#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-১৪
-আ্ আপু? ন্ না না,উইশমামই ঠিক আছে। আ্ আপু কেনো ডাকবে তোমাকে টুইঙ্কেল? আমি না বোন ডাকলাম তোমাকে! সে হিসেবে তো তুমি ওর খালামনি..না মানে আন্টি হও। আন্টি! ও্ ও তোমাকে উইশমাম ই ডাকুক!উইশমামই ভালো শোনা যাবে!
কপাল কুচকে তৌফিকার আমতা আমতা কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলো দোয়া। ঠিক কখন তৌফিকা ওকে বোন বলে ডেকেছে,একদমই মনে পরছে না ওর। টেবিল থেকে টিস্যু নিয়ে কপালের ঘাম মুছে গরম কফিতে চুমুক দিলো তৌফিকা। দোয়ার ঠিক পেছনের টেবিলটাতেই বসে ওর দিকে তীক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে কাটা চামুচে বার্গার খোচাচ্ছে আরাব। তৌফিকার নজর অনুসরন করে দোয়া যেইনা পেছনে তাকাতে যাবে,শপিংমলের বেরোনোর রাস্তায় তাজীনকে উকিঝুকি দিতে দেখলো ও। ব্যস্তভাবে বললো,
-আমি আজ আসি আপু। আমার বান্ধবী খুজছে আমাকে। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। আর কফিটা শেষ করতে পারিনি বলে দুঃখিত।
দোয়া উঠে দাড়িয়ে কাধের ব্যাগটা ঠিক করলো। ওর কফিমগের দিকে তাকালো তৌফিকা। একচুমুকও দেয়নি তাতে দোয়া। ও নিজেও দাড়িয়ে বললো,
-বেশ। আর আটকাবো না তোমাকে।
দোয়া হাসিমুখে টুইঙ্কেলের সামনে ঝুকে বললো,
-এইযে লিটল স্টার,আসছি। এরপর থেকে আর একাকী কোথাও যাবে না কেমন?আম্মু কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলো বলো?
-তোমার কথাও আমি মামার কথার মতো কোনোদিনও অমান্য করবো না উইশমাম। তুমিও মামার মতোই কিউট!
টুইঙ্কেলকে একটা জোরপুর্বক হাসি উপহার দিয়ে দোয়া নির্বোধের মতো তৌফিকার দিকে তাকালো। তৌফিকা ফোকলা হেসে চোখ রাঙালো টুইঙ্কেলকে। দোয়া বললো,
-আ্ আমি আসছি। ভালো থাকবেন।
তাড়াতাড়ি চলে আসছিলো দোয়া। মা মেয়ে,দুজনের কথাবার্তা খুবই উদ্ভট লাগছিলো ওর। তৌফিকা পেছন থেকে ডাক লাগালো,
-দোয়া?
দোয়া পেছন ফিরলো। তৌফিকা এগিয়ে এসে ওর একগালে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো,
-দোয়া করি,এক আকাশ পাগলামী ভালোবাসার ভুক্তভোগী হও। এতোটা বেশি ভালোবাসা তোমার জন্য হোক,যেনো তুমি বলতে বাধ্য হও,এতো ভালবেসো না আমাকে। কারো রঙিন ভালোবাসায় ভেসে যাও,সুদুর কোনো প্রেমপ্রাঙনে। কারো সবটা পাগলামী ভালোবাসা তোমার জন্য হোক দোয়া। কজ ইউ ডিসার্ভ অল অফ ইট। অল দ্যা বেস্ট।
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে শুধু কথাগুলো শুনলো দোয়া। কি বলা উচিত সেটাও ভুলে গেছে ও। পাশে কোথায় বেলুন ফাটার শব্দে হুশ ফিরলো ওর। সৌজন্যের হাসিতে চলে আসল তৌফিকার সামনে থেকে।
দোয়া চোখের আড়াল। তবুও তৌফিকা সেদিকেই তাকিয়ে। আরাব এসে পকেটে দুহাত গুজে ওর পাশে দাড়ালো। সামনে তাকিয়ে থেকে বললো,
-শি লেফ্ট হার স্মেল।
আড়চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো তৌফিকা। সত্যিই এই ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে। পরপরই মনে পরলো কিছুক্ষন আগে কি ঘটেছে। গলা ঝেরে বললো,
-চ্ চল আরাব? বাসায় যাই?
