#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_১৫
সকালে তরু রুমের ভেতর গিয়ে নীলিমাকে ফোন লাগালো,
হ্যালো নীলিমা,
হুম বল?
আসলে আমি বলছি কি যে কয়টা দিন আমার পরীক্ষা সে কয়টা দিন তোর বাসা থাকবো। তর কোনো সমস্যা হবে না তো।
আরে আমার তো তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আমি তো একাই থাকি নীলকে নিয়ে। আমি তো ভাবছি তর কোনো সমস্যা হবে কিনা।
কেন আমার আবার কি সমস্যা।
কারন তোর ধর্ম আমার ধর্ম তো আলাদা তাই বলছিলাম এই আরকি।
আরে না দোস্ত। সমস্যা হবে না।
নীলিমা এবার খুশিতে আটখানা হয়ে বলতে লাগলো,
ওকে আজই চলে আয়।
ঠিক আছে। দেখি সোনা আপুকে বলে বিকালে যেতে পারি কিনা।
তরু নীলিমার সাথে কথা বলে। আবার নাতাশার রুমের সামনে গেল।গিয়ে দেখতে পেল নাতাশা আয়নার সামনে বসে বসে সাজগোছ করছে। খুব সুন্দর একটা শাড়ি পড়েছে। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে রেখেছে একপাশে। নাতাশার চুল তেমন বড় না কিন্তু যতটুকুই আছে পারফেক্ট।তরু নাতাশাকে পেছন থেকে জরিয়ে বলতে লাগলো,
আরে সোনা আপু আজ তো কল্প ভাই হার্ট এ্যাটাক করবে তোমাকে দেখে।
তরুর কথা শুনে নাতাশা একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,
আমি তো সেটাই চাই।
নাতাশার এমন চোখে মুখে তরু এক অদ্ভুত ভালোবাসার ছাপ ভেসে আছে স্পষ্ট। তরু নাতাশার এমন হাসি খুশি মুখ দেখে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলতে লাগলো,
আপু সারাজীবন তুমি এমন থেকো।এই হাসি যে চিরতরে তোমার মুখে ঠিক এভাবে ফোটে থাকে।
নাতাশা তরুকে সামনের দিকে এনে তরুর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
আমার এই পিচ্চি বোনুটার জন্য তো থাকতেই হবে।
আচ্ছা আপু একটা কথা।
কি?
আসলে নীলিমাকে ফোন করেছিলাম । সে বলেছে আজ বিকালেই নাকি চলে যেতে।
নাতাশা আটকালো না। তবে আফজাল চৌধুরি আজকে বাড়িতে আসবে। বিগত৪দিন যাবতো সে বোনের বাড়ি আর কতদিনই থাকা যায়।যদিও কোন আসতে আপোস করে। কিন্তু মন তো চায় সারাটা জীবন বোনটাকে নিজের সাথে রেখে দিতে। মা বাবা মরা একটাই বোন। কিন্তু তারও যে সংসার আছে। তাই আফজাল চৌধুরি ঠিক করে আজই বাসায় চলে যাবে। নাতাশা আফজাল চৌধুরিকে ফোনে সব বলে। ওনি তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় নি। ওনি মনে করে ছোট বউমা যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা ভেবে চিন্তেই নিয়েছে৷ তাই তিনি নাতাশার উপর ভরসা রেখে তরুকে তার মতো করে ছেড়ে দিল।
আজ প্রিয় অফিসে গেছে। এভাবে বসে থাকলে বাবার এত কষ্ট করে বিজনেস সব কিছু বিফলে যাবে। তাই প্রিয় সকালে রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে। কল্পও হসপিটালে চলে যায়।
বিকালে তরু ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিচে আসে। তখনই আফজাল সাহেবের আগমন ঘটে। আফজাল সাহেব তরুকে দেখে অভাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মুখটা একদম শুকিয়ে আছে। চোখের নিচটা কালো দাগ পড়ে আছে। আফজাল চৌধুরি মেয়েটার এমন চেহারা দেখে ভেতরটা ছেত করে উঠলো। কারন মেয়েটাকে তো সে ছোট থেকে বড় করে এসেছে। তাই খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।
আফজাল চৌধুরি ভেতরে ডুকতেই নাতাশা তাকে সালাম প্রধান করলো। তরু বাবা বলে জরিয়ে ধরে অভিমানি কন্ঠে বলতে লাগলো,
কাল আসলে কি হতো। আজ আসলে??
