Game 2 Part-51+52

0
452

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫১_ও_৫২

মেহেরিন খান বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। তাকে দেখে অভ্র এসে তাকে জরিয়ে ধরে।‌ সবাই একে একে জিজ্ঞেস করতে থাকে “সে ঠিক আছে কি না”!

মেহেরিন এসে সোফায় বসে। তার সামনে সবাই দাঁড়ানো। চিন্তিত খুব সবাই। মেহেরিন বলে উঠে..

– মিষ্টি ভাবী খুব ক্ষুধা লেখেছে!

– আমি এক্ষুনি খাবার নিয়ে আসছি তোমার জন্য!

– হুম!

– তুই ঠিক আছিস তো আদুরী!

– দেখতে পাচ্ছ না বিন্দাস আছি। আচ্ছা আজ রাতে এখানেই থাকবো।

– আজ রাতে থাকবি মানে! জান তোকে আজকের পর কোথায়ও যেতে দেবো না। তুই এখানেই থাকবি।

– শশুড় বাড়ি বলেও আমার একটা বাড়ি আছে ভুলে গেলি সে কথা!

– মানে! কি বলছিস তুই?

– দি!

অতঃপর মেহেরিন সবার দিকে তাকাল। শান্ত আর অরনি তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহেরিন আরিশা কে বলল শান্ত আর অরনি কে নিয়ে যেতে। নীলাশা কে বলল ক্যাট আর নিশি কে নিয়ে যেতে। ওদের এখানে থাকার দরকার নেই। অতঃপর মেহেরিন অভ্র, নিহা, আহিয়ান, নীল, কাব্য, ইহান আর রোদ্দুর কে নিয়ে নিজের ঘরে গেলো। অতঃপর রুম লক করে দিল!

অভ্র বলে উঠে..
– কি হয়েছে সব টা বল!

মেহেরিন সব বলল। সবাই সব কিছু শুনে অবাক হয়ে গেল। আহিয়ান বলে উঠে..

– তার মানে ওদের কেউ আছে আমাদের সাথে!

– হুম জিজু! কেউ না কেউ তো আছে আর তাকে ধরা না অবদি কোন রিস্ক নিতে চাই না আমি।

– তাহলে এখন তুই ওর সাথেই থাকবি!

রোদ্দুর বলে উঠে..
– তুই আরমান কে বাঁচিয়ে রেখেছিল! এটা তো আমরা জানতাম না!

– তুই ওই শয়তান টা কে মেরে ফেললি না কেন?

– তুই এগ্রিমেন্ট এ ও সাইন করে দিলি!

– নির্ঝর যদি তোর কোন ক্ষতি করে ফেলে!

মেহেরিন সবার কথা শুনে চুপচাপ সোফায় বসে পড়ল। অতঃপর মাথায় হেলান দিয়ে বলল…

– যাই হোক না কেন এই গেইম টা এখন ওভার করতে হবে। সময় এসে পড়েছে!

নিহা বলে উঠে…

– গেইম ওভার মানে! আদুরী এর মানে কোন গেইম প্লেয়ার কে মরতে হবে, কে মরবে!

– মরবে মরবে, একজন না অনেকজন মরবে।

– তুমি যা করছো তা কি ভেবে করছো আদুরী!

– দা কথায় আছে, দুই পা আগাতে গেলে এক পা পিছাতে হয়। আর আমি তাই করছি! এই গেইম টা এতো সহজ হবে না।

– কিভাবে কি করবি তুই!

– যাই করি না কেন এটা শুধু আমরা এই কয়জনই জানবো আর কেউ না।‌ দা , ভাইয়া তোমরা আপু কে কে কিছু বলবে না। এ সময় এসব শুনে ওর স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে না। আর সবাই! আমাদের মধ্যে যা হবে তা কারো সাথে বলবে না, না মিষ্টি ভাবী, না নীল ভাবী, না মিয়াও ভাবী,‌ না আরিশা! এমনকি ডেভিল কেও কিছু বলবে না!

– ডেভিল! সন্দেহ করছিস ওকে।

– সন্দেহে’র বাইরে কেউ নেই কিন্তু ডেভিল কে আমি খুব বিশ্বাস করি। আমি ওকে যাই বলবো ও শুধু তাই করবে তাই ওর প্ল্যান জানার কোন দরকার নেই!