সরুচোখে ওরদিকে তাকালো আরাব। মেকি হাসি দিয়ে তৌফিকা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ও গরগর করে বলতে লাগলো,
-তোর মেয়ে দোয়াকে আপু বানাবে,তুই সেটা ঠিক করে দিতে গিয়ে ওকে ওর খালামনি বানিয়ে দিবি। যাকে বউ বানিয়ে এগারো সদস্যের ক্রিকেকটিমের নাম অবদি ভেবে রেখেছি,তার সাথেই দুনিয়ার সব আজগুবি,উদ্ভট সম্পর্ক টেনে এনেছিস তোরা মা মেয়ে দুজনে মিলে। এই আপু? তোর প্লানটা কি বলতো? তুই কি চাস না আমি প্রেম করে বিয়ে করি? মুফতাহির ভাইয়াকে বলবো তাহলে?
-আ্ আরাব,আমি তো…
-তুই তো কি? তুই একটা বিপর্যয় আপাতত আমার কাছে! তোদের মা মেয়ের চক্করে,আমার লাভলাইফে আম্ফান শুরু হয়ে গেছে ইয়ার!
আরাবের চেহারা দেখে কোনোমতে হাসি আটকে রেখেছে তৌফিকা। টুইঙ্কেল এতোক্ষন এরদিক,ওরদিক তাকিয়ে শুধু শুনছিলো। বলার সুযোগ পেয়ে এবার বলে উঠলো,
-উইশমামের কার্লি হেয়ার দেখতে পারিনি মামা।
টুইঙ্কেলের একটা কথাতেই সমস্ত বিরক্তি উবে গেলো আরাবের। হাসিমুখে কোলে নিলো টুইঙ্কেলকে। ওর গালে চুমো দিয়ে বললো,
-উইশমামকে একদিন তোমার ডলের মতো সাজিয়ে রংধনুতে নিয়ে যাবো টুইঙ্কেল। সেদিন মামা আর টুইঙ্কেল,দুজনে মিলে তার কার্লি হেয়ার দেখবো কেমন? উইশমামের চুল অনেক সুন্দর জানোতো! নয়তো তোমার আম্মুর যা চুল,বাবুইয়ের বাসা!
তৌফিকা শব্দ করে হাসতে লাগলো। আরাব কিছুই বললো না আর। একটুপর তৌফিকাই বললো,
-ওওরে! এতো রাগ করছিস? আমার চুলকেও ছাড় দিলি না? আমি কিন্তু পরে দোয়াকে বলেছিলাম,উইশমামই ডাকার জন্য!
-হ্যাঁ হ্যাঁ,উদ্ধার করেছেন আমাকে। এবার চলুন? বাসায় যাই?
হেসে দিয়ে আরাবের হাতে চড় লাগালো তৌফিকা। বললো,
-এটুকেই এমন বিহেভ করছিস আরাব? তুই কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত লাভডোজ নিয়ে ফেলছিস ব্রো! ইনজুরিয়াস টু হেল্থ!
আরাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বললো,
-জানিনা বেহনা। বাট এটা বেশ বুঝে গেছি,উইথআউট হার,দেয়ার ইজ নাথিং আরাউন্ড মি।
-আব্বু!
টুইঙ্কেলের ডাকে পাশ ফিরলো আরাব তৌফিকা। মুফতাহির দাড়িয়ে গেছে। বিস্ময় বজায় রেখে এগোলো ওদের দিকে। তৌফিকাও বিস্মিত। এ সময় মুফতাহিরের এখানে উপস্থিতি অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো ওরও।বললো,
-মুফতাহির তুমি? এখানে?
মুফতাহির কাছে আসতেই টুইঙ্কেল আরাবের কোল থেকে বাবার কোলে চলে গেলো। আরাব বললো,
-কি ব্যাপার ভাইয়া? আজকাল কি শপিংমলেও ভাসমান কেবিনটেবিন খুলেছেন নাকি?
মুফতাহির হেসে বললো,
-ভাসমান কেবিন না হলেও,ভাসমানই কিছু বটে। তোমার বাবার কিছু ক্লায়েন্ট এটেন্ড করতে হলো আমাকে আরাব। ভাসমান বিজনেস!
তৌফিকার মন নিমিষেই ছোট হয়ে গেলো। আরাবের ফোন আসায় ওটা রিসিভ করে ইশারায় তৌফিকাকে বুঝালো ও বাইরেই আছে। ঘাড় নেড়ে সম্মতি বুঝালো তৌফিকা।বাবার কোল থেকে নেমে টুইঙ্কেল ছুটে গিয়ে আরাবের আঙুল ধরে হাটা লাগালো। মুফতাহির বললো,
-চলো যাই?
