এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-২১+২২+২৩

0
1603

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
২১.
#WriterঃMousumi_Akter

–সন্ধ্যার খানিকটা পরেই বিভোর ভাই এবং মামি এলেন আমাকে নিতে।আমাকে তো নিতে আসার কথা ছিলো না।হঠাত করেই মামি আর বিভোর ভাই কে খানিক টা অবাক ও হলাম আমি।আমাকে তো মামি বা বিভোর ভাই কেউ আগে জানায় নি যে তারা আসবে।মামি বাড়িতে ঢুকেই আম্মুকে বললো কি ব্যাপার সানজিদা আমার মেয়েকে কি একেবারেই রেখে দিবে।আম্মু বললো, ভাবি তোমার মেয়ে তুমি নিয়ে যাও। আমাকে খুব জ্বালাচ্ছে পরে বলবা আমি না খাইয়ে রেখেছি।দেখো কয়েক দিন কিছুই খায় না দিয়া।গত তিনদিন দিয়া পানি ও খায় নি।আমার আর ভাল লাগছে না ভাবি।মেয়ের চোখে পানি,সারাদিন সুয়ে থাকে,হঠাত হঠাত কেঁদে উঠছে,বই নেই সামনে,প্রাইভেট যাচ্ছে না।এইদিকে বিহান বার বার বলেছে ফুপ্পি দিয়ার দিকে খেয়াল রেখো কিন্তু আমি কিভাবে খেয়াল রাখবো।বিয়ের পরে মেয়ে কি আর নিজের থাকে,মেয়ে আমার বড় হয়ে গিয়েছে আমার আগের সেই দিয়াকে খুজে পাচ্ছি না।মামির মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।মামি বললো, সানজিদা আমি নিয়ে যাচ্ছি দিয়াকে দেখবো কি হয়েছে পাকা বুড়িটার,তুমি একটুও মন খারাপ করো না।তুমি ফোন না দিলে আমি তো জানতেই পারতাম না দিয়ার কি হয়েছে।তার মানে আম্মু ই ফোন দিয়ে নিয়ে এসেছে।

–কিছুক্ষণ পরেই বিভোর ভাই আমার রুমে প্রবেশ করলেন দরজায় নক করে।বিভোর ভাই ভেতরে এসে দেখলেন আমি সুয়ে আছি।বিভোর ভাই আমাকে বললেন বোন উঠে রেডি হয়ে নে কাকিমনি আর আমি নিতে এসেছি।আমি বেশ সন্দিহান ভাবে বললাম,এ সময় আমাকে নিতে আসলেন কেনো বিভোর ভাই।বিভোর ভাই বললেন,কাকিমনির তোর জন্য পরাণ পুড়ছে তাই আমাকে বললো।আমি কিছু না বলে রেডি হয়ে নিলাম।কেমন যেনো লাগছে সব অন্যবার আমার জন্মদিনে বিভোর ভাই সব আয়োজন করেন।সাত দিন আগে থেকে বিভোর ভাই সবাই কে বলেন,আমার বোনের৷ জন্মদিন শহরের সব মানুষ জড় করে সেলিব্রেশন করবো।রিয়া,ভাইয়া,তোহা আপু,তিয়াস ভাই,মেহু আপু সবাই কি ভুলে গিয়েছে আমার জন্মদিন।কেউ আমার সাথে এ ব্যাপারে কথায় বলছে না।অন্য বার ভাইয়া আমাকে বলে কি চাই দিয়া তোর বল,আমার একমাত্র বোন যা চাইবে আমি তাই দিবো।বাবা বাদে কেউ আমাকে এইবার কিছুই বলে নি।শুধু বাবা বলেছেন আমার দিয়ার জন্মদিন এ দিয়া যা চাইবে তাই দিবো।বাবা ছাড়া কি কেউ আমায় ভালবাসে না।

“এমন সময় ছুটতে ছুটতে আয়রা এসে বিভোর ভাই এর কোলে উঠতেই বিভোর ভাই বললেন,আমার একমাত্র শালিকা কেমন আছো?”

“আয়রা এক গাল হেসে বললো ভাল আছি ভাইয়া।জানেন রিয়াপু আমাকে মেরেছে।।”

“কেনো মেরেছে?.”

“আমি আপুর বই পড়েছি বলে।”

“কি এত সাহস আমার শালিকার গায়ে হাত তোলা।আজ রিয়ার খবর আছে।আমি শ্বাশুড়ির কাছে নালিশ দিচ্ছি চলো।”

“বিভোর ভাই ছোট কাকিমনিকে বললেন এইযে শ্রদ্ধেয় হবু শ্বাশুড়ি মা আপনার পায়ে আমার আদাব।আমার রাক্ষাসী রাণি কটকটি বড় মেয়ে আমার বউ কে মেরেছে কেনো?হুয়াই?আমি এর বিচার চাই।তা’না হলে আমার বউ এ বড়িতে আর থাকবে না।”

“আয়রা বিভোর ভাই এর কথা শুনে যেনো লজ্জা পেয়েছে।আয়রা অবুঝের মতো বললো,সবাই কি আপনার বউ ভাইয়া। আমি বিহান ভাইয়া কে বলে দিবো আপনি আমি, রিয়াপু সবাইকে বউ বলেন।”

“রিয়া বেরিয়ে এসে বললো,অত দরদ আপনার বউ নিয়ে ভাগেন তো।আমার বই এর পাতায় মেহেদী লাগিয়ে দিয়েছে খানিক টা।ওর সাথে আপনাকেও মারবো বিভোর ভাই।”

“বিভোর ভাই আয়রা কে বললেন,আচ্ছা আমি তোমাকে বই কিনে দিবো ডারলিং আপুর বই আর নিও না।সে ডাক্তার হলে তোমার এই দুলাভাই এর সেবাযত্ন করবে বুঝেছো।”