– শুরু করবি কোখান থেকে!

– প্রথম থেকে, একেবারে শুরু থেকে! নির্ঝর আমাকে এমন এমন কিছু কথা বলেছে যা আমাকে দ্বিধায় ফেলে দিল।‌

– যেমন!

– বলবো পরে। আচ্ছা ইহান! তুই আরমানের সরনেম জানিস!

অভ্র বলে উঠে..
– আমাদের অফিসের স্টাফের লিস্ট এ থাকবে কিন্তু কেন?

– কারন আমার যতটুকু মনে পড়ে ওর সরনেম চৌধুরী ছিল না। আচ্ছা রোদ্দুর, ইহান আর কাব্য! আরমানের পুরো খবর চাই আমার। ওর অতীত জন্ম থেকে শুরু করে সব। সব চাই আমার!

– আচ্ছা!

এর মাঝেই ফোন দিল শুভ্র খান! অভ্র ফোনটা মেহেরিন’র কাছে দিলো। মেহেরিন কিছুক্ষণ কথা বললো তার সাথে! অতঃপর আনহা এলো খাবার নিয়ে! অভ্র তাকে খাইয়ে দেবার পর মেহেরিন আর কোন কথা বললো না। অভ্র তাকে ঔষধ খাইয়ে দেবার পর সে অভ্র’র কোলেই ঘুমিয়ে পরল। সারারাত সবাই জেগে থাকল। আর ৩ জন মিলে সারারাত খুঁজে আরমানের সব খবর বের করল।

সকাল বেলা..

মেহেরিন ঘুম থেকে উঠলো। উঠে দেখে অভ্র’র কোলেই ঘুমিয়ে আছে সে। অভ্র বসে কফি খাচ্ছে। নিহা আহিয়ানের কোলে ঘুমিয়ে আছে। আহিয়ান সোফার সাথে মাথা হেলান দিয়ে বসে আছে। রোদ্দুর,ইহান আর কাব্য ল্যাপটপে কি ঘাঁটাঘাঁটি করছে আর কফি মগে বার বার চুমুক দিচ্ছে। নীল এক পাশে বসে কি সব কাগজ পত্র দেখছে!

মেহেরিন উঠে বসে পড়ল। অভ্র তার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল..

– ফ্রেশ হয়ে নাও!

মেহেরিন ফ্রেশ হয়ে এলো। অতঃপর তাড়া সবাই মিলে এইখানেই ব্রেকফাস্ট করল। ডেভিল এসে এর মাঝে খবর দিয়ে গেল নির্ঝর তাকে তার সাথে যেতে বলেছে।‌ মেহেরিন তাকে গিয়ে গাড়িতে বসতে বলল। অতঃপর কানে ব্লুটুথ দিয়ে বলল..

– রোদ্দুর, কাব্য আর ইহান! ফোন কানেক্ট কর। কি পেলি সব বলবি আর আমি শুধু শুনবো। কিছু জানার হলে মেসেজ করবো!

– আচ্ছা!

মেহেরিন গাড়িতে গিয়ে বসল।‌ কানের ব্লুটুথ অন আছে। রোদ্দুর বলতে শুরু করে..

– আরমানের সরনেম কখনো চৌধুরী ছিল না। তার বংশ ছিল আহমেদ। তার বাবা এবং তার দাদা’র সরনেম আহমেদ।

– আরমানের জন্ম বাংলাদেশে তবে সেই ঘটনার পর সে পালিয়ে গিয়েছিল। তখন সেখানে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য চৌধুরী সেরনেম ব্যবহার করেছে।

– তবে এখানে একটা ঘাপলা আছে। বাংলাদেশে থাকতে ওর শুধু একটা ছেলেই সন্তান ছিল। সেই হিসেবে তিশা’র জন্ম নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে। এখানে কিছু না কিছু আছে!

– আপাতত এটা নিয়ে ই সন্দেহ আছে। আর যা আছে সব নরমাল। তবে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে তারা লন্ডন’ই ছিল। আর সেখান থেকে আরমান কে তুলে আনার পর উষা চৌধুরী তাদের নিয়ে ব্যাংকক এ শিফট হয়। এতটুকুই!