-হুম।
একদম ছোটস্বরে বললো তৌফিকা। কিন্তু দুপা হেটেই মুফতাহিরকে নাম ধরে ডাক লাগালো ও। দাড়িয়ে গেলো মুফতাহির। কিছুটা এগিয়ে ওর সাদা শার্টটার বুকের উপরের দিকে লেগে থাকা দুটো লম্বালম্বা চুল ফেলে দিলো তৌফিকা। বড়বড় চোখে তাকিয়ে রইলো মুফতাহির। ওর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির রেখে তৌফিকা বললো,
-তোমায় আমি কোনো ভাসমান জিনিসে শেয়ার করতে চাই না মুফতাহির। বাবার বিজনেসে তো একদমই না।
-ভাসমান কিছু কেনো তৌফিকা? আমি চাইনা তুমি স্থাবর,অস্থাবর কোনো কিছুতে আমাকে শেয়ার করতে রাজি হয়ে যাও।
মুচকি হেসে মুফতাহিরের হাত জরিয়ে ওর কাধে মাথা রাখলো তৌফিকা। এই মানুষটাকে ঘিরেই যে ওর সব সুখ। প্রচন্ড ভালোবাসে যে ও মুফতাহিরকে। জীবনসঙ্গী করে কাধে মাথা রেখে,হাতে হাত রেখে একইছন্দে পা বাড়ানোর মাঝে এভাবেই তো প্রকাশ পায়,ওদের ভালোবাসা পুর্নতা।
•
ভোরের দিকটায় এ ব্যস্ত শহরেও এখন আবছা কুয়াশা পরে। শীতের সকালের জড়তার অনুভব পাওয়া শুরু হয়ে গেছে দৌড়াতে থাকা মানুষগুলো,যানবাহনগুলোতে। ভার্সিটির প্রায় ফাকা বাসটায় প্রতিদিনের মতো চড়ে বসলো দোয়া। আজকে অরুনাভ মুখার্জীকে বাড়িভাড়া দিতে গিয়েছিলো ও। নেয়নি সে। বলেছে টাকাগুলো দিয়ানের জন্য জমাতে। কিন্তু এভাবে আর কতো? এই জমানো টাকায় ভাইয়ের অপারেশনের ভরসায় থাকলে,সে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। সামনে থার্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা। আগেররাতে নিজের পড়া করতেই দুটো বেজে গিয়েছিলো ওর। সুতোর গোছাটা হাতে নিয়ে টলতে টলতে কখন দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে এসেছিলো,জানেই না।
আযানের সময় জেগে উঠে রান্না সেরে রওনা হয়ে গেলো ভার্সিটির জন্য। নতুন টিউশনি খুজবে,নাকি চাকরি বুঝে উঠতে পারছে না দোয়া। পার্টটাইম চাকরি করতে গেলে টিউশনির বেশি টাকা পাবে না ও। পড়াশোনা একেবারে বাদ দেবে,অনার্স শেষ না করে সেরকম বেতনের চাকরিও সম্ভব না। হাজারটা চিন্তায় গাড়ি পৌছালো ভার্সিটির গেইটে। জানালায় মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো দোয়া। ঘুমে চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না। আগেররাতে বেশি রাত জেগে ফেলেছে,বেশ বুঝতে পারছে এখন দোয়া। কোনোমতে উঠে ভার্সিটিতে ঢুকলো। চোখেমুখে পানির ছিটে দিয়ে বই নিয়ে বসে গেলো চুপচাপ। বেশ অনেকটা সময় পর তাজীন এসে হাসিমুখে ওর পাশে বসে বললো,
-কেমন আছিস দোয়া?
-এইতো আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
-ভালো।
-বাসার সব?
-সব্বাই ভালো।
আরো টুকিটাকি কথা বলে দোয়া আবারো বইয়ের দিকে মন দিলো। খানিকটা সময় মোবাইল দেখে তাজীন একটু ইতস্তত করে বললো,
-দোয়া?
দোয়া মাথা তুলে বললো,
-হ্যাঁ বলো তাজ?
চুলের আড়ালে থাকা গলার চেইনটার উপর থেকে ওড়না সরিয়ে দিলো তাজীন। দোয়া দেখলো চেইনটা দেখতে বেশ সুন্দর। স্বর্নের বলেই মনে হচ্ছে। অবশ্য তাজীন বড়ঘরের মেয়ে। নকল গয়না কেনো কিনবে? বললো,
-এটা তো খুবই সুন্দর তাজ! অনেক মানিয়েছে তোমাকে!
-ক্ কে দিয়েছে বলতো?
অবাক হয়ে তাকালো দোয়া। পরপরই হেসে বললো,
-বাহ্,সার্জনসাহেবের চয়েজের তারিফ করতে হয়! অবশ্য যখন তোমাকে চুজ করেছিলো,তখনই প্রমান পেয়ে গেছি তার চয়েজ কেমন!
তাজীন লাজুক হাসলো শুধু। স্যার ক্লাসে ঢোকায় তাজীনের সাথে কথা অপুর্ন রইলো। ক্লাসের ফাকেফাকে দোয়া শুধু লক্ষ্য করলো,গলার চেইনটা বারবার ছুইয়ে দিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে তাজীন। খানিকটা হেসে মনেমনে আওড়ালো,নিশ্চয়ই ওই একটা মানুষের আগমনে তাজীনের চারপাশ এতোটা রঙিন। সে হিসেবে,লাভ ইজ বিউটিফুল-কথা সত্য!
