন ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে।‌একটু পর শিফট করা হবে তখন দেখা করতে পারবে!

নিহা বলে উঠে…
– থ্যাংক ইউ সো মাচ ডাক্তার!

– ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। তবে যদি না ওকে ঠিক সময়মতো আনা হতো তাহলে হয়তো আমাদের হাতে কিছু থাকতো না। বিষটা কিন্তু মারাত্মক ছিল। আমার মনে হয় আপনাদের পুলিশ কমপ্লেন করা উচিত!

নিহা মেহেরিন’র দিকে তাকায়। নীল বলে উঠে..
– ঠিক আছে ডাক্তার আমরা দেখবো!

নির্ঝর ঠিক আছে শুনে সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো কিন্তু মেহেরিন! তার মন এখনো বিচলিত! ইচ্ছে করছে নির্ঝর কে দেখতে। ডাক্তার বলেছে এখন’ই তাকে শিফট করা হবে। কিছুক্ষণ পর তাকে বের করা হলো ওটি থেকে। মেহেরিন দাঁড়িয়ে গেল, তার চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল নির্ঝর কে। নির্ঝরের জ্ঞান নেই। তাকে অন্য রুমে শিফট করার পর সবাই তাকে দেখতে গেল।

আজকের রাতটা এই হসপিটালে’ই কাটাতে হবে তাই মেহেরিন, ইহান, রোদ্দুর আর কাব্য থেকে গেল। বাকি সবাইকে এক প্রকার জোর করেই বাসায় পাঠানো হলো। ইহান, রোদ্দুর আর কাব্য এসে নির্ঝরের কেবিনে পাশে থাকা সোফা গুলোয় বসল। মেহেরিন এসে নির্ঝরের বেড’র কাছে থাকা টুল টার ওপর বসলো। চারদিক রাতের অন্ধকারে নিরব। আর সেটা যদি হসপিটাল হয় তাহলে নিরবতা বেশিই হবে। কিন্তু এটা নিয়ে মেহেরিন’র কোন ভাবান্তর নেই কিন্তু কথা হলো তার ঘুম। বেশি নিরবতা থাকলে ওর ঘুম হয় না আর হসপিটাল হলে তো কথাই নেই। মেহেরিন আজ পর্যন্ত হসপিটালে ঠিক মতো ঘুমাতে ওপারে নি। রোদ্দুর, ইহান আর কাব্য’র দিকে ফিরে তাকাল। তাদের দেখে খুব ক্লান্ত লাগছে। ক্লান্ত’ই লাগার কথা অনেক খেটেছে তারা। তাদের চোখে যেন ঘুম এসে ভেঙে পড়েছে। ৩ জন’ই সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ল।

মেহেরিন ওদের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে এবার নির্ঝরের দিকে তাকাল। খুব শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে নির্ঝর। মেহেরিন নির্ঝরের হাত টা ধরল। কেন জানি মন চাইলো ধরতে। হাত’টা নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে তার দিকেই তাকিয়ে রইল আর তার সাথে ঘটা আজ পর্যন্ত তাকে নিয়ে ঘটা সব ঘটনা ভাবতে লাগলো। ভাবতে ভাবতেই একসময় তার পাশেই ঘুমিয়ে পরল।

ভোরে নির্ঝরের ঘুম ভাঙলো। তখন নিজের পাশে তার প্রিয় মানুষটির মুখ দেখতে পেয়ে তার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল।‌ তার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে তার উপর মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে তার মেহু পাখি। ইশ ভাবতেই কি ভালো টা না লাগছে তার মেহু পাখি তার পাশে ঘুমাচ্ছে। ভালোই হলো সে অসুস্থ হলো নাহলে কি আর মেহু পাখি’র এতো ভালোবাসা পেতো। সব খারাপ কিছুর মাঝে একটা ভালো থাকে আর নির্ঝরের কাছে সেটা এখন তার মেহু পাখি’র কাছে আসাকে মনে হচ্ছে। নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহু পাখি’র দিকে। দু’একবার তার মুখে ফুঁ’ও দিলো। হঠাৎ মেহেরিন’র ঘুম ভেঙ্গে গেল। নির্ঝর সাথে সাথে তার চোখ দুটি বন্ধ করে নিল। মেহেরিন ঘুম থেকে উঠে চোখ দুটো ঢলে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর এখনো ঘুমিয়ে আছে। মেহেরিন দাঁড়িয়ে তার হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে নির্ঝরের কপালে আলতো করে একটা কিসি দিয়ে বের হয়ে গেল। নির্ঝরের কাছে তার সময় সেখানেই থমকে গেল। মেহু পাখির এই প্রথম ছোঁয়া তার কাছে অনেকটা আকাশ জয়ের মতো লাগল। সে নিস্তব্ধ হয়ে সেই প্রথম ছোঁয়া টা অনুভব করতে লাগলো। মেহু পাখির সেই নরম দু খানা ঠোঁট যা তার কপাল ঠেকাল। নির্ঝরের ইচ্ছে করছিল তখন’ই তার মেহু পাখিকে জরিয়ে ধরতে। এরকম একটা মূহুর্তের জন্য’ই তো আজ এতোদিন ধরে অপেক্ষা করছিল। মেহু পাখির এই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিল সে। এখন যেন তার কাছে সবকিছুই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। যেখানে মেহু পাখি কিসি করল নির্ঝর হাত দিয়ে কপালের সেই জায়গাটা ধরল। তার মুখের হাসির রেখা যেন বড় হয়ে গেল।
.
মেহেরিন ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নির্ঝর বিছানায় বসে পানি খাচ্ছে। মেহেরিন হেঁটে তার কাছে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল..

– ঘুম ভেঙ্গে গেছে আপনার!

– হুম! আমার লাইফের বেস্ট ঘুম ছিল এটা।

– কিহ এই হসপিটালে ঘুমানো কে আপনার বেস্ট বলে মনে হলো। আপনি জানেন আমার লাইফের সবচেয়ে খারাপ ঘুম ছিল এটা।

– সত্যি মেহু পাখি!

– তা নয়তো কি?

অতঃপর চোখ গেল সেই ৩ জনের দিকে। তারা এখনো ঘুমাচ্ছে। মেহেরিন গিয়ে তাদের মুখে পানি ছুড়ে ফেলল। সাথে সাথে ৩ জন লাফ দিয়ে উঠলো। মেহেরিন বলে উঠে..

– নির্ঝর উঠে গেছে এখন তোরাও উঠ!

অতঃপর ৩ জন’ই গিয়ে নির্ঝরের সাথে কথা বলল। তার শরীর এখন আগে থেকে অনেক ভালো। নির্ঝর বলল..

– আমি বাসায় যেতে চাই এখানে আর থাকবো না!