আফজাল চৌধুরি একটু হাসলেন। সত্যিই মেয়েটা অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে।
নাতাশা আফজাল চৌধুরি থেকে তরু বিদায় নিল।তরু চলে যাওয়ার পরে আফজাল চৌধুরি নাতাশাকে বলতে লাগলো,,
ছোট আম্মা বড় আম্মার কি হইছে। ওর চোখ মুখগুলো একদম শুকিয়ে আছে।
নাতাশা শশুরকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বলল,,
বাবা তেমন কিছুনা । আসলে ওর শরীরটা ইদানিং একটু খারাপ ছিলো।
কি ওর শরীর খারাপ ছিল।কি হয়েছে তরুর।
আরে বাবা এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নাই। এখন ভালো আছে।
বলেই নাতাশা চলে গেল। আফজাল চৌধুরি বুঝতে পারছে নাতাশা তাকে মিথ্যা বলেছে৷ এই নিয়ে ৫৬ বছর পার করবে তিনি হাওয়ায় তো আর বড় হয় নি। সব কিছুই কেউ বলার আগেই বুঝে যায়। আফজাল চৌধুরি সোফার উপর বসে বসে নিজেই বলতে লাগলো,,
রহিমা তর মেয়েটার মুখে হয়তো কখনো হাসি ফুটাতে পারবো না। ক্ষমা করে দিস আমায়। বলেই কয়েক ফোটা চোখের জল ফ্লোরে ফেললেন। নাতাশা দূর থেকে শশুরের কষ্টটা বুঝতে পেরে সে নিজেই নিজেই বলল,
সে জন্যই তো বাবা মেয়েটাকে ওতো দূরে পাঠানো। দেখিনা প্রিয়র রিয়েক্ট কেমন হয়।
বলেই নাতাশা রুমে চলে গেল।বিকেলে কল্প ফিরে দেখতে পেলো নাতাশা বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে। কল্প সেটা দেখে নাতাশাকে ডাকতে লাগলো,
নাতাশা আর ইউ ওকে।
নাতাশা কল্পের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। চোখের পলক না ফেলে। কল্প এবার ভয় হতে লাগলো। তাই নাতাশার হাতটা ধরে আবারও বলল,
নাতাশা তুমি ঠিক আছো।
নাতাশা দৃষ্টিভঙ্গি নামিয়ে বলল,,
হুম।
কল্প নাতাশাকে পানির গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। নাতাশা পানির গ্লাসটা হাতে নিল। কল্প চলে যাওয়ার পর নাতাশা তার হাতের স্পর্শ করলো । যেই জায়গায় কল্প কিছুক্ষন আগে ছুয়েছে সে জায়গায় একটু ছোট করে কিস করলো। কিসটা ছোট হলেও। একরাশ গভীরতা আর এক সমুদ্রের ভালোবাসার স্রোত ছিল তাতে। যেটা স্রোতের কিনারা ভেসে চলছে নাতাশার মনের ভেতর।
রাতে প্রিয় ডিনার করে রুমে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। হঠাৎ তরুর কথা মনে পড়লো। বিছানার দিকে তাকাতেই শূন্য অনুভব করছে কিছু একটা। গত তিনদিন ট্যুরে তরুর সাথে একই বিছানা শেয়ার করেছে সে। তার উপর সে মায়াভরা আকুলতা চেহারা দেখে প্রতিদিন ঘুমাতো। তরুর ঘুমন্ত মুখে রয়েছে একটা ক্লান্তির নির্যাস সেটা প্রিয় এখন অনুভব করছে। এখন যদি মেয়েটার একটু ঘুমন্ত মুখটা দেখতে পারতো। তাহলে হয়তো সারাদিনের ক্লান্তি কিছুটা কমতো।
একি এগুলো কি ভাবছি আমি, প্রিয় জাস্ট ফোকাস। বেশি ভেবে ফেলছিস।