•
মাঝখানে কেটে গেছে কিছুদিন। ভার্সিটি,চিলেকোঠা,টিউশনি এসব নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই জীবন চলছিলো দোয়ার। তবে আজকের বিকেলটা ভিন্ন। প্রচন্ড খুশি ও আজকে। আজ মাহিমের আম্মু নতুন টিউশনির কথা বলেছে দোয়াকে। যেহেতু সবটাই জানে সে দোয়ার বিষয়ে,তাই একেবারে কনফার্ম করেছে এমনটাই বললো। মেয়েটা সবে ক্লাস টু। বেতনের বিষয়ে ভালোই বললো মাহিমের আম্মু। ঠিকানাও দিয়ে দিয়েছে দোয়াকে। পরদিন ভার্সিটি শেষে যাবে একবার সে ঠিকানায়,এমনটাই ভাবলো দোয়া। মৃদ্যু হাসি নিয়ে হাটা লাগালো মৃত্তিকাদের বাসার উদ্দেশ্যে।
মৃত্তিকাদের তিনতলায় বাসা। নিচদিক তাকিয়ে খুশিমনে সিড়ি বেয়ে উঠছিলো দোয়া। হঠাৎই কারো সাথে বেশ অনেকটা জোরেই ধাক্কা লাগে। পরেই যাচ্ছিলো। একেবারে দুহাতে মুড়িয়ে ওকে সামলে নিলো আরাব। দোয়া একহাতে আরাবের গলা জরিয়ে,আরেকহাতে শার্ট খামচে রেখেছে। পরে গেছে এমনটা আন্দাজ করে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে দোয়া। এবার নিজেকে সামলানো দায় হয়েছে আরাবের। ইচ্ছে তো করছিলো ওই বন্ধ চোখজোড়াতেই ঠোট ছুইয়ে দিতে। তবুও চুপচাপ দোয়ার কোমড় জরিয়ে রাখা হাতজোড়ার বাধন আগলা করে সোজা হয়ে দাড়ালো ও।
হুশে ফিরলো দোয়া। চোখ তুলে তাকিয়ে আরাবকে দেখেই যেনো পায়ের তলার মাটি গরম হয়ে গেলো ওর। এ এখানে কেনো? যেখানে ও এই মানুষটার মুখোমুখি জীবনেও হতে চায়না,সেখানে আবারো এভাবে তারসাথে দেখা হওয়া! দু দন্ড দৃষ্টি বিনিময়ের সময়টুকো না দিয়ে ছিটকে সরে আসলো আরাবের কাছ থেকে। বললো,
-দুঃখিত।
ভ্রুকুচকে তাকালো আরাব। বিরক্তি নিয়ে অন্যদিক তাকিয়ে বিরবির করে বললো,
-এই লেভেলের সিনেম্যাটিক,রোমান্টিক সিনে কোনো মেয়ে দুঃখিত হয়? এ কার প্রেমে পরলাম? কোনটা সরি আর কোনটা কানে চুল গুজে লাজুক ভঙিমায় থ্যাংকস্ বলার সিচুয়েশন,বোঝেই না!
কথাগুলো কানে যায়নি দোয়ার। চলে আসছিলো ও। কথা বাড়ানোর একদমই ইচ্ছে নেই ওর। আরাব পেছন থেকে বললো,
-কেমন আছো? দিয়ান,আন্টি,কাকাবাবু সবাই কেমন আছে?
-সবাই ভালো আছে।
সিড়ি উঠতে উঠতেই বললো দোয়া। আরাব বললো,
-পরে যাওয়া থেকে বাচালাম,অকৃতজ্ঞের মতো থ্যাংকস্ না দিয়ে চলে যাচ্ছো কেনো?
দোয়া এবার পেছন ফিরে বললো,
-সেদিন আমিও কোনোভাবে আপনাকে বাচিয়েছিলাম। তার বিনিময়ে থ্যাংকস্ চেয়েছি কি?
কথা বলার কারন পেয়ে খুশি হয়ে গেলো আরাব। মুচকি হেসে বললো,
-ও তুমি থ্যাংকস্ চাইলেও আমি দিতাম না। বেটার কিছু ডিসার্ভ করো তুমি।
-আমি কি চাই,কি ডিসার্ভ করি সেটা নিয়ে ভাবার অধিকার আপনাকে দেইনি। সীমার মধ্যে থাকুন।
দোয়া পা বাড়ালো। পেছন থেকেই আরাব বললো,
-আমার ভাবনার সীমা নির্ধারন,আমার ভাবনায় কে থাকবে না থাকবে,সে বিষয়ে আমাকেই বুঝানোর অধিকার তোমারও নেই দোয়া! এ মনমস্তিষ্ক যাকে ঘিরে সীমাহীন ভাবার কথা ভেবেছে,প্রতিমুহুর্তে তাকে নিয়েই ভাবছে,ভাববে। আমি নিজেকে সে অধিকার দিয়েছি। আমার ভাবনায় তোমার জোর তো খাটবে না তাইনা?
