#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ২৬
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে আজ। দূর দূর দাঁড়িয়ে থাকা বাংলোগুলো বারান্দা থেকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল লাগছে দেখতে। সম্মুখে অবস্থিত বাগান ও একপাশে বিদ্যমান সুইমিংপুলের পানিতে বৃষ্টির কণা আছড়ে পড়াতে অন্যরকম সৌন্দর্যের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যস্ত। আমার সেসব কিছু দেখে মুহুর্তের মধ্যেই কাজের ক্লান্তিময় অনুভব দূর হয়ে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকালাম আমি। এখন প্রায় আটটা দশ ছুঁই ছুঁই।
আজরান ভাইয়াদের বাসা থেকে এ বাড়িতে ফিরে এসেছি প্রায় দু’দিন হতে চললো। সবাই অনেক জোরাজোরি করেছিলো আরও কিছুদিন থাকার জন্য। কিন্ত আনভীর নিজের সিদ্ধান্তে অটল। বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকীর জন্য যেহেতু আমাদের আসতে বলা হয়েছিলো সেই সুবাদে থাকাও শেষ, এদিকে আমার জন্মদিন উদযাপন করাও শেষ, এবার ফিরে যাওয়ার পালা। এটাই বলেছিলেন আনভীর। আর আমিও উনার সিদ্ধান্তের বিমুখ হতে পারিনি। তবে মা এতে কষ্ট পেয়েছিলেন খুব। বলেছিলেন যে কতদিন এভাবে আনভীর বাবার ওপর অভিমান করে থাকবেন। পরন্তু নীরব ছিলেন আনভীর।
আমি সচরাচর কাউকে আশ্বাস দেই না। মিথ্যে আশ্বাস দেওয়া তো দূরের কথা। কিন্ত হয়তো এই ক্ষেত্রে প্রথমবার আপন কোনো মানুষকে আশ্বাস দিয়েছি আমি। জানিনা সেটা সত্য না কি মিথ্যা। মা কে বলেছিলাম যে, একদিন আনভীরের সমস্ত ক্ষোভ, সমস্ত অভিমান ভেঙে যাবে। আমি কাটিয়ে তুলবো তা। অন্য চারপাঁচ টা মানুষের মতো উনিও পরিবারকে আগলে নিবেন। মা খুশিতে প্রাণভরে চুমু দিয়েছিলেন আমার ললাটে। আমাকে তাই বিস্ময়ে আবির্ভূত থাকতে হলো মাতৃক্রোড়ের এই ভালোবাসাময় স্পর্শে।
আমার মা নেই। আমি বুঝি এর কষ্ট কি। আর আনভীরের থাকতে সেটাকে হেলিয়ে চলবেন এমনটা আমি কখনোই হতে দিবো না।
আমার অজস্র ভাবনার জাল কাটলো বাতাসের কম্পনে। বাস্তবে ফিরে এসে দেখলাম এখনও বৃষ্টির গতি কমেনি। এই বাসাটা নিতান্তই বড় এবং মানুষ বলতে আমি আনভীর আর নাহিদ ভাইয়াই। বাকি যারা আছে তারা বাড়ির বাইরেই পাহারা দিতে সবসময় মশগুল থাকে। বলতে গেলে একা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরার জন্য বেস্ট জায়গা এটা। আনভীর বাসা নেই আজ। না আনভীর, আর না নাহিদ ভাইয়া। বিগত কিছুদিন যাবৎ উনি একটা গানের রেকর্ডিং নিয়ে ব্যস্ত প্রচুর। কথা নাই বার্তা নাই, সময় অসময়ে কল এলেই উনি নাহিদ ভাইয়াকে আর বডিগার্ডকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। আমি আগে ভাবতাম এদের লাইফই সুন্দর। বাসায় থাকলে ডিস্টার্ব করার মানুষ নেই, এক অন্যরকম ভাইব পাওয়া যায়। কিন্ত বাস্তব টা নিতান্তই অন্যরকম। এধরনের সিঙ্গার বলি কিংবা আইডল বলি, বেশিরভাগ সময়েই এদের দিন কাটে মিডিয়া, লাইট – ক্যামেরা – একশন, প্রেস কনফারেন্স ইত্যাদি নিয়ে।
আজকেও হুট করে সকাল ছয়টায় ডাক দিলেন আমায়। বললেন, জরুরি কাজে বাইরে যাচ্ছে। নাহিদও যাবে। তাই বাসায় সাবধানে থাকার ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন। আমি জানি আমায় নিয়ে এই দুশ্চিন্তার কারনের পেছনে যে অপূর্ব ভাইয়াই জড়িত আছে। আর আনভীর কোনোক্রমেই চাননা নিজের ছোট কোনো অসাবধানতার জন্য আমায় বিপদে ফেলতে।