মামি আর বিভোর ভাই এর সাথে বিহান ভাই দের বাড়িতেই ফিরে গেলাম।বিহান ভাই এর রুমে ভীষণ মন খারাপ করে বসে আছি আমি।মামি আমার পাশে এসে বসে ‘বললো,কি হয়েছে মা তোর।’

‘মামির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিয়ে বললাম কিছু নাতো মামি এমনি ভাল লাগে না কিছু।’

‘তোর চোখ মুখ তো অন্য কিছু বলছে দিয়া।’

‘ও কিছুনা মামি,তুমি যাও না ঘুমিয়ে যাও।’

‘এভাবে না খেয়ে থাকলে আমার ছেলে এটা সহ্য করতে পারবে না।’মামি একটু রসিকতা করেই বললো আমাকে হাসানোর জন্য।

‘তোমার ছেলের কথা বলো না প্লিজ।আমি তার ব্যাপারে কিছুই বলতে চায় না।’

‘খেয়ে না মা, আয় আমি খাইয়ে দেই।’

‘আমি খেয়ে নিবো যাও মামি প্লিজ।’

‘এত মন খারাপ কেনো মা তোর।’

‘আমি নিশ্চুপ রইলাম।’

‘মামি বললো আজ কিছুই বলবো না দেখি কাল কিভাবে মন খারাপ থাকে।’

বিহান ভাই এর আলমারি ই এখন আমার আলমারি।উনার আলমারি খুলে একটা নীল শাড়ি বের করলাম।কেনো জানিনা মনে হচ্ছে উনি আসবেন আমার কল্পনায়।কল্পনাতেই না হয় আমাদের সাক্ষাত হবে।সেখানেই না হয় উনি আমার না বলা কথা,অনুভূতি সব বুঝে নিবেন।নীল শাড়ি,নীল চুড়ি,চোখে কাজল দিয়ে একটু সেজে নিলাম আনমনে।শাড়ির কুচি ধরতে আমি সব সময় দূর্বল উনি আমাকে বিরক্ত করে হলেও শাড়ির কুচি ধরে দিয়েছেন।প্রতিটি পদক্ষেপে উনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি আমি।এখন উনি থাকলে কয়েকটা বিরক্তিকর কথা বললেও ঠিক ই কুচিটা ধরে দিতেন।রুমের দরজা লাগিয়ে সুয়ে সুয়ে উনার ই ছবি দেখছি। এমন সময় বিভা আপুর ফোন।ঘড়িতে সময় রাত সাড়ে এগারোটা।এত রাতে বিভা আপুর ফোন কেনো?কারো কিছু হয় নি তো আবার।এইভাবে তো বিভা আপু আমাকে ফোন দেয় না কখনো।আমি ফোন হাতে নিয়েই দরজা খুলে দেখি বাইরে বিভা আপু দাঁড়িয়ে আছে।বিভা আপুকে আমি বললাম,কি হয়েছে আপু এত রাতে তুমি ফোন দিচ্ছো?

–বিভা আপু আমার দিকে ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো কিরে দিয়া প্রেম ট্রেম করছিস নাতো আবার।

–আমি অবাক হয়ে বললাম কেনো আপু?

–এই মধ্যরাতে কয়েক টা ছেলে চার চার টা ভ্যানে করে তোর জন্য গিফট নিয়ে এসছে।কি করি বলতো।বাড়ির মুরব্বিরা জানলে তো কেলেঙ্গকারি হয়ে যাবে।কে দিয়েছে গিফট দিয়া।

–আমি অবাক হয়ে বললাম আমাকে আবার কে গিফট দিবে আপু?আমি তো কিছুই জানিনা।আমার মতো এতিমের জন্য আবার মধ্যরাতে গিফট।আবেগে কাঁন্না পাচ্ছে শুনে।

–ফান করিস না দিয়া সত্যি গিফট এসছে, কোন মজনু দিয়েছে পরে দেখবো।
ছেলে গুলো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে গিফট রিসিভ না করলে তারা নাকি যাবে না।তাহলে কি করা যায় দিয়া।

–আপু আমি ওসব নিতে টিতে পারবো না।বিহান ভাই জানলে আমাকে অক্কা পাওয়াবে।

–কিন্তু না নিলেও তো বিহান ভাই জেনে যাবে।তখন তো আরো জানাজানি হবে।তার থেকে চল দুজনে গিয়ে নিয়ে আসি।হয়তো বক্সের ভেতরে খুলে দেখলে আনুমান করা যাবে কে দিয়েছে।আপাতত ছেলে গুলোকে বিদায় করি।

আমি আর বিভা আপু চুপিচুপি রাস্তায় গেলাম।বাড়ির সাথেই রাস্তা।অচেনা কয়েকজন ছেলে চার চার টা ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমার চোখ একদম ই কপালে এত পরিমানে গিফট আমাকে আবার কে দিবে।নিতেও ভয় করছে।ভয়ে বুক কাঁপছে কি থেকে কি হয়ে যায় আল্লাহ জানে।কেননা বিপদে বার বার আমি ই পড়ি।

‘ছেলে গুলোকে জিজ্ঞেস করলাম এগুলো কে পাঠিয়েছে?’