দোয়া আড়াল। তবুও আরাব চেচিয়ে বললো,
-আরেকটা গুরুত্বপুর্ন কথা! এরপর থেকে এই সিড়ি বেয়ে উপরনিচ করার সময় বেশি কেয়ারফুল হওয়ার প্রয়োজন নেই। কজ আমারো যাতায়াত থাকবে এ সিড়িতে। তোমার যতোবার পরে যাওয়ার মতো অবস্থা হবে,আ’ল বি দেয়ার! তোমার পুরোপুরি দায়িত্ব নেওয়ার আগে তোমাকে সামলানোর দায়িত্বগুলো বুঝে নেই!
হুইস্টলিং করতে করতে নিচে চলে গেলো আরাব। পেছন ফিরে ফাকা সিড়ির দিকেই বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো দোয়া। অনেক আগেই দাড়িয়ে গিয়েছিলো ও আরাবের কথাগুলো শুনে। কিন্তু কি বলে গেলো এই লোক? কেয়ারফুল হওয়ার দরকার নেই মানে? এ সিড়িতে তার যাতায়াত থাকবে মানে? ও পড়ে গেলে,সে থাকবে মানে? ওর পুরোপুরি দায়িত্ব নেওয়ার আগে মানে? আবার ওকেই সামলানোর দায়িত্ব? মানেটা কি এসবের? চিন্তিত ললাটের রেখা পেরিয়ে ওর মুখ দিয়েও অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসলো,
-মানেহ্???
#চলবে…
#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-১৫
ব্রেক কষে কোনোমতে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে বড়সর বিপদ থেকে বেচে যায় নিরব। মাঝরাস্তায় ওর গাড়ির সামনে হুট করেই গাড়ি থামিয়েছে জারা। উদ্দেশ্য,আরাব কোথায় গেছে তার খবর নেওয়া। এ সময় ল্যাবে থাকে বলে সবেমাত্র বায়োমেডি গিয়েছিলো ও। নেই আরাব। বেরিয়েছে। আজ বেশ কিছুদিন হলো দেখাই হয়নি ওর আরাবের সাথে। তাই নিরবকেই ধরতে বাধ্য হলো ও। জারা গটগট করে গাড়ি থেকে নেমে এসে নিরবের গাড়ির জানালায় বারি লাগিয়ে বললো,
-গাড়ি থেকে বেরোও! ফাস্ট!
মাথা চেপে ধরলো নিরব। স্যারের এই চিপকানো গার্লফ্রেন্ড,গার্লফ্রেন্ড বললেও তো ভুল হবে। এই ছেচড়া মেয়েটা ওর জন্য চরম বিরক্তির কারন হয়ে উঠেছে ইদানিং। ব্লক থেকে শুরু করে সিম পাল্টেছে পর্যন্ত। লাভ হয়নি। জারা আবারো ওর গাড়ির কাচে আঙুল ঠুকে বললো,
-আরাব কোথায়?
-আমি জানিনা ম্যাম!
কাচ পুরোপুরিভাবে না তুলে বিরক্তিতে বললো নিরব। সত্যিই জানেনা ও আরাব কোথায়। এদিকে নিরবের কথা বলার ভঙিমা দেখে জারার গায়ে আগুন ধরে গেছে। চেচিয়ে বললো,
-তোমার বিরক্তি দেখতে আসিনি নিরব! নাইবা তোমার মিথ্যে শুনতে এসেছি! আরাব কোথায় সেটা বলো,চলে যাচ্ছি!
-আমি সত্যিই জানিনা স্যার কোথায়। বায়োমেডি থেকে দুপুরেই বেরিয়ে গেছেন উনি!
জারা সরে আসলো। গাড়ি সরিয়ে পথ ছেড়ে দিলো নিরবের। এবার সোজা রংধনু,তারপর তৌফিকার নতুন বাসায় যাবে ভেবে গাড়ি স্টার্ট দিলো ও।
এদিকে রাগে আর ড্রাইভ করতে ইচ্ছে করছে না নিরবের। গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাতে এদিক ওদিক পাইচারি করতে লাগলো ও। হঠাৎই একটা কার্ড একেবারে ওর পায়ের কাছে পরলো ওর। লাভ কার্ড। এতোটাই সুন্দর লাগছিলো দেখতে,তোলার জন্য ঝুকলো নিরব।
-ওটা আমার!