আমি ঘুম কাটিয়ে উঠে বসলাম তখন। আজ হসপিটালে অফ ডে ছিলো। তবুও কাজের চাপ কম ছিলো না। গতরাতে আমার কলিগ রিনি জানালো যে ডে আফটার টুমোরো ইন্টাটন্যাশনাল কয়েকজন ডাক্তারদের নিয়ে মিটিং আছে আমাদের। এর পরই যাচাই করা হবে যে আমাদের প্রমোশন হবে না কি হবে না।
আনন্দ জেগে উঠেছিলো আমার হৃদয়ে। ডাক্তার হওয়া স্বপ্ন ছিলো আমার। হার্ট সার্জন হওয়া এত সহজও না। এর জন্য পারিবারিক ভাবেই হোক, আর ব্যাক্তিগত ভাবেই হোক, অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে আমায়। আর কয়েকটা দিন পরিশ্রম করলে হয়তো আমিও আর ডক্টর ধ্রুবের এসিস্ট্যান্ট ডক্টর হিসেবে থাকবো না, নিজের একটি নাম গড়ে তুলতে পারবো। তাই মিটিংয়ে নিজের স্কিলটা প্রকাশ করার জন্য বেশ কয়েকটা ফাইল প্রস্তুত করেছি। সবই করেছি আজ সকাল থেকে। প্রায় দেড় ঘন্টায় পাওয়ার পয়েন্টের কাজ আধ সেরে আমি বারান্দায় আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিস্নাত দৃশ্য উপভোগ করতে ব্যাস্ত হয়ে ছিলাম। ভালোলাগছে সবকিছু দেখতে।
তখনই দরজা খোলার শব্দে অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়ি আমি। কিন্ত স্থির হয়ে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম বারান্দাতে। আমি স্পষ্টতই জানি যে মানুষটি কে।
হঠাৎ আমায় পেছেন থেকে জড়িয়ে ধরলেন আনভীর। আমার গলায় শব্দ করে একটা চুমু দিয়ে কাঁধে থুতনির ভর ছাড়লেন। আমি অপ্রতিভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। হাতে থাকা নেসলে কফির কাপটাও যেন অসাড় হয়ে আসছে।
কন্ঠ জড়ালেন আনভীর। বলে উঠলেন,
‘ রিয়্যাকশন দিলে না যে?’
‘ আপনার এসব কাজে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি একটু বেশিই। তাই হয়তো।’
ঠোঁটে হাসির সুরত ঘটিয়ে বললাম আমি। আনভীর আকস্মিকভাবে হেসে ফেললেন। পেছন থেকে আরও প্রগাড়ভাবে চেপে ধরলেন আমাকে। বললেন,
‘ আমায় মিসেস টা বোধহয় অভিমান করে আছে আমার ওপর। ঠিক বললাম না আমি?’
‘ জ্বি না। ভুল বলেছেন। এখন পর্যন্ত অভিমান করার মতো কাজ আপনি করেননি যে অভিমান করবো। তবে যদি কখনও করি তবে আপনাকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হবে।’
আনভীর তথারুপি আরও একদফা মিহি হাসলেন আমার কথায়। আমি উনার হাসিকে পাত্তা দিলাম না। আমার পেটের ওপর উনার হাতের বন্ধনে নিজের হাত রেখে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ কোথায় গিয়েছিলেন এত সকালে?’
‘ জানতে চাও?’
‘ আমি মানুষটার কৌতুহল অনেক বেশি মি.আনভীর রেজওয়ান খান। আমার জেরা করার ভয়ে নাহিদ ভাইয়াও পালাই পালাই করে বেড়ায়। বিগত কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছি আপনাকে যে আপনার দুই জন মিলে কিছু একটা লুকোনোর চেষ্টা করছেন আমার থেকে। আর আমি এটাও নিশ্চিত যে আপনি আজকে সকালে সং রেকর্ডিং এর কোনো কাজে যাননি। গিয়েছেন অন্য এক কাজে।’
আনভীর অভিভূত হলেন আমার কথায়। ব্যক্ত করলেন,
‘ বাহ! মিসেস আনভীর রেজওয়ান খান দেখি ইদানীং ডিটেকটিভ এর কাজ শুরু করেছে। আচ্ছা সত্যি করে বলোতো, তোমার প্যাশন কিছু আসলেই ডক্টর ছিলো নাকি গোয়ান্দা টোয়েন্দা হওয়ার ইচ্ছে ছিলো?’