‘তারা উত্তর দিলো আমাদের দায়িত্ব প্রিয়জনদের সারপ্রাইজ দেওয়া।সারপ্রাইজ টা নষ্ট করলে আমাদের বিজনেস লাটে উঠবে।তাই এটা বলা যাবে না আপু।উই আর ভেরি ভেরি সরি।প্লিজ এক্সেপ্ট ইট।’

আমি আর বিভা আপু ছয় বার করে এসে গিফট গুলো নিয়ে গেলাম।সব গিফট নেওয়া হলে আমার রুমে দরজা লক করে লাইট অন করে প্রথম বক্স টা খুললাম।

প্রথম বক্স খুলেই ভীষণ ভাবে অবাক হলাম আমি।লাল,নীল,হলুদ,কমলা,খয়েরী বিভিন্ন কালারের রঙিন চিরকুট।

একটা চিরকুট খুলে দেখলাম,

“জীবনের সতেরো তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা পিচ্চি। এভাবে কেটে যাক তোমার জীবনের কতগুলো বছর,কত গুলো সুন্দর মুহুর্ত শুভ জন্মদিন পিচ্চি।”

–পিচ্চি সম্মোধন তো উনি ছাড়া আর কেউ করেন না।পিচ্চি দেখে শিউরে উঠলাম আমি।এটা বাস্তব নাকি কল্পণা।এই পৃথিবীতে তো আর কেউ নেই যে আমাকে এই নামে ডাকতে পারে।হার্টবিট এর স্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলেছে আমার।শরীর ভারী হয়ে আসছে আমার।বুকের মাঝে করছে ভীষণ ধুকপুক।

–আরেক টা চিরকুট তুলে নিলাম।সেখানে লেখা তুমি না চুড়ি পরতে খুব ভালবাসো।যতবার চুড়ি দেখেছি আর যেখানেই চুড়ি দেখেছি মনে হয়েছে এই চুড়ি সেই হাতের জন্য উপযুক্ত।তোমার সেই হাত ছাড়া চুড়িতে আর কাউকে এত সুন্দর লাগে না।এই চুড়ি একদিনে কেনা নয় আমার বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছি আর চুড়ি কিনেছি।কয়েক বছর ধরে জমিয়েছি এই চুড়ি।ওই হলুদ বক্স টা খোলো ওর মাঝেই আছে তোমার জন্য রাখা চুড়ি পিচ্চি।

–দ্রুত হলুদ বক্স টা খুলে সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম আমি।
এক বক্স চুড়ি,এত বড় এক বক্স চুড়ি পাবো কখনো ভাবতেই পারি নি আমি।এইগুলো যে পাঠিয়েছে নিঃসন্দেহে সে এবং তার পছন্দ অনেক সুন্দর সেটা অস্বীকার করা যাবে না।এই এত এত চুড়ি আমি আসলে কবে পরবো।

–আরেক টা চিরকুটে লেখা,সতেরো টা শাড়ি তোমার জন্য।তোমার প্রতিটা জন্মদিনে শাড়ি কিনেছি কিন্তু কখনো দেওয়া হয় নি।উপহার গুলো এতদিন আমার কাছে আগলে রেখেছিলাম আজ মনে হচ্ছে তোমাকে দেওয়া উচিত।লাল বক্সে দেখো শাড়ি আছে।

–লাল বক্স টা খুলে সতেরো টা শাড়ি দেখে ভীষণ ভাবে অবাক হয়ে গেলাম।এগুলো কি স্বপ্ন নাকি সত্য কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।আমি তো আবার যখন ই সারপ্রাইজ পাই কিছুক্ষণ পরে দেখি হয় সেটা কল্পনা ছিলো না হয় স্বপ্ন।

–আরেক টা চিরকুটে লেখা বারোটা বাজার আগেই ছাদে চলে এসো। কেক নিয়ে অপেক্ষা করছি আমি।

–এক হাজার চকলেট এর এক বক্স দেখে আরো বেশী সারপ্রাইজড আমি।একটা বক্সে দেখলাম এক হাজার চকলেট। বক্সের গায়ে লেখা চকলেট গার্ল এই এক হাজার চকলেটের থেকে মিষ্টি ফ্লেভার তোমার মাঝে আছে।

এই বিশাল বিশাল সতেরো টা পান্ডা দিয়ে কি হবে।প্রতিটি পান্ডার গলায় লেখা আছে আই লাভ ইউ দিয়া।এই যে সতেরো টা শারীর সাথে সতেরো টা গাজরা এগুলো কবে পরবো আমি।খুব ই অদ্ভুত ব্যাপার আজ পর্যন্ত যা যা আমার ভাল লাগে বলেছি তার সব কিছুই এখানে আছে।এখনো পর্যন্ত অন লাইনে করা যাবতীয় ড্রেস একটা একটাও বাদ নেই।এই যে এত্তগুলান লিপিস্টিক,এত্ত এত্ত কানের দুল,এত্ত এত্ত মালার সেট, এত্ত এত্ত কাজল মেকাপ এসব দিয়ে কি হবে।
আমার সব পছন্দের কালার ই এখানে আছে।

একটা মানুষের এত ইউনিক আইডিয়া কিভাবে হতে পারে।সতেরো বছরের না দেওয়া গিফট এক সাথে।

–একদিন বিহান ভাই কে বলেছিলাম আমার খুব শখ আমার সাজুগুজুর একটা দোকান হোক।প্রচুর সাজুগুজু থাকবে আমি শুধু দেখবো।

–উনি বলেছিলেন,হ্যাঁ তোর বরকে ফকির বানানোর ধান্দা।যে পরিমান দাম মেয়েদের জিনিসের তুই আবার তার দোকান ও চাস। কি ছোট্ট চাওয়া তোর দিয়া।এগুলো না চেয়ে দুইটা কিডনী চেয়ে নিলেই তো হয়।

–আমি কি আপনার কাছে চেয়েছি বিহান ভাই?