বলেই প্রিয় দেয়াল ঘরির দিকে তাকালো। তাকিয়ে দেখতে পেল রাত বারটা বাজে। প্রিয় রুমের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লো ঘুমাবে বলে। কিন্তু এই বিষাদ অসহায় চোখ জোড়া যেন বার বার তরুকে একটা নজর দেখতে চাইছে। প্রিয় উঠে আবার রুমের আলো জ্বালালো। তারপর দরজার ছিটকিনি খুলে বাহিরে প্রবেশ করলো। তরুর দরজার সামনে গিয়ে দেখতে পেল রুমের লাইট অফ কিন্তু দরজা খোলা। প্রিয় দরজা খোলে তরুর রুমে প্রবেশ করলো। তারপর আলো জ্বালিয়ে দেখতে পেল তরু রুমে নেই। এত রাতে মেয়েটা গেল কোথায়। ওয়াস রুমের দরজায় নক করলো কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো না। প্রিয়র সমস্ত শরীর ঘেমে উঠেছে এক অজানা ভয়ে। বুকের ভেতরটা কেমন চিন চিনে ব্যথা অনুভব করছে। তবে এ ব্যথার উপশম এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা। সকালে তরুর বলা প্রত্যেকটি কথা কানের কাছে বাজতে লাগলো। এক অস্থির বিষন্নতার সময় অপসারণ করে যাচ্ছে তাকে। প্রিয় আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে সোজা আফজাল চৌধুরির রুমের সামনে গিয়ে। তারপর জোরে জোরে নক করতে লাগলো। আফজাল চৌধুরি ঘুম ঘুম চোখে ওঠে এসে দরজা খুলে দিল। প্রিয় কথা বলতে গিয়েও যেন গলা আটকে আসছে এক অজানা নিরাশে। প্রিয় এমন উত্তেজিত হওয়া ব্যপারটা আফজাল চৌধুরি বুঝতে পেরেও তিনি চুপ করেই আছে। বেশ ভালোই লাগছে ছেলের এমন অসতর্ক মুহূর্তের জন্য।
প্রিয়র দেহজুরে ঘামের বহিষ্কার বেয়ে বেয়ে পড়ছে। হাপাতে হাপাতে বাবাকে বলতে লাগলো,
ব বাবা তরু কোথায়।
আফজাল চৌধুরি চশমাটাকে বুকের উপর ঘষা দিয়ে চোখে লাগালেন। তারপর খুব নরমালিভাবেই উত্তর দিলেন।
তর নেই।
নেই মানে?
কেন তোমাকে বলে যায় নি?
আফজাল চৌধুরির এমন প্রশ্নে প্রিয় মাথাটা নিচু করে ফেলে। কারন সে তো তরুর তেমন খুজই নেয় না। মেয়েটা যখন সামনে আসে তখনই চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। বাট এখন তো মোড় অন্যদিকে ঘুরাচ্ছে তাকে৷ প্রিয় নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
না।
প্রিয় তুমি বাড়িতে এসেছো কয়টার সময়?
৯টা।
তাহলে এতক্ষণে বুঝি ওয়াইফের কথা মনে পড়লো তোমার।
প্রিয় কিছুই বললনা। এখনো মাথা নিচু করেই দাড়িয়ে রইলো। আফজাল চৌধুরি আবারো বলতে লাগলো,
প্রিয় তুমি আমার বড় ছেলে। তোমার থেকে আমি অনেক কিছুই আশা করি। মা বাবা মরা মেয়ে তরু। ছোট থেকে আমরাই ওকে দেখে আসছি। তোমার অভিভাবক হিসাবে আমি আছি। তোমার ভাই কল্প আছে। কিন্তু তরুর কে আছে বলো তো। ওর তো তুমি বাদে আর কেউ নেই।মানছি এখন আমি আছি নাতাশা আছে। কিন্তু তুমি নিজেই ভেবে দেখো আমি আর কত বছর বেঁচে থাকবো।আর নাতাশা ঐ মেয়েটা তো তরুর জন্য তার জীবনও বির্সজন দিতে রাজি। কিন্তু কয় বছর। তারও বিয়ে হয়েছে জীবন হয়েছে। নতুন জীবনে পা রেখেছে। মেয়েটা আর কি করবে বলো। তুমি নিজেই একটাবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো তো। তুমি ছাড়া মেয়েটার আর কে আছে এই পৃথিবীতে।
বাবার প্রত্যেকটা কথাই প্রিয় বুঝতে পেরেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তরু কোথায় সেটাই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
আফজাল চৌধুরি প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
তরু তার বান্ধুবীর বাড়িতে চলে গেছে। সেখান থেকে তার ফাইনাল এক্সাম শেষ হলে তারপর আসবে।
কোন বান্ধবী বাবা?