আমি পেছনে ঘুরে ফিরি এবার। হাতের কাপ রেলিংয়ের সপ্রান্তে রেখে দাঁড়াই আনভীরের মুখোমুখি হয়ে। ঘুমের জন্য সকালে আনভীরকে আমি আবছাভাবে দেখেছিলাম। তবে এখন দেখে নিলাম পূর্ণদৃষ্টিতে। সাদা-কালো চেক শার্টের গুটানো হাতা তার উজ্জল ফর্সা গায়ে ফুটে উঠেছে নিদারুনভাবে। বুঝলাম অন্য সময়কার মতো ফর্মাল হয়ে বের হননি আজ। আমি নতমুখে প্রতিউত্তর করলাম,
‘ জ্বি না মি.রকস্টার। আমার সবসময় একটাই ইচ্ছে ছিলো ডক্টর হবো। দেশের একজন বড় মাপের হার্ট সার্জন। সেবাব্রতী হবো মানুষের উদ্দেশ্যে। দেখবো যে আমার মতো কাউকে যেন কষ্ট করতে না হয়। ‘
‘ আচ্ছা আজ যদি আমার তোমার একটি চাপা কষ্ট দূর করে দেই?’
আনভীরের কথায় বিগলিত হয়ে পড়ি আমি। শশব্যস্ত হয়ে তাকালাম তাই উনার দিকে।।আনভীরের ঠোঁটে এখনও বুক উজাড় করা হাসি। জিজ্ঞেস করলাম,
‘ এখন?’
‘ জ্বি মহারাণী এখন। এর জন্যই তো সকাল সকালে বেরিয়ে পড়েছিলাম।’
‘ ম…মানে?’
উনার কথার মর্মার্থ না বুঝে শেষমেষ প্রশ্ন করেই ফেললাম উনাকে। আনভীর নিচু হলেন আমার কাছে। কর্নের কাছে শিরশির বাতাসের স্বরে বললেন,
‘ তোমার বার্থডে গিফ্টতো সেদিন দেওয়া হয়নি ম্যাডাম। আজ দেওয়ার পালা।’
আমি অপ্রতিভ হয়ে যাই এতে। অনুনয়ের সহিত তাই বললাম,
‘ আপনি এখনও গিফ্ট গিফ্ট করছেন কেনো আনভীর? বলেছিলাম না আমার প্রয়োজন নেই?’
‘ আর আমিও কি বলেছিলাম না যে আমার গিফ্ট কিছুটা আলাদা হবে যা তোমার ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলবে?’
চোখ শক্ত আনভীরের। এমন শাসানো ভঙ্গির কথায় আমি মাথা উপর নিচ করে বললাম,
‘ হুম!’
‘ তাহলে আর কোনো কথা না। নাও ক্লোস ইউর আইস মাই বেবিগার্ল। যখন আমি খুলতে বলবো তখন খুলবে। আমি হাত ধরছি। চোখ বন্ধ করেই চলো আমার সাথে।’
আমি তাই করলাম। অগত্যাই কথামতো আনভীরের হাত ধরে ত্যাগ করলাম ঘরটি। সিড়ি দিয়ে ধীরপায়ে আমাকে নামতে হলো আনভীরের হাত ধরে। আমার চোখজোড়া তখনও বন্ধ অবস্থায়। আনভীর এবার পেছন থেকে বললেন,
‘ নাও ইউ ক্যান ওপেন ইউর আইস আহি!’
আমার মনের মধ্যে অনেকক্ষণ ধরেই কৌতুহলতা চরমভাবে শিরায় উপশিরায় তরতর করে বইছিলো যে আসলে কি করতে চাচ্ছেন আনভীর। তাই উনি চোখ খোলার কথা বলামাত্রই আমি পিট পিট করে চোখ খুলে সম্মুখে তাকালাম।
সামনে যে এমন কিছু দেখবো, এটা কল্পনায়ও ভাবতে পারিনি আমি। স্তব্ধ অবস্থায় ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম তাই। আনভীর এবার বললেন,
‘ এটা তোমার ডে ড্রিম না আহি। তুমি সত্যিই দেখছো যা আমি দেখছি।’
আমার চোখ টলমল করে উঠলো অশ্রুতে। এটা কিসের অশ্রু সেটা যেন ব্যক্ত করা অসম্ভব আমার কাছে।
.
.