কাব্য বলে উঠে..
– আমি ডাক্তার সাথে কথা বলছি।

– হুম!

অতঃপর কাব্য ডাক্তারের সাথে কথা বলে নির্ঝর কে নিয়ে রওনা হয় খান বাড়িতে। নির্ঝর কে বাড়িতে ফিরে আসতে দেখে সবাই অনেক খুশি হয়। মেহেরিন নিজে তাকে ধরে ঘরে নিয়ে যায়। অতঃপর তাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়। নির্ঝরের শরীর এখনও অনেক দুর্বল। সে বিছানায় বসে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মেহেরিন কে বলে..

– ধন্যবাদ মেহু পাখি!

মেহেরিন কাছে থাকা চেয়ার’টায় বসে বলে..
– এখন শরীর কেমন আপনার!

– হুম অনেক ভাল!

– আরো একদিন হসপিটালে থাকলে অনেক ভালো হতো। আপনার শরীর এখনো অনেক দুর্বল।

– দুর্বল তো লাগছেই কিন্তু হসপিটালে থাকলে আরো দুর্বল হয়ে পরতাম। যাই হোক এখানে সবাই আছে থাকতে আমার খুব ভালো লাগবে।

মেহেরিন দাঁড়িয়ে বলে..
– আর কতো ঋণী করবেন আমায় বলুন তো!

– মেহু পাখি এটা কি বলছো।

– তাহলে আর কি বলবো। একবার বাঁচালেন দি কে আর দু’বার আমাকে। কতোটা ঋণী করছেন জানেন সেটা।

– তাহলে ঋণ পরিশোধ করে দাও।

– হুম সময় হোক সব ঋণ পরিশোধ করে দেবো। রেস্ট নিন আপনি!
বলেই মেহেরিন চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আবারো এলো হাতে একটা জুসের গ্লাস নিয়ে। নির্ঝর শুয়ে একটা ম্যাগাজিন পড়ছিল, মেহেরিন কে দেখে বসে পরল সে। মেহেরিন কাছে এসে জুসের গ্লাসটা নির্ঝরের হাতে দিয়ে বলল..

– খেয়ে নিন এটা!

নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন বলল..
– আমি বানাই নি।‌ নীল ভাবী বানিয়েছে।

– আচ্ছা রাইয়ান, শান্ত আর অরনি কোথায়?

– শান্ত আর অরনি জিজু’র সাথে বাইরে গেছে। আর রাইয়ান মনে হয় ভাইয়ার কোলে। আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।

– হুম!

কিছুক্ষণ পর মেহেরিন রাইয়ান কে কোলে করে নিয়ে এলো। তার সাথে নীল আর নিশি ও এলো। তারা বসে কিছুক্ষণ বসে গল্প করলো নির্ঝরের সাথে। মেহেরিন রাইয়ান কে দিয়েই চলে গেল। গতকাল ঠিক মতো ঘুম হয় নি তার। তাই এখন ঘুমাবে। এদিকে ইহান বসার ঘরে সবে এসে বসেছে। খুব মাথা যন্রণা করছে তার। সোফায় বসার পর খেয়াল করল তার দু পাশে কাব্য আর রোদ্দুর ঘুমিয়ে আছে ক্যাট আর আরিশা’কোলে। তাঁরা দু’জনেই কি সুন্দর করে তাদের মাথা মালিশ করে দিচ্ছে। ইহান এসব দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অতঃপর বলে উঠে..
– আজ একটা বউ নেই বলে মাথা ব্যাথা যাচ্ছে না।

ক্যাট আর আরিশা ইহানের দিকে তাকিয়ে জোরে হেসে দিল। ইহান বলে উঠে..
– হাসছো তোমরা। বেশ হাসতেই থাকো।

হুট করেই মেহেরিন এসে শুয়ে পরে ইহানের কোলে। অতঃপর বলে..

– চিন্তা করিস না যতদিন আমি আছি ততোদিন’ই মাথা ব্যাথা থাকবে তোর।

– এখন ঘুমাবি তুই!

– সন্দেহ আছে। গুড নাইট!
বলেই মেহেরিন ইহানের কোলে ঘুমিয়ে পরল। ইহান কফির মগটা চুমুক দিয়ে মেহেরিন মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। ক্যাট ইহান কে বলে..

– তো দেবরজি এখন আপনারও একটা বিয়ে করে ফেলা উচিত!

আরিশা বলে উঠে..
– কতোদিন আর সিঙ্গেল থাকবেন বলুন। এখন একটা বিয়ে করেই ফেলেন।

– সম্মান দিয়ে দুজনে আপনি করে বলছো ভালো কথা কিন্তু খোঁচা দিচ্ছ কেন!

– তোমার ভাবী হই, দেবর কে কি একটু সম্মান দেবো না নাকি!

– নাকি একটা বউ খুঁজে দেবো বলো!

ইহান বলে উঠে..
– না আমি সারাজীবন সিঙ্গেল’ই থাকবো বলে ভেবে রেখেছি।

ক্যাট বলে উঠে..
– কি বলছো এসব!

ইহান বলে উঠে…
– এটাই তো আমরা দুজনে ভাবলাম কিন্তু মনে হচ্ছে এই ভাবনা টা শুধু আমাতেই বরাদ্দ থাকবে।

আরিশা বলে উঠে..
– হুম ইদানিং ভালোবাসা বাড়ছে খেয়াল করেছো!

– হুম তা তো দেখছি!
বলেই ক্যাট তাকালো দরজার দিকে। কেউ একজন এসেছে বলে মনে হচ্ছে। আরিশা ও ক্যাট কে লক্ষ করে সেদিকে তাকিয়ে বলে..

– কথা!

ইহান আর ক্যাট দুজনেই অবাক কথা কে এখানে দেখে। নীলাশা এসে কথা’র সাথে কথা বলল। অতঃপর তাকে নিয়ে চলে গেলো নির্ঝরের ঘরের দিকে। হয়তো নির্ঝরের অসুস্থতার খবর পেয়ে দেখতে এসেছে কিন্তু কথা হলো মেহেরিন যদি জানে তখন কি হবে।

মেহেরিন’র ঘুম খানিকক্ষণ পরেই ভেঙে গেল। মাথা এখনো ব্যাথা করছে কারন ঘুম পুরো হয় নি। ইহানের প্রাণ যেন যায় যায় কারন কথা এখনো নির্ঝরের ঘরে। ক্যাট মেহেরিন কে বলে..

– উঠে গেলে যে আর ঘুমাবে না।

– মাথা ব্যাথা করছে মিয়াও ভাবী! দা কি বাসায় আছে!