–আমার মতো গরীবের কি আর সাধ্য আছে এত কিছু দেওয়ার।তবে সিওর তোর বর তোর মনের আশা পূরণ করবে।যে পরিমান বউভক্ত লোক হবে ভাবা যায়।আর হবেই বা না কেনো?তুই কি কম দাজ্জাল মহিলা,এমন যাদু করবি সারাক্ষণ শুধু দিয়া দিয়া করবে তোর বর।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বারোটা বাজবে বাজবে অবস্থা। বিভা আপুকে রেখেই এক ছুটে ছাদে গেলাম আমি।ছাদ দেখেই ভীষণ অবাক আমি পুরা ছাদ বেলুন আর ফুলে ফুলে সজ্জিত।অবাক হয়ে দুই গালে হাত দিলাম আমি।আমার কোনো হুঁশ নেই এটা কল্পনা নাকি বাস্তব সেটা ভাবার।আমি শুধুই আনন্দে উড়ছি,আর ভাবছি এক্ষুণি উনি আসবেন।এই সব কিছুর অংশিদার উনি ছাড়া কেউ হতে পারে না।এই সব উনার আয়োজন না হলে আমার মনে এতটা আনন্দে ভাষতো না।

ঘড়িতে বারোটা বাজবে এ সময়ে আকাশে কয়েকশ বেলুন উড়লো আমার মাথার উপর দিয়ে।আমি ভীষণভাবে সারপ্রাইজড আজ।যে বেলুনের ভিতরে লেখা শুভ জন্মদিন দিয়া। বারোটা বাজতেই আকাশে উড়লো ফানুশ, ছোট বড় অনেক রকমের ফানুশ।আর সেই সাথে আমাকে চমকে দিয়ে উনার আগমন ঘটলো।উনার মুখে শুভ জন্মদিন পিচ্চি শুনে আনন্দে কেঁদে দিলাম আমি।ছাদের মাঝে জোসনার আলোয় গায়ে কালো জ্যাকেট, পরনে ব্লু জিন্স হাতে ক্লাপ দিচ্ছেন আর বলছেন শুভ জন্মদিন পিচ্চি।আনন্দে আমার চোখ মুখ ছল ছল করছে। যে মুহুর্তে উনাকে পাগলের মতো খুজছি আমি,আমার মন চাতক পাখির মতো উনার জন্য ছটফট করছে সেই মুহুর্তে উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে পিচ্চি বলে ডাকছে।চারদিকের থেমে যাওয়া সব কিছু যেনো আবার চলতে শুরু করলো।উনার মুখের পিচ্চি ডাকে বিশেষ তো কিছু আছেই।আমি ছুটে গিয়ে উনাকে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।আমার সামনে কোনো পাহাড় থাকলেও আমার দৌড়ের গতিবেগ এ ভেঙে চূর্ণ হয়ে যেতো।আমি ভীষণ শক্ত ভাবে আকড়ে ধরলাম উনাকে।উনার থুতনি ঠেকেছে আমার মাথায়।উনিও দু হাতে আলিঙ্গন করলেন আমাকে।উনার বুকে কিল দিতে দিতে বললাম এটা আপনি হতে পারেন না আমি বিশ্বাস ই করি না।আপনি আমার জন্য এত কিছু ভাবতে পারেন না।আমার কল্পনায় ভাবা আপনি কি সত্যি কল্পনা ছেড়ে এসেছেন।এখুনি আবার হারিয়ে যাবেন আপনি বিহান ভাই।এই কল্পনা কেনো সত্যি হয় না আমার।আমি পথে চেয়ে চেয়ে অন্ধ হয়ে যেতাম আরেক টু হলেই।হোক না এটা কল্পনা তবুও তো আপনি এসেছেন।কেনো আরো আগে আসেন নি আপনি।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন২)
২২.
#WriterঃMousumi_Akter

“আপনি থেকে যান আমার জীবনে বিহান ভাই,থেকে যান আমার হয়ে। যে থেকে যাওয়ায় আমার অধিপত্যে থাকবে শুধু।আপনার জন্য বুকের মাঝে ভীষণভাবে ক্ষত তৈরি হয়েছে আমার।আমি যেনো চোখ খুলে আবার আপনাকে দেখতে পাই।শুধুমাত্র চোখ অফ করলেই কেনো আপনি আসেন।বার বার চোখ খুলে আপনাকে দেখার চেষ্টা করেছি ঠিক তখন ই হারিয়ে গিয়েছেন আপনি।”

“চোখ খোলো দিয়া,তাকিয়ে দেখো আমি এসেছি।”

“কেনো আবার ছলনা করছেন বিহান ভাই?আপনার যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে তাইনা?তাই তো চোখ খুলতে বলছেন।”

“তোমার সাথে ছলনা করলে ছারখার হয়ে যাবে আমার হৃদয় দিয়া।”

“তাহলে চোখ খুলতে বলছেন কেনো?”

“চোখ না খুললে আমাকে দেখবে কিভাবে?”

“চোখ খুললেই আপনি হারিয়ে যাবেন,মিলিয়ে যাবেন কোথায়?এই কল্পনা থেকে আমি বেরোতে চাই না আর।প্রিয়রা কেনো কল্পনাতেই এত সুন্দর হয় বলবেন।কল্পনা গুলোতে নিজের ইচ্ছামতো প্রিয়জনের সাথে সুন্দর সময় কাটানো যায়।”

“তাকাও পিচ্চি,তাকাও আমার দিকে,তোমার বিহান ভাই সত্যি এসছে।তোমার কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে তোমার সামনে এসেছে।চোখের পানিতে তোমার লেপ্টে যাওয়া কাজল ঠিক করে দিতে এসছি আমি।তোমার মনের ক্ষত ঠিক করতে এসছি আমি।খুব ইচ্ছা করছে এই ইমোশনাল কপালে নিজের ঠোঁট ছুইয়ে দিতে কিন্তু জানোতো প্রিয় ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়ায় মনের ক্ষত ঠিক করা যায় না,মনের ক্ষত ঠিক করতে মনের অনুভূতি লাগে।সেই অনুভূতি নিয়ে আমি দাঁড়িয়েছি দিয়া।

যদি একটা দীর্ঘতম অসুখের নাম জিজ্ঞেস করো,
আমি বলব “ভালোবাসা।”
যদি জানতে চাও, “তবে, সুখি কে?”
বুকের ছাতি ফুলিয়ে জানিয়ে দেবো,
যার হৃদপিন্ডে জড়িয়ে রয়েছে এই লাল রঙের
আশ্চর্য ম্যাজিক,
সে’ই সুখি।

লেখা: রুদ্র গোস্বামী”