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ
#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ২৭+২৮
সামনে যে এমন কিছু দেখবো, এটা কল্পনায়ও ভাবতে পারিনি আমি। স্তব্ধ অবস্থায় ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম তাই। আনভীর এবার বললেন,
‘ এটা তোমার ডে ড্রিম না আহি। তুমি সত্যিই দেখছো যা আমি দেখছি।’
আমার চোখ টলমল করে উঠলো অশ্রুতে। এটা কিসের অশ্রু সেটা যেন ব্যক্ত করা অসম্ভব আমার কাছে।
.
.
আমার সামনে সোফায় এক জোড়া মধ্যবয়স্ক কপোত-কপোতী বসে আছেন। যাদের আমি চিনি। খুব ভালোমতোই চিনি। তাদের সঙ্গে আরও দু’জন ছিলো যাদের আমি খেয়াল না করে শুধু সেই দুই প্রবীন দম্পতির দিকেই চেয়ে থাকলাম নিষ্পলকভাবে। ইনারা আর কেউ নন, আমার মামু এবং মামী। আমার মায়ের আপন বড় ভাই। যাকে আজ কতবছর পর দেখলাম তা আমার তেমন একটা ধারনা নেই। চেহারার জৌলুস কমে বার্ধক্যের ছাপ পড়লেও চেহারায় বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি সেটার। আরও যারা ছিলো তারা হলো আমার ছোট মামু আর মামাতো বোন নীলু। বড় মামু আমায় এভাবে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন এবার। কাতর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কেমন আছিস রে আহি মা?’
আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।
দ্রুত পায়ে মামুর কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। চোখের অশ্রুগুলো পড়ছে এবার অবিবারমভাবে। কোনো ইতি নেই। বড় মামু সস্নেহে মাথায় হাত বুলাতে থাকলেন এবার। এতে আমার কান্না যেন আরও প্রগাঢ় হয়ে গেলো। অঝোরে ধারায় কেঁদে উঠি আমি। এই মানুষটাকে বিগত পাঁচটা বছর তন্ন তন্ন করে আমি খুঁজেছি। যোগাযোগ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্ত আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম তাতে। চাচু বা অপূর্ব ভাইয়াকে হাজার বার অনুনয় করে বলেছিলাম একটাবার, একটাবার শুধু মামুর সাথে কথা বলতে দিতে। কিন্ত আমার কথা শোনেন নি কেউ। অপূর্ব ভাইয়া তো আরও না। কেননা শেষবার মামু এসেছিলো আমায় উনাদের থেকে ফিরিয়ে আনতে। শুধু সেই শেষবার না, মা মারা যাওয়ার পর মামু আমায় দত্তক নেওয়ার জন্য অনেক ছুটোছুটি করেছিলো। কিন্ত আমার বাবা যেহেতু বেঁচে ছিলো আর সে এতে সম্মতি জানায়নি বলে মামু পারেননি। তাই শেষবার আমার ১৮ বছর হওয়ার পর যখন জানতে পারেন যে অপূর্ ভাইয়া আমায় আংটি পরিয়ে রেখেছেন এতে রেগে যান কিছুটা। বলেছিলেন যে ওমন নির্দয় পরিবার যে এতবছর শুধু ওত পেতে ছিলো কবে আমার ১৮ হবে আর কবে আমার মায়ের উইল করা সমস্ত সম্পত্তি হাতিয়ে নিবে এমন জায়গায় কিছুতেই কিছুতেই আমায় রাখবেন না। এতে অপূর্ব ভাইয়া ক্ষেপে গিয়েছিলেন অনেক। বড় মামুর সাথে প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করেছেন। আমি তাই রাগ করে একবার বাসা ছাড়ার কথা বলতে অপূর্ব ভাইয়া সেদিন একবেলাও খেতে দেননি আমায়। পরপর দু’দিন আমি আমার ঘরে বন্দী অবস্থায় ছিলাম।
তখন থেকে অপূর্ব ভাইয়া চাচুর কথায় আরও সতর্ক হয়ে যান আমায় নিয়ে। কিছুতেই একা বের হতে দেন না। কোনো সুযোগ রাখতেন না যে আমি মামুর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি। মেডিক্যাল স্টুডেন্ট লাইফেও অপূর্ব ভাইয়া কড়া চোখে নজর রেখেছেন আমার ওপর। ছেলে বন্ধু তো দূরের কথা, মেয়েদের সঙ্গেও কথা বলতে দিতো না। এসব কিছু মনে করে আমি আবারও জড়িয়ে ধরলাম মামুকে। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লেই আমার রুহ কেঁপে ওঠে। আমার তখন ১৮ বছর হয়েছিলো বিধায় সম্পত্তির জন্য হায়েনার মতো আচরণ করেছিলো চাচু্। সেই সময়টাতে আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো মামুর। রাতের পর রাত কেঁদেছিলাম এই ব্যক্তিটির সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য। মামু এবার বলে ওঠলেন,
‘ আহা! কাঁদে কেনো আমার মামণিটা? মামুকে পেয়ে খুশি হওনি বুঝি?’