নীলিমা হয়তো।
আফজাল চৌধুরি কথাটা বলে দরজা বন্ধ করে নেয়।এদিকে প্রিয় অভাক হয়ে আছে। মেয়েটা এমন কেন একটা বার বলে গেলে কি হতো। এসব ভেবে যাচ্ছে প্রিয়।আজ রাতটা আর ঘুম হলো না। দুটো চোখের পাতা এক করেনি সারা রাত। শুধু বাবার বলা প্রত্যকটা কথাই কানের ভেতর বেজে চলেছে। বাবা তো ঠিকই বলেছে।এসব ভাবতে ভাবতে প্রিয় সিদ্ধান্ত নেয় যে কালই গিয়ে তরুকে বাড়িতে ফিরে আনবে।
#চলবে
#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_১৬
১৬.
সকাল হতেই প্রিয় শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে অফিসে চলে গেল।এরই মধ্যে নাতাশা অনেকবার প্রিয়কে দেখে গিয়েছে। ছেলেটা কেমন যেন মনমরা হয়ে ছিল পুরোটা সকাল। যতক্ষণ না সে অফিসে গিয়েছিলো। আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে তারাতাড়ি করে তরুর কলেজে গেল। মেয়েটার সাথে তিনদিন থাকার পর এক অদ্ভুত মায়া তাকে ঘিরে ফেলেছে সেটা প্রিয় বুঝতে পেরেছে ঠিকই।কিন্তু এটা ভালোবাসার মায়া নাকি সাময়িক রূপভেদ মাত্র সেটাই বুঝতে পারছেনা।
প্রিয় কলেজের গেইটের সামনে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো। আকাশটা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে আছে। মেঘ জমে আছে তার শিরায়। হালকা বাতাস ভেদ করে আসছে গাছগাছালির আড়ালে বিমূর্ত রূপের আবাসে।যেন এই বুঝি বৃষ্টি নামবে। কলেজ ছুটি হওয়ার পর অনেক স্টুডেন্টদের বের হতে দেখেছে তবে তরুকে এখনো দেখে নি। প্রিয় গেইটের সামনে গাড়িটাকে পার্কিং করে তরুর কলেজের সামনে একটা বিশাল নারিকেল গাছ আছে সেখানে বসে পড়লো। গাছটার চতুর্দিকে ইট দিয়ে পাকা করা যার জন্য বসতে কোনো সমস্যা হয়নি। প্রিয় গেইটের দিকে ফিরে বসে রয়েছে। ২০মিনিট পর পেছন থেকে কিছু মেয়ের হাসির আওয়াজ ভেসে আসলো বাতাসের স্রোতে। প্রিয় পেছন ফিরে তার চোখ আটকে গেছে তরুর উপর। কেননা তরুকে দেখে আজ সেই প্রথম দিনের মতো ফিলিংস আসছে। তরু কলাপাতা রঙের একটা থ্রিপিছ পড়ে আছে। কপালে একটা কালো টিপ চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক । তরু নীলিমার সাথে কোনো কথা নিয়ে হাসিতে মেতে আছে। সেই হাসির মাঝে তরুর গেজ দাঁত অবশিষ্ট রয়েছে। যেটা তরুর চেহারার সৌন্দর্যের বিস্তারিত জানতে বাধ্য।প্রিয় যেন তরুকে এমন মন মাতালো হাসিতে দেখে এক দফা ক্রাশ খাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে বুকের ভেতর। তরু প্রিয়কে এখনো দেখতে পায়নি। কারন সে এখন বান্ধবীদের সাথে হাসি ঠাট্টা করে সামনের দিকে হাটছে। প্রিয় নারিকেল গাছের নিচ থেকে দাড়িয়ে পড়লো তরুকে দেখার সাথে সাথে। তরু কিছুটা সামনে আসার পর নীলিমা তাকে বলতে লাগলো,
আরে তরু দেখতো প্রিয় ভাই না??