মেহেরিন ওদের মেসেজ করে জানাল ওকে। অতঃপর তাদের যোগাযোগ ডিসকানেট হয়ে গেল। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে সব কিছু ভাবতে লাগলো!
.
চৌধুরী বাড়িতে..

মেহেরিন রুমে এসে দেখল নির্ঝর দেওয়ালের কি সব করছে। মেহেরিন ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখল নির্ঝর সূত্র জোগাড় করছে। সেখানে আরমানের প্রথম লুকিয়ে রাখার জায়গা থেকে শুরু করে সব! মেহেরিন এসব দেখে হেসে বলল..

– এই প্রথম দেখলাম! কোন শত্রু তার শত্রু কে তার প্রতি পদক্ষেপ জানিয়ে দিচ্ছে।

– কারন আমি আমার শত্রু কে বিশ্বাস করি। আমি জানি তুমি কিছুই করবে না। এটা তোমার ইগো তে গিয়ে আঘাত করবে। তুমি কখনো পেছন থেকে মারো না তাই এখনি তুমি এটা করবে না।

– হুম এটাই সত্যি! আপনার বাবা কে যেখানে রেখেছিলাম সে এখনো সেই খানেই আছে। যদি পারেন তো খুঁজে নিন! আমি আটকানোর কোন চেষ্টা করবো না।

বলেই মেহেরিন চলে গেলো। নিচে এসে উষা চৌধুরী আর তিশা’র সাথে বসে রইল। গল্প করতে থাকল তাদের সাথে।

এভাবে কেটে গেল কয়েকদিন। এই কয়েকদিন ধরে মেহেরিন শুধু তিশা’র সাথে কথা বলল। অনেক গল্প করলো তার ছোট বেলা নিয়ে কারন একটাই এমন কোন তথ্য জানা যা সে আগে জানে না।

এদিকে আমান দেখছে মেহেরিন কি করছে। সে মেহেরিন কে মারতে চাইছে কিন্তু নির্ঝরের জন্য তা পারছে না। মেহেরিন’র আমান কে সন্দেহ হলেও আপাতত তাকে নিয়ে কিছু ভাবছে না সে। কিন্তু আমান এখানে ঠিক করেই রেখেছে যা করেই হোক মেহেরিন কে সে জিততে দিবে না!

অতঃপর কয়েকদিন পরেই খান বাড়ির সবার উপর একটা হামলা হলো। সেই হামলা টা ছিল খাবারের মধ্যে বিষক্রিয়া! উষা চৌধুরী আর তিশা দুজনেই বিষে আক্রান্ত হয়ে গেল কারন মেহেরিন তখন নিজের ঘরেই ছিল তাই এখনো খাই নি। আর নির্ঝর সবে ব্রেকফাস্ট করতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিল তখন আমানের চিৎকার শোনা গেল।

নির্ঝর উষা চৌধুরী আর তিশা কে এমন অবস্থায় দেখে পাগল হয়ে গেল। দ্রুত তাদের নিয়ে হসপিটালে গেল। অতঃপর তাদের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো।

বাইরে সবাই দাঁড়িয়ে টেনশন করছে। মেহেরিন ছিল সেখানে।‌ তার সাথে অভ্র আর নীল ছিল। আমান নির্ঝরের উপর বেশ ক্ষেপলো। তার মতে এসব মেহেরিন’র কাজ। ও ছাড়া এই কাজ আর কেউ করবে না। ওদের সবাইকে মারতে চায় সে। মেহেরিন আর নির্ঝর কারো উপরেই এর প্রভাব পড়ল না। দু’জনেই চুপ হয়ে সব শুনল।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার ওটি থেকে বের হলেন। জানাল তারা এখন ঠিক আছে। খাবারে বিষ ছিল বলেই এমন হলো। নির্ঝর, আমান, মেহেরিন আর অভ্র গেলো তাদের দেখতে। নির্ঝর উষা চৌধুরী’র পাশে বসে পরল। উষা চৌধুরী তাকে বলল..

