#আয়নামতী
#পর্ব_১০
#পুষ্পিতা_প্রিমা
উঠোনের মাঝখানে পিড়ি নিয়ে বসে আজহার সাহেবের পা মালিশ করছিল আয়না। ডাক্তার বলেছে যত বেশি বেশি সরিষার তেল মালিশ করা যায় ততই মঙ্গল। তাছাড়া তার মামা কোন একটা ঔষধি গাছের তেল দিয়েছিল, সেগুলো মালিশ করলে অতিশীঘ্রই দাঁড়াতে পারার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন তিনি।
আয়শা বেগমের ডাক পড়লো তখুনি। আজহার সাহেব বললেন
‘ তোর মা কেন কেন ডাকে দেখ তো।
আয়না জোরেশোরে বলল
‘ আম্মা আমি কাজ করি না? ডাকো কেন?
আয়শা বেগমের ডাক আবার শোনা গেল।
‘ বউরে একটা কল দে। আমি কথা কয়।
আয়না চুপসে গেল। আজহার সাহেবের হাত নিয়ে তার পিঠে রাখলো। বলল
‘ আব্বা আমার গায়ে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো।
আজহার সাহেব ভয়ে বললেন
‘ না না, যদি আবার কিছু হয়ে যায়?
আয়না রেগে তাকালো। নাকফুলিয়ে বলল
‘ তুমি অজুহাত দিলে চলবে? তোমার বাঁকা পা সোজা করার জন্য তোমাকে হাঁটার চেষ্টা করতে হবে আব্বা। কেন বুঝোনা? ডাক্তার কি বললো শুনোনাই? উঠো। আমার উপর ভর দিয়ে উঠো।
আজহার সাহেব চোখ বন্ধ করে আল্লাহর নাম নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন সামান্য। আবার বসে পড়লেন।
আয়না বলল
‘ এইতো একটুখানি দাঁড়ালে তো। বসে গেলে কেন? আব্বা তুমি কি মাইর খাবা?
আজহার সাহেব বাচ্চাদের মতো হেসে ফেলল। আয়না বলল
‘ শোনো আব্বা তুমি যদি দাঁড়ানোর চেষ্টা করো তাহলে আমি তোমাকে পাকা পেঁপে পেড়ে দেব। সেই মিষ্টি!
আজহার সাহেব আবার হাসলেন। মেয়ের টলটলে বুদ্ধি নিয়ে প্রশংসা করতে ইচ্ছে করছে। মেয়ে তাকে পাম্প দিচ্ছে?
আয়না কপাল কুঁচকে বলল
‘ এই আব্বা, তুমি কথা শুনবানা? ঠিক আছে না শুনো। যেদিন আমাকে আর পাবা না সেদিন বুঝবা। হুহ।
আজহার সাহেব হেসে বললেন
‘ কোথায় যাবি? শ্বশুরবাড়ি?
আয়না রাগে ফোঁসফোঁস করলো। গর্জে বলল
‘ তোমার বাপের বাড়ি।
তারপর আর দাঁড়ালো না। আজহার সাহেব হাসতে লাগলেন। আয়না হনহন করে রান্নাঘরে গেল। কলসি থেকে জগে পানি নিতে নিতে বলল
‘ সারাক্ষণ শ্বশুরবাড়ি, শ্বশুরবাড়ি। কচুর বাড়ি। আর জীবনে যদি আমি তেল মালিশ করি। আর জীবনে যদি আব্বার সাথে কথা বলি। তাহলে আমার নাম আয়না নয়।
আয়শা বেগম আড়চোখে তাকিয়ে বললেন
‘ কি হইছে আবার? তোরা বাপ বেটির জন্য তো থাকা যায় না ঘরে।
আয়না বলল
‘ আমারে বকো। আব্বারে কেন? আব্বা কি করছে? তোমার আব্বার সাথে খ্যাঁকখ্যাঁক না করলে চলেনা?
আয়শা বেগম হতভম্ব। বললেন
‘ এই তুই না তোর বাপের লগে ঝগড়া করে আইছোস? আবার তার নামে কিছু কইলেই জ্বলতাছে।
আয়না কলসি নিয়ে বলল
‘ পানি আনতে যাই। পানি শেষ হয়ে গেছে। তোমার সাথে কথা বলার সময় নাই।
আয়শা বেগম ডাকলেন
‘ এই দাঁড়া।
আয়না দাঁড়ালো। বলল
‘ কি হইছে?
‘ মাথা ঢাইকা ল। খালি মাথায় কোথায় যাইতাছোস?
আয়না ওড়না দিয়ে ভালো করে মাথা ঢাকলো। বলল
‘ খালি মাথায় কখনো কি গেছি? সবসময় আমারে না বকলে হয় না।
আয়শা বেগম বলল
‘ তোরে না ফোন দিতে কইছি আমার বউরে।
আয়না বলল
‘ তোমার বউ না। তোমার বাবুসোনার বউ। যেভাবে বলো যেন সে তোমার বউ।
আয়শা বেগম বলল
‘ ফোন দিবি হারামজাদি?
আয়না কলসি ঘুরিয়ে যেতে যেতে বলল, না
‘ পারব না ফোন দিতে। তোমার ছেলের বউ আর আসবে না। তার বাপ কইছে।
আয়শা বেগম তেজগলায় বললেন
‘ কিহ?
আয়না তাড়াতাড়ি দৌড়ে পালালো। আয়শা বেগম কুন্তি নিয়ে দৌড়ে গিয়ে বললেন
‘ বউ আসবে না মানে? তার বাপ ও আসবো। আমি আইজ গিয়া নিয়া আসবো আমার বউরে। তার বাপরে কেডা ভয় পায়? আমার বাবুর বউ সে, তার বাপ কোথাকার বেটা?
______________
কুহেলীকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল অনুরাগের। কিন্তু সে জানালো, ভার্সিটিতে এক্সাম৷ তার প্রচুর কাজ। সময় নেই। সময় পেলে নিয়ে যাবে।
কুহেলী তা শুনে বরং একটু অসন্তুষ্ট হলো। সে থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। সামনে তার পরীক্ষা। তাছাড়া সে একটা বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য অফার পেয়েছে। বাবা তাকে অনুমতি দেয় নি। যদি অনুরাগ বলে তাহলে সে বিজ্ঞাপনটা করবে। পরবর্তীতে তার আরও সুযোগ আসবে। সে এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায় না। তাই ভেবেছিল বেড়াতে যাওয়ার নাম করে ওসব কাজ সেড়ে নেবে। কিন্তু যাওয়া আর হলো কই? তবে অনুরাগকে মুঠোফোন করে সে বলল, সে একা যেতে পারবে নাকি বাবার বাড়ি।
অনুরাগ বলল, সমস্যা নেই। যেতে পারো। তাছাড়া তুমি খুকি নও।
কুহেলী বেশ খুশি হলো। তার কাছে বেশ টাকা আছে, টাকার উৎসটা খুব গোপনীয়। আপাতত তার বাবাকে বলার দরকার নেই। এই টাকা তাকে কাজে লাগাতে হবে। তাই সে একা একা বাবার বাড়ি যাওয়ার নাম করে চলচ্চিত্র নির্মাণের সহায়ক পরিচালক মহিবুল হাসানের সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বাড়ি থেকে বের হতে আরেক ঝামেলা। আনহিতা বললেন
‘ তুমি একা একা কি করে যাবে বউমা? তাছাড়া তোমার মা বাবা কি বলবে?
কুহেলী তাদের বুঝিয়ে কূল পেল না। আনহিতা নাছোড়বান্দা। সে কখনোই কুহেলীকে একা ছাড়বে না। তাছাড়া শায়লা বেগম তো একেবারেই না করে দিলেন। এজন্য কুহেলী অনেক কান্নাকাটি করলো। কিন্তু কারো মন গললো না। কুহেলী শেষপর্যন্ত ভোররাতে বের হয়ে গেল কাউকে না বলে । অনুরাগকে মুঠোফোনের মাধ্যমে সব জানালো। বলল,
‘ আমি চলে এসেছি। আপনার মা বাবাদের একটু ম্যানেজ করে নেবেন প্লিজ। ওনারা আমাকে একা ছাড়তে চাইছেন না।
অনুরাগ বিস্মিত হলো। বলল
‘ তুমি কাউকে বা বলেই চলে এসেছ? কিন্তু কেন? তুমি জানো তোমাকে নিয়ে কতটা পজেসিভ আমার মা বাবা? তোমার মা বাবাই বা কি বলবে?
কুহেলী বলল
‘ আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাকে তো আসতেই হতো। এতবড় একটা সুযোগ কি করে হাতছাড়া করি বলুন। আপনিই তো ওইদিন বললেন, আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য আপনি আমায় সাহায্য করবেন। বলেননি?
অনুরাগ বলল
‘ হ্যা, কিন্তু?
কুহেলী বলল
‘ কোনো কিন্তু না। আমি কাজ শেষ হতেই চলে যাব আপনার বাড়িতে। একটু ম্যানেজ করুন প্লিজ।
অনুরাগ বলল
‘ মিথ্যে কি করে বলব? মিথ্যে বলতে ভালো লাগে না।
কুহেলী বলল
‘ বউয়ের জন্য একটু বলবেন। এটুকু করতে পারবেন না? অনুরাগ বলল
‘ ঠিক আছে দেখছি কি করা যায়?
বলেই ফোন কাটলো অনুরাগ। বিড়বিড় করলো
‘ মিথ্যে বলব? মাকে?
____________
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে আয়শা বেগম পাড়ি দিল শেখ বাড়ির উদ্দেশ্য। আয়না একটু ভাতঘুম দিতে শুয়েছিল। আজহার সাহেব তো এমনিতেও ঘুম। আয়শা বেগম এই ফাঁকে বের হয়ে গেলেন বাড়ি থেকে। শেখ বাড়ি গিয়ে রিকশা থামলে আয়শা বেগম নেমে পড়লো। দাড়োয়ান নামিরার শ্বাশুড়ি দেখে গেইট খুলে ভেতরে ঢুকতে দিল। নামিরা দরজা খুলে দিল দরজায় কলিংবেল বাজায়। দরজা খুলে আয়শা বেগমকে দেখতেই চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসার পালা। বড় বড় চোখদুটো আচমকা পরিণত হলো টলটলে দীঘিতে। নামিরা বিস্ময় নিয়ে ডাকল
‘ আম্মা?
আয়শা বেগম হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ বুকে আসো বউ। কতদিন দেখিনা তোমারে।
নামিরা ঝাপটে ধরলো। হু হু করে কেঁদে দিয়ে বলল
‘ আম্মা, কেমন আছেন আম্মা?
আয়শা বেগম বলল
‘ বাড়ির বউ বাড়িত নাই। বাড়িটা আন্ধার না? ভালা থাকি ক্যামনে? আমার বাবুটার ও চেহারা আন্ধার। আমি এসব দেইখা কি করে ভালা থাকি?
নামিরা নাক টানলো। আয়শা বেগম বলল
‘ তোমার বাপ কোথায়? জিগাইতাম মেয়েরে কেমন মোটা করছে? আমি তো দেখতাছি আর ও শুকাইয়া গেলা। তোমার বাপ কি খাওয়ালো তোমারে?
নামিরা মুখ তুললো। আয়শা বেগম বলল
‘ মাথায় তেল দাওনাই?
নামিরা মাথা নাড়লো। বলল
‘ মা দিয়ে দিছিলি তো।
আয়শা বেগম বলল
‘ তোমার মারে ডাকো। তেল দিছে না পানি দিছে জিগায়।
নামিরা নাজমা বেগমকে ডাকল। নাজমা বেগম হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসলেন। আয়শা বেগমকে দেখে খুশিতে দুচোখ চকচক করে উঠলো তার। বলল
‘ আসেন ছোট বোন। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
আয়শা বেগম বললেন
‘ আমি বসতে আসিনাই। বউরে নিয়া যাইতে আইছি৷ বউ তাড়াতাড়ি রেডি হইয়্যা নাও। আমি বসমু না। কিছু খামু ও না।
নামিরা মাথা নাড়ালো।
নিজের ঘরে চলে গেল। নাজমা বেগম আর হামিদা বেগম কিছু মুখে নিতে বললেও মুখে নিল না আয়শা বেগম৷ নামিরা রেডি হয়ে আসতেই নাজমা বেগম বললেন
‘ ওর বাবাকে একবার,,
আয়শা বেগম বললেন
‘ আমি মুঠোফোন কইরা জানায় দিবো। এখন দরকার নাই। আমার বউ আমি লইয়্যা যাই। বউ আসো। মুখ ঢাকো।
নামিরা নিকাব পড়ে নিল। আয়শা বেগম বলল
‘ তোমার বাপ এখন বুঝতেছে না, দেখবা পরে বুঝবে। চিন্তা কইরোনা বউ। সব ঠিক হয়ে যাইবে। এখন চলো। আমার ও তোমার বাপেরে না জানায় এইভাবে নিয়া যাইতে ইচ্ছা করতাছে না।
নাজমা বেগম বলল
‘ আচ্ছা সমস্যা নেই আপা। আমি বুঝায় বলব।
আয়শা বেগম নামিরাকে বলল
‘ বউ কাইন্দো না, তোমারে আমি আবার বেড়াইতে পাঠাবো এখানে। আসো। চলি যাই। সন্ধ্যা নামবো।
নামিরা মাথা নাড়ালো। মা চাচীকে সালাম করে আয়শা বেগমের সাথে বের হয়ে গেল। আয়শা বেগম রিকশায় বসে বললেন
‘ বাবু তোমারে দেখো চমকে যাবে না বউ?
নামিরা মাথা নামিয়ে বলল
‘ হ্যা।
আয়শা বেগম বলল
‘ শোনো বউ, আর যাইহোক আমার বাবুরে ছাড়া থাকার কথা ভুলেও ভাববা না। আমার বাবু তোমারে অনেক দেখতে পায়। বুঝলা? তোমারে, আমাদের ভালা রাখনের জন্য কত কষ্ট করে। তুমি আমার বাবুরে বুঝবা। আমার বাবুর যত্ন নিবা। অনেকের টাকা পয়সা থাকলেও সেখানে সুখ নাই বউ। আল্লাহ চাইলে আমার বাবুর ও একদিন টাকাপয়সা হবে। ওগুলো আল্লাহর হাতে। আমি আল্লাহর কাছে চাই, আমার বাবুরে আল্লাহ অতিরিক্ত টাকা পয়সা না দিক,ভালো করে চলার মতো, আত্মসম্মান লইয়্যা চলতে পারে মতো টাকাপয়সা দিক। অতিরিক্ত টাকা মানুষরে অমানুষ বানাতে সময় নেয় না বউ৷ বুঝলা?
নামিরা মাথা নাড়িয়ে বলল
‘ জ্বি আম্মা।
আয়শা বেগম মাথায় হাত বুলায় নামিরার। বলে
‘ আমার বাবু ভালো তো, বউ ও তাই ভালা জুটছে। আমি তো আনার আগে আমার বাবুরে নিয়া বেশি চিন্তায় ছিলাম। তার জন্য একডা ভালো বউ কই পামু এই নিয়া? অনেকে তো আছে বিয়া করবার পর মা বাপ বোনরে চাইলে ও চাইতে পারেনা। বউ আঁচলে বাইন্ধা রাখে। কিন্তু আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া আল্লাহ আমারে এমন ভালা সোহাগা বউ দিছে।
নামিরা একটুখানি হাসলো। চোখের কোণা আবার ভিজলো।
____________
কুহেলী বাড়ি না গিয়ে মহিবুল হাসানের বাড়িতে গিয়েছিল। আনহিতা ফোন করে জানতে পারলো কুহেলী যায়নি তার বাপের বাড়ি। রাগে ফেটে পড়লো আনহিতা। অনিমা বলল
‘ মেয়েটা ভারী বেয়াদব তো। মিথ্যে বলল আমাদের। আর ভাই ও বউ পাগলা হয়ে গেছে। বউকে সাপোর্ট করছে?
আনহিতা বলল
‘ সোহাগ ভালো করেনি এটা? ওকে বকেছি দেরী হয়েছে। ও আমাকে মিথ্যে বলে ভালো করেনি।
অনুরাগকে এসব বললে,অনুরাগ বলল
‘ কুহেলী ওর কাজ শেষ হলেই চলে আসবে। আর তোমরা ওকে না ছাড়লে ও কি করবে? ও নিজের একটা পরিচয় বানাতে চাইছে। তাতে তোমরা কেন বাঁধা দিচ্ছ আমি বুঝতে পারছিনা।
আনহিতা ছেলের উপর ভীষণ ক্ষেপে গেল। কিন্তু একটমাত্র ছেলে তার। রাগ দেখানো শোভা পায় না। তার উপর ছেলে বিয়ে করেছে। তার বউ তার যেমন ইচ্ছা তেমন করবে। যেখানে ইচ্ছা সেখানে পাঠাবে। তার কি?
অনুরাগ ও এবার চিন্তায় পড়ে গেল। কুহেলীর সাথে তার তিনদিন ধরে যোগাযোগ নেই। কুহেলীকে মুঠোফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। সে তো কুহেলীকে একটা মুঠোফোন দিয়েছে। কিন্তু কোথায় কুহেলী?
সপ্তাহখানেক পর কুহেলী ফোন দিল অনুরাগকে। বলল
‘ আমায় ক্ষমা করবেন মিঃ চৌধুরী। আসলে অনেক কাজের চাপ ছিল। আমি কয়েকটা বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য সিলেক্ট হয়েছি। আর নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে একটু সময় লাগছে তো তাই কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। আপনার দেওয়া দুইলাখ টাকা আমার খুব কাজে আসবে। ধন্যবাদ আপনাকে। আর আমাদের সম্পর্কটা,,,
অনুরাগ তাকে অন্যকিছু বলতে না দিয়ে বলল
‘ তোমার ও সময় লাগবে, আমার ও। চিন্তা নেই। সময় নাও, আমাকে ও সময় দাও। তবে খবরদার টাকার কথাটা যেন আমার পরিবারের কেউ না জানে। পণ দেওয়া নেওয়া হয়ে আসছে অনেককাল ধরে। আমার পরিবার বুঝে পণ নেওয়া একটা সম্মানের ব্যাপার। তাই তারা আমাকে না জানিয়ে পণ নিল। আমি জানি তোমার বাবার ও সামর্থ্য আছে। তাই দিয়ে দিয়েছে কিন্তু আমি তা নিতে পারব না।
কুহেলী বলল
‘ আমি সত্যিই খুব লাকি যে স্বামী হিসেবে আপনাকে পেয়েছি। সে যাইহোক আমি খুব শীঘ্রই ফিরব।
অনুরাগ বলল
‘ ঠিক আছে। রাখছি।
চলবে,,,,
#আয়নামতী
#পর্ব_১১
#পুষ্পিতা_প্রিমা
আয়ান বাড়ি ফিরলো রাত সাড়ে দশটার দিকে। আয়শা বেগম বিছানায় পা টেনে বসে পান চিবোচ্ছেন। আজহার সাহেব মাত্রই ঘুমিয়ে পড়েছে। আয়না ও ঘুম। নামিরা ও ঘুমোয়নি। আয়ান তাকে দেখে চমকে যাবে, ব্যাপারটা দারুণ উপভোগ্য হবে।
বাইরে চাউনির নিচে লাগানো লাল বাল্বটি মিটিমিটি জ্বলছে। গ্রামের তাদের বাড়িসহ গুটিকতক মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে। আয়ান দরজায় কড়া নাড়লো। নামিরা লাফ দিয়ে নামলো খাট থেকে। গায়ে ভালো করে শাড়িটা জড়িয়ে পা বাড়ানোর আগে আবার থেমে গেল। ভাবলো,
‘ আয়ান ঘরে এসেই তাকে দেখে চমকে যাবে। এখন সে যাবে না। দরজা আম্মা খুলে দিক।
নামিরা তাই গেল না। আয়শা বেগম বিছানা থেকে নামতে নামতে বললেন
‘বউয়ের ঘুম চলি আসছে মনে হয়।
আয়ান মাকে দেখলো দরজা খোলামাত্র। মায়ের সাথে প্রসন্ন হাসলো। বলল
‘ জেগে আছ আম্মা? আব্বা ঘুমায়ছে?
‘ হ ঘুম। আয় বাবু। মুখ হাত ধুইয়া ল।
আয়ান বলল
‘ আচ্ছা। আমি শার্ট পাল্টে নিই আগে।
আয়শা বেগম মাথা নাড়ালেন।
আয়ান ঘরে গিয়ে বিছানায় কাঁথা দিয়ে মোড়ানো কাউকে শোয়া দেখলো। ভুরু কুঞ্চন হলো তার। কাঁথার বাইরে কিছুটা শাড়ির আঁচল বের হয়ে থাকায় তার চিনতে অসুবিধা হলো না। তাছাড়া এই ঘরে তার মানুষটা ছাড়া আর কে থাকবে?
আয়ান আর এগোলো না। শার্ট পাল্টে মুখ হাত ধুয়ে নিল। ভেজা মুখ মুছতে মুছতে নামিরার পাশে বসলো। ডাকল
‘ মিরা?
নামিরা মিটিমিটি হেসে ফেলল কিন্তু কাঁথা সরালো না। আয়ান তার নড়াচড়া দেখে নিজে নিজে হেসে ফেলল। তোয়ালে রেখে দিল। নামিরার দিকে ঝু্ঁকে ডাকল
‘ মিরাহ?
নামিরা বলল
‘ আপনার মিরা ঘুম, শ্বশুরের ছেলে।
আওয়াজ করে হেসে দিল আয়ান। নামিরাকে ফিরিয়ে আনলো তার দিকে। বলল
‘ বেড়ানো শেষ?
নামিরা কথা বলল না। চোখ বন্ধ অবস্থায় মাথা নাড়লো। আয়ান বলল
‘ কথা বলো। কি হচ্ছে মিরা?
নামিরা চোখ খুললো না। আয়ান কিছুক্ষণ কপালে ভাঁজ ফেলে চেয়ে রইলো। এই যে সারাদিনের ক্লান্তি, বিষণ্নতা। এসব যেন মুহূর্তেই উদাও হয়ে গেল প্রিয় মানুষটার মুখ দেখে।
আয়ান তার বন্ধ চোখের পাতা ছুঁয়ে দিতেই ফট করে চোখ খুললো নামিরা। দুহাত মেলে গলা জড়িয়ে ধরে টেনে নিল আয়ানকে। গলায় মুখ গুঁজতে গুঁজতে বলল
‘ সুন্দর ছেলেটা বউ নেই তাই কালো হয়ে গেছে। মানে চেহারাটা আন্ধার হয়ে গেছে। আম্মার বাণী।
আয়ান হেসে ফেলল। বলল
‘ আমার মাথাটা ছিড়ে যাবে। কিভাবে টানছো মিরা?
মিরা ছেড়ে দিল। উঠে বসে আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আয়ানকে। আহ্লাদী সুরে বলল
‘ শ্বাশুড়ি মা মিস করেছে। শ্বাশুড়ি মায়ের ছেলে কেন মিস করেনি আমায়?
আয়ান তার মাথার উপর চিবুক রাখলো। চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
‘ তুমি বুঝবে না, বুঝবে না মিরা। বাচ্চা মেয়ে এখনো।
নামিরা আর ও একটু গুঁজে গেল। বলল
‘ একদম না শ্বশুরের ছেলে। আমি বাচ্চার মা হবো কিছুদিন পর।
আয়ান বলল
‘ তাই নাকি? বাহ বাহ খুব ভালো। উন্নতি হয়েছে তোমার।
নামিরা লজ্জা পেয়ে গেল। বলল
‘ যাহহ, সবসময় মজা করে। খারাপ ছেলে।
______________
আছরের আযানের নামাজ শেষ করে বাগানবাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল আয়না। চারায় পানি দিতে হবে। অতবড় বাগানে একা পানি দিয়ে কুলাতে পারবে না রেণু। রাস্তায় হাঁটার সময় একটা ছোট খাটো মিনি কার দেখলো আয়না। এগিয়ে আসছে। সে আজ বোরকা পড়েনি। গায়ে ফুলহাতা ড্রেস পড়া ছিল। তাই পড়েনি। বেশি তো দূর না। কিন্তু গাড়িতে অনুরাগকে দেখে অস্বস্তি লাগলো। মুখটা ঢেকে নিল ওড়না দিয়ে। অনুরাগ গাড়ি থামালো। আয়নাকে ডেকে বলল
‘ এই পিচ্চি এদিকে এসো।
আয়না চমকে গেল। ভাবলো সে আবার পিচ্চি কখন হয়ে গেল? মাথামোটা বেটা একটা।
আয়নাকে কোনো কথা বলতে না দেখে আবার জোরে ডাকল অনুরাগ।
‘ এই মেয়ে তোমাকে ডেকেছি। কানে শোনো না?
আয়না তাকালো। ভালো করে মুখ ঢাকতে ঢাকতে বলল
‘ বলেন।
অনুরাগ যা বলতে চাইলো তা বলল না। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো আয়নাকে। কিছুক্ষণ পর বলল
‘ আয়নামতী না? আরেহ আয়নামতীই তো। কেমন আছ আয়নামতী? আরেহ তুমি তো পুরো একটা বাচ্চা মেয়ে। এখন তো আর ও বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।
আয়না মুখ খুললো না। আবার ভাবলো
‘ বিয়ে টিয়ে করে এই লোকের মুখের ভাষা ও তো পুরাই পাল্টে গেল। আপনি আপনি করতো না? নাকি পিচ্চি পিচ্চি লাগছে বলে তুমি তুমি শুরু করেছে।
অনুরাগ বলল
‘ আয়নামতী কথা বলা ভুলে গিয়েছ নাকি?
আয়না ওড়নাটা মুখ থেকে খানিকটা সরালো। রসিকতা করে বলল
‘ আপনি তো বিয়ে টিয়ে পায়চাওয়ালা থেকে আর পাওচাওয়ালা হয়ে গিয়েছেন চৌধুরী সাহেব। এই রাস্তায় দেখা টেকা ও যায় না।
অনুরাগ কিঞ্চিৎ হাসলো। বলল
‘ এমনি ইদানীং বেশি ব্যস্ত ছিলাম। আর পায়চাওয়ালা মানে কি? পয়সাওয়ালা হবে।
আয়না বলল
‘ ওহ হ্যা পেঁচা ওয়ালা।
অনুরাগ ভুরু কুঞ্চন করলো। বলল
‘ তোমার কি অবস্থা? বাগানের ফুল ধরেছে? আমার ফুলগুলো কখন পাব?
আয়না বলল
‘ পরে পরে। এখনো ফুল ধরেনি। দেরী আছে। আমার বাগানের দিকে এখন আপাতত নজর দিয়েন না তো। নজর লেগে গেলে শেষ।
অনুরাগ বলল
‘ ঠিক আছে দিলাম না। তবে তাড়াতাড়ি ফুল চাই আমার। দেরী হলে বাগান তুলে নিয়ে যাব।
আয়না কোমরে হাত দিয়ে বলল
‘ মারেম্মা দেইখা লমু, কেনগরি বাগান তুইল্লা লইয়্যা যান।
অনুরাগ নাক তুলে বলল
‘ ছিঃ এগুলো কেমন ভাষা আয়নামতী? তুমি লেখাপড়া জানা মেয়েমানুষ।
আয়না বলল
‘ আপনি ও তো শিক্ষিত পুরুষমানুষ। অচেনা অজানা মহিলারে পিচ্চি ডাকেন কোন সাহসে? আবার তুমি তুমি করেন।
অনুরাগ এবার বেশ হতভম্ব। সে কখন আয়নামতীকে আপনি বলতো। তুমি তুমিই তো বলতো। নাকি কুহেলীকে ডাকতে ডাকতে সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে? আয়নামতী তো কুহেলীর ও অনেক ছোট, তাহলে তুমি বলতে পারবে না কেন? আয়নামতী মেয়েটা এত কঠিন কেন?
অনুরাগ বলল
‘ আরেহ তুমি বলা ও যেই, আপনি বলা ও সেই। বাদ দাও ওসব কথা।
আয়না বলল
‘ বাদ দিলাম। এবার বলুন পণ কত নিয়েছেন শ্বশুরবাড়ি থেকে?
অনুরাগ বলল
‘ নিয়েছি আবার দিয়ে ফেলেছি।
আয়না মাথা নাড়ালো। বলল
‘ এসবই সম্ভব আপনাকে দিয়ে। কিন্তু এর চাইতে বেশি কিছু না। বন্ধ করে দিন না এই রীতি। পরিবার থেকে,সমাজ থেকে। পারবেন না? পণ রীতি, বাল্যবিবাহ, নারী অত্যাচার, কথায় কথায় তালাক,কারণে অকারণে বহুবিবাহ। এই সব বন্ধ করার জন্য কিছু করতে পারেন না? সমাজের মানুষ আপনাদের আদর্শ মানে। সম্মান করে। আপনারা চাইলেই তো এসব কুসংস্কার, এইসব অন্যায় কমে যেতে পারে। তাহলে চুপ করে থাকেন কেন? ভালো লাগে এসব দেখতে? সইতে পারেন কিভাবে? আপনি তো পারেন। পারবেন। তাহলে চুপ থাকেন কেন?
অনুরাগ চুপচাপ শুনলো আয়নার কথা। কি চমৎকার ধ্যানধারণা মেয়েটার! কি ধারালো বুদ্ধি! আসলে এভাবে তো কখনো ভাবা হয়নি। আয়নামতী এতটা ছোট মানুষ হয়ে ও এতকিছু কিভাবে জানে?
অনুরাগকে চুপ করে থাকতে দেখে আয়না বলল
‘ প্রফেসর আপনি এই দেশে আছেন?
অনুরাগ চোখের পলক ফেলল। বলল
‘ তোমার সামনেই আছি। আচ্ছা বলোতো তোমার মাথায় এত চমৎকার বুদ্ধি গুলো আসে কোথা থেকে?
আয়না হাসলো। আঙুল ঘুরিয়ে চোয়ালে ঠেকিয়ে বলল
‘ ম্যাজিক।
অনুরাগ হাসলো। বলল
‘ আয়নামতীর ম্যাজিক। রাইট?
আয়না নাকতুলে বলল
‘ একদম নাহ। যান যেদিকে যাচ্ছেন। আমার কাজ আছে।
অনুরাগ গেল কিন্তু মাথা থেকে আয়নামতীর বলা কথাগুলো নামলো না। আসলেই কি সে পারবে? আয়নামতী তো বলল পারবে। তারমানে পারবে।
____________
প্রায় বারো দিন পর, কুহেলী শ্বশুরবাড়ি ফিরলো। আনহিতা বেজায় অসন্তোষ। শায়লা বেগম ও। অনিমা পারেনা কেলানি দিতে। কুহেলী আনহিতার কাছে ক্ষমা চাইলো। বলল
‘ আমাকে ক্ষমা করুন মা। আমি আর না বলে যাব না কোথাও। আপনার পারমিশন নিয়ে যাব এবার থেকে।
আনহিতার মন খানিকটা গলল কিন্তু সে তা দেখালো না। বরং শক্ত হয়ে থাকলো। অনিমা বলল
‘ আসতে না আসতে ঢং দেখানো শুরু হয়ে গিয়েছে তোমার? শোনো তোমাকে এই বাড়ির বউ করে এনেছি সিনেমার কাজ করার জন্য নয়। এরকম মেয়ে আমার আব্বার হাতে আর ও একটা ছিল। বেশি উড়বে না একদম। এই রূপের গরম দেখাবে না। রূপ আমাদের ও আছে, আমরা সিনেমাতে তো যায়নি।
কুহেলী বলল
‘ শুধু রূপ থাকলে হয় না, গুন ও থাকতে হয়। যা আপনার নেই।
অনিমার রাগ তরতরিয়ে বাড়লো। বলল
‘ মুখ সামলে কথা বলো মেয়ে। বেয়াদবি করবে না। ভুলে যাবে না কার বাড়িতে দাঁড়িয়ে কথা বলছো।
কুহেলী বলল
‘ আমি জানি, আমি কোথায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি। আপনি নিজেকে দেখুন তো, আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে কার সাথে কথা বলছেন। এটা আমার স্বামীর বাড়ি। আপনি তো নিজের শ্বশুর বাড়ি কখন গেলেন সেটা ও বোধহয় মনে নেই।
অনিমা রাগে গিজগিজ করলো। বলল
‘ বেয়াদব মেয়ে। মা তুমি কিছু বলছ না কেন? ভাই কোথায়? সে জানে তার বউ বেয়াদবি করছে আমার সাথে।
কুহেলী মুখ মোচড়ে ফিরে দাঁড়ালো । আনহিতা কিছু বলল না। অনিমা বলল
‘ তোর মতো ফকিন্নি এই বাড়ির বউ হয়েছে সেটা ও সাতকপাল। কুকুরের পেটে ঘি সহ্য হয় না কথাটা এমনি এমনি বলেনি। তোর পেটে ও ঘি পড়েছে, সেগুলো উগলে দেওয়ার সময় হয়েছে তাই তুই এমন করছিস। বেশি উড়ছিস। উড়তে থাক। পীপিলিকার পাখা গজে মরিবার তরে।
কুহেলী আনহিতাকে বলল
‘ আপনি চুপ করে আছেন কেন মা? আমার বাবা দুইলাখ টাকা দিয়ে বিয়ে দিয়েছে কি এভাবে অপমানিত হওয়ার জন্য? আপনার মেয়ে যা নয় তা বলছে আমাকে। উনি আসুক আজ, আমি জিজ্ঞেস করব আমি এই বাড়িতে থাকব নাকি অন্য কোথাও উঠবো।
আনহিতা অনিমাকে টেনে নিয়ে গেল। বলল
‘ কি করছিস অনি? তোর শরীর খারাপ করবে।
অনিমা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল।
আনহিতা কুহেলীর কাছে দৌড়ে এসে বলল
‘ না বউমা তুমি এসব বলবে না সোহাগকে। আমি আমার ছেলেকে ছাড়া থাকতে পারবনা। আমার ছেলেকে ছোট থেকে আমি একমুহূর্তের জন্য ও চোখের আড়াল করিনি। এখনো ভার্সিটির পাশে বাসায় সে একদিন কিংবা দুইদিন থাকে। তারপর আবার চলে আসে। তুমি এমনটা করতে পারো না।
কুহেলী বলল
‘ আমাকে ক্ষমা করবেন মা। আপনার মেয়ে যে বাড়িতে থাকছে এই বাড়িতে থাকা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।
আনহিতা কপাল চাপড়ালেন। এ কেমন মেয়েকে বউ করে ঘরে তুললো সে? তার সাধাসিধে ছেলেটার কপালে শেষমেশ এমন বউ জুটলো? সে বেশি কঠোর ও হতে পারছেনা। যদি পণের কথাটা অনুরাগকে বলে দেয় এই মেয়ে। আর কথায় কথায় আলাদা থাকার কথা বলছে।
শায়খ চৌধুরী অনিমার মুখে সবটা শুনে রেগে গেলেন। তার বাড়িতে থেকে তার মেয়ের সাথে বেয়াদবি? ওই মেয়ের সাহস কি করে হয়? কুহেলী নিজের ঘরে বসে সব শুনলো। এই বুড়ো নিজের মেয়ের দোষ দেখে না? পরের মেয়ের দোষ খুঁজে বেড়ায়?
রাতের দিকে অনুরাগ বাসায় ফিরলো। দেখলো সবার মুখ থমথমে। অনুরাগের হাতে কুহেলীর জন্য শাড়ি, চুড়ি, নুপূর আর গলার মালা। একজোড়া জুতো। অনিমা আঁড়চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো। অনুরাগ এগিয়ে এসে বোনের হাতে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বলল
‘ আপা তোর জন্য এটা। এখানে একটা শাড়ি আছে। একজোড়া জুতো ও নিয়েছি।দেখিস।
অনিমা বলল
‘ ওগুলো কার?
অনুরাগ বলল
‘ কুহেলীর।
ভেতরে ভেতরে ফুসলো অনিমা। অমি মায়ের পাশে অবস্থায় বলল
‘ মামা তুমি জানো, আমি মামিকে দেখেছি টেলিভিশনে। নাইস লেগেছে।
অনিমা সপাটে চড় বসালো ছেলের গালে। বলল
‘ বেশি ফটরফটর করবে না অমি।
অনুরাগ রেগে গিয়ে বলল
‘ কি সমস্যা তোর। ওর গায়ে হাত তুললি কেন? আশ্চর্য!
অনিমা চলে গেল। অমিকে নিয়ে গেল আনহিতা।
অনুরাগ ঘরে চলে গেল। কুহেলী তাকে দেখে দৌড়ে এল। অনুরাগের হাত থেকে শপিং ব্যাগ কেড়ে নিয়ে বলল
‘ সবুজ কালার শাড়িটার জন্য সবুজ চুড়ি এনেছেন?
অনুরাগ বলল
‘ হ্যা।
‘ লাল চুড়ি আনেননি?
‘ এনেছি।
কুহেলী সব বের করলো। অনেক খুশি হবে ভাবলো অনুরাগ। কিন্তু তা না কুহেলীর চেহারা কালো করে বলল
‘ কালো চুড়ি তো আনেননি? আপনি জানেন না আমি কালো চুড়ি পড়তে ভালোবাসি।
অনুরাগ বলল
‘ আচ্ছা, এগুলো পড়ো। পরে এনে দেব।
কুহেলী বলল
‘ পরে কখন? কাল? আমার তো পরশু একটা শর্ট ভিডিও শুট আছে। এগুলো পরীক্ষার মতো। আমি চাইছিলাম কালো শাড়িটা পড়ব সাথে কালো চুড়ি। এখন তো সব নিজের থেকে পড়ে যেতে হবে। প্রমোশন বাড়লে ওরা ড্রেস চয়জ করে দেবে।
অনুরাগ বলল
‘ আচ্ছা কালই এনে দেব।
কুহেলী খুশি হলো। ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো অনুরাগকে। তারপর ছেড়ে দিয়ে বলল
‘ ধন্যবাদ আপনাকে। আমাকে এত সাপোর্ট করার জন্য।
অনুরাগ বলল
‘ তা ঠিক আছে। এখন বলো বাড়িতে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?
কুহেলী সবটা খুলে বলল।
ভাবলো অনুরাগের সহানুভূতি পাবে কিন্তু না শায়লা বেগমের কাছে কি যেন শুনে এসে অনুরাগ বেজায় রেগে গেল তার উপর। বলল
‘ আপা একটু রাগী, একটু বকতেই পারে তাই বলে তুমি বেয়াদবি করবে? ও আমার বড় আপা। আমাকে স্নেহ করে, চোখে হারায়। আমাকে ভালোবাসে, তুমি ও ভালোবাসা পেতে। কেন বেয়াদবি করেছ?
কুহেলী ভড়কে গেল। বলল
‘ কোথায় বেয়াদবি করেছি, ওই একটু।
অনুরাগ বলল
‘ মুখে মুখে তর্ক করা বেয়াদবি নয়? দেখো কুহেলী আমি বেয়াদবি সইবো না। তোমাকে স্বাধীনতা দিচ্ছি তারমানে এই না, বেশি বাড়াবাড়ি করবে। আর আলাদা হওয়ার কথা কি করে বলো তুমি? এরকম করতে থাকলে সিনেমার কাজে ও যেতে দেবনা। মনে রেখো। সবকিছুর আগে আমার পরিবার। ওরা তোমাকে দেখেশুনে পছন্দ করে এনেছে। তুমি নিজ দোষে ওদের কাছে খারাপ হচ্ছো।
কুহেলী কান্নায় ফেটে পড়লো অনুরাগের কথা শুনে। বলল
‘ আমাকে বাইরে যেতে বাঁধা দিবেন না প্লিজ। আমি আপনার বোন আর মায়ের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেব দরকার হলে।
অনুরাগ বলল
‘ ঠিক আছে। আর যাতে বলতে না হয়।
অনুরাগ চলে গেল তারপর পরই। কুহেলী বসে পড়লো। কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজালো।
তার একদিন পর শহরে তার একটা শুটিং ছিল। প্রমোশন পাবে সে এই ভিডিওটা বের হলে। অনুরাগের সাথে বের হলো সে। আনহিতার পারমিশন নেওয়ায় কিছু বললো ও না আনহিতা। অনিমা তো দেখা ও দিল না। শায়লা বেগম চুপচাপ দেখছে। লজ্জায় তার মাথা কবে কাটা গেছে। চৌধুরী বাড়ির বউ এভাবে বেপর্দা চলাফেরা করছে? ছিঃ। রঙবেরঙের শাড়ি পড়ে টেলিভিশনে নিজেকে প্রদর্শন করছে? দাদুভাই কি এটা ভালো করছে? তার উচিত না নিজের বউকে এভাবে ছেড়ে না দিয়ে, ঘর সংসারে মনোযোগী করার। একটা বাচ্চা কাচ্চা হয়ে গেলে ও হতো। এই মেয়েকে ঘরমুখো করার এই একটাই পন্থা। সন্তানের দিকে তাকিয়ে হলেও এসব ছাড়বে। কি দরকার ওসব নোংরা কাজ করে টাকা পয়সা কামাইয়ের? তার নাতি কি কম কামাই নাকি?
চলবে,,,,,,,,,,