আরিশা বলে উঠে..
– হ্যাঁ তার রুমেই আছে।

– আচ্ছা তাহলে আমি একটু তার কাছে গিয়ে মাথা মালিশ করাই। তাহলে মাথা ব্যাথা কমে যাবে। আচ্ছা টাঠা আরু ভাবী আর মিয়াও ভাবী। ইহান তুই ও রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পর ওকে।

বলেই মেহেরিন চলে যায়। তারা ৩ জন’ই হাফ ছেড়ে বাঁচে কারন দা এর ঘর নির্ঝরের ঘরের একদম ওদিকে। বলতে গেলেই পুরোই উল্টো। তাই মেহেরিন আর নির্ঝরের ঘরের দিকে যাবে না। কিন্তু মেহেরিন অভ্র’র ঘরে যাবার সময় ভাবলো নির্ঝর কে একবার দেখা দরকার। তাই নির্ঝরের ঘরের দিকে গেল। অনেক হাসাহাসি’র শব্দ সে বাইরে থেকেই পেলো। ভাবল নীল আর নিশি এখনো হয়তো নির্ঝরের ঘরে। তাই মেহেরিন দরজার পাশ থেকেই চলে আসতে নিল কিন্তু একটা হাসির শব্দ তার কানে এলো। এটা কথা’র হাসির আওয়াজ বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কথা এখানে আসবে কি করে। মেহেরিন’র কেমন একটা লাগলো। সে দরজা একটু খুলে উঁকি দিল। অতঃপর যা দেখল এতে তার মাথা ব্যাথা আরো বেড়ে গেল..

#চলবে….

Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩০ ( #ভালোবাসা_প্রকাশ )

মেহেরিন তাকিয়ে দেখে কথা’র কোলে নির্ঝর শুয়ে আছে আর তার বুকের উপর রাইয়ান। কথা, নীল, নিশি আর নির্ঝর সবাই খুব হাসাহাসি করছে কিন্তু নির্ঝর কে কথার কোলে দেখে মেহেরিন’র মনের মাঝে কোথাও একটু হলেও খুব কষ্ট হলো। সে সেখানে না দাঁড়িয়ে তৎক্ষণাৎ চলে এলো। অভ্র’র ঘরের কাছে এসে দেখে অভ্র সোফায় বসে ল্যাপটপ টিপছে আর আনহা ঘর গোছাচ্ছে। অভ্র মেহেরিন’র মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝে যায় মেহেরিন’র মাথা ব্যাথা। অভ্র মেহেরিন কে বলে তার কাছে আসতে। মেহেরিন কেমন একটা অন্যমনস্ক হয়ে যায় অভ্র’র কাছে। অভ্র’র পাশে বসে পড়ে তার কোলে মাথায় রাখে। অভ্র তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে..

– মাথা ব্যাথা করছে আদুরী!

মেহেরিন মাথা নাড়ে। আনহা হেসে বলে..

– আমি তেল নিয়ে আসছি মালিশ করে দিয়েন!

অভ্র মেহেরিন’র মাথায় হাত বোলাতে থাকে অতঃপর আনহা তেল নিয়ে এলে সে তার মাথায় মালিশ করে দেয়। মেহেরিন অভ্র’র কোলেয় ঘুমিয়ে পড়ে। অনেকক্ষন ঘুমায় সে! এরমাঝেই কথা চলে যায়। সবার ধারণা মেহেরিন কথা’র ব্যাপার টা জানেই না।

কয়েকদিন পর..
মেহেরিন স্টাডি রুমে একা বসে বসে বই পড়ছিল। বইটা ছিল হুমায়ুন আহমেদ এর কোথাও কেউ নেই উপন্যাস টা। চমৎকার একটা উপন্যাস! সে বই টা খুব মনোযোগ দিয়েই পড়ছিল। গল্পের শেষ টা পড়ে মেহেরিন’র খুব খারাপ লাগলো। বাস্তবতা আসলেই অনেকটা খারাপ। তবে এটা বাস্তব কি না সে জানে না তবে বইটা মেহেরিন’র মনে একটা জায়গা করে নিয়েছিল। মেহেরিন বই টা শেষ করে বুকসেলফ এ রাখতে যাবে তখন হঠাৎ করেই তার পিছনে কারো উপস্থিত টের পায় সে। মেহেরিন সামনে ঘুরাতেই তাকিয়ে দেখে নির্ঝর টেবিলে হেলান দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহেরিন নির্ঝরকে দেখেও তার দিকে কোন আগ্রহ দেয় না। সে নিজের মতো করেই চলে যেতে নেয়। নির্ঝর এটা দেখে দৌড়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলে..

– কি হয়েছে?

– হয়েছে তো অনেক কিছু মেহু পাখি। কোনটা থেকে শুরু করবো বলো তো।

– মানে!

– খুব সহজ। ইদানিং অনেক ইগনোর করছো তুমি আমায়!

– ইগনোর করার কারণ!

– সেটা তো তুমি বলবে!

– কিন্তু ইগনোর করছি বলে আপনার মনে হচ্ছে!
বলেই মেহেরিন পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়। নির্ঝর মেহেরিন’র হাত টা ধরে তার কাছে টেনে আনে তাকে। মেহেরিন তার ঠোঁটে হাত রেখে গান গাইতে শুরু করে..

“যদি তুমি ভালোবাসো,
ভালো করে ভেবে এসো
খেলে ধরা কোনো খানে রবে না”

মেহেরিন’র কোমর জরিয়ে নিজের কাছে টেনে…

‌‌ “আমি ছুঁয়ে দিলে পরে,
অকালেই যাবে ঝরে
গলে যাবে যে বরফ গলে না”

মেহেরিন’র পিঠ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে মেহেরিন’র কানে কানে বলে…

“আমি গলা বেচে খাবো,
‌ কানের আশেপাশে রবো
ঠোঁটে ঠোঁটে রেখে কথা হবে না”

অতঃপর মেহেরিন কে আবারো ঘুরিয়ে ওকে নিজের কাছে টেনে থিতুনি হাত রেখে..

“কারো একদিন হবো,
‌ ‌‌ কারো একরাত হব
‌ এর বেশি কারো রুচি হবে না
আমার এই বাজে স্বভাব
‌ ‌ কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
‌‌ কোনোদিন যাবেনা”

মেহেরিন চোখ বন্ধ করে নির্ঝরের প্রতিটি ছোঁয়া অনুভব করতে লাগলো।তার শরীর বার বার শিউরে উঠছে। খুব অস্থির লাগছে নিজেকে! গান শেষ হলে মেহেরিন চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর এক হাত দিয়ে দিয়ে তার কোমর জরিয়ে রেখেছে আর অন্যহাত দিয়ে মেহেরিন’র গাল ধরে রেখেছে। মেহেরিন বুঝতে পারছে নির্ঝরের প্রতি সে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কিন্তু এই দুর্বলতা তো রাখা যাবে না। নির্ঝর মেহেরিনকে ধীরে ধীরে তার কাছে টেনে আনে। অতঃপর তার কপালের সাথে মেহেরিন’র কপাল ঠেকায়। মেহেরিন নির্ঝরের শার্ট টা আঁকড়ে ধরে। দু’জনের নিঃশ্বাস ছাড়া আরো কিছুর আওয়াজ আসছে না। খুব ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে দুজন। দুজনেই চোখ বন্ধ করে এই মুহূর্তটা অনুভব করছে। নির্ঝর বলে উঠে..