কড়াকন্ঠ শুনে মাথা তুলে তাকালো নিরব। আর দুহাতে হাজারটা শপিং ব্যাগ নিয়ে সরু দৃষ্টিতে নিরবের দিকে তাকিয়ে তাজীন। ওগুলো সামলাতে গিয়েই কার্ড পরে গেছে সেটা বুঝলো নিরব। তাজীন শপিংব্যাগগুলো বগলদাবা করে ঝুকলো কার্ডটা তুলবে বলে। তুলতে গিয়ে আরো দুটো ব্যাগ পরে গেলো ওর হাত থেকে। ব্যাগসহ কার্ডটা তুলে তাজীনের হাতে কোনোমতে গুজে দিলো নিরব। তাজীন বললো,
-আমি তুলতে পারতাম! ওগুলো আমার ব্যক্তিগত জিনিস!
-আমি একবারও বলিনি এগুলো আমার।
নিরবের নম্র কথায় মনোক্ষুন্ন হলো তাজীনের। ওভাবে বলতো না ও কথাটা। কিন্তু ও চায়নি কার্ডটায় ও ছাড়া অন্য কারো ছোয়া থাকুক। না হয় মানুষটার সামনেই পরেছে গিয়ে। লাভ কার্ড দেখেও,অন্যের জিনিস ধরতে যাওয়া কোনো সভ্যতার মধ্যে পরে না। এমনটা ধার্য করে লোকটাকে কড়াভাবে বলেছে। ওকে চুপ থাকতে দেখে নিরব মুচকি হেসে বললো,
-ইটস্ প্রিটি!
মাথা নিচু করে তাজীন বললো,
-থ্যাংকস্। এন্ড আ্ আ’ম সরি।
-সরি ফর হোয়াট?
-মেবি একটু বেশি রুডলি কথা বলে ফেলেছি আপনার সাথে।
নিরব শব্দ করে হেসে দিয়ে বললো,
-ইটস্ ওকে। আই আন্ডারস্ট্যান্ড! পছন্দের মানুষের থেকে পাওয়া বা তার জন্য নেওয়া জিনিসগুলো নিয়ে সেন্সিটিভ হওয়া দোষের কিছু না! সরি বলার প্রয়োজন নেই।
একটু অবাক হয়ে তাকালো তাজীন। পরপর হেসে বললো,
-এতোটাই বোঝেন,গফের রাগ ভাঙাতে পারলেন না?
নিরব বিস্ময়ে তাকালো। তাজীন বললো,
-আপনার গাড়ি আটকে দেওয়া আপুটা দেখতে অনেক কিউট। বেশ মানাবে আপনাদের।
সেকেন্ডদুই আটকে থেকে পেট চেপে ধরে শব্দ করে হেসে দিলো নিরব। ভাবা যায়? এই মেয়ে জারাকে ওর গার্লফ্রেন্ড ভেবেছে! তাজীন কপাল কুচকে তাকিয়ে ওর হাসিটা দেখলো। নিরব বললো,
-আপনার দুরদর্শীতার তারিফ করতে হয় মিস! এনিওয়েজ,আমি আসি। দোয়া করি এই দুরদর্শীতার জন্যই জীবনে যেনো আপনি অনেক ভালো কিছু গেইন করতে পারেন। কার্ড প্রেরক আর প্রাপক,দুজনের জন্যই অল দ্যা বেস্ট! বাই!
হাসতে হাসতে গাড়ি করে চলে গেলো নিরব। কিছুক্ষন ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো তাজীন। লোকটা ওভাবে হাসলো কেনো? ওর তারিফ করলো? নাকি অপমান? সব ভুলে আবারো কার্ডটা দেখে মৃদ্যু হাসলো ও। এটা তো সত্যি,কার্ড প্রাপকের জন্য ও সেন্সিটিভ। অনেকটা সেন্সিটিভ!