আমি মাথা তুলে তাকাই বড় মামুর দিকে। নিজেকে সংযত করে কান্না চেপে বললাম,
‘ কথা বলবে না। আজ কতদিন পর তোমায় পেলাম। কাঁদবো না তো কি করবো হ্যাঁ?’
বড় মামু হেসে দিলেন আমার কথায়। ছোট মামু ওদিকে আহাজারি কন্ঠে বললেন,
‘ এই আধবুড়ো লোকটাই কি তোর একমাত্র মামু? আমি ও তো আছি।’
তার কথায় হেসে দিলাম আমি। ছোট মামু হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ কেমন আছিস?’
আমায় কিছু বলতে না দিয়েই মামী বললেন,
‘ এটা কি জিজ্ঞেস করার মতো কথা ছোটন? দেখিস না, যে আহি কত ভালো একটা বর পেয়েছে? এমন একজন থাকলে কোন মেয়ে খারাপ থাকে?’
আনভীর সম্মুখেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। দেখছিলেন আমাদেরকে। মামু হেসে বললেন,
‘ আনভীরই নিয়ে এসেছে কিন্ত আমাদের।’
মামুর কথা শুনে আমি হকচকিয়ে যাই কিছুটা। চোখের পলক না ফেলে রাশভারি চোখ করে তাকালাম মামুর দিকে, তারপর আনভীরের দিকে। উনার ঠোঁট চেপে হাসছেন আমায় দেখে। সেই ঠোঁট কোলে বিদ্যমান প্রশান্তির এক হাসি। আনভীর এবার বললেন,
‘ এবার বুঝলেন মিসেস আনভীর যে নাহিদ কে নিয়ে তোমার অগোচরে কি করছিলাম?’
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম সানন্দে। ছোট মামু টিটকারি সুরে বললেন,
‘ তোকে তো আমি সোজাসাপটা টাইপ মেয়ে ভাবতাম আহি৷ তুই যে তলে তলে প্রেম করে বিয়ের কাজও সেরে ফেলেছিস এটা তো আমি ভাবতেও পারিনি। তবে যাই হোক, একটা পার্ফেক্ট ম্যান কে বিয়ে করেছিস মেয়ে।’
আমি রাঙা মুখে মৌনতা পালন করলাম। তবে এতটুকু সময়ে বুঝতে বাকি রইলো না যে আনভীর মহাশয় ইতিমধ্যে মামুদের ভালোমতোই হাতিয়ে নিয়েছে।। নাহলে আমার ছোট মামু যেই মানুষ, পান থেকে চুন খসলে উনি যেকোনো ব্যাক্তিকে নিয়ে কান্ড বাধিয়ে ফেলতে পারেন। আর সেদিকে আনভীরের এত প্রশংসা বুঝিয়েই দিচ্ছে যে মামু কতটা ভক্ত হয়ে গিয়েছে আনভীরের।
আনভীর এবার বললেন,
‘ আপনারা তাহলে কথাবার্তা বলুন। আমার ছোট্ট একটু কাজ আছে বাইরে। আসতে কতক্ষণ লাগবে বলতে পারছি না।’
‘ কেন বাবা? তুমিও থাকো?’
মামুর কথায় আনভীরের না বলতে ইচ্ছে করলো না। তবুও ইতস্তত করে বললো,
‘ জরুরি কাজ মামা। আপনাকে বলেছিলাম না যে একটা ইন্টারভিউ……’
‘ ওহ হ্যাঁ, আমি তো বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম এর কথা৷ আচ্ছা যাও বাবা। ইউ নো হোয়াট,ো প্রফেশন ইজ ফার্স্ট। ‘
আনভীর সম্মতি জানালেন এতে। যাওয়ার আগে এক ফাঁকে ফিসফিস করে কানে বললেন,
‘ ব্যস্ততায় দ্রুত চলে গেলাম বেবিগার্ল। গিফ্টের রিভিউ এসেই নাহয় নিবো নে কেমন?’
উনার কন্ঠের ধরন দেখে একটা অজানা শিহরণ জেগে উঠলো অন্তরে।
এদিকে আনভীর নাহিদকে ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো হঠাৎ। নাহিদ একপলকেই কিছু একটা দেখছে আর আনমনে হাসছে। আনভীর এগোলো নাহিদের দিকে। বললো,
‘ কি রে নাহিদ! আনমনা হয়ে কই গেলি?’