– আমি সকালে মেহেরিন কে দেখেছি রান্না ঘরে যেতে।

মেহেরিন এসব শুনে অনেকটা অবাক হলো। তার সাথে নির্ঝর ও। আমান বলে উঠে..

– দেখলি আমি বললাম না সব দোষ এই মেয়েটার। ওর জন্য’ই সব হয়েছে! ওই করেছে সব। তুই ভুল করছিস নির্ঝর। নিজের শত্রু কে নিজের এতো কাছে রাখা ঠিক না।

নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন হেসে বলল..

– হ্যাঁ বিষ আমিই দিয়েছি!
বলেই সে বের হয়ে গেল। নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উষা চৌধুরী কে বলল..

– মা তোমার কোথায় ভুল হচ্ছে। মেহেরিন এমনটা করবে না।

আমান বলে..
– তুই তো দেখছি ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছিস!

– অন্ধ হয় নি শুধু বলছি। মেহেরিন কখনো পেছন থেকে আঘাত করে না। মারার হলে আমার সামনেই গুলি করে মেরে ফেলতো। এতোটা ভিতু না সে।

আমান কিছু বলতে যাবে এর আগে উষা চৌধুরী বলে উঠে..

– নির্ঝর বাবা হয়তো তুই ঠিক বলেছিস। আমার এখন বয়স হয়েছে তাই হয়তো ভুল দেখেছি। থাক তোরা এই নিয়ে বারাবারি করিস না।

– নির্ঝর তুই ভুল করছিস!
বলেই আমান রেগে বের হয়ে গেল। তবে বিষ টা আমান’ই দিয়েছিল। আর মেহেরিন এটা তখনই বুঝে গেল তখন সে বিনা প্রমানে তার দিকে আঙুল তুলছিল।

পরদিন রাতের বেলা..

মেহেরিন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সব সূত্র এক করছে। নির্ঝর ১৫ বছরের অতীত হারিয়ে ফেলা, তারা ভাই বোনেরা, তার মা বাবা তাকে বলা ওদের ওই এক্সিডেন্ট আমি করেছিলাম এসব! তার মানে কি? তারা জানতো আমি আরমান কে নিয়ে যাবো আর তখন তারা নির্ঝর কে ইউজ করবে।‌ মজার ব্যাপার হলো তিশা এসবের মধ্যে নেই।‌ নির্ঝর ওকে আসতে নেয় নি! তাহলে.. মনে হচ্ছে এখানে আরও দুজন ছিল। এদের উপস্থিতি আলাদা কিন্তু কথা হচ্ছে এই দুজন কি এক নাকি আলাদা। একজন’ই কি দুজনের অভিনয় করছে! কেউ তো আছে এই গেইম’র তৃতীয় ব্যক্তি। কিন্তু এই তৃতীয় ব্যক্তি টা কে।‌সে দূর থেকে বসে এসব চাল চালছে আর নির্ঝর তার সেই হাত যাকে দিয়ে সে খেলছে। কে সে? আমান!

মেহেরিন ভাবছে শুধু ভাবছে। কেউ তো আছেই কিন্তু তাকে খুঁজে বের করাই এখন তার কাজ।‌কেন জানি মনে হচ্ছে এখানে পুরো গেইম টা সাজানো। কেউ আগে থেকেই তার প্ল্যান মোতাবেক গেম খেলছে আর আমাদের দিয়ে খেলাচ্ছে। সে চাইছে আমি নির্ঝর কে মারার চেষ্টা করি। বা ওকে মেরে ফেলি নাহলে নির্ঝর আমায় মারুক। এখানে যেই মরুক না কেন লাভ তার’ই হবে। কিন্তু কিভাবে?

এভাবেই দাঁড়িয়ে মেহেরিন ভাবতে থাকে। তখন দেখে নির্ঝরের গাড়ি বাড়ির ভিতর আসছে। তার মানে নির্ঝর চলে এসেছে। মেহেরিন ঘরে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে দেখে ১২ টা বাজে। রাত তাহলে এতোটাও মন্দ হয় নি। বেশ রাত হয়েছে।

নির্ঝর ঘরে এসে “মেহু পাখি” বলে একবার ঢাকল। মেহেরিন তখনো বেলকনিতে। সে সেখান থেকেই “হুম” বলল। অতঃপর নির্ঝর ওয়াশরুম এ চলে গেল ফ্রেশ হতে।

বের হয়ে এসে দেখে মেহেরিন ঘরে নেই। তার মানে এখনো বেলকনিতে! অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

– দাঁড়িয়ে আছো যে, ঘুমাবে না!