– খুব ভালোবাসি তোমায় মেহু পাখি! খুব! আমার অস্তিত্ব শুধুই তোমার জন্য! তোমার ব্যতীত আমার আর কোন অস্তিত্ব নেই। তোমায় ছাড়া আমি অসহায়। কখনো ভাবিনি এতোটা ভালোবাসবো তোমায়। যতবার তোমাকে দেখি ততবারই আমি নতুন নতুন ভাবে তোমার প্রেমে পড়ি। তুমি কি বোঝনা তোমায় আমি কতোটা ভালোবাসি। নাকি বুঝতে চাও না। তবে তোমাকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই কিন্তু ভালোবাসার ক্ষমতা আছে। সীমাহীন এই ভালোবাসা কি তুমি কবুল করবে না মেহু পাখি! ❤️

বলেই মেহেরিন’র দিকে তাকায়। মেহেরিন এখনো চোখ বন্ধ করে তার প্রত্যেকটা কথা শুনছে। নির্ঝর মেহেরিন’র কপালে একটা কিসি করল আর সাথে সাথে মেহেরিন চোখ খুলে ফেলল। নির্ঝর মেহেরিন’র কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো…
– আমার এই সীমাহীন ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য মেহু পাখি!

বলেই মেহেরিন’র ঠোঁটের দিকে আগাতে। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু হঠাৎ করেই কথা’র কথাটা তার মাথায় আসে। মেহেরিন নির্ঝরের শার্ট টা ছেড়ে দেয়। নির্ঝর ও তখন বাধ্য হয়ে মেহেরিন কে ছেড়ে দেয়। দুজনেই মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হুট করেই মেহেরিন তার সামনে থেকে চলে যায়। নির্ঝর এবার আর তাকে আটকায় না কারন আটকিয়ে লাভ নেই এটা সে জানে। সে প্যান্টের দু পকেটে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে মুহূর্ত গুলো অনুভব করতে থাকে।

দুদিন পর রাতের বেলা…
মেহেরিন নিজের ঘরে বসে চকলেট খাচ্ছে আর কার্টুন দেখছে। হঠাৎ করেই কেউ রুম করলে মেহেরিন এসে দরজাটা খুলে দেয়। তাকিয়ে দেখে নির্ঝর দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন চকলেট খেতে খেতে বলে..

– আপনি!

– কথা আছে তোমার সাথে।

– বলুন।

নির্ঝর মেহেরিন’র বাহু ধরে ঘরে ঢুকে পড়ে। অতঃপর দরজা লক করে তাকে নিয়ে সোজা যায় বেলকনির কাছে। মেহেরিন তেমন একটা রিয়েক্ট করল না। সে আপনে মনে চকলেট’র প্যাকেট টা হাতে নিয়ে তাতে কামড় বসিয়ে যাচ্ছে। নির্ঝর তাকে নিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়াল। রাত অনেক গভীর কিন্তু বাইরে টা এখনো আলোকিত। এর কারন হলো আজ জোৎস্না রাত। এজন্য রাত এতোটা হবার পরও বাইরে তেমন অন্ধকার না। জোৎস্না আলোয় সবকিছু দেখা যাচ্ছে। মেহেরিন পুরো ঘরটাই অন্ধকার এই অন্ধকারে বসেই সে টিভি দেখছিল। কিন্তু নির্ঝর এই জোৎস্না আলোতেই মেহেরিন কে দেখছে। সে তার সামনে দাঁড়িয়ে চকলেট খাচ্ছে। পুরো চকলেট’এ তার মুখে চকলেট লেগে আছে। এতোটা বাচ্চাদের মতো চকলেট খাচ্ছে সে নিজেই একটা বাচ্চা। নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…

– তুমি এটা কেন করলে মেহু পাখি!

মেহেরিন চকলেট খেতে খেতে..
– কি করলাম!

– হয়তো খেয়ে নাও নাহলে বলে নাও।

– আমার কাছে মনে হচ্ছে আজ আপনি বেশি কথা বলবেন।

নির্ঝর রেগে মেহেরিন’র বাহু ধরে তার কাছে টেনে নিয়ে বলে…

– কেন কি করেছো তুমি জানো না।

– আচ্ছা আমি আগে খেয়ে নিই তারপর কথা বলছি।

– না খাওয়া লাগবে না আগে আমাকে বলো কেন করলে!

– করলাম কি সেটা বলুন। সারাদিন তো কতো কিছুই করি!

– হ্যাঁ এটাই তো তোমার কাজ নাহ বল। কথা’র কাছে গিয়েছিলে তুমি।

– হুম গিয়েছিলাম তো! দেখলাম আপনি অসুস্থ বলে দেখতে এলো তাই…

নির্ঝর বুঝতে পারল মেহু পাখি সেদিন কথা কে দেখেছিল..
– তাই তুমি গেলে আর বললে আমাকে বিয়ে করতে!

– আরে ওর সাথেই তো আপনার বিয়ে হবার কথা ছিল তাই না।

– মেহু পাখি! আমি সেদিন’ই তো বললাম আমি তোমায় ভালোবাসি!

– কিন্তু কথা আপু তো আপনার প্রথম ভালোবাসা না। তাকেই তো বিয়ে করতে চাইছিলেন আপনি।

– তুমি এটা কিভাবে ভাবতো পারো।

– ভাবতে না পারার কারন কি?

– অনেক কারন আছে। আমি যদি কাউকে ভালবেসে থাকি তাহলে সেটা তুমি। আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা শুধুই তুমি। যদি সারাজীবন কারো সাথে থাকি তাহলে সেটাও তুমি। এখন পরিস্থিতি যেমন’ই হোক না কেন তুমি শুধুই আমার।

– ওহ আচ্ছা! কিন্তু আপনি তো কথা আপু কে বিয়ে করতে চাইছিলেন। আর আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না। কথা আপুও ভালোবাসে হ্যাঁ হয়তো প্রথমবার ভুল করে চলে গেছে কিন্তু এখন সে আবার ফিরে এসেছে।

– মেহু পাখি!

– হুম!