•
সন্ধ্যে পাঁচটা। মৃত্তিকাদের বাসা থেকে বেরিয়ে সিড়িতে উকিঝুকি দিলো দোয়া।আগেরদিন আরাবের বলা কথাগুলো মস্তিষ্কে বসে গেছে ওর। সিড়ির নিচে কাউকে না দেখে একটা ছোট শ্বাস ফেলে যেইনা নিচে নামতে যাবে,উপরের সিড়িতে মুঠো করা পাঁচআঙুল দুবার ছড়িয়ে,বন্ধ করে হাই বুঝালো আরাব। আঙুলে বাইকের চাবি। গায়ে তখনো এপ্রোন ওর। আইডি কার্ডও ঝুলছে গলায়। দোয়া বেশ বুঝলো,ও ল্যাব থেকেই এখানে এসেছে। ওকে রাগী প্রশ্বাস ছাড়তে দেখেই আরাব ইনোসেন্ট হেসে বললো,
-পাঁচতলায় আমার কলিগ আছে। জয়েন্ট থেসিস বলে গ্রুপ স্টাডি করতে এসেছি।
রাগ নিয়ে গটগট করে নেমে আসলো দোয়া। যে করেই হোক,এই লোকের মুখোমুখি না হওয়ার জন্য কিছু তো একটা করতেই হবে ওকে। ভাবতে ভাবতেই মুখার্জীবাড়ির গলি ছেড়ে খানিকটা অচেনা রাস্তায় পা বাড়ালো ও। ইতস্ততবোধ নিয়ে পাঁচতলা বাসার সামনে দাড়িয়ে উপরে তাকালো। গন্তব্য,দোতালা। মাহিমের আম্মু নতুন স্টুডেন্টের ঠিকানা তো এটাই দিলো। সিড়ি বেয়ে দোতালার ডানদিকের দরজায় থামলো ও। ইউনিট নাম্বার দেখে আরেকবার ব্যাগ থেকে কাগজ বের করে পরখ করে নিলো। এই বাসাই। কাগজটা ব্যাগে পুরে জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে কলিংবেলে চাপ দিলো দোয়া। প্রথমবার কলিং বেল বাজানোর পর দরজা না খোলায় অস্বস্তিটা আরো বেড়ে গেলো দোয়ার। দ্বিতীয়বার বেল বাজাবে,তার আগেই দরজা খুলে গেলো। দরজায় তৌফিকাকে দেখে খানিকটা থমকে গেছে দোয়া। তৌফিকা উল্লাসের স্বরে বললো,
-আরে দোয়া? তুমি?
দোয়ার মস্তিষ্কের নিউরনগুলো হিসাব মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। মাহিমের আম্মু ঠিকানা দিয়ে বলেছিলো মেয়ে ক্লাস টু,নাম সুপ্তি। সুপ্তি নামটা চেনাচেনা লাগলেও অতোটা গায়ে মাখেনি ও। তাছাড়া তৌফিকাকে তো ঢাকার ভেবেছিলো দোয়া। ওরা যে রায়নগরের হবে,সেটা ভাবতেও পারে নি। ওর হতভম্ব দশা দেখে তৌফিকাও কোনোমতে নিজেকে সামলালো। সেদিন টুইঙ্কেলের আপু ডাক ঘটনার পর শাস্তিস্বরুপ দুদিন আগে রংধনুর একদম পাশের বাসাটা ছাড়িয়ে এই রায়নগরে সেটেল করে দিয়েছে ওদের। মাহিমের আম্মু থেকে টুইঙ্কেলকে পড়ানোর খবর অবদি সবটাই ওরই কাজ! গত তিনদিনে টোটাল বারোজন লোক লাগিয়ে সমস্ত জিনিসপত্রও শিফট করিয়েছে এ বাসায়। হুট করে এভাবে বাসা পাল্টানোর জন্য মা বাবার কাছে কম কথাও শুনতে হয়নি ওকে। নেহাত মুফতাহির সবটা সামলে নিয়েছিলো। দোয়া অস্বস্তি নিয়ে বললো,
-আ্ আসলে আমি…
-কোনো আসলে ভেজালে না! কথাটা হলো আসলে তুমি? সত্যিই তুমি এসেছো আমার বাসায়?
-না আপু আসলে…
-এসো এসো,আগে ভেতরে এসো! তারপর সব কথা!
দোয়ার হাত ধরে ওকে ভেতরে টেনে নিয়ে গেলো তৌফিকা। টুইঙ্কেল এসে ওর সামনে দাড়িয়ে বললো,
-ওয়েলকাম উইশমাম! কি মজা! আজ থেকে উইশমাম প্রতিদিন আমাকে পড়াতে আসবে! কি মজা!
তৌফিকা বললো,
-হ্যাঁ,মাহিম ভাইয়ার আম্মু তোমাকে পড়ানোর জন্য উইশমামের কথাই বলেছে। কতো ভালো হলো বলো? এবার থেকে কিন্তু আর পড়াশোনায় ফাকিবাজি চলবে না টুইঙ্কেল! দোয়া? তুমি বসো! কি খাবে বলো!
দোয়াকে সোফায় বসিয়ে দিলো তৌফিকা। ব্যস্ত হয়ে পরেছে ও। দোয়া বললো,
-আপু,ব্যস্ত হবেন না প্লিজ। ম্ মাহিমের আম্মু,মানে নুপুর আন্টি কি টুইঙ্কেলকেই পড়ানো বিষয়ে…
-হ্যাঁ হ্যাঁ,এই পটাকাটাকে পড়াতে হবে তোমার! ওওমা দোয়া,আমি ভাবতেও পারিনি আন্টি তোমাকে ঠিক করবে টুইঙ্কেলের জন্য। খুব ভালো হয়েছে!