তৎক্ষণাৎ ধ্যান ভাঙলো নাহিদের। ইতস্তত করো বলে ওঠলো,
‘ ত..তেমন কিছু না এআরকে।’
সন্দেহ জাগছে আনভীরের মনে। ও জানে যে এই প্রায় ছয় ফুট ছুঁই ছুঁই গাধাটার সব কাজকর্ম ই ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর। তবুও নিজেকে সামলে রেখে আনভীর বললো,
‘ কিছু না হলে চল তাহলে? দেরি হচ্ছে তো?’
‘ আর একটু পরে গেলে হয় না?’
নাহিদের কথায় ভ্রু নাচালো আনভীর। বললো,।
‘ কাহিনী কি তোর?’
নাহিদের দৃষ্টি অনুসরণ করে আনভীর এবার তাকালো নীলুর দিকে। হঠাৎ ঠোঁটে শয়তানি হাসি ফুটে উঠলো আনভীরের। বললো,
‘ ও এই কাহিনী। আহির এই মামাতো বোনটাকে ভালোলাগছে তোর?’
নাহিদ স্তব্ধ হয়ে আনভীরের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। এটা কি মানুষ নাকি অন্তর্যামী যে এভাবেই বেফাঁস কথা বলে ফেলে? নাহিদ চুলে হাত বুলিয়ে সংবরন করলো নিজেকে। বললো,
‘ মুখে এই কথাটা আর আনবেন না ভাই। ভাবি জানলে কাহিনী হবে। মুখে একবার আনসেন ভালো। এবার এটা গিলে হজম করে ফেলেন।’
বলেই নতমুখ করে চলে গেলো নাহিদ গাড়ির দিকে। আনভীর বিস্ময় পানে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নাহিদ বিড়বিড়িয়ে বললো,
‘ এমন ডেন্জেরাস ভাই যে আমায় কপলােই কেন দিসে আল্লাহ জানে!’
____________
সোফায় এমন টলতে টলতে অপূর্বকে বসতে দেখে চোখ পাকিয়ে তাকালেন অপূর্বের বাবা। গতকাল রাতে সাড়ে এগারোটা নাগাদ সেই যে বেরিয়েছিলো, এলো এই অবেলায়। সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন উনি। ইকবাল সাহেব হাতে খবরের কাগজ নিয়ে আসা মাত্রই অপূর্বের বাবা থমথমে গলায় বললেন,
‘ এই লাটসাহেব কে জিজ্ঞেস করো তো ইকবাল , যে গতকাল কোন ঘাটে ভেউ ভেউ করে এসেছিলো?’
অপূর্ব পাত্তা দিলো না বাবার কথায়। নেশা এখনও ভালোমতো কেটে উঠেনি। চেচিয়ে তাই ডেকে উঠলো,
‘ মা কড়া করে এক মগ কফি দাও।’
তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো অপূর্বের বাবা। বললো,
‘ সারারাত বারে বসে ছাই পাশ গিলবে আর সকালে কফির জন্য চেচাঁবে।’
ইকবাল সাহেব খেয়াল করলেন যে মুখ শক্ত হয়ে যাচ্ছে অপূর্বের। ঢোক গিললো সে। বড়৷ ভাই কে বললো,
‘ ভাইজান সাবধান। বাবাজি কিন্ত খেপে যাচ্ছে।’
‘ খেপবে কেন এই লাটসাহেব টা? আজ কতদিন হয়ে গেলো মালগুলো গুদামে পড়ে আছে সেগুলো স্মাগলিং না করলে কত বড় লসটা হবে দেখেছো? নিজে তো মরবে , সাথে আমাকেও মারবে এই ছেলেটা।’
বিরক্ত হলো অপূর্ব। বলে উঠলো,
‘ একটু শান্তিমতো থাকতে দিবে ড্যাড?’