প্রিয়র কথা শুনে তরু মুখটা মলিন করে ফেলে। এ লোকটার কথা যত ভুলে থাকতে চায় ততোই যেন আরো বেশি মনে পড়ে। তরু নীলিমার কথা শুনে সামনের দিকে তাকালো তাকিয়ে দেখতে পেল প্রিয় দাড়িয়ে আছে। কিন্তু কেন এসেছে সেটাই মাথায় ঢুকছেনা তরুর। তরু প্রিয়কে এবোয়েট করে চলে যেতে নিবে তখনই প্রিয় তরুর হাতটা খপ করে ধরে ফেলল,,
হাতটা ধরতেই আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর আবাস বেশে আসলো কানে। বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজে তরু ভয় পেয়ে প্রিয়কে জরিয়ে ধরে শক্ত করে । নীলিমা এতক্ষন তরুর পেছনে দাড়িয়ে ছিল তাদের এমন রোমেন্টিক দৃশ্য দেখে এখান থেকে চলে যায় গেইটের বাহিরে। তরু প্রিয়র বুকের উপর মাথা পেতে দাড়িয়ে আছে। প্রিয়র বুক ধুক ধুক করছে সেটা তরু না টের পেলেও প্রিয় ঠিকই টের পেয়েছে। আকাশে জ্বলজ্বল করে বৃষ্টির গতিক নামতে লাগলো। প্রবল আস্থায় প্রিয় তরুর মাথাটার উপর নিজের ডান হাতটা রেখে একটু মুচকি হাসলো, তর ভাবতে লাগলো,
এই লোকটাকে কতই না বলি তার পেছন পেছন আর ছুটবো না। কিন্তু আমার বার বার কেন তার দেয়া অপমানগুলো ভুলে আবারও তার পেছন ছুটে তার অপমানগুলো নিতে ভালো লাগে। এটাই কি তাহলে তার প্রতি আমার ভালোবাসার বর্হিপ্রকাশ।
বৃষ্টি পড়ছে তার অঝোড় গতিরোধ হয়ে। প্রিয় আর তরুর বৃষ্টিতে ভিজে উঠছে সারা শরীর। তরুর সাইট ব্যাগে কিছু নোট আর বুক ছিল সেগুলো ভিজে একাকার। ভিজলে ভিজোক এ সময়টা হয়তো তার জীবনে আর আসবেনা। যে প্রিয়র বুকের উপর মাথা রেখে বৃষ্টি বিলাশ করবে। প্রিয় তরুকে এক হাত দিয়ে বুকের উপর থেকে তুলে সামনে দাড় করায়। তরুর চুল সারা শরীর বৃষ্টির পানিতে ভিজে আছে।চুলগুলো লেপ্টে আছে কপালে।মুখের উপর বিন্দু বিন্দু পানি এসে জমে আছে। বৃষ্টির বেগটা যেন ধীরে ধীরে আর বাড়তে লাগলো।
তরু প্রিয়র দিকে তাকিয়ে আছে এক নুতুন ঘোরে। ছেলেটাকে তার কাছে বড়াবড়ই সুন্দর লাগে। তবে বৃষ্টি ভেজার পানিতে তার চেহারায় অন্য একটা ভাব চলে এসেছে। যেটা দেখে তরু আবারো ঘোরে যাওয়ার অতিক্রম হতে লাগলো। কিন্তু না এভাবে তো আর হয় না প্রত্যেক সময় সে নিজেই ঘোরে যায়। পরে প্রিয়র থেকে নানা রকম বকাঝকা খায়।তরু এবার সিদ্ধান্ত নেয় যে সে আর নতুন করে কিছু ঘোর সৃষ্টি করবে না। প্রিয়রও প্রায় একই দশা। তিনদিন যাবত মেয়েটার সাথে এক ঘর এক রুম এক বিছানা শেয়ার করে মেয়েটার ঘুমন্ত মুখটা প্রতিদিন দেখে এখন না দেখে কি করে চোখে ঘুম আসে। প্রিয় তরুকে এমন ভেজা অবস্থায় কখনো দেখেনি। কিন্তু কেন যে আজ চোখ জোড়া অন্যদিকে চাইতে মন চাইছেনা। শুধু এ মায়াবতীকে চাইতে ইচ্ছে। কি আছে ওর চেহারায় যেটা বার বার তাকে ওর প্রতি টানছে। প্রিয় ঘোরের মধ্যে থেকে আস্তে আস্তে তরুর দিকে মুখ এগিয়ে নিয়ে গেল।তরু এখনো বুঝতে পারছে না লোকটা কি চাইছে। প্রিয় নিজের ঠোঁট জোড়া এগিয়ে নিয়ে তরুর কপালের উপর আলতো ভাবে একটা কিস করলো। তরু যেন প্রিয় এমন কাজে শক হলো। নিজে থেকে তাকে কিস করলো ভাবতেই অন্যরকম ফিলিংস আসছে তরুর ভেতর।