– আমি ওকে ভালবাসি না। ওই বিয়েটা একটা নাটক ছিল। আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম তোমার জন্য আমার মনে একটু হলেও ভালোবাসা আছে কি না তাই এমনটা করেছি প্লিজ বিশ্বাস করো!

মেহেরিন খুব কষ্টে চকলেট এ একটা কামড় দিয়ে বলল..
– আমি এটাই জানতে চেয়েছিলাম।

– মানে!

– সেদিন কথা কে বাসায় দেখে তখনই আমার ডাউট হয়েছিল শিউর হবার জন্য আমি তাই কথা কে বিয়ের কথাটা বললাম। আপনারা বোকা বানাতে চেয়েছিলেন আমাকে তাই এমনটা করেছেন।

– না মেহু পাখি!

– না এমনটাই।

– আমি বলছি তো এমনটা না।

– আমি বললাম এটাই।

– আচ্ছা যদি হয়েও থাকে তাহলে তোমার কি এতে। হার্ট হয়েছো তুমি!

– আমি..

– হ্যাঁ তুমি!

– আমি মানে আমি..

– তার মানে!

– কি তার মানে!

নির্ঝর মেহেরিন’কে নিজের আরো কাছে টেনে বলে..
– ইউ লাভ মি!

– নো ওয়ে!

নির্ঝর নিজের কপালের সাথে মেহেরিন কপাল ঠেকিয়ে বলে..
– আজ তুমি অস্বীকার করেও লাভ নেই মেহু পাখি! তোমার চোখ বলছে তুমি আমায় ভালোবাসো!

মেহেরিন মাথা নেড়ে না বলে। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র নাকের সাথে নিজের নাক ঘষে বলে..
– তুমি স্বীকার করলেও তুমি আমাকে ভালোবাসো না স্বীকার করলেও আমাকে ভালোবাসো।

মেহেরিন বলে উঠে..
– আমি ভালোবাসি…

বলার আগেই নির্ঝর মেহেরিন’র ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরে। মেহেরিন’র হাত থেকে চকলেট’র প্যাকেট টা পড়ে যায়। সে নির্ঝরের কোমরে হাত ধরে খুব জোরে খামচে ধরে। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই নির্ঝর কিস করতে থাকে মেহেরিন কে। মেহেরিন এবার চাইলেও তাকে আটকে রাখতে পারে না।

নির্ঝর এবার মেহেরিন কে ছেড়ে দেয়। মেহেরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জায় মেহেরিন’র মুখ খানা লাল হয়ে গেছে। নির্ঝর বলে উঠে..
– মেহু পাখি খুব জোরে খামচি দিয়েছো তুমি!

মেহেরিন সাথে সাথে নির্ঝর কে ছেড়ে দেয়। দৌড়ে তার বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে। হাত দুটো মুঠ করে শান্ত হবার চেষ্টা করে। তার শরীর কাঁপছে। শরীর বার বার শিউরে উঠছে। নির্ঝর হেসে একটা টিস্যু বক্স নিয়ে মেহেরিন’র সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। অতঃপর টিস্যু বের করে মেহেরিন’র মুখে থাকা চকলেট গুলো মুছতে থাকে। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকাতেই পারে নি। নির্ঝর হেসে বলে..

– বাহ বাহ মেহেরিন বর্ষা খান’র এতো লজ্জা ভাবা যায়!

মেহেরিন এবার কপাল কুঁচকে তাকায় নির্ঝরের দিকে। টিভির আলোতে দুজন দেখছে দুজনকে। নির্ঝর টিস্যু বক্স টা রেখে দাঁত বের করে বলে..
– জানো মেহু পাখি তোমার চকলেট’র টেস্ট টা কিন্তু খুব দারুন!

মেহেরিন চোখ বড় বড় করে নির্ঝরের দিকে তাকায়। নির্ঝর হেসে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহেরিন’র গাল লাল হয়ে গেছে তার কথা শুনে। সে দাঁড়িয়ে নির্ঝর কে বলে..

– বের হন আমার ঘর থেকে!

– আরে মেহু শোন তো!
বলেই নির্ঝর দাঁড়িয়ে পরে।

– বের হন জলদি!

– লেজ কাটা ব্যাঙ কে এভাবে বের করে দেবে!

মেহেরিন নির্ঝর কে টেনে দরজার সামনে এনে বল..
– বের হন।

– বের করে দিবা। কষ্ট লাগবে না এতোটুকুও।

মেহেরিন নির্ঝর কে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে বলে..
– গুড নাইট!

বলেই দরজা আটকাতে যাবে তখন নির্ঝর বলে উঠে..
– মেহু পাখি শুধু একটা কথা শোন না।

– কি?

নির্ঝর দ্রুত ঘরে এসে মেহেরিন কে জরিয়ে ধরে, অতঃপর তার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে..
– গুড নাইট আমার মেহু পাখি!

– গুড নাইট লেজ কাটা ব্যাঙ! এখন বের হন ‌

– এতো ভালোবাসলাম একটা কিসি তো দিতেই পারো।

মেহেরিন আবারো ধাক্কা মেরে নির্ঝর কে ঘর থেকে বের করে ধপাস করে দরজা আটকে দেয়। অতঃপর দরজায় মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। নির্ঝর ও ওপাশ থেকে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। একই দরজার দু পাশে দুজন হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর বলে উঠে…
– আই লাভ ইউ মেহু পাখি!

– আই লাভ ইউ টু লেজ কাটা ব্যাঙ!

– অবশেষে বললে তুমি!

মেহেরিন হেসে উঠে। নির্ঝর ওপাশ থেকে তার হাসির শব্দ পায়।

#চলবে….

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩১

সকাল সকাল নির্ঝর রান্না ঘরে কফি বানাতে ব্যস্ত। তখন নিহা’র আগমন ঘটে সেখানে।‌ নির্ঝর সবে কফি মগে কফি টা ঢেলে একটু সাজাতে লাগলো হুট নিহা এক কফি মগ নিয়ে বলে উঠে..

– থ্যাকস ইয়ার, অনেক দরকার ছিল এটার!

নির্ঝর দ্রুত তার হাত থেকে সেটা নিয়ে বলে উঠে..
– না দি তুমি এটা নিও না। আমি তোমাকে আরেকটা বানিয়ে দিচ্ছি।

– কেন? আমার এটাই চাই!

– দি এটা স্পেশাল কারো জন্য!

– সিরিয়াসলি তোর মনে হয় আদুরী এটা খাবে!

– আমার মেহু পাখি এটা খেতে বাধ্য!
বলেই হেসে দিল। নিহা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল..
– ব্যাপার কি আজ একটু বেশিই ব্লাস করছিস তুই।

নির্ঝর আবারো মুচকি হাসল। নিহা বলে উঠে..
– স্বপ্নে ভুলভাল কিছু দেখলি নাকি।

নির্ঝর কফি মগ টা ট্রে তে রেখে বলল..
– না গো স্বপ্ন না এটা সত্যি। রোজ যে স্বপ্ন দেখি তা এখন পূরন হতে চলছে!