– হুম ঘুমাবো।

– খেয়েছো!

– হুম!

– ( একটা দীর্ঘশ্বাস )

মেহেরিন তাকাল নির্ঝরের দিকে। বেশ ক্লান্ত লাগছে তাকে। মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে।
– কি খুঁজে পেলেন না আপনার বাবা কে!

– পেয়ে যাবো!

– ওভার কনফিডেন্স ভালো না নির্ঝর!

– এটা বিশ্বাস মেহু পাখি! মন বলছে পাবো।

মেহেরিন হেসে বলল..
– আচ্ছা চলুন একটা হিন দিচ্ছি আপনাকে! আপনার বাবা’র নিখোঁজ হবার সাথে তার অতীতের মিল আছে।‌এখন তাহলে খুঁজতে থাকুন!

বলেই মেহেরিন চলে গেল। সে এসেই ঘরের বাতি নিভিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। এদিকে নির্ঝর দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো “কোন অতীতের কথা বললো মেহু পাখি”! কিসের অতীত! কোন অতীত?

নির্ঝর ভাবতে লাগল। প্রায় ১ ঘন্টা যাবত সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। কিছুই মাথায় আসছে না তার। অতীতে কি ছিল এমন! হঠাৎ নির্ঝরের একটা জায়গার কথা মনে পরল। সে ছিল মেহেরিন’দের আগের বাড়ি! সেটা বন্ধ পরে আছে মেহেরিন কি সেটার কথাই বলল!

নির্ঝর আর দাঁড়ালো না। ঘরে গেল! বাতি নিভানো বলে আর জ্বালালো না। ফোনের আলো জ্বালিয়ে মেহেরিন কে দেখল। সে ঘুমাচ্ছে! নির্ঝর ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে গাড়ি নিয়ে আবার বেরিয়ে পরল!

রাত ২ টা..

নির্ঝর মেহেরিন’র আগের বাড়ির সামনে। অধরা খান মারা যাবার আগে তারা এই বাড়িতেই থাকতো তবে তিনি মারা যাবার পর এখানে কেউ থাকে না। নির্ঝরের বেশ অবাক লাগল। ও কাছে মনে হয়েছিল এটা বন্ধ পরে থাকবে কিন্তু না বাড়ি টা বেশ সাজানো গোছানো লাগছে। বাড়ির সামনে লাইট জ্বলছে। নির্ঝর আস্তে আস্তে উঁকি দিল। গার্ড আছে বাড়িতে, কিন্তু এখানে তো কেউ থাকে না।
নির্ঝরের সন্দেহ এবার বিশ্বাসে পরিণত হলো। সে লুকিয়ে বাড়ির পেছন দরজা দিয়ে বাড়িতে এলো।‌ অবাকের বিষয় এটা ছিল বাড়ির পিছনের দিকে কোন গার্ড ছিল না। নির্ঝর বাড়ির ভিতর প্রবেশ করল। খুব সাজানো গোছানো। দেখে মনে হচ্ছে প্রতিদিন পরিষ্কার করা হয়। খুব যত্নে রাখা হয়েছে বাড়িটা!

নির্ঝর খুঁজতে লাগলো, সব ঘর খুঁজল সে। হঠাৎ একটা ঘরে এসে থেমে গেল। পুরো ঘর অন্ধকার তবে মনে হচ্ছে কেউ আছে। নির্ঝর ঘরের আলো জ্বালালো। কেউ বসে আছে হুইল চেয়ারে। নির্ঝর ধীরে ধীরে তার দিকে গেল। তার সামনে যেতেই নির্ঝরের চোখ স্থির হয়ে গেল।‌তার বাবা বসে আছে তার সামনে। তার চোখ স্থির, কোন কথা বলছে না। নির্ঝর হাঁটু গেড়ে তার সামনে বসে পড়ল।

তার গালে হাত রেখে “বাবা বাবা” বলে ডাকতে লাগল। কিন্তু কোন সাড়া পেল না। কোন কথা বলছে না সে। কেমন নিশ্চুপ হয়ে আছে। নির্ঝরের বার বার তাকে ডাকতে লাগল কিন্তু সে কোন কথাই বলছে না। নির্ঝর কি করবে বুঝতে পারল না। সে পুরো পাগল হয়ে গেল!