এই কথাটা আমার নয় দিয়া রুদ্র গোস্বামির।কথাটা আমার মনের কথা।ভীষণ ভাল লেগেছে লাইন গুলো।”

–আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে উনার বুক থেকে মাথা উঁচু করে উনার দিকে তাকালাম।উনি উনার দুহাতে আমার গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।এটা কি সত্যি বিহান ভাই।উনি আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললেন,এই পৃথিবীতে এই একটা জিনিস আমি সহ্য করতে পারি না।সেটা হলো তোমার চোখের পানি।প্রিয়জনের চোখের পানি সহ্য করা যায় না দিয়া।প্রেমিকের বুকে রক্তক্ষরণ করে এটা।

–রিয়া,বিভোর ভাই,তোহা আপু,তিয়াস ভাইয়া,মেহু আপু,বিভা আপু সবাই ছাদে হুড়মুড় করে প্রবেশ করে হ্যাপি বার্থডে বলে প্রবেশ করলো।আমি ভীষণ অবাক হলাম।মুখে হাত দিয়ে ঘন নিঃশ্বাস নিলাম।তারা আমাকে এইভাবে চমকে দিবে আমি তো ভাবতেই পারিনি।আমাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিভোর ভাই বললেন,কিরে বোন কি ভেবেছিলি তোর জন্মদিন আমরা ভুলে গিয়েছি।তোর জন্মদিন কি আমরা ভুলতে পারি।তুই এ কদিন মন খারাপ করে ছিলি তাই তোর এই খারাপ মন কে ভাল করতে আমাদের তোর এই খারাপ ভাই বোন দের এই আয়োজন।তবে হ্যাঁ তোর একমাত্র হাজবেন্ড এর প্লান ছিলো।আর আমরা দেখলাম প্লান টা ওয়াও ছিলো।তাই এ কদিন ধরে সবাই আমরা প্লান করছিলাম।

–আমি অবাক হয়ে বললাম বিভোর ভাই আপনি এমন করতে পারলেন,আমার আর একটু হার্ট এট্যাক হচ্ছিলো।সবাই ভুললেও আপনি কিভাবে ভুলে যেতে পারে এটা ভেবেও কাঁন্না পাচ্ছিলো খুব আমার।

–বিভোর ভাই আমার গালে আদরের সাথে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,পাগলি একটা শুধু কাঁদে।যতদিন তোর বিভোর ভাই বেঁচে থাকবে দিয়ার জন্মদিন ভুল হবে না।

–আপনারা কোথায় ছিলেন বিভোর ভাই।

–রিয়া, তোহা,মেহু,বিভা আপু সবাইকে এলার্ট করা ছিলো তোর জন্মদিনে এইবার আমরা এমন ভাব করে থাকবো তুই যেনো মনে মনে খুব দুঃখ করিস।আমরা নিচেই ছিলাম।বিহান এর গিফট গুলো পাড়ার ফ্রেন্ড দের দিয়ে পাঠিয়ে আমরা আড়ালে ছিলাম।তোর কাছে গিফট পাঠাতে বিভা আপুর সাহায্য নিয়েছিলাম।আপুও সব টায় জানতো।

–বিহান কে উপরে পাঠিয়ে ফানুস আর বেলুন উড়ানোর দায়িত্বে নিচে ছিলাম আমরা।আজ আকাশে রঙিন ফানুশের মতো আমাদের দিয়ার জীবন রঙিন হোক সেই কামনায় শুভ জন্মদিন দিয়া।

–বিভা আপুর দিকে অভিমান নিয়ে তাকিয়ে বললাম,বিভা আপু আমাকে বললে না কেনো তুমি?আমাকে রিতীমত ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি।তোমার উপর ও রাগ করেছিলাম যে তুমিও আমার জন্মদিন ভুলে গেলে।

–বললে কি আর সারপ্রাইজড হতি গাধী।তোর মুখে হাসি ফোটাতেই তো কিছুই বলি নি আমরা।শুভ জন্মদিন দিয়া পাখি আমাদের অভিমানি বুড়ি টা বলেই বিভা আপু আমার গাল টেনে দিলো।

–ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম ভাইয়া তুমিও।অন্যবার বলো আমার একমাত্র বোনের কি চাই তার জন্মদিনে।এইবার কিছুই বলো নি তুমি।আমার কথা ভুলে গিয়েছিলে তোমার ঘরে বউ আসার আগেই।এটা ভেবেই দুঃখ হচ্ছিলো আমার।আম্মুকে বলবো তোমার কোনদিন বিয়েই না দিতে।ভাইয়া তুমি আমাকে ভুলে গেলে আমার অনেক কষ্ট হবে।

–কি আর করা আমার এই ছোট্ট বোনের বিশাল অভিমান ভাঙানোর দায়িত্ব টা তো আমার ও আছে।আমি কি আমার একমাত্র আদরের বোনের জন্মদিন ভুলতে পারি।বিগত এগারো মাস ধরে অপেক্ষা করছি কবে আমার অভিমানি বোনের জন্মদিন আসবে আর সারপ্রাইজ দিবো।আমার বোনের যা চাই তাই দিবো আমি।আর একটুও মন খারাপ নয় কিন্তু পাগলি টা।

–মেহু আপু, রিয়া,তোহা আপু সবাই বোকা বানালে আমায়।তোমাদের সাথে কথা নেই।তোমাদের জন্য অনেক দুঃখ হয়েছে আমার।আমি অনেক কেঁদেছি আজ।

–রিয়া আর মেহু আপু বললো,এটা আমাদের গ্রেট বিহান ভাই এর প্লান।প্লান টা ভীষণ মারাত্মক রকমের সুন্দর ছিলো।আসলেই বিহান ভাই এর তুলনা কারো সাথে করা যায় না।জীবনে অনেক চমৎকার রকমের সারপ্রাইজ দেখেছি কিন্তু বিহান ভাই এর মতো এতটা মারাত্মক সুন্দর কোথাও দেখি নি।আজ যদি শিরির ফরহাদ বেঁচে থাকতো তাহলে সে ও অবাক হয়ে যেতো বিহান ভাই কে দেখে।