একটু অবাক হয়ে বসে থেকে হাসিমুখে টুইঙ্কেলের দিকে তাকালো দোয়া। যাকে সেদিন শপিংমলে হারিয়ে যাওয়ার পর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলো,সে মেয়েটাকেই পড়াতে হবে ওকে। তারচেয়ে বড় কথা তৌফিকার ব্যবহার! এমন একজনের বাসায় পড়াতে আসা মানেই ভালোলাগার একাংশ। মুখার্জীবাড়ি থেকে গলির দুটো মোড় নিয়ে পাঁচমিনিটের পথ এ বাসা। সবমিলিয়ে ওর জন্য বেশ ভালো। এখানে টিউশনি করাতে আপত্তির কোনো জায়গা নেই ওর। ওকে চুপ থাকতে দেখে তৌফিকা বললো,
-এনি প্রবলেম দোয়া? টুইঙ্কেলকে পড়াতে তোমার কি কোনো সমস্যা হবে?
-না না আপু। সেটা কখন বললাম? সমস্যা কেনো হবে?
-তারমানে তুমি আসছো তো?
টুইঙ্কেলকে পড়ালে মৃত্তিকাকে আর পড়াতে যেতে হবে না,আরাবের মুখোমুখি হতে হবে না ভেবে মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালো দোয়া। খুশি হয়ে গেছে তৌফিকাও। দোয়ার হাতে হাত রেখে বললো,
-থ্যাংকস্ দোয়া। তুমি জানোও না কতোবড় উপকার করলে তুমি আমার!
দোয়া অপলকভাবে তাকিয়ে রইলো শুধু। থ্যাংকস্ আসলে কার প্রাপ্য? তৌফিকা উঠে দাড়িয়ে বললো,
-তুমি বসো,আমি এখনই আসছি।
দোয়াকে বলার সুযোগ দেয়নি তৌফিকা। ছুটে চলে গেলো। টুইঙ্কেল ঠোট কামড়ে ধরে পাজল ঘোরাতে ব্যস্ত। ওর মনোযোগ দেখে হাসলো দোয়া। চোখ বুলালো ড্রয়িংরুমটায়। সবকোনায় আভিজাত্যের ছোয়া। তবুও একটু অগোছালোই বলে মনে হলো ওর কাছে। টুইঙ্কেলকে বললো,
-বাসায় টুইঙ্কেলের সাথে আর কে কে থাকে?
-আমি,আব্বু আর আম্মু!
টুইঙ্কেল ঘাড় নেড়ে নেড়ে বললো। ওর কথা বলার ধরনটা বেশ সুন্দর। কিছুক্ষন মুগ্ধভাবে তাকিয়ে থেকে দোয়া আবারো বললো,
-আর কেউই আসে না এ বাসায়?
-আর কে আসে?
থুতনিতে আঙুল রেখে চিন্তিতমুখ বানালো টুইঙ্কেল। বেডরুমের দরজার কাছ থেকে লাজুক ভঙিমায় মাথাটা চুলকালো আরাব। বাইক নিয়ে দোয়ার আগেই এ বাসায় ঢুকেছে ও। দোয়ার কথায় লাজুক চেহারা বানিয়ে বিরবির করে বললো,
-উইশমাম তোমার মামার কথা জিজ্ঞাসা করছে টুইঙ্কেল! কুছ কুছ হোতা হ্যায়! তুম নেহি সামঝোগে!
-ন্ না মানে,অন্য কেউই আসে না এখানে? তোমার টেককেয়ার করার জন্য? বা তোমার আম্মুর হেল্পিং হ্যান্ড?
যেনো বাজপরা শব্দ শুনলো আরাব। ঠায় হয়ে দাড়িয়ে রইলো দোয়ার কথা শুনে। পাশ থেকে অতিকষ্টে শব্দযুক্ত হাসি আটকে দিয়ে মুখ চেপে ধরে হেসে তৌফিকা বললো,
-লজ্জা পাওয়া অফ দে আরাব! তোর কথা বলেনি! কাজের লোক আসে কিনা এ বাসায়,সেই খোজ নিচ্ছিলো দোয়া। তোর বিষয়ে জানে ও,যে টুইঙ্কেলের কাছে তোর কথা জিজ্ঞাসা করবে?
ঘটনা বুঝে উঠে আহত দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকেই তাকালো আরাব। ওপারে থাকা মানুষটা প্রতিবার এভাবে কি করে ওর আকাঙ্ক্ষাগুলো চুরমার করে দেয় ভেবে মুর্তিমান হয়ে দাড়িয়ে রইলো ও।
#চলবে…