তার পাশের রুম থেকে মেহেরিন দাঁড়িয়ে সব দেখছে। তার ঘর আর নির্ঝর যেই ঘরে আছে এর মাঝে একটা কাঁচের দেওয়াল। এই দেওয়ালে শুধু ওই ঘর দিয়ে দেখা যায় কিন্তু এপাশ থেকে দেখা যায় না। ডেভিল মেহেরিন’র পাশে এসে দাঁড়াল!

– ম্যাম কাজটা কি ঠিক হলো?

– ডেভিল! একটা জিনিস দেখছো কখনো?

– কোনটা ম্যাম!

– যখন বাঘ কে শিকার করা হয় তখন তার সামনে তার শিকার রাখা হয় ফাঁদে ফেলার জন্য। সে পড়ে যায় লোভে! আর এই লোভের বশীভূত হয়ে বাঘ শিকারীর ফাঁদে পরে। কিছু বুঝলে!

– আপনি শিকারী এটা বুঝেছি তবে শিকার টা কে?

– তোমার কি মনে হয়?

– আর যেই হোক সেটা নির্ঝর স্যার না!

– ঠিক ধরেছো! ডেভিল, এই গেইম’র একজন তৃতীয় ব্যক্তি আছে বা তার ও বেশি কিন্তু কেউ তো আছে। আর আমি তাকে ধরতে চাই। এজন্য’ই এই ব্যবস্থা!

– কি বলছেন?

– হুম! ডেভিল আমি এক টিলে ৩ পাখি মারবো বুঝলে!

– সেটা কিভাবে ম্যাম!

– নির্ঝরের বাবা কে দেখছো। সে কিন্তু চুপচাপ বসে আছে কোন কথা বলছে না।

– হ্যাঁ ম্যাম খেয়াল করেছি কিন্তু এমন কেন? উনি তো এমন ছিল না।

– তাকে একটা ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে ডেভিল। এর কারনে তার শরীর কোমায় থাকা মানুষের শরীরের মতো হয়ে যাবে। সে সব দেখতে পারবে কিন্তু কিছু বলতে পারবে না। আর তার হুইল চেয়ারের কর্নারে একটা স্পিকার লাগানো যার কানেক্ট আমার ( বলেই কানের দিকে ইশারা করল )

– ব্লুটুথ!

– ও তার মানে আপনি এখানেই বসে জানতে পারবেন তার সাথে কে কি কথা বলছে।

– হুম! আর তার ফলে আমি সেই ব্যক্তিটার খোঁজ পাবো।

– তার মানে এটা প্রথম ঢিল। আর দ্বিতীয় টা!

– দ্বিতীয় টা হলো যে নির্ঝর এখন তার বাবা’র সাথেই থাকবে যার কারনে আমি একটা কাজ করতে পারবো!
( মানে ওই লোকটার যে আমাদের লুকিয়ে আছে‌ )

– আর তৃতীয়!

– আমার রিভেঞ্জ! যা নেবার জন্য আমি ওকে বাঁচিয়ে রেখেছি, সেটা নেবো।

– কিন্তু নির্ঝর যদি তাকে নিয়ে পালিয়ে যায়!

– না ও পালাবে না। উনি তাকে নিয়ে এই দেশেই থাকবে আর তাকে সুস্থ করার ব্যবস্থা করবে।

– তার মানে লুকিয়ে রাখবে!

– তা তো রাখবে। কিন্তু তাকে খুঁজে পাবার জন্য আমার বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে না। চিল!