–বিহান ভাই চুলের মধ্য হাত চালাতে চালাতে বললেন বুঝলে রিয়া,মেহু,তোহা তার সবার জন্য অভিমান হয়েছিলো শুধু আমি বাদে।আমি ছাড়া সবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে।হিংসা হচ্ছে তোমাদের দেখে।

–লজ্জায় উনার দিকে তাকাতে পারছি না আমি।আজ উনার চোখে উনার মুখে আমার প্রতি ভালবাসার অনুভূতি দেখেছি।এর পরেও কি বলবেন উনি আমায় ভালবাসেন না।আজ আমার মন বুঝে গিয়েছে উনার মনে আমার জন্য বিশাল অনুভূতির সম্রাজ্য আছে।আপনি আর কোনদিন এটা বোঝাতে পারবেন না যে আপনি আমাকে ভালবাসেন না।এত গুলো বছরের জমানো অনুভূতি আজ প্রকাশ করলেন কিন্তু মুখে বললেন না ভালবাসি।আপনার ওই মুখে ভালবাসি শুনতে ভীষণ ইচ্ছা করছে।তাহলে আপনার সেই শ্বশুরের মেয়ে সে কে ছিলো?তাকে কি ভুলে গিয়েছেন।সে কি আমি,ভেবেই আনন্দে ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো লাজুকতার হাসি।আপনাকে আপনার নিজের মুখে বলতেই হবে বিহান ভাই।আমাকে যা কিছুই বলেন এটা আর কখনো বিশ্বাস করাতে পারবেন না আপনার মনের দখলদার অন্যকেউ।আপনার লিগ্যাল শ্বশুরের মেয়ে আমি আর এই আমি ই থেকে যাবো পাক্কা প্রমিজ।আমার অধিকারে আমি অন্যকাউকে প্রবেশ করতে দিবো না।আপনি আইনগত ভাবে আমার,শরিয়ত মোতাবেক আমার,আর মনের রাজত্বেও আমার।আমার আমার শুধুই আমার।

–নিচে থেকে বিভোর ভাই আর তিয়াস ভাইয়া টেবিল নিয়ে এলো।টেবিলে কেক রাখা হলো।আমার হাত ধরে সবাই মিলে কেক কাটলাম।আমি সবার গালে তুলে খাইয়ে দিলেও উনার গালে তুলে খাইয়ে দিতে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছি।ইচ্ছা করছে অথচ পারছি না।বিভা আপু,রিয়া,মেহু আপু,তোহা আপু সবাই আমাকে রিকুয়েষ্ট করেই যাচ্ছে বিহান ভাইকে কেক খাইয়ে দিতে কিন্তু আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।কিভাবে উনার গালে তুলে খাইয়ে দিবো।উনার আর আমার মাঝে কখনো এমন কিছু হয় নি।ভালবাসলেও আর পাঁচ জনের মতো খুব গভীর ভাবে কোনো কথা হয় নি।আমি যে উনাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম ভেবেই মারাত্মক লজ্জা লাগছে।ইস কি লজ্জা।কি ভেবেছেন আমাকে উনি কে জানে।কি নির্লজ্জর মতো আমি উনার বুকে গিয়ে আকড়ে ধরেছিলাম।পরমুহুর্তে ব্যাপার টা এত লজ্জায় ফেলবে আমি তো ভাবতেই পারিনি।উনি এক পা দু’পা করে এগিয়ে আসতে শুরু করলেন আমার দিকে।নিচের ঠোঁট কামড়ে মৃদু হেসে এগিয়ে আসছেন।আঙুলে একটু কেক নিয়ে আমার গালে লাগিয়ে দিতেই ছুটে পালালাম ছাদ থেকে।ইস এত লজ্জা লাগছে কেনো?পেছন থেকে যে সবাই আমাকে এত ডাকলো আমার সেদিকে কোনো হুঁশ নেই।রুমে এসে লজ্জায় মুখ ঢাকলাম দুহাতে।তাকাতেই পারছি না লজ্জায়।

কিছুক্ষণের মাঝেই বিহান ভাই রুমে প্রবেশ করলেন আর আস্তে করে ঘরের সিটকিনী লাগিয়ে দিলেন।উনার প্রবেশে বুকে দুরুম দুরুম আওয়াজ শুরু হলো।এ আওয়াজ ছিলো ভীষণ লজ্জার।উনাকে দেখেই ঠিক করা শাড়ি আবার ও ঠিক করতে শুরু করলাম।উনার ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি আর হাতে কড়ি বেলির গাজরা যার থেকে ভেষে আসছে সুঘ্রাণ।উনি এগিয়ে আসছেন ক্রমশ আমার দিকে আমার হার্টবিট ততটাই বেড়ে যাচ্ছে।এই অদ্ভুত মানুষ টা দেখছে আমি লজ্জা পাচ্ছি তবুও এসেই আমার কোমরে হাত দিয়ে এক ঝটকায় উনার কাছাকাছি টেনে নিয়ে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছেন।নিঃশব্দে এই আমায়িক হাসিতে এত সৌন্দর্য কেনো?আমাকে নড়তে দেখে বলছেন এভাবে ছটফট করছো কেনো?পারবে আমার বাঁধন থেকে যেতে।আমি নিশ্চুপ আছি।কিছুই বলছি না।আমার অন্য হাত টেনে নিয়ে উনার মুখে দিলেন,ডান হাতে কেকের টুকরো ছিলো সেটাই নিজের মুখে নিলেন।এই মানুষ টা এত অসভ্য হয়েছে কবে। কেকের টুকরোর সাথে কি আমার এই বাচ্চা আঙুল দুইটা ও খেয়ে ফেলবেন।এক হাত তো এমনি কোমর স্পর্শ করেছে অন্য হাত দিয়ে আমার হাতের কব্জি ধরে রেখেছেন।উনার ঠান্ডা হাত কোমরে যখন লেগেছে তখন থেকেই ঠান্ডায় কেঁপে উঠছি আমি।এই অসভ্য মানুষ টা সব দিক থেকে অত্যাচার করছে আমায়।না ছাড়ছে কোমর না ছাড়ছে হাত।পৃথিবীর সব অদ্ভুত শিহরণ এখন আমার মাঝে।বেডের উপর বেলির গাজরা টা রেখেছিলেন।গাজরা টা নিয়ে আমার খোপায় পরিয়ে দিতে দিতে বললেন, শ্বশুরের পিচ্চি মেয়ে যদি এভাবে লাজুকতা নিয়ে নীল শাড়ি পরে এলোমেলো চুলে, লেপ্টে যাওয়া কাজলে আমার সামনে আসে তাহলে তার শ্বশুরের ছেলে যদি ভুলভাল কিছু করে ফেলে সে দায়ভার কিন্তু শ্বশুরের মেয়েকেই নিতে হবে।