– আদুরী তার মানে..!

– মিসেস মেহু পাখি চৌধুরী হবে বুঝলে!

নিহা শকড হয়ে খানিকক্ষণ নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর নির্ঝরের কপালে হাত রেখে বলল..

– দেখি দেখি তোর জ্বর আসলো কি না। জ্বরের ঘোরে ভুলভাল বলছিস মনে হয়!

– 😒! সত্যি বলছি তোমার বোন পটে গেছে। বিশ্বাস না হলে গিয়ে জিজ্ঞেস করো দেখো।

– আমার তো মনে হচ্ছে আমি নিজেই স্বপ্ন দেখছি।

হঠাৎ করেই পেছন থেকে আহিয়ান নিহা’র কোমরে একটা চিমটি দিয়ে বলল..

– না ভূতনি তুমি যা শুনেছ তা সত্যি শুনেছ!

নিহা লাফিয়ে উঠল। অতঃপর পেছনে তাকিয়ে দেখল আহিয়ান দাঁত বের করে হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

– আপনি!

– হুম ভূতনি আমি, তোমার বর!

– আম্মুউ এতো জোরে কেউ চিমটি কাটে। জানেন কতো ব্যাথা পেয়েছি।

আহিয়ান পেছন থেকে নিহা’র কোমর টেনে নিজের কাছে এনে বলে..
– আমি আছি চিন্তা করো না।

নির্ঝর হালকা কেশে বলে..
– আমি গেলাম!

– কোথায় যাচ্ছিস?

– তোমার বোনের ঘুম ভাঙতে। আমি তো জেগে গেলাম কিন্তু আমার মনের পাখি এখনো ঘুমাচ্ছে!
বলেই চলে গেল। নিহা বলে উঠে..

– ব্যাপারটা কি হলো!

আহিয়ান নিহা’র ঘাড়ে মাথা রেখে বলে..
– সেটাই যেটা তোমরা চাইতে!

– আদুরী মজাও করতে পারে আপনি জানেন না সেটা।

– কিন্তু আমার মন বলছো দেখো এখন সব ঠিক হবে। এখন চিন্তা করা বন্ধ করো বুঝলে!

আহিয়ানের কথায় নিহা মাথা নাড়লেও তার মনে এখনো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যি কি মেহেরিন ভালোবাসলো নাকি আবার কোন গেইম!
.
মেহেরিন বেশির ভাগ সময়ই দরজা লক না করেই ঘুমিয়ে থাকে। নির্ঝর তাই মেহেরিন’র ঘরে এসে পরল। অতঃপর ল্যাম্পশেড’র পাশে ট্রে টা রেখে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন এখনো ঘুমাচ্ছে! নির্ঝর মেহেরিন’র পাশে বসে তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলতে লাগল..

– মেহু পাখি! এই মেহু পাখি!

মেহেরিন ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে মিটিমিটি চোখে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বলল…
– শুভ সকাল আমার মনের পাখি!

– গুড মর্নিং!
নির্ঝর উঠে বিছানায় বসলো। মেহেরিন এসে তার কোলে মাথা রাখল। নির্ঝর মেহেরিন’র মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল..

– সকালে সবার পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে আর আমি’ই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা তার পাখির ঘুম ভাঙাতে আসছি!

মেহেরিন মুখ টা উঁচু করে নির্ঝরের দিকে তাকায়। নির্ঝর বলে..
– ফ্রেশ হয়ে এসো মেহু পাখি! আমি নিজে কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছি!

নির্ঝরকে আরেকটু শক্ত করে ধরে..
– আমি আরেকটু ঘুমাবো!

– নো ওয়ে ফার্স্ট উঠে। এরকম দেরি করে ঘুম থেকে উঠা একটুও ভালো না!

– ইশ বললেও হলো আমি আরো ঘুমাবো গুড নাইট!
বলেই মেহেরিন চাদরের মধ্যে ঢুকে গেল। নির্ঝর হেসে বলে..

– তুমি ভালো কথা শোনার মানুষ না!
বলেই মেহেরিন কে কোলে তুলে নিল।

– কি করছেন টা কি!

– ঘুম থেকে উঠাচ্ছি বুঝলে!
বলেই নির্ঝর ওয়াশরুমের দিকে গেল। মেহেরিন দু হাত দিয়ে নির্ঝর গলা জরিয়ে রেখে তার বুকে মাথা রাখল। নির্ঝর ওয়াশরুমের কাছে এনে তাকে নামিয়ে দিল। বলল..
– ফ্রেশ হয়ে এসো আমি এখানে দাড়িয়ে আছি। খবরদার যদি ওয়াশরুমে আবার ঘুমাও তো!
মেহেরিন একটা মুখ ভেংচি কেটে চলে গেল। নির্ঝর হেসে সাউন্ড বক্সে গান বাজাতে লাগলো। সেই দিনের সেই প্রিয় গানটা, যেটা তাদের প্রথম দেখার সাক্ষী! মেহেরিন ফ্রেশ হয়ে এসে বাইরে দাঁড়িয়ে হাত দুটো উঁচু করে দাঁড়াল। নির্ঝর এসে তাকে কোলে তুলে নিল। অতঃপর তাকে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। মেহেরিন নির্ঝরের কোলের উপর বসে পরল। নির্ঝর তার হাতে কফি টা দিল। তখনও সেই গান টা বাজতে লাগলো। মেহেরিন হেসে তার দিকে তাকাল। নির্ঝর মেহেরিন কে ইশারা করে নিচের দিকে তাকাতে বলল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল তাদের দু’জনের কফি মগ একসাথে করলে লাভ আকার ধারন করে। নির্ঝর হেসে বলে..

– আমাদের ভালোবাসার শুরু হোক এই সুন্দর সকাল দিয়ে মেহু পাখি!

মেহেরিন জোরে হেসে দিল। নির্ঝর তার গালে নিজের গাল মিশিয়ে বলল…
– আমার প্রতিটা অনুভূতি শুধু তোমার নামেই! এখানে আর অন্য কারো জায়গা নেই!

মেহেরিন কফি মগে চুমুক দিয়ে বলল..
– হুম!

– শুধু হুম এতো রোমান্টিক একটা কথা বললাম একটু তো ভালোবাসি বলতে পারো ‌

– গতকার রাতে না বললাম!

– এক বার’ই বলেছো!

– তো!

– আমি তো সারাদিন তোমার কানের কাছে ভালোবাসি ভালোবাসি বলতে থাকি সেই কথা খেয়াল রাখো তুমি!