অতঃপর তারা তাকিয়ে দেখল নির্ঝর আরমান কে নিয়ে চলে যাচ্ছে। মেহেরিন ডেভিল কে বলল “নির্ঝরের উপর নজর রাখো” বলেই সে বেরিয়ে গেলো!
.
মেহেরিন’র ধারনা ঠিক হলো, নির্ঝর তার বাবা কে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে গেল। এতোটাই ব্যস্ত হলে যে সেই রাতের পর ৩ দিন নির্ঝর বাসায়’ই এলো না। তবে এই তিন দিন নির্ঝর তাকে বাবা কে বলা সমস্ত কথা শুনতে পেল সে। তবে তেমন কিছু পেলো না।

৩ দিন পর আজ রাতে নির্ঝর বাসায় এলো। অনেকটা খুশি আজ সে। তবে এই খুশির কারন মেহেরিন কে বলবে না সে। কারন তাকে বললে মেহেরিন আবারো আরমান কে নেওয়ার চেষ্টা করবে বলে তার ধারণা। আর আরমান কে সুস্থ না করে নির্ঝর তাকে কোথাও পাঠাতে পারছে না। শুধু ততোদিন এসব লুকিয়ে রাখবে সে।

মেহেরিন আজও বেলকনিতে দাঁড়ানো। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে তার। তবে আজ আকাশ মেঘলা। এই রাতেও সেটা সে বুঝতে পারছে এর কারন দমকা হাওয়ায় বইছে বাইরে। নির্ঝর আজও এসে মেহেরিন কে ডাকলো। বরাবরের মতো মেহেরিন হুম বললো। অতঃপর নির্ঝর একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলো।

তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেলকনি’র দিকে গেল। দেখল মেহেরিন চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর তোয়ালে টা রেখে মেহেরিন’কে পেছন থেকে জরিয়ে ধরল। হঠাৎ নির্ঝরের ছোঁয়া পেয়ে মেহেরিন কেঁপে উঠলো। নির্ঝর মেহেরিন’র ঘাড়ে তার থিতুনি রাখল। কিছুক্ষণ এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল দুজন। মেহেরিন তাকে কিছু বলবে না কারন এটাতে শুধু কথা বাড়বে আর কিছু হবে না। নির্ঝর তাকে ছাড়বে মেহেরিন এতোক্ষণ’এ তা বুঝে গেছে।

হুট করেই নির্ঝর মেহেরিন’ঘাড়ে চুমু খেলো। অতঃপর তার গালে নিজের গাল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো। মেহেরিন শিউরে উঠলো। সে নির্ঝর কে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু নির্ঝর তখন তাকে কোলে তুলে নিল।
♥️
♥️

.
কয়েকদিন কেটে গেল। মেহেরিন আজ অনেকদিন পর একটা খবর পেলো। খবরটা তার জন্য খুশির’ই ছিল বটে! সেই খবর পাবার পর সে পুরো একদিন চৌধুরী বাড়িতে বসার ঘরে বসে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। অতঃপর পরদিন গিয়ে খান বাড়িতে গিয়ে বসার ঘরে পুরোদিন বসে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। নির্ঝর তার বাবা কে নিয়ে এতোই ব্যস্ত হয়ে গেল যে মেহেরিন’র দিকে নজর রাখার কথা সে প্রায় ভুলে গেল।

তবে এর মাঝেই নির্ঝর উষা চৌধুরী কে নিয়ে আরমানের কাছে গেছিল। সেদিন উষা চৌধুরী আরমান কে দেখে ‌নির্ঝর কে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছিল!
.
দুদিন পর..

মেহেরিন পাবে এক কোনে হুডির টুপি মাথায় দিয়ে বসে আছে। নজর রাখছে একজনের উপর। সে হলো আমান! মেহেরিন একটা মেয়কে ইশারা করল। মেয়েটা মেহেরিন’র ইশারা বুঝতে পেরে আমান’র কাছে গেল। অতঃপর তাকে খুব নেশা করালো। আমান এতো নেশা করার ফলে ঠিকমতো দাঁড়াতে ও পারল না।

মেয়েটা আমান কে ধরে একটা ঘরে নিয়ে গেল। তাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে বেরিয়ে আসল। মেহেরিন বাইরে ছিল। সে মেয়েটা টাকা দিতেই মেয়েটা হেসে চলে গেল। আর মেহেরিন ভিতরে ঢুকে দেখল আমান বিছানায় শুয়ে শুধু বিড় বিড় করছে। মেহেরিন তাকে দেখে হেসে দিল!