কি আধ্যাতিক কথা উনার।আবার ও লজ্জায় মুখ ঢাকলাম।উনার সামনে থেকে পালাতে মন চাইছে আমার।

লাজুকতা আর মৌনতায় কেটে গেলো আরো কিছুক্ষন।স্বাভাবিক হলো পরিবেশ।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
২৩.
#WriterঃMousumi_Akter

–রাগে মনে হচ্ছে এ দুনিয়ার সব কিছু ভেঙে ফেলি আমি।মনে চাচ্ছে ওই বিশ্রি জিলেপির প্যাচের মতো মনের মানুষ কে মেরে আলমারি তে ঢুকিয়ে রাখি,না হলে বাথররুমে বন্ধ করে রাখি।কেনো বর বরের মতো হবে,রাত হলে বউ এর সাথে রোমান্স করবে,তিন বেলা বউকে খাইয়ে দিবে আরো অনেক কিছুই করবে।তা না বর হয়েছে গিগিটির মতো।আচ্ছা উনি কি কখনো সিনেমা,বা রোমান্টিক কিছুই পড়েন নি।তা পড়বেন কেনো পড়লে যে সময় নষ্ট হবে উনার।আমরা পড়ি, তোমার নামে সন্ধ্যা নামে আর উনি পড়েন কিসব ইংলিশ বই।এইজন্য ইংরেজ দের মতো শাসক হচ্ছেন উনি।সাত দিন আগে আমার জন্মদিন ছিলো সে রাতে কি ভয়ানক সারপ্রাইজ টায় না উনি দিলেন।আচ্ছা উনি কি ভুলে গিয়েছেন আমাকে কি কি রোমান্টিক কথা বলেছিলেন।আমার তো মনে হয় ভূতে চেপেছিলো বলে অমন করেছিলো।না হলে ইতিমধ্য সব ভুলে যায় কিভাবে হাউ অদ্ভুত। কি ভয়ংকর ইংলিশ টায় না বললাম আমি।আমি সেদিন থেকে বার বার উনার কাছে জানতে চেয়েছি অথচ উনি বার বার আমাকে ইগনোর করছেন।সেদিন রাতের কোনো টপিক্সে আর যেতেই চাইছেন না উনি।সেদিন রাতে ঘুমোনোর পরে ভেবেছিলাম প্রতিটা দিন এমন রোমান্টিক ই হবে।ঘুম থেকে দেখলাম ভীষণ মুড নিয়ে উঠে আগের রুপে ফিরে গিয়েছেন।কড়া ভাষায় বলে দিয়েছেন আমার ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম দশ দিন বাড়িতে থাকবো এক মিনিট ও কানের কাছে চ্যা চ্যা করবি না।আমাকে মনোযোগী হতে পড়ায়।সেই থেকে বই ই পড়ছেন শুধু।

উনি চেয়ার টেবিলে মনোযোগ সহকারে বই পড়ছেন।আর আমি কিভাবে উনাকে বশ করা যায় বসে বসে সেটাই ভাবছি।না হলে এই মানুষ জীবনে সুধরাবে না।এমন বশ করতে হবে সারাদিন আমার পিছনে ঘুরবে আর আমি পাত্তা দিবো না।আহা!কি শান্তি ভেবেই।কিন্ত কি উপায়ে, বিহান ভাই কে বশ করবো।বিহান ভাই তো সব কিছু গুগলে সার্চ করেন।দেখি আমিও করে দেখি।

–দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে গুগল এ সার্চ করলাম কিভাবে মামাতো ভাই কে বশ করতে হয়। মনে মনে ভাবছি এইবার কই যাইবা চান্দু তোমারে এমন বশিকরণ করমু সারাজীবন শুধু দিয়া দিয়া করবা।আহা কি শান্তি ভেবে নাগিন ডান্স করছি মনে মনে।বিহান ভাই এর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছি আর হাসছি আমি।

আমার এই সকল আনন্দের পিন্ডি চটকিয়ে আমার হাত থেকে মোবাইল টা কেড়ে নিলেন যমরাজ দ্যা আধ্যাতিকবিদ বিহান ভাই।

আম দুঃখি দুঃখি মনে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি ফোনটা নিলেন কেনো?এখনি তো দেখে ফেলবেন কি সার্চ করেছি আমি।

চোখ মুখ চুপসে উনার দিকে তাকালাম আমি।

ভ্রু কুচকে প্যান্টের বাম পকেটে হাত গুজে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।পরণে এ্যাশ কালারের ট্রাউজার, গায়ে সাদা কলার দেওয়া গেঞ্জি।উনার সম্পূর্ণ দৃষ্টি আমার দিকে।উনার কি বেগুনে লস হয়েছে বুঝলাম না।মুখশ্রী এমন ভাব করে দাঁড়িয়ে আছে উনার সুন্দর চেহারার সব মাধুর্য এই গোমড়া মুখের আড়ালে ঢাকা পড়েছে।আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে এবার উনার মনোযোগ ফোনের দিকে দিলেন।ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে এবার আমার দিকে তাকিয়ে দুই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন।