– হুম এটাও ভালো!

– হাম ভালোই বটে তো আজ ভার্সিটিতে যাবে না।

– ভার্সিটি!

– হ্যাঁ এটার নাম তো ভুলেই গেছো। এই বিয়ে বিয়ে করে আজ ৩ মাস হলো ভার্সিটিতে যাও না কি দেবে পরিক্ষায় ‌

– পরিক্ষার আগের রাত পরলেই পারবো!

– ঘোরার ডিম পাড়বে।

– আচ্ছা নির্ঝর ঘোড়াকে দেখেছেন কখনো ডিম পাড়তে।

– না কেন? তুমি দেখেছো!

– না দেখেনি তবে দেখলে আগে আপনাকেই খাওয়াতাম বুঝলেন!

– ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার।

– হাম হাম অনেক টেস্টি হতো জানেন।

– সেটা কি তোমার চকলেট’র স্বাদের মতোই হতো!

নির্ঝরের কথায় মেহেরিন’র গাল দুটো লাল হয়ে গেল। মেহেরিন মনে মনে বলে..
– এই লোকটা এমন কেন? জানে আমি লজ্জা পাচ্ছি তবুও বার বার এমন কথা বলা লাগে তার। যখন তখন আমাকে জ্বালানো দেখাচ্ছি মজা!

মেহেরিন কফি মগে চুমুক দিয়ে বলে..
– চকলেট’র স্বাদ কিন্তু সবাই নিতে পারে নির্ঝর!

নির্ঝর কফি মগ টা রেখে মেহেরিন’র মুখ ঘুরিয়ে ঠোঁটে হাত রেখে বলে..
– কিন্তু এই চকলেট’র একমাত্র দাবিদার শুধু আমি বুঝলে তুমি!

মেহেরিন মাথা নাড়িয়ে না বলে! নির্ঝর বলে উঠে..
– দাঁড়াও আমি বুঝাচ্ছি!
বলেই নির্ঝর উঠে মেহেরিন’র পেটে হাত রাখল। মেহেরিন বুঝতে পারল নির্ঝর এখন কি করবে। নির্ঝর তার পেটে হালকা করে কাতুকুতু দিতেই মেহেরিন দ্রুত বলে উঠে..

– বুঝতে পেরেছি বুঝতে পেরেছি প্লিজ এমনটা করবেন না।

নির্ঝর দু হাত দিয়ে মেহেরিন কে নিজের সাথে জরিয়ে মাথায় আলতো করে চুমু খেয়ে বলল..

– ঠিক আছে মনে থাকো যেন বুঝলে!

মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকায় অতঃপর দুজনেই হেসে দেয়। দরজার আড়াল থেকে ক্যাট, কাব্য, রোদ্দুর আর আরিশা এসব দেখতে লাগল।‌ এসব দেখার পর তারা সবাই নিজেদের দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর তারা সবাই বসার ঘরে এলো। এদিকে নিহা টেনশনে এই পর্যন্ত ১০ টা মিষ্টি খেয়ে ফেলেছে। ক্যাট ওদের নিহা’ই পাঠিয়েছে। কি বলবে তারা এই টেনশনে শেষ। আহিয়ান এক প্রান্তে বসে কফি মগে চুমুক দিচ্ছে আর নিহা কে দেখছে। তার পাশেই অভ্র বসে নিহা কে বোঝাচ্ছে কিন্তু নিহা বুঝতেই চাইছে না। দুই ভাই বোনদের এমন কান্ড দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে আহিয়ানের। অবশেষে ওরা চারজন এসে দাঁড়াল নিহা’র সামনে! নিহা চট করে দাঁড়িয়ে বলল..

– কি দেখলি তোরা!

আরিশা বলে উঠে..
– সত্যি দেখেছি!

– কার সত্যি আমার না নির্ঝরের!

চারজন একসাথে বলে উঠে…
– নির্ঝর যা বলেছে তাই দেখেছি!

নিহা এইকথা শোনার পর একটা লাফ দিয়ে বলে..
– সত্যি!

অভ্র আর আহিয়ান ও দাঁড়িয়ে যায়। অভ্র বলে..
– শান্ত হ একটু!

– দা তুমি শুনলে ওরা কি বললো।

আহিয়ান বলে উঠে..
– হ্যাঁ ভূতনি আমাদের ও কান আছে শুনেছি!

– আহিয়ান অবশেষে! অবশেষে আমার আদুরী রাজী হলো। আমি বলেছিলাম না তোমাদের যদি কেউ থাকে তাহলে সেটা নির্ঝর আর কেউ না। আদুরী কে একমাত্র ও’ই সামলাতে পারে।

– হ্যাঁ দেখলাম তো।

– কিন্তু ভূতনি কথা হলো এই প্রেম কয়দিন থাকে সেটা দেখতে হবে।

– মানে!

– মানে আমি আর কি!

– আপনার মুখ এতোটা তেতো এই সময়ে এতো তেতো তেতো কথা বলছেন।

– ১০ টা মিষ্টি তো তুমি এটাই খেলে আমার মুখ কিভাবে মিষ্টি হবে বলো।
আহিয়ানের কথা শুনে সবাই মিটিমিটি হাসতে লাগলো। নিহা রেগে তার দিকে তাকাল। আহিয়ান সাথে সাথে চোখ টিপ দিল। নিহা একটা মুখ ভেংচি দিল।

খানিকক্ষণ বাদেই নির্ঝর চলে এলো তার ঘরে। অতঃপর এসে তৈরি হয়ে আবার গেল মেহেরিন’র ঘরে। বসার ঘর থেকে সবাই দেখছে এসব। নির্ঝর মেহেরিন’কে নিয়ে কিছুক্ষণ পর বসার ঘরে আসল। সবাই তাকিয়ে দেখল দুজনেই এক রকমের পোশাক পরা। ওদের এভাবে দেখে ইহান, রোদ্দুর আর কাব্য একটু পিন্চ মারলো। মেহেরিন ওদের ইগনোর করলেও নির্ঝর বেশ লজ্জা পেল। মেহেরিন এসেই অভ্র’র কাছে বসে পরল। অতঃপর অভ্র তাকে খাইয়ে দেবার পর দুজনেই বের হয়ে গেল একসাথে। গন্তব্য ভার্সিটিতে! প্রায় আজ ৩ মাস পর ভার্সিটিতে আসল দুজনেই। দুজনেই একসাথে গাড়ি থেকে বের হলো। নিরব মেহেরিন’র গাড়ি দেখতে পেয়েই চলে এলো। এসে দেখে নির্ঝর মেহেরিন’র হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিরব এটা দেখার পর থমকে দাঁড়িয়ে পরল। শেষে কি তাহলে তারা দু’জনে এক হয়ে গেল। নিরব কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে পরল। দু’জনকে এভাবে একসাথে দেখে তার মোটেও ভালো লাগে নি। কালো রঙের হুডি দুজনের পরনে। এটাও কি সম্ভব। মেহেরিন নির্ঝরের প্রেমে পরে গেল নাকি!