আমান’র হাত পা বেঁধে, তাকে কে ধরে পানিতে ঢুবানো হলো। সে ছটফট করতে লাগলো। অতঃপর অনেকক্ষণ পর আমান কে বের করা হলো। সে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো। চোখে সব ঝাপসা দেখতে লাগল। কিন্তু এটা বুঝতে পারল তার সামনে কেউ দাঁড়ানো। সে বলে উঠে..
“হাই আমান”!
আমান মাথা ঝাঁকিয়ে ভালো মতো তাকিয়ে দেখল তার সামনে মেহেরিন বসে আছে। সে বলে উঠে.. “আদুরী”!
.
পরদিন..

মেহেরিন মেডিকেল থেকে বের হলো। তার হাতে একটা রিপোর্ট। রিপোর্ট টা দেখে সে বলে উঠে..

– নির্ঝর চৌধুরী! আপনার গেইম ওভার হতে চলছে খুব শীঘ্রই!
বলেই একটা কিঞ্চিত হাসি দিল সে। অতঃপর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরল খান বাড়ির উদ্দেশ্যে!

নির্ঝর বসার ঘরে বসে ল্যাপটপ টিপছিল। গাড়ির আওয়াজ পেয়ে নির্ঝর দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর তাকিয়ে দেখল মেহেরিন আসছে। খুব হাসি খুশি দেখাচ্ছে তাকে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাল। মেহেরিন এসে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরল।

– খুব খুশি খুশি লাগছে তোমায়!

– হুম হুম। কারন জিজ্ঞেস করুন!

– কি বলো?

মেহেরিন পা দুটো উঁচু করে নির্ঝরের কানের কাছে এসে বলে…

– আপনাকে শেষ করার সময় এসে গেছে তাই!

নির্ঝর অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। মেহেরিন হুট করেই নির্ঝরের ঠোঁটে চুমু খেল। নির্ঝরের অবাক দ্বিগুণ হয়ে গেল। মেহেরিন হেসে বলে..

– এতো বড় একটা খুশির খবর সেলিব্রেশন তো করতেই হয় না। তাই আর কি!

– মানে!

– যেটা আপনি বুঝেছেন সেটাই। আই লাভ ইউ টাঠা!
বলেই মেহেরিন চলে গেল। নির্ঝর আহাম্মক’র মতো তাকিয়ে রইল। বলে উঠে..

– শেষে কিনা আমাকে শেষ করার সেলিব্রেশন তুমি আমাকে চুমু খেয়ে করলে আদুরী!

অতঃপর নির্ঝর কি ভেবে কাউকে ফোন করলো।‌ সে আরামানের দেখাশোনা করে। তাকে জিজ্ঞেস করল আরমান টিক আছে কি না। সে জানালো হ্যা্ঁ তাহলে মেহেরিন কোন শেষ’র কথা বলে গেল..
.
নির্ঝর রুমে বসে ছিল, তখন মেহেরিন হাতে কফি নিয়ে তার কাছে এলো। কফিটা নির্ঝর কে দিল। নির্ঝর হেসে বলে উঠে..

– বিষ দিয়ে মারার প্ল্যান নাকি!

মেহেরিন হেসে কফি মগে চুমুক দিল।‌ অতঃপর নির্ঝর কে সেটা দিল। নির্ঝর কফি টা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে পাশে রাখল। হঠাৎ মেহেরিন এসে তার কোলে বসলো। নির্ঝরের কাছে বিষয়টা মটেও ঠিক লাগল। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে ফিরে তার গলা জরিয়ে হাসতে লাগল..

– কিছু বলবে মেহু পাখি!

– হাম হাম!

– কিহ?

– আচ্ছা সবাই তো হানিমুনে যায় আমরা গেলাম না কেনো?

– মানে.

– আমি হানিমুনে যেতে চাই!

– কিহহহ?

#চলবে….