________________
কল্প আজ তাড়াতাড়ি হসপিটাল থেকে ফিরে পড়লো। বাড়িতে এসে দেখতে পেল নাতাশা একটা লাল রঙের শাড়ী পড়ে ঘুমিয়ে আছে। কল্পের মাঝে মাঝে ড্রিংস করার অভ্যাস আছে। আজ করলে মন্দ কি এমন বৃষ্টির দিনে ড্রিংস করে লেপ কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকবে সমস্যা কী। কল্প ওয়াস রুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো।কারন বৃষ্টির কারনে সমস্ত শার্ট প্যান্ট ভিজে গেছে। সেগুলো পাল্টে কল্প রুমে এসে বসলো। বসে ব্যাগ থেকে ড্রিংসের বোতল বের করে খেতে লাগলো। বোতলের আওয়াজে নাতাশার ঘুম ভেঙ্গে গেল।নাতাশা কল্পের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। কল্প নাতাশার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
নাতাশা আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। একদম হট। পুরাই আগুন।
নাতাশা বুঝতে পেরেছে কল্পের হয়তো ড্রিংসা বেশি করে ফেলেছে যারন কারনে এমন এমন কথা বলছে। নাতাশা ছোট করে একটা হাসি দিল।
কল্প সোফার উপর ছেড়ে নাতাশার পাশে এসে বসলো।তারপর নাতাশার কানের কাছে ফিস ফিস করে বলতে লাগলো,
অনেক আদর করতে ইচ্ছে করছে তোমাকে।
নাতাশা কল্পের দিকে আবারো তাকইয়ে রইলো। ইচ্ছে তো করছে তারও। কিন্তু মুখে কি আর বলা যায়। নাতাশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কল্প আবারো বলতে লাগলো,
আমার বউটা তো দেখি লজ্জায় কুকড়ে উঠছে। তা আমি কি পারমিশন পাবো একটু আদর করার।
নাতাশা কল্পের মুখে এমন কথা শুনে বেশ ভালোই লাগলো। যদিও কল্প এখন নিজের মধ্যে নেই। নাতাশা নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল,
নিষেধ করেছে কে?
ব্যস এটুকুই যথেষ্ট কল্প থেকে। নাতাশার আদেশ পেয়ে প্রথমে কল্প নাতাশার কপালে একটা কিস করলো। তারপর নাতাশাকে শুয়িয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে তার প্রত্যেক বাহুডোরে কিস করতে লাগলো। নাতাশার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো বালিশের কোনে। এটা হয়তো দুঃখের পর সুখের কান্না। হয়তো এর পর থেকে তার জীবনে আর কোনো দুঃখই আসবেনা। কল্পের ভালোবাসায় বাকি জীবনটা রাঙিয়ে তুলবে সে। কিন্তু কল্প তো এখন তার নিজের মধ্যে নেই। সকালে যখন সবটা বুঝবে নিশ্চয়ই তাকে বিশ্বাস করবে না। করলে করবে না করলে নাই। এক কিছু এখন মাথায় আসছেনা। কল্পের আদরের ডাকে সারা দিতে মন চাচ্ছে। তাই নাতাশাও কল্পের ভালোবাসার সাগরে পাড়ি দিতে লাগলো। কল্প নাতাশার শাড়ির আঁচল ধরে টান দিতেই নাতাশা লজ্জা পেয়ে নিজেকে ডাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু যখন কল্প আবারো একই কাজ করতে লাগলো তখন ছেড়ে দিল।কারন লোকটা তো আর পরপুরুষ নয়। সে তার বিবাহিত করা সদ্য স্বামী।
#চলবে।।