মেহেরিন হেসে নির্ঝরের হাত ছাড়িয়ে বলল..
– আমার ক্লাস আছে ছাড়ুন আমায়!

নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন তাকে বলছে যেতে না। খানিকক্ষণ এভাবেই কিছুক্ষণ তার সাথে থাকতে। তখন হঠাৎ পেছন থেকে রোদ্দুর বলে উঠে..

– এটা ভার্সিটি মিঃ লেজ কাটা ব্যাঙ!

নির্ঝর সাথে সাথে মেহেরিনের হাত ছেড়ে দিয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে রোদ্দুর আর আরিশা হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্দুর এসেছিল আরিশা দিয়ে যেতে। আরিশা এসে মেহেরিন হাত টা ফট করে ধরে বলে..

– টাঠা মেহু পাখি’র লেজ কাটা ব্যাঙ, আমাদের ক্লাস আছে!
বলেই মেহেরিন কে টেনে নিয়ে যায়। নির্ঝর হেসে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়ায়।মেহেরিন পেছনে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। আরিশা হেসে ওর মুখটা আবার ঘুরিয়ে দেয়। অতঃপর রোদ্দুর হাসতে হাসতে চলে যায়। নির্ঝর ও যায় তার কাজে। দূর থেকে এসব কিছু দেখছিলো নিরব। এসব দেখেই তার মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। আরিশা আর মেহেরিন ক্লাসের দিকেই যাচ্ছিল তখন হুট করেই নিরব তাদের সামনে এসে দাঁড়াল। মেহেরিন ওকে দেখেও ইগনোর করে চলে আসতে নিল তখন নিরব তার হাত ধরে ফেলল। অতঃপর বলতে লাগল..

– ইগনোর কেন করছিস

– কথা বলবো না তাই!

– না আমার কথা আছে তোর সাথে।

মেহেরিন আরিশা কে বললো ক্লাসে যেতে অতঃপর নিরবের হাত টা ছাড়িয়ে বলল..
– কি বলবি!

নিরব মেহেরিন’র হাত ধরে ভার্সিটির পেছনে দিকটায় চলে গেল। মেহেরিন এতে কিছু বলল না কারন ও জানে তেমন কিছু হবে না। অতঃপর নিরব বলে উঠে..

– আমার সাথে কথা বলছিস না কেন, কতোবার ফোন করেছি ততোবার’ই কেটে দিয়েছিস। এতো ট্রাই করি কথা বলার তবুও বলিস না কারনটা কি?

– সেটা কি তুই জানিস না!

নিরব মেহেরিন’র দুই বাহু ধরে বলে..
– আমি জানি মেহেরিন আমি ভুল করেছি আর আমি সেটা স্বীকারও করছি। নির্ঝরের সাথে ওমনটা করা আমার ঠিক হয় নি কিন্তু…

মেহেরিন ওর হাত দুটো আবার ছাড়িয়ে দিয়ে বলল..
– কি কিন্তু!

– তুই কি কিছু বুঝিস না। এটা বুঝিস না আমি ভালোবাসি তোকে!

– আমি আগেও বলেছি তোকে তোর জন্য আমার ফিলিং নেই।

– ওহ্ আচ্ছা তাহলে সব ফিলিং কি তোর ওই নির্ঝরের জন্য!

– …

– কথা বল। যখন আমাকে ভালোই বাসিস না তখন আমাকে বাঁচাতে গেলি কেন?

– কারনটা হলো তুই আমার কারনে বিপদে পড়েছিলি তাই!

– ওহ ওয়াও! আমি নির্ঝরের আগে থেকে তোর পিছনে পিছনে ঘুরছি তোকে ভালবাসি ভালবাসি বলছি এটা তোর কানে যাচ্ছে না।

– তুই বার বার নির্ঝর কে কেন টেনে আনছিস!

মেহেরিন’র দুই বাহু ধরে..
– কারন ও আমার থেকে তোকে কেড়ে নিয়েছে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছে এজন্য!

– ও কিছু করে নি। আমি নিজেই ওকে নিয়ে ভালোবাসি ‌বুঝলি তুই। তোর এসব কথা বন্ধ কর তুই।

– ভালোও বেশি ফেললি বাহ!

– নিরব আমার লেট হচ্ছে সর তুই!

– না আমি সরবো না। তোকে বলতেই হবে নির্ঝরকে কেন ভালোবাসিস তুই। কি খামতি আমার মধ্যে বল!

– নিরব তুই এবার অতিরিক্ত করছিস কিন্তু!

– আমি যাই করি তোর কাছে সেটা ভুল মনে হয়। আর নির্ঝর যা করে তাই ঠিক মনে হয় না।

– আমার তোর সাথে কথা বলাই উচিত হয় নি!
বলেই মেহেরিন যেতে নিবে নিরব তখন ওর হাত দুটো ধরে নিজের হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বলল..
– বিশ্বাস কর মেহেরিন খুব ভালোবাসি তোকে। সত্যি অনেক ভালোবাসি। তোকে ছেড়ে থাকা সম্ভব না আমার পক্ষে।

মেহেরিন নিরবের হাত ছাড়িয়ে চলে আসতে নিলে নিরব আবারো মেহেরিন’র হাত ধরে ফেলে। মেহেরিন ঘুরে হাত খুলতে চাইলে নিরব এক টানে তাকে নিজের কাছে টানে। অতঃপর তার গালে হাত রাখতে যাবে ঠিক তখন’ই নির্ঝর এসে তার হাত ধরে ফেলে। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নির্ঝর তার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে তবে এই রাগটা তার জন্য না। নিরবের জন্য! নির্ঝরের মেহু পাখি কে অন্যকেউ স্পর্শ করবে এটা সে কখনোই ভাবতে পারে না। সে নিরব কে ধাক্কা মেরে পিছনে ফেলে মেহেরিন’র হাত ধরে বলে…

– মেহু পাখি শুধু তার নির্ঝরের আর কারো না!

নির্ঝর রেগে তাকিয়ে রইল নিরবের দিকে। নির্ঝর তার কাছে যেতে নিলে মেহেরিন তার ধরে থামিয়ে দিল। অতঃপর নির্ঝর কিছু না বলে মেহেরিন’র হাত ধরে তাকে নিয়ে চলে যায়! নিরব তাদের দিকে রেগে তাকিয়ে রইল। বলল..

– আমি দেখব এই ভালোবাসা কয়দিন থাকে!

#চলবে….