‘ আমার শান্তি কেড়ে আরও শান্তি চাও? শুনে রাখো একটা কথা। এভাবে মদ টদ খেয়ে ঘুরে না বেরিয়ে আহিকে খুঁজো। সময় নেই আমাদের হাতে। ওর মায়ের সম্পত্তিগুলো নাহয় দেউলিয়া হয়ে যাবে। যেটা আমি কিছুতেই হতে দিবোনা।’
‘ তোমার এসব ভাবতে হবেনা ড্যাড। আগে নিজের গুলো সামলাও। পরে ওর টা হস্তক্ষেপ করো। আর হ্যাঁ, তোমার যেমন ওর প্রোপার্টি নিয়ে মাথাব্যাথা , তেমনি আমার মাথাব্যাথা আহিকে নিয়ে। আই ওয়ান্ট হার এট এনি কস্ট।’
বলেই ক্ষান্ত হয়ে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো অপূর্ব। অপূর্বের বাবা অপ্রসন্ন হলেন। বুঝলেন, এভাবে ছেলেকে দিয়ে কাজ হবেনা। ছেলেকে ওর ভাষায় বুঝিয়ে বলতে হবে। তাই বলে ওঠলেন,
‘ এত বছর তোর খাচায় বন্ধ করে রেখেছিলি ওকে অপূর্ব। তাই তোর কথায় উঠতো আর বসতো। এমন যে না হয় এই ফাঁকে তোর সম্পদকে অন্য কেউ হাতিয়ে নিয়ে যাবে।’
কথাটা বুকে তীরের মতো বিঁধল অপূর্বের। বাবার কথাটা নিছক মিথ্যে নয়। তাই ধীরপায়ে সে চলে গেলো ওপরের ঘরে। আহিকে যে ও খুঁজছে না এমন নয়। গতকাল ওর একজন লোক একটা তথ্য পেয়েছে আহির সম্পর্কে। এআরকের আশপাশের সব খবরাখবর জোগাড় করেছে। এখন সেটাকে ধরেই খুঁজতে হবে আহিকে।
_____________________
আজকে সময়টা আমার সুন্দর কেটেছে মামাদের সাথে। সারাদিন আমরা অনেক গল্পগুজব করেছিলাম। মামী কথায় কথায় বললেন আনভীরের বাবা মায়ের কথা। আমি বললাম যে উনারা অন্যত্র থাকেন। তারপর নীলুকে সারা বাংলো ঘুরিয়েছি আমি। আনভীরের বেশ কয়েকটা গিটারও দেখিয়েছি। নীলু বুকে হাত দিয়ে বললো,
‘ হায় মে মারজাওয়া। এআরকে আমার সবসময়কার ক্রাশ। আমাদের কলেজ ফ্রেন্ডরা সবসময় আমরা উদগ্রীব হয়ে থাকি কখন এআরকে গান রিলিজ করবে। ওর একটা এফবি লাইভও মিস করিনি আমি। আমার কয়েকটা ফ্রেন্ড তো এআরকের ডাইহার্ট ফ্যান। কনসার্টের জন্য গ্যাং নিয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকায় এসে পড়তো। আর আমি এখন সেই এআরকে’র বাড়িতে? ও এম জি।’
‘ তোর কি হিংসে হচ্ছে নাকি বুড়ী?’
‘ আর বলিস না আপু। এআরকে কে আসলেই ভালোলাগে আমার ফর হিজ ভয়েস এন্ড গুড লুকিং। কিন্ত তা কি আর হবে? সে যে এখন আমার দুলাভাই হয়ে গিয়েছে।’
আমি ঠোঁট চেপে হাসলাম নীলুর কার্যকলাপ দেখে। বিকেলের দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য স্থির হলেন মামা। আমি থাকতে বলেছিলাম কিন্ত শুনেননি। বললেন, সামনে যখন বড় করে আমার আর আনভীরের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে তখন দেখা যাবে। আমি অবাক হলাম একটু। ভাবতে পারেনি আনভীর আসলেই এ ব্যাপারে এতটা সিরিয়াস। উনি হয়তো অপেক্ষা করছেন আমার ডক্টর হওয়ার লাইসেন্সের জন্য। আমার মনে একটা আনন্দের আভাস ফুটে উঠলো এতে।
_______________
আনভীর বাড়িতে আসলেন একটু রাত করে। এসেই সোফায় শরীর এলিয়ে দিলেন। নুড়ী আপাকে বললেন এক গ্লাস পানি আনতে।
নাহিদ ভাইয়া আগ বাড়িয়ে বললো,
‘ ভাবি! উনারা চলে গিয়েছে?’
‘ হুম।’
মুখ গোমড়া করে ফেললেন উনি। বললেন,
‘ আপনি জোড় করেননি?’
‘ আরে হ্যাঁ। কেন থাকলেন না সেটা নাহয় আনভীর থেকেই জেনে নেন।’
‘ আপনার তাহলে আপনার মামাতো বোনটা কে মনে পড়বে না?’
সন্দেহের আভাস ফুটে উঠলো চোখে মুখে। ঠোঁট কামড়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ হঠাৎ এ প্রশ্ন?’