আমি একটা শুকনো কাশি দিয়ে বললাম কি ব্যাপার কি আমার ফোন নিয়েছেন কেনো গুন্ডাদের মতো।দিন আমার দিন বলছি।অন্যর জিনিস এইভাবে না বলে নেওয়া উচিত না।তাছাড়া এটা আমার ব্যাক্তিগত ফোন।

উনি আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন আজকাল তোদের মতো অসভ্য মহিলাদের জন্য আমার মতো নিরীহ ছেলেগুলো সেইফ না বুঝছিস।আমাদের মতো ইয়াং জেনারেশন ভুগছে ইজ্জত হারানোর ভয়ে।

–আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,ঠিক বুঝলাম না বিহান ভাই আপনি ঠিক বলতে চাইছেন।

–উনি একটা জোরে শ্বাস টেনে বললেন, বুঝাতে চাইছি যে তুই কি পুরণো খাঁন দের মতোই অত্যাচারী হচ্ছিস।না হওয়ার কিছুই নেই এগুলো তোর বংশে আছেই।

–দেখুন বংশ না টেনে ক্লিয়ার করে বলুন কি বলছেন।

–তুই গুগলে এটা কি সার্চ করেছিস।

–কি সার্চ করেছি।

কিভাবে রুমের মাঝে ফেলে এই নিরীহ ছেলেটাকে অত্যাচার করা যায়।
বলেই উনি আমার ফোন টা আমার দিকে ধরলেন।সেখানে লেখা কিভাবে মামাতো ভাইকে করতে হয়।নাউজুবিল্লাহ ছিঃকি বাজে বাজে জিনিস লেখা।আমার মন চাইছে এখন লজ্জায় গঙ্গায় ডুব দিয়ে মরে যায়।আমি কি সার্চ দিলাম আর এখানে এখন কি লেখা।বশ লেখা টুকু কোথায় গেলো।কিবোর্ড এ কি কোনো সমস্যা হওয়াতে বশ লেখাটুকু আসে নি।

বিহান ভাই আমার দিকে আবার ও ঝুঁকে বললেন, ছিঃদিয়া তোকে ভাল ভাবতাম।এক্কেবারেই নিরীহ পিচ্চি ভাবতাম।কিন্তু এই ছিলো তোর মনে।তোর থেকে কয়েকশ হাত দূরে থাকতে হবে।

এখন তো মন চাচ্ছে নিজের গলা নিজে টিপে ধরি।এই মানুষ টা এই নিয়ে আমাকে আরো কথা শুনাবেন তার তো ঠিক ই নেই।ফোন টা আমার হাতে দিয়ে বললেন কি সাংঘাতিক মহিলা তুই তাও আবার বিবাহিত মহিলা।

–দেখুন আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু নয়।আমি অন্যকিছু সার্চ করছিলাম।

–ওহ আচ্ছা তাই!তাহলে কি সার্চ করা হচ্ছিলো।

–কিভাবে মামাতো ভাই কে বশ করতে হয়।

–কিভাবে মামাতো বর কে বশ করতে হয়।ওএমজি কি মারাত্মক কথা।তোর বর কয়টা দিয়া।

–একদম ই বাজে কথা বলবেন না।মামাতো ভাই বলেছি বর কখন বললাম।

–তুই তো বর ই বললি দিয়া।তাই মামাতো বর।

–কানের ডাক্তার দেখান কুইক বিহান ভাই।।।

–বাহ শিক্ষিত মহিলা কয়েকটা কমন ইংলিশ শিখে সারাদিন সেগুলোই বলতে থাকিস।

– কমন ইংলিশ মানে।আমি ইংলিশ এ অনেক ভাল স্টুডেন্ট।

–আমি তো তোর মুখে,বাট,হোয়াট,হুয়াই এগুলা ছাড়া আর কিছুই শুনি ন।শুনেছি তোর দাদা প্রায় বিয়ে অনুষ্টানে গিয়ে এগুলা ইংরেজি ই বলতো।

–আমার দাদাকে নিয়ে কিছু বললে এখন কিন্তু ভুমিকম্পন শুরু হবে।দিন আমার ফোন দিন বলছি।

–তোর ফোন কিভাবে?..

–তাহলে কার?

–আমার বউ এর।

–আপনার বউ কে?

–আমার সাথে এ ঘরে যে ঘুমোয় সে।

–আপনার বউ বলছেন?..

–অস্বীকার করেছি কখনো।

–ওই যে বলেন কে যানি আছে শ্বশুরের মেয়ে আছে

–তোর বাবার মেয়ে যে বিয়ে করবে সে তোর বাবার কি হবে।

–এত না ঘুরিয়ে ক্লিয়ার বলেন।

–আমি ক্লিয়ার ই বলেছি এখন তুই না বুঝলে আমি আর কি করতাম।

–তাহলে বলুন ওই রাতে যা বলেছিলেন তার মানে কি?..আপনি কি আমাকেই।

–উনি খানিক ট রেগে গিয়ে বললেন,তোর স্যার ফোন দিয়েছিলো আজ সাপ্তাহিক পরীক্ষায় নাকি ইয়া বড় গোল্লা পেয়েছিস।

–আপনি কথা ঘোরাচ্ছেন কেনো?

–কথা ঘোরাচ্ছি না এত্ত বড় গোল্লা পাওয়ার কারণ কি?স্যার কিছু বলে নি।

–কি বলবে স্যার কে বলেছি আমার স্বামি আমাকে প্রচুর বিরক্ত করে তাই বই পড়তে পারি।

–উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,মান সম্মান সব শেষ করে এসছিস।।

–ক্যানো?..

বিরক্ত মানে স্যার কি ভাবছেন।রিয়েলি –ষ্টুপিড একটা।

চলবে,,