‘ আরে……..এ..এমনেই।’
আনভীরও হাসছেন ঠোঁট চেপে। ডিনার সেরে নুড়ী আপাকে একটু হেল্প করলাম আমি টুকটাক। নাহিদ ভাইয়ার ওপর দিয়ে আজ বড় ধকল গিয়েছে। তাই রুমে যেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। আমি রুমের সামনে গিয়েই টের পেলাম ভায়োলিনের আড়ষ্ট সুর। উনি সচরাচর এসময় ভায়োলিন বাজান না। দরজা খুলে দেখলাম রুমটা নিকষ আঁধার। বারান্দায় একটি ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে। আমি জামি সে কে। তাই নীরবে নিভৃতে এগিয়ে বসে পড়ি উনার পাশে। আনভীর হঠাৎ থামিয়ে দিলেন। আমি বললাম,
‘ থামালেন যে?’
‘ এভাবেই।’
উনি ভায়োলিন রেখে ফিরে তাকালেন আমার দিকে। পরনে জামাকাপড় পাল্টে একটা ক্যাজুয়াল ড্রেস পড়েছেন। আমি এখনও ভেবে অবাক হই এত সুন্দর মানুষটা আমার লাইফ পার্টনার বলে। যে আমায় অনেক বেশি ভালোবাসে। যাকে একদন্ড দেখার জন্য ভক্তরা পাগল হয়ে যায় তাকে যেকোনো রূপে দেখার অধিকার আছে আমার। আনভীর বলে উঠলেন,
‘ তুমি খুশি তো?’
‘ অনেক। জানেন আজ কত বছর পর উনাদের সাথে সময় কাটিয়েছি?’
‘ জানিতো। ওরা তোমার শুভাকাঙ্খী। তাই তো নিয়ে এলাম ওদের।’
‘ আপনি কিভাবে পেলেন মামুর খবর?’
‘ নাহিদ আছে না? ও পাতাল থেকেও খবর আনতে পারবে।’
আমি হেসে দিলাম মিটমিটিয়ে। আনভীর এবার প্রশ্ন করলেন,
‘ মিটিং কবে তোমার ফরেইন ডক্টরদের সাথে?’
‘ এইতো কয়েকদিনের মধ্যেই।’
‘ বেস্ট অফ লাক মিসেস আনভীর। আমি চাই যে এআরকের ওয়াইফ দেশের একজন ভালো ডক্টর হোক। তোমার প্রতিটা স্বপ্ন পূরণ করার দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু মনোযোগ দিয়ে কাজ করো। বুঝেছো?’
সানন্দে মাথা নাড়াই আমি। হঠাৎ আমার চোখ অশ্রুতে টুইটুম্বুর হয়ে উঠলো। কোনো কিছু না ভেবে আচমকাই জড়িয়ে ধরলাম আনভীরকে। থুতনিতে টুপ করে চুমু খেয়ে বুকে মুখ গুঁজলাম। আনভীর আমার এমন কান্ডে নিষ্পলকভাবে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। উনার বুকের ঢিপ ঢিপ শব্দ স্পষ্ট টের পাচ্ছি আমি। আমি শ্বাস নিয়ে বললাম,
‘ এতগুলো সারপ্রাইজের ভীড়ে আপনিই আমার বেস্ট সারপ্রাইজ আনভীর। আমার এই অন্ধকার লাইফে আপনিই আলো হয়ে এসেছেন। এত খুশির মধ্যে আমি সবসময়ই বলবো যে, আমি আপনাকেই চাই এবং আপনাতেই দায়বদ্ধ থাকতে চাই। আনভীর নামক মানুষটাতে বিলীন হতে চাই আমি। ধন্যবাদ আপনাকে, আমায় এত ভালোবাসার জন্য।’
আনভীর হাসলেন। রাশভারি কন্ঠে বললেন,
‘ তোমার কথাগুলো যে আমায় মোহে ফেলে দিলো! এখন এই মোহ কাটানোর দায়িত্ব কি তুমি নিবে?’
আমি কথা বললাম না। লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখলাম। সময়টা যেন থেমে গিয়েছে কেমন করে। আনভীর আবার দুষ্টু হেসে বললেন,
‘ থুতনিতে এভাবে কিস না করলেও পারতে। এখন আমার যে আবার লাগবে? এগেইন কিস মি বেবিগার্ল!’
আমি বুকে কয়েকটা কিল মারলাম উনাকে। উনি হেসে পুনরায় আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরলেন আমায়। বিড়বিড়িয়ে বললাম,
‘ অভদ্র একটা!’
.
.
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ!